13-03-2020, 03:15 AM
পর্ব-১৬
দিল্লির পাশে গুরগাঁও এক বহু জাগতিক আই.টি. সংস্থা থেকে অফার লেটার আসে স্যামন্তকের। বাড়ির সবাই খুব খুশী, তার সাথে একটু দুঃখ হয় সবার, বাড়ির এক মাত্র ছেলে। পূবালী খুব খুশী হয়, কিন্তু মনে মনে চেয়েছিল যে ভাইয়ের বম্বে বা পুনেতে চাকরি হোক যাতে পাশে থাকতে পারে। স্যামন্তক ভাবে কি করে বন্দনাকে এই খবর টা দেওয়া যায়, যদি জানতে পারে যে দুরে চলে যাচ্ছে তাহলে মেয়েটা বড় ভেঙ্গে পড়বে। ফোন করে জানায় স্যামন্তক, যে আজ ওকে একটা খুব বড় সারপ্রাইস দেবে। সেই শুনে বন্দনার মন খুশী তে নেচে ওঠে। স্যামন্তক চুমু খেয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত “আই লাভ ইউ” বলেনি। সেই তিনটি শব্দ শোনার অধীর আগ্রহে পরানে বাঁশি বেজে ওঠে। আজ তাহলে ওকে দিয়ে বলিয়ে ছাড়বে। কলেজের রেসাল্ট বের হয়ে গেছে তাও কিছু বলেনি, আজ ওর মাথা ভেঙ্গে সেই ট্রিট টা আদায় করতে হবে।
বন্দনা খুব খুশী, একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে। চোখের কোলে কাজল, ঠিক পূবালীর বিয়ের সময় যেমনটি করে তিনটে ফুটকি এঁকে দিয়েছিল থুতনিতে, ঠিক সেই রকম করে তিনটে ফুটকি এঁকে এসেছে আজ। মাথার পেছনের বেনুনীটাকে সাপের মতন নামিয়ে দিয়েছে পিঠের ওপরে। ডান হাতে অনেক গুলো কাঁচের চুড়ি, বেশ সুন্দর সেজেছে। টেবিলে স্যামন্তকের সামনে বসে এক মনে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। যত বার দেখে, প্রত্যেক বার যেন চশমার পেছনের চোখ দুটি কেমন যেন মাতাল করে দেয়। বন্দনাকে ট্রিট দিতে নিয়ে যায় পার্কস্ট্রিটের এক বড় রেস্টুরেন্টে।
স্যামন্তক অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে বন্দনার রূপসুধা পান করে। বুকের ভেতরে তীব্র ইচ্ছে জাগে, নিজের বাহুবেষ্টনীতে আবদ্ধ করে পিষে ফেলে ওর কমনীয় কোমল শরীরটি। চুম্বনে চুম্বনে জর্জরিত করে দেয় ওর গাল আর ঠোঁট। চোখের দৃষ্টি আটকে যায় থুতনিতে এসে, মেয়েটা ঠিক সেদিনের মতন তিনটে ফুটকি এঁকেছে। মাতাল চোখ একটু নিচে নামতেই থমকে যায়, আজ যেন উপরি বক্ষ একটু বেশি উন্মচিত, ভরাট বুকের মাঝের খাঁজটা যেন হাতছানি দিয়ে আহ্বান করছে। চনমন করে গরম হয়ে ওঠে বুকের রক্ত, দাঁতে দাঁত পিষে লোভ সংবরণ করে স্যামন্তক।
মুখ লাল দেখে বুঝতে পারে বন্দনা যে একলা পেলে হয়তো আজ পাগল করে তুলত স্যামন্তক। দৃষ্টি রেখা যেন আগুন ধরিয়ে দেয় ওর উন্মচিত কোমল বক্ষে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখ।
“কি দেখছ, ঐরকম ভাবে?” কাঁপা গলায় নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
—“আজকে তুমি কি আমাকে পাগল করার জন্য এসেছ?”
আলতো হেসে উত্তর দেয় বন্দনা “হতে চাইলেও কিছু করার নেই।”
স্যামন্তক বন্দনার বাঁ হাতটা নিজের হাতে নিয়ে আলতো করে চুমু খায়। ভিজে ঠোঁটের পরশে, কেঁপে ওঠে বন্দনা, সারা শরীরে খেলে বেড়ায় এক অদ্ভুত শিহরণ। নখের ডগা থেকে কাঁধ অবধি হাতের সব রমকূপ গুলো যেন খুলে যায়। স্যামন্তক বন্দনার হাত চেপে ধরে ঠোঁটের ওপরে তারপরে আলতো করে অনামিকা নিজের মুখের মধ্যে পুরে দেয়। বন্দনার সারা শরীর দুমড়ে কেঁপে ওঠে, কুঁকড়ে যায় চেয়ারে বসে। ডান হাতটা মুঠি করে নেয়, আপনা থেকে চোখ বন্দ হয়ে যায়।
মৃদু প্রতিরোধ জানায় “প্লিস করনা এই রকম। ছেড়ে দাও, নাহলে মরে যাবো।” হাতটা যত টেনে নিতে চায়, তত যেন চেপে ধরে স্যামন্তক। অনামিকা ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে স্যামন্তকের মুখের রসে। আর থাকতে না পেরে ডান হাত দিয়ে নাকে একটা ছোট্ট ঘুসি মেরে বাঁ হাত ছাড়িয়ে নেয় বন্দনা। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে, এযে এক অদ্ভুত শিহরণ জ্বালিয়ে দিয়ে চলে গেল। বন্দনার বুকের মাঝে, মিলনইচ্ছুক বহ্নিশিখা ধিক ধিক করে জ্বলে ওঠে।
“কেন ডেকেছ আজ আমাকে?” কোলের ওপরে নিজের অনামিকা নিয়ে খেলতে খেলতে স্যামন্তকের দিকে মিষ্টি করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে। উত্তর শোনার অধীর ইচ্ছায়, মনের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে ওঠে। বলে ফেল না একবার, এত সুন্দর করে সেজে এসেছে শুধু স্যামন্তকের জন্য। তাও কেন এতো দেরি করছে বলতে। একি, কেন হটাৎ করে মুখ নিচু করে বসে আছে। বুকের মাঝে এক চিলতে রক্ত ছলাৎ করে উঠল, তাহলে কি স্যামন্তক আবার প্রতারণা করবে ওর সাথে? ওকি এটা বলতে এসেছে। টান টান হয়ে যায় বন্দনা, মুখ নিচু করে বসে কেন স্যামন্তক, কিছু বলছে না কেন।
“কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে তো?” ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা, বুকের মাঝে রক্ত উথাল পাতাল হয়ে আন্দোলন করছে, উত্তর চাই এখুনি না হলে এই সাজ, এই শৃঙ্গার সব মিথ্যে। অধীর উদ্বেগে তাকিয়ে দেখে
স্যামন্তকের চোখের কোণে একফোঁটা জল চিক চিক করছে। মাথার মধ্যে রক্ত চলাচল বন্দ হয়ে যায়। কাঁদ কাঁদ গলায় জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে তোমার?” হাত দুটি চেপে ধরে। স্যামন্তকের হাত দুটি অত্যধিক ঠাণ্ডা মনে হয়। “আমি আর এখানে বসতে চাইনা আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চল যেখানে শুধু তুমি আর আমি। আমি জানতে চাই তোমার কি হয়েছে।”
হটাৎ করে এমন হয়ে গেল স্যামন্তক, এমনটি তো হবার কথা নয়। কিন্তু কি করে জানাবে যে দিল্লীতে চাকরি হয়েছে, কোলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই সংবাদ শুনে বন্দনা কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা একবার মনে মনে এঁকে নিতে প্রবল চেষ্টা করে স্যামন্তক। প্রানের নর্তকী ওর চেয়ে দেড় বছরের বড়, সুতরাং একটু বিচক্ষণ হবে নিশ্চয়। বন্দনা ঠিক বুঝবে যে দু’জনার ভালর জন্য, আগামি দিনের প্রস্তুতির জন্য ওকে যেতে হবে। বুক ভরে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, ঠিক যেন গভীর সমুদ্রে ডুব দেওয়ার আগের প্রস্তুতি।
“আমি দিল্লির কাছে, গুরগাঁও একটা আই.টি. কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি, কাল বিকেলে ফ্লাইট।” এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে বন্দনার দিকে, প্রানের নর্তকীর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
কথা শুনে একটু থমকে যায় বন্দনা, চুপ করে বসে থাকে, দশ দিন হয়ত ঠিক ভাবে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতে পারেনি, এর মধ্যে চলে যেতে হবে ওকে। হাত দুটি গুটিয়ে নেয়, কাজলে আঁকা চোখ দুটি জলে ভরে যায়। চারপাসের লোকের আওয়াজ কান পর্যন্ত পৌঁছয়না বন্দনার। পৃথিবীটা হটাৎ করে অবিশ্বাসঃ ভাবে নীরব মনে হয়। মনে হয় ওর স্বপ্ন দ্বিতীয় বারের জন্য চুরমার হতে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায়, মাথা নিচু করে বসে থাকে, দু’চোখের কোল দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
“আমি এখানে আর বসতে চাই না, আমি বাড়ি যাবো।” কাঁদ কাঁদ গলায় বলে বন্দনা।
—“কাবাবের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।”
—“তুমি খাও, আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।”
কাবাব আসার পড়ে, কোনও রকমে খুঁটে খুঁটে দু’এক টুকরো মুখে পুরে বন্দনা বলল “বাড়ি যাবো।”
স্যামন্তক মনের ভাব টা বুঝতে পারে, কিন্তু নিরুপায়, যেতে হবে এবং মানাতে হবে আকাঙ্খিতা কে। প্রানের রমণীর চোখে জল নিয়ে কিভাবে অত দুরে থাকবে।
সারাটা রাস্তা চুপ করে, বাইকের পেছনে বসে, স্যামন্তককে জাপটে ধরে থাকে বন্দনা। মনে কত আসা নিয়ে এসেছিল, স্যামন্তক আজ ওকে জানিয়ে দেবে কত ভালবাসে, তার বদলে শুনাল বিচ্ছেদের সংবাদ। এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে যেন ছাড়াতে গেলে বন্দনার শরীর ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বাড়ির সামনে বাইক থামানর পরে, নামার ইচ্ছে করেনা বন্দনার। এই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরে যদি চলে যাওয়া যায় ওর সাথে, প্রানপন চেষ্টা চালায় নিজেকে ওর পিঠের সাথে মিলিয়ে দিতে, এক করে দিতে দুই শরীর। নিজেকে তরল করে নিয়ে ওর বুকে প্রলেপ হয়ে যেতে প্রবল ইচ্ছে করে।
মৃদু স্বরে বলে স্যামন্তক “বনা, বাড়ি এসে গেছে।”
ঠোঁট কামড়ে ধরে বন্দনা, এই প্রথম বার, একটি ছোট্ট দুষ্টু মিষ্টি নামে ডাক দিল স্যামন্তক, বনা। ফুঁপিয়ে ওঠে, ঘাড়ের কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে বনা “না নামবো না।”
—“প্লিস এই রকম ভাবে কাঁদেনা, বনা। আমি রোজ দিন ফোন করব, কথা দিচ্ছি।”
কলারে নাক চোখ ঘষে একাকার করে দেয়, চোখের কাজল শার্টের কলারে লেগে যায় “সত্যি বলছ?”
—“হ্যাঁ, এবারে নামো।”
ধিরে ধিরে নেমে সামনে এসে দাঁড়ায় বন্দনা। স্যামন্তক বাইক থেকে নেমে, ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলে “ভেতরে চল।” ঠিক সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে বন্দনার হাত ধরে টান দেয় স্যামন্তক। আছড়ে পড়ে বন্দনা, স্যামন্তকের বুকের ওপরে, খামচে ধরে শার্টের সামনেটা। স্যামন্তক দু’হাতে বন্দনার পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের প্রসস্থ বুকের ওপরে টেনে নেয়। স্যামন্তকের মাথাটা যেন অনেক ওপরে মনে হয়, শার্টের কলার ছেড়ে, দু’হাতের দশটা আঙ্গুল দিয়ে মাথার চুল খিমচে ধরে, নিজের ঠোঁটের ওপরে টেনে নেয় ওর মুখ। গোলাপের পাপড়ির মতন কোমল লাল ঠোঁট দুটি চেপে ধরে, আলতো করে একটা কামর বসিয়ে দেয় স্যামন্তকের নিচের ঠোঁটে। ভাবাবেগ উপচে পড়ে, মত্ত হরিণীর ন্যায় চিবোতে থাকে ঠোঁট, পাগল হয়ে যাবে বন্দনা। দীর্ঘ থেকে দ্রীঘায়িত করার প্রবল চেষ্টা চালায় বন্দনা, এই চুম্বন যেন শেষ না হয়, কবে আবার বুকের মাঝে ফিরে পাবে মনের মানুষ টাকে, জানেনা। চুম্বনে চুম্বনে জর্জরিত করে তোলে স্যামন্তক প্রান প্রেয়সীর অধর ওষ্ঠ, শুষে নেয় মুখ গহ্বরের সুধা।
অনেকক্ষণ ধরে দু’জনা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপরে স্যামন্তক নিচু স্বরে বলে “আমাকে যেতে হবে, আর একদম কাঁদবে না, আমি কাল রাতে দিল্লি পৌঁছে ফোন করব। তুমি যেন এয়ারপোর্ট আসতে যেওনা তাহলে এক কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।” সিক্ত নয়নে বিদায় জানায় বন্দনা, তার হৃদয়টাকে যেন কেউ খুবলে নিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে।
সারা রাত ঘুমোতে পারেনা বন্দনা, বালিশ আঁকড়ে পড়ে থাকে। বুকের মাঝে তোলপাড় করে ওঠে রক্ত, আজ পর্যন্ত দু’জন এসেছে ওর জীবনে, দুজনেই কারন বশত দুরে চলে গেছে। এক জন চিরকালের জন্য, যেটা ভুলে যেতে চায়। এক জন কাল চলে যাবে, সেই কি পুরানো কালচক্র আবার ঘুরে ফিরে এক জায়গায় এসে দাঁড়াবে? আবার কি মানুষ চিনতে ভুল করেছে? স্যামন্তক যদি দিল্লী গিয়ে অন্য কাউকে দেখে ওকে ভুলে যায়, তাহলে আর বেঁচে থেকে কি লাভ? বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত কাটিয়ে দেয়।
বিকেল বেলা, বোর্ডিং পাস পাওয়ার পরে ফোন করে বন্দনা কে “বনা, আমি দিল্লী নেমেই ফোন করবো।”
ফোনে স্যামন্তকের গলার আওয়াজ শুনে মনটা ব্যাকুল হয়ে যায়। কানের সাথে প্রানপনে চেপে ধরে রিসিভারটা, একবার যদি বিদ্যুৎ হয়ে এই তার দিয়ে ওর কাছে চলে যেতে পাড়ত কত ভালো হত “আই উইল মিস ইউ ভেরি মাচ।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে বন্দনার।
দিল্লী নেমেই ফোনে জানিয়ে দেয় বন্দনাকে যে ঠিক করে পৌঁছে গেছে। গুরগাঁওএ বেশ বড় একটি আই.টি. কোম্পানিতে চাকরি পায়। ওখানেই সেক্টর 32 তে কয়েক জন অফিস কলিগের সাথে একটা মেস ভাড়া করে থাকে। কোলকাতা থেকে দিদির প্রেসেন্ট করা বাইক নিয়ে এসেছিলো, তাই অফিস আর মেস জাতায়াত করতে কোন অসুবিধা হয় না। তবে এই প্রথম কলকাতার বাইরে এসে মানিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছিল। বাজারে সবে নতুন রঙ্গিন স্ক্রিনওয়ালা মোবাইল ফোন এনেছে নোকিয়া। প্রথম মাসের মাইনে পেয়ে একটা মোবাইল ফোন কেনে।
দিদিকে ফোন করে জানায় নতুন মোবাইলের কথা “জানিস আজ মোবাইল কিনলাম।”
ভাইয়ের জন্য মনটা খারাপ লাগে। একা একা বাইরে থাকে, কি খায় কখন বাড়ি ফেরে। এতদিন তো কাকু কাকিমার কাছে আর ওর কাছে থেকে মানুষ হয়েছে। গলা ধরে আসে “কখন বাড়ি ফিরেছিস, কেমন আছিস? মেসে ঠিক মতন খেতে দেয়?”
গলা ভারী শুনে স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে “কিরে, তুই এতো ইমোশানাল হয়ে গেলি কেন?”
ওপারে চোখের কোল মুছতে মুছতে পূবালী বলে “তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছেরে।” বলেই কেঁদে ফেলে।
স্যামন্তক বুঝতে পারেনা কি বলবে দিদিকে, কি বলে শান্ত করবে, মনের ভেতর থেকে মুচড়ে একটা কান্না বেড়িয়ে আসে। এর পড়ে যদি আবার বন্দনা কে ফোন করে বলে তাহলে মেয়েটা আবার গলে পড়বে।
বন্দনা নিজের জমানো টাকায় একটা মোবাইল কেনে, যদিও কলকাতায় মোবাইলের ওতটা চল হয়নি, তবে মোবাইল হাতে দেখলে লোকেরা বেশ সম্ভ্রান্ত বলে ভাবে। প্রথম মাসে প্রত্যেক দিন ফোন করত স্যামন্তক। কাজের চাপে সেটা ধিরে ধিরে কমে গিয়ে এক দিন বাদে বাদে হয়ে ওঠে। বন্দনা উতলা হয়ে পড়ে শুধু ফোন আসার জন্য। নিজে যদি ফোন করে তাহলে কোন কোন সময় কেটে দিত কাজের চাপে। রেগে আরো দু’দিন কথা বলা বন্দ থাকতো দু’জনার মাঝে। এই ভাবে মানে অভিমানে কেটে যায় মাস দুয়েক। দিদিকে এখন বন্দনার বিষয় জানায়নি, স্যামন্তক। একটা ভয়ে আছে মনে মনে, যে দিদি শুনলে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আগে অনেক বার বারন করেছিল বন্দনার পেছনে যেতে, তখন সময় ছিল ভিন্ন এখন সময় ভিন্ন।
ঠিক পুজোর আগে পূবালী ফোন করে একদিন রাতে “এই জানিস একটা ভাল খবর দেবার আছে তোর কাছে।”
একদিকে বন্দনার ফোন আসেনি দু’দিন ধরে, রেগে আছে ওর প্রানের বনা, কেননা পুজোতে বাড়ি যেতে পারছেনা বলে। সবে চাকরিতে ঢুকেছে, ছুটি পাওয়া মুশকিল। একটু খানি বিষণ্ণ সুরে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে বল।”
আওয়াজ শুনে ধরে ফেলে পূবালী যে ভাইয়ের কিছু একটা হয়েছে, যেটা অনেক দিন ধরে চলছে, কিন্তু কিছুতেই মুখ খুলছে না। এবারে দিল্লী গিয়ে সব কিছু ভালো ভাবে জানতে হবে।
পূবালী বলে “তোর জামাইবাবুর দেরাদুন হেডঅফিসে ট্রান্সফার হয়েছিলো তো সেটা না নিয়ে দিল্লীতে পোস্টিং নিয়েছে। লক্ষীনগরে অফিস, এবারে তুই আমার কাছে থাকবি।” দিদির গলায় খুশির আবেগ।
খবরটা শুনে আনন্দে ফেটে পড়ে স্যামন্তক “সত্যি বলছিস? মার কাটারি এবারে সিতাভ্রদার মাথাটা বেশ ভালো করে খাব।”
—“হ্যাঁ সত্যি। পুজোর পড়ে আমরা সিফ্ট করছি। একটা ফ্লাট দেখে রাখিস তো, যেখান থেকে তোর অফিস আর সিতাভ্রর অফিস কাছাকাছি হবে।”
মাথা চুলকোয় স্যামন্তক “আরে, আমি তো গুরগাঁও থাকি আর সিতাভ্রদার অফিস তো পুরো উলটো দিকে। আমি মেসে ভালো আছি, তোর জন্য নাহয় নয়েডা তে ফ্লাট দেখে দেব।”
রেগে যায় পূবালী “পাগল নাকি তুই? আমি দিল্লী থাকব আর আমার ভাই আমার কাছে থাকবেনা? আমরা দিল্লীর ম্যাপ দেখেছি। শোন নেক্সট উইকে সিতাভ্র দিল্লী যাচ্ছে, সি.আর.পার্কে একটা ফ্লাট দেখিস। কম্পানি লিজ দেবে চিন্তা কি।”
পুজোতে বাড়ি ফেরা হয়নি স্যামন্তকের, তাই নিয়ে বন্দনার খুব মন খারাপ। এমনিতে ছেলেটা আজকাল একদিন পর পর ফোন করে, তবে হ্যাঁ, ফোন করলে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে, যেন সারা দিনের ডায়রি খুলে বসে পড়ে। ফোনে কথা না বললে যেন রাতের ঘুম হয় না। বন্দনা একরকম, সবকিছু ছেড়েছুড়ে ঘরে বসে, নাচে আর মন বসে না, কিছুতেই আর মন বসে না। বাবা মা বিয়ের কথা বললেই, বলে যে আর বিয়ে করবে না। সত্যি কথাটা জানানর আগে স্যামন্তকের উদেশ্যটা জানার প্রয়োজন। এক বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে দিল্লী গিয়ে ভুলে যায়নি স্যামন্তক, কিন্তু অন্য কিছু তো হতে পারে যা পূর্বে ঘটেছিল ওর সাথে। মাঝে মাঝে কেমন ভয় ভয় করে বন্দনার, আর সেদিন স্যামন্তক শত কথা বলেও বুঝিয়ে উঠতে পারেনা ওকে।
ঠিক পুজোর পড়ে পূবালী আর সিতাভ্র দিল্লী সিফ্ট করে। কম্পানি লিজে বেশ বড় একটা, তিন বেডরুমের ফ্লাট ভাড়া নেয় দিল্লীর নামকরা এক বাঙালি পরিবেষ্টিত জায়গায়। সিতাভ্র একটা গাড়ি কিনে ফেলে, হুন্ডাই এসেন্ট। স্যামন্তক গুরগাঁও এর মেস ছেড়ে চলে আসে দিদির সাথে থাকতে। পূবালীর কাজ বেড়ে যায় রোজ সকালে দু’দুটো টিফিন, তারপর বাড়ির কাজ। ভাইটা এমনিতে নিজের ঘরটাকে যা নোংরা করে রাখে তাতে রোজ দিন ঝগড়া হয়। অফিস থেকে ফিরে জুত ছুঁড়ে একদিকে ফেলে, জামাটা কোনদিন সোফায় পড়ে থাকে, কোনদিন ডাইনিং টেবিলে। বাইকের চাবি খুঁজে খুঁজে কি হোল্ডারে ওকেই ঝোলাতে হয়। তারপরে আবার রাত জেগে ফিসির ফিসির করে কার সাথে কথা বলে কে জানে। ভাই প্রেম করবে সেটা ওর জানা, কিন্তু ওর কাছে থেকে লুকিয়ে, আগে কোনদিন এইরকম ভাব দেখেনি।
সন্দেহ হয় একদিন, রাতে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে জিজ্ঞেস করে “এই শামু, রাতে কার সাথে অত কথা বলিসরে তুই?”
ধরা পড়ে গেছে স্যামন্তক, কি করে বলে আমি তোর বান্ধবীর সাথে প্রেম করছি। সিতাভ্র একবার তাকায় স্যামন্তকের দিকে তারপরে খাবার দিকে মন দেয়, পারতপক্ষে ভাইবোনের কথার মাঝে আসতে চায়না। রোজ সকালে এক চোট মারামারি করে স্যামন্তক অফিসে বের হবে আর বিকেলে অফিস থেকে ফিরে দেখবে যে ভাইয়ের মাথায় তেল লাগাতে বসে গেছে দিদি। তাই সিতাভ্র বুঝে গেছে যে এদের দ্বারা কিছু হবে না, এরা মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে নিজেদের ভালবাসা দেখায়।
স্যামন্তক আমতা আমতা করে উত্তর দেয় “কিছু না, আমার অফিস কলিগ।”
সিতাভ্র কানে কানে ফিস্ফিসিয়ে বলে “শালা, বলে দাও নাহলে সকাল বেলা আবার ঝ্যাঁটার বাড়ি খাবে।”
স্যামন্তক ভেবে কূলকিনারা পায়না, কি করে দিদির সামনে কথাটা পারবে যে বন্দনা কে ভালবাসে।
বন্দনাকে রাতে ফোন করে স্যামন্তক “বনা, দিদি কিছু আঁচ করেছে।”
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “তো, একদিন তো জানাতে হবে নাকি।”
—“কি করে বলি সেটা আমি বুঝে পাচ্ছি না।”
—“সেটা তো আমার জানার নয়, আর তুমি আমার নামে যা বলেছ পূবালী কাছে তারপড়ে আমি কি করে ওকে ফোন করি বলত?”
রেগে ওঠে স্যামন্তক, কতবার করে বলেছে যে দিদিকে কিছুই জানায়নি তাও বনা শুনবেনা “কতবার বলেছি যে আমি কিছুই জানাইনি দিদিকে তাও তুমি শুনবে না তাই তো?”
একটু ক্ষুণ্ণ মনে বলে বন্দনা “আমি কিছু জানিনা। বাবা মা আমার জন্য ছেলে দেখছেন। সেটা মাথায় রেখে যা করবার করো। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাইনা।”
একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, কিছুতেই ভেবে কোন উপায় বার করতে পারেনা যে কি করে দিদিকে জানাবে “ওকে আমি দেখছি। গুড নাইট।”
চলবে....
দিল্লির পাশে গুরগাঁও এক বহু জাগতিক আই.টি. সংস্থা থেকে অফার লেটার আসে স্যামন্তকের। বাড়ির সবাই খুব খুশী, তার সাথে একটু দুঃখ হয় সবার, বাড়ির এক মাত্র ছেলে। পূবালী খুব খুশী হয়, কিন্তু মনে মনে চেয়েছিল যে ভাইয়ের বম্বে বা পুনেতে চাকরি হোক যাতে পাশে থাকতে পারে। স্যামন্তক ভাবে কি করে বন্দনাকে এই খবর টা দেওয়া যায়, যদি জানতে পারে যে দুরে চলে যাচ্ছে তাহলে মেয়েটা বড় ভেঙ্গে পড়বে। ফোন করে জানায় স্যামন্তক, যে আজ ওকে একটা খুব বড় সারপ্রাইস দেবে। সেই শুনে বন্দনার মন খুশী তে নেচে ওঠে। স্যামন্তক চুমু খেয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত “আই লাভ ইউ” বলেনি। সেই তিনটি শব্দ শোনার অধীর আগ্রহে পরানে বাঁশি বেজে ওঠে। আজ তাহলে ওকে দিয়ে বলিয়ে ছাড়বে। কলেজের রেসাল্ট বের হয়ে গেছে তাও কিছু বলেনি, আজ ওর মাথা ভেঙ্গে সেই ট্রিট টা আদায় করতে হবে।
বন্দনা খুব খুশী, একটা গাড় নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে। চোখের কোলে কাজল, ঠিক পূবালীর বিয়ের সময় যেমনটি করে তিনটে ফুটকি এঁকে দিয়েছিল থুতনিতে, ঠিক সেই রকম করে তিনটে ফুটকি এঁকে এসেছে আজ। মাথার পেছনের বেনুনীটাকে সাপের মতন নামিয়ে দিয়েছে পিঠের ওপরে। ডান হাতে অনেক গুলো কাঁচের চুড়ি, বেশ সুন্দর সেজেছে। টেবিলে স্যামন্তকের সামনে বসে এক মনে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। যত বার দেখে, প্রত্যেক বার যেন চশমার পেছনের চোখ দুটি কেমন যেন মাতাল করে দেয়। বন্দনাকে ট্রিট দিতে নিয়ে যায় পার্কস্ট্রিটের এক বড় রেস্টুরেন্টে।
স্যামন্তক অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে বন্দনার রূপসুধা পান করে। বুকের ভেতরে তীব্র ইচ্ছে জাগে, নিজের বাহুবেষ্টনীতে আবদ্ধ করে পিষে ফেলে ওর কমনীয় কোমল শরীরটি। চুম্বনে চুম্বনে জর্জরিত করে দেয় ওর গাল আর ঠোঁট। চোখের দৃষ্টি আটকে যায় থুতনিতে এসে, মেয়েটা ঠিক সেদিনের মতন তিনটে ফুটকি এঁকেছে। মাতাল চোখ একটু নিচে নামতেই থমকে যায়, আজ যেন উপরি বক্ষ একটু বেশি উন্মচিত, ভরাট বুকের মাঝের খাঁজটা যেন হাতছানি দিয়ে আহ্বান করছে। চনমন করে গরম হয়ে ওঠে বুকের রক্ত, দাঁতে দাঁত পিষে লোভ সংবরণ করে স্যামন্তক।
মুখ লাল দেখে বুঝতে পারে বন্দনা যে একলা পেলে হয়তো আজ পাগল করে তুলত স্যামন্তক। দৃষ্টি রেখা যেন আগুন ধরিয়ে দেয় ওর উন্মচিত কোমল বক্ষে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখ।
“কি দেখছ, ঐরকম ভাবে?” কাঁপা গলায় নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
—“আজকে তুমি কি আমাকে পাগল করার জন্য এসেছ?”
আলতো হেসে উত্তর দেয় বন্দনা “হতে চাইলেও কিছু করার নেই।”
স্যামন্তক বন্দনার বাঁ হাতটা নিজের হাতে নিয়ে আলতো করে চুমু খায়। ভিজে ঠোঁটের পরশে, কেঁপে ওঠে বন্দনা, সারা শরীরে খেলে বেড়ায় এক অদ্ভুত শিহরণ। নখের ডগা থেকে কাঁধ অবধি হাতের সব রমকূপ গুলো যেন খুলে যায়। স্যামন্তক বন্দনার হাত চেপে ধরে ঠোঁটের ওপরে তারপরে আলতো করে অনামিকা নিজের মুখের মধ্যে পুরে দেয়। বন্দনার সারা শরীর দুমড়ে কেঁপে ওঠে, কুঁকড়ে যায় চেয়ারে বসে। ডান হাতটা মুঠি করে নেয়, আপনা থেকে চোখ বন্দ হয়ে যায়।
মৃদু প্রতিরোধ জানায় “প্লিস করনা এই রকম। ছেড়ে দাও, নাহলে মরে যাবো।” হাতটা যত টেনে নিতে চায়, তত যেন চেপে ধরে স্যামন্তক। অনামিকা ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে স্যামন্তকের মুখের রসে। আর থাকতে না পেরে ডান হাত দিয়ে নাকে একটা ছোট্ট ঘুসি মেরে বাঁ হাত ছাড়িয়ে নেয় বন্দনা। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে, এযে এক অদ্ভুত শিহরণ জ্বালিয়ে দিয়ে চলে গেল। বন্দনার বুকের মাঝে, মিলনইচ্ছুক বহ্নিশিখা ধিক ধিক করে জ্বলে ওঠে।
“কেন ডেকেছ আজ আমাকে?” কোলের ওপরে নিজের অনামিকা নিয়ে খেলতে খেলতে স্যামন্তকের দিকে মিষ্টি করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে। উত্তর শোনার অধীর ইচ্ছায়, মনের ভেতরটা তোলপাড় হয়ে ওঠে। বলে ফেল না একবার, এত সুন্দর করে সেজে এসেছে শুধু স্যামন্তকের জন্য। তাও কেন এতো দেরি করছে বলতে। একি, কেন হটাৎ করে মুখ নিচু করে বসে আছে। বুকের মাঝে এক চিলতে রক্ত ছলাৎ করে উঠল, তাহলে কি স্যামন্তক আবার প্রতারণা করবে ওর সাথে? ওকি এটা বলতে এসেছে। টান টান হয়ে যায় বন্দনা, মুখ নিচু করে বসে কেন স্যামন্তক, কিছু বলছে না কেন।
“কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে তো?” ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা, বুকের মাঝে রক্ত উথাল পাতাল হয়ে আন্দোলন করছে, উত্তর চাই এখুনি না হলে এই সাজ, এই শৃঙ্গার সব মিথ্যে। অধীর উদ্বেগে তাকিয়ে দেখে
স্যামন্তকের চোখের কোণে একফোঁটা জল চিক চিক করছে। মাথার মধ্যে রক্ত চলাচল বন্দ হয়ে যায়। কাঁদ কাঁদ গলায় জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে তোমার?” হাত দুটি চেপে ধরে। স্যামন্তকের হাত দুটি অত্যধিক ঠাণ্ডা মনে হয়। “আমি আর এখানে বসতে চাইনা আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে চল যেখানে শুধু তুমি আর আমি। আমি জানতে চাই তোমার কি হয়েছে।”
হটাৎ করে এমন হয়ে গেল স্যামন্তক, এমনটি তো হবার কথা নয়। কিন্তু কি করে জানাবে যে দিল্লীতে চাকরি হয়েছে, কোলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এই সংবাদ শুনে বন্দনা কি রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটা একবার মনে মনে এঁকে নিতে প্রবল চেষ্টা করে স্যামন্তক। প্রানের নর্তকী ওর চেয়ে দেড় বছরের বড়, সুতরাং একটু বিচক্ষণ হবে নিশ্চয়। বন্দনা ঠিক বুঝবে যে দু’জনার ভালর জন্য, আগামি দিনের প্রস্তুতির জন্য ওকে যেতে হবে। বুক ভরে একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, ঠিক যেন গভীর সমুদ্রে ডুব দেওয়ার আগের প্রস্তুতি।
“আমি দিল্লির কাছে, গুরগাঁও একটা আই.টি. কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি, কাল বিকেলে ফ্লাইট।” এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে বন্দনার দিকে, প্রানের নর্তকীর প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য।
কথা শুনে একটু থমকে যায় বন্দনা, চুপ করে বসে থাকে, দশ দিন হয়ত ঠিক ভাবে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরতে পারেনি, এর মধ্যে চলে যেতে হবে ওকে। হাত দুটি গুটিয়ে নেয়, কাজলে আঁকা চোখ দুটি জলে ভরে যায়। চারপাসের লোকের আওয়াজ কান পর্যন্ত পৌঁছয়না বন্দনার। পৃথিবীটা হটাৎ করে অবিশ্বাসঃ ভাবে নীরব মনে হয়। মনে হয় ওর স্বপ্ন দ্বিতীয় বারের জন্য চুরমার হতে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায়, মাথা নিচু করে বসে থাকে, দু’চোখের কোল দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
“আমি এখানে আর বসতে চাই না, আমি বাড়ি যাবো।” কাঁদ কাঁদ গলায় বলে বন্দনা।
—“কাবাবের অর্ডার দেওয়া হয়ে গেছে।”
—“তুমি খাও, আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।”
কাবাব আসার পড়ে, কোনও রকমে খুঁটে খুঁটে দু’এক টুকরো মুখে পুরে বন্দনা বলল “বাড়ি যাবো।”
স্যামন্তক মনের ভাব টা বুঝতে পারে, কিন্তু নিরুপায়, যেতে হবে এবং মানাতে হবে আকাঙ্খিতা কে। প্রানের রমণীর চোখে জল নিয়ে কিভাবে অত দুরে থাকবে।
সারাটা রাস্তা চুপ করে, বাইকের পেছনে বসে, স্যামন্তককে জাপটে ধরে থাকে বন্দনা। মনে কত আসা নিয়ে এসেছিল, স্যামন্তক আজ ওকে জানিয়ে দেবে কত ভালবাসে, তার বদলে শুনাল বিচ্ছেদের সংবাদ। এমন ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকে যেন ছাড়াতে গেলে বন্দনার শরীর ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। বাড়ির সামনে বাইক থামানর পরে, নামার ইচ্ছে করেনা বন্দনার। এই রকম ভাবে জড়িয়ে ধরে যদি চলে যাওয়া যায় ওর সাথে, প্রানপন চেষ্টা চালায় নিজেকে ওর পিঠের সাথে মিলিয়ে দিতে, এক করে দিতে দুই শরীর। নিজেকে তরল করে নিয়ে ওর বুকে প্রলেপ হয়ে যেতে প্রবল ইচ্ছে করে।
মৃদু স্বরে বলে স্যামন্তক “বনা, বাড়ি এসে গেছে।”
ঠোঁট কামড়ে ধরে বন্দনা, এই প্রথম বার, একটি ছোট্ট দুষ্টু মিষ্টি নামে ডাক দিল স্যামন্তক, বনা। ফুঁপিয়ে ওঠে, ঘাড়ের কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে বনা “না নামবো না।”
—“প্লিস এই রকম ভাবে কাঁদেনা, বনা। আমি রোজ দিন ফোন করব, কথা দিচ্ছি।”
কলারে নাক চোখ ঘষে একাকার করে দেয়, চোখের কাজল শার্টের কলারে লেগে যায় “সত্যি বলছ?”
—“হ্যাঁ, এবারে নামো।”
ধিরে ধিরে নেমে সামনে এসে দাঁড়ায় বন্দনা। স্যামন্তক বাইক থেকে নেমে, ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলে “ভেতরে চল।” ঠিক সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে বন্দনার হাত ধরে টান দেয় স্যামন্তক। আছড়ে পড়ে বন্দনা, স্যামন্তকের বুকের ওপরে, খামচে ধরে শার্টের সামনেটা। স্যামন্তক দু’হাতে বন্দনার পাতলা কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের প্রসস্থ বুকের ওপরে টেনে নেয়। স্যামন্তকের মাথাটা যেন অনেক ওপরে মনে হয়, শার্টের কলার ছেড়ে, দু’হাতের দশটা আঙ্গুল দিয়ে মাথার চুল খিমচে ধরে, নিজের ঠোঁটের ওপরে টেনে নেয় ওর মুখ। গোলাপের পাপড়ির মতন কোমল লাল ঠোঁট দুটি চেপে ধরে, আলতো করে একটা কামর বসিয়ে দেয় স্যামন্তকের নিচের ঠোঁটে। ভাবাবেগ উপচে পড়ে, মত্ত হরিণীর ন্যায় চিবোতে থাকে ঠোঁট, পাগল হয়ে যাবে বন্দনা। দীর্ঘ থেকে দ্রীঘায়িত করার প্রবল চেষ্টা চালায় বন্দনা, এই চুম্বন যেন শেষ না হয়, কবে আবার বুকের মাঝে ফিরে পাবে মনের মানুষ টাকে, জানেনা। চুম্বনে চুম্বনে জর্জরিত করে তোলে স্যামন্তক প্রান প্রেয়সীর অধর ওষ্ঠ, শুষে নেয় মুখ গহ্বরের সুধা।
অনেকক্ষণ ধরে দু’জনা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, তারপরে স্যামন্তক নিচু স্বরে বলে “আমাকে যেতে হবে, আর একদম কাঁদবে না, আমি কাল রাতে দিল্লি পৌঁছে ফোন করব। তুমি যেন এয়ারপোর্ট আসতে যেওনা তাহলে এক কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।” সিক্ত নয়নে বিদায় জানায় বন্দনা, তার হৃদয়টাকে যেন কেউ খুবলে নিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে।
সারা রাত ঘুমোতে পারেনা বন্দনা, বালিশ আঁকড়ে পড়ে থাকে। বুকের মাঝে তোলপাড় করে ওঠে রক্ত, আজ পর্যন্ত দু’জন এসেছে ওর জীবনে, দুজনেই কারন বশত দুরে চলে গেছে। এক জন চিরকালের জন্য, যেটা ভুলে যেতে চায়। এক জন কাল চলে যাবে, সেই কি পুরানো কালচক্র আবার ঘুরে ফিরে এক জায়গায় এসে দাঁড়াবে? আবার কি মানুষ চিনতে ভুল করেছে? স্যামন্তক যদি দিল্লী গিয়ে অন্য কাউকে দেখে ওকে ভুলে যায়, তাহলে আর বেঁচে থেকে কি লাভ? বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত কাটিয়ে দেয়।
বিকেল বেলা, বোর্ডিং পাস পাওয়ার পরে ফোন করে বন্দনা কে “বনা, আমি দিল্লী নেমেই ফোন করবো।”
ফোনে স্যামন্তকের গলার আওয়াজ শুনে মনটা ব্যাকুল হয়ে যায়। কানের সাথে প্রানপনে চেপে ধরে রিসিভারটা, একবার যদি বিদ্যুৎ হয়ে এই তার দিয়ে ওর কাছে চলে যেতে পাড়ত কত ভালো হত “আই উইল মিস ইউ ভেরি মাচ।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে বন্দনার।
দিল্লী নেমেই ফোনে জানিয়ে দেয় বন্দনাকে যে ঠিক করে পৌঁছে গেছে। গুরগাঁওএ বেশ বড় একটি আই.টি. কোম্পানিতে চাকরি পায়। ওখানেই সেক্টর 32 তে কয়েক জন অফিস কলিগের সাথে একটা মেস ভাড়া করে থাকে। কোলকাতা থেকে দিদির প্রেসেন্ট করা বাইক নিয়ে এসেছিলো, তাই অফিস আর মেস জাতায়াত করতে কোন অসুবিধা হয় না। তবে এই প্রথম কলকাতার বাইরে এসে মানিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছিল। বাজারে সবে নতুন রঙ্গিন স্ক্রিনওয়ালা মোবাইল ফোন এনেছে নোকিয়া। প্রথম মাসের মাইনে পেয়ে একটা মোবাইল ফোন কেনে।
দিদিকে ফোন করে জানায় নতুন মোবাইলের কথা “জানিস আজ মোবাইল কিনলাম।”
ভাইয়ের জন্য মনটা খারাপ লাগে। একা একা বাইরে থাকে, কি খায় কখন বাড়ি ফেরে। এতদিন তো কাকু কাকিমার কাছে আর ওর কাছে থেকে মানুষ হয়েছে। গলা ধরে আসে “কখন বাড়ি ফিরেছিস, কেমন আছিস? মেসে ঠিক মতন খেতে দেয়?”
গলা ভারী শুনে স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে “কিরে, তুই এতো ইমোশানাল হয়ে গেলি কেন?”
ওপারে চোখের কোল মুছতে মুছতে পূবালী বলে “তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছেরে।” বলেই কেঁদে ফেলে।
স্যামন্তক বুঝতে পারেনা কি বলবে দিদিকে, কি বলে শান্ত করবে, মনের ভেতর থেকে মুচড়ে একটা কান্না বেড়িয়ে আসে। এর পড়ে যদি আবার বন্দনা কে ফোন করে বলে তাহলে মেয়েটা আবার গলে পড়বে।
বন্দনা নিজের জমানো টাকায় একটা মোবাইল কেনে, যদিও কলকাতায় মোবাইলের ওতটা চল হয়নি, তবে মোবাইল হাতে দেখলে লোকেরা বেশ সম্ভ্রান্ত বলে ভাবে। প্রথম মাসে প্রত্যেক দিন ফোন করত স্যামন্তক। কাজের চাপে সেটা ধিরে ধিরে কমে গিয়ে এক দিন বাদে বাদে হয়ে ওঠে। বন্দনা উতলা হয়ে পড়ে শুধু ফোন আসার জন্য। নিজে যদি ফোন করে তাহলে কোন কোন সময় কেটে দিত কাজের চাপে। রেগে আরো দু’দিন কথা বলা বন্দ থাকতো দু’জনার মাঝে। এই ভাবে মানে অভিমানে কেটে যায় মাস দুয়েক। দিদিকে এখন বন্দনার বিষয় জানায়নি, স্যামন্তক। একটা ভয়ে আছে মনে মনে, যে দিদি শুনলে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে। আগে অনেক বার বারন করেছিল বন্দনার পেছনে যেতে, তখন সময় ছিল ভিন্ন এখন সময় ভিন্ন।
ঠিক পুজোর আগে পূবালী ফোন করে একদিন রাতে “এই জানিস একটা ভাল খবর দেবার আছে তোর কাছে।”
একদিকে বন্দনার ফোন আসেনি দু’দিন ধরে, রেগে আছে ওর প্রানের বনা, কেননা পুজোতে বাড়ি যেতে পারছেনা বলে। সবে চাকরিতে ঢুকেছে, ছুটি পাওয়া মুশকিল। একটু খানি বিষণ্ণ সুরে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে বল।”
আওয়াজ শুনে ধরে ফেলে পূবালী যে ভাইয়ের কিছু একটা হয়েছে, যেটা অনেক দিন ধরে চলছে, কিন্তু কিছুতেই মুখ খুলছে না। এবারে দিল্লী গিয়ে সব কিছু ভালো ভাবে জানতে হবে।
পূবালী বলে “তোর জামাইবাবুর দেরাদুন হেডঅফিসে ট্রান্সফার হয়েছিলো তো সেটা না নিয়ে দিল্লীতে পোস্টিং নিয়েছে। লক্ষীনগরে অফিস, এবারে তুই আমার কাছে থাকবি।” দিদির গলায় খুশির আবেগ।
খবরটা শুনে আনন্দে ফেটে পড়ে স্যামন্তক “সত্যি বলছিস? মার কাটারি এবারে সিতাভ্রদার মাথাটা বেশ ভালো করে খাব।”
—“হ্যাঁ সত্যি। পুজোর পড়ে আমরা সিফ্ট করছি। একটা ফ্লাট দেখে রাখিস তো, যেখান থেকে তোর অফিস আর সিতাভ্রর অফিস কাছাকাছি হবে।”
মাথা চুলকোয় স্যামন্তক “আরে, আমি তো গুরগাঁও থাকি আর সিতাভ্রদার অফিস তো পুরো উলটো দিকে। আমি মেসে ভালো আছি, তোর জন্য নাহয় নয়েডা তে ফ্লাট দেখে দেব।”
রেগে যায় পূবালী “পাগল নাকি তুই? আমি দিল্লী থাকব আর আমার ভাই আমার কাছে থাকবেনা? আমরা দিল্লীর ম্যাপ দেখেছি। শোন নেক্সট উইকে সিতাভ্র দিল্লী যাচ্ছে, সি.আর.পার্কে একটা ফ্লাট দেখিস। কম্পানি লিজ দেবে চিন্তা কি।”
পুজোতে বাড়ি ফেরা হয়নি স্যামন্তকের, তাই নিয়ে বন্দনার খুব মন খারাপ। এমনিতে ছেলেটা আজকাল একদিন পর পর ফোন করে, তবে হ্যাঁ, ফোন করলে অনেকক্ষণ ধরে কথা বলে, যেন সারা দিনের ডায়রি খুলে বসে পড়ে। ফোনে কথা না বললে যেন রাতের ঘুম হয় না। বন্দনা একরকম, সবকিছু ছেড়েছুড়ে ঘরে বসে, নাচে আর মন বসে না, কিছুতেই আর মন বসে না। বাবা মা বিয়ের কথা বললেই, বলে যে আর বিয়ে করবে না। সত্যি কথাটা জানানর আগে স্যামন্তকের উদেশ্যটা জানার প্রয়োজন। এক বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে দিল্লী গিয়ে ভুলে যায়নি স্যামন্তক, কিন্তু অন্য কিছু তো হতে পারে যা পূর্বে ঘটেছিল ওর সাথে। মাঝে মাঝে কেমন ভয় ভয় করে বন্দনার, আর সেদিন স্যামন্তক শত কথা বলেও বুঝিয়ে উঠতে পারেনা ওকে।
ঠিক পুজোর পড়ে পূবালী আর সিতাভ্র দিল্লী সিফ্ট করে। কম্পানি লিজে বেশ বড় একটা, তিন বেডরুমের ফ্লাট ভাড়া নেয় দিল্লীর নামকরা এক বাঙালি পরিবেষ্টিত জায়গায়। সিতাভ্র একটা গাড়ি কিনে ফেলে, হুন্ডাই এসেন্ট। স্যামন্তক গুরগাঁও এর মেস ছেড়ে চলে আসে দিদির সাথে থাকতে। পূবালীর কাজ বেড়ে যায় রোজ সকালে দু’দুটো টিফিন, তারপর বাড়ির কাজ। ভাইটা এমনিতে নিজের ঘরটাকে যা নোংরা করে রাখে তাতে রোজ দিন ঝগড়া হয়। অফিস থেকে ফিরে জুত ছুঁড়ে একদিকে ফেলে, জামাটা কোনদিন সোফায় পড়ে থাকে, কোনদিন ডাইনিং টেবিলে। বাইকের চাবি খুঁজে খুঁজে কি হোল্ডারে ওকেই ঝোলাতে হয়। তারপরে আবার রাত জেগে ফিসির ফিসির করে কার সাথে কথা বলে কে জানে। ভাই প্রেম করবে সেটা ওর জানা, কিন্তু ওর কাছে থেকে লুকিয়ে, আগে কোনদিন এইরকম ভাব দেখেনি।
সন্দেহ হয় একদিন, রাতে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে জিজ্ঞেস করে “এই শামু, রাতে কার সাথে অত কথা বলিসরে তুই?”
ধরা পড়ে গেছে স্যামন্তক, কি করে বলে আমি তোর বান্ধবীর সাথে প্রেম করছি। সিতাভ্র একবার তাকায় স্যামন্তকের দিকে তারপরে খাবার দিকে মন দেয়, পারতপক্ষে ভাইবোনের কথার মাঝে আসতে চায়না। রোজ সকালে এক চোট মারামারি করে স্যামন্তক অফিসে বের হবে আর বিকেলে অফিস থেকে ফিরে দেখবে যে ভাইয়ের মাথায় তেল লাগাতে বসে গেছে দিদি। তাই সিতাভ্র বুঝে গেছে যে এদের দ্বারা কিছু হবে না, এরা মারামারি করে মাথা ফাটিয়ে নিজেদের ভালবাসা দেখায়।
স্যামন্তক আমতা আমতা করে উত্তর দেয় “কিছু না, আমার অফিস কলিগ।”
সিতাভ্র কানে কানে ফিস্ফিসিয়ে বলে “শালা, বলে দাও নাহলে সকাল বেলা আবার ঝ্যাঁটার বাড়ি খাবে।”
স্যামন্তক ভেবে কূলকিনারা পায়না, কি করে দিদির সামনে কথাটা পারবে যে বন্দনা কে ভালবাসে।
বন্দনাকে রাতে ফোন করে স্যামন্তক “বনা, দিদি কিছু আঁচ করেছে।”
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে বন্দনা “তো, একদিন তো জানাতে হবে নাকি।”
—“কি করে বলি সেটা আমি বুঝে পাচ্ছি না।”
—“সেটা তো আমার জানার নয়, আর তুমি আমার নামে যা বলেছ পূবালী কাছে তারপড়ে আমি কি করে ওকে ফোন করি বলত?”
রেগে ওঠে স্যামন্তক, কতবার করে বলেছে যে দিদিকে কিছুই জানায়নি তাও বনা শুনবেনা “কতবার বলেছি যে আমি কিছুই জানাইনি দিদিকে তাও তুমি শুনবে না তাই তো?”
একটু ক্ষুণ্ণ মনে বলে বন্দনা “আমি কিছু জানিনা। বাবা মা আমার জন্য ছেলে দেখছেন। সেটা মাথায় রেখে যা করবার করো। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাইনা।”
একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় স্যামন্তক, কিছুতেই ভেবে কোন উপায় বার করতে পারেনা যে কি করে দিদিকে জানাবে “ওকে আমি দেখছি। গুড নাইট।”
চলবে....