Thread Rating:
  • 23 Vote(s) - 3.35 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ)
#55
পর্ব-১৭



নভেম্বর শেষ হবহব করছে, দিপাবলির পরপর দিল্লীতে ঠাণ্ডা পড়ে যায়, কলকাতার মানুষের জন্য এখানকার ঠাণ্ডা একটু বেশি মনে হয়। এর পরের মাসে পূবালী আর সিতাভ্রর প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। কোলকাতা যেতে হবে, স্যামন্তককে দু’তিন বার বলে কোন লাভ হয়নি, ছেলেটার অফিস বড় বেখাপ্পা। এমন কাজের চাপ যে মাঝে মাঝে রাত দশটা, এগারটা বেজে যায় বাড়ি ফিরতে। ঐ ঠাণ্ডায় এতোটা রাস্তা বাইক চালিয়ে এসে কোন রকমে খেয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ে। শুধু শনি রবি বার টা একটু সময় পায় ঠিক করে নিঃশ্বাস নেবার। সারাটা দিন ধরে সোফায় শুয়ে পড়ে পড়ে টিভি দেখে। পূবালী কিছু বলেনা, বেচারা ভাইটা গত একমাসে অনেক শুকিয়ে গেছে, আবার পরের মাস থেকে নাইট ডিউটি পড়বে, সারা ডিসেম্বর ধরে।
ঠিক ঐ রকম এক শনিবার সকালে স্যামন্তকের ফোন বেজে ওঠে। পূবালী ফোন তুলে নাম দেখে, বনা। নামটা দেখে থমকে যায় পূবালী, এই কি সে বন্দনা শুধু মাঝের দুটো অক্ষর বাদ আছে? মানে বন্দনা কি এখন ওর ভাইয়ের বনা? জল এতদুর গড়িয়ে গেছে আর কিছুই জানেনা পূবালী। মনটা একটু খারাপ লাগে প্রথমে, একজন এক সময় ওর সব থেকে প্রিয় বান্ধবী বন্দনা আর একজন চোখের মণি, ভাই।
ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে “তুই কি বন্দনা?”
কেঁপে ওঠে কান, কেউ যেন টেনে এক চড় মেরেছে বন্দনার কানে এমন মনে হয়। থমকে যায়, গলা থেকে আওয়াজ বের হয় না। আবার জিজ্ঞেস করে পূবালী “তুই কি বন্দনা?”
বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নেয় বন্দনা, ভালবাসে স্যামন্তককে তাহলে সেটা বলতে এতো গলা কাঁপছে কেন আজ? উত্তর দেয় বেশ জোর গলায় “হ্যাঁ আমি বন্দনা।”
আঁচ একটা কিছু করেছিল পূবালী নামটা দেখে জানতে পেরে একটু খানির জন্য থমকে গেল “তোদের কি ব্যাপার?”
নির্বিকার গলায় উত্তর দেয় বন্দনা “কি ব্যাপার আবার, এমনি ফোন করেছি?”
—“এমনি ফোন করেছিস মানে? আমাকে তো এতদিনে একবারো ফোন করিসনি, তো সামুকে কেন?”
“তাহলে তোকে এখন কিছু জানায়নি।” জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
“কি জানাবে” বুঝেও না বোঝার ভান করে পূবালী।
—“তুই কি জানতে চাস সেটা বল।”
—“আমি জানতে চাই কত দিন ধরে ফোনে চলছে।”
—“জুলাইয়ে, আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিলাম।”
“হ্যাঁ, সামু আমাকে বলেছিল।“ তারপরে গলার আওয়াজ বদলে যায় পূবালির “তখন থেকে? কিন্তু তুইতো…”
“হ্যাঁ আমি তো………” হেসে ফেলে বন্দনা “পালিয়েছিলাম আর বেঁচে গেছি একরকম ভাবে।”
—“কি করে, কি হয়েছিল?”
পুরান সব কথা জানায় পূবালী কে। সেই বিভীষিকা ময় দুঃস্বপ্নে ভরা রাতের কাহিনী। বলতে বলতে চোখে জল এসে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা পূবালী। ধুপ করে বসে পড়ে চেয়ারে, একবার চেয়ে দেখে স্যামন্তকের দিকে, একমনে সোফায় শুয়ে টিভি দেখে চলেছে। ভাইটা সত্যি কি দিয়ে তৈরি, ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেনা।
ধরা গলায় জিজ্ঞেস করে বন্দনা “কিরে আছিস না কেটে দিয়েছিস ফোন?”
উলটো হাতে চোখ নাক মুছে বলে “না, আছি। তোদের দু’জন কে কিযে বলি।”
হাসি কান্না মাখানো গলায় বলে বন্দনা “তোর সাথে এত দিন পরে কথা বলে সত্যি খুব ভাল লাগছে।”
“তুই তো একরকম হারিয়েই গেছিলি। আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো কোনদিন আর কথা হবেনা।” তারপরে হেসে ফেলে পূবালী “শেষ পর্যন্ত আমি যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হল। আমার ভাইটা শেষমেশ তোর প্রেমে পড়লো।”
—“যাঃ ঐ রকম ভাবে বলিস না, আমি পাগল হয়ে গেছি।”
—“হ্যাঁ তাতো বেশ বুঝতে পারছি। আমি ভেবেছিলাম যে তোর বরের সাথে মজা করব আর তুই কিনা, শেষমেশ আমার ভাই?”
—“আর বলিস না, কি খাইয়ে বড় করেছিলিস রে ভাইকে? কথায় কথায় শুধু দিদি দিদি করে?”
হেসে ফেলে পূবালী “আমাকে তো এখন কিছু জানায়নি রে।”
—“কি যে করি। এদিকে বাবা মা আমার জন্য ছেলে দেখছে আবার করে। আমি যত বার বলি, বল বল, কিছুতেই কিছু বলে উঠতে পারেনা। আমি তো সত্যি এবারে পাগল হয়ে যাব।”
—“আমি নেক্সট উইকে কোলকাতা যাচ্ছি, আমি তোর বাবা মায়ের সাথে দেখা করে সব বলে দেব চিন্তা নেই। আর আমার বাড়ি, সেটা একটু দেখে শুনে হ্যান্ডেল করতে হবে, এক মাত্র ছেলে তো তাই। তবে তুই এক কাজ কর, আজ রাতে ফোনে জোর ঝগড়া কর, বল যে দিদিকে দিয়ে ফোন করাও নাহলে তুই আর ওর সাথে কথা বলবিনা। ব্যাস তারপরে দেখি ছেলে কি করে।”
“মানে?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা “আবার ঝগড়া, এমনিতে দেখা নেই কতদিন।”
“বাঃ বা মেয়ে দেখছি প্রেমের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে।” একটু ঠাট্টার স্বরে বলে পূবালী।
“যাঃ বেশি বলিস না, তুই তো দু’মাস সিতাভ্র কে ছেড়ে ছিলিস, তখন কেমন লেগেছিল।” উলটো জবাব দেয় বন্দনা।
“আর বলিস কেন, পাগল হয়ে যাবার যোগাড় ছিল। রাত গুলো যেন আর কাটতো না। বিয়ের ছ’মাস পরে কি কেউ বউ ছেড়ে যায়?” বলতে বলতে মুখ লাল হয়ে যায় পূবালীর।
হেসে বলে বন্দনা “উম… তাহলে আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছিস।” কত দিন পরে দুই বান্ধবীর মধ্যে সেই পুরান ভাবে কথা হচ্ছে।
—“তোকে তো তাও সামু একদিন পড় পড় ফোন করে আমি তো চাতকের মতন বসে থাকতাম, কি করব আই.এস.ডি তো আর রোজ রোজ করা যায় না। তুই তো আমার চেয়ে ভালো আছিস।”
—“হ্যাঁ তা আর বলতে। জানিস প্রায় চার মাস হয়ে গেল দেখা হয়নি।”
“বাপ রে, এতো প্রেমের বহর।” যদিও জিজ্ঞেস করতে একটু লজ্জা করে পূবালীর, কারন ছেলেটা তো ওর ভাই, কি করে গোপন কথা গুলো জিজ্ঞেস করবে “কি করি বলতো? তোর সাথে ঠিক করে মজা করতেও পারবোনা আর, বড় অদ্ভুত সমস্যায় ফেললি তোরা আমাকে।”
মন খোলা হাসি হাসে বন্দনা “আমি তো তোরটা জিজ্ঞেস করতে পারি। যাই হোক, তুই যা ভাবছিস ততদুর এগুইনি আমরা, চিন্তা নেই তোর।”
—“একবার হাতে পাই তোকে।”
—“চলে আয়। অনেক দিন দেখিনি তোকে, আর আমার শামু কে নিয়ে আসিস খালি হাতে আসিস না।”
—“ওহ, তুমি ওর বনা হয়ে গেছ আর ও তোমার সামু? বাঃ বা বেশ। কিন্তু ছুটি পাচ্ছেনা সেটাই মুশকিল, নাহলে আমার ফার্স্ট ম্যারেজ এনিভারসারি তে ঠিক যেত।”
খবর শুনে মন মড়া হয়ে পড়ে বন্দনা “জানিস কত দিন দেখিনি, মনটা কেমন করছে, এখন কি করেছে রে?”
—“কি আর করবে, সোফায় শুয়ে টিভি দেখছে। ছুটির দিনে ওর কাজ ওটাই।”
একটু খানি মন মড়া হয়ে যায় বন্দনা “জানিনা ভবিষ্যতে কি হবে।”
আশ্বাস দিয়ে বলে পূবালী “আরে ওত চিন্তা করছিস কেন? তুই ওকে ভালোবাসিস?”
উত্তর দেয় বন্দনা “হ্যাঁ”
—“ও তোকে ভালবাসে”
রিসিভারটা ঠোঁটের সামনে এনে নিচু গলায় বলে “বোধ হয় আমার চাইতেও বেশি করে আমাকে ভালবাসে।”
হেসে উত্তর দেয় পূবালী “তাহলে বাকি টুকু আমি ম্যানেজ করে নেব।”
ফোন রেখে দিয়ে সিতাভ্র কে সব কিছু জানায় পূবালী, সিতাভ্র একবার বসার ঘরে স্যামন্তকের দিকে তাকিয়ে পূবালীকে জিজ্ঞেস করে “কি বলছ? ছেলেটার পেটে পেটে এতো কিছু ছিল।” তারপরে ঠাট্টা করে বলে “ড্যাম সিট্*, আমি ভেবেছিলাম বন্দনার সাথে একটু মজা করবো, তা শালিটা একদম সব মাঠে মারা করে দিল।”
—“আমাকে সামু কিছু বলেনি এখন, তাই ভাবছি আমি কিছু জানাব না, দেখি কবে জানায় আমাকে।”
—“তো তোমার আইডিয়া টা কি, শুনি?”
চোখ টিপে উত্তর দেয় পূবালী “দেখতে পাবে।”
যথারীতি বন্দনাকে রাতে ফোন করে স্যামন্তক “হ্যালো কেমন আছ?”
সকালেই পূবালীর সাথে ফোনে কথা হয়ে গেছে, ফোন নাম্বার আদান প্রদান হয়ে গেছে দুই বান্ধবীর মাঝে। বুকের মাঝে একটা দুষ্টু হাসি বারবার করে ধাক্কা মারতে থাকে, একটু মজা করা যাক স্যামন্তকের সাথে “ভাল নেই একদম, আজ আমাকে দেখতে ছেলের বাড়ি থেকে লোকজন এসেছিল।” প্রানপন হাসিটাকে চেপে ধরে একটু রাগি গলায় বলে বন্দনা।
সংবাদটা শুনেই একটু বিচলিত হয়ে পড়ে স্যামন্তক, কি করবে কি করে বলবে দিদিকে। এই তো সবে চার মাস হয়েছে চাকরির এর মধ্যে যদি বিয়ে করতে হয় তাহলে তো বড় মুশকিল। আর বিয়ে কাউকে না জানিয়ে করতে চায় না, ওর মুখের দিকে বাবা মা, জেঠু জেঠিমা সবাই তাকিয়ে। আর দিদি তো হয়তো হার্টফেল করবে জানতে পারলে। একটু ভাবুক হয়ে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে “আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়।”
ওদিক থেকে চিৎকার করে ওঠে বন্দনা “হ্যাঁ তুমি দেখে যাও, আর তোমার সামনে কেউ আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যাক। তুমি আমার বিয়ে খেতে এসো হাতে একটা ফুলের তোড়া নিয়ে।”
রেগে ওঠে স্যামন্তক “তো আমাকে কি করতে বল, তোমাকে এখানে নিয়ে আসতে? এখুনি কিছু করা সম্ভব নয়, বনা। জাস্ট লেট মি থিঙ্ক।”
তর্জনীটা দাঁতের নিচে চেপে ধরে বন্দনা, পেটের ভেতরে হাসিটা ফেটে পড়ার যোগাড় আর পারছেনা ধরে রাখতে নিজেকে, একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে আবার রাগত স্বরে বলে “তুমি আজ, এখুনি পূবালী কে সব জানাবে।”
দেয়ালে প্রায় মাথা ঠোকার মতন অবস্থা স্যামন্তকের “না এখুনি নয়।”
“আমি কিছু জানিনা, আমি নেক্সট ফোন পূবালীর কাছ থেকে চাই নাহলে তুমি আর আমাকে ফোন কোরো না।” এই বলে ফোন কেটে দিয়ে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে বিছানায়।
স্যামন্তক মাথার চুলগুলো মুঠি করে ধরে বসে পড়ে বিছানায়। রাগে বিতৃষ্ণায় বালিশ টাকে দু’তিনটে ঘুসি মেরে দেয়। কেন মরতে প্রেম করতে গেছিল তাও আবার দিদির বান্ধবীর সাথে? অন্য কোন মেয়ে হলে তো এই সমস্যা দেখা দিত না, ঠিক জানিয়ে দিত দিদিকে, সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যেত। এখন কি করবে, জানতে পারলে দিদি কি বলবে আর না জানালে বন্দনা কি করবে। একবার মনে হচ্ছিল জানিয়ে দেয় বন্দনাকে, বিয়ে করে ফেল যার সাথে বিয়ে দিচ্ছে, তারপরে আবার মনে হয় এবারে মেয়েটা নির্ঘাত মারা যাবে আর নিজে কি করবে? সারা রাত ঘুম হল না স্যামন্তকের।




চলবে....
বিদ্যুৎ রায় চটি গল্প কালেকশন লিমিটেড 
http://biddutroy.family.blog
[+] 4 users Like Biddut Roy's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: দিদির বান্ধবী যখন বউ (সম্পুর্ণ) - by Biddut Roy - 14-03-2020, 02:14 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)