17-03-2020, 03:16 PM
[৭০]
যশবিন্দার চোখের জল মুছে ফেলে।কোনো প্রত্যাশা নিয়ে সে কলকাতায় আসেনি। একমাত্র উদ্দেশ্য ভাইদের হাত থেকে নিস্কৃতি। জ্ঞান প্রকাশকে সে দেখেছে। লেখাপড়া বেশি জানে না। পিতৃপুরুষের ব্যবসা চৌতালা ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন। সারা দেশে অনেক লরি চলছে তার। পরমিতকে পার্টনারশিপ দিয়েছে।যশকে ঘুষ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। সে নিজে ডাক্তার অন্যর উপর নির্ভরশীল হবার দরকার নেই। বীরজী থাকলে আজ তাকে পালিয়ে বেড়াতে হতনা। কোনো স্বার্থ নিয়ে নয় জন্মে মাকে হারিয়েছে জেসমিন,নিরপরাধ শিশুটির জন্য মায়া পড়ে গেছে। বেশ মিষ্টি দেখতে হয়েছে। অঙ্গনের দিকে তাকালো নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।কলেজে দেখেছে কোনো নেশা ছিল না। বিবির প্রতি টান তার মনে শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিল।
বিবির কথায় ইকবালের মধ্যে ধন্দ্ব কি বলতে চায় নাজমা?বিবির দিকে ঘুরে বলল,তোকে যা জিজ্ঞেস করছি বল।
--সেইটা মুখে বলতে হয়?যত উল্টা পাল্টা কথা,নেশা করছেন নিকি?
--জানিস ডাক্তারসাব আজ নেশা করছে।
--বড় মাইনষের কথা ছাড়ান দ্যান।
--সরাব দূরে থাক কোনো দিন বিড়ি সিগারেট খাইতে দেখি নাই। তিন তলা পর্যন্ত উঠাইয়া দিয়া আসলাম।
নাজমার মন খারাপ হয়ে যায়। এই মানুষটা তারে বাঁচাইছেন।বিবিটা মারা গেল অখন একেবারে একা।
ইকবাল বলল,জানিস ডাক্তার সাহেব আমারে কি বলল? বলে কিনা ইকবাল তোমাদের আল্লা ভাল না।
--হায় আল্লা তোবা তোবা,আপনে কিছু বললেন না?
--কি বলবো?বড় মানুষ তারপর নেশা করেছেন। তারপর কি কইল জানিস ,দিলে যখন আবার ফিরিয়ে নিলে কেন?
--আপনে কি কইলেন?
--কি বলবো,আমার চোখে পানি এসে গেল।মেমসাহবরে খুব ভালবাতেন ডাক্তার সাহেব।
নাজমা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা আপনে আমারে ভালবাসেন?
ইকবাল বউকে বুকে চেপে জিজ্ঞেস করে,সেইটা তুই বুঝতে পারিস না? সাধে কি কয় মেয়েমাইনষের মাথায় ঘিলু কম তারা বোঝে দেরীতে।
ইকবালের বুকে মুখ গুজে বলে নাজমা,আমার বুইঝা কাম নাই।আপনে বুঝলেই হবে।
--তুই যে বললি দুইদিন পর ঠিক হইয়া যাবে এর মানে কি?
নাজমা মুষ্কিলে পড়ে যায় বলে,আপনে কি আমারে ঘুমাইতে দিবেন?
ইকবাল আর কথা বাড়ায় না।
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় যশবিন্দার উঠে দেখল অঙ্গন ঘুমে কাতর। পাশে ঘুমিয়ে আছে জেসমিন। রান্না ঘরে ললিতার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।খাট থেকে নেমে রান্না ঘরে গিয়ে দেখল ললিতা চা করছে। জেসমিনের জন্য জল গরম করে দুধ তৈরী করে বলল,এখন মামাকে চা দিতে হবে না,ঘুমোচ্ছে। ফ্লাক্সে রেখে দাও ঘুম থেকে উঠলে দিও।
ভিজে কাপড় দিয়ে জেসমিনের চোখ মুছে দিয়ে বোতলের নিপল মুখে ভরে দিতে চুক চুক করে দুধ টানতে থাকে। দুধ শেষ হতে চোখ মেলে ফিক করে হাসলো। পাঞ্জাবির বোতাম খুলে অঙ্গনের দিকে পিছন ফিরে স্তন মুখে পুরে দিতে চুক চুক করে চুষতে থাকে। দাঁত হীন মাড়ির কামড়ে এক সুখানুভুতি আবিষ্ট করে,চোখ বুজে উপভোগ করে যশবিন্দার।
একসময় চোখ খুলে দেখতে পেল অঙ্গন তাকিয়ে আছে তার দিকে। লজ্জা পেয়ে পাঞ্জাবির বোতাম আটকে দিয়ে জেসমিনকে শুইয়ে দিল।দ্রুত খাট থেকে নেমে চলে গেল ঘরের বাইরে। ডাক্তার সোম উঠে বসে মেয়েকে দেখে। অঞ্জুর কথা মনে পড়ল।অবাক লাগে মা নেই তবু কেমন হাতপা ছুড়ে খেলা করছে। যশবিন্দার দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকল।
থ্যাঙ্কস বলে চায়ের কাপ নিয়ে পল্টু বলল, তুমি কখন এসেছো?
--কাল সন্ধ্যেবেলা এসেছি।
--রাতে ছিলে? কোথায় শুয়েছিলে?
--কোথায় আবার এখানে।
--তাই? এই বিছানায়, আমি বুঝতেই পারিনি। পল্টু লজ্জা পায়।
--কি করে বুঝবে তোমার হুঁশ ছিল?
পল্টু চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে চা খায়।যশবিন্দার বুঝতে পারে বেচারি লজ্জা পেয়েছে, জিজ্ঞেস করল,মেয়েকে দেখেছো? একেবারে মায়ের মত হয়েছে।
--যশ তুমি যা করেছো আমি কোনোদিন ভুলবো না।তুমি সারা রাত এখানে ছিলে বাড়ীর লোক কিছু মনে করবে না?
--বাড়ীর লোক?
--মানে তোমার হাজব্যাণ্ড?
যশের মুখে ম্লান হাসি দেখে ড সোম জিজ্ঞেস করে,এনি প্রবলেম?
--আমি এখনো বিয়েই করিনি।
--তা হলে এখানে মানে কলকাতায়--।
যশবিন্দার সব ঘটনা একে একে বিস্তারিত বলল অঙ্গনকে।মনে পড়ল দিল্লীতে একবার তাকে শসিয়েছিল যারা সেই পরমিত গুরমিত যশের সহোদর ভাই নয় জ্যাঠতুতো না খুড়তুতো ভাই।জ্ঞানপ্রকাশের সঙ্গে কেন তারা বোনের বিয়ে দিতে চায় কি স্বার্থ তাদের পল্টু বুঝতে পারে।তার ধারণা ছিল স্বামীর জন্য যশকে কলকাতায় আসতে হয়েছে, ভাইদের হাত থেকে নিস্তার পেতে পালিয়ে এসেছে এখন বুঝতে পারল। পল্টু বলল, আমি ভেবেছিলাম তুমি বিবাহিত।সকালে তাহলে দুধ খাওয়াচ্ছিলে কি করে?
লাজুক হাসে যসবিন্দার,ওতেই বাচ্চারা তৃপ্তি পায়। তারপর যেন অতীত হাতড়ে বলে, বিয়ের ইচ্ছে একবার খুব হয়েছিল কিন্তু তারপর আর ওসব নিয়ে ভাবিনি।
--জীবনে চলার পথে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন কতখানি আগে বুঝিনি এখন বেশ বুঝতে পারছি।
যশবিন্দার চোখ তুলে অঙ্গনকে দেখল।যেসমিন কেদে উঠতে যশ গিয়ে দেখে বলল, আমি কান্না শুনেই বুঝেছি।
জেসমিন পটি করেছে। যশবিন্দার তার ব্যাগ খুলে ডায়াপার বের করে আনে। পল্টু অবাক হয়ে দেখে যশ ময়লা হওয়া ডায়াপার খুলে ডেটল জলে ভেজানো ন্যাকড়া দিয়ে মুছে পাউডার দিয়ে পরম মমতায় আবার নতুন ডায়াপার পরিয়ে দিল। দেখে কে বলবে যশের নিজের মেয়ে নয়।বাচ্চাটা আবার হাত-পা ছুড়ে খেলতে থাকে।
যশবিন্দার হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,কি দেখছো?
--তোমাকে দেখছি আর ভাবছি।জেসমিন খুব বুদ্ধিমতী।মাকে হারিয়ে ঠিক একটা মা খুজে নিয়েছে।
যশবিন্দার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,তুমিই হাদা রয়ে গেলে।
পল্টু এক মুহুর্ত ভাবে তারপর হেসে বলল,তুমি ঠিকই বলেছো। অঞ্জুও বলতো,কি করে তুমি ডাক্তারী করো।
যশবিন্দার জেসমিনকে কোলে নিয়ে বলল,তুমি স্নান করে নেও। বেরোবে তো?
--তুমি বেরোবে না?
--দিস ইজ প্রব্লেম।জেসমিনকে রেখে কি করে যাবো ভাবছি।কনট্যাক্ট সার্ভিস ছাড়ব বললেই ছাড়া যাবে না।
--তুমি ফোন করো।
--ফোন করলে হবে না।ডিসি নিতে হবে।অঙ্গন ফুল পেমেণ্ট করতে হবে।
--ও হ্যা আজ ফেরার পথে একবার যাবো।
--তুমি পৌছে গাড়ীটা পাঠাতে পারবে?
--তোমার লাগলে তুমি নিতে পারো,আমি ট্যাক্সি নিয়ে নেবো।
--তুমি পৌছে গাড়ীটা পাঠিয়ে দিও।
যশবিন্দার রান্না ঘরে চলে গেল। হাড়িতে ভাত ফুটছে। ললিতাকে মনে হল চিন্তামগ্ন।
--বাড়ীতে তোমার কে কে আছে? যশ জিজ্ঞেস করে।
--মা আছে দুই ছেলে-মেয়ে আছে। কতদিন আসছি কি করতেছে কে জানে।
--বাড়ির কথা মনে পড়ে?
ললিতা তাকিয়ে হেসে বলল, মনে তো পড়ে,মামাকে একা রেখে যাতি ইচ্ছে করে না।
--এখন আমি আছি,যাও ঘুরে এসো।
--আমি চিনি যাতি পারবো না,মামা বলিছেল গাড়ি করে পৌছে দেবে।
খাবার টেবিলে বসে কথাটা তুলল যসবিন্দার। পল্টু মুখ তুলে ললিতার দিকে তাকাল।
--তুমার অসুবিধে হলি না হয় পরে যাবো।ললিতা বলল।
--অসুবিধের কি আছে আমি তো আছি।তুমি দুরোজ ঘুরে এসো।যশবিন্দার বলল।
পল্টু বুঝতে পারে না যশবিন্দার কি করতে চাইছে।আবার কি করা উচিত সেটাও স্থির করতে পারেনা।এতকাল অঞ্জনাই সামলেছে। যশের দিকে তাকিয়ে বলল,হ্যা তুমি ঘুরে এসো।যশ তো আছে।
ড সোম লেক ভিউতে পৌছে ইকবালকে বলল,তুমি বাসায় চলে যাও।ড যশের যদি কোনো দরকার হয়।
আজ বেশী অপারেশন নেই মাম্মী হয়তো তাকে একটু রিলিফ দিতে চান।ড সোম নিজের ঘরে বিশ্রাম করছেন।নার্স এসে ফাইল দিয়ে গেল।ড সোম ফাইলে চোখ বোলাতে থাকেন।একটা সব মাইনার অপারেশন।ড শর্মা এসে কুশল বিনিময় করলেন,সি ইউ লেটার।
বেয়ারা এসে খবর দিল স্যার আপনার ফোন।বেরিয়ে ফোন ধরল হ্যা বলছি....ডিসি পেয়ে গেছো...আমাকে যেতে হবে না?...ওকে থ্যাঙ্ক ইউ...জেসমিন ...ঘুমোচ্ছে....রিয়ালি তুমি না থাকলে....।
ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিল।ড সোম হাসলেন যশ পাব্জাবী হলেও বাঙালি মায়ের মতো।কিম্বা সব মায়েরাই এক রকম।
ললিতা বাড়িতে একা ডাক্তার ম্যাম বুইনরে নিয়ে বের হইছে।ঐটূক বাচ্চা নিয়ে কেউ বাইর হয়?কোথায় গেল কিছু বলে নাই।মামারে আগে কুনদিন নেশা করতে দেখেনি।ললিতার এইখানে থাকতে আর ইচ্ছা হয়না।
বেলা গড়াতে থাকে সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। রাস্তায় লোক চলাচল বাড়ে ক্রমশ। নারসিং হোমে পর পর তিনটে অপারেশন করল।পল্টু পোষাক বদলে বেরোতে যাবে অফিসের সেই ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলল,স্যার একটা ফোন এসেছিল আবার পরে করবে।
--কে ফোন করেছিল?
--নাম বলেনি মনে হোল নন বেঙ্গলি।
--কি ব্যাপারে? এ্যাপয়ণ্টমেণ্টের ব্যাপারে আমি তো কিছু বলিনা।
--বলছিল পারশোনাল ব্যাপার।
--ঠিক আছে কি বলে শুনে রাখবেন,আমি আসছি।
ড.সোমের মাথায় চিন্তা বাড়ীতে বাচ্চা কি করছে,সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে এমন সময় ভদ্রলোক ছুটে এসে বললেন,আবার ফোন করেছে।
ড.সোম ফোন ধরে বলল,ড.সোম...পরমিত?কে পরমিত?...ড.সোম চোখ তুলে দেখল ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে বলল,কেন তার কাছে কি দরকার?.... শি ইজ মাই ওয়াইফ....ন্যাচারালি হ্যা আমার কাছেই আছে...এনি প্রবলেম?..ওকে থ্যাঙ্ক ইউ।
ফোন রেখে দিয়ে বলল,স্কাউণ্ড্রেল।
শী ইজ মাই ওয়াইফ শুনে লোকটি দপ করে নিভে গেল। মনে মনে হাসে পল্টু। যশ তাহলে এদের কথাই বলেছিল। নীচে নেমে দেখল ড.শর্মা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।
যশবিন্দার চোখের জল মুছে ফেলে।কোনো প্রত্যাশা নিয়ে সে কলকাতায় আসেনি। একমাত্র উদ্দেশ্য ভাইদের হাত থেকে নিস্কৃতি। জ্ঞান প্রকাশকে সে দেখেছে। লেখাপড়া বেশি জানে না। পিতৃপুরুষের ব্যবসা চৌতালা ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন। সারা দেশে অনেক লরি চলছে তার। পরমিতকে পার্টনারশিপ দিয়েছে।যশকে ঘুষ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। সে নিজে ডাক্তার অন্যর উপর নির্ভরশীল হবার দরকার নেই। বীরজী থাকলে আজ তাকে পালিয়ে বেড়াতে হতনা। কোনো স্বার্থ নিয়ে নয় জন্মে মাকে হারিয়েছে জেসমিন,নিরপরাধ শিশুটির জন্য মায়া পড়ে গেছে। বেশ মিষ্টি দেখতে হয়েছে। অঙ্গনের দিকে তাকালো নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে।কলেজে দেখেছে কোনো নেশা ছিল না। বিবির প্রতি টান তার মনে শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিল।
বিবির কথায় ইকবালের মধ্যে ধন্দ্ব কি বলতে চায় নাজমা?বিবির দিকে ঘুরে বলল,তোকে যা জিজ্ঞেস করছি বল।
--সেইটা মুখে বলতে হয়?যত উল্টা পাল্টা কথা,নেশা করছেন নিকি?
--জানিস ডাক্তারসাব আজ নেশা করছে।
--বড় মাইনষের কথা ছাড়ান দ্যান।
--সরাব দূরে থাক কোনো দিন বিড়ি সিগারেট খাইতে দেখি নাই। তিন তলা পর্যন্ত উঠাইয়া দিয়া আসলাম।
নাজমার মন খারাপ হয়ে যায়। এই মানুষটা তারে বাঁচাইছেন।বিবিটা মারা গেল অখন একেবারে একা।
ইকবাল বলল,জানিস ডাক্তার সাহেব আমারে কি বলল? বলে কিনা ইকবাল তোমাদের আল্লা ভাল না।
--হায় আল্লা তোবা তোবা,আপনে কিছু বললেন না?
--কি বলবো?বড় মানুষ তারপর নেশা করেছেন। তারপর কি কইল জানিস ,দিলে যখন আবার ফিরিয়ে নিলে কেন?
--আপনে কি কইলেন?
--কি বলবো,আমার চোখে পানি এসে গেল।মেমসাহবরে খুব ভালবাতেন ডাক্তার সাহেব।
নাজমা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,আচ্ছা আপনে আমারে ভালবাসেন?
ইকবাল বউকে বুকে চেপে জিজ্ঞেস করে,সেইটা তুই বুঝতে পারিস না? সাধে কি কয় মেয়েমাইনষের মাথায় ঘিলু কম তারা বোঝে দেরীতে।
ইকবালের বুকে মুখ গুজে বলে নাজমা,আমার বুইঝা কাম নাই।আপনে বুঝলেই হবে।
--তুই যে বললি দুইদিন পর ঠিক হইয়া যাবে এর মানে কি?
নাজমা মুষ্কিলে পড়ে যায় বলে,আপনে কি আমারে ঘুমাইতে দিবেন?
ইকবাল আর কথা বাড়ায় না।
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় যশবিন্দার উঠে দেখল অঙ্গন ঘুমে কাতর। পাশে ঘুমিয়ে আছে জেসমিন। রান্না ঘরে ললিতার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।খাট থেকে নেমে রান্না ঘরে গিয়ে দেখল ললিতা চা করছে। জেসমিনের জন্য জল গরম করে দুধ তৈরী করে বলল,এখন মামাকে চা দিতে হবে না,ঘুমোচ্ছে। ফ্লাক্সে রেখে দাও ঘুম থেকে উঠলে দিও।
ভিজে কাপড় দিয়ে জেসমিনের চোখ মুছে দিয়ে বোতলের নিপল মুখে ভরে দিতে চুক চুক করে দুধ টানতে থাকে। দুধ শেষ হতে চোখ মেলে ফিক করে হাসলো। পাঞ্জাবির বোতাম খুলে অঙ্গনের দিকে পিছন ফিরে স্তন মুখে পুরে দিতে চুক চুক করে চুষতে থাকে। দাঁত হীন মাড়ির কামড়ে এক সুখানুভুতি আবিষ্ট করে,চোখ বুজে উপভোগ করে যশবিন্দার।
একসময় চোখ খুলে দেখতে পেল অঙ্গন তাকিয়ে আছে তার দিকে। লজ্জা পেয়ে পাঞ্জাবির বোতাম আটকে দিয়ে জেসমিনকে শুইয়ে দিল।দ্রুত খাট থেকে নেমে চলে গেল ঘরের বাইরে। ডাক্তার সোম উঠে বসে মেয়েকে দেখে। অঞ্জুর কথা মনে পড়ল।অবাক লাগে মা নেই তবু কেমন হাতপা ছুড়ে খেলা করছে। যশবিন্দার দু-কাপ চা নিয়ে ঢুকল।
থ্যাঙ্কস বলে চায়ের কাপ নিয়ে পল্টু বলল, তুমি কখন এসেছো?
--কাল সন্ধ্যেবেলা এসেছি।
--রাতে ছিলে? কোথায় শুয়েছিলে?
--কোথায় আবার এখানে।
--তাই? এই বিছানায়, আমি বুঝতেই পারিনি। পল্টু লজ্জা পায়।
--কি করে বুঝবে তোমার হুঁশ ছিল?
পল্টু চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে চা খায়।যশবিন্দার বুঝতে পারে বেচারি লজ্জা পেয়েছে, জিজ্ঞেস করল,মেয়েকে দেখেছো? একেবারে মায়ের মত হয়েছে।
--যশ তুমি যা করেছো আমি কোনোদিন ভুলবো না।তুমি সারা রাত এখানে ছিলে বাড়ীর লোক কিছু মনে করবে না?
--বাড়ীর লোক?
--মানে তোমার হাজব্যাণ্ড?
যশের মুখে ম্লান হাসি দেখে ড সোম জিজ্ঞেস করে,এনি প্রবলেম?
--আমি এখনো বিয়েই করিনি।
--তা হলে এখানে মানে কলকাতায়--।
যশবিন্দার সব ঘটনা একে একে বিস্তারিত বলল অঙ্গনকে।মনে পড়ল দিল্লীতে একবার তাকে শসিয়েছিল যারা সেই পরমিত গুরমিত যশের সহোদর ভাই নয় জ্যাঠতুতো না খুড়তুতো ভাই।জ্ঞানপ্রকাশের সঙ্গে কেন তারা বোনের বিয়ে দিতে চায় কি স্বার্থ তাদের পল্টু বুঝতে পারে।তার ধারণা ছিল স্বামীর জন্য যশকে কলকাতায় আসতে হয়েছে, ভাইদের হাত থেকে নিস্তার পেতে পালিয়ে এসেছে এখন বুঝতে পারল। পল্টু বলল, আমি ভেবেছিলাম তুমি বিবাহিত।সকালে তাহলে দুধ খাওয়াচ্ছিলে কি করে?
লাজুক হাসে যসবিন্দার,ওতেই বাচ্চারা তৃপ্তি পায়। তারপর যেন অতীত হাতড়ে বলে, বিয়ের ইচ্ছে একবার খুব হয়েছিল কিন্তু তারপর আর ওসব নিয়ে ভাবিনি।
--জীবনে চলার পথে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন কতখানি আগে বুঝিনি এখন বেশ বুঝতে পারছি।
যশবিন্দার চোখ তুলে অঙ্গনকে দেখল।যেসমিন কেদে উঠতে যশ গিয়ে দেখে বলল, আমি কান্না শুনেই বুঝেছি।
জেসমিন পটি করেছে। যশবিন্দার তার ব্যাগ খুলে ডায়াপার বের করে আনে। পল্টু অবাক হয়ে দেখে যশ ময়লা হওয়া ডায়াপার খুলে ডেটল জলে ভেজানো ন্যাকড়া দিয়ে মুছে পাউডার দিয়ে পরম মমতায় আবার নতুন ডায়াপার পরিয়ে দিল। দেখে কে বলবে যশের নিজের মেয়ে নয়।বাচ্চাটা আবার হাত-পা ছুড়ে খেলতে থাকে।
যশবিন্দার হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,কি দেখছো?
--তোমাকে দেখছি আর ভাবছি।জেসমিন খুব বুদ্ধিমতী।মাকে হারিয়ে ঠিক একটা মা খুজে নিয়েছে।
যশবিন্দার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,তুমিই হাদা রয়ে গেলে।
পল্টু এক মুহুর্ত ভাবে তারপর হেসে বলল,তুমি ঠিকই বলেছো। অঞ্জুও বলতো,কি করে তুমি ডাক্তারী করো।
যশবিন্দার জেসমিনকে কোলে নিয়ে বলল,তুমি স্নান করে নেও। বেরোবে তো?
--তুমি বেরোবে না?
--দিস ইজ প্রব্লেম।জেসমিনকে রেখে কি করে যাবো ভাবছি।কনট্যাক্ট সার্ভিস ছাড়ব বললেই ছাড়া যাবে না।
--তুমি ফোন করো।
--ফোন করলে হবে না।ডিসি নিতে হবে।অঙ্গন ফুল পেমেণ্ট করতে হবে।
--ও হ্যা আজ ফেরার পথে একবার যাবো।
--তুমি পৌছে গাড়ীটা পাঠাতে পারবে?
--তোমার লাগলে তুমি নিতে পারো,আমি ট্যাক্সি নিয়ে নেবো।
--তুমি পৌছে গাড়ীটা পাঠিয়ে দিও।
যশবিন্দার রান্না ঘরে চলে গেল। হাড়িতে ভাত ফুটছে। ললিতাকে মনে হল চিন্তামগ্ন।
--বাড়ীতে তোমার কে কে আছে? যশ জিজ্ঞেস করে।
--মা আছে দুই ছেলে-মেয়ে আছে। কতদিন আসছি কি করতেছে কে জানে।
--বাড়ির কথা মনে পড়ে?
ললিতা তাকিয়ে হেসে বলল, মনে তো পড়ে,মামাকে একা রেখে যাতি ইচ্ছে করে না।
--এখন আমি আছি,যাও ঘুরে এসো।
--আমি চিনি যাতি পারবো না,মামা বলিছেল গাড়ি করে পৌছে দেবে।
খাবার টেবিলে বসে কথাটা তুলল যসবিন্দার। পল্টু মুখ তুলে ললিতার দিকে তাকাল।
--তুমার অসুবিধে হলি না হয় পরে যাবো।ললিতা বলল।
--অসুবিধের কি আছে আমি তো আছি।তুমি দুরোজ ঘুরে এসো।যশবিন্দার বলল।
পল্টু বুঝতে পারে না যশবিন্দার কি করতে চাইছে।আবার কি করা উচিত সেটাও স্থির করতে পারেনা।এতকাল অঞ্জনাই সামলেছে। যশের দিকে তাকিয়ে বলল,হ্যা তুমি ঘুরে এসো।যশ তো আছে।
ড সোম লেক ভিউতে পৌছে ইকবালকে বলল,তুমি বাসায় চলে যাও।ড যশের যদি কোনো দরকার হয়।
আজ বেশী অপারেশন নেই মাম্মী হয়তো তাকে একটু রিলিফ দিতে চান।ড সোম নিজের ঘরে বিশ্রাম করছেন।নার্স এসে ফাইল দিয়ে গেল।ড সোম ফাইলে চোখ বোলাতে থাকেন।একটা সব মাইনার অপারেশন।ড শর্মা এসে কুশল বিনিময় করলেন,সি ইউ লেটার।
বেয়ারা এসে খবর দিল স্যার আপনার ফোন।বেরিয়ে ফোন ধরল হ্যা বলছি....ডিসি পেয়ে গেছো...আমাকে যেতে হবে না?...ওকে থ্যাঙ্ক ইউ...জেসমিন ...ঘুমোচ্ছে....রিয়ালি তুমি না থাকলে....।
ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিল।ড সোম হাসলেন যশ পাব্জাবী হলেও বাঙালি মায়ের মতো।কিম্বা সব মায়েরাই এক রকম।
ললিতা বাড়িতে একা ডাক্তার ম্যাম বুইনরে নিয়ে বের হইছে।ঐটূক বাচ্চা নিয়ে কেউ বাইর হয়?কোথায় গেল কিছু বলে নাই।মামারে আগে কুনদিন নেশা করতে দেখেনি।ললিতার এইখানে থাকতে আর ইচ্ছা হয়না।
বেলা গড়াতে থাকে সুর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে। রাস্তায় লোক চলাচল বাড়ে ক্রমশ। নারসিং হোমে পর পর তিনটে অপারেশন করল।পল্টু পোষাক বদলে বেরোতে যাবে অফিসের সেই ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বলল,স্যার একটা ফোন এসেছিল আবার পরে করবে।
--কে ফোন করেছিল?
--নাম বলেনি মনে হোল নন বেঙ্গলি।
--কি ব্যাপারে? এ্যাপয়ণ্টমেণ্টের ব্যাপারে আমি তো কিছু বলিনা।
--বলছিল পারশোনাল ব্যাপার।
--ঠিক আছে কি বলে শুনে রাখবেন,আমি আসছি।
ড.সোমের মাথায় চিন্তা বাড়ীতে বাচ্চা কি করছে,সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে এমন সময় ভদ্রলোক ছুটে এসে বললেন,আবার ফোন করেছে।
ড.সোম ফোন ধরে বলল,ড.সোম...পরমিত?কে পরমিত?...ড.সোম চোখ তুলে দেখল ভদ্রলোক তার দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে বলল,কেন তার কাছে কি দরকার?.... শি ইজ মাই ওয়াইফ....ন্যাচারালি হ্যা আমার কাছেই আছে...এনি প্রবলেম?..ওকে থ্যাঙ্ক ইউ।
ফোন রেখে দিয়ে বলল,স্কাউণ্ড্রেল।
শী ইজ মাই ওয়াইফ শুনে লোকটি দপ করে নিভে গেল। মনে মনে হাসে পল্টু। যশ তাহলে এদের কথাই বলেছিল। নীচে নেমে দেখল ড.শর্মা তার জন্য অপেক্ষা করছেন।