14-03-2020, 08:32 PM
[৬৪]
দিলীপের চাকরি বছর খানেক পর স্থায়ী হয়। রমিতার সঙ্গে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে। রমেনবাবুর বাড়ী ভেঙ্গে যে ফ্লাট হচ্ছে দিলীপ সেখানে ফ্লাট নিয়েছে বিয়ের পর বউ নিয়ে সেখানে উঠবে। নিজেদের টালির বাড়ী কি করবে ঠিক করেনি। পল্টুকে নেমন্তন করতে গেছিল দেখা হয় নি। খাদিজা বেগম খুব যত্নআত্তি করেছে। কলেজ যায় না বাড়ীতেই থকে। ড.অনঙ্গদেব সোমের খ্যাতি উপার্জনের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে।বাঁধ উপচে হুড়হুড় করে অর্থ আসছে।বউকে দেখে বুঝতে পারে ওনার যাওয়া সম্ভব নয়। নাজমা নামে একজন মহিলা স্বল্প সময়ের জন্য থাকে।ঠিক কাজের লোক নয় চেনাশোনা। দিলীপকে বলল,যদি কোনো লোক পাওয়া যায়।
শীলাদেবী অসুস্থ হার্ট দুর্বল।ছেলেটাকেই সব সামলাতে হচ্ছে।ওর বাবারও বয়স হয়েছে কিছু করতে গেলেই দিলীপ বাধা দেয়,তোমাকে কিছু করতে হবে না। করতে হবে না বললেই হবে ছেলের বিয়ে বাবা কি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে?বিয়ে করে বউ নিয়ে ফ্লাটে তুলেছে কাল সারারাত দুই বোন ফ্লাটেই ছিল।সাত সকালে কোথায় গেল ছেলেটা?
কাল সারারাত রমিতার মুখ দেখেনি ফ্লাটে গিয়ে দেখল গিজগিজ করছে পাড়ার মেয়েরা ঘিরে বসে আছে রমিতাকে। দিলিপকে দেখে কে একজন বলল,ওই তো এসে গেছে যার চিন্তা করছিলে।
রমিতা মেয়েটিকে চিমটি কাটল।দিলীপ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,আমি পরে আসছি।দেখি ওদিকে কতদুর কি হল? সিড়ি দিয়ে নামতে ক্যাটারারের ছেলেটার সঙ্গে দেখা হতে জিজ্ঞেস করল,সব ঠিক আছে তো?
--এবেলা কজন খাবে?
লক্ষণদাকে দেখে দিলীপ বলল,লক্ষণদাকে জিজ্ঞেস কর।
দিলীপের মনে পড়ল বৌদির কথা।মিতামাসীকে বলে যদি কিছু ব্যবস্থা করা যায়। বস্তির দিকে রওনা হল। মিতামাসীর জামাই মারা যাবার পর মেয়ে ললিতা দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকে।ছেলে কলেজে পড়ে মেয়ে কলেজে। ললিতা লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলে মেয়েদের দেখাশুনা করে দিদিমা। দিলীপ সব কথা খুলে বলল।মিতামাসী অবাক হুয়ে জিজ্ঞেস করে,ছোড়দার বউ পোয়াতি? তাহলি সামলাচ্ছে কি করে?
আলোচনা করে ঠিক হয় ললিতা যাবে কিন্তু মাঝে মাঝে এসে ছেলেমেয়েকে দেখে যাবে। দিলীপ স্বস্তিবোধ করে। রাতে পল্টু আসলে কথা বলা যাবে। পাড়ায় ফিরে আসতে শমিতা বলল,দিলীপদা তোমাকে বাবা খুজছে।
--একি তুমি?রমির কাছে কে আছে?
শমিতা ফিক করে হেসে বলল,তোমার বউ কচি খুকী নয় যে সব সময় আগলে আগলে রাখতে হবে?
--একটি চাটি দেবো,খুব পাকা হয়েছো?
--হি-হি-হি।তুমি দেখো বাবা কেন খুজছে? শমিতা পালিয়ে গেল।
দিলীপ উপরে ঊঠে দেখল জগমোহন উকিল তার অপেক্ষায় বসে আছেন। দিলীপকে দেখে বললেন,তুমি এসেছো?শোনো ফার্নিচারের দোকান থেকে ফোন করেছিল,মাল পত্তর কি ফ্লাটেই তুলে দেবে?
দিলীপ চিন্তা করে বলল,কদিন পরে ডেলিভারী দিতে পারবে না?
--না বাবা দেরী করা ঠিক হবে না।আজ পেমেণ্ট করতে হবে পেমেণ্ট করার পর ওরা আর পাত্তা দেবে না।অসুবিধে কি আছে প্যারিস হয়ে গেছে কেবল রঙ করা বাকী সরিয়ে সরিয়ে করে নিতে পারবে।
সুমিত্রা চা নিয়ে এলেন। দিলীপ বলল,এখন আবার চা নিয়ে এলেন মা? এবার বিশ্রাম করুণ।
--ছেলে মেয়ের জন্য করতে মায়েদের পরিশ্রম হয় না।সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করছো এবার বসে একটু চা খাও।
সুমিত্রা চলে গেলেন না স্বামীর পাশে বসে বললেন,কি জানো বাবা আমার তো ছেলে নেই--।
--এসব কথা আজকে কি দরকার?জগমোহন আপত্তি করেন।
--তুমি সব কথায় কথা বলো কেন?শোন বাবা তুমি আমার শুধু জামাই না আমার ছেলের মত।
পরিবেশ বদলে যায়।সন্তানের জন্য মায়ের আকুলতা সুমিত্রার গলায়।একসময় খুব সদয় ছিলেন না কিন্তু সহজে মানুষ বদলে যায়।মনে পড়ল নিজের কথা যে জীবন যাপন করতো তাতে এ বাড়ীর ধারে কাছে আসার কথা ভাবতে পারতো না।পল্টুর সাহচর্যে জীবন তার একেবারে বদলে গেছে। অনায়াসে আজ সুমিত্রা দেবীর সন্তানের জায়গা নিয়ে নিয়ছে। দিলীপ চা শেষ করে সুমিত্রার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।
বাড়ীর সামনে গাড়ী এসে দাড়াতে শীলাদেবী সন্ত্রস্ত বোধ করে। কে এল আবার কোনো গোলমাল নয়তো?দিলীপকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ ছিল না।এখন একেবারে অন্য মানুষ কিন্তু পুরানো কোনো কিছু আবার ভেবে স্বামীকে ডাকলেন,এই শুনছো দেখো তো কি ব্যাপার?গাড়ী থেকে নেমে পল্টূ একেবারে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে বলল,আণ্টি কেমন আছেন?
আণ্টি?শীলাদেবী ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে দেখেন।পল্টু বলল,চিনতে পারছেন না? আমি পল্টু দিলীপ কোথায়?
--চিনবো না কেন বাবা?তুমি একেবারে বদলে গেছো।তোমার মা যা করেছেন আমি কি করে তা ভুলবো বাবা?
--বিয়ে বাড়ীর একি ছিরি?
--বিয়ে হচ্ছে ফ্লাটে।এখানে বউ এনে কোথায় তুলবো?আজও বেঁচে আছি সে তোমার বাবার জন্যে। তোমাকে কোথায় বসাই?
পল্টু ইতিমধ্যে একটা পিড়ী নিয়ে মাটিতে বসে পড়েছে।শীলা তটস্থ হয়ে বললেন,এ কোথায় বসলে একেবারে পাগল। শীলাদেবী অতীতে হারিয়ে যান বলেন,তোমার মাকে সবাই ভাবতো অহংকারী পাড়ায় বেশি মিশতেন না।কিন্তু আমি তো জানি মানুষের প্রতি তার কতখানি দরদ ছিল।
বাড়ীর সামনে ধীরে ধীরে লোক জমতে থাকে।পল্টু বলল,আণ্টি একটু চা হবে?
--দেখো তো ছেলে কি বলে?তুমি বসো এক্ষুনি আমি চা নিয়ে আসছি।
পল্টু বসে বসে শৈশবে হারিয়ে যায়। অনেক বদলে গেছে বিশাল বিশাল ফ্লাট হয়েছে এসেছে নতুন নতুন লোক। সবাইকে চেনেও না।লক্ষণদা বিয়ে করবে কোনোদিন মনে হয় নি। পাড়া পাড়ার লোকজন নিয়ে তিনি সব কিছু ভুলে থাকতেন।সব পাড়াতেই এরকম এক-আধজন থাকে কারো বিপদে আপদে সব সময় অনাহুতভাবে হাজির, কোনো লাভ লোকসান যশ খ্যাতির হিসেব নিকেশ এরা করে না,মানুষের জন্য করায় যে আনন্দ সে টুকুতেই তারা তৃপ্ত,আলাদাভাবে ইতিহাস এদের মনে না রাখলেও সমাজে এদের পরোক্ষ অবদান কতটুকু বোঝা যাবে যেদিন এরা থাকবে না। এরাই সবাইকে বেধে রাখে এক গ্রন্থিতে।শৈশবের হাতছানি অনুভব করা যায় কিন্তু সেখানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।শীলা আণ্টি চা দিয়ে বললেন,দেখো তো বা কেমন হল?
পল্টু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,আণ্টি আর এককাপ চা হবে?
--কেন হবে না বাবা? শীলা আণ্টি চা আনতে গেলেন।পল্টূ উঠে বাইরে বেরিয়ে ইকবালকে ডেকে চায়ের কাপ ওর হাতে দিয়ে বলল,চা খেয়ে কাপটা ভিতরে দিয়ে যাবে।
জগমোহনের বাড়ী থেকে বেরিয়ে দিলীপের নজরে পড়ে তার বাড়ীর দিকে মনে হচ্ছে ভীড়। ওদিকে কি হল আবার? একটু এগিয়ে যেতে দেখল একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। পল্টু নাকি কিন্তু এ সময়?কিছু হল নাতো?দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল। ঐ তো বারান্দায় বসে মার সঙ্গে গল্প করছে পল্টূ। দিলীপকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,দিলীপ ওবেলা কিছু জরুরী অপারশন আছে। কিছু মনে করিস না,সংসার গুছিয়ে বোস একদিন আমরা দুজনে এসে পাত পেড়ে খেয়ে যাবো।
--বৌদি কেমন আছে?
--ভাল আছে,বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সি যা হয়। তোর বউ কোথায় ?
--চল,তোকে নিয়ে যাচ্ছি।বুঝতে পারছি যাক তুই এসেছিস এতেই আমার ভাল লাগছে।
--আণ্টি আমি আসি?
--হ্যা বাবা আবার এসো।শুনেছি তুমি অনেক বড় ডাক্তার হয়েছো?
পল্টূ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল,আপনারা আশির্বাদ করলে আরো বড় ডাক্তার হবো।আসি।
বাইরে বেরিয়ে দিলীপকে জিজ্ঞেস করে,বেশিদুর হলে গাড়ীতে ওঠ।
--কাছেই রমেনকাকুর বাড়ী ভেঙ্গে ফ্লাট হয়েছে।
পল্টূ বলল,ইকবাল তুমি এসো।দিলীপের সঙ্গে হাটতে হাটতে ফ্লাটের নীচে আসতে একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করল,পল্টূদা ভাল আছো?
পল্টূ দিলীপের দিকে তাকাতে দিলীপ বলল,রমিতার বোন শমিতা।
--মনে নেই কাধে তুলে কুল পাড়তে সাহায্য করেছিলে? শমিতা বলল।
বাচ্চা ছেলের মত উচ্ছসিত হয়ে বলল পল্টু,উঃ কতবড় হয়ে গেছো,চিনতেই পারিনি।
পল্টূ ঢুকতেই ভীড় সরে গেল।পল্টু কাছে গিয়ে বলল,জানো ওবেলা জরূরী কাজ পড়ে গেছে অঞ্জু বলল সকালেই দেখা করে এসো।পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের করে তার থেকে একটা হার বের করে রমিতার গলায় পরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,পছন্দ হয়েছে? অঞ্জু পছন্দ করে কিনেছে।
--কিছু খাবেন না? রমিতা জিজ্ঞেস করে।
--আণ্টির ওখানে চা খেয়েছি,আর একদিন আসবো।
--কথা দিলেন কিন্তু?
কথার মধ্যে লক্ষণদা এসে হাজির বলল,শুনলাম তুই এসেছিস? চল আমার ফ্লাটে একটূ চা খেয়ে যাবি।
দিলীপ বলল,আগে একটা জরুরী কাজ সেরে আসি,তারপর আসছি।
পল্টূ অবাক হয়ে তাকায় আবার কি জরূরী কাজ?দিলীপ বলল,একজন সবসময়ের লোক ব্যবস্থা করেছি তুই চল।
--করেছিস?তুই যা উপকার করলি,ইকবালের বউ মাঝে মাঝে আসে নার্সিং হোমে গিয়ে শান্তিতে কাজ করতে পারিনা।কোথায় যেতে হবে?
--গাড়ীতে ওঠ বলছি।লক্ষণদা যাবে?
তিনজনে গাড়ী নিয়ে মিতামাসীর বাড়ীর কাছে নামল। গাড়ীর শব্দে বেরিয়ে এল মিতামাসী। পল্টুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করল। ললিতা ইতস্তত করছিল না বলে কাজ ছেড়ে চলে যাবে? লক্ষণদা বলল,তোমায় কিছু ভাবতে হবে না আমি বলে দেবো। ললিতাকে নিয়ে গাড়ী ফ্লাটের নীচে দাড়াতে পল্টূ বলল,বেশিক্ষণ বসবো না কিন্তু খালি এককাপ চা।
দিলীপ বলল,পল্টু আমি আসি অনেক কাজ পড়ে আছে।
--হ্যা হ্যা,বিয়ে ভালয় ভালয় মিটুক আমি ওকে নিয়ে আসবো।
দিলীপের উপরে লক্ষণদার ফ্লাট। ভিতরে ঢুকেই লক্ষণদা হাক পাড়ে,অপু একটু চা করো।
অপলা এসে কিছু বলতে গিয়ে পল্টুকে দেখে লক্ষণকে বলল,কোথায় ছিলেন আপনি? দিলীপের বাসায় সেই ডাক্তার আসছিল।
--তুমি দুই কাপ চা নিয়ে এসো।তারপর শুনছি তোমার কথা। লক্ষণদা মজা পায়।
অপলা চা নিয়ে এল।এই মানুষটা কেডা উনি কিছু বলে না।বলা নাই কওয়া নাই এইভাবে কেউ অপরিচিত মানুষ ঘরে ঢুকায়? পল্টু দ্রুত চা শেষ করে। লক্ষণদা বলল,পল্টু তোর বউদিকে একটু দেখতো।তুমি শুয়ে পড়ো।
অপলা হতবাক কি কয় লোকটা,কাপড় চোপড় চাপাদিয়ে শুয়ে পড়ল অপলা। পল্টু পেটের কাপড় সরায়,অপলার শরীর শির শির করে।গভীর মনোযোগ দিয়ে কাপড় কোমরের নীচে নামিয়ে হাত বোলায় পেটে। একসময় চোখ খুলে বলল পল্টু,ঠিক আছে।এত চিন্তা করছো কেন?
পল্টুকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসতে অপলা জিজ্ঞেস করে,উনি সাধু না ফকির?চক্ষু বুজে মনে হল মন্ত্র পড়তেছিল।
--হ্যা-হ্যা-হ্যা।
--হাসেন ক্যান?
--পল্টু বড় ডাক্তার। আমারে খুব সম্মান করে।
--এই সেই ডাক্তার? আমারে বলেন নাই তো? রামো কি ভাবলো বলেন তো?
ললিতা পিছনের সিটে জড়োসড়ো বসে আছে।পল্টূ ড্রাইভারের পাশে বসেছে। পান্থনিবাসে যখন পৌছালো পল্টু খুব ক্লান্ত। ইকবালকে বিকেলে আসতে বলে ললিতাকে নিয়ে উপরে উঠে গেল।খাদিজা বেগম দরজা খুলতে পল্টু জিজ্ঞেস করে, নাজমা চলে গেছে?
--যাবে না?কটা বাজে খেয়াল আছে?আমি দেখতে পারি না বলে--।আরো কিছু বলতো কিন্তু সঙ্গে ললিতাকে দেখে থেমে যায়।
পল্টু ভিতরে ঢুকে বলল,এসো ললিতা।মিতামাসীর মেয়ে ললিতা তুমি দেখোনি।
খাদিজা অবাক হয়ে দেখে ললিতার বিধবা বেশ তারপর বলল,শোনো এই শাড়ী এখানে চলবে না।
ললিতার ধন্দ্ব লাগে মামীর বয়স মনে হয় মামার থেকে বেশি।খাদিজা বেগমের গলায় মমতার স্পর্শ পেয়ে মামীকে তার ভাল লেগে গেল। খাদিজা বেগম বলল,তুমি খেয়ে এসেছো?
--হ্যা আমি বাড়ী থিকে খেয়ে এসেছি।
--তাহলে বিশ্রাম করো।দেব খেতে এসো।
ললিতা অবাক হয়ে চারদিকে চোখ বুলায়।লোকে বলতেছিল মামী নাকি '., দেখে তো কিছু বোঝা গেল না।কি সোন্দর ব্যাভার।দেখতে লক্ষী প্রতিমার মত।
দিলীপের চাকরি বছর খানেক পর স্থায়ী হয়। রমিতার সঙ্গে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে গেছে। রমেনবাবুর বাড়ী ভেঙ্গে যে ফ্লাট হচ্ছে দিলীপ সেখানে ফ্লাট নিয়েছে বিয়ের পর বউ নিয়ে সেখানে উঠবে। নিজেদের টালির বাড়ী কি করবে ঠিক করেনি। পল্টুকে নেমন্তন করতে গেছিল দেখা হয় নি। খাদিজা বেগম খুব যত্নআত্তি করেছে। কলেজ যায় না বাড়ীতেই থকে। ড.অনঙ্গদেব সোমের খ্যাতি উপার্জনের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছে।বাঁধ উপচে হুড়হুড় করে অর্থ আসছে।বউকে দেখে বুঝতে পারে ওনার যাওয়া সম্ভব নয়। নাজমা নামে একজন মহিলা স্বল্প সময়ের জন্য থাকে।ঠিক কাজের লোক নয় চেনাশোনা। দিলীপকে বলল,যদি কোনো লোক পাওয়া যায়।
শীলাদেবী অসুস্থ হার্ট দুর্বল।ছেলেটাকেই সব সামলাতে হচ্ছে।ওর বাবারও বয়স হয়েছে কিছু করতে গেলেই দিলীপ বাধা দেয়,তোমাকে কিছু করতে হবে না। করতে হবে না বললেই হবে ছেলের বিয়ে বাবা কি করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে?বিয়ে করে বউ নিয়ে ফ্লাটে তুলেছে কাল সারারাত দুই বোন ফ্লাটেই ছিল।সাত সকালে কোথায় গেল ছেলেটা?
কাল সারারাত রমিতার মুখ দেখেনি ফ্লাটে গিয়ে দেখল গিজগিজ করছে পাড়ার মেয়েরা ঘিরে বসে আছে রমিতাকে। দিলিপকে দেখে কে একজন বলল,ওই তো এসে গেছে যার চিন্তা করছিলে।
রমিতা মেয়েটিকে চিমটি কাটল।দিলীপ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,আমি পরে আসছি।দেখি ওদিকে কতদুর কি হল? সিড়ি দিয়ে নামতে ক্যাটারারের ছেলেটার সঙ্গে দেখা হতে জিজ্ঞেস করল,সব ঠিক আছে তো?
--এবেলা কজন খাবে?
লক্ষণদাকে দেখে দিলীপ বলল,লক্ষণদাকে জিজ্ঞেস কর।
দিলীপের মনে পড়ল বৌদির কথা।মিতামাসীকে বলে যদি কিছু ব্যবস্থা করা যায়। বস্তির দিকে রওনা হল। মিতামাসীর জামাই মারা যাবার পর মেয়ে ললিতা দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকে।ছেলে কলেজে পড়ে মেয়ে কলেজে। ললিতা লোকের বাড়ী কাজ করে ছেলে মেয়েদের দেখাশুনা করে দিদিমা। দিলীপ সব কথা খুলে বলল।মিতামাসী অবাক হুয়ে জিজ্ঞেস করে,ছোড়দার বউ পোয়াতি? তাহলি সামলাচ্ছে কি করে?
আলোচনা করে ঠিক হয় ললিতা যাবে কিন্তু মাঝে মাঝে এসে ছেলেমেয়েকে দেখে যাবে। দিলীপ স্বস্তিবোধ করে। রাতে পল্টু আসলে কথা বলা যাবে। পাড়ায় ফিরে আসতে শমিতা বলল,দিলীপদা তোমাকে বাবা খুজছে।
--একি তুমি?রমির কাছে কে আছে?
শমিতা ফিক করে হেসে বলল,তোমার বউ কচি খুকী নয় যে সব সময় আগলে আগলে রাখতে হবে?
--একটি চাটি দেবো,খুব পাকা হয়েছো?
--হি-হি-হি।তুমি দেখো বাবা কেন খুজছে? শমিতা পালিয়ে গেল।
দিলীপ উপরে ঊঠে দেখল জগমোহন উকিল তার অপেক্ষায় বসে আছেন। দিলীপকে দেখে বললেন,তুমি এসেছো?শোনো ফার্নিচারের দোকান থেকে ফোন করেছিল,মাল পত্তর কি ফ্লাটেই তুলে দেবে?
দিলীপ চিন্তা করে বলল,কদিন পরে ডেলিভারী দিতে পারবে না?
--না বাবা দেরী করা ঠিক হবে না।আজ পেমেণ্ট করতে হবে পেমেণ্ট করার পর ওরা আর পাত্তা দেবে না।অসুবিধে কি আছে প্যারিস হয়ে গেছে কেবল রঙ করা বাকী সরিয়ে সরিয়ে করে নিতে পারবে।
সুমিত্রা চা নিয়ে এলেন। দিলীপ বলল,এখন আবার চা নিয়ে এলেন মা? এবার বিশ্রাম করুণ।
--ছেলে মেয়ের জন্য করতে মায়েদের পরিশ্রম হয় না।সকাল থেকে দৌড়াদৌড়ি করছো এবার বসে একটু চা খাও।
সুমিত্রা চলে গেলেন না স্বামীর পাশে বসে বললেন,কি জানো বাবা আমার তো ছেলে নেই--।
--এসব কথা আজকে কি দরকার?জগমোহন আপত্তি করেন।
--তুমি সব কথায় কথা বলো কেন?শোন বাবা তুমি আমার শুধু জামাই না আমার ছেলের মত।
পরিবেশ বদলে যায়।সন্তানের জন্য মায়ের আকুলতা সুমিত্রার গলায়।একসময় খুব সদয় ছিলেন না কিন্তু সহজে মানুষ বদলে যায়।মনে পড়ল নিজের কথা যে জীবন যাপন করতো তাতে এ বাড়ীর ধারে কাছে আসার কথা ভাবতে পারতো না।পল্টুর সাহচর্যে জীবন তার একেবারে বদলে গেছে। অনায়াসে আজ সুমিত্রা দেবীর সন্তানের জায়গা নিয়ে নিয়ছে। দিলীপ চা শেষ করে সুমিত্রার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।
বাড়ীর সামনে গাড়ী এসে দাড়াতে শীলাদেবী সন্ত্রস্ত বোধ করে। কে এল আবার কোনো গোলমাল নয়তো?দিলীপকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ ছিল না।এখন একেবারে অন্য মানুষ কিন্তু পুরানো কোনো কিছু আবার ভেবে স্বামীকে ডাকলেন,এই শুনছো দেখো তো কি ব্যাপার?গাড়ী থেকে নেমে পল্টূ একেবারে বাড়ীর মধ্যে ঢুকে বলল,আণ্টি কেমন আছেন?
আণ্টি?শীলাদেবী ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে দেখেন।পল্টু বলল,চিনতে পারছেন না? আমি পল্টু দিলীপ কোথায়?
--চিনবো না কেন বাবা?তুমি একেবারে বদলে গেছো।তোমার মা যা করেছেন আমি কি করে তা ভুলবো বাবা?
--বিয়ে বাড়ীর একি ছিরি?
--বিয়ে হচ্ছে ফ্লাটে।এখানে বউ এনে কোথায় তুলবো?আজও বেঁচে আছি সে তোমার বাবার জন্যে। তোমাকে কোথায় বসাই?
পল্টু ইতিমধ্যে একটা পিড়ী নিয়ে মাটিতে বসে পড়েছে।শীলা তটস্থ হয়ে বললেন,এ কোথায় বসলে একেবারে পাগল। শীলাদেবী অতীতে হারিয়ে যান বলেন,তোমার মাকে সবাই ভাবতো অহংকারী পাড়ায় বেশি মিশতেন না।কিন্তু আমি তো জানি মানুষের প্রতি তার কতখানি দরদ ছিল।
বাড়ীর সামনে ধীরে ধীরে লোক জমতে থাকে।পল্টু বলল,আণ্টি একটু চা হবে?
--দেখো তো ছেলে কি বলে?তুমি বসো এক্ষুনি আমি চা নিয়ে আসছি।
পল্টু বসে বসে শৈশবে হারিয়ে যায়। অনেক বদলে গেছে বিশাল বিশাল ফ্লাট হয়েছে এসেছে নতুন নতুন লোক। সবাইকে চেনেও না।লক্ষণদা বিয়ে করবে কোনোদিন মনে হয় নি। পাড়া পাড়ার লোকজন নিয়ে তিনি সব কিছু ভুলে থাকতেন।সব পাড়াতেই এরকম এক-আধজন থাকে কারো বিপদে আপদে সব সময় অনাহুতভাবে হাজির, কোনো লাভ লোকসান যশ খ্যাতির হিসেব নিকেশ এরা করে না,মানুষের জন্য করায় যে আনন্দ সে টুকুতেই তারা তৃপ্ত,আলাদাভাবে ইতিহাস এদের মনে না রাখলেও সমাজে এদের পরোক্ষ অবদান কতটুকু বোঝা যাবে যেদিন এরা থাকবে না। এরাই সবাইকে বেধে রাখে এক গ্রন্থিতে।শৈশবের হাতছানি অনুভব করা যায় কিন্তু সেখানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব।শীলা আণ্টি চা দিয়ে বললেন,দেখো তো বা কেমন হল?
পল্টু চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলল,আণ্টি আর এককাপ চা হবে?
--কেন হবে না বাবা? শীলা আণ্টি চা আনতে গেলেন।পল্টূ উঠে বাইরে বেরিয়ে ইকবালকে ডেকে চায়ের কাপ ওর হাতে দিয়ে বলল,চা খেয়ে কাপটা ভিতরে দিয়ে যাবে।
জগমোহনের বাড়ী থেকে বেরিয়ে দিলীপের নজরে পড়ে তার বাড়ীর দিকে মনে হচ্ছে ভীড়। ওদিকে কি হল আবার? একটু এগিয়ে যেতে দেখল একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। পল্টু নাকি কিন্তু এ সময়?কিছু হল নাতো?দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ীর দিকে এগিয়ে গেল। ঐ তো বারান্দায় বসে মার সঙ্গে গল্প করছে পল্টূ। দিলীপকে দেখে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,দিলীপ ওবেলা কিছু জরুরী অপারশন আছে। কিছু মনে করিস না,সংসার গুছিয়ে বোস একদিন আমরা দুজনে এসে পাত পেড়ে খেয়ে যাবো।
--বৌদি কেমন আছে?
--ভাল আছে,বেশি বয়সে প্রেগন্যান্সি যা হয়। তোর বউ কোথায় ?
--চল,তোকে নিয়ে যাচ্ছি।বুঝতে পারছি যাক তুই এসেছিস এতেই আমার ভাল লাগছে।
--আণ্টি আমি আসি?
--হ্যা বাবা আবার এসো।শুনেছি তুমি অনেক বড় ডাক্তার হয়েছো?
পল্টূ পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল,আপনারা আশির্বাদ করলে আরো বড় ডাক্তার হবো।আসি।
বাইরে বেরিয়ে দিলীপকে জিজ্ঞেস করে,বেশিদুর হলে গাড়ীতে ওঠ।
--কাছেই রমেনকাকুর বাড়ী ভেঙ্গে ফ্লাট হয়েছে।
পল্টূ বলল,ইকবাল তুমি এসো।দিলীপের সঙ্গে হাটতে হাটতে ফ্লাটের নীচে আসতে একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করল,পল্টূদা ভাল আছো?
পল্টূ দিলীপের দিকে তাকাতে দিলীপ বলল,রমিতার বোন শমিতা।
--মনে নেই কাধে তুলে কুল পাড়তে সাহায্য করেছিলে? শমিতা বলল।
বাচ্চা ছেলের মত উচ্ছসিত হয়ে বলল পল্টু,উঃ কতবড় হয়ে গেছো,চিনতেই পারিনি।
পল্টূ ঢুকতেই ভীড় সরে গেল।পল্টু কাছে গিয়ে বলল,জানো ওবেলা জরূরী কাজ পড়ে গেছে অঞ্জু বলল সকালেই দেখা করে এসো।পকেট থেকে একটা লাল বাক্স বের করে তার থেকে একটা হার বের করে রমিতার গলায় পরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,পছন্দ হয়েছে? অঞ্জু পছন্দ করে কিনেছে।
--কিছু খাবেন না? রমিতা জিজ্ঞেস করে।
--আণ্টির ওখানে চা খেয়েছি,আর একদিন আসবো।
--কথা দিলেন কিন্তু?
কথার মধ্যে লক্ষণদা এসে হাজির বলল,শুনলাম তুই এসেছিস? চল আমার ফ্লাটে একটূ চা খেয়ে যাবি।
দিলীপ বলল,আগে একটা জরুরী কাজ সেরে আসি,তারপর আসছি।
পল্টূ অবাক হয়ে তাকায় আবার কি জরূরী কাজ?দিলীপ বলল,একজন সবসময়ের লোক ব্যবস্থা করেছি তুই চল।
--করেছিস?তুই যা উপকার করলি,ইকবালের বউ মাঝে মাঝে আসে নার্সিং হোমে গিয়ে শান্তিতে কাজ করতে পারিনা।কোথায় যেতে হবে?
--গাড়ীতে ওঠ বলছি।লক্ষণদা যাবে?
তিনজনে গাড়ী নিয়ে মিতামাসীর বাড়ীর কাছে নামল। গাড়ীর শব্দে বেরিয়ে এল মিতামাসী। পল্টুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করল। ললিতা ইতস্তত করছিল না বলে কাজ ছেড়ে চলে যাবে? লক্ষণদা বলল,তোমায় কিছু ভাবতে হবে না আমি বলে দেবো। ললিতাকে নিয়ে গাড়ী ফ্লাটের নীচে দাড়াতে পল্টূ বলল,বেশিক্ষণ বসবো না কিন্তু খালি এককাপ চা।
দিলীপ বলল,পল্টু আমি আসি অনেক কাজ পড়ে আছে।
--হ্যা হ্যা,বিয়ে ভালয় ভালয় মিটুক আমি ওকে নিয়ে আসবো।
দিলীপের উপরে লক্ষণদার ফ্লাট। ভিতরে ঢুকেই লক্ষণদা হাক পাড়ে,অপু একটু চা করো।
অপলা এসে কিছু বলতে গিয়ে পল্টুকে দেখে লক্ষণকে বলল,কোথায় ছিলেন আপনি? দিলীপের বাসায় সেই ডাক্তার আসছিল।
--তুমি দুই কাপ চা নিয়ে এসো।তারপর শুনছি তোমার কথা। লক্ষণদা মজা পায়।
অপলা চা নিয়ে এল।এই মানুষটা কেডা উনি কিছু বলে না।বলা নাই কওয়া নাই এইভাবে কেউ অপরিচিত মানুষ ঘরে ঢুকায়? পল্টু দ্রুত চা শেষ করে। লক্ষণদা বলল,পল্টু তোর বউদিকে একটু দেখতো।তুমি শুয়ে পড়ো।
অপলা হতবাক কি কয় লোকটা,কাপড় চোপড় চাপাদিয়ে শুয়ে পড়ল অপলা। পল্টু পেটের কাপড় সরায়,অপলার শরীর শির শির করে।গভীর মনোযোগ দিয়ে কাপড় কোমরের নীচে নামিয়ে হাত বোলায় পেটে। একসময় চোখ খুলে বলল পল্টু,ঠিক আছে।এত চিন্তা করছো কেন?
পল্টুকে এগিয়ে দিয়ে ফিরে আসতে অপলা জিজ্ঞেস করে,উনি সাধু না ফকির?চক্ষু বুজে মনে হল মন্ত্র পড়তেছিল।
--হ্যা-হ্যা-হ্যা।
--হাসেন ক্যান?
--পল্টু বড় ডাক্তার। আমারে খুব সম্মান করে।
--এই সেই ডাক্তার? আমারে বলেন নাই তো? রামো কি ভাবলো বলেন তো?
ললিতা পিছনের সিটে জড়োসড়ো বসে আছে।পল্টূ ড্রাইভারের পাশে বসেছে। পান্থনিবাসে যখন পৌছালো পল্টু খুব ক্লান্ত। ইকবালকে বিকেলে আসতে বলে ললিতাকে নিয়ে উপরে উঠে গেল।খাদিজা বেগম দরজা খুলতে পল্টু জিজ্ঞেস করে, নাজমা চলে গেছে?
--যাবে না?কটা বাজে খেয়াল আছে?আমি দেখতে পারি না বলে--।আরো কিছু বলতো কিন্তু সঙ্গে ললিতাকে দেখে থেমে যায়।
পল্টু ভিতরে ঢুকে বলল,এসো ললিতা।মিতামাসীর মেয়ে ললিতা তুমি দেখোনি।
খাদিজা অবাক হয়ে দেখে ললিতার বিধবা বেশ তারপর বলল,শোনো এই শাড়ী এখানে চলবে না।
ললিতার ধন্দ্ব লাগে মামীর বয়স মনে হয় মামার থেকে বেশি।খাদিজা বেগমের গলায় মমতার স্পর্শ পেয়ে মামীকে তার ভাল লেগে গেল। খাদিজা বেগম বলল,তুমি খেয়ে এসেছো?
--হ্যা আমি বাড়ী থিকে খেয়ে এসেছি।
--তাহলে বিশ্রাম করো।দেব খেতে এসো।
ললিতা অবাক হয়ে চারদিকে চোখ বুলায়।লোকে বলতেছিল মামী নাকি '., দেখে তো কিছু বোঝা গেল না।কি সোন্দর ব্যাভার।দেখতে লক্ষী প্রতিমার মত।