12-03-2020, 07:59 PM
(Update No. 148)
এমন সময় শেখর আর বিপ্লব নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কথা বলাবলি শুরু করল। পরিতোষ সেটা লক্ষ্য করে কিছু একটা বলতে যেতেই শেখর বলল, “স্যার, আমার পার্ট থ্রির একটা কাজ তো আগেই সেরে ফেলেছি আমরা। ওই অনুপমা প্রসাদের কেসের সময়”।
পরিতোষ চমতকৃত হয়ে বলল, “তাই নাকি? সত্যি বলছিস তো? তোদের কোন ভুল হচ্ছে না”?
এবার বিপ্লব বলল, “না স্যার, কোনও ভুল হচ্ছে না আমাদের। এই হারামীটাও তো অনুপমার কাস্টমার ছিল। কিন্তু ওই সিডিগুলো তো বোধহয় অনুপমার কেসের সাথেই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে”।
পরিতোষ বলল, “ভাবিসনে, আমার কাছে তার কপি আছে। পাওয়া যাবে। তবে সেখানে তো হয়ত একটাই আছে। তোদেরকে তো প্রত্যেকের তিন চারটে করে সিডি বানাতে হবে আলাদা আলাদা ঘটণার। আর কাগজে যা পড়লি তেমন একটা তো লাগবেই। তোরা নতুন করে বানাবি। আর আগেরটাও আমি যোগাড় করে নেব। একটা বেশী হলে আর ক্ষতি কি”।
আলোচনা শেষ করে পরিতোষ ডক্টর দিব্যেন্দুর কন্টাক্ট নাম্বার নিজের পার্সোনাল মোবাইলে সেভ করে সকলকে বিদেয় করল। রাতে বাড়ি ফিরে শোবার আগে সীমন্তিনীকে ফোন করবার কথা ভাবতেই আব্দুলের ফোন এল, “স্যার, এত রাতে ফোন করছি বলে প্লীজ বিরক্ত হবেন না। আসলে যখন আমরা ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছিলাম, তখনই কথাটা বলতে খুব ইচ্ছে করছিল আমার। কিন্তু আপনিই শিখিয়েছেন, সব কথা সবার সামনে বলা উচিৎ নয়। তাই তখন কথাটা আমি বলিনি। এখন বলতে চাইছি আপনাকে”।
পরিতোষ মনে মনে একটু হেসে মুখে বলল, “বেশ, বল কি বলতে চাইছিস”?
আব্দুল বলল, “স্যার এ ব্যাপারটা নিয়ে এত প্ল্যানিং করবার কি দরকার ছিল বলুন তো? ওই একটা মাত্র হারামীকে তো আমি দু’মিনিটেই পরপারে পাঠিয়ে দিতে পারি। আর আপনি তো ভালমতই জানেন স্যার, আব্দুলের এ’সব কাজের কথা কাক পক্ষীটিও টের পায় না। এতগুলো লোককে এতে জড়াবার কি কোনও প্রয়োজন ছিল, বলুন তো”?
পরিতোষ তাকে শান্ত করবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “তুই যে কি জিনিস সেটা কি আর আমি জানি না রে আব্দুল? ওই লোকটার প্রভাব প্রতিপত্তি যতই থাকুক না কেন, তুই চাইলে যে কোনও মূহুর্তেই তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিতে পারিস। কিন্তু আমি যে সেটা চাইনা রে ভাই। তোরা যে আমার খুব ভরসার পাত্র রে। তার ওপর তুই আমার প্রীতিদির স্বামী। প্রীতিদির জীবনটা যে তোর জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে রে। আর এখন তো ওই দুষ্টু মিশটু আপ্রীতও তোর সাথে জড়িয়ে আছে। আমার কথায় নোংরা একটা লোককে খুন করে তুই কেন নিজের হাতটা নোংরা করবি বল তো? আর, একটা লোককে খুন করে ফেলা তো বড় কিছু ব্যাপার নয়। তোর কাছে সেটা হাতের তুড়ির মতই একটা ব্যাপার। কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে রেখেই তাকে যদি অপরাধ করা থেকে আটকাতে পারি, তাহলেই তো আমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয়। তাছাড়া ওই বদমাশটার কাছ থেকে টাকাও তো আদায় করতে হবে। নইলে এতগুলো লোককে তাদের পাওনাগন্ডা বুঝিয়ে দেব কি করে বল? তাই এত সবের প্ল্যানিং করতে হচ্ছে, যাতে আমার দুটো উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হয়, আর তোদের কারো গায়ে এতটুকে আঁচও না লাগে। বুঝলি? তোকে যে কাগজটা পড়তে দিয়েছিলাম, সে কথা গুলো মাথায় রাখিস। আর ঠিক সেভাবেই কিন্তু কাজটা করবি। কোনরকম ব্যতিক্রম যেন না হয়। অবশ্য সঠিক সময়ে আমি নিজেই আবার তোকে সেসব মনে করিয়ে দেব। এবার মাথা ঠাণ্ডা করে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পর। আমার শুধু ডাক্তারকে নিয়েই একটু চিন্তা হচ্ছে। তার তো এ ধরণের কাজের অভ্যেস নেই একেবারেই। সঠিক সময়ে ঘাবড়ে গিয়ে যদি কিছু উল্টোপাল্টা করে ফেলেন, তাহলেই সমস্যা হবে”।
আব্দুল এবার বেশ সংযত ভাবে বলল, “ও নিয়ে ভাববেন না স্যার। প্রয়োজন হলে তার কাজের সময়টায় আমিও তার কাছাকাছিই থাকবার চেষ্টা করব। আমি সব সামলে নেব স্যার”।
পরিতোষ শান্তভাবেই বলল, “আমি যে কাগজটা তোকে পড়তে দিয়েছিলাম, সেটা মনে হয় তুই ভালমতো পড়িস নি আব্দুল। সে কাগজে লেখা ছিল তোর কাজটা শেষ হবে সন্ধ্যে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে। আর ডঃ দিব্যেন্দুর হাসপাতাল থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দুরে। তাই একই সময়ে দুটো দিক সামলাতে গেলে ওই মূহুর্তে তোর চারটে টিমের প্রয়োজন হবে। আর তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হল, যেদিন তোর কাজটা শেষ হবে সেদিন সকাল থেকে রাত দুপুর অব্দি তুই নিজে তোর নিজের বাড়ি আর গ্যারেজ ছেড়ে এক পা-ও বাইরে যেতে পারবি না। তাই আর উল্টোপাল্টা অন্য কিছু না ভেবে মাথা ঠাণ্ডা রাখ। আর আমি যেভাবে প্ল্যান করেছি ঠিক সে ভাবেই কাজটা করবি। ডাক্তারকে আমি অন্যভাবে সামলে নেব। সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না”।
আব্দুলের সাথে কথা শেষ করে পরিতোষ সীমন্তিনীকে জানিয়ে দিল সে কাজে নেমে পড়েছে। পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ দিনের ভেতর অপারেশন কমপ্লিট হবে। সীমন্তিনী তাকে বলল, এ নিয়ে পরে আলোচনা করবে।
*****************