Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 163)

রাত প্রায় আটটা। বিমল আগরওয়ালার অফিস থেকে এক সুন্দরী তরুণী বেরিয়ে লিফটে চেপে নেমে এল। বিল্ডিং থেকে বাইরে এসে সে ডানদিকে কিছুদুর এগিয়ে যাবার পর নিজের হাতের মোবাইল থেকে একজনকে ফোন করল। কয়েক সেকেন্ড বাদে ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই তরুণী বলল, “হু, কোথায় আছিস তুই? আমি এইমাত্র অফিস থেকে বেরোলাম”।

তারপর কিছু সময় অন্যপ্রান্তের কথা শুনে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তুই যেভাবে যেভাবে বলেছিলিস, ঠিক সেই সেই ভাবেই কাজ হয়ে গেছে। কিন্তু টাকাটা কখন দিবি আমাকে? ও যে বিকেল থেকে তিনবার আমাকে তাগাদা দিয়েছে। আমি ওকে কাল ফার্স্ট আওয়ারেই টাকাটা দেব বলে কথা দিয়েছি। কিন্তু তুই আমাকে না দিলে আমি কিভাবে ওকে পেমেন্ট করব বল তো”?
 

আবার কিছুক্ষণ ও’পাশের কথা শুনে মেয়েটি বলল, “ঠিক আছে। আমি তোর জন্যে ওই মোড়েই অপেক্ষা করছি। কিন্তু তাড়াতাড়ি আসিস প্লীজ। নইলে আমার বাড়ি যেতে যেতে অনেক দেরী হয়ে যাবে” বলে আবার কয়েক মূহুর্ত ও’দিকের কথা শুনে বলল, “ওকে ঠিক আছে। ছাড়ছি” বলে ফোন কেটে দিয়ে পাশের একটা গলির ভেতর ঢুকে এগিয়ে চলল। মিনিট পাঁচেক বাদে সে একটা তিন মাথার মোড়ে এসে দাঁড়াল। আর তার প্রায় মিনিট পাঁচেক বাদেই একটা ইন্ডিকা গাড়ি তার একদম পাশে এসে দাঁড়ালো। গাড়িটার সামনে বাঁদিকের দরজা খুলে যাবার সাথে সাথেই ভেতর থেকে এক পুরুষ কন্ঠ শোনা গেল, “উঠে পড়, কনি”।

মেয়েটা একমূহুর্ত দেরী না করে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারের পাশের সীটে বসে দরজাটা বন্ধ করে দিল। গাড়ির ভেতরটা অন্ধকার। জানালার কালো কাঁচ ভেদ করে বাইরের আলো না এলেও সামনের দিক থেকে বাইরের আলো এসে তরুণী আর ড্রাইভারের গায়ে পড়ছে। ড্রাইভারের সীটে শেখরকে দেখা গেল। শেখর একসেলেটরে চাপ দেবার আগে পেছনের সীটের ওপর থেকে একটা ব্যাগ টেনে নিয়ে তার ভেতর থেকে একটা মোটা খাম বের করে মেয়েটার হাতে দিয়ে বলল, “এই নে, আগে এটা তোর ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখ। দশ হাজার আছে”।

খামটা নিয়ে নিজের ব্যাগে পুরে শেখরের মুখের দিকে একবার দেখে মেয়েটা বলল, “ভেতরের আলো জ্বালছিস না কেন শেখর”?

শেখর গাড়ি চালাতে চালাতেই জবাব দিল, “তোর সেফটির কথা ভেবেই আলো জ্বালাচ্ছি না। আরেকটু দুরে গিয়ে জ্বালব। কিন্তু তাতে কি তোর ভয় করছে কনি”?

কনি জবাব দিল, “তোকে ভয় পাব আমি? পুরনো কথা গুলো কি একেবারে ভুলে গেছিস। কলেজে থাকতে কিন্তু তুইই আমাকে ভয় পেয়ে আমার থেকে দুরে দুরে থাকতিস”?

শেখর বলল, “পুরনো কথা তুলে সময় নষ্ট না করে বল, সিদ্ধার্থর সাথে কেমন চলছে তোর? সব ঠিকঠাক চলছে তো”?

কনি বলল, “এমনিতে তো সব ঠিকঠাকই আছে। কিন্তু ইদানীং খুব তাড়া দিচ্ছে জানিস। বলে, আর আমাকে ছেড়ে থাকতে পারছে না। ওর বাবা মা নাকি বিয়ের জন্য প্রচুর প্রেসার দিচ্ছে। তাই ও-ও আমাকে প্রেসার দিচ্ছে। বলছে, সামনের আশ্বিনেই বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আমি যে কিছুতেই ডিসিশান নিতে পারছি না। তুই তো জানিসই, প্রতি সপ্তাহে কম করেও দু’দিন মালিকের সাথে থাকতে হয় রাত দশটা এগারোটা অব্দি। আর সে কি শুধু থাকা? ওই জানোয়ারটা তার তিনমনি শরীরটা নিয়ে এমন ভাবে আমার শরীরটাকে ভোগ করে যে যখন আমাকে ফাইনালি ছেড়ে দেয়, আমি সাথে সাথে উঠে দাঁড়াতেই পারি না। প্রায় মিনিট দশেক হাঁপাতে হাঁপাতে তবে যেন শরীরে খানিকটা শক্তি ফিরে পাই। যখন অফিসের গাড়ি আমাকে আমার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়, তখনও হেঁটে বাড়িতে ঢুকতে অসুবিধে হয়। নেহাত বাড়ির লোকগুলো আমার উপার্জনেই খেয়ে পড়ে বেঁচে আছে, তাই তারা সব কিছু বুঝেও না বোঝার ভাণ করে থাকে। কেউ কিছু বলে না। যদিও সিদ্ধার্থ সবটাই জানে, আর সব জেনে শুনেও আমাকেই বিয়ে করবে বলে গো ধরে বসে আছে, কিন্তু তুইই বল শেখর বিয়ের পর শ্বশুর শাশুড়ির সামনে, স্বামীর সামনে অমন নোংড়া শরীর নিয়ে যাওয়া যায়? ও তো সব সময়েই বলে, এতে ওর কিছু এসে যায় না। কিন্তু আমি তো জানি, ওর কিছু এসে না গেলেও বাড়ির অন্যদের কাছ থেকে তাদের ঘরের বৌ হিসেবে যতটুকু সম্ভ্রম বা স্নেহ ভালবাসা আমার পাওয়া উচিৎ, সে টুকু কি তারা দিতে পারবে? কিছুতেই না। আর তার ফলে দিনে দিনে আমার ওপর তাদের সম্ভ্রম বা শ্রদ্ধা দুটোই কমতে শুরু করবে। আর বাড়তে থাকবে শুধু ঘৃণা আর বিতৃষ্ণা। আমার মা-বাবা নাহয় মুখ বুজে সব মেনে নিচ্ছেন। শ্বশুর শাশুড়ি কি সেভাবে মেনে নিতে পারবে সবকিছু? কিছুতেই না। তাদের জায়গায় আমি হলেও অমনটা করতে পারতাম না”।

শেখর বলল, “ভাবিস না। কিছুদিনের মধ্যেই একটা পরিবর্তন হবে। আর তখন বোধ হয় তোকে আর এভাবে ভুগতে হবে না”।

কনি বলল, “জানিনা কি হবে। পরিতোষ না কে যেন কী করতে চাইছে, সেটা তো কিছুতেই খুলে বলেনি প্রীতিদিকে। আমি তো প্রীতিদির কথায় রাজিই হতাম না। একবার যদি বস বুঝতে পারেন যে আমার জন্যে তিনি কোন বিপদে পড়তে চলেছেন, তাহলে তো সাথে সাথে আমার চাকরিটা তো চলেই যাবে। আর যে কোন মূহুর্তে আমার প্রাণটাও চলে যেতে পারে। কিন্তু প্রীতিদি আর আব্দুল ভাইয়ের কথাতেই আমি শুধু রাজি হয়েছি। প্রীতিদি তো বলছে যে মাস দেড়েকের ভেতরেই তার পরিতোষদা নাকি এমন কিছু করবেন যার পর আর আমাকে বসের সাথে এ সব কিছু করতে হবে না। তাই তো প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও কাজটা করতে রাজি হয়েছি”।

শেখর মাঝারি গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল, “তুই স্যারকে, মানে তোর ওই পরিতোষবাবুকে কতটুকু চিনিস তা আমি জানিনা। তবে আমি তাকে যতটা চিনি, তার পরিপ্রেক্ষিতে বলছি, একবার যখন স্যার তোর মালিকের পেছনে লেগেছে, তখন কিছু না কিছু তো হবেই। তবে এই মাস দেড়েক সময়টা কিন্তু খুব সতর্ক থাকবি তুই। আমাদের সাথে মিলে তুই যা কিছু করছিস তা যেন ঘুণাক্ষরেও কেউ জানতে না পারে। আর যাকে দিয়ে কাজটা করিয়েছিস, তাকেও সামলে রাখিস। বাকিটা স্যারের ওপরেই ছেড়ে দে”।

কনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “তোদের স্যার ওই পরিতোষ বাবুকে তো আমি চিনিই না। প্রীতিদি আর আব্দুল ভাইয়ের মুখেই তার কথা শুনেছি শুধু। আর সাবধান তো আমি থাকবই। কিন্তু কোনদিন তো এ’ধরণের কাজ আমি করিনি। তাই ভেতরে ভেতরে ভয়ও খানিকটা পাচ্ছি রে। থানা, পুলিশ, সিবিআই, এনফোর্সমেন্ট, অ্যান্টিকরাপশন ব্যুরো, কেউই বসের পেছনে লেগেও কিছু করতে পারেনি। উল্টে তারাই ভুগেছে। পরিতোষবাবুর মত সামান্য এক আইপিএস অফিসার আর কতটুকু কী করতে পারবেন? তবে প্রীতিদিকে আমি খুব বিশ্বাস করি। তার কথায় ভরসা করেই মনে একটু আশা জেগেছে। দেখা যাক কী হয়”।
 

শেখর বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল, “থানা পুলিশ, সিবিআই, এসিবি, ইডি এরা কেউ যে কিছু করতে পারেনি, তার পেছনে অনেক কারণ আছে রে কনি। কিন্তু স্যারের কাজের পদ্ধতিই আলাদা। জানিস? স্যারকে আমরা পুলিশ রবিনহুড বলি। স্যার কিভাবে কী করবেন তা শুধু তিনিই জানেন। তার প্ল্যানিং সম্বন্ধে আমরা কেউ কিছু জানিনা। আমাদের যেটুকু করতে হয়, তিনি শুধু সেটুকুই বলেন। তবে তিনি যে কেসে হাত দেন, সে কেসের সমাধা যে হবেই এ ব্যাপারে এক পার্সেন্টও সন্দেহ নেই। তুই ভাবিস না। প্রীতিদি যখন তোকে অমন কথা বলেছে, তার মানে সে স্যারের কাছ থেকেই কিছু হিন্টস পেয়েছে এ ব্যাপারে। আর সেটা যদি সত্যি হয়, তাহলে দেখে নিস ওই মাস দেড়েকের ভেতরেই কিছু না কিছু হবেই”।

কনি আবার একটা শ্বাস ছেড়ে বলল, “ভগবান করুন। তাই যেন হয়। আর কিছু হোক বা না হোক, বস আর আমাকে তার রেস্টরুমে বা ফার্ম হাউসে নিতে না চাইলেই আমি খুশী হব”।

শেখর হঠাতই বলল, “আচ্ছা, প্রীতিদি যে আরেকটা কাজের কথা বলেছিল তোকে, সেটা করেছিস কনি”?

কণি বলল, “হ্যাঁ ওটাও হয়ে গেছে। একটা পেন ড্রাইভের মধ্যে সবকিছু লোড করে রেখেছি। আর চাবির ডুপ্লিকেটগুলোও আমার ব্যাগেই আছে। কিন্তু জিনিসগুলো যে কার হাতে দেব এ ব্যাপারে তো প্রীতিদি বা আব্দুলভাই কেউই কিছু বলেনি আমাকে। তুই নিবি ও’গুলো? আসলে ব্যাগের মধ্যে পেন ড্রাইভ আর ডুপ্লিকেট চাবি গুলো নিয়ে চলাফেরা করতেও আমার খুব ভয় করছে রে। মনে হচ্ছে যে কোন সময় ধরা পড়ে যাব”।

শেখর একটা জায়গায় গাড়ির স্পীড কমিয়ে দিয়ে গাড়িটা রাস্তার বাঁ পাশে থামাতে থামাতে বলল, “সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। যার ভাবনা তিনিই ভাববেন” বলতে বলতেই গাড়িটা পুরোপুরি থেমে গেল।

জায়গাটা বেশ অন্ধকার। পেছনের দরজাটা হঠাৎ করে খুলে কেউ একজন গাড়ির পেছনের সীটে উঠতেই কনি প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “এই কে আপনি? এভাবে গাড়িতে উঠছেন কেন”?

শেখর সাথে সাথে চাপা গলায় বলল, “চুপ চুপ, চেঁচাস না কনি। ইনি স্যার”।

গাড়ি ততক্ষণে চলতে শুরু করে দিয়েছে আবার। কনি অবাক হয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনের দিকে দেখবার চেষ্টা করতেই পেছনের সীটের লোকটা আস্তে কিন্তু ভরাট গলায় বলল, “সামনের দিকেই তাকিয়ে থাক বোন। পেছনে তাকিও না। আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই। আমি পরিতোষ। তোমার ব্যাগে যে পেন ড্রাইভ আর ডুপ্লিকেট চাবিগুলো আছে, সেগুলো বের করে আমার হাতে দাও প্লীজ”।
 

কনি কিছু বুঝতে না পেরে শেখরের দিকে চাইতেই শেখর হেসে বলল, “তোকে এইমাত্র বললাম না? যার ভাবনা তিনিই ভাববেন। স্যার নিজেই এসে গেছেন তার জিনিস নিতে। দিয়ে দে”।
 

কনি আর কোন কথা না বলে নিজের ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে পেনড্রাইভ আর দুটো ছোট ছোট প্যাকেট বের করে পেছনের দিকে এগিয়ে দিল। পরিতোষ জিনিসগুলো হাতে নিয়ে কনির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “মনে কোন গ্লানি রেখো না কনি। তুমি কোন অপরাধ করনি। এক পাপী অপরাধীকে শাস্তি দেবার ব্যাপারে তুমি আমাকে শুধু একটু সাহায্য করলে মাত্র। ঈশ্বর নিশ্চয়ই তোমার মঙ্গল করবেন। আর ঈশ্বর চাইলে আগামি মাসখানেকের ভেতরেই তোমার দুর্ভোগ শেষ হয়ে যাবে। আর রেস্টরুমের কথাগুলো কেবল শেখর আর প্রীতিদি ছাড়া আর কাউকে বলো না। ভাল থেকো বোন”।

কনি এবার প্রায় ফিসফিস করে বলল, “আপনি আমাকে বোন বলে ডাকলেন। আপনার কথা প্রীতিদির মুখে অনেক শুনেছি। কখনও চাক্ষুস দেখবার সুযোগ পাইনি আপনাকে। একবার একটু দেখতেও দেবেন না দাদা”?

পরিতোষ স্নেহমাখা গলায় বলল, “আশ্বিনের ভেতরেই যে তুমি রাহুমুক্ত হয়ে যাবে, সেটা তো এ মূহুর্তেই জোর দিয়ে বলতে পাচ্ছি না বোন। তবে আশ্বিনে না হলেও অঘ্রান মাসে তুমি নিশ্চিন্তে বিয়ের পিড়িতে বসতে পারবে। তোমার বিয়ের দিন আমি তোমার জন্যে উপহার আর আশীর্বাদ নিয়ে যাব। সেদিন আমায় নিশ্চয়ই দেখতে পাবে” বলেই শেখরকে উদ্দেশ্য করে বলল, “শেখর, তুই সামনের মোড়ে গাড়ি থামাস। আমি নেমে যাবার পর আর কিছুটা দুরে গিয়ে গাড়ির ভেতরের আলো জ্বালিয়ে দিস”।

পরিতোষ নেমে যাবার পর গাড়ি আবার চলতে শুরু করতেই কনি বলল, “কী অদ্ভুত লোক রে বাবা তোর এই স্যার? আর তুইও বুঝি এ জন্যেই গাড়ির ভেতরের আলো জ্বালাসনি, যাতে আমি তাকে দেখতে না পারি, তাই না শেখর”।

শেখর হেসে বলল, “ঠিক ধরেছিস তুই। কিন্তু তোর সুরক্ষার জন্যেই কিন্তু স্যার এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন আমাকে। তুই যে স্যারকে চিনিস, স্যারের সাথে তোর যে যোগাযোগ আছে, স্যারের সাথে তুই যে এভাবে গাড়িতে দেখা করেছিস, এ কথাগুলো চিরদিন গোপন রাখতে হবে। কারন তুই না জানলেও স্যার ঠিকই জানেন যে বিমল আগরওয়ালার অনেকগুলো চোখ এ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা ফেরা করছে। সেইসব চোখ থেকে পেনড্রাইভ আর চাবি লেনদেনের ব্যাপারটা গোপন রাখতেই উনি এভাবে অন্ধকারে এসে কাজটা সেরে গেলেন। তাতে কি তোর খুব রাগ হয়েছে নাকি”?

কনি বেশ শান্ত গলায় বলল, “না রে তা নয়। প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু তার কথাগুলো শুনে বুকের ভেতরটা যেন কেমন হাল্কা হয়ে গেছে আমার। আর তুই বোধহয় দেখিস নি, তিনি আমার মাথায় হাত রেখেছিলেন। কেমন অদ্ভুত একটা স্নেহভরা পরশ পেলাম যেন। আমি যখন আমার দুর্ভাগ্যের কথা ভেবে ভেবে ঘরে বসি কাঁদি, তখন বাবা মাঝে মাঝে আমার মাথায় এভাবে হাত বুলিয়ে দেন। আচ্ছা শেখর, তুই তো পরিতোষদাকে খুব ভাল করে চিনিস। তিনি কি বিয়ে করেছেন নাকি রে? তার স্ত্রীকে দেখেছিস তুই”?

শেখর ঠাট্টা করে বলল, “এই সেরেছে রে। ভাগ্যিস তুই তার মুখ দেখিস নি। নইলে বেচারা সিদ্ধার্থের কপাল পুড়ত”।
 

কনি শেখরের বাম কাঁধে একটা থাপ্পড় মেরে বলল, “বদমাশ কোথাকার। আমি কি তোকে তাই বলেছি”?

শেখর হেসে বলল, “উঃ তোর হাতে কি জোর রে বাবা। আমার কাঁধটা নাড়াতেই পাচ্ছি না আর। কিন্তু তার স্ত্রীকে আর আমি কি করে দেখব বল? তিনি তো বিয়েই করেন নি। তার তো তিনকূলে কেউ আছে বলেই শুনিনি। তাদের পৈতৃক বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়িতে কোন চাকর বাকর রাধুনী আয়া বলতে কেউ নেই। খাওয়া দাওয়া করেন হোটেলে রেস্টুরেন্টে। শুধু রাতটুকুই বাড়িতে থাকেন। সকালে নিজের হাতে চা বানিয়ে খেয়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। আর রাত বারোটা একটায় ঘরে ফিরে বিছানায় শুয়ে পড়েন। এই তার দিনচর্চা। ও বাড়িতে বৌ হয়ে যে যাবে, তার কপালে দুর্ভোগ আছে। সারাদিন তাকে একা একা ঘরের কাজকর্ম করে যেতে হবে। অবশ্য তুইও তো প্রায় সারাদিনই বাইরে থাকিস। তোকে ওই বাড়িতে ভূতের মত বসে থাকতে হবে না। তবু সিদ্ধার্থের মত অত ভাল একটা ছেলেকে ছেড়ে স্যারের বৌ হবার কথা ভাবিস না”।

কনি এবার রাগত সুরে বলল, “শেখর ভাল হচ্ছে না কিন্তু বলে দিচ্ছি। আমি কিন্তু আবার মারব তোকে”।

শেখর হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা, আর কিছু বলছি না। তুই কি ঠাট্টাও বুঝিস না? স্যার তোকে বোন বলে গেলেন, সেটা কি আমি শুনিনি বলে ভাবছিস? কিন্তু কনি, যাকে দিয়ে ক্যামেরাগুলো লাগিয়েছিস, তাকে এই দশ হাজার টাকা দিয়ে বলিস কাজ হয়ে যাবার পর ক্যামেরা গুলো যখন আবার তোর হাতে ফেরত দেবে তখন সে আরও দশ হাজার টাকার বখশিস পাবে। আর তাকেও সাবধানে থাকতে বলবি। তার মুখ থেকেও যেন অন্য কেউ এ ব্যাপারে কিছু জানতে না পারে”।
 

কনি এবার স্বাভাবিক হয়ে বলল, “সে তো আগেই বলেছি। আর মনে হয় না, ও কাউকে কিছু বলবে। লোকটা খুব ভাল। আমাকে খুব স্নেহ করে। তুই ওকে নিয়ে ভাবিস না”।

শেখর গাড়ি রাস্তার বাঁ পাশে চাঁপাতে চাঁপাতে বলল, “ঠিক আছে। তুইও ভাল থাকিস। তবে তোর বিয়ের নেমন্তন্নটা পাঠাস কিন্তু”।
 

কনির বাড়ি থেকে প্রায় এক’শ গজ দুরে গাড়িটা থেমে যেতেই কনি অবাক হয়ে বলল, “এখানেই নামতে বলছিস? বাড়ির সামনে অব্দি নিয়ে যাবি না”?

শেখর এ’পাশ ও’পাশ দেখতে দেখতে বলল, “এখানেই নেমে যা তুই কনি। সাবধানের মার নেই। তবে ঘাবড়াস না। তুই বাড়িতে ঢুকে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের লোকেরা তোকে গার্ড করে যাবে। যা”।

কনি গাড়ি থেকে নেমে গেল। সামনের দিকে অনেকখানি এগিয়ে যাবার পর ও নিজেদের গলির ভেতর ঢুকে যাবার পর উল্টো দিক থেকে একটা লোককে আসতে দেখা গেল। লোকটা কনিদের বাড়ির গলির মুখে দাঁড়িয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। তারপর শেখরের গাড়ির দিকে হাতের বুড়ো আঙুল দেখাল। শেখরও নিশ্চিন্ত হয়ে গাড়িটা ব্যাক করে উল্টোদিকে রওনা হল।


******************
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 17-03-2020, 07:10 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)