15-03-2020, 05:21 PM
[৬৭]
গাড়ীতে বসে অভুতপুর্ব অনুভুতিতে আচ্ছন্ন হয় পল্টুর মন। হাত মাথার পিছনে দিয়ে নিজেকে এলিয়ে দিল।চোখ বন্ধ করে হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে। সেই প্রথম দিন যেসিন অঞ্জুর সঙ্গে দেখা স্পষ্ট ভেসে উঠল চোখের সামনে সেই মুখ তাকিয়ে আছে তার দিকে।সেদিন ঘুণাক্ষরে টের পায় নি এভাবে জীবনে জীবন জড়িয়ে যাবে।বয়স ধর্ম কোনোকিছু বাধা হয়ে দাড়াতে পারে নি।কেমন করে সম্ভব হল? আজ বেরোবার আগে অঞ্জু বলেছিল,আমাকে একটু আদর করো। যদি বলতো আজ দরকার নেই নার্সিং হোম যাবার তাহলে হয়তো পল্টু যেতো না কিন্তু অঞ্জু বলেনি।ললিতার কথা রিসিভিং সেকশনে বলে রাখলে ওরা তাকে যথা সময়ে খবর দিত,কিন্তু বলে রাখেনি।এসবই হয়তো তার মর্জিতে। লোকে বোলে ড.সোমের হাতে জাদু আছে কিন্তু পল্টু জানে সব কিছুর অন্তরালে আছে এক অদৃশ্য জাদুকর যার নির্দেশে ঘটে চলেছে একের পর এক আমরা নিছক রঙ্গমঞ্চের কুশীলব। ভাসতে ভাসতে চলেছি কোন কূলে কোন ঘাটে গিয়ে হবে যাত্রাবসান কে বলতে পারে?মনে হয় এতক্ষণে ডেলিভারী হয়ে গেছে।ফ্যামিলি মেম্বার দুই থেকে তিন হল। ইকবালের ডাকে তন্দ্রা ভাঙ্গে,দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে।
নার্সিং হোমের সিড়িতে বসেছিল ললিতা।মামাকে গাড়ী থেকে নামতে দেখে উঠে দাড়াল। কি যেন বলতে চায় অথচ কিছুই বলতে পারে না। ললিতার মুখ চোখ দেখে সন্দেহ হয় তাহলে কি? বোবা দৃষ্টি মেলে তাকে সবাই দেখছে।মনের মধ্যে ভু-কম্পন অনুভুত হয়। নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল। ললিতা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না গলায় আটকে থাকা একটা শব্দ ছিটকে বেরিয়ে আসে, মাম-ই-ই-ই।
পল্টু হাত তুলে তাকে বিরত করে জিজ্ঞেস করল,মামী কোথায়?
ললিতা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে পিছনে পল্টু। সিড়ির উপর থেকে স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে ড.যশবিন্দার। অনেক বদলে গেছে অঙ্গন। চোখ কান খোলা কিন্তু মন যেন কোন অন্য জগতে। এই অঙ্গন তার চেনা। উপরে উঠে যশবিন্দারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,ড.চৌধুরি কোথায়?
--উনি আজ আসেন নি। ড.শেঠী এ্যাটেণ্ড করেছেন। যশবিন্দার বলল।
পল্টু মনে মনে ভাবে ড.চৌধুরি আজই এলেন না? এও তার কারসাজি সব পরিপাটি ভাবে সাজানো। ধীরে ধীরে ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ভিতরে একটা টেবিলে শায়িত খাদিজা বেগম,আপাদ মস্তক সাদা কাপড়ে ঢাকা। ড.যশের ইশারায় নার্সরা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কাছে গিয়ে পল্টু মুখের কাপড় সরিয়ে অভিমাণী দৃষ্টিতে খাদিজা বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।যশবিন্দার অবাক হয়ে অঙ্গনকে দেখছে। পল্টু বলল,বাঃ বা বা বাআআআ..। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে খাদিজা বেগমের শরীরের উপর ড.অনঙ্গদেব সোম। যশবিন্দার জড়িয়ে ধরে তুলে দাড় করিয়ে বলল,অঙ্গন কণ্ট্রোল ইয়োরসেলফ।
যশবিন্দারের বুকে মুখ রেখে বলল,যশ আমাকে একা ফেলে চলে গেল। হাউ শি ক্যান সো?
যশবিন্দার একটা চেয়ারে পল্টুকে বসিয়ে দিয়ে বলল, আই ফিল ইউ ডিয়ার বাট ইউ নো উই আর হেল্পলেস।
কিছুক্ষণ চুপ করে কি ভাবে তারপর বলল,আই এ্যাম সরি যশ।যশবিন্দারকে অবাক হয়ে দেখে,জানো অঞ্জু বলছিল তুমি কলকাতায় এসেছো। কবে এলে?
--অনেক কথা পরে বলবো।
--আমি জিজ্ঞেস করলাম,অঞ্জু তোমার যশকে কেমন লাগে?
--কি বলেছিলেন?
--কিছু বলেনি এড়িয়ে গেছিল।
যশবিন্দার বুক থেকে কাগজ বের করে অঙ্গনের হাতে দিল।পল্টু দেখল সাদা কাগজে লেখা,yas is very pretty and beautiful--Anjona.
--এটা তুমি কোথায় পেলে?
--পরে বলবো, তোমার বেবি দেখবে না?
--বেবি? দেখেছো কেমন বিপদে ফেলে গেল? কি করে সামলাবো ওকে?
--আমি সামলাবো।তুমি এবার শেষ কাজটা করার ব্যবস্থা করো।
--তোমার তো সংসার আছে --ওরা কি রাজি হবে?
--পরে সব বলবো।
ইকবালের বুঝতে বাকী থাকে না মেমসাব আর এই দুনিয়ায় নাই। সাহেবকে নিয়ে চিন্তা হল। মানুষটা বড় ডাক্তার হইতে পারে কিন্ত বড় সাদাসিধা। পল্টু নীচে নেমে গাড়ীর কাছে এসে দাঁড়ায়। ইকবাল এসে বলল,ডাক্তার সাব কি ভাবতেছেন?
--ইকবাল মেমসাব মারা গেছে শুনেছো?
--অনুমতি করলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। মেমসাবরে দাহ করবেন না গোর দিবেন?
এই কথাটা পল্টুর মনে আসেনি। জিজ্ঞেস করে, কি করবো তাই ভাবছি।
--মেমসাব মাজারে যাইতেন। আমারে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলবো গোর দিলে ভাল হয়।
--কিন্তু আমি তো নিয়ম কানুন কিছু জানি না ইকবাল।
--আপনেরে কিছু জানতে লাগবে না।আপনে একটু অপেক্ষা করেন,আমি সব ব্যবস্থা করে আসতেছি। ইকবাল গাড়ী নিয়ে চলে গেল।ললিতা এসে পল্টূকে উপরে ডেকে নিয়ে গেল। যশবিন্দারের চেম্বারে গিয়ে দেখল তার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে যশ।ললিতাকেও দিয়েছে।
খাদিজা বেগমের নাম এবং ইকবালের চেষ্টায় বেশ কিছু যুবক এগিয়ে এল।তারাই সমগ্র ব্যাপারটা দেখভালের দায়িত্ব নিল। কাশিপুর গোরস্থানে পৌছে পল্টু দেখল তার আগেই খাদিজা বেগমকে সেখানে আনা হয়েছে। উত্তর দক্ষিণ মুখী কবর খনন চলছে। ইমাম সাহেব তত্বাবধান করছেন। গোরস্থানের গেটের কাছে পল্টু বসে আছে বিধ্বস্থ ক্লান্ত।
অশোক আগরাআল এসেছে সঙ্গে শেখ সুকুর আলি সান্ত্বনা দিচ্ছে ডাক্তারবাবুকে। খাদিজা বেগমের স্বামী * শুনে শেষ মুহুর্তে বেকে বসে ইমামসাহেব,এই ব্যাপারে থেকে তিনি জাহান্নামে যেতে চান না।ইকবাল হাতে পায়ে ধরলেও ইমাম সাহেব সিদ্ধান্তে অটল।বড় মুখ করে বোলেছিল সব ব্যবস্থা করবে ইকবাল এখন কি বলবে ডাক্তার সাবকে? সুকুর আলিকে দেখে ইকবাল এগিয়ে যেতে সুকুর আলি জিজ্ঞেস করে,কিরে সব কাজ হয়েছে?
ইকবাল তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ইমামের কথা বিস্তারিত বলে।সুকুর আলি কবরের দিকে এগিয়ে গেল।ইমাম সাহেবকে দেখে বলল,সেলাম আলেকুম ইমাম সাহেব।
--আলেকুমাসলাম।আপনে?
ইকবাল বলল,এনারে চেনেন না? ইনি শেখ সুকুর আলি।
ইমাম নাম শুনে ঢোক গিলে বলেন,বিলক্ষণ আপনেরে কে না চিনে।
তোবা তোবা এই নাকি সুকুর আলি?ইমাম মাওলানা মাজহার উদ্দীন ইতিপুর্বে সুকুর আলিরে চোখে না দেখলেও তার খ্যাতি সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। না জেনে কি ভুল করতে চলেছিলেন,খোদা মেহের বান এ যাত্রা বেঁচে গেলেন।
ড্যাবডেবিয়ে সুকুর আলিকে লক্ষ্য করেন,খাদিজা বেগমের দিকে তাকিয়ে সুকুর আলির চোখ ভিজে গেল।প্রফেসার ম্যাম খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তার পরিচয় জেনেও তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন নি।উনার কাছে কলেজে তার বিবি পড়েছে। সুকুর আলি ইমাম সাহেবকে বলল,ইমাম সাহেব এইবার কাম শুরু করেন।
--হ্যা হ্যা মিঞা করতেছি, ইমাম ইকবালকে বললেন,এই ব্যাটা উনার স্বামীরে ডাক।
পল্টু আসতে ইমাম সাহেব বললেন,আসেন ডাক্তার সাহেব।এই তোরা লাশ কবরে রাখ,মাথা উত্তর দিক করে রাখবি। সবাই ধরাধরি করে খাদিজা বেগমকে কবরে নামাতে গেলে পল্টু জড়িয়ে ধরে গালে গাল রেখে কেদে ফেলে।ইমাম সাহেব অবাক ডাক্তারের আচরণে, মানুষ মানুষরে এত ভালবাসে?ইমামের মনের উষ্মাভাব চলে যায়। লাশ কবরে রাখার পর ইমাম সাহেব বললেন,ডাক্তার সাহেব বলেন,বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লতি রাসূলিল্লাহি।
পল্টু কি বুঝল কে জানে ইমাম সাহেব বললেন,আপনে আল্লাহ তায়ালার নামে দেহ সোপর্দ করলেন। এইবার মুঠীতে মাটি নেন,বলেন,মিনহা খালাকনাকুম। এই মাটি দিয়া সৃষ্টি করছিলেন।কবরে ফেলেন মাটি আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া ফীহা নুয়ীদ কুম। আবার মাটিতেই দিয়া দিলাম। মাটি কবরে দিয়া আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা। আবার মাটি হতেই ফিরে পাবো। মাটি কবরে ফেলেন।এইবার ভাই সব তুমরা কবরে মাটি চাপা দেও।
গাড়ীতে ইকবালের পাশে মাওলানা সাহেব বসলেন,পিছনে পল্টু আর ললিতা। ইকবাল নীরবে গাড়ী চালাচ্ছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাওলানা একসময় বললেন, ডাক্তার সাহেব এই দুনিয়ায় কোনো কিছু চিরকাল থাকে না। মনে কোনো দুঃখ রাখবেন না। আমার প্রথম বিবির ইন্তেকালের পর আমারও মনে খুব দুঃখ হয়েছিল। এখন আমার দুইটা বিবি,একটা গেলেও একটা থাকবো।
পল্টুর এইসব জ্ঞান উপদেশ ভাল লাগছিল না। কতক্ষণে এই মানুষটা থেকে মুক্তি হবে সেই চিন্তা করে। পল্টু জিজ্ঞেস করল,কোথায় যাবেন আপনি?
--দিন দুনিয়ার মালিক যেইখানে নিয়া যায়।মাওলানা বললেন।
--সাহেব আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি উনাকে পৌছে দেবো।ইকবাল বলল।
ললিতার দিকে নজর পড়ে,সকাল থেকে খুব ধকল গেল ওর উপর দিয়ে। যশ খাইয়ে না দিলে এতক্ষণ অভুক্ত থাকতো। অঞ্জু থাকলে তাকে এত ভাবতে হত না। নার্সিং হোমে বলে এসেছিল কাল থেকে ক-দিন আসবে না,আর তার প্রয়োজন নেই। মেয়েটার কথা মনে পড়ল তার কি অপরাধ?জন্মে মায়ের দুধ পেল না। যশবিন্দার কিভাবে সামলাবে তাকে? শিখ পাঞ্জাবী হলেও সব নারীর মধ্যে একজন মায়ের বাস। যশ না থাকলে আজ কি যে হতো?তাড়াতাড়িতে ভাল করে দেখা হয়নি মেয়েটাকে। গতকাল আর আজেকের সঙ্গে কত পার্থক্য, কালকের পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী যেন একেবারে আলাদা।
গাড়ীতে বসে অভুতপুর্ব অনুভুতিতে আচ্ছন্ন হয় পল্টুর মন। হাত মাথার পিছনে দিয়ে নিজেকে এলিয়ে দিল।চোখ বন্ধ করে হারিয়ে যায় অন্য এক জগতে। সেই প্রথম দিন যেসিন অঞ্জুর সঙ্গে দেখা স্পষ্ট ভেসে উঠল চোখের সামনে সেই মুখ তাকিয়ে আছে তার দিকে।সেদিন ঘুণাক্ষরে টের পায় নি এভাবে জীবনে জীবন জড়িয়ে যাবে।বয়স ধর্ম কোনোকিছু বাধা হয়ে দাড়াতে পারে নি।কেমন করে সম্ভব হল? আজ বেরোবার আগে অঞ্জু বলেছিল,আমাকে একটু আদর করো। যদি বলতো আজ দরকার নেই নার্সিং হোম যাবার তাহলে হয়তো পল্টু যেতো না কিন্তু অঞ্জু বলেনি।ললিতার কথা রিসিভিং সেকশনে বলে রাখলে ওরা তাকে যথা সময়ে খবর দিত,কিন্তু বলে রাখেনি।এসবই হয়তো তার মর্জিতে। লোকে বোলে ড.সোমের হাতে জাদু আছে কিন্তু পল্টু জানে সব কিছুর অন্তরালে আছে এক অদৃশ্য জাদুকর যার নির্দেশে ঘটে চলেছে একের পর এক আমরা নিছক রঙ্গমঞ্চের কুশীলব। ভাসতে ভাসতে চলেছি কোন কূলে কোন ঘাটে গিয়ে হবে যাত্রাবসান কে বলতে পারে?মনে হয় এতক্ষণে ডেলিভারী হয়ে গেছে।ফ্যামিলি মেম্বার দুই থেকে তিন হল। ইকবালের ডাকে তন্দ্রা ভাঙ্গে,দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে।
নার্সিং হোমের সিড়িতে বসেছিল ললিতা।মামাকে গাড়ী থেকে নামতে দেখে উঠে দাড়াল। কি যেন বলতে চায় অথচ কিছুই বলতে পারে না। ললিতার মুখ চোখ দেখে সন্দেহ হয় তাহলে কি? বোবা দৃষ্টি মেলে তাকে সবাই দেখছে।মনের মধ্যে ভু-কম্পন অনুভুত হয়। নিজেকে সামলে নিয়ে এগিয়ে গেল। ললিতা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না গলায় আটকে থাকা একটা শব্দ ছিটকে বেরিয়ে আসে, মাম-ই-ই-ই।
পল্টু হাত তুলে তাকে বিরত করে জিজ্ঞেস করল,মামী কোথায়?
ললিতা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে পিছনে পল্টু। সিড়ির উপর থেকে স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে ড.যশবিন্দার। অনেক বদলে গেছে অঙ্গন। চোখ কান খোলা কিন্তু মন যেন কোন অন্য জগতে। এই অঙ্গন তার চেনা। উপরে উঠে যশবিন্দারের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,ড.চৌধুরি কোথায়?
--উনি আজ আসেন নি। ড.শেঠী এ্যাটেণ্ড করেছেন। যশবিন্দার বলল।
পল্টু মনে মনে ভাবে ড.চৌধুরি আজই এলেন না? এও তার কারসাজি সব পরিপাটি ভাবে সাজানো। ধীরে ধীরে ঘরের সামনে গিয়ে দাড়ালো।ভিতরে একটা টেবিলে শায়িত খাদিজা বেগম,আপাদ মস্তক সাদা কাপড়ে ঢাকা। ড.যশের ইশারায় নার্সরা বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কাছে গিয়ে পল্টু মুখের কাপড় সরিয়ে অভিমাণী দৃষ্টিতে খাদিজা বেগমের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।যশবিন্দার অবাক হয়ে অঙ্গনকে দেখছে। পল্টু বলল,বাঃ বা বা বাআআআ..। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে খাদিজা বেগমের শরীরের উপর ড.অনঙ্গদেব সোম। যশবিন্দার জড়িয়ে ধরে তুলে দাড় করিয়ে বলল,অঙ্গন কণ্ট্রোল ইয়োরসেলফ।
যশবিন্দারের বুকে মুখ রেখে বলল,যশ আমাকে একা ফেলে চলে গেল। হাউ শি ক্যান সো?
যশবিন্দার একটা চেয়ারে পল্টুকে বসিয়ে দিয়ে বলল, আই ফিল ইউ ডিয়ার বাট ইউ নো উই আর হেল্পলেস।
কিছুক্ষণ চুপ করে কি ভাবে তারপর বলল,আই এ্যাম সরি যশ।যশবিন্দারকে অবাক হয়ে দেখে,জানো অঞ্জু বলছিল তুমি কলকাতায় এসেছো। কবে এলে?
--অনেক কথা পরে বলবো।
--আমি জিজ্ঞেস করলাম,অঞ্জু তোমার যশকে কেমন লাগে?
--কি বলেছিলেন?
--কিছু বলেনি এড়িয়ে গেছিল।
যশবিন্দার বুক থেকে কাগজ বের করে অঙ্গনের হাতে দিল।পল্টু দেখল সাদা কাগজে লেখা,yas is very pretty and beautiful--Anjona.
--এটা তুমি কোথায় পেলে?
--পরে বলবো, তোমার বেবি দেখবে না?
--বেবি? দেখেছো কেমন বিপদে ফেলে গেল? কি করে সামলাবো ওকে?
--আমি সামলাবো।তুমি এবার শেষ কাজটা করার ব্যবস্থা করো।
--তোমার তো সংসার আছে --ওরা কি রাজি হবে?
--পরে সব বলবো।
ইকবালের বুঝতে বাকী থাকে না মেমসাব আর এই দুনিয়ায় নাই। সাহেবকে নিয়ে চিন্তা হল। মানুষটা বড় ডাক্তার হইতে পারে কিন্ত বড় সাদাসিধা। পল্টু নীচে নেমে গাড়ীর কাছে এসে দাঁড়ায়। ইকবাল এসে বলল,ডাক্তার সাব কি ভাবতেছেন?
--ইকবাল মেমসাব মারা গেছে শুনেছো?
--অনুমতি করলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। মেমসাবরে দাহ করবেন না গোর দিবেন?
এই কথাটা পল্টুর মনে আসেনি। জিজ্ঞেস করে, কি করবো তাই ভাবছি।
--মেমসাব মাজারে যাইতেন। আমারে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলবো গোর দিলে ভাল হয়।
--কিন্তু আমি তো নিয়ম কানুন কিছু জানি না ইকবাল।
--আপনেরে কিছু জানতে লাগবে না।আপনে একটু অপেক্ষা করেন,আমি সব ব্যবস্থা করে আসতেছি। ইকবাল গাড়ী নিয়ে চলে গেল।ললিতা এসে পল্টূকে উপরে ডেকে নিয়ে গেল। যশবিন্দারের চেম্বারে গিয়ে দেখল তার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে যশ।ললিতাকেও দিয়েছে।
খাদিজা বেগমের নাম এবং ইকবালের চেষ্টায় বেশ কিছু যুবক এগিয়ে এল।তারাই সমগ্র ব্যাপারটা দেখভালের দায়িত্ব নিল। কাশিপুর গোরস্থানে পৌছে পল্টু দেখল তার আগেই খাদিজা বেগমকে সেখানে আনা হয়েছে। উত্তর দক্ষিণ মুখী কবর খনন চলছে। ইমাম সাহেব তত্বাবধান করছেন। গোরস্থানের গেটের কাছে পল্টু বসে আছে বিধ্বস্থ ক্লান্ত।
অশোক আগরাআল এসেছে সঙ্গে শেখ সুকুর আলি সান্ত্বনা দিচ্ছে ডাক্তারবাবুকে। খাদিজা বেগমের স্বামী * শুনে শেষ মুহুর্তে বেকে বসে ইমামসাহেব,এই ব্যাপারে থেকে তিনি জাহান্নামে যেতে চান না।ইকবাল হাতে পায়ে ধরলেও ইমাম সাহেব সিদ্ধান্তে অটল।বড় মুখ করে বোলেছিল সব ব্যবস্থা করবে ইকবাল এখন কি বলবে ডাক্তার সাবকে? সুকুর আলিকে দেখে ইকবাল এগিয়ে যেতে সুকুর আলি জিজ্ঞেস করে,কিরে সব কাজ হয়েছে?
ইকবাল তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে ইমামের কথা বিস্তারিত বলে।সুকুর আলি কবরের দিকে এগিয়ে গেল।ইমাম সাহেবকে দেখে বলল,সেলাম আলেকুম ইমাম সাহেব।
--আলেকুমাসলাম।আপনে?
ইকবাল বলল,এনারে চেনেন না? ইনি শেখ সুকুর আলি।
ইমাম নাম শুনে ঢোক গিলে বলেন,বিলক্ষণ আপনেরে কে না চিনে।
তোবা তোবা এই নাকি সুকুর আলি?ইমাম মাওলানা মাজহার উদ্দীন ইতিপুর্বে সুকুর আলিরে চোখে না দেখলেও তার খ্যাতি সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। না জেনে কি ভুল করতে চলেছিলেন,খোদা মেহের বান এ যাত্রা বেঁচে গেলেন।
ড্যাবডেবিয়ে সুকুর আলিকে লক্ষ্য করেন,খাদিজা বেগমের দিকে তাকিয়ে সুকুর আলির চোখ ভিজে গেল।প্রফেসার ম্যাম খুব ভাল মানুষ ছিলেন। তার পরিচয় জেনেও তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন নি।উনার কাছে কলেজে তার বিবি পড়েছে। সুকুর আলি ইমাম সাহেবকে বলল,ইমাম সাহেব এইবার কাম শুরু করেন।
--হ্যা হ্যা মিঞা করতেছি, ইমাম ইকবালকে বললেন,এই ব্যাটা উনার স্বামীরে ডাক।
পল্টু আসতে ইমাম সাহেব বললেন,আসেন ডাক্তার সাহেব।এই তোরা লাশ কবরে রাখ,মাথা উত্তর দিক করে রাখবি। সবাই ধরাধরি করে খাদিজা বেগমকে কবরে নামাতে গেলে পল্টু জড়িয়ে ধরে গালে গাল রেখে কেদে ফেলে।ইমাম সাহেব অবাক ডাক্তারের আচরণে, মানুষ মানুষরে এত ভালবাসে?ইমামের মনের উষ্মাভাব চলে যায়। লাশ কবরে রাখার পর ইমাম সাহেব বললেন,ডাক্তার সাহেব বলেন,বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লতি রাসূলিল্লাহি।
পল্টু কি বুঝল কে জানে ইমাম সাহেব বললেন,আপনে আল্লাহ তায়ালার নামে দেহ সোপর্দ করলেন। এইবার মুঠীতে মাটি নেন,বলেন,মিনহা খালাকনাকুম। এই মাটি দিয়া সৃষ্টি করছিলেন।কবরে ফেলেন মাটি আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া ফীহা নুয়ীদ কুম। আবার মাটিতেই দিয়া দিলাম। মাটি কবরে দিয়া আবার একমুঠি মাটি নেন বলেন,ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা। আবার মাটি হতেই ফিরে পাবো। মাটি কবরে ফেলেন।এইবার ভাই সব তুমরা কবরে মাটি চাপা দেও।
গাড়ীতে ইকবালের পাশে মাওলানা সাহেব বসলেন,পিছনে পল্টু আর ললিতা। ইকবাল নীরবে গাড়ী চালাচ্ছে।কারো মুখে কোনো কথা নেই। মাওলানা একসময় বললেন, ডাক্তার সাহেব এই দুনিয়ায় কোনো কিছু চিরকাল থাকে না। মনে কোনো দুঃখ রাখবেন না। আমার প্রথম বিবির ইন্তেকালের পর আমারও মনে খুব দুঃখ হয়েছিল। এখন আমার দুইটা বিবি,একটা গেলেও একটা থাকবো।
পল্টুর এইসব জ্ঞান উপদেশ ভাল লাগছিল না। কতক্ষণে এই মানুষটা থেকে মুক্তি হবে সেই চিন্তা করে। পল্টু জিজ্ঞেস করল,কোথায় যাবেন আপনি?
--দিন দুনিয়ার মালিক যেইখানে নিয়া যায়।মাওলানা বললেন।
--সাহেব আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আমি উনাকে পৌছে দেবো।ইকবাল বলল।
ললিতার দিকে নজর পড়ে,সকাল থেকে খুব ধকল গেল ওর উপর দিয়ে। যশ খাইয়ে না দিলে এতক্ষণ অভুক্ত থাকতো। অঞ্জু থাকলে তাকে এত ভাবতে হত না। নার্সিং হোমে বলে এসেছিল কাল থেকে ক-দিন আসবে না,আর তার প্রয়োজন নেই। মেয়েটার কথা মনে পড়ল তার কি অপরাধ?জন্মে মায়ের দুধ পেল না। যশবিন্দার কিভাবে সামলাবে তাকে? শিখ পাঞ্জাবী হলেও সব নারীর মধ্যে একজন মায়ের বাস। যশ না থাকলে আজ কি যে হতো?তাড়াতাড়িতে ভাল করে দেখা হয়নি মেয়েটাকে। গতকাল আর আজেকের সঙ্গে কত পার্থক্য, কালকের পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী যেন একেবারে আলাদা।


![[+]](https://xossipy.com/themes/sharepoint/collapse_collapsed.png)