15-03-2020, 07:20 PM
[৬৮]
পান্থ নিবাসের সামনে গাড়ী দাড়াতে পল্টূ আর ললিতা নেমে পড়ল। মাওলানা মুখ বাড়িয়ে বলেলেন, ডাক্তার সাহেব সবারে একদিন চলে যেতে হবে আপনে শিক্ষিত মানুষ আপনাকে আমার বলা শোভা পায় না। পল্টু উপর দিকে তাকিয়ে দেখল উপর থেকে সবাই উকিঝুকি দিচ্ছে।ললিতাকে বলল,এতরাতে আর রান্না করতে হবে না। চল তোর জন্য দোকান থেকে খাবার কিনে নিই।
--মামা আমার ক্ষুধানেই,তুমি খেলে নিয়ে নেও।
--আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।তুই আমাকে এককাপ চা করে দিস।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে পল্টু।ললিতা জিজ্ঞেস করে,কি হল মামা?
--তোর মামী নেই ফাকা ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না।
ললিতার চোখে জল এসে গেল বলল,মামা তুমি এরকম করলে আমার ভাল লাগে না।
দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে পল্টূ বিহবল চোখ বোলায় চারদিকে।ললিতা তাড়াতাড়ি ঘরে ঢূকে বিছানার চাদর বদলে দিতে থাকে,খেয়াল হয় ফাইলটার কথা।নার্সিং হোমে রয়ে গেছে আনা হয়নি। পল্টুকে বলল,মামা বিছানার উপর একটা ফাইল ছিল মেয়ে ডাক্তারকে দিয়েছিলাম,আনা হয় নি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পল্টু বলল,আর ফাইল আসল লোকই চলে গেল।
--বালিশের নীচে একটা কাগজ ছেল সেইটাও আমি নিয়ে গেছিলাম।
--কি কাগজ?
--তা জানি না।ঐ কাগজটা ডাক্তার দিদি নিয়ে বুকে গুজে রাখল।
বুকে গুজে রাখল? পল্টুর মনে পড়ল যশ তাকে দেখিয়েছিল,ইংরেজিতে অঞ্জুর লেখা। এবার বুঝতে পারে কি ভাবে কাগজটা যশের হাতে পৌছালো?
বিছানা পরিস্কার করে ললিতা স্নান করতে গেল। ফোন বাজছে পল্টু গিয়ে ফোন ধরল, হ্যালো?..বলুন মাম্মী....।ওপাশ থেকে পার্বতী ম্যাম সমবেদনার কথা বলতে থাকেন। বলা শেষ হলে পল্টু বলল,এবার রাখি? ফোন রাখতে আবার বেজে উঠল। পল্টু ললিতাকে ফোন ধরতে বলে শিখিয়ে দিল,বলবি আমি শুয়ে পড়েছি। অনবরত ফোন বাজতে থাকে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ললিতা ফোন ধরে বলে, শরীর ভাল না শুয়ে পড়েছেন।
অঞ্জু অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে মনে তার কথাই ভাবতো, নার্সিং হোমে শুয়ে ছিল এমন নির্বিকার তন্ন তন্ন করে খুজে কোথাও নিজেকে দেখতে পেল না পল্টু। এত সহজে বাঁধন ছিড়ে চলে যেতে পারলো? অভিমান হয় সেও আর তার কথা ভাববে না।
--মামা তুমি স্নান করে নেও আমি চা করতেছি।ললিতা এসে বলল।
কথাটা খারাপ বলেনি,এখন ললিতার নির্দেশে চলতে হবে। তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল পল্টু।বেশ ঝরঝরে লাগছে।ঘরে ঢুকে অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। আলমারি খুলে এ্যালবামটা বের করে। হাসছে চোখে কালো চশমা। কি সুন্দর চোখ অথচ সব সময় ঢেকে রাখতো। ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন পাড়ি দেয় অতীতে। যশের নাম শুনে বিরক্ত হলেও বাইরে তার কোনো প্রকাশ ছিল না।কলেজ ছুটি নিয়ে নিজের গরজে দিল্লী সফরে সঙ্গী হয়েছিল।এতই যদি শঙ্কা তোমার তাহলে কোন ভরসায় একা ফেলে চলে গেলে?
ললিতা চা নিয়ে ঢুকল। চা দিয়ে সেও ছবি দেখতে থাকে। একসময় জিজ্ঞেস করে,মামী কি ., ছেল?
পল্টু চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে থামে। . পরিবারে জন্মেছিল কিন্তু কি ছিল এখনো বুঝতে পারিনি।শুধু বুঝেছি অঞ্জু আমার নিঃশ্বাস আমার উদ্যম আমার প্রেরণা। ঈশ্বর আমাকে কিছুদিনের জন্য দিয়েছিল মেয়াদ শেষ হতে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এসব কথা ললিতাকে বলা যায় না। পল্টু জিজ্ঞেস করল,তুই জানতিস না?
--কি করে জানবো আমারে কেউ বললি তো জানবো।আজ গোর দিল দেখেই জানলাম।
--তুই তো তবু জেনেছিস আমি আজও জানতে পারলাম না। ললিতা হা-করে তাকিয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করল,তুই চা খাবি না?
--আমার চা আছে রান্না ঘরে।ললিতা চলে গেল।
মেয়েটাকে এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। যতই হোক ও তো অঞ্জুরই মেয়ে।ওর কি অপরাধ? বেচারি জানতেই পারল না ওর মা নেই। কি করছে এখন,ঘুমোচ্ছে? যশকে বাড়ীতে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। কার মেয়ে কোথায় পেল? কেনই বা সে নিয়ে এল? ললিতা ঢুকে বলল,মামা আমি শুয়ে পড়ছি? কোনো দরকার আছে?
--তুই মেয়েটাকে দেখেছিস?
--মামীর মেয়ে?ললিতার চোখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল বলল,কি সোন্দর পুতুলের মত দেখতে মাথা ভর্তি চুল পিট পিট করে চায়।ললিতার গলা ধরে এল,ও জানে না ওর মা নাই।
--ঠিক আছে তুই যা। পল্টু দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে হাউ-হাউ করে কেঁদে ফেলে। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয়।
রাত গভীর হয় ঘুমিয়ে পড়ে পল্টূ। ঘুমালে মন শান্ত হয়। ড্যাফোডিলের কোয়ার্টারে যশবিন্দারের চোখে ঘুম নেই। ফিডীং বোতল শিপার ইত্যাদি কিনে এনেছে। চুক চুক করে দুধ টানছে। মুগ্ধ হয়ে দেখে যশ। একসময় জামা খুলে স্তন বৃন্ত মুখে পুরে দিল।দুধ নেই তবু কি সুন্দর চুষছে।নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাচ্চার নাম দিয়েছে জেসমিন।
দিন দশেকের উপর হয়ে গেল ভাইদের উপদ্রব থেকে বাঁচতে এখানে এসেছে। পরমিতের ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা।বিজনেস পারটনার জ্ঞান প্রকাশ চৌটালার সঙ্গে তার বিয়ে দেবে।প্রচুর অর্থের মালিক সুশিক্ষিত মন তাকে মেনে নিতে পারে না।সেই সময় কাগজে বিজ্ঞাপনটা নজরে পড়ে। প্রথম কথা দিল্লী থেকে পালাতে হবে তাছাড়া মনের কোনে লুকিয়ে আছে কলকাতার প্রতি দুর্বলতা।সুযোগটা হাতছাড়া করে না। পরমিত আজ হোক কাল হোক ভবানীপুরে আসবেই তার খোজে। দুঃশ্চিন্তা আছেই কি বলে পরমিতকে নিবৃত্ত করবে?একটাই আশার কথা এটা দিল্লী নয় এখানে মস্তানি চলবে না।নিঃসঙ্গ প্রবাসে জেসমিন তার আশ্রয়।কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কোনো চিন্তা নেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেই কোনো উদবেগ।জীবনের এই মাসুমিয়ত কাল বড় পবিত্র। যতদিন মাসুমিয়ত থাকবে ঈশ্বর তোমাকে ছুয়ে থাকবে। কপালে চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ল যশ।
নরম আলোয় ভরে গেল ঘর। পল্টু কি দেখছে? খাদিজা বেগম তার পাশে জড়িয়ে শুয়ে আছে। কোথায় ছিলে এতক্ষণ,ওটুকু মেয়েকে আমি একা একা কি করে সামলাবো। আহা যশকে দায়িত্ব দিয়ে তুমি চলে যাবে?মাটির নীচে তোমার খুব কষ্ট হয়েছে? পল্টু হাত দিয়ে ধরতে গেলে সরে যায় অঞ্জু। আমি ধরবো তুমি আমাকে ধরতে পারবে না।আমি মাঝে মাঝে আসবো আমার মর্জিমত। যশ ভেরি প্রেটি বিউটিফুল। না তুমি যাবে না,অঞ্জু--অঞ্জু--অঞ্জু....।
বাইরে থেকে ললিতা দরজা ধাক্কা দেয়, মামা দরজা খোলো,চা এনেছি।
ঘুম ভেঙ্গে যায় ধড়ফড় করে উঠে বসে পল্টু। বাইরে ললিতার গলা পেয়ে খাট থেকে নেমে দরজা খোলে। ললিতা চা নিয়ে ঢুকতে পল্টু বলল, এত বেলা হল ডাকিস নি? আমাকে বেরোতে হবে।
--ডাকিনি আবার?এই নিয়ে তিনবার আসলাম।
পল্টু চা বিয়ে জিজ্ঞেস করে,রান্না হয়ে গেছে?
--ভাত উবুড় দিলি হয়ে যাবে।
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? মনের ভাবনা রুপান্তরিত হয়েছে স্বপ্নে। কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হবে না হলে শান্তি নেই।
অঞ্জুকে স্পষ্ট দেখেছে চোখে সানগ্লাস ঠিক আগের মত।চা খেয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
রাত করে ঘুমিয়েছে কিন্তু এত বেলা অবধি পল্টু ঘুমোয় না।মাথায় শ্যাম্পু দিল সাবান মেখে স্নান করল। মাথার মধ্যে সব কেমন তালগোল পাকিয়ে আছে।রোগী দেখতে পারবে তো? পোষাক পরে তৈরী হয়ে খাবার টেবিলে বসে জিজ্ঞেস করে,আর কেউ ফোন করেনি তো?
--করেনি আবার? একজন মেয়েলোক আবার দুই-তিনবার ফোন করেছে।
পল্টু হেসে বলল,তুই কি বললি?
--ডাক্তারবাবুর শরীর ভাল না ওবেলা করবেন।
--ও বেলা বলার কি দরকার ছিল?
মাম্মী দেখা করতে বলেছিলেন আজ গিয়েই দেখা করবে।খাওয়া দাওয়ার পর বিশ্রাম করছে। সময় কাটতে চায় না অঞ্জু থাকতে কিভাবে কেটে যেত সময় বুঝতেই পারত না। সব সময় একটা মানসিক চাপ অস্থির করে তুলেছে। ইকবাল এসে ড.সোমকে নিয়ে গেছে।বেরোবার আগে তিনটের সময় চা করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।ছেলে মেয়ের কথা মনে পড়ল।কতদিন দেখেনি তাদের এই অবস্থায় মামাকে একলা ফেলে যেতেও পারছে না। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যের মুখে কলিন বেল বাজতে উঠ বসল। মামার এত সকাল সকাল ফেরার কথা নয়।বাড়ীতে সে এখন একা,দরজা খুলবে কি না ভাবে। ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখল কে একজন মহিলা,কোলে বাচ্চা।
বুইন নাতো? ললিতা দরজা খুলে দিতে ড.কাউর বাচ্চা কোলে ঢুকলেন।
--মামা তো বাড়ি নাই নাসিন হোমে গেছে।
--ফোনে বলল শরীর ভাল না।
--কি করবো মামা শিখায়ে দিছিল। আমার কোলে একটু দেবেন?সসঙ্কোচে জিজ্ঞেস করে ললিতা।
--ভাল করে হাত ধুয়ে এসো।
কথা না বাড়িয়ে ললিতা হাত ধুয়ে এসে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে খুব খুশি। ড.কাউর ঘরে ঢুকে বিছানার উপর ছোট একটা বিছানা করলেন। ললিতাকে বললেন,এখানে শুইয়ে দাও।
অনিচ্ছে সত্বেও ললিতা শুইয়ে দিল।বাচ্চাটা ঘুমে অচেতন ললিতার ভাল লাগে না। নড়াচড়া না করলে ভাল লাগে?
ড.কাউর জিজ্ঞেস করলেন,তোমার রান্না হয়ে গেছে?
--এইবার করবো।
--তোমাকে করতে হবে না,আমি করছি।
একজন অপরিচিত মহিলা এসে খবরদারি করবে ললিতার পছন্দ নয়। কিন্তু মুখের উপর কিছু বলতেও পারছে না।
বিশেষ করে বুইনরে সঙ্গে করে এনেছে।নার্সিন হোমে মামীর জন্য খুব করেছে। তাকে বসিয়ে খাইয়েছে এসব কথা ভেবে ললিতা আর কিছু বলে না। মামা আসুক তখন যা বলার মামাই বলবে।
ড কাউরের ডাকে ললিতা রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমারে ডাকতিছেন?
--কি নাম তোমার?
--ললিতা।
--ভেরি নাইস নেম।কোথায় কি আছে আমাকে দেখিয়ে দাও।
ললিতা চাল ডাল মশলাপাতি বের করে দিল।ড কাউর বললেন,তুমি জেসমিনের কাছে যাও।
--ওর নাম জেসমিন দিছেন?
--হ্যা ভালো না?
ললিতা বোকার মত হাসে।ড কাউর বললেন,এটা একটা ফুলের নাম ছোটো ছোটো সাদা ফুল সেক্সি গন্ধ।যাও জেসমিন উঠলে আমাকে ডাকবে।
ড কাউর সবজি কাটতে থাকে,মনের মধ্যে নানা চিন্তা বিজ বিজ করে।অঙ্গনের রান্না ঘরে নিজেকে দেখবে কখনো দিমাগে আসেনি।পরমিত আসলে বুরবাক বনে যাবে।প্রাজী দেখবে তার বহিন মা বন গয়ী।মনে মনে হাসে।হোস্টেলে ফিরবে কিনা অঙ্গন আসলে ফয়শলা হবে।
পান্থ নিবাসের সামনে গাড়ী দাড়াতে পল্টূ আর ললিতা নেমে পড়ল। মাওলানা মুখ বাড়িয়ে বলেলেন, ডাক্তার সাহেব সবারে একদিন চলে যেতে হবে আপনে শিক্ষিত মানুষ আপনাকে আমার বলা শোভা পায় না। পল্টু উপর দিকে তাকিয়ে দেখল উপর থেকে সবাই উকিঝুকি দিচ্ছে।ললিতাকে বলল,এতরাতে আর রান্না করতে হবে না। চল তোর জন্য দোকান থেকে খাবার কিনে নিই।
--মামা আমার ক্ষুধানেই,তুমি খেলে নিয়ে নেও।
--আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।তুই আমাকে এককাপ চা করে দিস।
সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে দরজার সামনে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে পল্টু।ললিতা জিজ্ঞেস করে,কি হল মামা?
--তোর মামী নেই ফাকা ঘরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না।
ললিতার চোখে জল এসে গেল বলল,মামা তুমি এরকম করলে আমার ভাল লাগে না।
দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে পল্টূ বিহবল চোখ বোলায় চারদিকে।ললিতা তাড়াতাড়ি ঘরে ঢূকে বিছানার চাদর বদলে দিতে থাকে,খেয়াল হয় ফাইলটার কথা।নার্সিং হোমে রয়ে গেছে আনা হয়নি। পল্টুকে বলল,মামা বিছানার উপর একটা ফাইল ছিল মেয়ে ডাক্তারকে দিয়েছিলাম,আনা হয় নি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে পল্টু বলল,আর ফাইল আসল লোকই চলে গেল।
--বালিশের নীচে একটা কাগজ ছেল সেইটাও আমি নিয়ে গেছিলাম।
--কি কাগজ?
--তা জানি না।ঐ কাগজটা ডাক্তার দিদি নিয়ে বুকে গুজে রাখল।
বুকে গুজে রাখল? পল্টুর মনে পড়ল যশ তাকে দেখিয়েছিল,ইংরেজিতে অঞ্জুর লেখা। এবার বুঝতে পারে কি ভাবে কাগজটা যশের হাতে পৌছালো?
বিছানা পরিস্কার করে ললিতা স্নান করতে গেল। ফোন বাজছে পল্টু গিয়ে ফোন ধরল, হ্যালো?..বলুন মাম্মী....।ওপাশ থেকে পার্বতী ম্যাম সমবেদনার কথা বলতে থাকেন। বলা শেষ হলে পল্টু বলল,এবার রাখি? ফোন রাখতে আবার বেজে উঠল। পল্টু ললিতাকে ফোন ধরতে বলে শিখিয়ে দিল,বলবি আমি শুয়ে পড়েছি। অনবরত ফোন বাজতে থাকে বাথরুম থেকে বেরিয়ে ললিতা ফোন ধরে বলে, শরীর ভাল না শুয়ে পড়েছেন।
অঞ্জু অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলেও মনে মনে তার কথাই ভাবতো, নার্সিং হোমে শুয়ে ছিল এমন নির্বিকার তন্ন তন্ন করে খুজে কোথাও নিজেকে দেখতে পেল না পল্টু। এত সহজে বাঁধন ছিড়ে চলে যেতে পারলো? অভিমান হয় সেও আর তার কথা ভাববে না।
--মামা তুমি স্নান করে নেও আমি চা করতেছি।ললিতা এসে বলল।
কথাটা খারাপ বলেনি,এখন ললিতার নির্দেশে চলতে হবে। তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল পল্টু।বেশ ঝরঝরে লাগছে।ঘরে ঢুকে অঞ্জুর কথা মনে পড়ল। আলমারি খুলে এ্যালবামটা বের করে। হাসছে চোখে কালো চশমা। কি সুন্দর চোখ অথচ সব সময় ঢেকে রাখতো। ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মন পাড়ি দেয় অতীতে। যশের নাম শুনে বিরক্ত হলেও বাইরে তার কোনো প্রকাশ ছিল না।কলেজ ছুটি নিয়ে নিজের গরজে দিল্লী সফরে সঙ্গী হয়েছিল।এতই যদি শঙ্কা তোমার তাহলে কোন ভরসায় একা ফেলে চলে গেলে?
ললিতা চা নিয়ে ঢুকল। চা দিয়ে সেও ছবি দেখতে থাকে। একসময় জিজ্ঞেস করে,মামী কি ., ছেল?
পল্টু চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে থমকে থামে। . পরিবারে জন্মেছিল কিন্তু কি ছিল এখনো বুঝতে পারিনি।শুধু বুঝেছি অঞ্জু আমার নিঃশ্বাস আমার উদ্যম আমার প্রেরণা। ঈশ্বর আমাকে কিছুদিনের জন্য দিয়েছিল মেয়াদ শেষ হতে আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। এসব কথা ললিতাকে বলা যায় না। পল্টু জিজ্ঞেস করল,তুই জানতিস না?
--কি করে জানবো আমারে কেউ বললি তো জানবো।আজ গোর দিল দেখেই জানলাম।
--তুই তো তবু জেনেছিস আমি আজও জানতে পারলাম না। ললিতা হা-করে তাকিয়ে আছে দেখে জিজ্ঞেস করল,তুই চা খাবি না?
--আমার চা আছে রান্না ঘরে।ললিতা চলে গেল।
মেয়েটাকে এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। যতই হোক ও তো অঞ্জুরই মেয়ে।ওর কি অপরাধ? বেচারি জানতেই পারল না ওর মা নেই। কি করছে এখন,ঘুমোচ্ছে? যশকে বাড়ীতে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। কার মেয়ে কোথায় পেল? কেনই বা সে নিয়ে এল? ললিতা ঢুকে বলল,মামা আমি শুয়ে পড়ছি? কোনো দরকার আছে?
--তুই মেয়েটাকে দেখেছিস?
--মামীর মেয়ে?ললিতার চোখ উদ্ভাসিত হয়ে উঠল বলল,কি সোন্দর পুতুলের মত দেখতে মাথা ভর্তি চুল পিট পিট করে চায়।ললিতার গলা ধরে এল,ও জানে না ওর মা নাই।
--ঠিক আছে তুই যা। পল্টু দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুজে হাউ-হাউ করে কেঁদে ফেলে। নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয়।
রাত গভীর হয় ঘুমিয়ে পড়ে পল্টূ। ঘুমালে মন শান্ত হয়। ড্যাফোডিলের কোয়ার্টারে যশবিন্দারের চোখে ঘুম নেই। ফিডীং বোতল শিপার ইত্যাদি কিনে এনেছে। চুক চুক করে দুধ টানছে। মুগ্ধ হয়ে দেখে যশ। একসময় জামা খুলে স্তন বৃন্ত মুখে পুরে দিল।দুধ নেই তবু কি সুন্দর চুষছে।নিজের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাচ্চার নাম দিয়েছে জেসমিন।
দিন দশেকের উপর হয়ে গেল ভাইদের উপদ্রব থেকে বাঁচতে এখানে এসেছে। পরমিতের ট্রান্সপোর্টের ব্যবসা।বিজনেস পারটনার জ্ঞান প্রকাশ চৌটালার সঙ্গে তার বিয়ে দেবে।প্রচুর অর্থের মালিক সুশিক্ষিত মন তাকে মেনে নিতে পারে না।সেই সময় কাগজে বিজ্ঞাপনটা নজরে পড়ে। প্রথম কথা দিল্লী থেকে পালাতে হবে তাছাড়া মনের কোনে লুকিয়ে আছে কলকাতার প্রতি দুর্বলতা।সুযোগটা হাতছাড়া করে না। পরমিত আজ হোক কাল হোক ভবানীপুরে আসবেই তার খোজে। দুঃশ্চিন্তা আছেই কি বলে পরমিতকে নিবৃত্ত করবে?একটাই আশার কথা এটা দিল্লী নয় এখানে মস্তানি চলবে না।নিঃসঙ্গ প্রবাসে জেসমিন তার আশ্রয়।কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে কোনো চিন্তা নেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেই কোনো উদবেগ।জীবনের এই মাসুমিয়ত কাল বড় পবিত্র। যতদিন মাসুমিয়ত থাকবে ঈশ্বর তোমাকে ছুয়ে থাকবে। কপালে চুমু খেয়ে শুয়ে পড়ল যশ।
নরম আলোয় ভরে গেল ঘর। পল্টু কি দেখছে? খাদিজা বেগম তার পাশে জড়িয়ে শুয়ে আছে। কোথায় ছিলে এতক্ষণ,ওটুকু মেয়েকে আমি একা একা কি করে সামলাবো। আহা যশকে দায়িত্ব দিয়ে তুমি চলে যাবে?মাটির নীচে তোমার খুব কষ্ট হয়েছে? পল্টু হাত দিয়ে ধরতে গেলে সরে যায় অঞ্জু। আমি ধরবো তুমি আমাকে ধরতে পারবে না।আমি মাঝে মাঝে আসবো আমার মর্জিমত। যশ ভেরি প্রেটি বিউটিফুল। না তুমি যাবে না,অঞ্জু--অঞ্জু--অঞ্জু....।
বাইরে থেকে ললিতা দরজা ধাক্কা দেয়, মামা দরজা খোলো,চা এনেছি।
ঘুম ভেঙ্গে যায় ধড়ফড় করে উঠে বসে পল্টু। বাইরে ললিতার গলা পেয়ে খাট থেকে নেমে দরজা খোলে। ললিতা চা নিয়ে ঢুকতে পল্টু বলল, এত বেলা হল ডাকিস নি? আমাকে বেরোতে হবে।
--ডাকিনি আবার?এই নিয়ে তিনবার আসলাম।
পল্টু চা বিয়ে জিজ্ঞেস করে,রান্না হয়ে গেছে?
--ভাত উবুড় দিলি হয়ে যাবে।
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল? মনের ভাবনা রুপান্তরিত হয়েছে স্বপ্নে। কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হবে না হলে শান্তি নেই।
অঞ্জুকে স্পষ্ট দেখেছে চোখে সানগ্লাস ঠিক আগের মত।চা খেয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।
রাত করে ঘুমিয়েছে কিন্তু এত বেলা অবধি পল্টু ঘুমোয় না।মাথায় শ্যাম্পু দিল সাবান মেখে স্নান করল। মাথার মধ্যে সব কেমন তালগোল পাকিয়ে আছে।রোগী দেখতে পারবে তো? পোষাক পরে তৈরী হয়ে খাবার টেবিলে বসে জিজ্ঞেস করে,আর কেউ ফোন করেনি তো?
--করেনি আবার? একজন মেয়েলোক আবার দুই-তিনবার ফোন করেছে।
পল্টু হেসে বলল,তুই কি বললি?
--ডাক্তারবাবুর শরীর ভাল না ওবেলা করবেন।
--ও বেলা বলার কি দরকার ছিল?
মাম্মী দেখা করতে বলেছিলেন আজ গিয়েই দেখা করবে।খাওয়া দাওয়ার পর বিশ্রাম করছে। সময় কাটতে চায় না অঞ্জু থাকতে কিভাবে কেটে যেত সময় বুঝতেই পারত না। সব সময় একটা মানসিক চাপ অস্থির করে তুলেছে। ইকবাল এসে ড.সোমকে নিয়ে গেছে।বেরোবার আগে তিনটের সময় চা করে দিয়ে শুয়ে পড়ে।ছেলে মেয়ের কথা মনে পড়ল।কতদিন দেখেনি তাদের এই অবস্থায় মামাকে একলা ফেলে যেতেও পারছে না। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে। সন্ধ্যের মুখে কলিন বেল বাজতে উঠ বসল। মামার এত সকাল সকাল ফেরার কথা নয়।বাড়ীতে সে এখন একা,দরজা খুলবে কি না ভাবে। ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখল কে একজন মহিলা,কোলে বাচ্চা।
বুইন নাতো? ললিতা দরজা খুলে দিতে ড.কাউর বাচ্চা কোলে ঢুকলেন।
--মামা তো বাড়ি নাই নাসিন হোমে গেছে।
--ফোনে বলল শরীর ভাল না।
--কি করবো মামা শিখায়ে দিছিল। আমার কোলে একটু দেবেন?সসঙ্কোচে জিজ্ঞেস করে ললিতা।
--ভাল করে হাত ধুয়ে এসো।
কথা না বাড়িয়ে ললিতা হাত ধুয়ে এসে বাচ্চাটা কোলে নিয়ে খুব খুশি। ড.কাউর ঘরে ঢুকে বিছানার উপর ছোট একটা বিছানা করলেন। ললিতাকে বললেন,এখানে শুইয়ে দাও।
অনিচ্ছে সত্বেও ললিতা শুইয়ে দিল।বাচ্চাটা ঘুমে অচেতন ললিতার ভাল লাগে না। নড়াচড়া না করলে ভাল লাগে?
ড.কাউর জিজ্ঞেস করলেন,তোমার রান্না হয়ে গেছে?
--এইবার করবো।
--তোমাকে করতে হবে না,আমি করছি।
একজন অপরিচিত মহিলা এসে খবরদারি করবে ললিতার পছন্দ নয়। কিন্তু মুখের উপর কিছু বলতেও পারছে না।
বিশেষ করে বুইনরে সঙ্গে করে এনেছে।নার্সিন হোমে মামীর জন্য খুব করেছে। তাকে বসিয়ে খাইয়েছে এসব কথা ভেবে ললিতা আর কিছু বলে না। মামা আসুক তখন যা বলার মামাই বলবে।
ড কাউরের ডাকে ললিতা রান্না ঘরে গিয়ে বলল,আমারে ডাকতিছেন?
--কি নাম তোমার?
--ললিতা।
--ভেরি নাইস নেম।কোথায় কি আছে আমাকে দেখিয়ে দাও।
ললিতা চাল ডাল মশলাপাতি বের করে দিল।ড কাউর বললেন,তুমি জেসমিনের কাছে যাও।
--ওর নাম জেসমিন দিছেন?
--হ্যা ভালো না?
ললিতা বোকার মত হাসে।ড কাউর বললেন,এটা একটা ফুলের নাম ছোটো ছোটো সাদা ফুল সেক্সি গন্ধ।যাও জেসমিন উঠলে আমাকে ডাকবে।
ড কাউর সবজি কাটতে থাকে,মনের মধ্যে নানা চিন্তা বিজ বিজ করে।অঙ্গনের রান্না ঘরে নিজেকে দেখবে কখনো দিমাগে আসেনি।পরমিত আসলে বুরবাক বনে যাবে।প্রাজী দেখবে তার বহিন মা বন গয়ী।মনে মনে হাসে।হোস্টেলে ফিরবে কিনা অঙ্গন আসলে ফয়শলা হবে।