12-03-2020, 08:01 PM
(Update No. 150)
পরিতোষ সীমন্তিনীর কথা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “ওকে, তুমি লাইনে থাকো মন্তি। আমি আমার নোটবুকটা দেখে আসল হিসেবটা তোমাকে জানাচ্ছি। কিন্তু ডার্লিং, যে কথাটা এতদিন তুমি জানতে চাওনি, সেটা আজ হঠাৎ করেই জানতে চাইছ কেন বলো তো”?
সীমন্তিনী বলল, “সরি পরিতোষ, আর আমাকে লজ্জা দিও না প্লীজ। আমি তো স্বীকার করেই নিয়েছি যে আমি চরম স্বার্থপরের মত কাজ করেছি। কিন্তু এতদিন তো আমি একা ছিলুম। নিজে কোথায় ভুল ত্রুটি করছি তা দেখিয়ে দেবার মত কেউ আমার পাশে ছিল না। কিন্তু এখন আমার দু’পাশে দুটো বোন আছে। তাদের সাথে আলাপ করতে করতেই কথাটা উঠে এল”।
পরিতোষ এবার বলল, “হু, বুঝেছি। কিন্তু তোমার বোনদের বুঝিয়ে দিও যে এগুলো কিন্তু হাইলি রিস্কি ব্যাপার। সামান্য ভুল চুক হলেই কিন্তু আমার বড়সড় বিপদ হতে পারে। এ’কথাটা তাদের দু’জনকে বুঝিয়ে দিও প্লীজ। আর হ্যাঁ, তুমি যা জানতে চাইছ সে ব্যাপারে বলি। দিবাকরের কেসে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ। ওর কাছ থেকে আদায় হয়েছিল সাড়ে পাঁচ লাখ। নেট দু’লাখ আমার হাতে এসেছিল। আর রবির কেসে মোট খরচ হয়েছিল সাড়ে দশ লাখ। আদায় হয়েছিল চৌদ্দ লাখ। তাই সেখান থেকে নেট আমার হাতে এসেছিল সাড়ে তিন লাখ। এই দু’অপারেশন থেকে পাওয়া সাড়ে পাঁচ লাখের ভেতর তুমি যখন কলকাতায় এসেছিলে তখন মোট তিয়াত্তর হাজার খরচ করতে হয়েছিল। বাকি চার লাখ সাতাত্তর হাজার বৌদির একাউন্টে জমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা তো তুমি জানোই”।
সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “তার মানে ওই দুটো অপারেশনে মোট চৌদ্দ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল? বাপরে! এত টাকা তুমি কোত্থেকে কী করে যোগালে পরি”?
পরিতোষ এবার একটু হেসে জবাব দিল, “এ ধরণের আনঅফিসিয়াল অপারেশন শুরু করবার আগেই অনেক কিছু নিয়ে প্ল্যানিং করতে হয় ডার্লিং। প্রথমে ইনফর্মার কাজে লাগাতে হয়। মোডাস অপারেন্ডি ঠিক করতে হয়। তারপর দিন ক্ষণ তারিখ আর স্থান ঠিক করতে হয়। এরপর ঠিক করতে হয় ম্যান পাওয়ার। আর সবার শেষে বানাতে হয় বাজেট। আর এ বাজেট বানাতে সব রকম খরচ খরচার কথা ভেবে দেখতে হয়। অনেক সময় অনেক কিছু কিনতে বা ভাড়া নিতে হয়। কতজন ইনফর্মার কাজে লাগাতে হচ্ছে, তাদের কত দিতে হবে, কনভেয়ান্সের খরচ সব কিছু হিসেব করতে হয়। যাদেরকে একশনে লাগানো হয় তাদের বাইরেও অনেকের কাছ থেকে নানারকম সাহায্য নিতে হয়। তাদেরকেও রিমিউনারেশন বা উপহার হিসেবে অনেক কিছু দিতে হয়। নইলে তারা আমার কাজে আমাকে সাহায্য করতে যাবে কেন? দিবাকরের ওই কেসটাতে সব মিলে সাতজনকে রিক্রুট করা হয়েছিল। এছাড়া একজন দালালের সাহায্যও নিতে হয়েছিল। একটা গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছিল দু’দিনের জন্য। গাড়ির মালিককে পঞ্চাশ হাজার দিতে হয়েছিল সেই জন্যে। আর তাই সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিছু কিছু অপারেশন এমনও হয় যে বাইরের সাপোর্টের প্রয়োজন হয় না। একাই সামলে নেওয়া যায়। যেমন ধরো নীতার কেসটা। ওকে কোনরকম ঝুঁট ঝামেলা ছাড়াই তুমি নিয়ে যেতে পেরেছ বলে বাইরের কাউকে কাজে লাগাতে হয়নি। কিন্তু তখন যদি দু’চারজনকে কাজে লাগাতে হত তবে তাদের তো টাকা পয়সা দিতেই হত। আর সে খরচটা কোত্থেকে কীভাবে আসবে, তারও রাস্তা খুঁজে বের করতে হত। সবটাই ডিপেণ্ড করে টাইপ অফ অপারেশন, প্ল্যানিং আর মোডাস অপারেন্ডির ওপর। যেমন রবিশঙ্করের কেসে দিবাকরের কেসের চেয়ে বেশী ম্যানপাওয়ারের প্রয়োজন হয়েছিল। আর আনুষঙ্গিক যাতায়াত খরচা, বুকিং এজেন্টের কমিশন, কিছু ক্যামেরা, কম্পিউটার ভাড়া, হোটেল খরচা, যাতায়াত খরচা, একটা ঘর ভাড়া, আরো অনেক রকমের খরচ করতে হয়েছিল। মেইন একশনে দুটো টিমের মোট এগারোজনকে অ্যাকশনে নামাতে হয়েছিল। আটজন ইনফর্মারকে কাজে লাগাতে হয়েছিল। তাই খরচ বেশী হয়েছিল। সাড়ে দশ লাখ টাকা। তবে অপারেশন শুরু করবার পর থেকে শেষ হওয়া অব্দি এর ওর কাছে ধার বাকি রাখতে হয়। কিছু হয়ত নিজের পকেট থেকেও খরচ করতে হয়। কিন্তু সব কিছুই র*্যানসমের টাকা থেকেই চুকে বুকে গিয়েছিল। বাজেট বানাবার পরেই র*্যানসমের এমাউন্টটা ঠিক করতে হয়। তবে দুটো কেসেই খরচ খরচা মিটিয়ে বেশ কিছু বাড়তি হয়েছিল। তাই তোমার দাদাভাই দু’লাখ টাকা খুইয়ে চার লাখ সাতাত্তর হাজার ফিরে পেলেন। তুমি এ নিয়ে আর ভেবো না। আমার কাছ থেকে একটা পয়সাও খরচ করতে হয়নি শেষ পর্যন্ত। আগের দুটো অপারেশনের ইতিহাস এটুকুই”।
পরিতোষের কথা শুনতে শুনতে নবনীতা, অর্চনা আর সীমন্তিনী অবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল বারবার। পরিতোষের কথা শেষ হতে সীমন্তিনী বুকে আটকে থাকা শ্বাস ছেড়ে বলল, “ইশ আমার জন্য তোমাকে কত কিছুই না করতে হচ্ছে পরি? আমি তোমার ওপর খুব জুলুম করে ফেলেছি, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার যে আর কোন উপায়ও ছিল না। কিন্তু পরি দাদাভাই আর রচুর ওপরে তুমি যে দুটো ভিজিল্যান্স টিম নিয়োগ করেছো, তাদেরকেও তো প্রচুর টাকা দিতে হবে। আর এবারে তো র*্যানসমের ব্যাপার নেই। তাহলে কী করে সামলাবে এতকিছু”?
পরিতোষ হেসে বলল, “ভেবো না ডার্লিং। সব সামলে নেব আমি। তবে এতদিন একটা ব্যাপার নিয়ে একটু চিন্তিতই ছিলাম আমি। তোমার দাদাভাইয়ের ওপর যারা নজর রাখছে, তাদের প্রত্যেককে দিনে তিন হাজার হিসেবে কন্টাক্ট করেছি। দেড় মাসের ওপর হয়ে গেল তারা ডিউটি দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আমি তাদের কিছু কিছু পেমেন্ট অবশ্য করে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের পুরো পাওনা গন্ডা মেটাবার ব্যাপারে একটু চিন্তা হচ্ছিলই। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার কেসটা হাতে পেয়েই নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি। আর এবারে অপারেশনের যা ব্লু প্রিন্ট বানিয়েছি তাতে তিনটে টিমের মোট আটাশ বা ত্রিশ জনকে অ্যাকশনে নামাতে হবে। তিনজন সিকিউরিটিকে চার মাসের আর অন্য তিনজনকে দু’মাসের বেতন দিতে হবে। পাঁচ জন ইনফর্মার আগে থেকেই কাজ করছে। আরও দু’একজনকে কাজে লাগাতে হবে। অনেক জিনিসপত্র ভাড়া করতে হবে। দু-তিনটে গাড়ি চার পাঁচটা বাইক আর একটা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে বাজেট হচ্ছে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার মত। বিমল আগরওয়ালার কাছ থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ লাখ তো ছাড়, দু’কোটি টাকাও আদায় করতে পারব। তাই টাকার যোগান নিয়ে কোন সমস্যাই নেই। মোট কথা, আমার সব কেসের মত এ কেসেও গঙ্গাজলেই গঙ্গাপূজো করব। তুমি ও নিয়ে একদম ভেব না”।
সীমন্তিনী এবার ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “আমি আর ভাবতে পাচ্ছি না পরি। তোমার কথা শুনে আমার মাথা ঘোরাচ্ছে। চল্লিশ লাখ টাকা খরচ হবে! আর তুমি এর সবটাই আদায় করবে বিমলের কাছ থেকে”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “এই জন্যেই তো আমি এতদিন এসব কথা তোমাকে বলিনি ডার্লিং। পয়সা ছাড়া এ দুনিয়ায় কিচ্ছুটি করতে পারবে না তুমি। তাই তো আমাদের মত লক্ষ লক্ষ পুলিশ অফিসার কেবল নিজেদের মাসিক বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। পরিবারের সকলের সব চাহিদা তারা পূরণ করতে পারে না। আর এ’জন্যেই তারা ঘুস খেতে শুরু করে। একটা মহৎ কাজ করতেও পয়সার প্রয়োজন হয়। আর আমি অফিসিয়াল ডিউটির বাইরে যা করছি, তাতে আমাকেও প্রচুর পয়সা খরচ করতে হয়। সে পয়সা আমি পাবো কোথায়? তাই প্ল্যানিং করে ওই অপরাধীদের কাছ থেকেই সেটা আদায় করে নিই। আর বিমল আগরওয়ালার পয়সার কোন অভাব নেই। এক দু কোটি কেন আমি চাইলে ওর কাছ থেকে দশ কোটি টাকাও আদায় করতে পারি। কিন্তু সেটার কোন দরকার নেই বলেই করছি না। আমার কাজের জন্য যতটুকু দরকার, তার কাছ থেকে ততটুকু পেলেই আমি খুশী। কিন্তু চল্লিশ লাখ টাকা তো আর র*্যানসম হিসেবে চাওয়া যায় না। চাইতে হবে পঞ্চাশ লাখ, নইলে এক কোটি। তাই পঞ্চাশ লাখই টার্গেট করে রেখেছি আপাততঃ। পরে দেখা যাক কী হয়। আর তুমি ওসব নিয়ে চিন্তা করে তোমার সময় আর শক্তির অপচয় কোর না প্লীজ। তুমি তোমার দু’পাশে দু’বোনকে নিয়ে আনন্দে থাকো। তাদেরকেও আনন্দে রাখো। আর আমাকেও ঠিকমত আমার কাজটা করতে দাও। নিজে রান্না বান্না না জানলেও, আমি একটা জিনিস ভাঁজতে জানি খুব ভাল মত। মাছের তেলে মাছ ভাজা। আচ্ছা, আর কথা নয়। একটা ফোন এসেছে অন্য মোবাইলে। তাই ছাড়ছি ডার্লিং এখন। গুড নাইট”।
সীমন্তিনী গুড নাইট বলবার আগেই লাইন কেটে গেল।
****************
মিসেস সবিতা আগরওয়ালা বেশ পরিপাটি করে সেজে গুঁজে বাড়ির গ্যারেজ থেকে নিজেই একখানা বিদেশী গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে একটা মাঝারী সাইজের হোটেল কাম রেস্টুরেন্টে গিয়ে পৌঁছল বিকেল প্রায় ছ’টা নাগাদ। এই বিল্ডিংটার গ্রাউন্ড ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট। আর দোতলা এবং তিন তলায় বোর্ডারদের ভাড়া দেবার জন্যে মোট চৌদ্দটা রুম আছে। ২০০৯ সালে দোতলার একদম কোনার দিকের একটা ডাবল বেডেড এসি রুম সবিতা মাসিক চুক্তিতে পাকাপাকি ভাবে ভাড়া নিয়ে রেখেছে। বিনিময়ে তাকে তখন মাসে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা হোটেলে জমা দিতে হত। পয়সার তো তার আর অভাব নেই। ব্যাঙ্কে তার নামে নিজস্ব একাউন্ট আছে। আর তার স্বামী প্রতি সপ্তাহের শুরুতে সে একাউন্টে দু’লাখ টাকা করে জমা করে দেয়। ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সে তার যখন যা প্রয়োজন হয় তুলে নেয়। আর এ টাকা খরচ করবার কোন হিসেবও কাউকে দিতে হয় না তাকে। অবশ্য তার কয়েক মাস বাদেই রুম ভাড়ার ব্যাপারটা বদলে গিয়েছিল।
পার্মানেন্ট গ্রাহক হবার সুবাদেই হোটেলের ম্যানেজারের সাথে সবিতার বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে। তবে এ বন্ধুত্ব সাধারণ বন্ধুত্ব নয়। এ বন্ধুত্বের ভিত হচ্ছে আর্থিক দেনা পাওনা। হোটেলের ম্যনেজার সবিতার এক ছোটোখাটো লেভেলের অলিখিত এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তবে এই আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটা কিন্তু তাদের দু’জনের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। ম্যানেজারের সাথে আসল লেনদেন হয় তৃতীয় কোন একজনের সাথে। সেখানে সবিতা শুধুই ম্যানেজারের এক মাধ্যম। ছোট হোটেল। তাই তার পসারও কম। লোকজনের ভিড়ও কম। তবে হোটেলের রেস্টুরেন্টে বেশ ভাল লোক সমাগম হয়।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে সবিতা রোজকারের মত আজও প্রথমেই ম্যানেজারের কাঁচে ঘেরা কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। কেবিনের ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারকে সে জিজ্ঞেস করল, “কোনও খবর আছে”?
ম্যানেজার সবিতার দিকে বিস্মিত চোখে চেয়ে জবাব দিল, “এ কি ম্যডাম? আপনি তো বলেছিলেন যে আজ আর ......”
সবিতা তাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে বলল, “ওটা আমার ভুল হয়েছিল। যেটা আশা করেছিলাম, সেটা হল না বলেই তো চলে এলাম। তা বলুন তো, কোনও খবর টবর সত্যিই কিছু আছে”?
ম্যানেজার স্মিত হেসেও একটু দ্বিধার সাথে জবাব দিল, “না ম্যাম, এখন তো তেমন কোনও খবর নেই। আসলে আপনার পছন্দের একজন হাতে ছিল ঠিকই। কিন্তু আপনি আসবেন না শুনেই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তাই আজ আপনি ফ্রি। তবে আপনার রুম সার্ভিসিং করা আছে”।
সবিতা একটু হতাশ হয়ে বলল, “একেবারেই কিছু নেই”?
ম্যানেজার আবার হেসে বলল, “একেবারেই যে নেই, তা ঠিক নয় ম্যাডাম। কিন্তু যা আছে, সে’সব যে আপনার পছন্দের তালিকায় পড়ে না”।
সবিতা একই রকম হতাশার সুরে বলল, “ওঃ, ঠিক আছে, আমি তাহলে রেস্টুরেন্টেই বসছি কিছুক্ষণ।” বলে কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে এল।
রেস্টুরেন্টের ভেতরটা বেশ বড়সড়। খোলা হলঘরের ভেতর কুড়িটা গোলাকার টেবিল গ্রাহকদের জন্য পেতে রাখা। টেবিলের চারপাশ সুন্দর মখমলের কাপড় দিয়ে ঘেরা। প্রত্যেকটা টেবিলের চারপাশে চারটে করে সুদৃশ্য এবং আরামদায়ক চেয়ার। হলঘরের এক ধার বরাবর আটটা পর্দা ঘেরা ছোট ছোট কেবিন। প্রত্যেকটা কেবিনে ছোট্ট আয়তাকার একেকটা টেবিলের দু’পাশে দু’টো টু-সীটার সোফা। যেসব গ্রাহকেরা যুগলে এসে খাবার খেতে খেতে কিছুটা নিভৃতে রোমান্টিক মূহুর্ত কাটাতে চায়, এসব কেবিন গুলো তাদের জন্যই। বলাই বাহুল্য, বাইরের খোলা হলঘরের তুলনায় এই কেবিনগুলোতে বসে খেতে চাইলে গ্রাহকদের পকেট অনেক বেশী হাল্কা করতে হয়। এই মূহুর্তে সব ক’টা কেবিনের দরজাই পর্দা ঢাকা। তার মানে, সব ক’টা কেবিনেই এখন গ্রাহক আছে। অবশ্য সবিতা কখনোই এ’সব কেবিনে ঢোকে না। আসলে ঢোকবার প্রয়োজনই পড়ে না তার। কোন পছন্দসই সঙ্গী জুটলে সে দোতলায় নিজের ভাড়া করা রুমেই চলে যায় তাকে নিয়ে। আর খাবার দাবারের অর্ডার থাকলে বয় বেয়ারারা দোতলার ওই রুমেই সেসব পৌঁছে দেয়।
আজ যেহেতু ম্যানেজারের কাছে কোন সুখবর নেই, তাই সবিতা রেস্টুরেন্টের শেষ সাড়ির নির্দিষ্ট কুড়ি নম্বর টেবিলে তার নির্ধারিত সীটে এসে বসল। এমনটা এর আগেও বহুবার হয়েছে যে ম্যানেজার তাকে কোন সুখবর দিতে পারেনি। আর সে এমনিভাবে রেস্টুরেন্টের এই টেবিলে বসে থাকতে থাকতে নিজের প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবার চেষ্টা করে গেছে। মাঝে মাঝে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটতো। আবার মাঝে মাঝে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরেও যেতে হয়েছে তাকে। আজও তাকে অমন প্রতীক্ষাই করতে হবে। কে জানে তার প্রতীক্ষার আজ অবসান ঘটবে কি না। তবে সবিতার টেবিলের বাকি তিনটে সীটও এ মূহুর্তে খালি। রাগ হচ্ছে নিজের ছেলে বিকির ওপর। ছেলেটা কলেজ থেকে ফিরে বাড়িতেই এল না আজ। কে জানে কোথায় কার সাথে সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু সকালে কলেজে যাবার আগে ছেলে মাকে কথা দিয়ে গিয়েছিল যে কলেজ থেকে সে আজ তাড়াতাড়িই ফিরবে। আর বাড়ি এসে তার মাম্মির সাথে অনেকটা সময় কাটাবে। ছেলে তার সাথে থাকলে সবিতার আর কিছুই চাই না। বছর দেড়েক আগে থেকে তাদের মা-ছেলের সম্পর্কটা একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাবার পর থেকেই ছেলের সান্নিধ্যে সবিতা স্বর্গসুখ পায়। ছেলে সকালে ওভাবে বলে যাবার পর সবিতা মনে মনে আশা করেছিল যে বিকি আজ তিনটে সাড়ে তিনটের ভেতরেই হয়তো বাড়ি ফিরে আসবে। অধীর আগ্রহে সে ছেলের প্রতীক্ষায় ছিল। কিন্তু পাঁচটা বেজে যাবার পরেও ছেলে বাড়ি ফিরলোনা দেখে সে ছেলের মোবাইলে ফোন করেছিল। তিন চারবার নো রেসপন্স হবার পর পঞ্চম বারে ছেলের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। ছেলে তখন হাঁপাতে হাঁপাতে তার মাকে বলেছিল যে সে এক বন্ধুর বাড়িতে বিশেষ একটা কাজে আটকে পড়েছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে তার আটটা ন’টা বেজে যেতে পারে। ছেলে বাড়ি ফিরছে না শুনে সবিতার মেজাজটা বিগড়ে গিয়েছিল। ছেলে যে কোন বিশেষ কাজে আটকে পড়েছে, সেটা সবিতার বুঝতে একেবারেই অসুবিধে হয়নি। ছেলের অশান্ত লয়বিহীন শ্বাস প্রশ্বাসই তাকে সে’কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে তাই সে সেজেগুজে এখানে এসেছে। অবশ্য এখানে আসাটা তার নিত্যকার ঘটণা। রোজই সে বিকেল পাঁচটা নাগাদ এখানে আসে। কিন্তু ছেলে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলাতেই সে আজ তার অপেক্ষায় ছিল বাড়িতে। মনে মনে ভেবেছিল ছেলে যদি সত্যিই তার সাথে বিকেল আর সন্ধ্যেটুকু কাটায়, তাহলে আজ আর তাকে হোটেলে যেতে হবে না। সে’কথা ভেবেই সবিতা ম্যানেজারকে সকাল বেলাতেই জানিয়ে দিয়েছিল যে সে আজ হোটেলে আসছে না। কিন্তু শেষ মূহুর্তে তার আশায় ছেলে জল ঢেলে দিল বলেই তার মনটা বিরক্তি আর অস্বস্তিতে ভরে উঠেছিল। ছেলে আর এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছে না, এটা বুঝেই দেরী হওয়া সত্বেও সে হোটেলে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু ম্যানেজারের কথা শুনে তার মেজাজটা আরও বিগড়ে গেছে। ছেলের ওপর তার রাগ আরও বেড়ে গেল। নিজে তো কথা দিয়েও মায়ের কাছে এলই না, আবার তার পছন্দের একটা খাবারও তার হাত থেকে ফস্কে গেল।
পরিচিত বেয়ারাদের একজন তার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়াতেই সে ফ্রুট স্যালাড আর কোল্ড ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিল। আর মনে মনে বিগত কয়েকটা বছরে তার জীবনে কত পরিবর্তন এসেছে সে কথা ভাবতে লাগল।
খাবার সার্ভ হবার আগেই হোটেলের ম্যানেজার সবিতার কাছে এসে দাঁড়িয়ে খুব নিচু গলায় বলল, “ম্যাডাম রাত আটটা থেকে দু’ঘন্টার জন্যে একটা স্লট আছে। আপনার পছন্দের ক্যাটাগরি। নেবেন কি”?
সবিতা পরিষ্কার নিচু গলায় জবাব দিল, “আটটা থেকে দু’ঘন্টা? না ম্যানেজারবাবু, সেটা করতে পারব না। আপনি তো জানেনই যে আমি রাত ন’টার পর আর বাইরে থাকি না। একঘন্টার স্লট হলে ব্যবস্থা করুন। আর যদি দু’ঘন্টার জন্যেই চায়, তাহলে আটটার জায়গায় সাতটা থেকে শুরু করতে বলুন। আমি রাজি আছি”। ম্যানেজার আর কোন কথা না বলে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেল।
ম্যানেজার চলে যেতে সবিতা ভাবতে শুরু করল নিজের অতীত জীবনের কথা। তার স্বামী বিমলকে সে বিয়ের অনেক আগে থেকেই চিনত। তার বাবার বন্ধুর ছেলে বিমল। কোটিপতি বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে বিমল উঠতি বয়স থেকেই নারী মাংসলোভী হয়ে উঠেছিল। ছাত্র জীবন থেকেই সে বিভিন্ন বয়সী মেয়ে মহিলাদের সাথে শারীরিক সম্মন্ধে লিপ্ত ছিল। অবশ্য ওই সব নারী মহিলার মধ্যে সবিতা নিজেও ছিল। সবিতা যখন কলেজে সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী তখন থেকেই সে নিজেও মাঝে মাঝে বিমলের সাথে সেক্স করত। বিমলকে বিয়ে করবার স্বপ্ন সে কোনদিন দেখেনি। কারন সে আগে থেকেই জানত যে বিমল সবিতা ছাড়াও অনেক মেয়ে মহিলার সাথে সেক্স রিলেশনে আবদ্ধ। বিমল নিজেই তাকে বলত যে তার দেখা সমস্ত মেয়ে মহিলাদের মধ্যে সবিতাই সবচেয়ে সুন্দরী। কিন্তু কামকলার দিক থেকে সবিতা অতটা পরিপক্ক ছিল না। কিন্তু দুই পরিবারের চাপে পড়ে বিমল তাকেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। বিয়ের স্বপ্ন না দেখলেও কোটিপতির ঘরের ছেলের বৌ হতে সবিতাও আপত্তি করেনি। বিমল বিয়ের পরেও যে শুধু তার বৌকে নিয়ে খুশী থাকবে না, সে যে বিয়ের পরেও অন্যান্য মেয়ে মহিলার সাথে তার যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যাবে, এ’সব কথা বিমল বিয়ের আগেই তাকে বলেছিল। তবে বিয়ের কথা যখন উঠেছিল তখন সবিতা পরিস্কার ভাবে বিমলকে জানিয়ে দিয়েছিল যে, বিমলের অন্য মেয়েদের সাথে যৌন সম্পর্ক সে মেনে নেবে যদি বিমল তাকে যৌনতা সহ অন্য সব দিক দিয়ে খুশী রাখবার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে আরও পরিস্কার করে বলেছিল যে বিমল সারাদিন যেখানেই যার সাথে খুশী সেক্স করুক, রাতে ঘুমোবার আগে সবিতাকে পুরোপুরি ভাবে যৌনতৃপ্তি দিতে হবেই তাকে। বিমল সেদিন নিশ্চয়ই ভেবেছিল যে বিয়ে করবার মত এমন পাত্রী সে হাতে প্রদীপ নিয়ে সারা দেশ খুঁজেও দ্বিতীয় একটা কাউকে পাবে না। তাই হয়তো, কামকলায় অত পটু না হওয়া সত্বেও সবিতাকেই সে বিয়ে করেছিল সবিতার শর্ত মেনে নিয়ে। তাদের ফুলশয্যার রাতে বিমল তাকে ভোগ করতে করতে জানিয়েছিল, সেদিন দুপুরে সে তার এক বন্ধুর মা প্রমীলা আন্টির সাথে সেক্স করেছে। প্রমীলা আন্টির সাথে তার স্বামীর সেক্সের বিবরণ শুনতে শুনতে সবিতাও এক অন্য ধরণের উত্তেজনা উপভোগ করেছিল। তাদের বিয়ের পর প্রথম কয়েকটা মাস বেশ সুখেই কাটিয়েছিল সবিতা। রোজ রাতেই বিমলের সাথে তার শারীরিক মিলন হত। কিন্তু আগের মত গর্ভ নিরোধক উপায় অবলম্বন না করার ফলে বিয়ের এগারো মাসের শেষেই সে ছেলের জন্ম দিয়েছিল।
আর ঠিক তার পর থেকেই যেন তার জীবনটা ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে শুরু করেছিল।
সবিতার বর্তমান বয়স পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি হলেও, আর বয়সের ভারে খানিকটা মুটিয়ে গেলেও তার চেহারার জৌলুস এখনও খুব একটা কমে যায় নি। দামী দামী বিদেশী ক্রিম আর লোশন ব্যবহার করবার ফলে তার গায়ের রঙ আর ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এখনও অমলিন আছে। ছেলে হবার পর থেকেই তার শরীরটা ভারী হতে শুরু করেছিল। তখন থেকেই স্বামীর সাথে তার শারীরিক মিলন কমতে শুরু করেছিল। সপ্তাহে বা দু’সপ্তাহে একবার বিমলের সাথে তার মিলন হত। তবু প্রথমদিকে অতোটা চিন্তিত না হলেও চল্লিশে পৌঁছে যখন তার শরীরের ওজন পচানব্বই কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছিল, আর পেটটা বেশ বেখাপ্পা রকমের উঁচু হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই সে ভারী দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। শরীরে মেদ আর চর্বির বেড়ে যাওয়াটা সে নিজেও বুঝতে পারছিল। আয়নার দিকে শরীরের ডান বা বাঁ দিক রেখে দাঁড়ালে তার স্ফীত পেট তার চল্লিশ ডি ডি সাইজের বুকের উচ্চতাকেও ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছিল। দেখে মনে হত, সে বুঝি সাত বা আট মাসের গর্ভবতী। খুবই বিচ্ছিরি লাগত নিজের চোখেই। আর প্রায় তখন থেকেই সে স্বামীর সোহাগ পাওয়া থেকে পুরোপুরি ভাবে বঞ্চিতা। যদিও তারপর বিশেষ বিশেষ কিছু আয়ুর্বেদিক তেল এবং ওষুধ প্রয়োগ করে সে নিজের বুকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য্য পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিল। তার স্তনদুটো আগের চেয়েও অনেক বড় আর সুগঠিত হয়ে উঠেছিল। আর তার যৌনাঙ্গ তো আগের মতোই টসটসে ছিল। তার ছেলে বিকি তো তার পেট ফুঁড়ে বেরিয়েছিল। তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম দিয়ে মায়েদের যোনি সুড়ঙ্গে যে শিথিলতা এসে থাকে, সবিতার যৌনাঙ্গে তেমনটা একেবারেই হয়নি। তবে শরীরে মাংস, চর্বি বেড়ে যাবার ফলে তার যৌনাঙ্গ তখন আরও তুলতুলে আরও স্ফীত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু একদিকে তার বুক আর শরীর যেমন ভারী হয়ে উঠছিল, তার পাশাপাশি তার ফুলে ওঠা পেটটাও যেন আরও ফুলে উঠেছিল। আর তার শরীরের ওজনও সমান তালে বাড়ছিল।
তারপর থেকেই সে মহিমার যোগা ইনস্টিটিউটে যোগা থেরাপি নিতে শুরু করেছিল। আর বাড়িতেও একটা ট্রেডমিল কিনে নিয়েছিল। গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত যোগা চর্চা আর ট্রেডমিল ব্যবহার করবার ফলে বর্তমানে তার শরীরের ওজন পঁচাশি কেজি। পেট আর তলপেটের অংশ পুরোপুরি সমতল না হলেও আগের মত আর সামনের দিকে অত বেশী উচিয়ে থাকে না। তবে মেদ আর চর্বির পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। শাড়ি পড়লে এখন তার শরীরের বাঁক গুলো দেখতে বেশ ভালই লাগে। ব্লাউজ ব্রায়ের তলায় বুকের পিণ্ডদুটো পেটের তুলনায় অনেকটাই উঁচু হয়ে থাকে। তবে শালোয়ার কামিজ পড়লে তার স্ফীত পেটটা এখনও বেশ দৃষ্টিকটু লাগে। তাই বাড়ির ভেতরে নাইটি বা শালোয়ার কামিজ পড়লেও বাইরে গেলে সে এখন সব সময় শাড়ি পড়েই বেরোয়। কচি বুড়ো পুরুষেরা আবার তার দিকে লোভাতুর চোখে তাকাতে শুরু করেছে। এতে মনে মনে সে খুব খুশী হলেও, নিজের স্বামীকে আর আগের মত তার কাছে টেনে আনতে পারে নি। অবশ্য সেটা নতুন কিছু নয়। অনেক বছর আগে থেকেই তার স্বামী যে তার পরিবর্তে তূলনামূলক ভাবে বিভিন্ন কম বয়সী, বেশী সুন্দরী আর সেক্সি মেয়ে মহিলার সঙ্গলাভ করে আসছে, সে কথা সবিতার অজানা নয়। সবিতার হারিয়ে যাওয়া দৈহিক সৌন্দর্য যদিও এখন অনেকটাই ফিরে এসেছে, তবু বিমল আর তার প্রতি আগের মত আকৃষ্ট হয় না।
______________________________
পরিতোষ সীমন্তিনীর কথা শুনে অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “ওকে, তুমি লাইনে থাকো মন্তি। আমি আমার নোটবুকটা দেখে আসল হিসেবটা তোমাকে জানাচ্ছি। কিন্তু ডার্লিং, যে কথাটা এতদিন তুমি জানতে চাওনি, সেটা আজ হঠাৎ করেই জানতে চাইছ কেন বলো তো”?
সীমন্তিনী বলল, “সরি পরিতোষ, আর আমাকে লজ্জা দিও না প্লীজ। আমি তো স্বীকার করেই নিয়েছি যে আমি চরম স্বার্থপরের মত কাজ করেছি। কিন্তু এতদিন তো আমি একা ছিলুম। নিজে কোথায় ভুল ত্রুটি করছি তা দেখিয়ে দেবার মত কেউ আমার পাশে ছিল না। কিন্তু এখন আমার দু’পাশে দুটো বোন আছে। তাদের সাথে আলাপ করতে করতেই কথাটা উঠে এল”।
পরিতোষ এবার বলল, “হু, বুঝেছি। কিন্তু তোমার বোনদের বুঝিয়ে দিও যে এগুলো কিন্তু হাইলি রিস্কি ব্যাপার। সামান্য ভুল চুক হলেই কিন্তু আমার বড়সড় বিপদ হতে পারে। এ’কথাটা তাদের দু’জনকে বুঝিয়ে দিও প্লীজ। আর হ্যাঁ, তুমি যা জানতে চাইছ সে ব্যাপারে বলি। দিবাকরের কেসে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ। ওর কাছ থেকে আদায় হয়েছিল সাড়ে পাঁচ লাখ। নেট দু’লাখ আমার হাতে এসেছিল। আর রবির কেসে মোট খরচ হয়েছিল সাড়ে দশ লাখ। আদায় হয়েছিল চৌদ্দ লাখ। তাই সেখান থেকে নেট আমার হাতে এসেছিল সাড়ে তিন লাখ। এই দু’অপারেশন থেকে পাওয়া সাড়ে পাঁচ লাখের ভেতর তুমি যখন কলকাতায় এসেছিলে তখন মোট তিয়াত্তর হাজার খরচ করতে হয়েছিল। বাকি চার লাখ সাতাত্তর হাজার বৌদির একাউন্টে জমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা তো তুমি জানোই”।
সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “তার মানে ওই দুটো অপারেশনে মোট চৌদ্দ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল? বাপরে! এত টাকা তুমি কোত্থেকে কী করে যোগালে পরি”?
পরিতোষ এবার একটু হেসে জবাব দিল, “এ ধরণের আনঅফিসিয়াল অপারেশন শুরু করবার আগেই অনেক কিছু নিয়ে প্ল্যানিং করতে হয় ডার্লিং। প্রথমে ইনফর্মার কাজে লাগাতে হয়। মোডাস অপারেন্ডি ঠিক করতে হয়। তারপর দিন ক্ষণ তারিখ আর স্থান ঠিক করতে হয়। এরপর ঠিক করতে হয় ম্যান পাওয়ার। আর সবার শেষে বানাতে হয় বাজেট। আর এ বাজেট বানাতে সব রকম খরচ খরচার কথা ভেবে দেখতে হয়। অনেক সময় অনেক কিছু কিনতে বা ভাড়া নিতে হয়। কতজন ইনফর্মার কাজে লাগাতে হচ্ছে, তাদের কত দিতে হবে, কনভেয়ান্সের খরচ সব কিছু হিসেব করতে হয়। যাদেরকে একশনে লাগানো হয় তাদের বাইরেও অনেকের কাছ থেকে নানারকম সাহায্য নিতে হয়। তাদেরকেও রিমিউনারেশন বা উপহার হিসেবে অনেক কিছু দিতে হয়। নইলে তারা আমার কাজে আমাকে সাহায্য করতে যাবে কেন? দিবাকরের ওই কেসটাতে সব মিলে সাতজনকে রিক্রুট করা হয়েছিল। এছাড়া একজন দালালের সাহায্যও নিতে হয়েছিল। একটা গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছিল দু’দিনের জন্য। গাড়ির মালিককে পঞ্চাশ হাজার দিতে হয়েছিল সেই জন্যে। আর তাই সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিছু কিছু অপারেশন এমনও হয় যে বাইরের সাপোর্টের প্রয়োজন হয় না। একাই সামলে নেওয়া যায়। যেমন ধরো নীতার কেসটা। ওকে কোনরকম ঝুঁট ঝামেলা ছাড়াই তুমি নিয়ে যেতে পেরেছ বলে বাইরের কাউকে কাজে লাগাতে হয়নি। কিন্তু তখন যদি দু’চারজনকে কাজে লাগাতে হত তবে তাদের তো টাকা পয়সা দিতেই হত। আর সে খরচটা কোত্থেকে কীভাবে আসবে, তারও রাস্তা খুঁজে বের করতে হত। সবটাই ডিপেণ্ড করে টাইপ অফ অপারেশন, প্ল্যানিং আর মোডাস অপারেন্ডির ওপর। যেমন রবিশঙ্করের কেসে দিবাকরের কেসের চেয়ে বেশী ম্যানপাওয়ারের প্রয়োজন হয়েছিল। আর আনুষঙ্গিক যাতায়াত খরচা, বুকিং এজেন্টের কমিশন, কিছু ক্যামেরা, কম্পিউটার ভাড়া, হোটেল খরচা, যাতায়াত খরচা, একটা ঘর ভাড়া, আরো অনেক রকমের খরচ করতে হয়েছিল। মেইন একশনে দুটো টিমের মোট এগারোজনকে অ্যাকশনে নামাতে হয়েছিল। আটজন ইনফর্মারকে কাজে লাগাতে হয়েছিল। তাই খরচ বেশী হয়েছিল। সাড়ে দশ লাখ টাকা। তবে অপারেশন শুরু করবার পর থেকে শেষ হওয়া অব্দি এর ওর কাছে ধার বাকি রাখতে হয়। কিছু হয়ত নিজের পকেট থেকেও খরচ করতে হয়। কিন্তু সব কিছুই র*্যানসমের টাকা থেকেই চুকে বুকে গিয়েছিল। বাজেট বানাবার পরেই র*্যানসমের এমাউন্টটা ঠিক করতে হয়। তবে দুটো কেসেই খরচ খরচা মিটিয়ে বেশ কিছু বাড়তি হয়েছিল। তাই তোমার দাদাভাই দু’লাখ টাকা খুইয়ে চার লাখ সাতাত্তর হাজার ফিরে পেলেন। তুমি এ নিয়ে আর ভেবো না। আমার কাছ থেকে একটা পয়সাও খরচ করতে হয়নি শেষ পর্যন্ত। আগের দুটো অপারেশনের ইতিহাস এটুকুই”।
পরিতোষের কথা শুনতে শুনতে নবনীতা, অর্চনা আর সীমন্তিনী অবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল বারবার। পরিতোষের কথা শেষ হতে সীমন্তিনী বুকে আটকে থাকা শ্বাস ছেড়ে বলল, “ইশ আমার জন্য তোমাকে কত কিছুই না করতে হচ্ছে পরি? আমি তোমার ওপর খুব জুলুম করে ফেলেছি, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার যে আর কোন উপায়ও ছিল না। কিন্তু পরি দাদাভাই আর রচুর ওপরে তুমি যে দুটো ভিজিল্যান্স টিম নিয়োগ করেছো, তাদেরকেও তো প্রচুর টাকা দিতে হবে। আর এবারে তো র*্যানসমের ব্যাপার নেই। তাহলে কী করে সামলাবে এতকিছু”?
পরিতোষ হেসে বলল, “ভেবো না ডার্লিং। সব সামলে নেব আমি। তবে এতদিন একটা ব্যাপার নিয়ে একটু চিন্তিতই ছিলাম আমি। তোমার দাদাভাইয়ের ওপর যারা নজর রাখছে, তাদের প্রত্যেককে দিনে তিন হাজার হিসেবে কন্টাক্ট করেছি। দেড় মাসের ওপর হয়ে গেল তারা ডিউটি দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আমি তাদের কিছু কিছু পেমেন্ট অবশ্য করে যাচ্ছি। কিন্তু তাদের পুরো পাওনা গন্ডা মেটাবার ব্যাপারে একটু চিন্তা হচ্ছিলই। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার কেসটা হাতে পেয়েই নিশ্চিন্ত হয়ে গেছি। আর এবারে অপারেশনের যা ব্লু প্রিন্ট বানিয়েছি তাতে তিনটে টিমের মোট আটাশ বা ত্রিশ জনকে অ্যাকশনে নামাতে হবে। তিনজন সিকিউরিটিকে চার মাসের আর অন্য তিনজনকে দু’মাসের বেতন দিতে হবে। পাঁচ জন ইনফর্মার আগে থেকেই কাজ করছে। আরও দু’একজনকে কাজে লাগাতে হবে। অনেক জিনিসপত্র ভাড়া করতে হবে। দু-তিনটে গাড়ি চার পাঁচটা বাইক আর একটা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে বাজেট হচ্ছে প্রায় চল্লিশ লাখ টাকার মত। বিমল আগরওয়ালার কাছ থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ লাখ তো ছাড়, দু’কোটি টাকাও আদায় করতে পারব। তাই টাকার যোগান নিয়ে কোন সমস্যাই নেই। মোট কথা, আমার সব কেসের মত এ কেসেও গঙ্গাজলেই গঙ্গাপূজো করব। তুমি ও নিয়ে একদম ভেব না”।
সীমন্তিনী এবার ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “আমি আর ভাবতে পাচ্ছি না পরি। তোমার কথা শুনে আমার মাথা ঘোরাচ্ছে। চল্লিশ লাখ টাকা খরচ হবে! আর তুমি এর সবটাই আদায় করবে বিমলের কাছ থেকে”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “এই জন্যেই তো আমি এতদিন এসব কথা তোমাকে বলিনি ডার্লিং। পয়সা ছাড়া এ দুনিয়ায় কিচ্ছুটি করতে পারবে না তুমি। তাই তো আমাদের মত লক্ষ লক্ষ পুলিশ অফিসার কেবল নিজেদের মাসিক বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। পরিবারের সকলের সব চাহিদা তারা পূরণ করতে পারে না। আর এ’জন্যেই তারা ঘুস খেতে শুরু করে। একটা মহৎ কাজ করতেও পয়সার প্রয়োজন হয়। আর আমি অফিসিয়াল ডিউটির বাইরে যা করছি, তাতে আমাকেও প্রচুর পয়সা খরচ করতে হয়। সে পয়সা আমি পাবো কোথায়? তাই প্ল্যানিং করে ওই অপরাধীদের কাছ থেকেই সেটা আদায় করে নিই। আর বিমল আগরওয়ালার পয়সার কোন অভাব নেই। এক দু কোটি কেন আমি চাইলে ওর কাছ থেকে দশ কোটি টাকাও আদায় করতে পারি। কিন্তু সেটার কোন দরকার নেই বলেই করছি না। আমার কাজের জন্য যতটুকু দরকার, তার কাছ থেকে ততটুকু পেলেই আমি খুশী। কিন্তু চল্লিশ লাখ টাকা তো আর র*্যানসম হিসেবে চাওয়া যায় না। চাইতে হবে পঞ্চাশ লাখ, নইলে এক কোটি। তাই পঞ্চাশ লাখই টার্গেট করে রেখেছি আপাততঃ। পরে দেখা যাক কী হয়। আর তুমি ওসব নিয়ে চিন্তা করে তোমার সময় আর শক্তির অপচয় কোর না প্লীজ। তুমি তোমার দু’পাশে দু’বোনকে নিয়ে আনন্দে থাকো। তাদেরকেও আনন্দে রাখো। আর আমাকেও ঠিকমত আমার কাজটা করতে দাও। নিজে রান্না বান্না না জানলেও, আমি একটা জিনিস ভাঁজতে জানি খুব ভাল মত। মাছের তেলে মাছ ভাজা। আচ্ছা, আর কথা নয়। একটা ফোন এসেছে অন্য মোবাইলে। তাই ছাড়ছি ডার্লিং এখন। গুড নাইট”।
সীমন্তিনী গুড নাইট বলবার আগেই লাইন কেটে গেল।
****************
মিসেস সবিতা আগরওয়ালা বেশ পরিপাটি করে সেজে গুঁজে বাড়ির গ্যারেজ থেকে নিজেই একখানা বিদেশী গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দুরে একটা মাঝারী সাইজের হোটেল কাম রেস্টুরেন্টে গিয়ে পৌঁছল বিকেল প্রায় ছ’টা নাগাদ। এই বিল্ডিংটার গ্রাউন্ড ফ্লোরে রেস্টুরেন্ট। আর দোতলা এবং তিন তলায় বোর্ডারদের ভাড়া দেবার জন্যে মোট চৌদ্দটা রুম আছে। ২০০৯ সালে দোতলার একদম কোনার দিকের একটা ডাবল বেডেড এসি রুম সবিতা মাসিক চুক্তিতে পাকাপাকি ভাবে ভাড়া নিয়ে রেখেছে। বিনিময়ে তাকে তখন মাসে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা হোটেলে জমা দিতে হত। পয়সার তো তার আর অভাব নেই। ব্যাঙ্কে তার নামে নিজস্ব একাউন্ট আছে। আর তার স্বামী প্রতি সপ্তাহের শুরুতে সে একাউন্টে দু’লাখ টাকা করে জমা করে দেয়। ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে সে তার যখন যা প্রয়োজন হয় তুলে নেয়। আর এ টাকা খরচ করবার কোন হিসেবও কাউকে দিতে হয় না তাকে। অবশ্য তার কয়েক মাস বাদেই রুম ভাড়ার ব্যাপারটা বদলে গিয়েছিল।
পার্মানেন্ট গ্রাহক হবার সুবাদেই হোটেলের ম্যানেজারের সাথে সবিতার বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে। তবে এ বন্ধুত্ব সাধারণ বন্ধুত্ব নয়। এ বন্ধুত্বের ভিত হচ্ছে আর্থিক দেনা পাওনা। হোটেলের ম্যনেজার সবিতার এক ছোটোখাটো লেভেলের অলিখিত এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। তবে এই আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারটা কিন্তু তাদের দু’জনের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ নয়। ম্যানেজারের সাথে আসল লেনদেন হয় তৃতীয় কোন একজনের সাথে। সেখানে সবিতা শুধুই ম্যানেজারের এক মাধ্যম। ছোট হোটেল। তাই তার পসারও কম। লোকজনের ভিড়ও কম। তবে হোটেলের রেস্টুরেন্টে বেশ ভাল লোক সমাগম হয়।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে সবিতা রোজকারের মত আজও প্রথমেই ম্যানেজারের কাঁচে ঘেরা কেবিনের দিকে এগিয়ে গেল। কেবিনের ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারকে সে জিজ্ঞেস করল, “কোনও খবর আছে”?
ম্যানেজার সবিতার দিকে বিস্মিত চোখে চেয়ে জবাব দিল, “এ কি ম্যডাম? আপনি তো বলেছিলেন যে আজ আর ......”
সবিতা তাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে বলল, “ওটা আমার ভুল হয়েছিল। যেটা আশা করেছিলাম, সেটা হল না বলেই তো চলে এলাম। তা বলুন তো, কোনও খবর টবর সত্যিই কিছু আছে”?
ম্যানেজার স্মিত হেসেও একটু দ্বিধার সাথে জবাব দিল, “না ম্যাম, এখন তো তেমন কোনও খবর নেই। আসলে আপনার পছন্দের একজন হাতে ছিল ঠিকই। কিন্তু আপনি আসবেন না শুনেই তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তাই আজ আপনি ফ্রি। তবে আপনার রুম সার্ভিসিং করা আছে”।
সবিতা একটু হতাশ হয়ে বলল, “একেবারেই কিছু নেই”?
ম্যানেজার আবার হেসে বলল, “একেবারেই যে নেই, তা ঠিক নয় ম্যাডাম। কিন্তু যা আছে, সে’সব যে আপনার পছন্দের তালিকায় পড়ে না”।
সবিতা একই রকম হতাশার সুরে বলল, “ওঃ, ঠিক আছে, আমি তাহলে রেস্টুরেন্টেই বসছি কিছুক্ষণ।” বলে কেবিন থেকে বাইরে বেরিয়ে এল।
রেস্টুরেন্টের ভেতরটা বেশ বড়সড়। খোলা হলঘরের ভেতর কুড়িটা গোলাকার টেবিল গ্রাহকদের জন্য পেতে রাখা। টেবিলের চারপাশ সুন্দর মখমলের কাপড় দিয়ে ঘেরা। প্রত্যেকটা টেবিলের চারপাশে চারটে করে সুদৃশ্য এবং আরামদায়ক চেয়ার। হলঘরের এক ধার বরাবর আটটা পর্দা ঘেরা ছোট ছোট কেবিন। প্রত্যেকটা কেবিনে ছোট্ট আয়তাকার একেকটা টেবিলের দু’পাশে দু’টো টু-সীটার সোফা। যেসব গ্রাহকেরা যুগলে এসে খাবার খেতে খেতে কিছুটা নিভৃতে রোমান্টিক মূহুর্ত কাটাতে চায়, এসব কেবিন গুলো তাদের জন্যই। বলাই বাহুল্য, বাইরের খোলা হলঘরের তুলনায় এই কেবিনগুলোতে বসে খেতে চাইলে গ্রাহকদের পকেট অনেক বেশী হাল্কা করতে হয়। এই মূহুর্তে সব ক’টা কেবিনের দরজাই পর্দা ঢাকা। তার মানে, সব ক’টা কেবিনেই এখন গ্রাহক আছে। অবশ্য সবিতা কখনোই এ’সব কেবিনে ঢোকে না। আসলে ঢোকবার প্রয়োজনই পড়ে না তার। কোন পছন্দসই সঙ্গী জুটলে সে দোতলায় নিজের ভাড়া করা রুমেই চলে যায় তাকে নিয়ে। আর খাবার দাবারের অর্ডার থাকলে বয় বেয়ারারা দোতলার ওই রুমেই সেসব পৌঁছে দেয়।
আজ যেহেতু ম্যানেজারের কাছে কোন সুখবর নেই, তাই সবিতা রেস্টুরেন্টের শেষ সাড়ির নির্দিষ্ট কুড়ি নম্বর টেবিলে তার নির্ধারিত সীটে এসে বসল। এমনটা এর আগেও বহুবার হয়েছে যে ম্যানেজার তাকে কোন সুখবর দিতে পারেনি। আর সে এমনিভাবে রেস্টুরেন্টের এই টেবিলে বসে থাকতে থাকতে নিজের প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবার চেষ্টা করে গেছে। মাঝে মাঝে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটতো। আবার মাঝে মাঝে বিফল মনোরথ হয়ে ফিরেও যেতে হয়েছে তাকে। আজও তাকে অমন প্রতীক্ষাই করতে হবে। কে জানে তার প্রতীক্ষার আজ অবসান ঘটবে কি না। তবে সবিতার টেবিলের বাকি তিনটে সীটও এ মূহুর্তে খালি। রাগ হচ্ছে নিজের ছেলে বিকির ওপর। ছেলেটা কলেজ থেকে ফিরে বাড়িতেই এল না আজ। কে জানে কোথায় কার সাথে সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু সকালে কলেজে যাবার আগে ছেলে মাকে কথা দিয়ে গিয়েছিল যে কলেজ থেকে সে আজ তাড়াতাড়িই ফিরবে। আর বাড়ি এসে তার মাম্মির সাথে অনেকটা সময় কাটাবে। ছেলে তার সাথে থাকলে সবিতার আর কিছুই চাই না। বছর দেড়েক আগে থেকে তাদের মা-ছেলের সম্পর্কটা একটা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাবার পর থেকেই ছেলের সান্নিধ্যে সবিতা স্বর্গসুখ পায়। ছেলে সকালে ওভাবে বলে যাবার পর সবিতা মনে মনে আশা করেছিল যে বিকি আজ তিনটে সাড়ে তিনটের ভেতরেই হয়তো বাড়ি ফিরে আসবে। অধীর আগ্রহে সে ছেলের প্রতীক্ষায় ছিল। কিন্তু পাঁচটা বেজে যাবার পরেও ছেলে বাড়ি ফিরলোনা দেখে সে ছেলের মোবাইলে ফোন করেছিল। তিন চারবার নো রেসপন্স হবার পর পঞ্চম বারে ছেলের সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। ছেলে তখন হাঁপাতে হাঁপাতে তার মাকে বলেছিল যে সে এক বন্ধুর বাড়িতে বিশেষ একটা কাজে আটকে পড়েছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে তার আটটা ন’টা বেজে যেতে পারে। ছেলে বাড়ি ফিরছে না শুনে সবিতার মেজাজটা বিগড়ে গিয়েছিল। ছেলে যে কোন বিশেষ কাজে আটকে পড়েছে, সেটা সবিতার বুঝতে একেবারেই অসুবিধে হয়নি। ছেলের অশান্ত লয়বিহীন শ্বাস প্রশ্বাসই তাকে সে’কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত করতে তাই সে সেজেগুজে এখানে এসেছে। অবশ্য এখানে আসাটা তার নিত্যকার ঘটণা। রোজই সে বিকেল পাঁচটা নাগাদ এখানে আসে। কিন্তু ছেলে কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে বলাতেই সে আজ তার অপেক্ষায় ছিল বাড়িতে। মনে মনে ভেবেছিল ছেলে যদি সত্যিই তার সাথে বিকেল আর সন্ধ্যেটুকু কাটায়, তাহলে আজ আর তাকে হোটেলে যেতে হবে না। সে’কথা ভেবেই সবিতা ম্যানেজারকে সকাল বেলাতেই জানিয়ে দিয়েছিল যে সে আজ হোটেলে আসছে না। কিন্তু শেষ মূহুর্তে তার আশায় ছেলে জল ঢেলে দিল বলেই তার মনটা বিরক্তি আর অস্বস্তিতে ভরে উঠেছিল। ছেলে আর এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছে না, এটা বুঝেই দেরী হওয়া সত্বেও সে হোটেলে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু ম্যানেজারের কথা শুনে তার মেজাজটা আরও বিগড়ে গেছে। ছেলের ওপর তার রাগ আরও বেড়ে গেল। নিজে তো কথা দিয়েও মায়ের কাছে এলই না, আবার তার পছন্দের একটা খাবারও তার হাত থেকে ফস্কে গেল।
পরিচিত বেয়ারাদের একজন তার টেবিলের পাশে এসে দাঁড়াতেই সে ফ্রুট স্যালাড আর কোল্ড ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিল। আর মনে মনে বিগত কয়েকটা বছরে তার জীবনে কত পরিবর্তন এসেছে সে কথা ভাবতে লাগল।
খাবার সার্ভ হবার আগেই হোটেলের ম্যানেজার সবিতার কাছে এসে দাঁড়িয়ে খুব নিচু গলায় বলল, “ম্যাডাম রাত আটটা থেকে দু’ঘন্টার জন্যে একটা স্লট আছে। আপনার পছন্দের ক্যাটাগরি। নেবেন কি”?
সবিতা পরিষ্কার নিচু গলায় জবাব দিল, “আটটা থেকে দু’ঘন্টা? না ম্যানেজারবাবু, সেটা করতে পারব না। আপনি তো জানেনই যে আমি রাত ন’টার পর আর বাইরে থাকি না। একঘন্টার স্লট হলে ব্যবস্থা করুন। আর যদি দু’ঘন্টার জন্যেই চায়, তাহলে আটটার জায়গায় সাতটা থেকে শুরু করতে বলুন। আমি রাজি আছি”। ম্যানেজার আর কোন কথা না বলে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেল।
ম্যানেজার চলে যেতে সবিতা ভাবতে শুরু করল নিজের অতীত জীবনের কথা। তার স্বামী বিমলকে সে বিয়ের অনেক আগে থেকেই চিনত। তার বাবার বন্ধুর ছেলে বিমল। কোটিপতি বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে বিমল উঠতি বয়স থেকেই নারী মাংসলোভী হয়ে উঠেছিল। ছাত্র জীবন থেকেই সে বিভিন্ন বয়সী মেয়ে মহিলাদের সাথে শারীরিক সম্মন্ধে লিপ্ত ছিল। অবশ্য ওই সব নারী মহিলার মধ্যে সবিতা নিজেও ছিল। সবিতা যখন কলেজে সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী তখন থেকেই সে নিজেও মাঝে মাঝে বিমলের সাথে সেক্স করত। বিমলকে বিয়ে করবার স্বপ্ন সে কোনদিন দেখেনি। কারন সে আগে থেকেই জানত যে বিমল সবিতা ছাড়াও অনেক মেয়ে মহিলার সাথে সেক্স রিলেশনে আবদ্ধ। বিমল নিজেই তাকে বলত যে তার দেখা সমস্ত মেয়ে মহিলাদের মধ্যে সবিতাই সবচেয়ে সুন্দরী। কিন্তু কামকলার দিক থেকে সবিতা অতটা পরিপক্ক ছিল না। কিন্তু দুই পরিবারের চাপে পড়ে বিমল তাকেই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। বিয়ের স্বপ্ন না দেখলেও কোটিপতির ঘরের ছেলের বৌ হতে সবিতাও আপত্তি করেনি। বিমল বিয়ের পরেও যে শুধু তার বৌকে নিয়ে খুশী থাকবে না, সে যে বিয়ের পরেও অন্যান্য মেয়ে মহিলার সাথে তার যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যাবে, এ’সব কথা বিমল বিয়ের আগেই তাকে বলেছিল। তবে বিয়ের কথা যখন উঠেছিল তখন সবিতা পরিস্কার ভাবে বিমলকে জানিয়ে দিয়েছিল যে, বিমলের অন্য মেয়েদের সাথে যৌন সম্পর্ক সে মেনে নেবে যদি বিমল তাকে যৌনতা সহ অন্য সব দিক দিয়ে খুশী রাখবার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে আরও পরিস্কার করে বলেছিল যে বিমল সারাদিন যেখানেই যার সাথে খুশী সেক্স করুক, রাতে ঘুমোবার আগে সবিতাকে পুরোপুরি ভাবে যৌনতৃপ্তি দিতে হবেই তাকে। বিমল সেদিন নিশ্চয়ই ভেবেছিল যে বিয়ে করবার মত এমন পাত্রী সে হাতে প্রদীপ নিয়ে সারা দেশ খুঁজেও দ্বিতীয় একটা কাউকে পাবে না। তাই হয়তো, কামকলায় অত পটু না হওয়া সত্বেও সবিতাকেই সে বিয়ে করেছিল সবিতার শর্ত মেনে নিয়ে। তাদের ফুলশয্যার রাতে বিমল তাকে ভোগ করতে করতে জানিয়েছিল, সেদিন দুপুরে সে তার এক বন্ধুর মা প্রমীলা আন্টির সাথে সেক্স করেছে। প্রমীলা আন্টির সাথে তার স্বামীর সেক্সের বিবরণ শুনতে শুনতে সবিতাও এক অন্য ধরণের উত্তেজনা উপভোগ করেছিল। তাদের বিয়ের পর প্রথম কয়েকটা মাস বেশ সুখেই কাটিয়েছিল সবিতা। রোজ রাতেই বিমলের সাথে তার শারীরিক মিলন হত। কিন্তু আগের মত গর্ভ নিরোধক উপায় অবলম্বন না করার ফলে বিয়ের এগারো মাসের শেষেই সে ছেলের জন্ম দিয়েছিল।
আর ঠিক তার পর থেকেই যেন তার জীবনটা ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে শুরু করেছিল।
সবিতার বর্তমান বয়স পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি হলেও, আর বয়সের ভারে খানিকটা মুটিয়ে গেলেও তার চেহারার জৌলুস এখনও খুব একটা কমে যায় নি। দামী দামী বিদেশী ক্রিম আর লোশন ব্যবহার করবার ফলে তার গায়ের রঙ আর ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এখনও অমলিন আছে। ছেলে হবার পর থেকেই তার শরীরটা ভারী হতে শুরু করেছিল। তখন থেকেই স্বামীর সাথে তার শারীরিক মিলন কমতে শুরু করেছিল। সপ্তাহে বা দু’সপ্তাহে একবার বিমলের সাথে তার মিলন হত। তবু প্রথমদিকে অতোটা চিন্তিত না হলেও চল্লিশে পৌঁছে যখন তার শরীরের ওজন পচানব্বই কেজি ছাড়িয়ে গিয়েছিল, আর পেটটা বেশ বেখাপ্পা রকমের উঁচু হয়ে উঠতে শুরু করেছিল, তখন থেকেই সে ভারী দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। শরীরে মেদ আর চর্বির বেড়ে যাওয়াটা সে নিজেও বুঝতে পারছিল। আয়নার দিকে শরীরের ডান বা বাঁ দিক রেখে দাঁড়ালে তার স্ফীত পেট তার চল্লিশ ডি ডি সাইজের বুকের উচ্চতাকেও ছাপিয়ে যেতে শুরু করেছিল। দেখে মনে হত, সে বুঝি সাত বা আট মাসের গর্ভবতী। খুবই বিচ্ছিরি লাগত নিজের চোখেই। আর প্রায় তখন থেকেই সে স্বামীর সোহাগ পাওয়া থেকে পুরোপুরি ভাবে বঞ্চিতা। যদিও তারপর বিশেষ বিশেষ কিছু আয়ুর্বেদিক তেল এবং ওষুধ প্রয়োগ করে সে নিজের বুকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য্য পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিল। তার স্তনদুটো আগের চেয়েও অনেক বড় আর সুগঠিত হয়ে উঠেছিল। আর তার যৌনাঙ্গ তো আগের মতোই টসটসে ছিল। তার ছেলে বিকি তো তার পেট ফুঁড়ে বেরিয়েছিল। তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তানের জন্ম দিয়ে মায়েদের যোনি সুড়ঙ্গে যে শিথিলতা এসে থাকে, সবিতার যৌনাঙ্গে তেমনটা একেবারেই হয়নি। তবে শরীরে মাংস, চর্বি বেড়ে যাবার ফলে তার যৌনাঙ্গ তখন আরও তুলতুলে আরও স্ফীত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু একদিকে তার বুক আর শরীর যেমন ভারী হয়ে উঠছিল, তার পাশাপাশি তার ফুলে ওঠা পেটটাও যেন আরও ফুলে উঠেছিল। আর তার শরীরের ওজনও সমান তালে বাড়ছিল।
তারপর থেকেই সে মহিমার যোগা ইনস্টিটিউটে যোগা থেরাপি নিতে শুরু করেছিল। আর বাড়িতেও একটা ট্রেডমিল কিনে নিয়েছিল। গত পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত যোগা চর্চা আর ট্রেডমিল ব্যবহার করবার ফলে বর্তমানে তার শরীরের ওজন পঁচাশি কেজি। পেট আর তলপেটের অংশ পুরোপুরি সমতল না হলেও আগের মত আর সামনের দিকে অত বেশী উচিয়ে থাকে না। তবে মেদ আর চর্বির পরিমাণ অনেকটাই কমেছে। শাড়ি পড়লে এখন তার শরীরের বাঁক গুলো দেখতে বেশ ভালই লাগে। ব্লাউজ ব্রায়ের তলায় বুকের পিণ্ডদুটো পেটের তুলনায় অনেকটাই উঁচু হয়ে থাকে। তবে শালোয়ার কামিজ পড়লে তার স্ফীত পেটটা এখনও বেশ দৃষ্টিকটু লাগে। তাই বাড়ির ভেতরে নাইটি বা শালোয়ার কামিজ পড়লেও বাইরে গেলে সে এখন সব সময় শাড়ি পড়েই বেরোয়। কচি বুড়ো পুরুষেরা আবার তার দিকে লোভাতুর চোখে তাকাতে শুরু করেছে। এতে মনে মনে সে খুব খুশী হলেও, নিজের স্বামীকে আর আগের মত তার কাছে টেনে আনতে পারে নি। অবশ্য সেটা নতুন কিছু নয়। অনেক বছর আগে থেকেই তার স্বামী যে তার পরিবর্তে তূলনামূলক ভাবে বিভিন্ন কম বয়সী, বেশী সুন্দরী আর সেক্সি মেয়ে মহিলার সঙ্গলাভ করে আসছে, সে কথা সবিতার অজানা নয়। সবিতার হারিয়ে যাওয়া দৈহিক সৌন্দর্য যদিও এখন অনেকটাই ফিরে এসেছে, তবু বিমল আর তার প্রতি আগের মত আকৃষ্ট হয় না।
______________________________