13-03-2020, 03:51 PM
[৬০]
কলেজ যাতায়াতের পথে ছোট একটা সাইন বোর্ড চোখে পড়তো স্বপ্না আঢ্য ম্যরেজ রেজিষ্টার।কখনো মনে হয় নি স্বপ্না আঢ্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে।ফ্লাটের নীচে দেবকে নামিয়ে দিয়ে খাদিজা বেগম বলল,তুমি উপরে যাও,আমি আসছি। গাড়ীতে উঠে ইকবালকে নিয়ে স্বপ্না আঢ্যের বাড়ীতে একতলায় অফিস। খাদিজাকে বেগমকে দেখে স্বপ্না বললেন,আমি আপনাকে চিনি আপনি তো কলেজে পড়ান?
অল্প হাসি টেনে খাদিজা বলল তার আসার কারণ। স্বপ্না অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,আপনারা বিবাহিত নন?
--রেজিষ্ট্রি করিনি,কাল সন্ধ্যেবেলা কি আপনার সময় হবে?
--ঠিক আছে আমার তো এই কাজ। আমি সাতটা নাগাদ পৌছে যাবো রেজিষ্ট্রি করে রাখা ভাল,বাইরে যেতে গেলে রেজিষ্ট্রি মাষ্ট।
দিলীপদের নিয়ে ফ্লাটে ঢুকে যশের কথা মনে পড়ল।যশকে সে বলেনি সে ম্যারেড ঠিকই।কেন বলবে সে কী ম্যারেড?ঐ রকম ছটফটে দুরন্ত মেয়ে যখন শান্ত হয়ে যায় দেখতে খারাপ লাগে।ওড়না চেপে মনে হয় কাঁদছিল।ট্রেনের ধকলে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে।
--তোরা একটু বোস।আমি স্নানটা সেরে নিই।
তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।শাওয়ার খুলে নীচে দাড়াতে অঝোর ধারায় ভিজতে থাকে,পল্টুর চোখ ছাপিয়ে জল বেরিয়ে আসে।
গাড়ীতে উঠে খাদিজা বেগম হেলান দিয়ে বসে নিশ্চিন্ত বোধ করে।এত তাড়াহুড়ো করছে কেন? খাদিজা বেগম কি কোনো কারণে ভয় পেয়েছে? কাকে ভয় কি আমন ঘটল যে ফ্লাটে না ঢুকেই তাকে স্বপ্না আঢ্যের অফিসে ছুটতে হল?সে কি খাতায় কলমে বেঁধে রাখতে চাইছে? মাথার মধ্যে টুকরো টুকরো কথা ভাসতে থাকে। খানাপিনার সামনে গাড়ী দাড় করিয়ে দুটো লাঞ্চ পার্শেল নিয়ে নিল। তিনতলায় উঠে দরজার কাছে যেতে ভিতরে নারী কণ্ঠ শুনে খাদিজা চমকে ওঠে।
তার অনুপস্থিতিতে আবার কে এল?বসুন্ধরা জয়শোয়াল নয় তো? কলিং বেল টিপে দাঁড়িয়ে থাকে কি জানি কি আবার দেখতে হবে।দেব দরজা খুলে বলল, জানো আমি যখন উঠছি ওরা তখন নামছে। কি কোইন্সিডিয়েন্স।
খাদিজা বেগম চিনতে পারে দিলীপ আর সঙ্গে একটি মেয়ে সোফায় বসে আছে। মাত্র দুজনের খাবার এনেছে ইকবালকে বলেছে সন্ধ্যে বেলা আসতে।দিলীপকে জিজ্ঞেস করে,তোমরা খাবে তো?
--না না আমরা খেয়ে বেরিয়েছি।
--আমরা এখানে ছিলাম না একটু আগে ফিরেছি।
--হ্যা পল্টুর সঙ্গে সেই কথাই হচ্ছিল।আমরা ফিরেই যাচ্ছিলাম সিড়িতে আমাদের দেখা হল।
--এ্যাই জানোতো দিলীপ রমিলাকে বিয়ে করছে।
--ওঃ পল্টুদা রমিতা,তুমি সব ভুলে গেছো।রমিতা শুধরে দিল।
--স্যরি রমিতা,এ্যাডভোকেট জগমোহন বাবুর মেয়ে তুমি তো আগে দেখেছো।পল্টূ বলল।
খাদিজা বেগম দেবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দিলীপকে বলল,তোমরা তো খেয়ে এসেছো।একটু বোসো আমরা খেয়ে নিই তারপর জমিয়ে পাড়ার গল্প করা যাবে।
--ঠিক আছে ম্যাডাম আমরা বসছি।দিলীপ বলল।
দেবকে দেখে বলল,তোমার স্নান হয়ে গেল?ভালো করেছো।
খাদিজা বেগম রান্না ঘরে হাতের প্যাকেট নামিয়ে রেখে চা করে দিলীপ রমিতাকে দিয়ে বলল,চায়ে নিশ্চয়ই আপত্তি নেই।যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,শোনো তুমি আমাকে 'ম্যাডাম ম্যাডাম; করবে না বলবে বৌদি। ঠিক আছে?
দিলীপ চোখ নামিয়ে হাসল। রমিতা বলল,মহিলা বেশ জলি।
নীচু গলায় বলে দিলীপ,বয়সটা একটূ বেশি কিন্তু পল্টুকে খুব ভালবাসে।
--পল্টূদাকে সবাই ভালবাসে। রমিতা বলল।
--পল্টুর সঙ্গে মিশলে খারাপও ভাল হয়ে যায়।দিলীপ বলল।
--আবার ঐসব কথা? তোমাকে বলেছি না পুরানো কথা আর তুলবে না।কিছুক্ষণ পর রমিতা বলল, কে যেন বলেছিল যে কোনোদিন নেশা করেনি তার চেয়ে যে নেশা করে ছেড়ে দিতে পারে তার ক্রেডিট বেশি।
--সত্যি করে বলতো তুমি সেই আগের দিলীপকে ভালবাসতে পারতে?
রমিতা ফিক করে হেসে বলল,আমার বাবা মাতাল দেখলে খুব ভয় লাগে। পল্টু এসে হেসে বলল,প্রেমিক প্রেমিকারা সারাক্ষণ বকবক করতে পারে তাদের কোনো বিষয় লাগে না।
--তোমরাও সারাক্ষণ বকবক করো? রমিতা লাজুক গলায় জিজ্ঞেস করে।
পল্টু রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে নিল একবার তারপর বলল,অঞ্জু আমার প্রেমিকা নয় অভিভাবিকা।সব সময় এটা করো ওটা কোরনা।
খিলখিল করে হেসে উঠল রমিতা। পল্টুদা বেশ মজা করে কথা বলতে পারে। দিলীপের মনে পড়ল রমিও তাকে কম শাসন করে না? আসলে মেয়েরা স্বামীকে তার নিজের মত করে গড়ে নিতে চায়।বাবার বিরুদ্ধে কিভাবে দাড়িয়েছিল দিলীপ তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়।
খাদিজা বেগম বাথরুম থেকে বেরিয়ে টেবিলে খাবার সাজায়। দুজনে খেতে বসে ,খেতে খেতে পল্টু বলল,অঞ্জুই রান্না করে আজ হোটেল থেকে আনা হল।
--খেতে খেতে কথা বলে না,চুপ করে খাও।
পল্টু চোখ টিপে দিলীপকে ইশারা করে বোঝায় বলেছিলাম না সব সময় শাসন করে।দিলীপ আর রমিতা মুখ টিপে হাসে।
খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডা চলল সন্ধ্যে পর্যন্ত। কিরণকে কেন হাজতবাস করতে হচ্ছে লক্ষণদার বিয়ের প্রসঙ্গ কিভাবে অপুদির সঙ্গে যোগাযোগ পল্টূদের বাড়ী ভাড়া দেওয়া হচ্ছে পতাদার মেয়ে ভাল রেজাল্ট করেছে মাধ্যমিকে তপনদা এখন পাড়ায় থাকে নীরার বিয়ে ভাল হয় নি এরকম নানা প্রসঙ্গ এল।পল্টু জিজ্ঞেস করে,হাসি খুশি কেমন আছে?
ঝিল পাড় এলাকার একটা ছেলে হাসির পিছনে লেগেছিল অপুদি ওকে কান ধরে ওঠ বোস করিয়েছে।দীনেশবাবু নিজের বউকে নির্বাচনে দাড় করাতে চাইছিল কিন্তু পার্টি অপুদিকে দাড় করাতে চায়। পল্টু জিজ্ঞেস করে,কেমন দেখতে ভদ্রমহিলা?
খাদিজা সকলের চোখ এড়িয়ে দেবের কোমরে চিমটি কেটে বলল,নির্বাচনে দাড়াতে সুন্দরী হতে হবে নাকি? নীচে গাড়ীর হর্ণ শোনা গেল খাদিজা উঠে ব্যালকণিতে গিয়ে দেখল ইকবাল এসে গেছে।ইশারায় উপরে ডেকে চা করতে গেল।
পল্টূ ইকবালকে সোফায় বসতে বললেও বসে না, সে কোন থেকে একটা টুল নিয়ে বসল। একটা ট্রেতে চা আর কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে খাদিজা টেবিলে নামিয়ে রাখে।একটা কাপ তুলে ইকবালকে দিল আর হাতে করে কয়েকটা বিস্কিট। সন্ধ্যে হয়ে গেছে দিলীপ বাড়ী ফেরার জন্য দ্রুত চা নিঃশেষ করে উঠে দাড়াল।খাদিজা বেগম বলল,তোমরা নীচে গাড়ীতে বোসো। দিলীপ রমিতার সঙ্গে চোখাচুখি করে তার মানে ওদের গাড়ীতে করে পৌছে দেবে? ওরা বেরিয়ে যেতে খাদিজা বেগম দেবের গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,কি বলছিলে?
--আমি তোমার অভিভাবিকা?তোমাকে কেবল শাসন করি? তুমি আমার সব কথা শোনো?
--শুনি না?কোন কথা শুনিনি বলো?
--ঠিক আছে কাল সন্ধ্যেবেলা রেজিষ্টার আসবে আমাদের বিয়ে হবে মনে থাকে যেন।
--আমাদের বিয়ে?
--কেন তুমিই তো বলেছিলে বিয়ে করবে?
--হ্যা হ্যা বলেছিলাম মনে পড়েছে,আচ্ছা দিলীপকে আসতে বোলবো?
--এখন না পরে একদিন বললেই হবে।খাদিজা দেবের ঠোট মুখে নিয়ে চুষে বলল,এবার তৈরী হয়ে নেও।
--আমি একটূ করি? পল্টূ বেগমের ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে,খাদিজা জিভটা দেবের মুখে ঠেলে দিল।
পিছনে দিলীপ রমিতা আর খাদিজা বেগম সামনে ড্রাইভারের পাশে পল্টু।চলতে চলতে দিলীপ বলল বিয়েতে তোকে খবর দেবে তুই কিন্তু আসবি ।তারপর খাদিজার দিকে তাকিয়ে বলল,আপনিও আসবেন।
খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,কে আমি? শুভ অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া কি ঠিক হবে?
দিলীপের মুখে কথা যোগায় না রমিকে একবার দেখে নিয়ে বলল,আপনি আমার বৌদি আপনি আসবেন কে কি বলল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। পল্টু বৌদিকে নিয়ে আসবি কিন্তু।
--গেলে যাবে আমি তো কোলে করে নিয়ে যেতে পারবো না।
রমিতা হেসে ফেলে, খাদিজা বেগম মনে মনে বলে বাড়ী চলো কোলে করে আনতে পারো কি না দেখাচ্ছি। পাড়ায় ঢোকার মুখে দিলীপরা নেমে গেল। রমিতা নেমে খাদিজাকে বলল,আসি বৌদি।
দেব পিছনে এসে বেগমের পাশে বসল। মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই এই লোক একটু আগে কোলে নেবার কথা বলছিল। নিরীহ গোবেচারি চেহারা পাশে বসে আছে একজন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। পান্থনিবাসের নীচে গাড়ী দাড়াতে দেব নেমে গেল।খাদিজা বেগম নামতে যাবে ইকবাল বলল,মেমসাব একটা কথা বলবো?
--কি কাল আসবে না?
--জ্বি না। মানে আমার বিবির তবিয়ত আচ্ছা নাই।
--ঠিক আছে পরশু সময় মত এসো।
--কাল আপনাকে কলেজে নিয়ে যাবো।ডাক্তারসাব যদি মেহেরবানি করে একবার--।
খাদিজা বেগম অবাক হয়ে তাকাল দেব চলে গেল জিজ্ঞেস করল,ডাক্তার ছিল তুমি বলো নি কেন?
--ডাক্তার সাহেবকে বলতে ভয় লাগল আপনি যদি...।
খাদিজা বেগম অবাক হয় দেবকে ভয় আর তাকে নির্ভয়ে বলা যায়? তার ধারণা ছিল উল্টো খুব মজা লাগে ব্যাপারটা সে যেমন ছেলে মানুষ ভাবে অন্যের চোখে দেব তেমন নয়?দেবের সঙ্গে কথা বলতে কেউ ভয় পেতে পারে আজ নতুন করে জানলো। দেব শান্ত কম কথা বলে,বললেও মৃদু স্বরে চড়া গলায় কথা বলতে শোনেনি। খাদিজা জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে তোমার বউয়ের?
--জ্বি পেটে দরদ হায়েজ ঠিকমত হয় না।
--আচ্ছা তুমি দাড়াও।খাদিজা উপরে ঊঠে দেখল দেব দরজা খুলছে চাবি ঘুরিয়ে।
--দেব দরজা খুলতে হবে না, একবার নীচে চলো।
--কেন? আবার কি হল?
--লক্ষীটি একটু চলো।ইকবালের বউকে একবার দেখবে।
--উপরে আসতে বলো না।
--উঃ তুমি বেশি কথা বলো,যা বলছি শোনো নীচে চলো।
দেব হাসে খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,হাসছো কেন?
--না কিছু না,চলো।অভিভাবিকার নির্দেশ মানতেই হবে।
এই হচ্ছে দেব মজা করে কথা বলে কাউকে আঘাত করতে পারে না তবু তার সঙ্গে ইকবালের কথা বলতে ভয়।
একটা খাটে ইকবালের বিবিকে শুতে বলা হল।লম্বা ঘোমটা টানা মুখ দেখার উপায় নেই,দরজার পাশে ইকবালের মা দাঁড়িয়ে আছে। দেব জিজ্ঞেস করল, কোথায় ব্যথা? কি নাম তোমার?
ইকবাল বলল,নাজমা বেগম।
খাদিজা বেগম ঠোটে আঙ্গুল ছুইয়ে কথা বলতে নিষেধ করে।দেব গম্ভীর অন্য লোকে বিচরণ করছে। কোথায় ব্যথা?
নাজমা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল। কোমরের বাধনের ভেতোর হাত ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করে,এখানে? বাথরুম করতে কষ্ট হয়?
নাজমা বলল,জ্বি দরদ হয়।
--আল্ট্রা সোনোগ্রফি করতে হবে লোয়ার এ্যাবডোমেন একটা পরিস্কার কাগজ দেখি।
ইকবাল কাগজ এনে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, সেটা কি ডাক্তার সাব?
--লিখে দিচ্ছি তুমি দেখালেই বুঝতে পারবে।
--ডাক্তার সাব কোনো ভয় নেই তো?
--এই টেষ্টটা করে আমাকে দেখাতে হবে।যা ভাবছি তা না হলেই ভাল।
খাদিজা বলল,ইকবাল পানি আর সাবান আছে,দাও।
হাত ধুয়ে দেব গাড়ীতে এসে বসল।খাদিজা অভয় দিল কোনো ভয় নেই ডাক্তারবাবু আছে সব ঠিক হয়ে যাবে। ইকবালের সামনে খাদিজা আর কথা বলে না।তলপেটে হাত বুলিয়ে কি করে বুঝতে পারে?তার তলপেটে হাত বুলিয়ে কি বলতে পারবে না তার পেটের মধ্যে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না? খাদিজা জজ্ঞেস করে ,কি ভাবছো বলতো?
পল্টু বেগমের দিকে তাকিয়ে হাসল। খাদিজা জিজ্ঞেস করে,কি হল?
--ভাবছি লক্ষণদার কথা।একটি অসহায় মেয়েকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচালো শুধু না তাকে নতুন জীবন দিল।লক্ষণদা কোনোদিন বিয়ে করবে ভাবিনি।
--মেয়েটা অসহায় তোমাকে কে বলল?
--অসহায় না হোক জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছিল তা তো মানবে?
খাদিজা বেগমের কাধে হাত তুলে দিল। খাদিজা বেগম একবার ইকবালকে দেখল।কাধের উপর থেকে হাত নামিয়ে কোলের উপর রাখে। দেব বলল,জানো অঞ্জু সব মানুষের মধ্যে ভাল মন্দ থাকে।লক্ষনদার মত মানুষ পাড়ার একটা এ্যাসেট বলতে পারো।কে কোথায় মরলো কার বাড়ীতে ঝগড়া হল পাড়ার পুজো পিকনিক সব ব্যাপারেই এরা আছে। বিনিময়ে কোনো দাবী নেই।বিয়ে করে হয়তো বদলাবে।
--তুমি বদলেছো?
--কি জানি যে বদলায় সে বুঝতে পারে না আচ্ছা অঞ্জু আমি কি আর আগের মত নেই--বদলে গেছি?
খাদিজা বেগম দেবের হাতে চাপ দিল কি বলবে বুঝতে পারে না।মনে করার চেষ্টা করে সেই প্রথম দিনের কথা চেহারায় বদল হয়েছে কিন্তু সেই ছেলে মানুষীভাব এখনো গেল না।বিয়ের কথা মনে হয়নি কিন্তু একটা অনুভব করেছিল অন্তরের গভীরে।বয়সের ফ্যারাক ধর্মের ফ্যারাক তাদের এখনো আনুষ্ঠানিক বিয়েও হয়নি তবু মুহুর্তের জন্য মনে হয় না অন্য বিবাহিত দম্পতীর থেকে আলাদা।
ফ্লাটের নীচে পৌছে খাদিজা বেগম বলল,ইকবাল ডাক্তারবাবু যা বলল টেষ্ট করে রিপোর্ট নিয়ে ডক্তারবাবুকে দেখিয়ে নিয়ে যাবে।
--জ্বি মেম সাব।
ফ্লাটে ঢূকে দুজনে চেঞ্জ করল।কিছুই রান্না হয় নি। ষ্টোভে রান্না চাপিয়ে দিয়ে খাদিজা জিজ্ঞেস করল,তুমি পেটে হাত দিয়ে কি দেখছিলে?পেটে হাত দিতে গেলে কেন?
--বলল পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। বাথরুম ভাল হয় না মেন্সটুরেশন অনিয়মিত।
--কি বুঝলে?
--অনেক কিছু হতে পারে সেই জন্যই তো বললাম টেষ্ট করতে।
--অনেক কিছু কি?
--যদি জরায়ুতে সিষ্ট হয় তাহলে অপারেশন করাতে হবে।
--বেচারি খুব ঘাবড়ে গেছে। খাদিজা বেগম দেবকে বুকে চেপে ধরে বলল,আমার দেব একদম বদলায় নি সেই আগের মত ছোট্ট সোনাটি আছে।
কলেজ যাতায়াতের পথে ছোট একটা সাইন বোর্ড চোখে পড়তো স্বপ্না আঢ্য ম্যরেজ রেজিষ্টার।কখনো মনে হয় নি স্বপ্না আঢ্যের সঙ্গে কথা বলতে হবে।ফ্লাটের নীচে দেবকে নামিয়ে দিয়ে খাদিজা বেগম বলল,তুমি উপরে যাও,আমি আসছি। গাড়ীতে উঠে ইকবালকে নিয়ে স্বপ্না আঢ্যের বাড়ীতে একতলায় অফিস। খাদিজাকে বেগমকে দেখে স্বপ্না বললেন,আমি আপনাকে চিনি আপনি তো কলেজে পড়ান?
অল্প হাসি টেনে খাদিজা বলল তার আসার কারণ। স্বপ্না অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,আপনারা বিবাহিত নন?
--রেজিষ্ট্রি করিনি,কাল সন্ধ্যেবেলা কি আপনার সময় হবে?
--ঠিক আছে আমার তো এই কাজ। আমি সাতটা নাগাদ পৌছে যাবো রেজিষ্ট্রি করে রাখা ভাল,বাইরে যেতে গেলে রেজিষ্ট্রি মাষ্ট।
দিলীপদের নিয়ে ফ্লাটে ঢুকে যশের কথা মনে পড়ল।যশকে সে বলেনি সে ম্যারেড ঠিকই।কেন বলবে সে কী ম্যারেড?ঐ রকম ছটফটে দুরন্ত মেয়ে যখন শান্ত হয়ে যায় দেখতে খারাপ লাগে।ওড়না চেপে মনে হয় কাঁদছিল।ট্রেনের ধকলে শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে।
--তোরা একটু বোস।আমি স্নানটা সেরে নিই।
তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল।শাওয়ার খুলে নীচে দাড়াতে অঝোর ধারায় ভিজতে থাকে,পল্টুর চোখ ছাপিয়ে জল বেরিয়ে আসে।
গাড়ীতে উঠে খাদিজা বেগম হেলান দিয়ে বসে নিশ্চিন্ত বোধ করে।এত তাড়াহুড়ো করছে কেন? খাদিজা বেগম কি কোনো কারণে ভয় পেয়েছে? কাকে ভয় কি আমন ঘটল যে ফ্লাটে না ঢুকেই তাকে স্বপ্না আঢ্যের অফিসে ছুটতে হল?সে কি খাতায় কলমে বেঁধে রাখতে চাইছে? মাথার মধ্যে টুকরো টুকরো কথা ভাসতে থাকে। খানাপিনার সামনে গাড়ী দাড় করিয়ে দুটো লাঞ্চ পার্শেল নিয়ে নিল। তিনতলায় উঠে দরজার কাছে যেতে ভিতরে নারী কণ্ঠ শুনে খাদিজা চমকে ওঠে।
তার অনুপস্থিতিতে আবার কে এল?বসুন্ধরা জয়শোয়াল নয় তো? কলিং বেল টিপে দাঁড়িয়ে থাকে কি জানি কি আবার দেখতে হবে।দেব দরজা খুলে বলল, জানো আমি যখন উঠছি ওরা তখন নামছে। কি কোইন্সিডিয়েন্স।
খাদিজা বেগম চিনতে পারে দিলীপ আর সঙ্গে একটি মেয়ে সোফায় বসে আছে। মাত্র দুজনের খাবার এনেছে ইকবালকে বলেছে সন্ধ্যে বেলা আসতে।দিলীপকে জিজ্ঞেস করে,তোমরা খাবে তো?
--না না আমরা খেয়ে বেরিয়েছি।
--আমরা এখানে ছিলাম না একটু আগে ফিরেছি।
--হ্যা পল্টুর সঙ্গে সেই কথাই হচ্ছিল।আমরা ফিরেই যাচ্ছিলাম সিড়িতে আমাদের দেখা হল।
--এ্যাই জানোতো দিলীপ রমিলাকে বিয়ে করছে।
--ওঃ পল্টুদা রমিতা,তুমি সব ভুলে গেছো।রমিতা শুধরে দিল।
--স্যরি রমিতা,এ্যাডভোকেট জগমোহন বাবুর মেয়ে তুমি তো আগে দেখেছো।পল্টূ বলল।
খাদিজা বেগম দেবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে দিলীপকে বলল,তোমরা তো খেয়ে এসেছো।একটু বোসো আমরা খেয়ে নিই তারপর জমিয়ে পাড়ার গল্প করা যাবে।
--ঠিক আছে ম্যাডাম আমরা বসছি।দিলীপ বলল।
দেবকে দেখে বলল,তোমার স্নান হয়ে গেল?ভালো করেছো।
খাদিজা বেগম রান্না ঘরে হাতের প্যাকেট নামিয়ে রেখে চা করে দিলীপ রমিতাকে দিয়ে বলল,চায়ে নিশ্চয়ই আপত্তি নেই।যেতে গিয়ে ফিরে এসে বলল,শোনো তুমি আমাকে 'ম্যাডাম ম্যাডাম; করবে না বলবে বৌদি। ঠিক আছে?
দিলীপ চোখ নামিয়ে হাসল। রমিতা বলল,মহিলা বেশ জলি।
নীচু গলায় বলে দিলীপ,বয়সটা একটূ বেশি কিন্তু পল্টুকে খুব ভালবাসে।
--পল্টূদাকে সবাই ভালবাসে। রমিতা বলল।
--পল্টুর সঙ্গে মিশলে খারাপও ভাল হয়ে যায়।দিলীপ বলল।
--আবার ঐসব কথা? তোমাকে বলেছি না পুরানো কথা আর তুলবে না।কিছুক্ষণ পর রমিতা বলল, কে যেন বলেছিল যে কোনোদিন নেশা করেনি তার চেয়ে যে নেশা করে ছেড়ে দিতে পারে তার ক্রেডিট বেশি।
--সত্যি করে বলতো তুমি সেই আগের দিলীপকে ভালবাসতে পারতে?
রমিতা ফিক করে হেসে বলল,আমার বাবা মাতাল দেখলে খুব ভয় লাগে। পল্টু এসে হেসে বলল,প্রেমিক প্রেমিকারা সারাক্ষণ বকবক করতে পারে তাদের কোনো বিষয় লাগে না।
--তোমরাও সারাক্ষণ বকবক করো? রমিতা লাজুক গলায় জিজ্ঞেস করে।
পল্টু রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে নিল একবার তারপর বলল,অঞ্জু আমার প্রেমিকা নয় অভিভাবিকা।সব সময় এটা করো ওটা কোরনা।
খিলখিল করে হেসে উঠল রমিতা। পল্টুদা বেশ মজা করে কথা বলতে পারে। দিলীপের মনে পড়ল রমিও তাকে কম শাসন করে না? আসলে মেয়েরা স্বামীকে তার নিজের মত করে গড়ে নিতে চায়।বাবার বিরুদ্ধে কিভাবে দাড়িয়েছিল দিলীপ তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিল প্রায়।
খাদিজা বেগম বাথরুম থেকে বেরিয়ে টেবিলে খাবার সাজায়। দুজনে খেতে বসে ,খেতে খেতে পল্টু বলল,অঞ্জুই রান্না করে আজ হোটেল থেকে আনা হল।
--খেতে খেতে কথা বলে না,চুপ করে খাও।
পল্টু চোখ টিপে দিলীপকে ইশারা করে বোঝায় বলেছিলাম না সব সময় শাসন করে।দিলীপ আর রমিতা মুখ টিপে হাসে।
খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডা চলল সন্ধ্যে পর্যন্ত। কিরণকে কেন হাজতবাস করতে হচ্ছে লক্ষণদার বিয়ের প্রসঙ্গ কিভাবে অপুদির সঙ্গে যোগাযোগ পল্টূদের বাড়ী ভাড়া দেওয়া হচ্ছে পতাদার মেয়ে ভাল রেজাল্ট করেছে মাধ্যমিকে তপনদা এখন পাড়ায় থাকে নীরার বিয়ে ভাল হয় নি এরকম নানা প্রসঙ্গ এল।পল্টু জিজ্ঞেস করে,হাসি খুশি কেমন আছে?
ঝিল পাড় এলাকার একটা ছেলে হাসির পিছনে লেগেছিল অপুদি ওকে কান ধরে ওঠ বোস করিয়েছে।দীনেশবাবু নিজের বউকে নির্বাচনে দাড় করাতে চাইছিল কিন্তু পার্টি অপুদিকে দাড় করাতে চায়। পল্টু জিজ্ঞেস করে,কেমন দেখতে ভদ্রমহিলা?
খাদিজা সকলের চোখ এড়িয়ে দেবের কোমরে চিমটি কেটে বলল,নির্বাচনে দাড়াতে সুন্দরী হতে হবে নাকি? নীচে গাড়ীর হর্ণ শোনা গেল খাদিজা উঠে ব্যালকণিতে গিয়ে দেখল ইকবাল এসে গেছে।ইশারায় উপরে ডেকে চা করতে গেল।
পল্টূ ইকবালকে সোফায় বসতে বললেও বসে না, সে কোন থেকে একটা টুল নিয়ে বসল। একটা ট্রেতে চা আর কিছু স্ন্যাক্স নিয়ে খাদিজা টেবিলে নামিয়ে রাখে।একটা কাপ তুলে ইকবালকে দিল আর হাতে করে কয়েকটা বিস্কিট। সন্ধ্যে হয়ে গেছে দিলীপ বাড়ী ফেরার জন্য দ্রুত চা নিঃশেষ করে উঠে দাড়াল।খাদিজা বেগম বলল,তোমরা নীচে গাড়ীতে বোসো। দিলীপ রমিতার সঙ্গে চোখাচুখি করে তার মানে ওদের গাড়ীতে করে পৌছে দেবে? ওরা বেরিয়ে যেতে খাদিজা বেগম দেবের গলা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,কি বলছিলে?
--আমি তোমার অভিভাবিকা?তোমাকে কেবল শাসন করি? তুমি আমার সব কথা শোনো?
--শুনি না?কোন কথা শুনিনি বলো?
--ঠিক আছে কাল সন্ধ্যেবেলা রেজিষ্টার আসবে আমাদের বিয়ে হবে মনে থাকে যেন।
--আমাদের বিয়ে?
--কেন তুমিই তো বলেছিলে বিয়ে করবে?
--হ্যা হ্যা বলেছিলাম মনে পড়েছে,আচ্ছা দিলীপকে আসতে বোলবো?
--এখন না পরে একদিন বললেই হবে।খাদিজা দেবের ঠোট মুখে নিয়ে চুষে বলল,এবার তৈরী হয়ে নেও।
--আমি একটূ করি? পল্টূ বেগমের ঠোট মুখে নিয়ে চুষতে থাকে,খাদিজা জিভটা দেবের মুখে ঠেলে দিল।
পিছনে দিলীপ রমিতা আর খাদিজা বেগম সামনে ড্রাইভারের পাশে পল্টু।চলতে চলতে দিলীপ বলল বিয়েতে তোকে খবর দেবে তুই কিন্তু আসবি ।তারপর খাদিজার দিকে তাকিয়ে বলল,আপনিও আসবেন।
খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,কে আমি? শুভ অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া কি ঠিক হবে?
দিলীপের মুখে কথা যোগায় না রমিকে একবার দেখে নিয়ে বলল,আপনি আমার বৌদি আপনি আসবেন কে কি বলল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। পল্টু বৌদিকে নিয়ে আসবি কিন্তু।
--গেলে যাবে আমি তো কোলে করে নিয়ে যেতে পারবো না।
রমিতা হেসে ফেলে, খাদিজা বেগম মনে মনে বলে বাড়ী চলো কোলে করে আনতে পারো কি না দেখাচ্ছি। পাড়ায় ঢোকার মুখে দিলীপরা নেমে গেল। রমিতা নেমে খাদিজাকে বলল,আসি বৌদি।
দেব পিছনে এসে বেগমের পাশে বসল। মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই এই লোক একটু আগে কোলে নেবার কথা বলছিল। নিরীহ গোবেচারি চেহারা পাশে বসে আছে একজন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। পান্থনিবাসের নীচে গাড়ী দাড়াতে দেব নেমে গেল।খাদিজা বেগম নামতে যাবে ইকবাল বলল,মেমসাব একটা কথা বলবো?
--কি কাল আসবে না?
--জ্বি না। মানে আমার বিবির তবিয়ত আচ্ছা নাই।
--ঠিক আছে পরশু সময় মত এসো।
--কাল আপনাকে কলেজে নিয়ে যাবো।ডাক্তারসাব যদি মেহেরবানি করে একবার--।
খাদিজা বেগম অবাক হয়ে তাকাল দেব চলে গেল জিজ্ঞেস করল,ডাক্তার ছিল তুমি বলো নি কেন?
--ডাক্তার সাহেবকে বলতে ভয় লাগল আপনি যদি...।
খাদিজা বেগম অবাক হয় দেবকে ভয় আর তাকে নির্ভয়ে বলা যায়? তার ধারণা ছিল উল্টো খুব মজা লাগে ব্যাপারটা সে যেমন ছেলে মানুষ ভাবে অন্যের চোখে দেব তেমন নয়?দেবের সঙ্গে কথা বলতে কেউ ভয় পেতে পারে আজ নতুন করে জানলো। দেব শান্ত কম কথা বলে,বললেও মৃদু স্বরে চড়া গলায় কথা বলতে শোনেনি। খাদিজা জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে তোমার বউয়ের?
--জ্বি পেটে দরদ হায়েজ ঠিকমত হয় না।
--আচ্ছা তুমি দাড়াও।খাদিজা উপরে ঊঠে দেখল দেব দরজা খুলছে চাবি ঘুরিয়ে।
--দেব দরজা খুলতে হবে না, একবার নীচে চলো।
--কেন? আবার কি হল?
--লক্ষীটি একটু চলো।ইকবালের বউকে একবার দেখবে।
--উপরে আসতে বলো না।
--উঃ তুমি বেশি কথা বলো,যা বলছি শোনো নীচে চলো।
দেব হাসে খাদিজা বেগম জিজ্ঞেস করে,হাসছো কেন?
--না কিছু না,চলো।অভিভাবিকার নির্দেশ মানতেই হবে।
এই হচ্ছে দেব মজা করে কথা বলে কাউকে আঘাত করতে পারে না তবু তার সঙ্গে ইকবালের কথা বলতে ভয়।
একটা খাটে ইকবালের বিবিকে শুতে বলা হল।লম্বা ঘোমটা টানা মুখ দেখার উপায় নেই,দরজার পাশে ইকবালের মা দাঁড়িয়ে আছে। দেব জিজ্ঞেস করল, কোথায় ব্যথা? কি নাম তোমার?
ইকবাল বলল,নাজমা বেগম।
খাদিজা বেগম ঠোটে আঙ্গুল ছুইয়ে কথা বলতে নিষেধ করে।দেব গম্ভীর অন্য লোকে বিচরণ করছে। কোথায় ব্যথা?
নাজমা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিল। কোমরের বাধনের ভেতোর হাত ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করে,এখানে? বাথরুম করতে কষ্ট হয়?
নাজমা বলল,জ্বি দরদ হয়।
--আল্ট্রা সোনোগ্রফি করতে হবে লোয়ার এ্যাবডোমেন একটা পরিস্কার কাগজ দেখি।
ইকবাল কাগজ এনে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, সেটা কি ডাক্তার সাব?
--লিখে দিচ্ছি তুমি দেখালেই বুঝতে পারবে।
--ডাক্তার সাব কোনো ভয় নেই তো?
--এই টেষ্টটা করে আমাকে দেখাতে হবে।যা ভাবছি তা না হলেই ভাল।
খাদিজা বলল,ইকবাল পানি আর সাবান আছে,দাও।
হাত ধুয়ে দেব গাড়ীতে এসে বসল।খাদিজা অভয় দিল কোনো ভয় নেই ডাক্তারবাবু আছে সব ঠিক হয়ে যাবে। ইকবালের সামনে খাদিজা আর কথা বলে না।তলপেটে হাত বুলিয়ে কি করে বুঝতে পারে?তার তলপেটে হাত বুলিয়ে কি বলতে পারবে না তার পেটের মধ্যে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না? খাদিজা জজ্ঞেস করে ,কি ভাবছো বলতো?
পল্টু বেগমের দিকে তাকিয়ে হাসল। খাদিজা জিজ্ঞেস করে,কি হল?
--ভাবছি লক্ষণদার কথা।একটি অসহায় মেয়েকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচালো শুধু না তাকে নতুন জীবন দিল।লক্ষণদা কোনোদিন বিয়ে করবে ভাবিনি।
--মেয়েটা অসহায় তোমাকে কে বলল?
--অসহায় না হোক জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা এসে গেছিল তা তো মানবে?
খাদিজা বেগমের কাধে হাত তুলে দিল। খাদিজা বেগম একবার ইকবালকে দেখল।কাধের উপর থেকে হাত নামিয়ে কোলের উপর রাখে। দেব বলল,জানো অঞ্জু সব মানুষের মধ্যে ভাল মন্দ থাকে।লক্ষনদার মত মানুষ পাড়ার একটা এ্যাসেট বলতে পারো।কে কোথায় মরলো কার বাড়ীতে ঝগড়া হল পাড়ার পুজো পিকনিক সব ব্যাপারেই এরা আছে। বিনিময়ে কোনো দাবী নেই।বিয়ে করে হয়তো বদলাবে।
--তুমি বদলেছো?
--কি জানি যে বদলায় সে বুঝতে পারে না আচ্ছা অঞ্জু আমি কি আর আগের মত নেই--বদলে গেছি?
খাদিজা বেগম দেবের হাতে চাপ দিল কি বলবে বুঝতে পারে না।মনে করার চেষ্টা করে সেই প্রথম দিনের কথা চেহারায় বদল হয়েছে কিন্তু সেই ছেলে মানুষীভাব এখনো গেল না।বিয়ের কথা মনে হয়নি কিন্তু একটা অনুভব করেছিল অন্তরের গভীরে।বয়সের ফ্যারাক ধর্মের ফ্যারাক তাদের এখনো আনুষ্ঠানিক বিয়েও হয়নি তবু মুহুর্তের জন্য মনে হয় না অন্য বিবাহিত দম্পতীর থেকে আলাদা।
ফ্লাটের নীচে পৌছে খাদিজা বেগম বলল,ইকবাল ডাক্তারবাবু যা বলল টেষ্ট করে রিপোর্ট নিয়ে ডক্তারবাবুকে দেখিয়ে নিয়ে যাবে।
--জ্বি মেম সাব।
ফ্লাটে ঢূকে দুজনে চেঞ্জ করল।কিছুই রান্না হয় নি। ষ্টোভে রান্না চাপিয়ে দিয়ে খাদিজা জিজ্ঞেস করল,তুমি পেটে হাত দিয়ে কি দেখছিলে?পেটে হাত দিতে গেলে কেন?
--বলল পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। বাথরুম ভাল হয় না মেন্সটুরেশন অনিয়মিত।
--কি বুঝলে?
--অনেক কিছু হতে পারে সেই জন্যই তো বললাম টেষ্ট করতে।
--অনেক কিছু কি?
--যদি জরায়ুতে সিষ্ট হয় তাহলে অপারেশন করাতে হবে।
--বেচারি খুব ঘাবড়ে গেছে। খাদিজা বেগম দেবকে বুকে চেপে ধরে বলল,আমার দেব একদম বদলায় নি সেই আগের মত ছোট্ট সোনাটি আছে।