Thread Rating:
  • 25 Vote(s) - 3.48 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Adultery স্বর্গের নীচে সুখ by nirjonsakhor
#3
লোকটি অল্প দূরে দাঁড়িয়ে আছে।তার মুখে অল্প অল্প হাসি।সম্প্রতি সে একটা গাছের ডাল ভেঙে নিল।ডালাপালা সমেত ছুড়ে দিল জলে।
মুহূর্তেই নদীটা গ্রাস করে নিল সেটাকে।আবার কিছুক্ষন পরে অনেকদূরে ভেসে উঠলো সেটা।স্রোতের টানে চলে যাচ্ছে দিশাহীন ভাবে।তারপর আর সেটাকে দেখা গেল না।ভাস্বতী এবার শিউরে উঠলো।
 
রঞ্জন হাতের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে এক এক করে পোষাক খুলে ভাস্বতীর হাতে দিয়ে জাঙ্গিয়া পরা অবস্থায় নেমে পড়লো জলে।
কোমর জল পর্যন্ত নেমেই রঞ্জনের দুঃসাহস ডালটার মত অবস্থায় পরিণত হল।
ভাস্বতী চেঁচিয়ে উঠলো,এই----।
 
লোকটি ক্ষিপ্র পায়ে দৌড়ে গেল।চিমটেটা বাড়িয়ে দিল।ধমকের সুরে বলে উঠলো করছেন কি---পাগলের মতন।
 
অনেক চেষ্টার পর চিমটেটা ধরে রঞ্জন উঠতে পারলো।বিপদে পড়লেও রঞ্জন ভয় পায়নি।কিছু দূর গিয়ে সে ভেসে উঠতোই।
ভাস্বতীর মুখখানা রক্তিম।মনে মনে সে অসহায় হয়ে পড়েছিল।অল্পক্ষনের জন্য রঞ্জন যেন মৃত হয়ে গেছিল তার কাছে।সে নিজেকে অপরাধী ভাবছিল।
 
লোকটি বিনম্র ভাবে এগিয়ে এসে বলল আজ রাত্তিরে আপনারা আমার অতিথি।আমার নাম রাজা সেন।
 
রঞ্জন বলল আমি রঞ্জন সরকার।আমার স্ত্রী ভাস্বতী গাঙ্গুলি সরকার।
তিনজনেই হাতজোড় করে নমস্কার বিনিময় করলো।তারপরে আর একবার পেছন ফিরে তারা তাকালো নদীটির দিকে।নদীর চরিত্র বড় দুর্বোধ্য।
 
ওরা এগিয়ে গেল পাহাড়ের সরু পথ বেয়ে।বড় পাথরটার আড়ালে লোকটার ঘর।
ফেরা পথটুকু দীর্ঘক্ষণ মনে হয়।রঞ্জন লোকটির সাথে কথা বলছে ভাস্বতী একা একা হাঁটছে আগে আগে।বৃষ্টি থেমে গেলেও এদিক ওদিক জল ঝরার শব্দ।পাহাড়ে নিস্তব্ধ আঁধারে কয়েকটা শালিখ পাখি কিচিরমিচির করে ফিরে যাচ্ছে।
এ পাহাড়ে বিশেষ কোনো ফুলের সমারোহ নেই।তবে একধরনের সাদা পাহাড়ী ফুলের পরগাছা মাঝে মাঝে ঝিলিক দিয়ে ওঠে।রাত্রে যখন এখানে থাকতেই হবে---এ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ভাস্বতীর মনে কোন জড়তা নেই।
---আপনি এখানে কতদিন আছেন?
---অনেক সময়।এই ধরুন দশ বছর।
----দশ বছর! কি করেন আপনি?
----আমি সাপ ধরার ব্যবসা করি।
পাহাড়ে এমনভাবে বাড়ী বানিয়ে থাকা অসম্ভব কিছু নয়।বিদেশের ছেলেমেয়েরা অনেকেই থাকে--রঞ্জন দেখেছে।হয়তো এদেশেও অনেকে রয়েছে,সে খবর রাখেনি।কিন্তু সম্পূর্ণ একা একা?
---আপনি কি কলকাতার?
লোকটি কি একটা যেন ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।বলল উঁহু ত্রিপুরা।
 
বাড়ীটা তাঁবু ও কুঁড়েঘরের মাঝামাঝি।কাঠের ফ্রেমে তিনপাশে ত্রিপল লাগানো।শক্তপোক্ত কিছু গাছের কাঠ দিয়ে ঘেরা।পাহাড়ই একদিকের দেওয়াল।ওপরে টিন।ভাস্বতী এরকমই এক কুঁড়ে ঘরে হয়তো থেকে যাওয়ার বাসনা করেছিল।
 
ভিতরে দুটি কামরা।একটিতে দুটি ক্যাম্প খাট পাতা,টুকিটাকি জিনিসপত্র,একটি রাইফেল।পাশের ঘরে শুধু অনেকগুলি খাঁচা।
ঘরে ঢুকে লোকটি রেইনকোটটা খুলে ফেলার পর দেখা গেল,তার লম্বা দীর্ঘ চেহারা।তবে তা মেদহীন পেটানো ধাতুর মত শক্ত।মুখের মধ্যে সুশ্রী একটা ভাব হয়তো অনেক আগে ছিল।পাহাড়ে থাকতে থাকতে তা যেন রুক্ষ হয়ে গেছে।রেনকোটের তলায় সে শুধু পরেছিল ফুলপ্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি।জামা-টামার বালাই নেই।হাতের বাইসেপ্স গুলো স্পষ্টতই দৃঢ় লোহার মত।
----আপনাদের জামা কাপড়তো সব ভিজে গেছে।সঙ্গে আর কিছু আছে?
----রাত কাটাবার প্ল্যান ছিল না।তাই সঙ্গে কিছু আনা হয়নি।
----ভিজে পোশাক পরে তো থাকতে পারবেন না।আর আমার কাছে তো ধুতি-টুতিও কিছু নেই।কয়েকটা পাজামা আছে অবশ্য-তার দুটো পরে নিয়ে জামাকাপড়গুলো মেলে দিন, শুকিয়ে যাবে।
----থাক না,তার আর দরকার নেই।
লোকটি বিছানার তলা থেকে দুটো পাজামা আর গেঞ্জি বার করে রঞ্জনের হাতে দিল।
বলল ইস্ত্রি না করা থাকলেও কাচা আছে ব্যাবহার করার কোনো অসুবিধে নেই।
----আপনাকে খুবই অসুবিধেয় ফেললাম।
লোকটি পর্যায়ক্রমে দুজনের দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
লোকটি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর ওরা দুজনে চুপচাপ হয়ে রইলো।ভিজে শরীরে কাঁপুনি দিচ্ছিল।দুজনে পরস্পরের অতি চেনা মানুষ,দু-এক মুহূর্ত যেন কথা খুঁজে পায় না।চোখ সরিয়ে নেয়।
ভাস্বতী বা রঞ্জন দুজনের কেউই অন্যের পোষাক পরা পছন্দ করে না।অথচ উপায় তো নেই।
ভাস্বতী একটু হালকা হেসে বলল আমি কি সারারাত এই পাজামা পরে থাকবো।
----ভিজে শাড়ি পরে সারারাত থাকতে পারবে না।ঘন্টাখানেকের জন্য একটু মেলে দাও।যদি অল্প শুকিয়ে যায় পরে নিও।
ঘরের একটা দরজা আছে দরজাটা আলগা।পাশে রাখা আছে।রঞ্জন ওটা সরিয়ে এনে লাগিয়ে দিল।প্যান্ট,শার্ট,জাঙ্গিয়া,গেঞ্জি খুলে সেই পাজামা আর গেঞ্জি পরলো বিনা বাক্যব্যয়ে।চুপচাপ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখার পর ভাস্বতী শাড়িটা ছেড়ে ফেলল।সিল্কের শাড়ি জলে ভিজে বেজায় ভারী।মেলে দিলে শুকোতে বেশিক্ষন সময় লাগবে না।ব্লাউজটা খুলে ফেলার পর কালো সায়া আর কালো ব্রাতে ফর্সা শরীরটা মোহময় হয়ে উঠলো।যেন সে প্রাচীন মিশরের দেবদাসী।
ঘরের ভেতরটা আবছা অন্ধকার।ভাস্বতী রঞ্জনের কাছে এসে তার কাঁধের উপর দুই হাত রেখে বলল, তুমি রাগ করেছ?
-উই বিহেভড এজ ফুলস।কিছু না জেনেশুনে আমাদের এরকম আসা ঠিক হয়নি।
ভাস্বতী রঞ্জনের থুতনিটায় চুমু দিয়ে বলল এখন আর চিন্তা করে কি হবে।একটা তো থাকার জায়গা পাওয়া গেছে।
----অচেনা লোকের কাছে থাকতে আমার ভালো লাগে না।
----কত অচেনা জায়গায় তো আমরা থাকি।
----সেখানে আমরা টাকা দিয়ে থাকি,হুকুম করি।সে জায়গা আর এ জায়গা কি এক?
ভাস্বতী ম্লান গলায় বলল এখন থেকে তুমি কি আমার ওপর সবসময় রাগ করে থাকবে?
----তোমার ওপর রাগ করবো কেন?
----হ্যাঁ করেছ তো।
রঞ্জন ভাস্বতীকে আলিঙ্গন করে বলল তুমি একদম কথা শুনলে না।আসবার জন্য যেভাবে জেদ ধরলে।
----আমর কিন্তু বেশ ভালো লাগছে।
রঞ্জন ভাস্বতীর ঠোঁটে ঠোঁট জেঁকে দিল।ভাস্বতীর শরীরটা উষ্ণ।একটু-আধটু বিপদের গন্ধ পেলেই তার শরীরী চাঞ্চল্য বাড়ে।সে নিজের ঠোঁট রঞ্জনের ঠোঁটে পিষে দিতে লাগলো।
ব্রা পরিহিত কোমল রূপসী স্ত্রীকে আলিঙ্গন করে চুম্বন খেলা দীর্ঘক্ষণ করবার ইচ্ছে হলেও রঞ্জন করলো না।নিজের উষ্ণ স্ত্রীর কাছে একটু বিরতি পেয়ে বলল তাড়াতাড়ি করে নাও।ভদ্রলোক বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভাস্বতী তার অন্তর্বাসের বাঁধন খুলতেই আবছা আলোতে নগ্ন বক্ষদেশ দেখা গেল।সে সম্পুর্ন রকমের সুবিধাভোগীনি কারণ সে একটা নিখুঁত রকমের শরীর পেয়েছে।ভাস্বতীর উজ্জ্বল নগ্ন স্তনের আভায় উদ্বেলিত হচ্ছিল তার শরীর।সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, দুঃসাহসী নারীর উদ্ধত বক্ষ হলে তা সম্পুর্ন নিখুঁতই বলা যায়।ভাস্বতী তেমনই উন্নত কোমল স্তনের অধিকারিণী।গোপন ব্লাউজের অন্তরালে তার হৃদয়স্পন্দন স্তনদ্বয়ের সাথে একাত্ম হয়ে থাকে।
সম্পুর্ন শরীরটা এগিয়ে গেল খাটের দিকে।এক এক করে পাজামা গেঞ্জি তুলে নিল,পরলো।
রঞ্জন চামড়ার ব্যাগ থেকে টর্চটা বেরকরে ভাস্বতীর গায়ে ফেলে বলল তোমাকে মজার দেখাচ্ছে।
টর্চের আলোর আভা পেয়ে লোকটি বাইর থেকে বলল ভেতরে একটা হ্যাজাক আছে জ্বেলে নিতে পারেন।
 
ভাস্বতী বলল আমি এইরকম ভাবে বেরুবো?
রঞ্জন বলল কি আর করা যাবে?গেঞ্জিটাও ফুটোফুটো।
ভাস্বতী ওদের বড় তোয়ালেটা গায়ে জড়িয়ে নিল।তার মুখে লজ্জার চিহ্ন নেই,রয়েছে কৌতুক।নিজের শরীরটা নিয়ে সে বিব্রত বোধ করে না কখনো।কিন্তু তার একটু ঠান্ডা লেগে গেছে এর মধ্যে---নাক সুলসুল করছে।
 
রঞ্জন দরজাটা খুলতে গিয়েও থেমে গেল--কি ভেবে রিভলবার সমেত কোমরে বেল্টটা জড়িয়ে নিল।তারপর দরজা খুলে বাইরে এলো।
লোকটা বাইরে বসে একটা স্টোভ জ্বালানোর চেষ্টা করছে।ভাস্বতী তাকে জিজ্ঞেস করলো আপনার কাছে অ্যাসপিরিন জাতীয় কিছু আছে?
মুখ না ফিরিয়ে সে বলল না।
তারপর ওদের পোশাক দেখে বলল কি আর হবে একটা রাত কষ্ট করে কাটিয়ে দেন।
----কাল নদীর জল কমবে?
----যদি বৃষ্টি না হয়।
----আপনি এখানে একা থাকেন?
----এখনো দ্বিতীয়জনকে কি দেখতে পেয়েছেন এই জঙ্গলে?আমার সাথে তবে থাকবেই বা কে?
ভাস্বতী জিজ্ঞেস করলো আপনার একা একা থাকতে খারাপ লাগে না?
 
লোকটা স্টোভটা জ্বেলে সেটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।ভাস্বতীর মুখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল আমাকে টারজান ভাববেন না।এ জঙ্গলের ছ মাইল দূরে আদিবাসী গ্রাম আছে ওরা আমায় চেনে।একশো তিরিশ কিমি দূরে ফরেস্টের অফিস।ওরা আমায় চেনে,জানে।আমার সাপ ধরার লাইসেন্স আছে।তাহলে আর একা কোথায়?
স্টোভটা নিয়ে ও দ্বিতীয় ঘরটাতে ঢুকে গেল।পেছন পেছন ওরাও এলো।একপাশে কতগুলো খাঁচা আর একটু রান্নার ব্যবস্থা।
----ভাত চাপিয়ে দিচ্ছি।বিশেষ কিছু আতিথ্য করতে পারবো না,এজন্য দুঃখিত।
রঞ্জন বলল আমাদের কাছে পাউরুটি আর জেলি আছে।ভুলেই গেছিলাম।
ওগুলো এখন খেয়ে নিতে পারেন।রাতে ভাত, আলুসেদ্ধ আর পেয়াজ।ঘি আছে টাটকা।ডিম ছিল--ফুরিয়ে গেছে।
ভাস্বতী বলল ঘি আর গরম ভাত তো চমৎকার।
----প্রত্যেকদিন খাবারের পক্ষে একঘেয়ে।তাছাড়া আর যখন কিছু নেই,তখন ভালো লাগুক আর খারাপ লাগুক---
----আমাদের ভালো লাগবে।আমি কি আপনাকে রান্নায় সাহায্য করতে পারি?
----সাহায্য করার কিছু নেই।আমি একসঙ্গেই ভাত আর আলু সেদ্ধ চাপিয়ে দেব--
 
হিসহিস শব্দ শুনে রঞ্জন চমকে গিয়ে বলল খাঁচা গুলোর মধ্যে কি সাপ আছে নাকি?
----গোটা তিনেক আছে।ভয়ের কিছু নেই।খাঁচা ভালো করে বন্ধ আছে।দেখবেন?
টর্চের আলোয় দেখা গেল।দুটি সাপ নির্জীব হয়ে পড়ে থাকলেও একটি ফণা তুলে দাপাদাপি করছে।সেটা অন্তত হাত চারেক লম্বা,মাথার ওপর প্রবাদ মতন পায়ের ছাপ আঁকা।
----এগুলো আপনি ধরেছেন?
----হ্যাঁ
----ভাস্বতী বকুনির স্বরে বলে উঠলো, এগুলো নিজে ধরেন কেন?সাপুড়ে কিংবা বেদেদের দিয়ে ধরতে পারেন না?
 
লোকটি বলল সাপুড়েরাই কেবল সাপ ধরতে পারে এটা পুরোনো ধারণা।কতগুলো টেকনিক আছে শিখে নিলেই হল।ধরবেন নাকি সাপ?
 
লোকটির শেষের কথাটির মধ্যে যেন একটা স্পর্ধার আদি রসিকতা আছে।ভাস্বতীর তবু খারাপ লাগলো না।মাঝপথে রঞ্জন বলে উঠলো কারা কেনে সাপ?
----বোম্বের হপকিনস ইনস্টিটিউট।তাছাড়া দেশে বিদেশে নানা গবেষণাকেন্দ্র,চিড়িয়াখানা কেনে।
----আপনি কি নিজেই যান ওদের কাছে।
----না সরাসরি আমি বিক্রেতা নই।আসলে আমি সে অর্থে ব্যাবসায়ী নই।ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আমি একজন সাপুড়ে সে অর্থে বেদে।আমার কাজই সাপ ধরা।আমি চালান করি ভুবনেশ্বরে।সেখানকার কেন্দ্রের মাধম্যে বিক্রি হয়।
 
কিছুক্ষন থামবার পর লোকটি বলল তবে এগুলো বাজে সাপ।ভালো দাম পাওয়া যায় পাইথনের।এই পাহাড় থেকেই তিনটে ধরেছি।আর একটা আছে সেটা খালি পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
 
রঞ্জন বলল, এ পাহাড়ে এখনো একটা আছে?
----হু সেটাকে দেখেছি দু-একবার।তবে ধরা যায়নি।এই বর্ষার মধ্যেই ধরে ফেলতে হবে।শীত পড়লে আর পাওয়া যাবে না।
----এই যে একা একা থাকেন,সাপ ধরেন আপনার ভয় করে না?
----জীবিকার জন্য অনেক কিছু করতে হয়।শহরে ব্লাস্ট ফার্নেসে যে শ্রমিক কাজ করে তার ভয় করে না?
----আমরা বোকার মত এখানে চলে এসেছি।আপনি না থাকলে আমরা ভীষন বিপদে পড়তাম।
লোকটি ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আপনার ভিজে কাপড়গুলি এ ঘরে মেলে দিন,গরম আছে।
রঞ্জন বলল এরকম অভিজ্ঞতা আপনার আগে হয়েছে?আর কেউ এ পাহাড়ে এসে আটকা পড়েছে?
----না।
ভাস্বতী উঠে গেল পাশের ঘরে।রঞ্জনের শার্ট ও নিজের শাড়ি তুলে নিল।তার সায়া,ব্রা,রঞ্জনের জাঙ্গিয়া নিতে ইতস্তত করলো একটু।অচেনা মানুষের সামনে এসব প্রদর্শন করা সহবত নয়।কিন্তু অচেনা মানুষের সামনে সে কবে পাজামা,গেঞ্জি,তোয়ালে গায়ে বেরিয়েছে?
অন্তর্বাসগুলো এ ঘরেই মেলে দিয়ে বাকিগুলো নিয়ে খাঁচার ঘরে চলে এলো।
লোকটি একটা ডেকচিতে আলু পেয়াজ সমেত চাল ধুয়ে বসিয়ে দিল স্টোভে।
তারপর একটা বাক্স এনে একটা ব্র্যান্ডির বোতল ও দুটো গেলাস বার করলো।রঞ্জনকে জিজ্ঞেস করলো আপনার চলবে তো?
----রঞ্জন বলল না থাক।
----আপত্তি আছে?
----আপত্তি ঠিক নয়।আমি ওসব জিনিস একটু খেলে তারপর বেশি না খেয়ে থাকতে পারি না।আপনার জিনিসে আমি ভাগ বসাতে চাই না।আপনার ফুরিয়ে যাবে---আবার কবে আনতে পারবেন আপনি ঠিক নেই।
----লোকটি মৃদু হেসে অন্য একটি বোতল বের করে বলল আমার কাছে রাম আছে চলে যাবে।সপ্তাহ পরে শহর যাবো।যেটুকু আছে ব্র্যান্ডিটা এখন খাওয়া যেতে পারে।আমি আগামীর কথা চিন্তা করি না।
 
----না থাক।
লোকটি আর রঞ্জনকে পীড়াপীড়ি করলো না।ভাস্বতীর দিকে তাকিয়ে বলল আপনি?
--ভাস্বতী বলল আমি একটু চা খাবো।
লোকটি বলল দুঃখিত আপনাদের চায়ের কথা বলা উচিত ছিল।দাঁড়ান আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
ভাস্বতী বলল আপনি বসুন না।আমি করছি কোথায় কি আছে বলুন?
লোকটি বলল দু'কাপ।আমার জন্য করবার দরকার নেই।
 
অন্ধকারের মধ্যে চা বানিয়ে নিয়ে এলো ভাস্বতী।রঞ্জন এতো আরাম করে কখনো চা খায়নি।বৃষ্টিতে ভেজার পর গরম চা অপূর্ব লাগছে।
চা খাবার পর রাজার কাছে সিগারেট চেয়ে নিল রঞ্জন।
ভাস্বতী চায়ে চুমুক দিতে দিতে লোকটিকে দেখছিল।লোকটির নাম রাজা---এই জঙ্গলের নির্জন সাম্রাজ্যে কোনো রাজার প্রয়োজন নেই।তবু লোকটির হাবভাব যেন রাজার মত।স্টোভের আলোতে রাজার মুখখানা দেখা যাচ্ছে।তামাটে পাথরে খোদাই করা মুখ।বয়স যতটা মনে হচ্ছিল এখন মনে হচ্ছে বয়স খুব বেশি নয়।মেরেকেটে চল্লিশ হবে হয়তো।
 
ঠান্ডা লাগায় দুবার হেঁচে ফেলল ভাস্বতী।যতবার হাঁচি চাপতে যায়।ততবার তার হাঁচি পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে।
 
রঞ্জন বলল সতী তুমি বরং একটু ব্র্যান্ডি খেয়ে নাও।তোমার ঠান্ডা লেগেছে উপকার হবে।
বিয়ের পর রঞ্জনের সাথে ভাস্বতী কয়েকবার অল্প ভদকা পান করেছে।কিন্তু তা একান্ত নিজস্ব লোকের সাথে,নিজের ঘরে--অপরিচিতের সামনে কখনই নয়।
লোকটি কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে আর একটা গেলাসে ব্র্যান্ডি ঢেলে ভাস্বতীকে দেয়।
ভাস্বতী হাত বাড়িয়ে গেলাসটা নিল।ঠোঁটে চুমুক দিয়ে বলল ভালোই লাগছে।
 
রঞ্জন লোকটিকে বলল আপনার সিগারেটে ভাগ বসাতে হবে।আমার সিগারেটগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।
ভাস্বতী বলল চামড়ার কালো ব্যাগে আরো তো সিগারেট আছে দেখলাম।
----তাই তো!
রঞ্জন লাফ দিয়ে চলে গেল পাশের ঘরে সিগারেট আনতে।সেইসময় খাঁচার সাপটা ফণা তুলে হিসহিস করে উঠলো।
 
ভাস্বতী চোখ তুলে দেখলো লোকটি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তার শরীরের দিকে।পুরুষের এই ধরনের দৃষ্টি তার গায়ে বেঁধে না--গা সওয়া।এসব তার রূপের নৈবেদ্য সে জানে।
লোকটি কোনো কথা বলছে না।ভাস্বতীও কি বলবে বুঝতে পারছে না।অথচ এইরকম দুইজনে পাশাপাশি বসে কথা না বলার মধ্যে একটা অস্বস্তি আছে।
ভাস্বতী নিম্নস্বরে বলল,আমরা এসে পড়ে আপনাকে অনেক অসুবিধায় ফেললাম--
লোকটি বলল এই কথা বলতে হয় বলেই বারবার বলছেন।আমার কিন্তু আজ ভালো সময় কাটছে আপনাদের জন্য।এই গাছপালা,এই পাহাড় দেখতে একঘেয়ে লাগে।
রঞ্জন দু প্যাকেট সিগারেট এনে বলল ব্যাগে যে সিগারেট ছিল খেয়াল করিনি।আপনি এক প্যাকেট রাখুন।
 
লোকটি অবহেলায় এক প্যাকেট রেখে দিল এক পাশে।ধন্যবাদ জানালো না।
 
ওরা বাইরে বেরিয়ে এলো।এইসব পাহাড়ী রাতে জোৎস্না ফুটলে ভালো হত।কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তারাদল সহ নিশাপতি অবলুপ্ত।এখনো মেঘ থমথমে হয়ে রয়েছে।
[+] 1 user Likes pcirma's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: স্বর্গের নীচে সুখ by nirjonsakhor - by pcirma - 13-03-2020, 12:16 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)