17-03-2020, 07:12 PM
(Update No. 168)
সীমন্তিনী সাইড টেবিলের ওপর থেকে রাইটিং প্যাড আর কলম নিয়ে বলল, “বাপরে! এমন সব সিস্টেম করে রেখেছে? আগে ফার্স্ট ফ্লোরের বাথরুম, তারপর সেকেন্ড ফ্লোরের বা ......”।
ও’পাশ থেকে মহিমা সাথে সাথে বলে উঠল, “না না মন্তি, তুমি ভুল করে ফেলছ। অবশ্য এমন ভুলই হয়ত ইনকাম ট্যাক্স আর ইডির লোকেরাও করেছিল। কোনটা প্রথমে কোনটা পরে, তারা বুঝি সেটা ধরতে পারেনি। তুমিও একই ভুল করছ। প্রথম গ্রাউন্ডফ্লোর টয়লেট, তারপর সেকেন্ড ফ্লোরের টয়লেট, তারপর ফার্স্ট ফ্লোরের টয়লেট, আর সবার শেষ গ্রাউন্ডফ্লোরের পশ্চিম দেয়ালের আলমারি। এই হল সিকোয়েন্সটা। এই সিকোয়েন্সেই একটা একটা করে চারটে লক খুলবে। সিকোয়েন্সে ভুল হলে চেম্বারের কোন লকই খুলবে না। শুধু ওই ভেন্টিলেটরগুলোর কাঁচ কিংবা দেয়াল আলমারির পাল্লাটাই খুলবে। যার ভেতর আপত্তিজনক কিছুই রাখে না বিমল। এনফোর্সমেন্টের লোকেরা শুধু সেটুকুই দেখতে পেয়েছিল। তাই তার বিরূদ্ধে তেমন কোন চার্জই তারা আনতে পারেনি। আর সেফ বন্ধ করে বেরিয়ে আসবার সময় ঠিক উল্টো সিকোয়েন্সে সবটা করতে হয়। প্রথমে গ্রাউন্ডফ্লোরের আলমারির পাল্লা বন্ধ করবার নব ঘোরাতে হয়। তখন আলমারির পাল্লা বন্ধ হবার সাথে সাথে নিচে নেমে যাওয়া স্ল্যাবটা উপরে এসে দেয়ালের সাথে এমনভাবে সেঁটে যায় যে দেখে বোঝাই যায় না যে ওখানে অমন একটা মুভেবল স্ল্যাব থাকতে পারে। তারপর একে একে ফার্স্ট ফ্লোর, তারপর সেকেন্ড ফ্লোর আর সব শেষে গ্রাউন্ডফ্লোরের বাথরুম গুলোর ভেন্টিলেটরের কাঁচগুলো বন্ধ করবার নবগুলো উল্টোদিকে ঘোরাতে হয়”।
সীমন্তিনী তার রাইটিং প্যাডের লেখা গুলোর দিকে দেখতে দেখতে বলল, “সাংঘাতিক সিস্টেম বানিয়ে রেখেছে তো! এই সিকোয়েন্স গুলো মেনটেন না করলে তো কিছুতেই তাহলে ওই চেম্বার খুলতে পারবে না কেউ। কিন্তু বৌদি, তুমি যেমন বললে, সিকোয়েন্স গুলো কি ঠিক সে’রকমই? তোমার কি এতদিন আগে একবার দেখা সিকোয়েন্স গুলো ঠিক ঠিক মনে আছে? না, মানে বলছি কি, গুলিয়েও তো ফেলতে পারো তুমি”।
মহিমা বলল, “কোন কোন ফিল্মে এমন সব সিস্টেমে গোপনীয় জিনিস রাখার দৃশ্য তো দেখেছি। কিন্তু বাস্তব জীবনে অমন দৃশ্য আমি জীবনে ওই একবারই দেখেছি। তাই সিকোয়েন্সটা আমার খুব ভালভাবেই মনে আছে। একচুলও ভুল হচ্ছে না”।
সীমন্তিনী এবার আফসোসের সুরে বলল, “ইশ চাবিগুলো হাতে পেলে বদমাশটাকে অন্ততঃ সাত আট বছরের জন্যে জেলে পুরতে পারতুম গো বৌদি। কিন্তু আমি পড়ে আছি এখানে। আর চাবিগুলোই বা কি করে হাতে আনা যাবে জানিনা। তবে এটা তুমি খুব ভাল খবর দিয়েছ বৌদি। আচ্ছা বৌদি, বিমলের বাড়িতেও কি এমন কিছু লুকোনো জায়গা আছে”?
মহিমা বলল, “বিমলের সাথে আমার পরিচয় তো প্রায় ছ’ বছর আগে হয়েছে। আর তখন থেকেই সে আমার শরীরটা ভোগ করে আসছে। আমাকে সে খুব বিশ্বাসও করে। তাই হয়ত সেদিন তার ফার্ম হাউসের চেম্বারটা আমার সামনেই খুলেছিল। কারন ওর মনে এমন ধারণা অবশ্যই আছে যে ওর কোন ক্ষতি করবার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারব না। আর তেমন কিছু করলে ও দু’মিনিটেই আমাকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলতে পারবে। তবে ওর বাড়িতেও এমন কোন চেম্বার বা গোপন জায়গা কিছু আছে কি না, এ ব্যাপারে ও আমাকে কখনও কিছু বলে নি। থাকলেও থাকতে পারে। দু’নম্বরী টাকার যাদের অভাব নেই, লুকিয়ে রাখার মত জায়গাও তাদের একাধিক থাকতেই পারে। তবে আমি সত্যি ওর বাড়ির ব্যাপারে কিছু জানি না। আর আমি বেশ কয়েকবার ওর অফিসে আর ওই একবারই বিমলের ফার্ম হাউসে গেলেও কখনও ওর বাড়িতে ও আমাকে নিয়ে যায়নি। আর আমি জানি, ও অন্য যেসব মেয়েদের ভোগ করে তাদের কাউকেও সে তার বাড়িতে নিয়ে যায় না কখনও। যদি দু’এক ঘন্টার প্রোগ্রাম থাকে তাহলে কোন একটা হোটেলে টোটেলেই কাজ সেরে নেয়। সারা রাতের জন্য কাউকে নিলেই সে ওই ফার্ম হাউসে যায়। আর যখন ব্ল্যাকমানি বা গোপন দস্তাবেজ সেফে রাখবার প্রয়োজন পড়ে, তখন সে ফার্ম হাউসের মেন গেটে কয়েকজন সিকিউরিটি রেখে একা বাড়িতে ঢোকে। আমাকে অবশ্য সে পরেও আরও অনেক দিন তার ওই ফার্ম হাউসে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বামীকে ঘরে রেখে বাইরে সারা রাত কাটানো সম্ভব নয় বলেই আমি আর কখনও সেখানে যাই নি। ওই একদিনই শুধু গিয়েছিলাম। তবে আমার এজেন্সীর অন্যান্য কয়েকজন মেয়েও ওর ফার্ম হাউসে অনেকবার গেছে। এখনও মাঝে মাঝে যায়। তবে তাদের কাউকে যে বিমল তার ওই সিক্রেট চেম্বার দেখাবে না, তা বলাই বাহুল্য”।
সীমন্তিনী মন দিয়ে মহিমার কথা শুনছিল। মহিমা থামতে সে জিজ্ঞেস করল, “তার মানে এখন আর তোমাকে ওর কাছে যেতে হয়না তাহলে”?
মহিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমি তো সারা জীবনের জন্য আমার শরীরটা ওর কাছে বন্ধক রেখেছি ভাই। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন পর্যন্ত ওকে আমার শরীরটা দিতে আমি বাধ্য। তুমি জানো মন্তি, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ভগবান আমাকে এতটা সুন্দর করে সৃষ্টি না করলেই বুঝি ভাল হত। কিন্তু সেটা তো আমার হাতে নেই। যতদিন আমি বেঁচে থাকব, বা যতদিন আমার শরীরটাতে পুরুষদের আকর্ষণ করার মত সৌন্দর্য বা যৌবন থাকবে, ততদিন বিমলের হাত থেকে আমার পরিত্রান নেই। তবে তুমি যেটা ভাবছ, সেটা হলে তো আমিও খুব খুশী হতাম। কিন্তু রাতের বেলায় আমাকে ভোগ করবার সুযোগ দিচ্ছি না বলেই, ও আর আমাকে ওর ফার্ম হাউসে নিয়ে যাবার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তার পরিবর্তে বিমল প্রতিমাসে দু’দিন বা তিনদিন ইনস্টিটিউটে এসেই আমাকে ভোগ করে”।
সীমন্তিনী অবাক হবার ভাণ করে বলল, “ইনস্টিটিউটে? মানে তোমার যোগা ইনস্টিটিউটে? কিন্তু তুমি তো বলেছিলে যে ইনস্টিটিউটে তোমার এ ব্যবসা সংক্রান্ত কোন কিছুই হয় না”!
মহিমা বলল, “হ্যাঁ সেটা ঠিকই। ইনস্টিটিউটে এ’সব কাজ একেবারেই হয় না মন্তি। কিন্তু বিমল যেদিন আসে তখন বেশীর ভাগ সময়েই আমি ইনস্টিটিউটেই থাকি তো। তাই ওভাবে বলেছি। আসলে আমার ইনস্টিটিউটের ঠিক নিচের ফ্লোরেই আমার আরো একটা রুম ভাড়া নেওয়া আছে। ওখানে বসেই আমি এ ব্যবসার ব্যাপারগুলো নিয়ে ডীল করি। আর বিমলও সেখানেই আসে। আর ওই রুমেই আমি বিমলের হাতে আমার শরীরটা তুলে দিই। ছ’টা বছর ধরে এমনই চলছে। কিন্তু আমি এখন ভেতরে ভেতরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিছুদিন ধরেই আমি ভাবছি, এ পাপের ব্যবসাটা এবার বন্ধ করে দেব। কিন্তু সেটা করলেও বিমলের হাত থেকে তো আমি ছাড়া পাব না। আর তাছাড়া যে মেয়েগুলো পেটের দায়ে পড়ে আমার কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে, ওদের ওপরেও বিপদ নেমে আসবে। তুমি জানো মন্তি, ভাই, মানে তোমার দাদাভাই রতীশ আর রচনার সাথে পরিচিত হবার পর থেকেই আমার মনটা কেন জানিনা এ ব্যবসা থেকে আমাকে সরে আসতে বলছে”।
****************
সীমন্তিনী সুযোগ পেয়ে বলল, “আচ্ছা বৌদি, তোমার ওই ব্যবসা থেকে মাসে কত আয় হয় গো”?
মহিমা একটু হেসে বলল, “তার কি আর কোন ঠিক ঠিকানা আছে ভাই? ক্লায়েন্টদের ডিমান্ড যত বেশী হয় আমার আয়ও তত বেশী হয়। তবে কমপক্ষেও আঠারো থেকে বিশ লাখ তো হয়ই এক মাসে। অবশ্য, থানা পুলিশ উকিল আর কিছু এশটাব্লিশমেন্টের খরচা বাদ দিয়ে পনেরো ষোল লাখ তো কম করেও ঘরে আসে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে নামী বেনামী একাউন্টে সে’সব জমা করে রেখেছি। ঘরে তো আর বেশী টাকা রাখা সম্ভব হয় না। আর বিমলের মত অমন কোন চেম্বারও আমি বানাতে পারিনি। তাছাড়া ঘরে অত টাকা রাখলে অরিন্দমের কাছে ধরা পড়ে যাব”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “অরিন্দম কে গো বৌদি”?
মহিমা হেসে বলল, “ও তোমাকে বুঝি অরিন্দমের কথা বলাই হয়নি তাই না? অরিন্দম, মানে অরিন্দম সেন আমার স্বামী। বিয়ের আগে দিল্লীতে আমরা এক কলেজে পড়তাম। তারপর আমরা একে অপরের প্রেমে পড়েছিলাম। এমবিএ শেষ হতেই মা-বাবার মতের বিরুদ্ধে গিয়েই আমরা বিয়ে করেছিলাম। আর তার পর পরই আমরা কলকাতা চলে এসেছিলাম। ও আমাদের মহিমা মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউটের একজন পার্টনারও। তবে ও কখনোই ইনস্টিটিউটে আসে না। ইনস্টিটিউট নিয়ে কোনও ভাবনাও ভাবে না। ও ওর নিজের ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা নিয়েই সর্বক্ষণ ব্যস্ত। আর ব্যবসাও যত বাড়ছে, ওর ব্যস্ততাও তত বাড়ছে। এমনিতে রোজ সকালে আর রাতে এগারোটা বা বারোটার পরেই আমাদের দেখা হয়। তবে বছর খানেক আগে থেকে ওকে মাঝে মাঝেই দিল্লী, ফরিদাবাদ আর চণ্ডীগড় যেতে হচ্ছে ব্যবসার কাজে। তাই এখন মাসের মধ্যে অন্ততঃ দশ থেকে বারোদিন সে বাইরেই থাকে। এই তো, আজও সে বাড়িতে নেই। ফরিদাবাদ গেছে। তাই তো তোমার সাথে নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারছি”।
সীমন্তিনী এবার আসল কথায় আসতে বলল, “আচ্ছা বৌদি, একটা কথা বলব? যদি কিছু মনে না করো”।
মহিমা বলল, “আমি তো তোমার কাছে আমার লজ্জার কথাগুলো কিছুই গোপন করছি না ভাই। রতীশ বা রচনাকে আমি এ’সব কথা কিছুতেই বলতে পারব না। কিন্তু রচনাকে বাঁচাবার জন্যেই তোমার কাছে আমি সব কথা খুলে বলেছি। না বললে তোমাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারতাম না যে ওর বিপদের কথা আমি কিকরে জানতে পারলাম। আর সত্যি বলছি মন্তি, রতীশ আর রচনার সাথে কথা বলে আমার খুব ভাল লাগে। তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ভাল লাগছে। বুঝতে পারছি, এটা তোমাদের পারিবারিক শিক্ষা। তোমরা দু’ ভাই বোনই সত্যিই অসাধারণ। অচেনা মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যেই তোমরা নিজের কাছে টেনে নিতে পার। তাই তো নিজের বিপদ আছে জেনেও কেন জানিনা আমার সব গোপন কথা তোমাকে খুলে বলছি। তোমার যা জানতে ইচ্ছে করে, নিঃসঙ্কোচে তা জিজ্ঞেস করতে পার ভাই”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা বৌদি তুমি যে বললে, এ পাপের ব্যবসা তুমি এখন ছেড়ে দিতে চাইছ। সেটা কি সত্যি মন থেকে বলছ? মানে আমি বলতে চাইছি, যে ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে পনেরো ষোল লাখ টাকা তুমি উপার্জন করছ, তেমন একটা ব্যবসা কি এত সহজেই ছেড়ে দিতে পারবে তুমি? তাতে তোমার কত টাকার লোকশান হতে পারে, একবার ভেবে দেখেছ”?
মহিমা জবাব দিল, “শুধু টাকার অঙ্কের দিকে দেখলে, বা আর্থিক লাভের কথা ভাবলে এমন ব্যবসা যে একবার শুরু করতে পেরেছে, সে আর ছেড়ে দিতে পারে না মন্তি। একটা সময় অবশ্য টাকা উপার্জন করবার জন্যেই আমি এ ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ছেলেমেয়ে দুটোর অ্যাডমিশনের জন্য চল্লিশ লাখের মত টাকা আর অন্য কোনভাবে জোটাতে পারিনি। অরিন্দমের হাতেও তখন খুব সামান্যই ছিল। আর আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটটাও তখন নতুন। খুব বেশী আয় হত না। তখনই বাধ্য হয়েই বিমলের ধার মেটাতে এ এসকর্ট ব্যবসাটা শুরু করেছিলাম। অবশ্য বিমলের কাছে নিজেকে বাঁধা দেবার আগেই আমি শরীর বিক্রি করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিমলের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা ফিরিয়ে দেবার পরেও টাকা কামানোর লোভটা কমেনি। বরং দিনে দিনে যত লাভ হচ্ছিল ততই যেন টাকা কামানোর নেশাটা ধীরে ধীরে আরও চেপে বসেছিল আমার মনে। এখন যথেচ্ছভাবে টাকা খরচ করতে পারি আমি। বরং বলতে পার যে খুশী মত খরচ করেও আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কমছেই না। আমার আশেপাশে যারা থাকে, বা যে’সব গরীব দুঃখী মেয়েরা নিরুপায় হয়ে আমার এসকর্টের ব্যবসায় যোগ দিয়েছে, এদের যে কোনও প্রয়োজনে আমি যে কোন মূহুর্তে তাদের আর্থিক সাহায্য করতে পারি এবং প্রয়োজন হলেই তেমনটা করি আমি। কিন্তু তা সত্বেও আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়তে বাড়তে এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমি যে কোন মূহুর্তে আট দশ কোটি টাকা খরচ করতে পারি। এখনও যত টাকা আমার হাতে আছে, তাতে আমাদের পরে আমাদের ছেলেমেয়েরাও বসে বসে আরামের জীবন কাটাতে পারবে। তবে আমি নিজেই সেটা চাই না। আমি তো নিজে একটা নষ্টা মেয়েই। মা বাবার ঘরে থাকতেই ছোট বয়স থেকেই নিজের শরীর বেঁচে পয়সা কামাতে শিখে গিয়েছিলাম। তবে এখন যখন মাঝে মাঝে পুরনো কথা গুলো নিয়ে ভাবি, তখন বুঝতে পারি, সেটার খুব একটা প্রয়োজনও ছিল না। তবে বিয়ের পর সত্যি সে’সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্বামী সংসার সন্তানদের আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। আঠারো ঊণিশটা বছর বেশ ভালই ছিলাম। মা হিসেবে ছেলেমেয়েদের কতটা সুশিক্ষা দিতে পেরেছি, তা জানিনা। কিন্তু অরিন্দমের শিক্ষায় ছেলেমেয়েরাও খুব ভাল শিক্ষা পেয়েছে। তবে ওদের উঁচু স্তরের শিক্ষা দিতে গিয়েই আবার সেই পুরনো নর্দমাতেই গিয়ে পড়তে হয়েছিল আমাকে। ছেলেমেয়ে দুটো তো এখনও পড়াশোনা করছে। ওদের জীবন তো বলতে গেলে শুরুই হয়নি এখনও। তবু ওরাও যে কখনও কোন অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করবার কথা ভাববে না, তা এখন থেকেই বুঝতে পারি। অরিন্দমের ব্যবসাতেও ওর পরিশ্রমে আর ভগবানের আশীর্বাদে এখন ভালই আয় হচ্ছে। ওর আয় থেকেই আমাদের সংসারের প্রয়োজনীয় সমস্ত খরচ অনায়াসে মিটে যায় এখন। যোগা সেন্টারের ব্যবসাটাও বছর চারেক আগে থেকে ভালই চলছিল। রতীশ কাজে যোগ দেবার পর আয় আরো বেড়েছে। বছর খানেক আগে থেকেই একটা চিন্তা আমার মাথায় এসেছে যে এ টাকাগুলো নিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত করবটা কী? স্বামী ছেলে মেয়ে কাউকেই তো দিতে পারব না। কারন তারা যদি প্রশ্ন করে যে এত টাকা আমি কোথায় পেলাম, আর সে প্রশ্ন তো অবধারিত ভাবেই তারা করবে। কিন্তু তাদের প্রশ্নের জবাব তো আমি দিতে পারব না। আমি কাউকে নমিনি করে যেতেও পারব না। কারন আমি মরার পরেও টাকাগুলো পেলে স্বামী বা ছেলে মেয়ের মনে একই প্রশ্ন উঠবে। তখন হয়ত তাদের প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য আমি থাকব না। কিন্তু কোটি কোটি টাকা দেখে তারা প্রত্যেকেই বুঝে যাবে যে এ’সব সৎপথের উপার্জন হতে পারে না। তাই যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন যখের ধনের মত আগলে আগলে রাখতে হবে সেই টাকা গুলোকে। আর আমি মরে যাবার পর ও’গুলো ব্যাঙ্কে আনক্লেইমড ডিপজিট হিসেবেই হয়ত পরে থাকবে। তাতে আর কার কী কাজে লাগবে বলো? আজ যদি বিমল দশ কোটি টাকার বিনিময়ে রচনার ওপর থেকে তার কূ-নজর সরিয়ে নিতে রাজি হয়, তাহলে আমি আমার জমানো সব টাকা দিয়ে রচনাকে বিপদমুক্ত করতে এক মিনিটও ভাবতাম না। কিন্তু বিমল যে তাতে কিছুতেই রাজি হবে না এ তো আমি খুব ভালভাবেই জানি। তাই তো বারবার ভাবছি এ’সব এখন বন্ধ করে দেওয়াই ভাল। কিন্তু পাকাপাকিভাবে সে সিদ্ধান্তটাও নিতে পারছি না গো মেয়েগুলোর কথা ভেবে। তুমি জানো কি না জানিনা মন্তি, তবে এ শহরে আমার মত এমন ব্যবসা অনেকেই করে। তাদের আমরা বলি এসকর্ট প্রোভাইডার। সে’সব এসকর্ট প্রোভাইডারদের কাছে যে’সব মেয়েরা এসকর্ট হিসেবে কাজ করে, তারা একবার প্রোভাইডারদের খপ্পরে পড়ে গেলে সহজে আর সেখান থেকে বেরোতে পারে না। ভাল পথে চলবার সুযোগ পেলে তারা চালাকি করে বা পালিয়ে বাঁচতে চাইলে তাদের প্রোভাইডারদের পোষা গুণ্ডাদের হাতে খুন হয়ে যায়। ওই পথ থেকে বেঁচে ফিরে আসবার রাস্তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় তাদের কাছে। কিন্তু আমার এজেন্সীতে যে’সব মেয়েরা কাজ করে তারা নিজেদের পেটের দায়ে পড়ে অথবা সংসারের চাপে পড়ে নিতান্ত নিরুপায় হয়েই আমার কাছে এসেছে। আসলে আমি প্রথম থেকেই যাকে তাকে আমার ব্যবসায় ঢোকাতাম না। ইন্টারভিউ নিয়ে যদি বুঝতে পারতাম যে তার সামনে আর অন্য কোন পথ খোলা নেই, তেমন মেয়েদেরই আমি কাজে নিতাম। অসৎ পথে উপার্জিত টাকা দিয়ে আমি কয়েকটা পরিবারের ভরণ পোষনের সংস্থান করে দিতাম। অসামাজিক কাজ করে সমাজের কয়েকটা দুঃস্থ পরিবারকে খাওয়া পড়ার সুযোগ করে দিয়ে নিজের মনের পাপবোধটাকে খানিকটা হাল্কা করতে চাইতাম। তাদের কারো ওপর আমি কোন রকম বাধ্য বাধকতার বোঝা চাপিয়ে দিই না। তাদেরকে কক্ষনও আমি নিজেদের ইচ্ছের বিরূদ্ধে কোন ক্লায়েন্টের কাছে জোর করে পাঠাঁই না। বরং একটা ডিল ফাইনাল করবার আগে তাদের সুবিধে অসুবিধের কথা আমি আগে জেনে নিই। তাদের যদি সামান্যও অসুবিধে থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে আমি অন্য কোনও এসকর্ট পাঠিয়ে থাকি। তারা কেউ যদি চিরদিনের জন্যে এ রাস্তা ছেড়ে সৎ ভাবে জীবনযাপন করবার সুযোগ পায়, আমি কাউকে বাঁধা দিই না। বরং একটা মেয়ে ভাল পথে বাঁচবার সুযোগ পেয়েছে শুনলে আমি তাদের উৎসাহিতই করি। প্রয়োজন হলে তাদের আমি কিছু আর্থিক সাহায্যও করে থাকি। আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি তাকে যেন আর আমার কাছে ফিরে আসতে না হয়। এখন আমার ব্যবসাতে মোট আটচল্লিশ জন অমন মেয়ে মহিলা আছে। ছেলেও আছে জনা পঁচিশেকের মত। তবে ছেলেগুলোকে নিয়ে অত ভাবি না। কারন ওরা এ কাজে আসে মূলতঃ নারীসঙ্গ পাবার লোভে। আর সেই সাথে টাকা উপার্জনের সহজ একটা রাস্তা পেয়ে যায় বলে। আমি কাজ বন্ধ করে দিলেও তারা অনায়াসেই অন্যান্য প্রোভাইডারের কাছে গিয়ে কাজ করতে পারবে, বা তারা অন্য কোন কাজও করতে পারে। কিন্তু ওই মেয়েগুলো যদি আমাকে ছেড়ে অন্য প্রোভাইডারদের কাছে যায় তাহলে তারা বিপদে পড়বে। তাদের জীবনগুলোই বিপন্ন হয়ে যাবে। যেটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছি না”।
মহিমা একটু থামতে সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “এমন এক অপরাধমূলক কাজেও যারা তোমার সঙ্গী, তুমি তাদেরকে তোমার ব্যবসার মূলধন করলেও মেয়েগুলোকে তুমি খুব ভালবাস, তাই না বৌদি”?
মহিমা একটু হেসে জবাব দিল, “এমন কথা শুনে কেউ না হেসে থাকতে পারবে না, তাই না মন্তি? পাপকাজে লিপ্ত থেকেও অন্যকে এমন ভাবে ভালবাসি, এ’কথা শুনলে সকলেই মনে মনে হাসবে, জানি। কিন্তু আসলে সেটাই সত্যি ভাই। তোমরা ভাবতেও পারবে না মন্তি, কত মেয়ে বিনা দোষে কতভাবে নির্যাতিতা হয়েই না এমন পথে নামতে বাধ্য হয়। একেক জনের একেক রকম কাহিনী। সে’সব কাহিনী তোমাকে সব খুলে বলতে গেলে রাতের পর রাত পেরিয়ে যাবে। জানো মন্তি, মাত্র মাস দেড়েক আগে একটা মেয়ে আমার কাছে এসেছিল। বেশ কয়েক বছর আগে মেয়েটার যেদিন বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল, সেদিনই সে তাদের পাড়ারই কোন একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ছেলেটা আর তার এক বন্ধু মিলে মেয়েটাকে বেশ কয়েকমাস একনাগাড়ে রেপ করবার পর তাকে অন্য পুরুষদের কাছে ভাড়ায় খাটাতে শুরু করেছিল। অনেকদিন পর মেয়েটা কোনভাবে দুরের ওই জায়গাটা থেকে পালিয়ে কলকাতায় এসেছিল। কিন্তু তার বাড়ির লোকেরা তাকে আর নিজেদের সংসারে রাখতে রাজি হয় নি। মেয়েটা হাজার চেষ্টা করেও কোন সম্মানজনক কাজ খুঁজে না পেয়ে শেষে ভিক্ষে করতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাতের বেলায় তাকে শুতে হত রেল ষ্টেশনের প্লাটফর্মে। সেখানেও রেলের কর্মচারি, রেল পুলিশ ছাড়াও কুলি মজুরেরা পর্যন্ত রোজ রাতে তার শরীরটাকে ভোগ করত। তারপর আর কোন উপায় না পেয়ে সে আমার কাছে এসেছিল। তার সব কথা শুনে আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। তাকে কাজে রেখেছিলাম। অবশ্য ওই এসকর্টের কাজেই। কারন এ ছাড়া তাকে দেবার মত আর কোন কাজ আমার কাছে ছিল না। কিন্তু কয়েকটা দিন আমার সাথে কাজ করবার পরেই মেয়েটা হঠাতই কোনকিছু না বলে উধাও হয়ে গেল। কিন্তু সে’কথা থাক। আমার সঙ্গের আরেকটা মেয়ে নিজের প্যারালাইজড বাবা আর পঙ্গু একটা ভাইয়ের চিকিৎসা আর ভরণ পোষণের জন্য হাজার চেষ্টা করেও সৎভাবে বেঁচে থেকে উপার্জন করবার কোন রাস্তা না পেয়ে আমার কাছে এসেছিল। সত্যি কথায়, ও-ই প্রথম মেয়ে যে আমার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিল। ক’দিন আগে মেয়েটার সেই পঙ্গু ভাইটা রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়েছে। আজও সে হসপিটালে আছে। কোমায়। সপ্তাহে সপ্তাহে আইসিইউ-এর ভাড়াই দিতে হচ্ছে প্রায় সত্তর লাখ টাকা। তুমিই বলো, এ কী ওর পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব? তাই হসপিটালের বিলটা আমিই দিচ্ছি সপ্তাহে সপ্তাহে। বাদবাকি যে’সব মেয়ে আছে প্রত্যেকেরই কোন না কোন কাহিনী আছে। সে’সব আর কত বলব তোমায়? কিন্তু এখন যদি আমি ব্যবসাটা বন্ধ করে দিই তাহলে এ মেয়েগুলোর কি হবে বুঝতে পারছ তুমি? জেনেশুনে অমন বিপদের মুখে আমি ওদের কী করে ফেলি বলো? তাই তো সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি নিতে পারছি না। অবশ্য এ’সব ব্যবসা বন্ধ করে দিতে চাইলে আরও অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেবে। তবে সে’সব আমি সামলে নিতে পারব। সামলাতে পারব না শুধু এই অভাগী মেয়েগুলোর দুর্ভোগ আর আমার ওপর বিমলের দখল। ব্যবসাটা যদি শেষ পর্যন্ত ছেড়েও দিই, তবু বিমলের হাত থেকে নিস্তার আমি পাব না” ।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কেন বৌদি, এ কাজ ছেড়ে দিলেও বিমল তোমায় ছাড়বে না কেন”?
মহিমা বলল, “বারে, তোমাকে সেদিন বললাম না? যে ছ’বছর আগে ওর কাছ থেকে টাকা ধার নেবার সময় ও আমার কাছে শর্ত রেখেছিল যে সে সারা জীবন সপ্তাহে দু’ তিনদিন করে ও আমার শরীরটাকে ভোগ করবে। আমিও যে সে শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তাই আমি আর কোনদিনই বিমলের হাত থেকে ছাড়া পাব না। অন্ততঃ যতদিন আমরা দু’জন বেঁচে থাকব ততদিন, কিংবা যতদিন আমার শরীরের ওপর ওর লোভ থাকবে”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “হু বুঝেছি বৌদি, বিমলের হাতে তুমি চিরদিনের জন্য বাঁধা পড়ে গেছ। কিন্তু বৌদি, তুমি এখন ব্যবসাটা নিয়ে মানসিকভাবে যতটা ভুগছো, তাতে তো মনে হয় এ ব্যবসা বন্ধ করে দিলে তুমি অনেক মানসিক শান্তি পাবে। অবশ্য বিমলের ব্যাপারটা থেকেই যাবে। তাই না বৌদি”?
মহিমা জবাব দিল, “সে তুমি ঠিকই বলছ মন্তি। বিমলের কাছ থেকে মুক্তি তো আমার পাবার সম্ভাবনাই নেই। পাবও না জানি। কিন্তু ব্যবসাটা ছেড়ে দিলেও অনেক শান্তি পেতাম। আমার এজেন্সীতে যে’সব মেয়ে কাজ করে, তাদের মধ্যে বীথিকা বলে একটা মেয়েরই সংকট খুব বেশী। ওই একটু আগে যার কথা বললাম তোমায়। মানে যার বাবা শয্যাশায়ী, আর ভাইটা পঙ্গু হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে। আর ও-ই আমার এসকর্টদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো আর বিশ্বস্ত। তাই আমি একবার ভেবেছিলাম যে পুরো ব্যবসাটাই আমি ওর হাতেই ছেড়ে দেব। কিন্তু ও নিজেই সেটা সামলাতে পারবে না বলেছে। তাই তো আমি কোন রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছি না”।
সীমন্তিনী বলল, “তার মানে তোমার এজেন্সীতে এখন মোট আটচল্লিশ জন মেয়ে মহিলা আছে, যারা বাধ্য হয়ে এ কাজ করছে, তাই তো”?
মহিমা বলল, “ঠিক তা নয় মন্তি। আজকের তারিখে আমার এজেন্সীতে একশ’র ওপরে মেয়ে মহিলা আছে। কিন্তু আমি এ কাজ ছেড়ে দিলে এই আটচল্লিশটা মেয়েই বেশী ভুগবে। অন্যদের তেমন ভোগান্তি হবে না। তবে এই আটচল্লিশ জন মেয়েই যে শুধু আমার ব্যবসায় জড়িত, ঠিক তা-ই কিন্তু নয়। এরা ছাড়াও আরও চল্লিশ পঞ্চাশ জন বিবাহিতা মহিলা আছে। এমনিতে তারা গৃহবধূ। এদের মাধ্যমে আমার ডাবল ইনকাম হয়। তবে তাদের নিয়ে আমার ভাবনার কিছু নেই। আমি কাজ ছেড়ে দিলেও তাদের একেবারেই কোন অসুবিধে হবে না”।
সীমন্তিনী ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “এদের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলুম না তো বৌদি। একদিকে তারা গৃহবধূ। আবার আরেকদিকে তাদের সাহায্যে তোমার ডাবল ইনকাম হয়, এটা কিভাবে সম্ভব"?
______________________________
সীমন্তিনী সাইড টেবিলের ওপর থেকে রাইটিং প্যাড আর কলম নিয়ে বলল, “বাপরে! এমন সব সিস্টেম করে রেখেছে? আগে ফার্স্ট ফ্লোরের বাথরুম, তারপর সেকেন্ড ফ্লোরের বা ......”।
ও’পাশ থেকে মহিমা সাথে সাথে বলে উঠল, “না না মন্তি, তুমি ভুল করে ফেলছ। অবশ্য এমন ভুলই হয়ত ইনকাম ট্যাক্স আর ইডির লোকেরাও করেছিল। কোনটা প্রথমে কোনটা পরে, তারা বুঝি সেটা ধরতে পারেনি। তুমিও একই ভুল করছ। প্রথম গ্রাউন্ডফ্লোর টয়লেট, তারপর সেকেন্ড ফ্লোরের টয়লেট, তারপর ফার্স্ট ফ্লোরের টয়লেট, আর সবার শেষ গ্রাউন্ডফ্লোরের পশ্চিম দেয়ালের আলমারি। এই হল সিকোয়েন্সটা। এই সিকোয়েন্সেই একটা একটা করে চারটে লক খুলবে। সিকোয়েন্সে ভুল হলে চেম্বারের কোন লকই খুলবে না। শুধু ওই ভেন্টিলেটরগুলোর কাঁচ কিংবা দেয়াল আলমারির পাল্লাটাই খুলবে। যার ভেতর আপত্তিজনক কিছুই রাখে না বিমল। এনফোর্সমেন্টের লোকেরা শুধু সেটুকুই দেখতে পেয়েছিল। তাই তার বিরূদ্ধে তেমন কোন চার্জই তারা আনতে পারেনি। আর সেফ বন্ধ করে বেরিয়ে আসবার সময় ঠিক উল্টো সিকোয়েন্সে সবটা করতে হয়। প্রথমে গ্রাউন্ডফ্লোরের আলমারির পাল্লা বন্ধ করবার নব ঘোরাতে হয়। তখন আলমারির পাল্লা বন্ধ হবার সাথে সাথে নিচে নেমে যাওয়া স্ল্যাবটা উপরে এসে দেয়ালের সাথে এমনভাবে সেঁটে যায় যে দেখে বোঝাই যায় না যে ওখানে অমন একটা মুভেবল স্ল্যাব থাকতে পারে। তারপর একে একে ফার্স্ট ফ্লোর, তারপর সেকেন্ড ফ্লোর আর সব শেষে গ্রাউন্ডফ্লোরের বাথরুম গুলোর ভেন্টিলেটরের কাঁচগুলো বন্ধ করবার নবগুলো উল্টোদিকে ঘোরাতে হয়”।
সীমন্তিনী তার রাইটিং প্যাডের লেখা গুলোর দিকে দেখতে দেখতে বলল, “সাংঘাতিক সিস্টেম বানিয়ে রেখেছে তো! এই সিকোয়েন্স গুলো মেনটেন না করলে তো কিছুতেই তাহলে ওই চেম্বার খুলতে পারবে না কেউ। কিন্তু বৌদি, তুমি যেমন বললে, সিকোয়েন্স গুলো কি ঠিক সে’রকমই? তোমার কি এতদিন আগে একবার দেখা সিকোয়েন্স গুলো ঠিক ঠিক মনে আছে? না, মানে বলছি কি, গুলিয়েও তো ফেলতে পারো তুমি”।
মহিমা বলল, “কোন কোন ফিল্মে এমন সব সিস্টেমে গোপনীয় জিনিস রাখার দৃশ্য তো দেখেছি। কিন্তু বাস্তব জীবনে অমন দৃশ্য আমি জীবনে ওই একবারই দেখেছি। তাই সিকোয়েন্সটা আমার খুব ভালভাবেই মনে আছে। একচুলও ভুল হচ্ছে না”।
সীমন্তিনী এবার আফসোসের সুরে বলল, “ইশ চাবিগুলো হাতে পেলে বদমাশটাকে অন্ততঃ সাত আট বছরের জন্যে জেলে পুরতে পারতুম গো বৌদি। কিন্তু আমি পড়ে আছি এখানে। আর চাবিগুলোই বা কি করে হাতে আনা যাবে জানিনা। তবে এটা তুমি খুব ভাল খবর দিয়েছ বৌদি। আচ্ছা বৌদি, বিমলের বাড়িতেও কি এমন কিছু লুকোনো জায়গা আছে”?
মহিমা বলল, “বিমলের সাথে আমার পরিচয় তো প্রায় ছ’ বছর আগে হয়েছে। আর তখন থেকেই সে আমার শরীরটা ভোগ করে আসছে। আমাকে সে খুব বিশ্বাসও করে। তাই হয়ত সেদিন তার ফার্ম হাউসের চেম্বারটা আমার সামনেই খুলেছিল। কারন ওর মনে এমন ধারণা অবশ্যই আছে যে ওর কোন ক্ষতি করবার কথা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারব না। আর তেমন কিছু করলে ও দু’মিনিটেই আমাকে এ পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলতে পারবে। তবে ওর বাড়িতেও এমন কোন চেম্বার বা গোপন জায়গা কিছু আছে কি না, এ ব্যাপারে ও আমাকে কখনও কিছু বলে নি। থাকলেও থাকতে পারে। দু’নম্বরী টাকার যাদের অভাব নেই, লুকিয়ে রাখার মত জায়গাও তাদের একাধিক থাকতেই পারে। তবে আমি সত্যি ওর বাড়ির ব্যাপারে কিছু জানি না। আর আমি বেশ কয়েকবার ওর অফিসে আর ওই একবারই বিমলের ফার্ম হাউসে গেলেও কখনও ওর বাড়িতে ও আমাকে নিয়ে যায়নি। আর আমি জানি, ও অন্য যেসব মেয়েদের ভোগ করে তাদের কাউকেও সে তার বাড়িতে নিয়ে যায় না কখনও। যদি দু’এক ঘন্টার প্রোগ্রাম থাকে তাহলে কোন একটা হোটেলে টোটেলেই কাজ সেরে নেয়। সারা রাতের জন্য কাউকে নিলেই সে ওই ফার্ম হাউসে যায়। আর যখন ব্ল্যাকমানি বা গোপন দস্তাবেজ সেফে রাখবার প্রয়োজন পড়ে, তখন সে ফার্ম হাউসের মেন গেটে কয়েকজন সিকিউরিটি রেখে একা বাড়িতে ঢোকে। আমাকে অবশ্য সে পরেও আরও অনেক দিন তার ওই ফার্ম হাউসে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বামীকে ঘরে রেখে বাইরে সারা রাত কাটানো সম্ভব নয় বলেই আমি আর কখনও সেখানে যাই নি। ওই একদিনই শুধু গিয়েছিলাম। তবে আমার এজেন্সীর অন্যান্য কয়েকজন মেয়েও ওর ফার্ম হাউসে অনেকবার গেছে। এখনও মাঝে মাঝে যায়। তবে তাদের কাউকে যে বিমল তার ওই সিক্রেট চেম্বার দেখাবে না, তা বলাই বাহুল্য”।
সীমন্তিনী মন দিয়ে মহিমার কথা শুনছিল। মহিমা থামতে সে জিজ্ঞেস করল, “তার মানে এখন আর তোমাকে ওর কাছে যেতে হয়না তাহলে”?
মহিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “আমি তো সারা জীবনের জন্য আমার শরীরটা ওর কাছে বন্ধক রেখেছি ভাই। যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন পর্যন্ত ওকে আমার শরীরটা দিতে আমি বাধ্য। তুমি জানো মন্তি, মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ভগবান আমাকে এতটা সুন্দর করে সৃষ্টি না করলেই বুঝি ভাল হত। কিন্তু সেটা তো আমার হাতে নেই। যতদিন আমি বেঁচে থাকব, বা যতদিন আমার শরীরটাতে পুরুষদের আকর্ষণ করার মত সৌন্দর্য বা যৌবন থাকবে, ততদিন বিমলের হাত থেকে আমার পরিত্রান নেই। তবে তুমি যেটা ভাবছ, সেটা হলে তো আমিও খুব খুশী হতাম। কিন্তু রাতের বেলায় আমাকে ভোগ করবার সুযোগ দিচ্ছি না বলেই, ও আর আমাকে ওর ফার্ম হাউসে নিয়ে যাবার সুযোগ পায়নি। কিন্তু তার পরিবর্তে বিমল প্রতিমাসে দু’দিন বা তিনদিন ইনস্টিটিউটে এসেই আমাকে ভোগ করে”।
সীমন্তিনী অবাক হবার ভাণ করে বলল, “ইনস্টিটিউটে? মানে তোমার যোগা ইনস্টিটিউটে? কিন্তু তুমি তো বলেছিলে যে ইনস্টিটিউটে তোমার এ ব্যবসা সংক্রান্ত কোন কিছুই হয় না”!
মহিমা বলল, “হ্যাঁ সেটা ঠিকই। ইনস্টিটিউটে এ’সব কাজ একেবারেই হয় না মন্তি। কিন্তু বিমল যেদিন আসে তখন বেশীর ভাগ সময়েই আমি ইনস্টিটিউটেই থাকি তো। তাই ওভাবে বলেছি। আসলে আমার ইনস্টিটিউটের ঠিক নিচের ফ্লোরেই আমার আরো একটা রুম ভাড়া নেওয়া আছে। ওখানে বসেই আমি এ ব্যবসার ব্যাপারগুলো নিয়ে ডীল করি। আর বিমলও সেখানেই আসে। আর ওই রুমেই আমি বিমলের হাতে আমার শরীরটা তুলে দিই। ছ’টা বছর ধরে এমনই চলছে। কিন্তু আমি এখন ভেতরে ভেতরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। কিছুদিন ধরেই আমি ভাবছি, এ পাপের ব্যবসাটা এবার বন্ধ করে দেব। কিন্তু সেটা করলেও বিমলের হাত থেকে তো আমি ছাড়া পাব না। আর তাছাড়া যে মেয়েগুলো পেটের দায়ে পড়ে আমার কাজের সাথে যুক্ত হয়েছে, ওদের ওপরেও বিপদ নেমে আসবে। তুমি জানো মন্তি, ভাই, মানে তোমার দাদাভাই রতীশ আর রচনার সাথে পরিচিত হবার পর থেকেই আমার মনটা কেন জানিনা এ ব্যবসা থেকে আমাকে সরে আসতে বলছে”।
****************
সীমন্তিনী সুযোগ পেয়ে বলল, “আচ্ছা বৌদি, তোমার ওই ব্যবসা থেকে মাসে কত আয় হয় গো”?
মহিমা একটু হেসে বলল, “তার কি আর কোন ঠিক ঠিকানা আছে ভাই? ক্লায়েন্টদের ডিমান্ড যত বেশী হয় আমার আয়ও তত বেশী হয়। তবে কমপক্ষেও আঠারো থেকে বিশ লাখ তো হয়ই এক মাসে। অবশ্য, থানা পুলিশ উকিল আর কিছু এশটাব্লিশমেন্টের খরচা বাদ দিয়ে পনেরো ষোল লাখ তো কম করেও ঘরে আসে। বিভিন্ন ব্যাঙ্কে নামী বেনামী একাউন্টে সে’সব জমা করে রেখেছি। ঘরে তো আর বেশী টাকা রাখা সম্ভব হয় না। আর বিমলের মত অমন কোন চেম্বারও আমি বানাতে পারিনি। তাছাড়া ঘরে অত টাকা রাখলে অরিন্দমের কাছে ধরা পড়ে যাব”।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “অরিন্দম কে গো বৌদি”?
মহিমা হেসে বলল, “ও তোমাকে বুঝি অরিন্দমের কথা বলাই হয়নি তাই না? অরিন্দম, মানে অরিন্দম সেন আমার স্বামী। বিয়ের আগে দিল্লীতে আমরা এক কলেজে পড়তাম। তারপর আমরা একে অপরের প্রেমে পড়েছিলাম। এমবিএ শেষ হতেই মা-বাবার মতের বিরুদ্ধে গিয়েই আমরা বিয়ে করেছিলাম। আর তার পর পরই আমরা কলকাতা চলে এসেছিলাম। ও আমাদের মহিমা মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউটের একজন পার্টনারও। তবে ও কখনোই ইনস্টিটিউটে আসে না। ইনস্টিটিউট নিয়ে কোনও ভাবনাও ভাবে না। ও ওর নিজের ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসা নিয়েই সর্বক্ষণ ব্যস্ত। আর ব্যবসাও যত বাড়ছে, ওর ব্যস্ততাও তত বাড়ছে। এমনিতে রোজ সকালে আর রাতে এগারোটা বা বারোটার পরেই আমাদের দেখা হয়। তবে বছর খানেক আগে থেকে ওকে মাঝে মাঝেই দিল্লী, ফরিদাবাদ আর চণ্ডীগড় যেতে হচ্ছে ব্যবসার কাজে। তাই এখন মাসের মধ্যে অন্ততঃ দশ থেকে বারোদিন সে বাইরেই থাকে। এই তো, আজও সে বাড়িতে নেই। ফরিদাবাদ গেছে। তাই তো তোমার সাথে নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারছি”।
সীমন্তিনী এবার আসল কথায় আসতে বলল, “আচ্ছা বৌদি, একটা কথা বলব? যদি কিছু মনে না করো”।
মহিমা বলল, “আমি তো তোমার কাছে আমার লজ্জার কথাগুলো কিছুই গোপন করছি না ভাই। রতীশ বা রচনাকে আমি এ’সব কথা কিছুতেই বলতে পারব না। কিন্তু রচনাকে বাঁচাবার জন্যেই তোমার কাছে আমি সব কথা খুলে বলেছি। না বললে তোমাকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারতাম না যে ওর বিপদের কথা আমি কিকরে জানতে পারলাম। আর সত্যি বলছি মন্তি, রতীশ আর রচনার সাথে কথা বলে আমার খুব ভাল লাগে। তোমার সাথে কথা বলতেও আমার ভাল লাগছে। বুঝতে পারছি, এটা তোমাদের পারিবারিক শিক্ষা। তোমরা দু’ ভাই বোনই সত্যিই অসাধারণ। অচেনা মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যেই তোমরা নিজের কাছে টেনে নিতে পার। তাই তো নিজের বিপদ আছে জেনেও কেন জানিনা আমার সব গোপন কথা তোমাকে খুলে বলছি। তোমার যা জানতে ইচ্ছে করে, নিঃসঙ্কোচে তা জিজ্ঞেস করতে পার ভাই”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা বৌদি তুমি যে বললে, এ পাপের ব্যবসা তুমি এখন ছেড়ে দিতে চাইছ। সেটা কি সত্যি মন থেকে বলছ? মানে আমি বলতে চাইছি, যে ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে পনেরো ষোল লাখ টাকা তুমি উপার্জন করছ, তেমন একটা ব্যবসা কি এত সহজেই ছেড়ে দিতে পারবে তুমি? তাতে তোমার কত টাকার লোকশান হতে পারে, একবার ভেবে দেখেছ”?
মহিমা জবাব দিল, “শুধু টাকার অঙ্কের দিকে দেখলে, বা আর্থিক লাভের কথা ভাবলে এমন ব্যবসা যে একবার শুরু করতে পেরেছে, সে আর ছেড়ে দিতে পারে না মন্তি। একটা সময় অবশ্য টাকা উপার্জন করবার জন্যেই আমি এ ব্যবসা শুরু করেছিলাম। ছেলেমেয়ে দুটোর অ্যাডমিশনের জন্য চল্লিশ লাখের মত টাকা আর অন্য কোনভাবে জোটাতে পারিনি। অরিন্দমের হাতেও তখন খুব সামান্যই ছিল। আর আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটটাও তখন নতুন। খুব বেশী আয় হত না। তখনই বাধ্য হয়েই বিমলের ধার মেটাতে এ এসকর্ট ব্যবসাটা শুরু করেছিলাম। অবশ্য বিমলের কাছে নিজেকে বাঁধা দেবার আগেই আমি শরীর বিক্রি করতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু বিমলের কাছ থেকে ধার নেওয়া টাকা ফিরিয়ে দেবার পরেও টাকা কামানোর লোভটা কমেনি। বরং দিনে দিনে যত লাভ হচ্ছিল ততই যেন টাকা কামানোর নেশাটা ধীরে ধীরে আরও চেপে বসেছিল আমার মনে। এখন যথেচ্ছভাবে টাকা খরচ করতে পারি আমি। বরং বলতে পার যে খুশী মত খরচ করেও আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স কমছেই না। আমার আশেপাশে যারা থাকে, বা যে’সব গরীব দুঃখী মেয়েরা নিরুপায় হয়ে আমার এসকর্টের ব্যবসায় যোগ দিয়েছে, এদের যে কোনও প্রয়োজনে আমি যে কোন মূহুর্তে তাদের আর্থিক সাহায্য করতে পারি এবং প্রয়োজন হলেই তেমনটা করি আমি। কিন্তু তা সত্বেও আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়তে বাড়তে এমন একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে আমি যে কোন মূহুর্তে আট দশ কোটি টাকা খরচ করতে পারি। এখনও যত টাকা আমার হাতে আছে, তাতে আমাদের পরে আমাদের ছেলেমেয়েরাও বসে বসে আরামের জীবন কাটাতে পারবে। তবে আমি নিজেই সেটা চাই না। আমি তো নিজে একটা নষ্টা মেয়েই। মা বাবার ঘরে থাকতেই ছোট বয়স থেকেই নিজের শরীর বেঁচে পয়সা কামাতে শিখে গিয়েছিলাম। তবে এখন যখন মাঝে মাঝে পুরনো কথা গুলো নিয়ে ভাবি, তখন বুঝতে পারি, সেটার খুব একটা প্রয়োজনও ছিল না। তবে বিয়ের পর সত্যি সে’সব ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্বামী সংসার সন্তানদের আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। আঠারো ঊণিশটা বছর বেশ ভালই ছিলাম। মা হিসেবে ছেলেমেয়েদের কতটা সুশিক্ষা দিতে পেরেছি, তা জানিনা। কিন্তু অরিন্দমের শিক্ষায় ছেলেমেয়েরাও খুব ভাল শিক্ষা পেয়েছে। তবে ওদের উঁচু স্তরের শিক্ষা দিতে গিয়েই আবার সেই পুরনো নর্দমাতেই গিয়ে পড়তে হয়েছিল আমাকে। ছেলেমেয়ে দুটো তো এখনও পড়াশোনা করছে। ওদের জীবন তো বলতে গেলে শুরুই হয়নি এখনও। তবু ওরাও যে কখনও কোন অসৎ উপায়ে টাকা উপার্জন করবার কথা ভাববে না, তা এখন থেকেই বুঝতে পারি। অরিন্দমের ব্যবসাতেও ওর পরিশ্রমে আর ভগবানের আশীর্বাদে এখন ভালই আয় হচ্ছে। ওর আয় থেকেই আমাদের সংসারের প্রয়োজনীয় সমস্ত খরচ অনায়াসে মিটে যায় এখন। যোগা সেন্টারের ব্যবসাটাও বছর চারেক আগে থেকে ভালই চলছিল। রতীশ কাজে যোগ দেবার পর আয় আরো বেড়েছে। বছর খানেক আগে থেকেই একটা চিন্তা আমার মাথায় এসেছে যে এ টাকাগুলো নিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত করবটা কী? স্বামী ছেলে মেয়ে কাউকেই তো দিতে পারব না। কারন তারা যদি প্রশ্ন করে যে এত টাকা আমি কোথায় পেলাম, আর সে প্রশ্ন তো অবধারিত ভাবেই তারা করবে। কিন্তু তাদের প্রশ্নের জবাব তো আমি দিতে পারব না। আমি কাউকে নমিনি করে যেতেও পারব না। কারন আমি মরার পরেও টাকাগুলো পেলে স্বামী বা ছেলে মেয়ের মনে একই প্রশ্ন উঠবে। তখন হয়ত তাদের প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য আমি থাকব না। কিন্তু কোটি কোটি টাকা দেখে তারা প্রত্যেকেই বুঝে যাবে যে এ’সব সৎপথের উপার্জন হতে পারে না। তাই যতদিন আমি বেঁচে থাকব, ততদিন যখের ধনের মত আগলে আগলে রাখতে হবে সেই টাকা গুলোকে। আর আমি মরে যাবার পর ও’গুলো ব্যাঙ্কে আনক্লেইমড ডিপজিট হিসেবেই হয়ত পরে থাকবে। তাতে আর কার কী কাজে লাগবে বলো? আজ যদি বিমল দশ কোটি টাকার বিনিময়ে রচনার ওপর থেকে তার কূ-নজর সরিয়ে নিতে রাজি হয়, তাহলে আমি আমার জমানো সব টাকা দিয়ে রচনাকে বিপদমুক্ত করতে এক মিনিটও ভাবতাম না। কিন্তু বিমল যে তাতে কিছুতেই রাজি হবে না এ তো আমি খুব ভালভাবেই জানি। তাই তো বারবার ভাবছি এ’সব এখন বন্ধ করে দেওয়াই ভাল। কিন্তু পাকাপাকিভাবে সে সিদ্ধান্তটাও নিতে পারছি না গো মেয়েগুলোর কথা ভেবে। তুমি জানো কি না জানিনা মন্তি, তবে এ শহরে আমার মত এমন ব্যবসা অনেকেই করে। তাদের আমরা বলি এসকর্ট প্রোভাইডার। সে’সব এসকর্ট প্রোভাইডারদের কাছে যে’সব মেয়েরা এসকর্ট হিসেবে কাজ করে, তারা একবার প্রোভাইডারদের খপ্পরে পড়ে গেলে সহজে আর সেখান থেকে বেরোতে পারে না। ভাল পথে চলবার সুযোগ পেলে তারা চালাকি করে বা পালিয়ে বাঁচতে চাইলে তাদের প্রোভাইডারদের পোষা গুণ্ডাদের হাতে খুন হয়ে যায়। ওই পথ থেকে বেঁচে ফিরে আসবার রাস্তা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় তাদের কাছে। কিন্তু আমার এজেন্সীতে যে’সব মেয়েরা কাজ করে তারা নিজেদের পেটের দায়ে পড়ে অথবা সংসারের চাপে পড়ে নিতান্ত নিরুপায় হয়েই আমার কাছে এসেছে। আসলে আমি প্রথম থেকেই যাকে তাকে আমার ব্যবসায় ঢোকাতাম না। ইন্টারভিউ নিয়ে যদি বুঝতে পারতাম যে তার সামনে আর অন্য কোন পথ খোলা নেই, তেমন মেয়েদেরই আমি কাজে নিতাম। অসৎ পথে উপার্জিত টাকা দিয়ে আমি কয়েকটা পরিবারের ভরণ পোষনের সংস্থান করে দিতাম। অসামাজিক কাজ করে সমাজের কয়েকটা দুঃস্থ পরিবারকে খাওয়া পড়ার সুযোগ করে দিয়ে নিজের মনের পাপবোধটাকে খানিকটা হাল্কা করতে চাইতাম। তাদের কারো ওপর আমি কোন রকম বাধ্য বাধকতার বোঝা চাপিয়ে দিই না। তাদেরকে কক্ষনও আমি নিজেদের ইচ্ছের বিরূদ্ধে কোন ক্লায়েন্টের কাছে জোর করে পাঠাঁই না। বরং একটা ডিল ফাইনাল করবার আগে তাদের সুবিধে অসুবিধের কথা আমি আগে জেনে নিই। তাদের যদি সামান্যও অসুবিধে থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে আমি অন্য কোনও এসকর্ট পাঠিয়ে থাকি। তারা কেউ যদি চিরদিনের জন্যে এ রাস্তা ছেড়ে সৎ ভাবে জীবনযাপন করবার সুযোগ পায়, আমি কাউকে বাঁধা দিই না। বরং একটা মেয়ে ভাল পথে বাঁচবার সুযোগ পেয়েছে শুনলে আমি তাদের উৎসাহিতই করি। প্রয়োজন হলে তাদের আমি কিছু আর্থিক সাহায্যও করে থাকি। আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি তাকে যেন আর আমার কাছে ফিরে আসতে না হয়। এখন আমার ব্যবসাতে মোট আটচল্লিশ জন অমন মেয়ে মহিলা আছে। ছেলেও আছে জনা পঁচিশেকের মত। তবে ছেলেগুলোকে নিয়ে অত ভাবি না। কারন ওরা এ কাজে আসে মূলতঃ নারীসঙ্গ পাবার লোভে। আর সেই সাথে টাকা উপার্জনের সহজ একটা রাস্তা পেয়ে যায় বলে। আমি কাজ বন্ধ করে দিলেও তারা অনায়াসেই অন্যান্য প্রোভাইডারের কাছে গিয়ে কাজ করতে পারবে, বা তারা অন্য কোন কাজও করতে পারে। কিন্তু ওই মেয়েগুলো যদি আমাকে ছেড়ে অন্য প্রোভাইডারদের কাছে যায় তাহলে তারা বিপদে পড়বে। তাদের জীবনগুলোই বিপন্ন হয়ে যাবে। যেটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছি না”।
মহিমা একটু থামতে সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “এমন এক অপরাধমূলক কাজেও যারা তোমার সঙ্গী, তুমি তাদেরকে তোমার ব্যবসার মূলধন করলেও মেয়েগুলোকে তুমি খুব ভালবাস, তাই না বৌদি”?
মহিমা একটু হেসে জবাব দিল, “এমন কথা শুনে কেউ না হেসে থাকতে পারবে না, তাই না মন্তি? পাপকাজে লিপ্ত থেকেও অন্যকে এমন ভাবে ভালবাসি, এ’কথা শুনলে সকলেই মনে মনে হাসবে, জানি। কিন্তু আসলে সেটাই সত্যি ভাই। তোমরা ভাবতেও পারবে না মন্তি, কত মেয়ে বিনা দোষে কতভাবে নির্যাতিতা হয়েই না এমন পথে নামতে বাধ্য হয়। একেক জনের একেক রকম কাহিনী। সে’সব কাহিনী তোমাকে সব খুলে বলতে গেলে রাতের পর রাত পেরিয়ে যাবে। জানো মন্তি, মাত্র মাস দেড়েক আগে একটা মেয়ে আমার কাছে এসেছিল। বেশ কয়েক বছর আগে মেয়েটার যেদিন বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল, সেদিনই সে তাদের পাড়ারই কোন একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই ছেলেটা আর তার এক বন্ধু মিলে মেয়েটাকে বেশ কয়েকমাস একনাগাড়ে রেপ করবার পর তাকে অন্য পুরুষদের কাছে ভাড়ায় খাটাতে শুরু করেছিল। অনেকদিন পর মেয়েটা কোনভাবে দুরের ওই জায়গাটা থেকে পালিয়ে কলকাতায় এসেছিল। কিন্তু তার বাড়ির লোকেরা তাকে আর নিজেদের সংসারে রাখতে রাজি হয় নি। মেয়েটা হাজার চেষ্টা করেও কোন সম্মানজনক কাজ খুঁজে না পেয়ে শেষে ভিক্ষে করতে শুরু করেছিল। কিন্তু রাতের বেলায় তাকে শুতে হত রেল ষ্টেশনের প্লাটফর্মে। সেখানেও রেলের কর্মচারি, রেল পুলিশ ছাড়াও কুলি মজুরেরা পর্যন্ত রোজ রাতে তার শরীরটাকে ভোগ করত। তারপর আর কোন উপায় না পেয়ে সে আমার কাছে এসেছিল। তার সব কথা শুনে আমি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারিনি। তাকে কাজে রেখেছিলাম। অবশ্য ওই এসকর্টের কাজেই। কারন এ ছাড়া তাকে দেবার মত আর কোন কাজ আমার কাছে ছিল না। কিন্তু কয়েকটা দিন আমার সাথে কাজ করবার পরেই মেয়েটা হঠাতই কোনকিছু না বলে উধাও হয়ে গেল। কিন্তু সে’কথা থাক। আমার সঙ্গের আরেকটা মেয়ে নিজের প্যারালাইজড বাবা আর পঙ্গু একটা ভাইয়ের চিকিৎসা আর ভরণ পোষণের জন্য হাজার চেষ্টা করেও সৎভাবে বেঁচে থেকে উপার্জন করবার কোন রাস্তা না পেয়ে আমার কাছে এসেছিল। সত্যি কথায়, ও-ই প্রথম মেয়ে যে আমার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিল। ক’দিন আগে মেয়েটার সেই পঙ্গু ভাইটা রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়েছে। আজও সে হসপিটালে আছে। কোমায়। সপ্তাহে সপ্তাহে আইসিইউ-এর ভাড়াই দিতে হচ্ছে প্রায় সত্তর লাখ টাকা। তুমিই বলো, এ কী ওর পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব? তাই হসপিটালের বিলটা আমিই দিচ্ছি সপ্তাহে সপ্তাহে। বাদবাকি যে’সব মেয়ে আছে প্রত্যেকেরই কোন না কোন কাহিনী আছে। সে’সব আর কত বলব তোমায়? কিন্তু এখন যদি আমি ব্যবসাটা বন্ধ করে দিই তাহলে এ মেয়েগুলোর কি হবে বুঝতে পারছ তুমি? জেনেশুনে অমন বিপদের মুখে আমি ওদের কী করে ফেলি বলো? তাই তো সিদ্ধান্তটা পুরোপুরি নিতে পারছি না। অবশ্য এ’সব ব্যবসা বন্ধ করে দিতে চাইলে আরও অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দেবে। তবে সে’সব আমি সামলে নিতে পারব। সামলাতে পারব না শুধু এই অভাগী মেয়েগুলোর দুর্ভোগ আর আমার ওপর বিমলের দখল। ব্যবসাটা যদি শেষ পর্যন্ত ছেড়েও দিই, তবু বিমলের হাত থেকে নিস্তার আমি পাব না” ।
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কেন বৌদি, এ কাজ ছেড়ে দিলেও বিমল তোমায় ছাড়বে না কেন”?
মহিমা বলল, “বারে, তোমাকে সেদিন বললাম না? যে ছ’বছর আগে ওর কাছ থেকে টাকা ধার নেবার সময় ও আমার কাছে শর্ত রেখেছিল যে সে সারা জীবন সপ্তাহে দু’ তিনদিন করে ও আমার শরীরটাকে ভোগ করবে। আমিও যে সে শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। তাই আমি আর কোনদিনই বিমলের হাত থেকে ছাড়া পাব না। অন্ততঃ যতদিন আমরা দু’জন বেঁচে থাকব ততদিন, কিংবা যতদিন আমার শরীরের ওপর ওর লোভ থাকবে”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “হু বুঝেছি বৌদি, বিমলের হাতে তুমি চিরদিনের জন্য বাঁধা পড়ে গেছ। কিন্তু বৌদি, তুমি এখন ব্যবসাটা নিয়ে মানসিকভাবে যতটা ভুগছো, তাতে তো মনে হয় এ ব্যবসা বন্ধ করে দিলে তুমি অনেক মানসিক শান্তি পাবে। অবশ্য বিমলের ব্যাপারটা থেকেই যাবে। তাই না বৌদি”?
মহিমা জবাব দিল, “সে তুমি ঠিকই বলছ মন্তি। বিমলের কাছ থেকে মুক্তি তো আমার পাবার সম্ভাবনাই নেই। পাবও না জানি। কিন্তু ব্যবসাটা ছেড়ে দিলেও অনেক শান্তি পেতাম। আমার এজেন্সীতে যে’সব মেয়ে কাজ করে, তাদের মধ্যে বীথিকা বলে একটা মেয়েরই সংকট খুব বেশী। ওই একটু আগে যার কথা বললাম তোমায়। মানে যার বাবা শয্যাশায়ী, আর ভাইটা পঙ্গু হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে। আর ও-ই আমার এসকর্টদের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো আর বিশ্বস্ত। তাই আমি একবার ভেবেছিলাম যে পুরো ব্যবসাটাই আমি ওর হাতেই ছেড়ে দেব। কিন্তু ও নিজেই সেটা সামলাতে পারবে না বলেছে। তাই তো আমি কোন রাস্তাই খুঁজে পাচ্ছি না”।
সীমন্তিনী বলল, “তার মানে তোমার এজেন্সীতে এখন মোট আটচল্লিশ জন মেয়ে মহিলা আছে, যারা বাধ্য হয়ে এ কাজ করছে, তাই তো”?
মহিমা বলল, “ঠিক তা নয় মন্তি। আজকের তারিখে আমার এজেন্সীতে একশ’র ওপরে মেয়ে মহিলা আছে। কিন্তু আমি এ কাজ ছেড়ে দিলে এই আটচল্লিশটা মেয়েই বেশী ভুগবে। অন্যদের তেমন ভোগান্তি হবে না। তবে এই আটচল্লিশ জন মেয়েই যে শুধু আমার ব্যবসায় জড়িত, ঠিক তা-ই কিন্তু নয়। এরা ছাড়াও আরও চল্লিশ পঞ্চাশ জন বিবাহিতা মহিলা আছে। এমনিতে তারা গৃহবধূ। এদের মাধ্যমে আমার ডাবল ইনকাম হয়। তবে তাদের নিয়ে আমার ভাবনার কিছু নেই। আমি কাজ ছেড়ে দিলেও তাদের একেবারেই কোন অসুবিধে হবে না”।
সীমন্তিনী ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “এদের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলুম না তো বৌদি। একদিকে তারা গৃহবধূ। আবার আরেকদিকে তাদের সাহায্যে তোমার ডাবল ইনকাম হয়, এটা কিভাবে সম্ভব"?
______________________________