15-03-2020, 07:16 PM
(Update No. 160)
বীথিকা বলল, “সেটা অবশ্য আমিও সঠিক বলতে পাচ্ছিনা এখনই। তবে ম্যামের হাবভাব দেখে আমার তেমনই মনে হচ্ছে। আগের মত উৎসাহ উদ্দীপনা এখন আর তার মধ্যে নেই। করতে হয় বলেই করছেন, এমনই একটা দায়সারা ভাব লক্ষ্য করছি আমি। আসলে ম্যাম বোধহয় আমাদের কথা ভেবেই এখনও মনস্থির করতে পারছেন না। তিনি ব্যবসা বন্ধ করে দিলে আমার মত আরও প্রায় শ’খানেক মেয়ে মহিলা আর জনা পঞ্চাশেক ছেলে যে বিপদের মুখোমুখি হয়ে পড়বে, এটা তিনিও খুব ভালভাবেই জানেন। আর আমাদের ওপর কোন বিপদ কোন ঝামেলা নেমে আসুক এ তো ম্যাম কোনদিনই চাননি। এখনও সেটা চাইবেন না জানি। তাই হয়ত মনস্থির করতে পারছেন না। আসলে ম্যামের ব্যবসাটা সমাজ বা আইনের চোখে যতই নিন্দনীয় যতই ঘৃণ্য কাজ হোক না কেন, মানুষ হিসেবে ম্যাম তো সত্যিই চমৎকার। নইলে আমাদের মত মেয়েদের সুখে দুঃখে তিনি সবসময় আমাদের পাশে থাকতেন? একটা পরিস্থিতির শিকার হয়েই তিনি নিজে এ কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে একটা ছোট্ট চাড়া গাছ এত বড় হয়ে উঠেছে যে তার শিকর মাটির অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। আর তার ছায়ায় এখন প্রায় দেড়শ’ ছেলেমেয়ে বিশ্রাম নিতে পারছে। এখন সেই চাড়া গাছ এক মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। সে গাছটাকে কি আর এত সহজেই উপড়ে ফেলা যায়? আর সে গাছটাকেই যদি এখন কেটে ফেলা হয়, তাহলে গাছটা তো মরবেই, তার সাথে দেড়শ’টা লোকের ওপর থেকে তার ছায়াও চিরদিনের জন্য সরে যাবে। ওই দেড়শ’টা লোক রোদের তাপের ঝলকানিতে ঝলসে যাবে। আর ঝড় বৃষ্টির তোড়ে একেবারে শেষ হয়ে যাবে। ম্যাম বোধহয় এ কথাটা জানেন বলেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তবে গত মাস দুয়েকের ভেতর তিনি বেশ কয়েকবার ‘দুর ছাই, আর এসব ভাল লাগছে না’, ‘ছেড়ে দেব সব কিছু’, এমন ধরণের কথা বলে যাচ্ছেন। আমার সাথে ম্যাম এখনও ভাল ব্যবহার করলেও ইনস্টিটিউটের বরুন সুজয়দের সাথে আর আগের মত ব্যবহার করেন না। আগে যেমন সকালের ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে নানা বিষয় নিয়ে সকলের সাথে হাসি ঠাট্টা করতেন, সে’সব আর এখন হয় না। বরুন সুজয়দের তাদের কাজের নির্দেশটুকু দিয়েই তিনি বিদেয় করে দেন। কেবলমাত্র রতীশ-দার সাথেই তিনি খুব আন্তরিক ব্যবহার করেন। আর আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, রতীশ-দা যতক্ষণ ইনস্টিটিউটে থাকেন ততক্ষণ ম্যামও খুব চনমনে আর হাসিখুশী থাকেন। সাড়ে দশটা পৌনে এগারোটা নাগাদ রোজ রতীশ-দা চলে যাবার পরেই ম্যাম যেন কেমন মিইয়ে যান। তখন তাকে দেখে মনে হয় তিনি খুব মুষড়ে পড়েছেন কোন একটা ব্যাপার নিয়ে। গত ছ’টা বছর ধরে আমি ম্যামের সাথে আছি। আমার সাথে তিনি এমন সব কথা শেয়ার করেন, যা অন্য কারো সাথে করেন না। এতোটাই বিশ্বাস করতেন আমাকে। আমিও ম্যামের বিশ্বাসভঙ্গ করিনি কখনও। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেও ম্যামের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারিনি। মাঝে মাঝে তিনি আমার কাছে দুঃখ করেন যে এসকর্ট ব্যবসা শুরু করে তিনি খুব ভুল করেছেন। এ ব্যবসা আর চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু ওই টুকুই। এর বেশী আর কিছু বলেন না আমাকে। আমি বুঝতে পাচ্ছি, তার মনের ভেতর খুব টানাপোড়েন খুব দ্বন্দ চলছে কিছু একটা নিয়ে। গত সপ্তাহেই তো আমাকে বললেন যে আমি তার পুরো ব্যবসাটা হাতে নিয়ে সামলাতে পারব কি না। তাহলে তো এটা পরিস্কারই বুঝতে পারছিস যে ম্যাম আর তার এসকর্ট ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না”।
নবনীতা বীথিকার কথা শুনে বলল, “আচ্ছা বীথি, ম্যাম যখন স্বেচ্ছায় অমন কথা তোকে বলছেনই, তাহলে তুইই তার কাছ থেকে ব্যবসাটা নিজের হাতে নিয়ে নে না। তাহলে তো তোরও আর টাকার জন্যে কোন ভাবনা থাকবে না। ম্যামের এজেন্সীতে যারা কাজ করে তাদেরকে নিয়েই তুই কাজ চালিয়ে যেতে পারবি। ম্যাম সকলের সাথে যেমন ব্যবহার করতেন, তুইও তাদের সাথে তেমন ব্যবহার করবি। তাহলেই তো হবে”।
বীথিকা এবার একটু হেসে বলল, “তুই ম্যামের সাথে আমার তুলনা করছিস নীতা? আমি তো তার পায়ের নখের যোগ্যও নই রে। ম্যাম কত উচ্চশিক্ষিতা, জানিস? এমকম এমবিএ পাশ। আর তার যেমন রূপ সৌন্দর্য, তেমন বুদ্ধিমত্তা। একটা কথা আছে, শুনেছিস তো? সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। আর ম্যাম শুধু সুন্দরীই নন, অসম্ভব বুদ্ধিমতীও। বড় বড় ব্যবসায়ী, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, সরকারি অফিসার, উকিল, ব্যারিস্টার থেকে শুরু করে থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, আমলা সব কিছু বলতে গেলে তার হাতের মুঠোয়। তাই তো তিনি নিশ্চিন্তে এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। কোথাও কোন ঝামেলা হলে এরা সকলেই ম্যামকে সে ঝামেলা থেকে নির্ঝঞ্ঝাটে বের করে নিয়ে আসে। ম্যামের স্বামী তো এ সবের বিন্দুবিসর্গও জানেন না। আর এত সব সোর্স আছে বলেই ম্যাম নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা করে যেতে পারছেন। সেটা কি আর আমার মত একটা হেঁজিপেঁজি মেয়ের পক্ষে সম্ভব রে? একেবারেই সম্ভব নয়”।
এবার সীমন্তিনীর ঈশারায় নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বীথি, তুই যে বলছিস ম্যামের ভেতরে এমন একটা ব্যবসা ছেড়ে দেবার ইচ্ছে জেগে উঠেছে, তার পেছনে কী কারন থাকতে বলে মনে হয় রে তোর”?
বীথিকা একটা শ্বাস নিয়ে বলল, “সেটাই তো ম্যাম আমাকে খুলে বলেননি এখনও। আর আমিও অনেক ভেবেও কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। কিন্তু একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি জানিস নীতা। ম্যাম যেদিন তোর ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন তার দু’তিন দিন আগেই রতীশ-দা আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটে জয়েন করেছিলেন। আর যেদিন থেকে রতীশ-দা আমাদের এখানে কাজ করতে শুরু করেছেন, সেদিন থেকেই ম্যাম কিছু কিছু নিয়ম কানুন পাল্টাতে শুরু করেছিলেন। যেমন ধর, আগে আমাদের ইনস্টিটিউটের কাজ শেষ হলে ম্যামের চেম্বারে বসেই এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারে সব রকম আলোচনা হত। ক্লায়েন্ট, এসকর্ট আর এজেন্টদের সাথে কন্টাক্ট করা, টাকা পয়সার লেনদেন, কাকে কখন কোথায় পাঠাতে হবে, এ সব কিছু ম্যাম তার চেম্বারে বসেই করতেন। তাই ইনস্টিটিউট বন্ধ করতে করতে বেলা বারোটা একটা বেজে যেত। কিন্তু রতীশ-দা জয়েন করার পর থেকেই ইনস্টিটিউটে আর এসব কাজ করা হয় না। নিচের তলায় ম্যামের একটা রেস্ট রুম আছে, যেটাতে তোর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল, ম্যাম এখন সেখানে বসে এ কাজ গুলো করেন। আগে তার চেম্বারেই অনেক ক্লায়েন্ট, এসকর্ট আর এজেন্টরা এসে ব্যবসার কথা নিয়ে আলোচনা করত। রতীশ-দা আসবার পর আর সেসব হয় না। যার সাথে যা কিছু আলোচনা, যা কিছু পরামর্শ, সবই ম্যামের নিচের তলার ওই রেস্টরুমে করা হয়। আর যেদিন রতীশ-দা কাজে যোগ দিয়েছেন সেদিন থেকেই ম্যাম আমাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন যে ইনস্টিটিউটের ভেতর আমরা নিজেদের মধ্যেও যেন এসকর্ট ব্যবসার কথা নিয়ে কোন আলোচনা না করি। আর ইনস্টিটিউটের আমরা সবাই ম্যামকে যেমন ম্যাম বলে ডাকি, রতীশ-দা তেমন করেন না। ম্যামের অনুরোধেই রতীশ-দা তাকে প্রথম দিন থেকেই বৌদি বলে ডাকেন। ম্যামও প্রথম দিন থেকে রতীশ-দাকে ভাই বলে ডাকেন। আর আমাদের বলেছেন যে রতীশ-দাকে সে নিজের দেবর বলে ভাবেন। তিনি রতীশ-দাকে খুব ভালও বাসেন। প্রথম মাসে রতীশ-দার আধা মাসের বেতন প্রাপ্য ছিল। ম্যাম তাকে পুরো একমাসের মাইনে দিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি রতীশ-দা কাজে যোগ দেবার আগেও তিনি রতীশ-দা আর তার স্ত্রী রচনার জন্য কোলকাতা থেকে আলিপুরদুয়ার যাবার এবং ফিরে আসবার জন্যে ট্রেনের রিজার্ভেশন করিয়ে দিয়েছিলেন। আর তার পর থেকেই ম্যামকে খুব শান্ত স্নিগ্ধ মনে হত। তখন থেকেই বুঝি তার ভেতর একটু একটু করে পরিবর্তন আসছিল। কিন্তু দিন পনেরো আগে থেকেই তার ভেতর আরেক ধরণের চেঞ্জ এসেছে। ম্যামকে খুব চিন্তিত আর খুব উদ্বিঘ্ন বলে মনে হচ্ছে। সব সময় যেন তার ভেতর একধরণের অস্থিরতা চলছে। সব সময় যেন কিছু একটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ভোগেন। আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও তার কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাই নি”।
নবনীতা এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বীথি, তোর মুখে তো এই রতীশ-দার নাম আমি আগেও শুনেছি। কিন্তু তাকে কখনও দেখিনি আমি। আচ্ছা এই রতীশবাবু লোকটা কেমন রে? তুই তাকে দেখেছিস? ম্যাম কি বরুন সুজয়দের মত রতীশবাবুকেও এসকর্ট ব্যবসায় নামিয়েছেন নাকি”?
বীথিকা সাথে সাথে জবাব দিল, “একেবারেই না রে নীতা। ম্যাম যে রতীশ-দাকে কতটা ভালবাসেন সেটা আর কেউ না জানলেও না বুঝলেও আমি জানি। রতীশ-দা যখনই ম্যামের মুখোমুখি হন, তখনই ম্যামের মুখে এমন একটা ছায়া ফুটে ওঠে, যেন তার সবচেয়ে আপনজন তার কাছে এসেছে। ম্যাম রতীশ-দাকে যে তার এসকর্ট ব্যবসায় কিছুতেই টেনে নেবেন না তা ম্যাম প্রথম দিনই আমাকে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিলেন। আর রতীশ-দার কথাই বা শুধু বলছি কেন? ম্যাম নিজে থেকে কাউকেই নিজের এসকর্ট ব্যবসায় টেনে আনেন না। যারা আসে তারা নিজেদের ইচ্ছেতেই আসে। আর ম্যাম যখন বুঝতে পারেন যে নিরুপায় হয়েই কেউ তার ওই ব্যবসায় নামতে চায়, ম্যাম শুধু তাদেরকেই নেন। সেটা তো তুই নিজেও দেখেছিস। ম্যাম কি তোকে কোনরকম প্রেসারাইজ করেছিলেন? একেবারেই না। বরং তোকে সে নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন, যে এ কাজ ছাড়া তুই আর কিছু করতে পারবি কি না, তাই না? তবে হ্যাঁ, রতীশ-দা সত্যি খুব চমৎকার মানুষ। যেমন লম্বা তেমন তার গায়ের রঙ। আর তেমনই মিষ্টি কথা আর ব্যবহার। মুখে একটা অদ্ভুত ধরণের সারল্য আছে তার। এমন পুরুষ দেখলেই প্রায় সব মেয়েই তার প্রেমে পড়তে চাইবে। মেয়ে মহিলাদের খুব সম্মানের চোখে দেখেন। রতীশ-দা যেমন হ্যান্ডসাম, তার দেহের গঠণও তেমনই সুন্দর। এমন চেহারার কোন ছেলে এসকর্ট সার্ভিসে নামলে তার বাজার দর খুব হবে। ম্যামের ফিমেল ক্লায়েন্টরা দ্বিগুন তিনগুন টাকা খরচ করেও তাকে নিতে চাইত। আমি প্রথম যেদিন রতীশ-দাকে দেখেছিলাম, ম্যামকে সেদিন এ কথাই বলেছিলাম। কিন্তু ম্যাম, আমাকে এক ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন রতীশ-দাকে নিয়ে এমন কথা আর যেন কখনও মুখে না আনি আমি। এতদিনে ম্যাম রতীশ-দার ওপর এতটুকুও আঁচ আসতে দেননি। বরং আমার তো মনে হয় ম্যাম রতীশ-দাকে তার ফিমেল ক্লায়েন্টদের কাছে থেকে পুরোপুরি আড়ালে রাখবার চেষ্টাই করেন। রতীশ-দার কাজ শেষ হলেই ম্যাম তাকে বাড়ি চলে যেতে নির্দেশ দেন। তাকে ইনস্টিটিউটে থাকতেই দেন না। যার ফলে যেসব এজেন্ট আর ক্লায়েন্ট ম্যামের কাছে আসে তারা রতীশ-দাকে দেখতে পায় না। আর রতীশ-দার স্ত্রী, রচনা ম্যাডামকেও আমি একদিন দেখেছি। ম্যামের অনুরোধে রতীশ-দার সাথেই তিনি এসেছিলেন একদিন আমাদের ইনস্টিটিউটে। মহিলা যে কী সুন্দর দেখতে রে নীতা, তোকে কী বলব? আমি তো হাঁ করে তার মুখের দিকে চেয়েছিলাম অনেকক্ষণ। অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে, যাদের দেখে আমরা মেয়েরাও বলি বেশ খাসা মাল, বা দারুণ সেক্সি মেয়ে। কিন্তু রচনা ম্যাডামকে দেখে আমার তেমন কথা মনে হয়নি। তার সৌন্দর্যটা সম্পূর্ণ আলাদা ধরণের। কেমন যেন একটা দেবী দেবী ভাব আছে তার চেহারায়। ম্যাম তো তাকেও একেবারে নিজের ছোটবোনের মত ভালবাসেন”।
সীমন্তিনী নবনীতাকে আস্তে করে চিমটি কেটে শব্দ না করে শুধু মুখ ভঙ্গী করে ‘বিমল বিমল’ বলতেই নবনীতা ফোনে বলল, “আচ্ছা বীথি, হঠাৎ একটা কথা মনে হল রে। এখানে ক’দিন আগে একটা মেয়ে আমাকে কলকাতার একজনের নাম বলেছিল। সে নাকি খুব খারাপ লোক। আমার মনে হয় সে নামটা আমি তোর মুখেও শুনেছি। আচ্ছা, তুই কি বিমল আগরওয়ালা বলে কাউকে চিনিস বীথি? সে নাকি এক কোটিপতি প্রোমোটার। তাকে বা তার ফ্যামিলির কাউকে চিনিস তুই”?
বীথিকা জবাব দিল, “হু, চিনি তো। তিনি তো আমাদের ম্যামের বাঁধা ক্লায়েন্ট। অবশ্য আমাকেও ম্যাম দু’ একবার বিমল আগরওয়ালার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তবে নিয়ম করে প্রতি মাসে দু’তিন দিন সে দিনের বেলায় ম্যামের কাছে আসে। তবে ঠিকই শুনেছিস তুই। লোকটা যেমন পয়সাওয়ালা তেমনই বদ। রোজ মেয়েমানুষ না হলে তার চলে না। ম্যাম নিজে তো রাতের বেলায় সার্ভিস দেয় না কাউকে। বিমল প্রতি মাসে দু’বার বা তিনবার ম্যামের কাছে এলেও রাতের বেলায় সে ম্যামকে পায় না। ম্যাম তো দুপুরের লাঞ্চের পর আর বাড়ি থেকে কোথাও বেরোনই না। আর তার নিজের বাড়িতে সে কোন ক্লায়েন্ট,এসকর্ট বা এজেন্টকে ঢুকতেও দেন না। এমনকি আমাকেও তিনি তার বাড়ি নিয়ে যাননি কখনো। তাই বিমলও ম্যামকে রাতের বেলায় পায় না। বিমলের ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্বেও রোজ রাতেই তার পরনারীর সান্নিধ্যের প্রয়োজন হয়। তাই ম্যামের এজেন্সী থেকে বা অন্য কোনও সোর্স থেকে সে রোজ মেয়ে বা এসকর্ট যোগার করে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত বাড়ির বাইরে স্ফুর্তি করে বেড়ায়। এমন কথাও শুনেছি যে তার অফিসেও ছ’ সাতটা সুন্দরী মেয়ে কাজ করে। সে তাদের সাথেও নিজের খেয়াল খুশী মত শারীরিক সম্পর্ক করে। দক্ষিণেশ্বরের ওদিকে তার একটা নিজস্ব ফার্ম হাউস আছে। সেখানেও সে মাঝে মাঝে এসকর্ট নিয়ে গিয়ে রাত কাটায়। আমি নিজেও একবার তার ওই ফার্ম হাউসে গিয়েছিলাম হোল নাইটের জন্যে। মেয়ে মানুষের শরীরের গন্ধ পেলেই একেবারে জানোয়ার হয়ে ওঠে বদমাশটা। টাকার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করতে করতে থানা পুলিশ থেকে শুরু করে কলকাতা আর দিল্লীর সমস্ত পলিটিকাল লিডার আর মন্ত্রীদের নিজের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছে লোকটা। সুপ্রিম কোর্টের জজ, ব্যারিস্টার এমনকি দেশের চিফ জাস্টিস পর্যন্ত সে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারে। আর এত সোর্স আছে বলেই লোকটা দু’নম্বরী ব্যবসা করে প্রচুর পয়সা কামিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। সরকারি অফিসের নিচুতলার একজন বেয়ারা চাপরাশী থেকে শুরু করে স্টেট আর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের মিনিস্টাররা পর্যন্ত বিমলের পয়সা খেয়ে তার সব কাজে সহযোগিতা করে থাকে। বিমলের কথায় তারা সবাই ওঠবস করে। তাই বিমলকে কেউ কোনভাবে আটকাতে পারে না। আমি এমনও শুনেছি যে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট, এনফোর্সেমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, সিবিআইয়ের মত সংস্থাও কয়েকবার বিমলের পেছনে লেগেও তার চুলের ডগাটি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। উল্টে পরের মাস দু’ তিনেকের ভেতরেই তাদের সকলের ট্র্যান্সফার হয়ে গেছে এ শহর থেকে”।
______________________________
বীথিকা বলল, “সেটা অবশ্য আমিও সঠিক বলতে পাচ্ছিনা এখনই। তবে ম্যামের হাবভাব দেখে আমার তেমনই মনে হচ্ছে। আগের মত উৎসাহ উদ্দীপনা এখন আর তার মধ্যে নেই। করতে হয় বলেই করছেন, এমনই একটা দায়সারা ভাব লক্ষ্য করছি আমি। আসলে ম্যাম বোধহয় আমাদের কথা ভেবেই এখনও মনস্থির করতে পারছেন না। তিনি ব্যবসা বন্ধ করে দিলে আমার মত আরও প্রায় শ’খানেক মেয়ে মহিলা আর জনা পঞ্চাশেক ছেলে যে বিপদের মুখোমুখি হয়ে পড়বে, এটা তিনিও খুব ভালভাবেই জানেন। আর আমাদের ওপর কোন বিপদ কোন ঝামেলা নেমে আসুক এ তো ম্যাম কোনদিনই চাননি। এখনও সেটা চাইবেন না জানি। তাই হয়ত মনস্থির করতে পারছেন না। আসলে ম্যামের ব্যবসাটা সমাজ বা আইনের চোখে যতই নিন্দনীয় যতই ঘৃণ্য কাজ হোক না কেন, মানুষ হিসেবে ম্যাম তো সত্যিই চমৎকার। নইলে আমাদের মত মেয়েদের সুখে দুঃখে তিনি সবসময় আমাদের পাশে থাকতেন? একটা পরিস্থিতির শিকার হয়েই তিনি নিজে এ কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে একটা ছোট্ট চাড়া গাছ এত বড় হয়ে উঠেছে যে তার শিকর মাটির অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। আর তার ছায়ায় এখন প্রায় দেড়শ’ ছেলেমেয়ে বিশ্রাম নিতে পারছে। এখন সেই চাড়া গাছ এক মহীরুহতে পরিণত হয়েছে। সে গাছটাকে কি আর এত সহজেই উপড়ে ফেলা যায়? আর সে গাছটাকেই যদি এখন কেটে ফেলা হয়, তাহলে গাছটা তো মরবেই, তার সাথে দেড়শ’টা লোকের ওপর থেকে তার ছায়াও চিরদিনের জন্য সরে যাবে। ওই দেড়শ’টা লোক রোদের তাপের ঝলকানিতে ঝলসে যাবে। আর ঝড় বৃষ্টির তোড়ে একেবারে শেষ হয়ে যাবে। ম্যাম বোধহয় এ কথাটা জানেন বলেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। তবে গত মাস দুয়েকের ভেতর তিনি বেশ কয়েকবার ‘দুর ছাই, আর এসব ভাল লাগছে না’, ‘ছেড়ে দেব সব কিছু’, এমন ধরণের কথা বলে যাচ্ছেন। আমার সাথে ম্যাম এখনও ভাল ব্যবহার করলেও ইনস্টিটিউটের বরুন সুজয়দের সাথে আর আগের মত ব্যবহার করেন না। আগে যেমন সকালের ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে নানা বিষয় নিয়ে সকলের সাথে হাসি ঠাট্টা করতেন, সে’সব আর এখন হয় না। বরুন সুজয়দের তাদের কাজের নির্দেশটুকু দিয়েই তিনি বিদেয় করে দেন। কেবলমাত্র রতীশ-দার সাথেই তিনি খুব আন্তরিক ব্যবহার করেন। আর আমি লক্ষ্য করে দেখেছি, রতীশ-দা যতক্ষণ ইনস্টিটিউটে থাকেন ততক্ষণ ম্যামও খুব চনমনে আর হাসিখুশী থাকেন। সাড়ে দশটা পৌনে এগারোটা নাগাদ রোজ রতীশ-দা চলে যাবার পরেই ম্যাম যেন কেমন মিইয়ে যান। তখন তাকে দেখে মনে হয় তিনি খুব মুষড়ে পড়েছেন কোন একটা ব্যাপার নিয়ে। গত ছ’টা বছর ধরে আমি ম্যামের সাথে আছি। আমার সাথে তিনি এমন সব কথা শেয়ার করেন, যা অন্য কারো সাথে করেন না। এতোটাই বিশ্বাস করতেন আমাকে। আমিও ম্যামের বিশ্বাসভঙ্গ করিনি কখনও। কিন্তু আমি অনেক চেষ্টা করেও ম্যামের কাছ থেকে এ ব্যাপারে কিছু জানতে পারিনি। মাঝে মাঝে তিনি আমার কাছে দুঃখ করেন যে এসকর্ট ব্যবসা শুরু করে তিনি খুব ভুল করেছেন। এ ব্যবসা আর চালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু ওই টুকুই। এর বেশী আর কিছু বলেন না আমাকে। আমি বুঝতে পাচ্ছি, তার মনের ভেতর খুব টানাপোড়েন খুব দ্বন্দ চলছে কিছু একটা নিয়ে। গত সপ্তাহেই তো আমাকে বললেন যে আমি তার পুরো ব্যবসাটা হাতে নিয়ে সামলাতে পারব কি না। তাহলে তো এটা পরিস্কারই বুঝতে পারছিস যে ম্যাম আর তার এসকর্ট ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না”।
নবনীতা বীথিকার কথা শুনে বলল, “আচ্ছা বীথি, ম্যাম যখন স্বেচ্ছায় অমন কথা তোকে বলছেনই, তাহলে তুইই তার কাছ থেকে ব্যবসাটা নিজের হাতে নিয়ে নে না। তাহলে তো তোরও আর টাকার জন্যে কোন ভাবনা থাকবে না। ম্যামের এজেন্সীতে যারা কাজ করে তাদেরকে নিয়েই তুই কাজ চালিয়ে যেতে পারবি। ম্যাম সকলের সাথে যেমন ব্যবহার করতেন, তুইও তাদের সাথে তেমন ব্যবহার করবি। তাহলেই তো হবে”।
বীথিকা এবার একটু হেসে বলল, “তুই ম্যামের সাথে আমার তুলনা করছিস নীতা? আমি তো তার পায়ের নখের যোগ্যও নই রে। ম্যাম কত উচ্চশিক্ষিতা, জানিস? এমকম এমবিএ পাশ। আর তার যেমন রূপ সৌন্দর্য, তেমন বুদ্ধিমত্তা। একটা কথা আছে, শুনেছিস তো? সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। আর ম্যাম শুধু সুন্দরীই নন, অসম্ভব বুদ্ধিমতীও। বড় বড় ব্যবসায়ী, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, সরকারি অফিসার, উকিল, ব্যারিস্টার থেকে শুরু করে থানা, পুলিশ, মন্ত্রী, আমলা সব কিছু বলতে গেলে তার হাতের মুঠোয়। তাই তো তিনি নিশ্চিন্তে এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন। কোথাও কোন ঝামেলা হলে এরা সকলেই ম্যামকে সে ঝামেলা থেকে নির্ঝঞ্ঝাটে বের করে নিয়ে আসে। ম্যামের স্বামী তো এ সবের বিন্দুবিসর্গও জানেন না। আর এত সব সোর্স আছে বলেই ম্যাম নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা করে যেতে পারছেন। সেটা কি আর আমার মত একটা হেঁজিপেঁজি মেয়ের পক্ষে সম্ভব রে? একেবারেই সম্ভব নয়”।
এবার সীমন্তিনীর ঈশারায় নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বীথি, তুই যে বলছিস ম্যামের ভেতরে এমন একটা ব্যবসা ছেড়ে দেবার ইচ্ছে জেগে উঠেছে, তার পেছনে কী কারন থাকতে বলে মনে হয় রে তোর”?
বীথিকা একটা শ্বাস নিয়ে বলল, “সেটাই তো ম্যাম আমাকে খুলে বলেননি এখনও। আর আমিও অনেক ভেবেও কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। কিন্তু একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি জানিস নীতা। ম্যাম যেদিন তোর ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন তার দু’তিন দিন আগেই রতীশ-দা আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটে জয়েন করেছিলেন। আর যেদিন থেকে রতীশ-দা আমাদের এখানে কাজ করতে শুরু করেছেন, সেদিন থেকেই ম্যাম কিছু কিছু নিয়ম কানুন পাল্টাতে শুরু করেছিলেন। যেমন ধর, আগে আমাদের ইনস্টিটিউটের কাজ শেষ হলে ম্যামের চেম্বারে বসেই এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারে সব রকম আলোচনা হত। ক্লায়েন্ট, এসকর্ট আর এজেন্টদের সাথে কন্টাক্ট করা, টাকা পয়সার লেনদেন, কাকে কখন কোথায় পাঠাতে হবে, এ সব কিছু ম্যাম তার চেম্বারে বসেই করতেন। তাই ইনস্টিটিউট বন্ধ করতে করতে বেলা বারোটা একটা বেজে যেত। কিন্তু রতীশ-দা জয়েন করার পর থেকেই ইনস্টিটিউটে আর এসব কাজ করা হয় না। নিচের তলায় ম্যামের একটা রেস্ট রুম আছে, যেটাতে তোর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল, ম্যাম এখন সেখানে বসে এ কাজ গুলো করেন। আগে তার চেম্বারেই অনেক ক্লায়েন্ট, এসকর্ট আর এজেন্টরা এসে ব্যবসার কথা নিয়ে আলোচনা করত। রতীশ-দা আসবার পর আর সেসব হয় না। যার সাথে যা কিছু আলোচনা, যা কিছু পরামর্শ, সবই ম্যামের নিচের তলার ওই রেস্টরুমে করা হয়। আর যেদিন রতীশ-দা কাজে যোগ দিয়েছেন সেদিন থেকেই ম্যাম আমাদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন যে ইনস্টিটিউটের ভেতর আমরা নিজেদের মধ্যেও যেন এসকর্ট ব্যবসার কথা নিয়ে কোন আলোচনা না করি। আর ইনস্টিটিউটের আমরা সবাই ম্যামকে যেমন ম্যাম বলে ডাকি, রতীশ-দা তেমন করেন না। ম্যামের অনুরোধেই রতীশ-দা তাকে প্রথম দিন থেকেই বৌদি বলে ডাকেন। ম্যামও প্রথম দিন থেকে রতীশ-দাকে ভাই বলে ডাকেন। আর আমাদের বলেছেন যে রতীশ-দাকে সে নিজের দেবর বলে ভাবেন। তিনি রতীশ-দাকে খুব ভালও বাসেন। প্রথম মাসে রতীশ-দার আধা মাসের বেতন প্রাপ্য ছিল। ম্যাম তাকে পুরো একমাসের মাইনে দিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি রতীশ-দা কাজে যোগ দেবার আগেও তিনি রতীশ-দা আর তার স্ত্রী রচনার জন্য কোলকাতা থেকে আলিপুরদুয়ার যাবার এবং ফিরে আসবার জন্যে ট্রেনের রিজার্ভেশন করিয়ে দিয়েছিলেন। আর তার পর থেকেই ম্যামকে খুব শান্ত স্নিগ্ধ মনে হত। তখন থেকেই বুঝি তার ভেতর একটু একটু করে পরিবর্তন আসছিল। কিন্তু দিন পনেরো আগে থেকেই তার ভেতর আরেক ধরণের চেঞ্জ এসেছে। ম্যামকে খুব চিন্তিত আর খুব উদ্বিঘ্ন বলে মনে হচ্ছে। সব সময় যেন তার ভেতর একধরণের অস্থিরতা চলছে। সব সময় যেন কিছু একটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ভোগেন। আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও তার কাছ থেকে কোন সদুত্তর পাই নি”।
নবনীতা এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বীথি, তোর মুখে তো এই রতীশ-দার নাম আমি আগেও শুনেছি। কিন্তু তাকে কখনও দেখিনি আমি। আচ্ছা এই রতীশবাবু লোকটা কেমন রে? তুই তাকে দেখেছিস? ম্যাম কি বরুন সুজয়দের মত রতীশবাবুকেও এসকর্ট ব্যবসায় নামিয়েছেন নাকি”?
বীথিকা সাথে সাথে জবাব দিল, “একেবারেই না রে নীতা। ম্যাম যে রতীশ-দাকে কতটা ভালবাসেন সেটা আর কেউ না জানলেও না বুঝলেও আমি জানি। রতীশ-দা যখনই ম্যামের মুখোমুখি হন, তখনই ম্যামের মুখে এমন একটা ছায়া ফুটে ওঠে, যেন তার সবচেয়ে আপনজন তার কাছে এসেছে। ম্যাম রতীশ-দাকে যে তার এসকর্ট ব্যবসায় কিছুতেই টেনে নেবেন না তা ম্যাম প্রথম দিনই আমাকে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিলেন। আর রতীশ-দার কথাই বা শুধু বলছি কেন? ম্যাম নিজে থেকে কাউকেই নিজের এসকর্ট ব্যবসায় টেনে আনেন না। যারা আসে তারা নিজেদের ইচ্ছেতেই আসে। আর ম্যাম যখন বুঝতে পারেন যে নিরুপায় হয়েই কেউ তার ওই ব্যবসায় নামতে চায়, ম্যাম শুধু তাদেরকেই নেন। সেটা তো তুই নিজেও দেখেছিস। ম্যাম কি তোকে কোনরকম প্রেসারাইজ করেছিলেন? একেবারেই না। বরং তোকে সে নানাভাবে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলেন, যে এ কাজ ছাড়া তুই আর কিছু করতে পারবি কি না, তাই না? তবে হ্যাঁ, রতীশ-দা সত্যি খুব চমৎকার মানুষ। যেমন লম্বা তেমন তার গায়ের রঙ। আর তেমনই মিষ্টি কথা আর ব্যবহার। মুখে একটা অদ্ভুত ধরণের সারল্য আছে তার। এমন পুরুষ দেখলেই প্রায় সব মেয়েই তার প্রেমে পড়তে চাইবে। মেয়ে মহিলাদের খুব সম্মানের চোখে দেখেন। রতীশ-দা যেমন হ্যান্ডসাম, তার দেহের গঠণও তেমনই সুন্দর। এমন চেহারার কোন ছেলে এসকর্ট সার্ভিসে নামলে তার বাজার দর খুব হবে। ম্যামের ফিমেল ক্লায়েন্টরা দ্বিগুন তিনগুন টাকা খরচ করেও তাকে নিতে চাইত। আমি প্রথম যেদিন রতীশ-দাকে দেখেছিলাম, ম্যামকে সেদিন এ কথাই বলেছিলাম। কিন্তু ম্যাম, আমাকে এক ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন রতীশ-দাকে নিয়ে এমন কথা আর যেন কখনও মুখে না আনি আমি। এতদিনে ম্যাম রতীশ-দার ওপর এতটুকুও আঁচ আসতে দেননি। বরং আমার তো মনে হয় ম্যাম রতীশ-দাকে তার ফিমেল ক্লায়েন্টদের কাছে থেকে পুরোপুরি আড়ালে রাখবার চেষ্টাই করেন। রতীশ-দার কাজ শেষ হলেই ম্যাম তাকে বাড়ি চলে যেতে নির্দেশ দেন। তাকে ইনস্টিটিউটে থাকতেই দেন না। যার ফলে যেসব এজেন্ট আর ক্লায়েন্ট ম্যামের কাছে আসে তারা রতীশ-দাকে দেখতে পায় না। আর রতীশ-দার স্ত্রী, রচনা ম্যাডামকেও আমি একদিন দেখেছি। ম্যামের অনুরোধে রতীশ-দার সাথেই তিনি এসেছিলেন একদিন আমাদের ইনস্টিটিউটে। মহিলা যে কী সুন্দর দেখতে রে নীতা, তোকে কী বলব? আমি তো হাঁ করে তার মুখের দিকে চেয়েছিলাম অনেকক্ষণ। অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে, যাদের দেখে আমরা মেয়েরাও বলি বেশ খাসা মাল, বা দারুণ সেক্সি মেয়ে। কিন্তু রচনা ম্যাডামকে দেখে আমার তেমন কথা মনে হয়নি। তার সৌন্দর্যটা সম্পূর্ণ আলাদা ধরণের। কেমন যেন একটা দেবী দেবী ভাব আছে তার চেহারায়। ম্যাম তো তাকেও একেবারে নিজের ছোটবোনের মত ভালবাসেন”।
সীমন্তিনী নবনীতাকে আস্তে করে চিমটি কেটে শব্দ না করে শুধু মুখ ভঙ্গী করে ‘বিমল বিমল’ বলতেই নবনীতা ফোনে বলল, “আচ্ছা বীথি, হঠাৎ একটা কথা মনে হল রে। এখানে ক’দিন আগে একটা মেয়ে আমাকে কলকাতার একজনের নাম বলেছিল। সে নাকি খুব খারাপ লোক। আমার মনে হয় সে নামটা আমি তোর মুখেও শুনেছি। আচ্ছা, তুই কি বিমল আগরওয়ালা বলে কাউকে চিনিস বীথি? সে নাকি এক কোটিপতি প্রোমোটার। তাকে বা তার ফ্যামিলির কাউকে চিনিস তুই”?
বীথিকা জবাব দিল, “হু, চিনি তো। তিনি তো আমাদের ম্যামের বাঁধা ক্লায়েন্ট। অবশ্য আমাকেও ম্যাম দু’ একবার বিমল আগরওয়ালার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তবে নিয়ম করে প্রতি মাসে দু’তিন দিন সে দিনের বেলায় ম্যামের কাছে আসে। তবে ঠিকই শুনেছিস তুই। লোকটা যেমন পয়সাওয়ালা তেমনই বদ। রোজ মেয়েমানুষ না হলে তার চলে না। ম্যাম নিজে তো রাতের বেলায় সার্ভিস দেয় না কাউকে। বিমল প্রতি মাসে দু’বার বা তিনবার ম্যামের কাছে এলেও রাতের বেলায় সে ম্যামকে পায় না। ম্যাম তো দুপুরের লাঞ্চের পর আর বাড়ি থেকে কোথাও বেরোনই না। আর তার নিজের বাড়িতে সে কোন ক্লায়েন্ট,এসকর্ট বা এজেন্টকে ঢুকতেও দেন না। এমনকি আমাকেও তিনি তার বাড়ি নিয়ে যাননি কখনো। তাই বিমলও ম্যামকে রাতের বেলায় পায় না। বিমলের ঘরে সুন্দরী স্ত্রী থাকা সত্বেও রোজ রাতেই তার পরনারীর সান্নিধ্যের প্রয়োজন হয়। তাই ম্যামের এজেন্সী থেকে বা অন্য কোনও সোর্স থেকে সে রোজ মেয়ে বা এসকর্ট যোগার করে মধ্যরাত্রি পর্যন্ত বাড়ির বাইরে স্ফুর্তি করে বেড়ায়। এমন কথাও শুনেছি যে তার অফিসেও ছ’ সাতটা সুন্দরী মেয়ে কাজ করে। সে তাদের সাথেও নিজের খেয়াল খুশী মত শারীরিক সম্পর্ক করে। দক্ষিণেশ্বরের ওদিকে তার একটা নিজস্ব ফার্ম হাউস আছে। সেখানেও সে মাঝে মাঝে এসকর্ট নিয়ে গিয়ে রাত কাটায়। আমি নিজেও একবার তার ওই ফার্ম হাউসে গিয়েছিলাম হোল নাইটের জন্যে। মেয়ে মানুষের শরীরের গন্ধ পেলেই একেবারে জানোয়ার হয়ে ওঠে বদমাশটা। টাকার জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করতে করতে থানা পুলিশ থেকে শুরু করে কলকাতা আর দিল্লীর সমস্ত পলিটিকাল লিডার আর মন্ত্রীদের নিজের হাতের মুঠোয় করে নিয়েছে লোকটা। সুপ্রিম কোর্টের জজ, ব্যারিস্টার এমনকি দেশের চিফ জাস্টিস পর্যন্ত সে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারে। আর এত সোর্স আছে বলেই লোকটা দু’নম্বরী ব্যবসা করে প্রচুর পয়সা কামিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। সরকারি অফিসের নিচুতলার একজন বেয়ারা চাপরাশী থেকে শুরু করে স্টেট আর সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের মিনিস্টাররা পর্যন্ত বিমলের পয়সা খেয়ে তার সব কাজে সহযোগিতা করে থাকে। বিমলের কথায় তারা সবাই ওঠবস করে। তাই বিমলকে কেউ কোনভাবে আটকাতে পারে না। আমি এমনও শুনেছি যে ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট, এনফোর্সেমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, সিবিআইয়ের মত সংস্থাও কয়েকবার বিমলের পেছনে লেগেও তার চুলের ডগাটি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি। উল্টে পরের মাস দু’ তিনেকের ভেতরেই তাদের সকলের ট্র্যান্সফার হয়ে গেছে এ শহর থেকে”।
______________________________