17-03-2020, 07:11 PM
(Update No. 164)
বাইরের কম্পাউন্ডে গাড়ির আওয়াজ পেতেই অর্চনা ঘরের দরজা খুলে দরজাটা অল্প ফাঁক করে সীমন্তিনীকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই সে ছুটে বেরিয়ে এল। বারান্দা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করতেই সীমন্তিনী চেঁচিয়ে বলল, “কি করছিস অর্চু, পড়ে যাবি তো। আস্তে আস্তে”।
অর্চনা ছুটে এসে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে লাগল। সীমন্তিনীর একহাতে অফিসের ভারী ব্যাগটা। অন্য হাতে রচনাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে ছোট্ট একটা আদরের চুমু খেয়ে প্রশ্রয়ের সুরে বলল, “কি হচ্ছে এটা সোনা? তোর শরীরটা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এভাবে এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নামতে আছে? আচ্ছা কি হয়েছে বল তো? একা ছিলিস বলে খুব খারাপ লাগছিল”?
অর্চনা সীমন্তিনীকে ছেড়ে তার হাত থেকে ব্যাগটা নিজের হাতে নিতে নিতে বলল, “আমি একদম ঠিক আছি গো দিদিভাই। তোমার ছোঁয়ায় আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। আচ্ছা চলো চলো, তাড়াতাড়ি আগে ভেতরে চলো তো”।
সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলল, “কী, হয়েছেটা কি বলবি তো। এত খুশীর কারনটা কি”?
অর্চনা জবাব দিল, “কিচ্ছু না। তুমি ঘরে চলো। তুমি ফিরে এলে একসাথে খাব বলে আমি বিকেলে চা খাইনি। তাই আর কি”।
বারান্দায় উঠে লক্ষ্মীকে মিটিমিটি হাসতে দেখে সীমন্তিনী তাকে জিজ্ঞেস করল, “ওমা। তোমার আবার কি হল লক্ষ্মীদি? এভাবে হাসছ কেন”?
লক্ষ্মী হাসতে হাসতেই বলল, “বলা বারণ আছে গো দিদিমণি। তাই এখন কিচ্ছুটি বলতে পারব না। তবে তোমার এই পাগলী বোনটা আজ আমাকে বিকেলের খাবার বানাতে দেয়নি। তোমার জন্য সে নিজে হাতে আজ আলুর দম আর লুচি বানিয়েছে”।
সীমন্তিনী আর অর্চনা ততক্ষণে ড্রয়িং রুমের ভেতর এসে ঢুকেছে। লক্ষ্মী দরজা বন্ধ করতেই সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে উচ্ছ্বসিত গলায় জিজ্ঞেস করল, “সত্যি অর্চু? আলুর দম করেছিস তুই? গুড়ো আলু দিয়ে”?
অর্চনাও খুশী ভরা গলায় বলল, “রচুর মুখেই শুনলুম যে তুমি গুড়ো আলুর দম খেতে খুব পছন্দ কর। কাল লক্ষ্মীদি বাজার থেকে অমন গুড়ো আলু এনেছে। তাই ঘরে ছিল বলে বানিয়েই ফেললাম। কিন্তু সেটার সাথে তো লুচি হলেই খেতে বেশী ভাল লাগে। তাই লুচির লেচি করে রেখে দিয়েছি। তুমি ফ্রেশ হতে হতে আমার লুচি ভাজাও হয়ে যাবে। যাও যাও, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে এস”।
সীমন্তিনী নিজের ঘরের দিকে এগোতেই লক্ষ্মী অর্চনার হাত থেকে সীমন্তিনীর ব্যাগটা নিয়ে বলল, “যাও সোনাদি, আমাকে তো তুমি আগেই বারণ করেছ, তাই তুমি কয়েকটা লুচি বেলে ফেলো। আমি দিদিমণির ব্যাগটা ঘরে রেখে এসে তোমাকে সাহায্য করছি”।
মিনিট পনেরো পর সীমন্তিনী বাথরুম থেকে বেরিয়েই সোজা রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বলল, “তাহলে এটাই তোর খুশীর আসল কারন, তাই না অর্চু”? তার পড়নে একটা খুব সুন্দর ডিজাইনের নতুন নাইটি।
লক্ষ্মী অর্চনার ও’পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লুচি বেলছিল। সে সীমন্তিনীর কাছে এসে ডানপাশ বামপাশ থেকে তাকে দেখতে দেখতে বলল, “ওমা দিদিমণি, কী সুন্দর লাগছে গো তোমাকে দেখতে”।
অর্চনা একটা লুচি থালায় রেখে গ্যাসের আঁচটা কমিয়ে দিয়ে সীমন্তিনীর কাছে এসে বলল, “মাপ টাপ ঠিকঠাক হয়েছে তো দিদিভাই? কোথাও বেশী টাইট বা লুজ হয়নি তো? আর ঝুলটা.. দেখি দেখি” বলতে বলতে সীমন্তিনীর কাঁধ ধরে তাকে এ’পাশ ও’পাশে ঘুরিয়ে দেখে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “না ঠিকই আছে”। তারপর আবার নাইটিটার কাঁধের দিকে, বগল তলার দিকে আর কোমড়ের দিকে একটু টেনে টুনে বলল, “নাঃ, সব কিছুই ঠিক আছে। তোমার পছন্দ হয়েছে দিদিভাই? সত্যি কথা বলবে, একদম বানিয়ে বলবে না কিন্তু”।
সীমন্তিনী অর্চনার একটা কাঁধে হাত রেখে বলল, “খুব পছন্দ হয়েছে রে অর্চু। কিন্তু এ সবের মানেটা কি বল তো? আমার কি নাইটির অভাব আছে? যে তুই এমন একটা নতুন নাইটি কিনে এনেছিস। আর পয়সাই বা পেলি কোথায় তুই”?
তখন লক্ষ্মী বলে উঠল, “ওমা শোনো কথা? কিনতে যাবে কেন গো দিদিমণি? সোনাদি তো তোমার জন্যে এটা নিজে হাতে বানিয়েছে গো। তুমি আর ছোড়দি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পর নিজের ঘরে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে এটা বানিয়ে যাচ্ছিল তিন চার দিন ধরে”।
সীমন্তিনী বিষ্ময় আর খুশী মিশ্রিত গলায় বলল, “সত্যি নাকি রে অর্চু? তুই নিজে হাতে এটা বানিয়েছিস? কিন্তু কি করে বানালি? আমার ঘরে তো সেলাই মেশিন নেই”?
অর্চনা হাসি হাসি মুখে বলল, “মা আমার ব্যাগে এ কাপড়টার সাথে সাথে সুচ, সুতো, বোতাম, হুক আর কাঁচিও ভরে দিয়েছিল। আর মেশিনের প্রয়োজন হয়নি। আমি হাতেই সেলাই করেছি”।
সীমন্তিনী এবার আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই নিজে হাতে এই পুরো নাইটিটা সেলাই করেছিস! তুই কাটিং টেলারিং-এর কাজ জানিস নাকি”?
অর্চনা খুশী খুশী মুখে জবাব দিল, “কিছু কিছু জানি দিদিভাই। কলেজে পড়বার সময়েই আমাদের পাশের বাড়ির এক বৌদির কাছে কিছুদিন শিখেছিলুম। তবে এত বছর বাদে বানাতে একটু ভয় ভয়ই করছিল। এখন চিন্তাটা দুর হল। কিন্তু তোমার পছন্দ হয়েছে তো দিদিভাই”?
সীমন্তিনী এগিয়ে এসে অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “খুব খুব পছন্দ হয়েছে রে পাগলী। আমার জীবনে এমন সুন্দর উপহার আর আগে কখনও পাইনি রে বোন” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।
অর্চনাও সাথে সাথে সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ওমা, তুমি কাঁদছ কেন দিদিভাই? কেঁদো না প্লীজ। আমার লক্ষ্মী সোনা দিদিভাই। চুপ করো”।
সীমন্তিনী অর্চনাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলল, “এমন খুশী আমি বহু বছর পাইনি রে অর্চু। তুই জানিস? আমার মা-ও খুব ভাল কাটিং টেলারিং-এর কাজ জানতেন। আমার মনে আছে, আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। বোধ হয় ক্লাস টু থ্রিতে পড়তাম। তখন মা নিজে হাতে সেলাই করে আমাকে একটা ফ্রক বানিয়ে দিয়েছিলেন। খুব পছন্দ হয়েছিল আমার সে ফ্রকটা। বাড়িতে সবসময় ওটাই পড়ে থাকতে চাইতাম আমি। কিন্তু তার কয়েক বছর বাদেই সেই ......” বলেই থেমে গেল।
নিজেকে সামলে কথাটা ঘুরিয়ে বলল, “আচ্ছা, তাহলে এটা মাসির প্ল্যান, তাই না? আর তুইও কাউকে কিছু না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এটা বানিয়েছিস আমাকে সারপ্রাইজ দিবি বলে তাই না”?
অর্চনা হেসে বলল, “হ্যাঁ গো দিদিভাই। তবে আমি নিজে হাতে এটা বানালেও, এটা কিন্তু মা-র ইচ্ছেতেই বানালুম। তুমি যেদিন মাকে বলেছিলে যে আমায় তোমার এখানে নিয়ে আসবে, মা সেদিনই বাজার থেকে এ কাপড়টা কিনে এনেছিলেন। আর আমাকে বলেছিলেন যে এখানে এসে তোমার পড়নের অন্য কোন নাইটির মাপে যেন আমি কেটে সেলাই করে দিই”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা, বাকি কথা না হয় খেতে খেতে বলা যাবে। ভাজা লুচিগুলো তো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। আমি টেবিলে বসছি”।
সীমন্তিনী নিজের ঘর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসতেই অর্চনা আর লক্ষ্মী মিলে দুটো প্লেটে খাবার সাজাতে শুরু করতেই সীমন্তিনী বলল, “লক্ষ্মীদি, তুমিও একসাথে বসে পরো”।
অর্চনাও বলল, “হ্যাঁ লক্ষ্মীদি, তোমার জন্যেও একটা প্লেট নিয়ে এস। তিনজনে একসাথে বসে খেয়ে নিই। তারপর না হয় চা করা যাবে”।
লক্ষ্মী মনে মনে খুশী হয়ে তার নিজের জন্যেও একটা প্লেট এনে রাখল টেবিলে। অর্চনা প্রত্যেকটা প্লেটে চার চারটে করে ফুলকো লুচি আর ছোট ছোট বাটিতে আলুর দম আর চামচ সাজিয়ে সবাইকে দিয়ে নিজেও সীমন্তিনীর পাশের চেয়ারে বসে পড়ল। প্রথম গ্রাস মুখে দিয়েই সীমন্তিনী চোখ বড় বড় করে অর্চনার দিকে চেয়ে বলল, “ইশ কি দারুণ বানিয়েছিস রে অর্চু। আহা, মনটা ভরে গেল আমার রে”।
লক্ষ্মীও বলল, “হ্যাঁ গো দিদিমণি, ঠিক বলেছ তুমি। সত্যি দারুণ লাগছে গো। আমার বৌদিমণির মতই এ সোনাদির হাতেও যাদু আছে গো”।
সীমন্তিনী বলল, “ঠিক বলেছ তুমি লক্ষ্মীদি। দুই বোনের হাতেই যাদু আছে। আর এ যাদুটা ওরা কার কাছ থেকে শিখেছে সেটা জানো? আমার মাসির কাছে। আজ আমার একদিনের কথা মনে পড়ছে। তুই জানিস অর্চু? রচু আর দাদাভাইয়ের বিয়ের পর ওদের ফুলশয্যার পরের দিন সকালে রচু জোর করেই বাড়ির সকলের জন্য এমন আলুর দম বানিয়েছিল। সবাই খেয়ে এত খুশী হয়েছিল যে বার বার করে চেয়ে নিচ্ছিল। শেষমেষ দেখা গেল রচুর ভাগেরটাও অন্য সবাই মিলে খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। বেচারা রচু, আগের রাতের বাসি ছোলার ডাল দিয়ে লুচি খেয়েছিল শেষে”।
অর্চনা মিষ্টি হেসে বলল, “সে’কথা রচুর মুখেই শুনেছি দিদিভাই। কালচিনি হাসপাতালে যেদিন রতু-দা আর তোমাকে প্রথম দেখেছি, সেদিন রাতেই রচু আমাকে এ’কথাটা বলেছিল। আর তোমাদের বাড়ির অন্যান্য সকলের কথাও বলেছিল”।
সীমন্তিনী বলল, “দাঁড়া অর্চু, আগে একটু মাসির সাথে কথা বলে নিই। ভাই বোধহয় এখন বাড়িতেই আছে” বলে খেতে খেতেই কিংশুকের ফোনে ডায়াল করল। ও’পাশ থেকে কিংশুকের সাড়া পেতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ভাই, ওদিকের খবর কি বলো তো? মিঃ অধিকারী তো গিয়েছিলেন। কাজের কাজটা করে এসেছেন তো”?
কিংশুক বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। ওনারা দু’জন সব কিছু ঘুরে ফিরে দেখে মাপজোখ নিয়ে গেছেন। মা তাদেরকে মিষ্টি আর চা বিস্কুট দিয়েছিলেন। ওনারা তো বলেছিলেন যে নাগরাকাটাতে ফিরে তারা তোমার সাথে যোগাযোগ করবেন”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ ভাই আমার সাথে সন্ধ্যের ঠিক আগে আগেই তারা ফোনে কথা বলেছেন। তবে মিঃ অধিকারী কালই একটা জরুরী কাজে কয়েকদিনের জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফিরে আমার সাথে ডিটেইলস আলোচনা করবেন। তা ভাই, মা কোথায় গো? তোমার আশে পাশে আছেন”?
কিংশুক জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, এই নাও মা-র সাথে কথা বলো” বলতেই বিভাদেবীর গলা শোনা গেল, “কেমন আছিস মা”?
সীমন্তিনীর গলাটা হঠাতই যেন বুজে আসতে চাইল। কিছু বলতে গিয়েও তার গলা দিয়ে যেন কথা ফুটে বেরোচ্ছিল না। চোখ দুটো জলে ভরে গেল। অর্চনা সেটা দেখেই নিজের চেয়ার থেকে উঠে পড়ে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “দিদিভাই, শান্ত হও। মা লাইনে আছেন তো। কথা বলো”।
ও’পাশ থেকে বিভাদেবীও চিন্তিত সুরে বললেন, “কি হয়েছে তোর মন্তি মা? তুই ঠিক আছিস তো”?
সীমন্তিনীর বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠছিল। সে কোন মতে অনেক কষ্ট করে বলল, “আমার প্রণাম নিও মাসি” বলেই ফোনটা অর্চনার হাতে ধরিয়ে দিল।
অর্চনা ফোন নিয়ে লক্ষ্মীর দিকে ঈশারা করতেই লক্ষ্মী এসে সীমন্তিনীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। অর্চনা ফোনটা নিয়ে একটু দুরে সরে গিয়ে বলল, “মা, আজ নাইটিটা দিদিভাইকে দিয়েছি। তার খুব পছন্দ হয়েছে বলেছে। তাই তোমাকে প্রণাম জানালেন। কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন। কথা বলতে পারছেন না”।
ও’পাশ থেকে বিভাদেবী বললেন, “বুঝেছি রে অর্চু। মেয়েটা সকলের জন্য নিজের প্রাণপাত করে যাচ্ছে। কিন্তু নিজের মা বাবা নিজের বাড়ির সব লোকদের কাছ থেকে বহু বছর ধরে দুরে সরে আছে। বাড়ি আর বাবা মা-র ওপরে কিছু একটা অভিমান নিয়েই যে ও এভাবে সকলের থেকে দুরে আছে সেটা তো আন্দাজ করতেই পারি। কিন্তু ওর মনের কথা যে ও কাউকে খুলে বলে না। অনেক চেষ্টা করেও আমি কিছু জানতে পারিনি। রচুকে ও নিজের প্রাণের চেয়ে বেশী ভালবাসে। রচুকেও সেসব কথা কোনদিন বলে নি। তুই ওকে শান্ত কর। বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠাণ্ডা কর ওকে। আর ওকে বলিস যে ওর পাঠানো ইঞ্জিনিয়াররা এসে আমাদের বাড়ি ঘরগুলোর মাপজোখ নিয়ে গেছেন আজ দুপুরের দিকে। আমি ওর সাথে পরে কথা বলব’খন। আর তোর শরীর ঠিক আছে তো? আর নাইটিটা পড়ে ওকে কেমন লাগছে রে”?
অর্চনা বলল, “খুব ভাল মানিয়েছে মা দিদিভাইয়ের শরীরে। খুব ভাল লাগছে দেখতে। আচ্ছা আমি তাহলে এখন রাখছি মা” বলে ফোন কেটে দিল।
ততক্ষণে লক্ষ্মী সীমন্তিনীকে তার ঘরে নিয়ে গেছে। অর্চনা নিজের হাত ধুয়ে সীমন্তিনীর ঘরে গিয়ে লক্ষ্মীকে বলল, “লক্ষ্মীদি, তুমি একটু দিদিভাইয়ের কাছে বোসো। আমি চা বানিয়ে আনছি”।
লক্ষ্মী তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “না সোনাদি, তুমিই বরং দিদিমণির কাছে বসো, আমি চা করে আনছি”।
লক্ষ্মী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে অর্চনা সীমন্তিনীর পাশে বসে তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “মন খারাপ করো না দিদিভাই। মা তোমাকে আশীর্বাদ দিয়েছেন। কিন্তু দিদিভাই, তুমি যে ইঞ্জিনিয়ারকে কালচিনি পাঠিয়েছিলে তারা ফিরে এসে আর তোমার সাথে দেখা করেন নি”?
সীমন্তিনী একটা শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নিতে নিতে বলল, “আসলে উনি কাল সকালেই দিন সাতেকের জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। আর সে ব্যাপারেই একটু ব্যস্ত আছেন বলে আমার সাথে দেখা করতে আসেন নি। তবে ফোনে কথা বলেছেন। কলকাতা থেকে ফিরেই তিনি আমার সাথে দেখা করবেন”।
এমন সময়ে রচনার ফোন এল সীমন্তিনীর মোবাইলে। সীমন্তিনী ফোনে রচনার নাম দেখেই কলটা রিসিভ করে গলা পরিষ্কার করে বলল, “হ্যাঁ রচু, বল কি খবর”?
ও’পাশ থেকে রচনা বলল, “কি হয়েছে দিদিভাই? তোমার গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন গো”?
সীমন্তিনী গলাটা আরো একটু পরিষ্কার করে বলল, “নারে কিছু হয়নি। সবে অর্চুর হাতের লুচি আর আলুর দম খেলাম তো। ভাল করে জল খাইনি এখনও। তাই হয়ত তোর এমন মনে হচ্ছে। ও নিয়ে ভাবিস না। আমি অর্চু নীতা সবাই ভাল আছি। তোরা বিকেলের জলখাবার খেয়েছিস”?
রচনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। আমাদের জলখাবার খাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু দিদিভাই, তুমি নাকি কালচিনির বাড়িতে এক ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠিয়েছিলে? মা বললেন, তারা নাকি বাড়ি ঘরের মাপজোখ নিয়ে এসেছে। কি ব্যাপার গো”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “আরে তেমন কিছু সিরিয়াস ব্যাপার নয় রে পাগলী। আসলে সেদিন অর্চুকে নিয়ে আসবার সময় দেখলুম যে রান্নাঘরটাকে সারাই করা খুব দরকার, নইলে সামনের বর্ষায় সেটা ভেঙে পড়তে পারে। তাই আমি লোক পাঠিয়ে একটা এস্টিমেট বানিয়ে দেখতে চাইছি, সারাই করতে ঠিক কত টাকার দরকার হতে পারে”।
রচনা বলল, “শুধুই রান্নাঘর? তাহলে তারা থাকবার ঘরেরও মাপজোখ নিল কেন”?
সীমন্তিনী একটু রাগের ভাণ করে বলল, “সবটাই তো শুনেছিস তাহলে। তাহলে আমাকে আর জিজ্ঞেস করছিস কেন”?
রচনা অবাক হয়ে বলল, “ওমা তুমি রাগ করছ কেন দিদিভাই? আমি এমন কী জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে? মা-র মুখে যা শুনলুম তাতে তো মনে হল তারা রান্নাঘর ছাড়াও থাকবার ঘর দুটো আর পেছনের কলতলা আর বাথরুম টয়লেটের মেজারমেন্টও নিয়েছে। কিন্তু এ’সব শুধু সারাই করবার জন্যে তো মনে হচ্ছে না। মা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারলেন না। কিন্তু আমার মনে হল তারা বুঝি পুরনো ঘর গুলো ভেঙে নতুন করে বানাবার প্ল্যান করছেন। কিন্তু এত টাকা কোত্থেকে আসবে সেটা বুঝতে পারছি না। সেটা জানবার জন্যেই তোমাকে জিজ্ঞেস করছি”।
এমন সময় লক্ষ্মী তিনকাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। সীমন্তিনী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এবার একটু হেসে বলল, “হু। আমার ধারণা একদম মিলে গেল। আমি জানতুম আমি তোকে আগে থেকে কিছু না জানালেও তুই পুরো ব্যাপারটাই জেনে যাবি। একদম সত্যি ধরেছিস তুই। থাকবার ঘর দুটো, রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট আর কলতলাটা ভেঙে নতুন করে বানিয়ে দেব বলেই ভাবছি। কিন্তু আগে থেকে খরচের একটা আন্দাজ করে না নিলে কাজ শুরু করে পরে হয়ত বিপদে পড়তে হবে, তাই এখান থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে কালচিনি পাঠিয়েছিলাম। ওরা সব কিছু দেখে শুনে আমাকে একটা এস্টিমেট বানিয়ে দেবেন। তারপর দেখা যাক, কাজটা করে ফেলা যায় কি না। এবার বুঝেছিস তো”?
রচনা বলল, “কিন্তু তারা নাকি বলেছে দু’তলা করা হবে। এ তো প্রচুর টাকার ব্যাপার দিদিভাই। কোত্থেকে আসবে এত টাকা”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “বারে সেটা নিয়ে ভাবনার এত কী আছে? ভাই ছোট হলেও আমরা তিন তিনটে বোন তো আছি। আমরা সবাই মিলে সেটা ঠিক করে দিতে পারব দেখিস। আর তোকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে কে বলেছে শুনি? উদ্যোগটা যখন আমি নিয়েছি, তখন আমাকেই সামলাতে দে না”।
রচনা সীমন্তিনীর কথা বুঝতে না পেরে বলল, “আমরা তিন বোন মিলে মানে? আমি আর দিদি টাকা কোথায় পাবো? কী বলছ তুমি দিদিভাই? আসলে তুমি একাই সবটা সামলাবে সেটা কি আর আমি বুঝতে পাচ্ছিনা ভাবছ? কিন্তু দিদিভাই, সত্যি করে বল না গো, কত টাকা লাগবে আর কোত্থেকে সে টাকা পাবে তুমি”?
সীমন্তিনী শান্ত সুরে বলল, “ফাইনাল এস্টিমেটটা হাতে পেতে ক’দিন দেরী হবে। তবে মৌখিক হিসেবে মিঃ অধিকারী যা বললেন তাতে মনে হয় তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখের মত পড়বে। তবে দোতলা ঠিক বানানো হচ্ছে না। ফাউন্ডেশনটা দোতলা বাড়ির মত করে করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যে কোন সময় ওপরে রুম বানানো যায়”।
রচনা বলল, “বাপরে! তিরিশ পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা লাগবে! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে দিদিভাই? এত টাকা তুমি কোথায় পাবে”?
সীমন্তিনী বলল, “আমার মাথা যে সত্যিই খারাপ তা কি এতদিনেও বুঝিসনি তুই? তোকে প্রথম দেখার পর থেকেই আমি কি পাগলামি শুরু করেছিলাম, সে’সব ভুলে গেলি? আচ্ছা, ও’সব কথা ছাড় তো। আমি তো তোকে বললুমই যে উদ্যোগটা যখন আমি নিয়েছি, তখন কি হবে না হবে সেটা আমি দেখব। তুই আমাকে একটা কথা বল তো? তোদের মহিমা বৌদির খবর কি? আর এসেছিল তোদের ফ্ল্যাটে”?
রচনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “হু বুঝেছি, তুমি কিছুতেই এখন সেটা আমাকে বলবে না। ঠিক আছে দিদিভাই। এক মাঘেই শীত যায় না কথাটা জানো তো? আমিও সেটা কখনো বুঝিয়ে দেব তোমাকে। তবে মহিমা বৌদি এর মধ্যে আর আমাদের এখানে আসেন নি। তিনি ভালই আছেন। তোমার দাদাভাইয়ের মুখে শুনলুম তোমার সাথে কথা বলে বৌদি নাকি খুব খুশী হয়েছেন”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা রচু সোনা, লক্ষ্মীদি চা এনেছে। তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমার চা ঠান্ডা হয়ে গেল। তুই একটু অর্চুর সাথে কথা বল ততক্ষণ। আর আজেবাজে কথা ভেবে নিজের দুশ্চিন্তা বাড়াস নে। আর অর্চু আমাকে আজ কেমন সারপ্রাইজ দিয়েছে সেটা ওর মুখ থেকেই শোন” বলে ফোনটা অর্চনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
অর্চনা সীমন্তিনীর জন্যে নাইটি বানানোর গল্প করতে লাগল রচনার সাথে। সীমন্তিনী অর্চনাকে উদ্দেশ্য করে বলল “অর্চু তোর কথা শেষ হলে লক্ষ্মীদিকে একটু ফোনটা দিস, আমি একটু সামনের বারান্দায় যাচ্ছি”।
______________________________
বাইরের কম্পাউন্ডে গাড়ির আওয়াজ পেতেই অর্চনা ঘরের দরজা খুলে দরজাটা অল্প ফাঁক করে সীমন্তিনীকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেই সে ছুটে বেরিয়ে এল। বারান্দা দিয়ে দৌড়ে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করতেই সীমন্তিনী চেঁচিয়ে বলল, “কি করছিস অর্চু, পড়ে যাবি তো। আস্তে আস্তে”।
অর্চনা ছুটে এসে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে লাগল। সীমন্তিনীর একহাতে অফিসের ভারী ব্যাগটা। অন্য হাতে রচনাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে ছোট্ট একটা আদরের চুমু খেয়ে প্রশ্রয়ের সুরে বলল, “কি হচ্ছে এটা সোনা? তোর শরীরটা এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এভাবে এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নামতে আছে? আচ্ছা কি হয়েছে বল তো? একা ছিলিস বলে খুব খারাপ লাগছিল”?
অর্চনা সীমন্তিনীকে ছেড়ে তার হাত থেকে ব্যাগটা নিজের হাতে নিতে নিতে বলল, “আমি একদম ঠিক আছি গো দিদিভাই। তোমার ছোঁয়ায় আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ। আচ্ছা চলো চলো, তাড়াতাড়ি আগে ভেতরে চলো তো”।
সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বলল, “কী, হয়েছেটা কি বলবি তো। এত খুশীর কারনটা কি”?
অর্চনা জবাব দিল, “কিচ্ছু না। তুমি ঘরে চলো। তুমি ফিরে এলে একসাথে খাব বলে আমি বিকেলে চা খাইনি। তাই আর কি”।
বারান্দায় উঠে লক্ষ্মীকে মিটিমিটি হাসতে দেখে সীমন্তিনী তাকে জিজ্ঞেস করল, “ওমা। তোমার আবার কি হল লক্ষ্মীদি? এভাবে হাসছ কেন”?
লক্ষ্মী হাসতে হাসতেই বলল, “বলা বারণ আছে গো দিদিমণি। তাই এখন কিচ্ছুটি বলতে পারব না। তবে তোমার এই পাগলী বোনটা আজ আমাকে বিকেলের খাবার বানাতে দেয়নি। তোমার জন্য সে নিজে হাতে আজ আলুর দম আর লুচি বানিয়েছে”।
সীমন্তিনী আর অর্চনা ততক্ষণে ড্রয়িং রুমের ভেতর এসে ঢুকেছে। লক্ষ্মী দরজা বন্ধ করতেই সীমন্তিনী অর্চনার হাত ধরে উচ্ছ্বসিত গলায় জিজ্ঞেস করল, “সত্যি অর্চু? আলুর দম করেছিস তুই? গুড়ো আলু দিয়ে”?
অর্চনাও খুশী ভরা গলায় বলল, “রচুর মুখেই শুনলুম যে তুমি গুড়ো আলুর দম খেতে খুব পছন্দ কর। কাল লক্ষ্মীদি বাজার থেকে অমন গুড়ো আলু এনেছে। তাই ঘরে ছিল বলে বানিয়েই ফেললাম। কিন্তু সেটার সাথে তো লুচি হলেই খেতে বেশী ভাল লাগে। তাই লুচির লেচি করে রেখে দিয়েছি। তুমি ফ্রেশ হতে হতে আমার লুচি ভাজাও হয়ে যাবে। যাও যাও, তাড়াতাড়ি স্নান সেরে এস”।
সীমন্তিনী নিজের ঘরের দিকে এগোতেই লক্ষ্মী অর্চনার হাত থেকে সীমন্তিনীর ব্যাগটা নিয়ে বলল, “যাও সোনাদি, আমাকে তো তুমি আগেই বারণ করেছ, তাই তুমি কয়েকটা লুচি বেলে ফেলো। আমি দিদিমণির ব্যাগটা ঘরে রেখে এসে তোমাকে সাহায্য করছি”।
মিনিট পনেরো পর সীমন্তিনী বাথরুম থেকে বেরিয়েই সোজা রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে বলল, “তাহলে এটাই তোর খুশীর আসল কারন, তাই না অর্চু”? তার পড়নে একটা খুব সুন্দর ডিজাইনের নতুন নাইটি।
লক্ষ্মী অর্চনার ও’পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লুচি বেলছিল। সে সীমন্তিনীর কাছে এসে ডানপাশ বামপাশ থেকে তাকে দেখতে দেখতে বলল, “ওমা দিদিমণি, কী সুন্দর লাগছে গো তোমাকে দেখতে”।
অর্চনা একটা লুচি থালায় রেখে গ্যাসের আঁচটা কমিয়ে দিয়ে সীমন্তিনীর কাছে এসে বলল, “মাপ টাপ ঠিকঠাক হয়েছে তো দিদিভাই? কোথাও বেশী টাইট বা লুজ হয়নি তো? আর ঝুলটা.. দেখি দেখি” বলতে বলতে সীমন্তিনীর কাঁধ ধরে তাকে এ’পাশ ও’পাশে ঘুরিয়ে দেখে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “না ঠিকই আছে”। তারপর আবার নাইটিটার কাঁধের দিকে, বগল তলার দিকে আর কোমড়ের দিকে একটু টেনে টুনে বলল, “নাঃ, সব কিছুই ঠিক আছে। তোমার পছন্দ হয়েছে দিদিভাই? সত্যি কথা বলবে, একদম বানিয়ে বলবে না কিন্তু”।
সীমন্তিনী অর্চনার একটা কাঁধে হাত রেখে বলল, “খুব পছন্দ হয়েছে রে অর্চু। কিন্তু এ সবের মানেটা কি বল তো? আমার কি নাইটির অভাব আছে? যে তুই এমন একটা নতুন নাইটি কিনে এনেছিস। আর পয়সাই বা পেলি কোথায় তুই”?
তখন লক্ষ্মী বলে উঠল, “ওমা শোনো কথা? কিনতে যাবে কেন গো দিদিমণি? সোনাদি তো তোমার জন্যে এটা নিজে হাতে বানিয়েছে গো। তুমি আর ছোড়দি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পর নিজের ঘরে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে এটা বানিয়ে যাচ্ছিল তিন চার দিন ধরে”।
সীমন্তিনী বিষ্ময় আর খুশী মিশ্রিত গলায় বলল, “সত্যি নাকি রে অর্চু? তুই নিজে হাতে এটা বানিয়েছিস? কিন্তু কি করে বানালি? আমার ঘরে তো সেলাই মেশিন নেই”?
অর্চনা হাসি হাসি মুখে বলল, “মা আমার ব্যাগে এ কাপড়টার সাথে সাথে সুচ, সুতো, বোতাম, হুক আর কাঁচিও ভরে দিয়েছিল। আর মেশিনের প্রয়োজন হয়নি। আমি হাতেই সেলাই করেছি”।
সীমন্তিনী এবার আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুই নিজে হাতে এই পুরো নাইটিটা সেলাই করেছিস! তুই কাটিং টেলারিং-এর কাজ জানিস নাকি”?
অর্চনা খুশী খুশী মুখে জবাব দিল, “কিছু কিছু জানি দিদিভাই। কলেজে পড়বার সময়েই আমাদের পাশের বাড়ির এক বৌদির কাছে কিছুদিন শিখেছিলুম। তবে এত বছর বাদে বানাতে একটু ভয় ভয়ই করছিল। এখন চিন্তাটা দুর হল। কিন্তু তোমার পছন্দ হয়েছে তো দিদিভাই”?
সীমন্তিনী এগিয়ে এসে অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “খুব খুব পছন্দ হয়েছে রে পাগলী। আমার জীবনে এমন সুন্দর উপহার আর আগে কখনও পাইনি রে বোন” বলতে বলতে কেঁদে ফেলল।
অর্চনাও সাথে সাথে সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ওমা, তুমি কাঁদছ কেন দিদিভাই? কেঁদো না প্লীজ। আমার লক্ষ্মী সোনা দিদিভাই। চুপ করো”।
সীমন্তিনী অর্চনাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখ মুছতে মুছতে বলল, “এমন খুশী আমি বহু বছর পাইনি রে অর্চু। তুই জানিস? আমার মা-ও খুব ভাল কাটিং টেলারিং-এর কাজ জানতেন। আমার মনে আছে, আমি তখন খুব ছোট ছিলাম। বোধ হয় ক্লাস টু থ্রিতে পড়তাম। তখন মা নিজে হাতে সেলাই করে আমাকে একটা ফ্রক বানিয়ে দিয়েছিলেন। খুব পছন্দ হয়েছিল আমার সে ফ্রকটা। বাড়িতে সবসময় ওটাই পড়ে থাকতে চাইতাম আমি। কিন্তু তার কয়েক বছর বাদেই সেই ......” বলেই থেমে গেল।
নিজেকে সামলে কথাটা ঘুরিয়ে বলল, “আচ্ছা, তাহলে এটা মাসির প্ল্যান, তাই না? আর তুইও কাউকে কিছু না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এটা বানিয়েছিস আমাকে সারপ্রাইজ দিবি বলে তাই না”?
অর্চনা হেসে বলল, “হ্যাঁ গো দিদিভাই। তবে আমি নিজে হাতে এটা বানালেও, এটা কিন্তু মা-র ইচ্ছেতেই বানালুম। তুমি যেদিন মাকে বলেছিলে যে আমায় তোমার এখানে নিয়ে আসবে, মা সেদিনই বাজার থেকে এ কাপড়টা কিনে এনেছিলেন। আর আমাকে বলেছিলেন যে এখানে এসে তোমার পড়নের অন্য কোন নাইটির মাপে যেন আমি কেটে সেলাই করে দিই”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা, বাকি কথা না হয় খেতে খেতে বলা যাবে। ভাজা লুচিগুলো তো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। নিয়ে আয় তাড়াতাড়ি। আমি টেবিলে বসছি”।
সীমন্তিনী নিজের ঘর থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসতেই অর্চনা আর লক্ষ্মী মিলে দুটো প্লেটে খাবার সাজাতে শুরু করতেই সীমন্তিনী বলল, “লক্ষ্মীদি, তুমিও একসাথে বসে পরো”।
অর্চনাও বলল, “হ্যাঁ লক্ষ্মীদি, তোমার জন্যেও একটা প্লেট নিয়ে এস। তিনজনে একসাথে বসে খেয়ে নিই। তারপর না হয় চা করা যাবে”।
লক্ষ্মী মনে মনে খুশী হয়ে তার নিজের জন্যেও একটা প্লেট এনে রাখল টেবিলে। অর্চনা প্রত্যেকটা প্লেটে চার চারটে করে ফুলকো লুচি আর ছোট ছোট বাটিতে আলুর দম আর চামচ সাজিয়ে সবাইকে দিয়ে নিজেও সীমন্তিনীর পাশের চেয়ারে বসে পড়ল। প্রথম গ্রাস মুখে দিয়েই সীমন্তিনী চোখ বড় বড় করে অর্চনার দিকে চেয়ে বলল, “ইশ কি দারুণ বানিয়েছিস রে অর্চু। আহা, মনটা ভরে গেল আমার রে”।
লক্ষ্মীও বলল, “হ্যাঁ গো দিদিমণি, ঠিক বলেছ তুমি। সত্যি দারুণ লাগছে গো। আমার বৌদিমণির মতই এ সোনাদির হাতেও যাদু আছে গো”।
সীমন্তিনী বলল, “ঠিক বলেছ তুমি লক্ষ্মীদি। দুই বোনের হাতেই যাদু আছে। আর এ যাদুটা ওরা কার কাছ থেকে শিখেছে সেটা জানো? আমার মাসির কাছে। আজ আমার একদিনের কথা মনে পড়ছে। তুই জানিস অর্চু? রচু আর দাদাভাইয়ের বিয়ের পর ওদের ফুলশয্যার পরের দিন সকালে রচু জোর করেই বাড়ির সকলের জন্য এমন আলুর দম বানিয়েছিল। সবাই খেয়ে এত খুশী হয়েছিল যে বার বার করে চেয়ে নিচ্ছিল। শেষমেষ দেখা গেল রচুর ভাগেরটাও অন্য সবাই মিলে খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। বেচারা রচু, আগের রাতের বাসি ছোলার ডাল দিয়ে লুচি খেয়েছিল শেষে”।
অর্চনা মিষ্টি হেসে বলল, “সে’কথা রচুর মুখেই শুনেছি দিদিভাই। কালচিনি হাসপাতালে যেদিন রতু-দা আর তোমাকে প্রথম দেখেছি, সেদিন রাতেই রচু আমাকে এ’কথাটা বলেছিল। আর তোমাদের বাড়ির অন্যান্য সকলের কথাও বলেছিল”।
সীমন্তিনী বলল, “দাঁড়া অর্চু, আগে একটু মাসির সাথে কথা বলে নিই। ভাই বোধহয় এখন বাড়িতেই আছে” বলে খেতে খেতেই কিংশুকের ফোনে ডায়াল করল। ও’পাশ থেকে কিংশুকের সাড়া পেতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ভাই, ওদিকের খবর কি বলো তো? মিঃ অধিকারী তো গিয়েছিলেন। কাজের কাজটা করে এসেছেন তো”?
কিংশুক বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। ওনারা দু’জন সব কিছু ঘুরে ফিরে দেখে মাপজোখ নিয়ে গেছেন। মা তাদেরকে মিষ্টি আর চা বিস্কুট দিয়েছিলেন। ওনারা তো বলেছিলেন যে নাগরাকাটাতে ফিরে তারা তোমার সাথে যোগাযোগ করবেন”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ ভাই আমার সাথে সন্ধ্যের ঠিক আগে আগেই তারা ফোনে কথা বলেছেন। তবে মিঃ অধিকারী কালই একটা জরুরী কাজে কয়েকদিনের জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফিরে আমার সাথে ডিটেইলস আলোচনা করবেন। তা ভাই, মা কোথায় গো? তোমার আশে পাশে আছেন”?
কিংশুক জবাব দিল, “হ্যাঁ দিদিভাই, এই নাও মা-র সাথে কথা বলো” বলতেই বিভাদেবীর গলা শোনা গেল, “কেমন আছিস মা”?
সীমন্তিনীর গলাটা হঠাতই যেন বুজে আসতে চাইল। কিছু বলতে গিয়েও তার গলা দিয়ে যেন কথা ফুটে বেরোচ্ছিল না। চোখ দুটো জলে ভরে গেল। অর্চনা সেটা দেখেই নিজের চেয়ার থেকে উঠে পড়ে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “দিদিভাই, শান্ত হও। মা লাইনে আছেন তো। কথা বলো”।
ও’পাশ থেকে বিভাদেবীও চিন্তিত সুরে বললেন, “কি হয়েছে তোর মন্তি মা? তুই ঠিক আছিস তো”?
সীমন্তিনীর বুকের ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে উঠছিল। সে কোন মতে অনেক কষ্ট করে বলল, “আমার প্রণাম নিও মাসি” বলেই ফোনটা অর্চনার হাতে ধরিয়ে দিল।
অর্চনা ফোন নিয়ে লক্ষ্মীর দিকে ঈশারা করতেই লক্ষ্মী এসে সীমন্তিনীর পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল। অর্চনা ফোনটা নিয়ে একটু দুরে সরে গিয়ে বলল, “মা, আজ নাইটিটা দিদিভাইকে দিয়েছি। তার খুব পছন্দ হয়েছে বলেছে। তাই তোমাকে প্রণাম জানালেন। কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন। কথা বলতে পারছেন না”।
ও’পাশ থেকে বিভাদেবী বললেন, “বুঝেছি রে অর্চু। মেয়েটা সকলের জন্য নিজের প্রাণপাত করে যাচ্ছে। কিন্তু নিজের মা বাবা নিজের বাড়ির সব লোকদের কাছ থেকে বহু বছর ধরে দুরে সরে আছে। বাড়ি আর বাবা মা-র ওপরে কিছু একটা অভিমান নিয়েই যে ও এভাবে সকলের থেকে দুরে আছে সেটা তো আন্দাজ করতেই পারি। কিন্তু ওর মনের কথা যে ও কাউকে খুলে বলে না। অনেক চেষ্টা করেও আমি কিছু জানতে পারিনি। রচুকে ও নিজের প্রাণের চেয়ে বেশী ভালবাসে। রচুকেও সেসব কথা কোনদিন বলে নি। তুই ওকে শান্ত কর। বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠাণ্ডা কর ওকে। আর ওকে বলিস যে ওর পাঠানো ইঞ্জিনিয়াররা এসে আমাদের বাড়ি ঘরগুলোর মাপজোখ নিয়ে গেছেন আজ দুপুরের দিকে। আমি ওর সাথে পরে কথা বলব’খন। আর তোর শরীর ঠিক আছে তো? আর নাইটিটা পড়ে ওকে কেমন লাগছে রে”?
অর্চনা বলল, “খুব ভাল মানিয়েছে মা দিদিভাইয়ের শরীরে। খুব ভাল লাগছে দেখতে। আচ্ছা আমি তাহলে এখন রাখছি মা” বলে ফোন কেটে দিল।
ততক্ষণে লক্ষ্মী সীমন্তিনীকে তার ঘরে নিয়ে গেছে। অর্চনা নিজের হাত ধুয়ে সীমন্তিনীর ঘরে গিয়ে লক্ষ্মীকে বলল, “লক্ষ্মীদি, তুমি একটু দিদিভাইয়ের কাছে বোসো। আমি চা বানিয়ে আনছি”।
লক্ষ্মী তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “না সোনাদি, তুমিই বরং দিদিমণির কাছে বসো, আমি চা করে আনছি”।
লক্ষ্মী ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে অর্চনা সীমন্তিনীর পাশে বসে তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “মন খারাপ করো না দিদিভাই। মা তোমাকে আশীর্বাদ দিয়েছেন। কিন্তু দিদিভাই, তুমি যে ইঞ্জিনিয়ারকে কালচিনি পাঠিয়েছিলে তারা ফিরে এসে আর তোমার সাথে দেখা করেন নি”?
সীমন্তিনী একটা শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলে নিতে নিতে বলল, “আসলে উনি কাল সকালেই দিন সাতেকের জন্য কলকাতা যাচ্ছেন। আর সে ব্যাপারেই একটু ব্যস্ত আছেন বলে আমার সাথে দেখা করতে আসেন নি। তবে ফোনে কথা বলেছেন। কলকাতা থেকে ফিরেই তিনি আমার সাথে দেখা করবেন”।
এমন সময়ে রচনার ফোন এল সীমন্তিনীর মোবাইলে। সীমন্তিনী ফোনে রচনার নাম দেখেই কলটা রিসিভ করে গলা পরিষ্কার করে বলল, “হ্যাঁ রচু, বল কি খবর”?
ও’পাশ থেকে রচনা বলল, “কি হয়েছে দিদিভাই? তোমার গলাটা এমন শোনাচ্ছে কেন গো”?
সীমন্তিনী গলাটা আরো একটু পরিষ্কার করে বলল, “নারে কিছু হয়নি। সবে অর্চুর হাতের লুচি আর আলুর দম খেলাম তো। ভাল করে জল খাইনি এখনও। তাই হয়ত তোর এমন মনে হচ্ছে। ও নিয়ে ভাবিস না। আমি অর্চু নীতা সবাই ভাল আছি। তোরা বিকেলের জলখাবার খেয়েছিস”?
রচনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। আমাদের জলখাবার খাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু দিদিভাই, তুমি নাকি কালচিনির বাড়িতে এক ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠিয়েছিলে? মা বললেন, তারা নাকি বাড়ি ঘরের মাপজোখ নিয়ে এসেছে। কি ব্যাপার গো”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “আরে তেমন কিছু সিরিয়াস ব্যাপার নয় রে পাগলী। আসলে সেদিন অর্চুকে নিয়ে আসবার সময় দেখলুম যে রান্নাঘরটাকে সারাই করা খুব দরকার, নইলে সামনের বর্ষায় সেটা ভেঙে পড়তে পারে। তাই আমি লোক পাঠিয়ে একটা এস্টিমেট বানিয়ে দেখতে চাইছি, সারাই করতে ঠিক কত টাকার দরকার হতে পারে”।
রচনা বলল, “শুধুই রান্নাঘর? তাহলে তারা থাকবার ঘরেরও মাপজোখ নিল কেন”?
সীমন্তিনী একটু রাগের ভাণ করে বলল, “সবটাই তো শুনেছিস তাহলে। তাহলে আমাকে আর জিজ্ঞেস করছিস কেন”?
রচনা অবাক হয়ে বলল, “ওমা তুমি রাগ করছ কেন দিদিভাই? আমি এমন কী জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে? মা-র মুখে যা শুনলুম তাতে তো মনে হল তারা রান্নাঘর ছাড়াও থাকবার ঘর দুটো আর পেছনের কলতলা আর বাথরুম টয়লেটের মেজারমেন্টও নিয়েছে। কিন্তু এ’সব শুধু সারাই করবার জন্যে তো মনে হচ্ছে না। মা ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারলেন না। কিন্তু আমার মনে হল তারা বুঝি পুরনো ঘর গুলো ভেঙে নতুন করে বানাবার প্ল্যান করছেন। কিন্তু এত টাকা কোত্থেকে আসবে সেটা বুঝতে পারছি না। সেটা জানবার জন্যেই তোমাকে জিজ্ঞেস করছি”।
এমন সময় লক্ষ্মী তিনকাপ চা নিয়ে ঘরে ঢুকল। সীমন্তিনী চায়ের কাপ হাতে নিয়ে এবার একটু হেসে বলল, “হু। আমার ধারণা একদম মিলে গেল। আমি জানতুম আমি তোকে আগে থেকে কিছু না জানালেও তুই পুরো ব্যাপারটাই জেনে যাবি। একদম সত্যি ধরেছিস তুই। থাকবার ঘর দুটো, রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট আর কলতলাটা ভেঙে নতুন করে বানিয়ে দেব বলেই ভাবছি। কিন্তু আগে থেকে খরচের একটা আন্দাজ করে না নিলে কাজ শুরু করে পরে হয়ত বিপদে পড়তে হবে, তাই এখান থেকে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে কালচিনি পাঠিয়েছিলাম। ওরা সব কিছু দেখে শুনে আমাকে একটা এস্টিমেট বানিয়ে দেবেন। তারপর দেখা যাক, কাজটা করে ফেলা যায় কি না। এবার বুঝেছিস তো”?
রচনা বলল, “কিন্তু তারা নাকি বলেছে দু’তলা করা হবে। এ তো প্রচুর টাকার ব্যাপার দিদিভাই। কোত্থেকে আসবে এত টাকা”?
সীমন্তিনী হেসে বলল, “বারে সেটা নিয়ে ভাবনার এত কী আছে? ভাই ছোট হলেও আমরা তিন তিনটে বোন তো আছি। আমরা সবাই মিলে সেটা ঠিক করে দিতে পারব দেখিস। আর তোকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে কে বলেছে শুনি? উদ্যোগটা যখন আমি নিয়েছি, তখন আমাকেই সামলাতে দে না”।
রচনা সীমন্তিনীর কথা বুঝতে না পেরে বলল, “আমরা তিন বোন মিলে মানে? আমি আর দিদি টাকা কোথায় পাবো? কী বলছ তুমি দিদিভাই? আসলে তুমি একাই সবটা সামলাবে সেটা কি আর আমি বুঝতে পাচ্ছিনা ভাবছ? কিন্তু দিদিভাই, সত্যি করে বল না গো, কত টাকা লাগবে আর কোত্থেকে সে টাকা পাবে তুমি”?
সীমন্তিনী শান্ত সুরে বলল, “ফাইনাল এস্টিমেটটা হাতে পেতে ক’দিন দেরী হবে। তবে মৌখিক হিসেবে মিঃ অধিকারী যা বললেন তাতে মনে হয় তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ লাখের মত পড়বে। তবে দোতলা ঠিক বানানো হচ্ছে না। ফাউন্ডেশনটা দোতলা বাড়ির মত করে করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে যে কোন সময় ওপরে রুম বানানো যায়”।
রচনা বলল, “বাপরে! তিরিশ পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা লাগবে! তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে দিদিভাই? এত টাকা তুমি কোথায় পাবে”?
সীমন্তিনী বলল, “আমার মাথা যে সত্যিই খারাপ তা কি এতদিনেও বুঝিসনি তুই? তোকে প্রথম দেখার পর থেকেই আমি কি পাগলামি শুরু করেছিলাম, সে’সব ভুলে গেলি? আচ্ছা, ও’সব কথা ছাড় তো। আমি তো তোকে বললুমই যে উদ্যোগটা যখন আমি নিয়েছি, তখন কি হবে না হবে সেটা আমি দেখব। তুই আমাকে একটা কথা বল তো? তোদের মহিমা বৌদির খবর কি? আর এসেছিল তোদের ফ্ল্যাটে”?
রচনা এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “হু বুঝেছি, তুমি কিছুতেই এখন সেটা আমাকে বলবে না। ঠিক আছে দিদিভাই। এক মাঘেই শীত যায় না কথাটা জানো তো? আমিও সেটা কখনো বুঝিয়ে দেব তোমাকে। তবে মহিমা বৌদি এর মধ্যে আর আমাদের এখানে আসেন নি। তিনি ভালই আছেন। তোমার দাদাভাইয়ের মুখে শুনলুম তোমার সাথে কথা বলে বৌদি নাকি খুব খুশী হয়েছেন”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা রচু সোনা, লক্ষ্মীদি চা এনেছে। তোর সাথে কথা বলতে বলতে আমার চা ঠান্ডা হয়ে গেল। তুই একটু অর্চুর সাথে কথা বল ততক্ষণ। আর আজেবাজে কথা ভেবে নিজের দুশ্চিন্তা বাড়াস নে। আর অর্চু আমাকে আজ কেমন সারপ্রাইজ দিয়েছে সেটা ওর মুখ থেকেই শোন” বলে ফোনটা অর্চনার হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
অর্চনা সীমন্তিনীর জন্যে নাইটি বানানোর গল্প করতে লাগল রচনার সাথে। সীমন্তিনী অর্চনাকে উদ্দেশ্য করে বলল “অর্চু তোর কথা শেষ হলে লক্ষ্মীদিকে একটু ফোনটা দিস, আমি একটু সামনের বারান্দায় যাচ্ছি”।
______________________________