Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 162)

পরদিন সকালে অফিসে এসেই প্রাথমিক কাজগুলো সেরেই সীমন্তিনী পরিতোষকে ফোন করল। পরিতোষ ফোন ধরেই বলল, “কি ব্যাপার মুন সোনা? আজও অফিস কামাই করছ নাকি তুমি”?

সীমন্তিনী বলল, “না পরি, আমি এখন অফিসে বসেই তোমাকে ফোন করছি। আসলে কাল রাত প্রায় একটা নাগাদ আমি টার্গেট থ্রির ব্যাপারে আরও কিছু ইনফর্মেশন কালেক্ট করেছি। সেটা জানাতেই এখন ফোন করছি”।

পরিতোষ বলল, “গ্রেট ডার্লিং গ্রেট। তোমার ভালবাসা আমি যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। রাত একটা পর্যন্ত তুমি তোমার ভালবাসার মানুষের কথা ভেবে ইনভেস্টিগেশন চালিয়ে যাচ্ছ? আনবিলিভেবল। তা এমন কি ইনফর্মেশন কালেক্ট করেছ শুনি”।

সীমন্তিনী প্রয়োজনীয় সব কিছু খুলে বলবার পর পরিতোষ বলল, “রিয়েলি গ্রেট মন্তি সোনা। কলকাতা থেকে এত দুরে বসেও তুমি যে এতসব ইনফর্মেশন কালেক্ট করতে পেরেছ, তাতে অবাক হবার সাথে সাথে একটু গর্বিতও বোধ করছি আমি। তবে ডার্লিং, টার্গেট থ্রির ওপর আমি তো আগে থেকেই নজর রাখছিলাম। তাই দক্ষিণেশ্বরের ওদিকের ফার্ম হাউসের কথা, আইটি, সিবিআই, ইডির রেইডের ব্যাপারেও আমি আগেই জানতে পেরেছিলাম। আর টার্গেটের রিচ যে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট আর সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্তও আছে, এটাও জানতাম। তাই তো আগে থেকেই পুরো ব্লু প্রিন্টটাকে আমি অন্যভাবে বানিয়েছি। নইলে এমন পাওয়ারফুল একটা ক্রিমিনালকে কিছুতেই শায়েস্তা করা যাবে না। আর টার্গেটের ওয়াইফ আর ছেলের ব্যাপারেও আমার কাছে অনেক ইনফর্মেশন আছে। তবে তোমার কাছ থেকে কিছু নতুন রিপোর্ট পেলাম। কাজে লাগবে আমার। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ”।

সীমন্তিনী তখন জিজ্ঞেস করল, “যতটুকু আমার পক্ষে সম্ভব সেটুকু তো আমি করবই পরি। আমি বেঁচে থাকতে আমার রচু সোনা আর দাদাভাইয়ের কিছু হলে আমাকে যে আত্মহত্যা করতে হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমি সেটাও করতে চাইনে। আরও কতকগুলো অসমাপ্ত কাজ হাতে আছে। সেগুলো শেষ করতে পারলে আমার মরতেও আপত্তি নেই”।

পরিতোষ একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এমন নিগেটিভ কথাবার্তা বলছ কেন ডার্লিং। আমার মুন ডার্লিং তো এভাবে কখনো কথা বলত না”!
 

সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই বদলায় পরি। আচ্ছা সে’কথা থাক। তুমি বলো তো ওদিকে তোমার অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু হয়ে গেছে কি”?

পরিতোষ বলল, “শুধু শুরু? আমার প্রথম স্টেজের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যে কাজটা করতে প্রায় পনেরো থেকে পঁচিশ দিন লাগবে বলে অনুমান করেছিলাম, সেটা অবিশ্বাস্য ভাবে দু’দিনের ভেতর কমপ্লিট হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে প্রথম স্টেজের কাজ আর কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তারপর সেকেন্ড আর থার্ড স্টেজ। তবে প্রথম স্টেজের কাজটা পুরো হয়ে গেলে পরের দুটোতে আর খুব বেশী সময় লাগবে না। তবে তোমাকে আগে বলেছিলাম যে পুরো অ্যাকশনটা শেষ হতে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিনের মত লাগবে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কুড়ি থেকে পঁচিশ দিনের মধ্যেই সবটা শেষ হয়ে যাবে। আর তোমার দাদাভাই আর বৌদির ব্যাপারেও একদম নিশ্চিন্ত থেকো”।

সীমন্তিনী পরিতোষের কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে বলল, “তোমার কান্ডকারখানা যত দেখছি, তত অবাক হচ্ছি আমি দিনে দিনে। সত্যি কিকরে পারো বলো তো? তবে এমন একটা খবর শোনাবার জন্যে তোমাকে আরেক বার ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে পরি, তোমার সাথে আরো দুটো ব্যাপারে পরামর্শ করতে হবে আমার। সেগুলো নিয়েই বরং কথা বলি। আচ্ছা পরি, সেদিন তুমি বলছিলে যে এবারের অপারেশনে বাজেটের চাইতে অনেক বেশী রিটার্ন তুমি আশা করছ। আর সেই বাড়তি ফান্ডটা নিয়ে কী করবে সেটা ডিসাইড করতে পারছ না। ঠিক বলছি তো আমি? না আমার বুঝতে কোনও ভুল হয়েছে”?
 

পরিতোষ বলল, “না, কোন ভুল হয়নি। ঠিকই বলছ তুমি। যদি পঞ্চাশও আদায় করি তাতেও প্রায় এগারো বারো লাখ সারপ্লাস হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তুমি কি বলতে চাও”?

সীমন্তিনী একটু নরম সুরে বলল, “যদিও জানি, এমন করাটা তোমার কাছে নীতিবিরুদ্ধ। কিন্তু পরি, কালচিনির বাড়ি ঘরের অবস্থা খুবই সংকটজনক। সামনের বর্ষায় হয়ত ভেঙেই পড়বে। রান্নাঘরটার অবস্থা তো খুবই শোচনীয়। থাকার ঘর দুটোও জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করতে হবে। কিন্তু আমি ভাবছিলুম, পঞ্চাশ বছর পুরনো ওই টিন দড়মার তৈরী ঘরগুলো রিপেয়ার না করে নতুন করে আরসিসি কনপ্সট্রাকশন করে দিলে খুব ভাল হত। কিন্তু তাতে তো অনেক ফান্ডের প্রয়োজন তাই না? আমার হাতে তো অত টাকা হবে না। আর মেসো নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন। দোকানটা নাকি ভালই চলছে। কিন্তু ঘর বানাবার মত অবস্থা তো এখনও হয়নি। তাই ভাবছিলুম, ওই বাড়তি ফান্ডটুকু যদি ওই কাজে লাগাতে পারতুম তাহলে ভাল হত। কিন্তু এটাও জানি যে এটা তোমার নীতি বহির্ভূত। আমারও কথাটা তোমাকে বলতে একটুও দ্বিধা যে হচ্ছে না, তা নয়। আমি আসলে তোমার সাজেশানই চাইছি এ ব্যাপারে পরি”।

পরিতোষ একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “কালচিনির বাড়ি মানে তো বৌদির বাপের বাড়ি, তাই না মন্তি”?

সীমন্তিনী আস্তে করে জবাব দিল, “হ্যাঁ”।

পরিতোষ এবার জিজ্ঞেস করল, “দুটো বেডরুম আর একটা কিচেন। এটাই তো বানাতে চাইছ”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ প্রায় তাইই। কিন্তু সেটা তুমি ফ্ল্যাট বাড়ির মত কনস্ট্রাকশন হবে বলে ভেবো না। ওই পরিবেশে অমন ফ্ল্যাট টাইপ কনস্ট্রাকশন ভাল দেখাবে না। গ্রামের বাড়ি গুলো কেমন হয় এ ব্যাপারে তোমার নিশ্চয়ই আইডিয়া আছে। উঠোন, কলপার, উঠোনের একপাশে রান্নাঘর, অন্যদিকে থাকবার ঘর। ঢেকি ঘর ঠাকুর ঘর আলাদা থাকে। বাথরুম টয়লেট কোন ঘরের সাথে এটাচড করে বানানো হয় না। ও’গুলো সাধারণতঃ বাড়ির পেছনের দিকে থাকে। এমন টাইপের। থাকবার এক একেকটা ঘরের মধ্যে পার্টিশন করে আলাদা আলাদা দুটো বা তিনটে রুম করা হয়। তাই আমি ভাবছি, তাদের রুচি মতই দুটো থাকবার ঘর আর রান্নাঘরটা বানিয়ে দেব। আর পেছনে একটা পাকা বাথরুম আর টয়লেট বানিয়ে দেব। তবে খরচ খরচার ব্যাপারে সঠিক কোন ধারণা নেই আমার। অবশ্য আমি দিন দুয়েকের ভেতরেই লোক পাঠিয়ে একটা আনুমানিক বাজেট বানিয়ে নেব। কিন্তু .....”

সীমন্তিনীর কথায় বাঁধা দিয়ে পরিতোষ বলল, “শোনো মন্তি, আজ অব্দি এমন কাজ আমি কখনও করিনি। তবে তোমার বৌদির ওপর কূ-নজর ফেলার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু টাকা আদায় করা যেতেই পারে। আর সেটাকে এ কাজে ব্যবহারও করাও যেতে পারে। তুমি এক কাজ করো। দিন সাতেকের ভেতর আমাকে এমাউন্টটা জানিয়ে দিও। আমি সেভাবে ব্যবস্থা নেব। ওকে”?

সীমন্তিনী নিজের প্রায় চেপে রাখা শ্বাস ছেড়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরি, থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। আর আরো একটা কথা ছিল, তুমি কি খুব ব্যস্ত আছ নাকি”?

পরিতোষ বলল, “না ঠিক আছে, তুমি বলো”।

সীমন্তিনী বলল, “মহিমা মালহোত্রা সেনের প্রোজেক্টটা আমি হাতে নেব বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব ভাল পটেনশিয়ালিটি আছে বলে মনে হচ্ছে। তুমি প্লীজ, আমাকে সাহায্য করো। আর তাকে কোনভাবে হ্যারাস করো না প্লীজ”।

পরিতোষ সীমন্তিনীকে আশ্বস্ত করে বলল, “ডোন্ট ওরি ডার্লিং। আমি তো আগেই তোমাকে এ ব্যাপারে বেস্ট অফ লাক উইশ করেছি। আজ তবুও বলছি, সব ধরণের সাহায্য আমার কাছ থেকে পাবে তুমি। আর ইনভেস্টিগেশনের জন্য আমাকে যদি তার কাছে যেতেও হয় সেটা আমি খুব কেয়ারফুলি করব। তাকে কোন ভাবেই আমি হ্যারাস করব না”।

সীমন্তিনী বেশ খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্কস এগেইন পরি। আরেকটা কথা ছিল”।

পরিতোষ হেসে বলল, “বেশ, সেটাও বলে ফ্যালো”।

সীমন্তিনী বলল, “তুমি যে ',, সে তো আমি জানিই। খুব সম্ভবতঃ তোমরা রাঢ়ী তাই না”?

পরিতোষ একটু অবাক হয়ে বলল, “হ্যাঁ তাই। কিন্তু এ’সব জেনে তুমি কী করবে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “বারে ভুলে গেলে? আমি আর নীতা যে তোমার জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে খুঁজছি তোমার সাথে তার বিয়ে দেবার জন্যে। মেয়ের বাড়ির লোকেরা ছেলের নাম গোত্র এসব তো জানতে চাইবেনই। তাই সেগুলো আমার জেনে রাখা দরকার। তোমাদের গোত্র কি”?

পরিতোষ বলল, “ভারদ্বাজ গোত্র। আর কিছু”?

সীমন্তিনী বলল, “কূমারী এবং একই সঙ্গে বিবাহিতা এবং বিধবা, অসম্ভব সুন্দরী, কিন্তু অল্প শিক্ষিতা, মাধ্যমিক পাশ, গৃহকর্মে নিপুণা, সুভাষিনী, সুমিষ্ট ব্যবহার, তোমার চেয়ে বছর সাতেকের ছোট। চলবে”?

পরিতোষ সরাসরিই জবাব দিল, “আমি তো তোমাকে আগেই বলে দিয়েছি ডার্লিং। আমার দুই প্রেমিকা যখন আমাকে হাড়িকাঠে ফেলবে বলেই স্থির করেছ, তাহলে সে হাড়িকাঠের গুণবিচার তারাই করবে। তুমি যাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দেবে আমি তাকেই মেনে নেব। কিন্তু তোমার কথার প্রথম অংশটা কেমন যেন বেখাপ্পা শোনালো আমার কানে। কূমারী.. আবার একই সঙ্গে বিবাহিতা এবং বিধবা ...! হাউ ইজ ইট পসিবল”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “সে’সব ক্রমশঃ প্রকাশ্য। তবে পরি, বিমল আগরয়ালার কাছ থেকে যে টাকাটা আদায় করা হবে, সেটা তুমি ফাইনাল কবে করবে”?

পরিতোষ জবাব দিলে, “সেটা আমাদের অপারেশনের ফার্স্ট স্টেজটা কমপ্লিট না হওয়া অব্দি করা যাবে না। আমি আশা করছি দিন সাতেকের মধ্যেই ফার্স্ট স্টেজের কাজটা শেষ হয়ে যাবে। আর সে’জন্যেই তোমাকে সাত দিনের মধ্যে কালচিনির বাড়ির এস্টিমেটেড কস্টটা জানাতে বললাম”।

সীমন্তিনী মনে মনে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “আচ্ছা পরি, তুমি যে বললে, বিমল আগরওয়ালার কাছ থেকে দশ কোটি টাকাও তুমি আদায় করতে পারবে। সত্যি কি সেটা সম্ভব”?

পরিতোষ এক মূহুর্ত চুপ থাকবার পর জিজ্ঞেস করল, “তোমার যদি দশ কোটির প্রয়োজন হয় আমি সেটাও করতে পারব। কিন্তু আসলে কি ভাবছ তুমি বল তো ডার্লিং? তুমি যদি নিজের জন্য কিছু চাও সেটা কিন্তু আমি কিছুতেই মানব না। তবে বিমলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কারোর উপকারে যদি তোমার ফান্ডের প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা আমি অ্যাকসেপ্ট অবশ্যই করব। কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে খুলে বলো তো”?

সীমন্তিনী বলল, “না মানে এখনই সে ব্যাপারে কিছু বলতে চাইছি না। তবে একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় এসেছে বলেই জিজ্ঞেস করলুম। আচ্ছা, দিন সাতেক সময় তো তুমি দিলেই আমাকে। এর মধ্যে আরেকটু ভেবে দেখি। তারপর তোমাকে জানাবো। আর আমি যে তোমার দীক্ষাতেই দীক্ষিত, সেটা কি তোমাকে আবার মনে করিয়ে দিতে হবে নতুন করে? আচ্ছা ছাড়ছি এখন। হ্যাভ এ গুড ডে” বলে ফোন কেটে দিল।
 

*****************

সেদিন লাঞ্চ আওয়ারে রচনার সাথে কথা বলার পর সীমন্তিনী স্থানীয় এক কনস্ট্রাকশন ফার্মের সাথে যোগাযোগ করে তাদের এক ইঞ্জিনিয়ারকে বিকেলের দিকে তার অফিসে এসে দেখা করতে বলল। বিকেলে ঠিক সময়েই দেবজিত অধিকারী নামে এক ইঞ্জিনিয়ার তার অফিসে এল। সীমন্তিনী তাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে একটা আনুমানিক এস্টিমেট বানিয়ে দিতে অনুরোধ করল। ইঞ্জিনিয়ার সীমন্তিনীর সব কথা শুনে বলল, “ম্যাডাম, এটা করতে গেলে তো আমাকে আগে সাইটটা দেখতে হবে। কিন্তু আপনি যা বলছেন তাতে প্রোজেক্টটা তো এখানে হচ্ছে না। হচ্ছে কালচিনিতে। আমাকে তো তাহলে সেখানে গিয়ে সাইটটার ইনস্পেকশন করতে হবে। আর তাছাড়া এখান থেকে রাজমিস্ত্রী নিতে হলে খরচটা বেশী পড়ে যাবে। কারন এখান থেকে মিস্ত্রী, রাজমিস্ত্রী আর লেবাররা যারা ওখানে গিয়ে কাজ করবে, তাদের আলাদা করে টিএ দিতে হবে। তাই আমি ভাবছি এখানকার মিস্ত্রীদের দিয়ে কাজটা না করিয়ে আমরা যদি কালচিনির মিস্ত্রীদের দিয়েই কাজটা করাই তাহলে কিন্তু প্রায় লাখ দেড়েকের মত খরচ কম হবে। আর এতে কোনও অসুবিধেও নেই। কালচিনির বেশ কয়েকজন ভাল মিস্ত্রী আমাদের হাতেই আছে। তাদেরকে দিয়েই কাজটা করানো যাবে”।

সীমন্তিনী তার কথা শুনে বলল, “ওকে মিঃ অধিকারী। আপনি যদি আমাকে এমন আশ্বাস দেন, তাহলে আর আমার কিছু বলবার নেই। তাহলে আপনি ইনস্পেকশনে কবে যাচ্ছেন বলুন”।

মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাম, আগামী পরশু দিন, বিশেষ একটা কাজে আমাকে কলকাতা যেতে হচ্ছে। দিন সাতেক সেখানে থাকতে হবে। ফিরে এসে আমি কালচিনি যাবার প্রোগ্রাম করতে পারি। তাই আট দশ দিন সময় কি আপনি আমাকে দিতে পারবেন”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “দেখুন মিঃ অধিকারী, কাজটা তো পূজোর পরেই হবে। কিন্তু এস্টিমেটটা যদি আপনি দু’ তিন দিনের মধ্যে আমাকে দিয়ে দিতে পারতেন, তাহলে খুব ভাল হত। মানে আমার ফান্ড ম্যানেজ করতে একটু সুবিধে হত”।
 

মিঃ অধিকারী বললেন, “ম্যাম, তাহলে তো আমাকে কালই কালচিনি যেতে হচ্ছে। কিন্তু আপনার পক্ষে কি কাল কালচিনি যাওয়া সম্ভব হবে”?

সীমন্তিনী বলল, “না মিঃ অধিকারী, কাল আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু তাতে আপনার কাজে কোন ব্যাঘাত আসবে না। ও বাড়িতে আমার মাসি মেসো আছেন। আর ভাইও আছে, তবে সে হয়ত তার কলেজেই থাকবে। আমি ফোনে মেসোকে সব কিছু জানিয়ে দিচ্ছি। মেসো আপনার কাজে সবরকম সহযোগিতা করবেন। আমি একটা কাগজে তাদের বাড়ির ঠিকানা লিখে লোকেশানটা আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আপনি গিয়ে কাজটা সেরে আসুন। প্রয়োজন হলে আমাকে ফোন করবেন। তা আপনি সেখানে ক’টা নাগাদ পৌঁছবেন বলে আশা করছেন, আর ক’জন যাচ্ছেন? আমি সেভাবে তাদের বলে দেব”।

মিঃ অধিকারী বললেন, “আমি আমার এক অ্যাসিসট্যান্টকে সঙ্গে নিয়ে সকাল এগারোটা নাগাদ কালচিনি পৌঁছে যাব। ঠিকানা খুঁজে সে বাড়িতে পৌঁছতে পৌঁছতে হয়তো সাড়ে এগারোটা হয়ে যাবে। আপনি সেভাবেই তাদের বলে দিন। আমরা ইনস্পেকশনটা সেরে আসি। তারপর এস্টিমেট নিয়ে কথা বলা যাবে”।

সীমন্তিনী একটা কাগজে বিধুবাবুর নাম ঠিকানা লিখে দিয়ে আরেকটা কাগজে বাড়ির একটা নক্সা কেটে বুঝিয়ে দিল কোনদিকে কিভাবে কনস্ট্রাকশন করতে হবে। তারপর কাগজটা মিঃ অধিকারীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “বাড়ির সামনেই মেসোর একটা মুদি কাম ষ্টেশনারী দোকান আছে। সেখানে গেলেই তার দেখা পাবেন। আপনারা সেখানে পৌঁছলে উনি আমাকে ফোন করবেন। তারপর আপনাদের নিয়ে বাড়ি যাবেন। কাজের ব্যাপার নিয়ে তাদের সাজেশান অবশ্যই নেবেন মিঃ অধিকারী, কিন্তু আপনার ফী বা বাড়ি তৈরীর কস্ট নিয়ে ওখানে কোনরকম কথা বলবেন না প্লীজ। সে’সব আমি মিটিয়ে দেব। আর ও’সব ব্যাপারে শুধু আমার সাথেই ডিসকাস করবেন, কেমন”?

মিঃ অধিকারী তাকে আশ্বস্ত করে চলে যাবার পরেই সীমন্তিনী কিংশুকের নাম্বারে ফোন করল। কিংশুক সাড়া দিতেই সে বলল, “ভাই, তুমি কি ব্যস্ত আছো”?

কিংশুক জবাব দিল, “না দিদিভাই, আমি তো একটা টিউশন শেষ করে বাড়ির দিকেই যাচ্ছি। তুমি বলো কী বলবে”?

সীমন্তিনী বলল, “তুমি তাহলে রাস্তার একধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমার কথা শোনো ভাই”।

একটু বাদে কিংশুক বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই বলো”।

সীমন্তিনী বলল, “ভাই শোনো। কাল বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার ভেতরে মিঃ দেবজিত অধিকারী নামে এক ভদ্রলোক তার সঙ্গে আরেকজনকে নিয়ে মেসোর কাছে যাবেন। উনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। রান্নাঘর আর থাকবার ঘর গুলো ভেঙে ফেলে সেখানে নতুন করে ঘর বানিয়ে দেবার ব্যাপারে উনি একটা ব্লু প্রিন্ট আর এস্টিমেট বানিয়ে দেবেন। আর সেটার জন্যেই তারা ওখানে যাচ্ছেন। তুমি হয়তো সে সময় বাড়িতে থাকবে না। তাই মেসোকে বোলো, ওনারা গিয়ে পৌঁছলে মেসো যেন কিছু সময়ের জন্য দোকান বন্ধ করে তাদের সাথে বাড়িতে গিয়ে সবকিছু দেখিয়ে দেন। আর তাদেরকে একটু চা মিষ্টি খাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করেন”।

কিংশুক বলল, “বড়দিকে নিয়ে যাবার সময় অবশ্য তুমি বাবাকে এ’কথা বলে গিয়েছিলে। কিন্তু দিদিভাই, এসব কি তুমি এখনই করতে চাইছ? এতো টাকা কোত্থেকে আসবে এখনই”?

সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “কাজটা তো এখনই শুরু হচ্ছে না ভাই। হয়তো দেড় দু’মাস পরেই শুরু হবে। কিন্তু একটা হিসেব, একটা বাজেট আগে থেকে করে না রাখলে কাজটা করবার সময় অসুবিধেয় পড়তে হবে। আর তাছাড়া নতুন ঘর বানাতে গেলে মিউনিসিপালিটি অফিস থেকে একটা আগাম অনুমতি নিতে হয়। আর সেটা করবার সময় একজন ইঞ্জিনিয়ারের রিপোর্ট, কনস্ট্রাকশনের ব্লু প্রিন্ট, আর খরচের একটা এস্টিমেট ওই অফিসে জমা দিতে হয়। তাই এগুলো আগে থেকেই করতে হয়। আর টাকা পয়সা নিয়ে তোমরা একদম ভেবো না। মাসি মেসোকেও এ’কথা আমি তো আগেই বলে এসেছি। তাই ও নিয়ে আর মাথা ঘামিও না। কাল ওনারা গিয়ে পৌঁছলে মেসো যেন তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বুঝিয়ে দেন”।

কিংশুক আবার বলল, “কিন্তু দিদিভাই, ......”

সীমন্তিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “ভাই, আমি এখনও অফিসে আছি। তাই আর বেশী সময় ধরে কথা বলতে পাচ্ছি না। যদি সম্ভব হয় রাতে বা পরে তোমাদের সাথে কথা বলব। কিন্তু ব্যস্ততার কারনে হয়ত রাতে ফোন করার কথা মনেই থাকবে না। তাই এখনই তোমাকে কথাটা জানিয়ে দিলুম। বাড়ি গিয়ে মা বাবাকে সব বুঝিয়ে বোলো, কেমন? রাখছি” বলে ফোন কেটে দিল।

******************
 
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 17-03-2020, 07:10 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)