Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 147)

তারপর আবার কাউকে ফোন করে বলল, “শেখর, কোথায় আছিস তুই”?
 

ওপাশ থেকে শেখর বলল, “স্যার, আমি তো একটা কাজে চন্দননগর এসেছি। কিন্তু কি ব্যাপার স্যার”?

পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “কখন ফিরবি? রাত আটটায় আমার দু’নাম্বার আড্ডায় আমি তোর সাথে কথা বলতে চাই। আর শুধু তুই একা নোস। তোর বন্ধু বিপ্লবকেও সঙ্গে করে আনতে হবে। পারবি তো”?

শেখর একটু দোনামনা করে বলল, “রাত আটটায়? একটু জুলুম হয়ে যাবে। তবে স্যার ভাববেন না। আমি বিপ্লবকে নিয়ে ঠিক পৌঁছে যাব ওখানে। কিন্তু ব্যাপার কি স্যার? রবি আর অনুপমার ঝামেলা কি এখনও মিটতে বাকি আছে নাকি”?
 

পরিতোষ বলল, “না এটা একটা নতুন প্রোজেক্ট। তবে সে সব নিয়ে এখন কোন কথা নয়। সময় মত পৌঁছে যাবি কিন্তু”।

শেখর জবাব দিল, “অবশ্যই পৌঁছবো স্যার। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন”।
 

ফোন নামিয়ে রেখে আরও কিছুক্ষণ মনে মনে ভেবে টেবিলের ওপর থেকে তিনখানা মোবাইল নিজের পকেটে পুরতে পুরতে টেবিলে রাখা কলিং বেলে চাপ দিল। কয়েক সেকেণ্ড বাদেই একজন সেপাই ভেতরে ঢুকতেই সে তাকে বলল, “একটু মিঃ তরফদারকে ডেকে দাও তো তাড়াতাড়ি”।

সেপাইটা চলে যাবার কয়েক মিনিট বাদেই আরেকজন পুলিশ অফিসার ঘরে ঢুকতেই পরিতোষ নিজের ড্রয়ার লক করতে করতে বলল, “সরি মিঃ তরফদার। একটা আর্জেন্ট কাজে আমাকে এখনই বেরিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা যে আলোচনাটা অসম্পূর্ণ রেখেছি, সেটা আজ আর হচ্ছে না। কাল লাঞ্চের পর সেটা কন্টিনিউ করব। আপনি সবাইকে ওভাবেই জানিয়ে দেবেন। আর আমি বোধহয় আজ আর অফিসে ফিরে আসতে পারব না। আপনি এদিকটা সামলে নেবেন প্লীজ”।

রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে পরিতোষ সোজা নিজের বাড়ি এসে ঢুকল। রাইটিং প্যাড আর কলম নিয়ে বসল। কলমটা খুলেই আবার নামিয়ে রেখে তার পার্সোনাল মোবাইল থেকে আবার কাউকে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সে বলল, “শোনো, উল্টোডাঙ্গায় আগরওয়ালা রিয়েল্টর্স নামে এক বিল্ডারের একটা অফিস আছে। তার আসল মালিক হচ্ছে মিস্টার বিমল আগরওয়ালা। বিকেল চারটের ভেতর ওই বিমল আগরওয়ালা এবং তার পরিবারের সমস্ত সদস্যদের নাম, বায়োডাটা আর ছবি আমার চাই। ব্যাপারটা এক্সট্রিমলি আর্জেন্ট। তাই কোনভাবে ফেল করলে চলবে না”।

ও’পাশের কথায় আশ্বস্ত হয়ে সে এবার কলম তুলে নিয়ে রাইটিং প্যাডে কিছু লিখতে শুরু করল। গভীর ভাবে চিন্তা করতে করতে এক এক করে তিনটে পাতা লেখা শেষ করে সে কলম নামিয়ে রেখে কাগজের লেখাগুলো আবার পড়ে দেখতে লাগলো। দু’ এক জায়গায় ছোট খাটো কারেকশন করে একসময় তার মুখে চোখে একটা আত্মবিশ্বাসের ছায়া ফুটে উঠল। কব্জি ঘড়ির দিকে একবার দেখে নিয়ে সে কিচেনে ঢুকে এক কাপ চা বানালো। চা খেতে খেতে কাগজের পাতাগুলো ভাঁজ করে শার্টের বুক পকেটে রেখে নিজের মোবাইলগুলো প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিল। চা খেয়েই সে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। ঘর লক করে নিজের গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট করবার আগে আবার পকেট থেকে মোবাইল বের করে একজনকে ফোন করে বলল, “কিরে ওদিকের সব ঠিকঠাক আছে তো”?

কয়েক সেকেণ্ড অপর পাশের কথা শুনে তাকে বেশ আশ্বস্ত মনে হলেও সে গম্ভীর গলায় বলল, “শোন, তোদের টিমে আরও তিনজনকে ঢুকিয়ে নে। অবজেক্ট এ-র ওপর একইভাবে ভিজিল্যান্স রাখবি। আর নতুন তিনজনকে স্পেশালি অবজেক্ট বি-র পেছনে লাগাবি। অবজেক্ট বি-র ওপর কোন ধরণের অ্যাটাকের আশঙ্কা আছে। সেটা কিডন্যাপিং হতে পারে বা ফিসিকাল অ্যাসল্টও হতে পারে। তাই তার ওপর টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্স নজর রাখতে হবে। মনে রাখিস আমি টুয়েন্টি ফোর আওয়ার্সের কথা বলছি। সেভাবে ব্যবস্থা নিস। আর মনে রাখিস কোন রকম ফেইলিওর যাতে না হয়। অবজেক্ট এ আর বি দু’জনকেই সবরকম ভাবে সিকিওরড রাখতে না পারলে কিন্তু তোদের সবকটার এনকাউন্টার হবে। তোর টিমের একজনও কিন্তু রেহাই পাবে না। এটা মনে রাখিস”।

তারপর গাড়ি স্টার্ট করে সেন্ট্রাল কলকাতার দিকে চালিয়ে দিল।
 

সন্ধ্যের আগেই বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আব্দুল ফোন করে জানালো যে ডঃ দিব্যেন্দুকে সঙ্গে নিয়ে সে রাত আটটায় পরিতোষের সাথে দেখা করছে।

বিট্টুদের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে পরিতোষের একটু দেরীই হল। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতেই এমন দেরী হয়েছে। ঘুরপথে পায়ে হেঁটে সে বিট্টুদের বাড়ির পেছন দিকের রাস্তা দিয়ে গন্তব্যের দিকে এগোতেই তার পকেটের মোবাইলটা কেঁপে উঠল। ভাইব্রেশন মোডে ছিল। ফোন বের করে দেখে আব্দুলের ফোন। কল রিসিভ করেই বলল, “তোরা এসে গেছিস নাকি”?

ওপাশ থেকে আব্দুল বলল, “স্যার আমি আর ডাক্তারবাবু তো আপনার ঠিকানার সামনে দাঁড়িয়ে আছি মিনিট দশেক হল। আপনার ডাক পাচ্ছি না তো”।

পরিতোষ বলল, “কিছু মনে করিস না ভাই। একটা কাজে একটু আটকে পড়েছিলাম রে। এখুনি আসছি। আর একটা কথা বল তো। তোদের আশেপাশে আটাশ ত্রিশ বছর বয়সী দুটো ছেলেকে দেখতে পাচ্ছিস”?

কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকবার পর আব্দুল চাপা গলায় বলল, “স্যার অমন বয়সের দুটো ছেলে আমাদের থেকে প্রায় কুড়ি মিটার দুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। কোন ঝামেলার ব্যাপার না কি স্যার”?

পরিতোষ বলল, “না না। ওরা আমারই লোক। ওদেরকেও আমি ডেকে পাঠিয়েছি। ওদের একজনের নাম শেখর, আরেক জনের নাম বিপ্লব। তুই ওদের দু’জনকে তোর কাছে ডেকে নে। আমি ফোন করে দিচ্ছি এখনই। দরজা খুলে দেবে। তোরা চারজন ভেতরে ঢুকে পড়। আমিও মিনিট সাতেকের ভেতরেই আসছি” বলে ফোন কেটে দিয়েই সে বিট্টুকে ফোন করে বলল, “সামনের দরজাটা খুলে দে ভাই। ওখানে চারজন দাঁড়িয়ে আছে। ওদের পেছনের ঘরে এনে বসিয়ে তুই পেছনের গেটটা খুলে দিস। আমি পেছনের রাস্তা দিয়েই আসছি”।
 

ঠিক তার সাত মিনিটের মাথায় পরিতোষ বিট্টুদের পেছনের ঘরে গিয়ে ঢুকতেই শেখর, বিপ্লব, আব্দুল আর ডাঃ দিব্যেন্দু বড়ুয়াকে দেখতে পেল। আব্দুল হাতজোড় করে ‘নমস্কার স্যার’ বললেও চল্লিশ একচল্লিশ বছর বয়সী ডক্টর দিব্যেন্দু এগিয়ে এসে তার পায়ের দিকে ঝুঁকতেই পরিতোষ তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “না না ডক্টর বড়ুয়া, এ কি করছেন আপনি। প্রণাম টনাম একেবারেই নয়। আর আপনি তো আমার চেয়ে বয়সে বড়”।
 

ডক্টর দিব্যেন্দুও পরিতোষকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “কতদিন বাদে আপনার সাথে দেখা হল স্যার। প্রায় রোজই আপনার কথা মনে পড়ে। মনে হয় একবার ফোন করে আপনার গলার স্বরটা একটু শুনি। কিন্তু আপনার নির্দেশ অমান্য করবার সাহস কিছুতেই জুটিয়ে উঠতে পারিনি। আজ আপনার ডাক পেয়ে আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না”।

পরিতোষও দিব্যেন্দুকে কয়েক মূহুর্ত বুকে চেপে ধরে হাতের বাঁধন আলগা করে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি, অনেকদিন বাদে দেখা হল আমাদের। তা কেমন আছেন ডক্টর? বৌদি কেমন আছেন? আর আপনার মেয়ে, কি যেন নামটা? ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে, আকাঙ্ক্ষা। ও কেমন আছে, কোন ক্লাসে পড়ছে এখন”?
 

দিব্যেন্দু পরিতোষকে ছেড়ে এক পা পেছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, “আপনার আশীর্বাদে আমরা সবাই ভাল আছি স্যার। মেয়ে এখন ক্লাস এইটে পড়ছে। দীপা আর আকাঙ্ক্ষা দু’জনেই মাঝে মাঝেই আপনার কথা বলে। ওরা প্রায়ই আমাকে বলে আপনাকে নেমন্তন্ন করে আমাদের বাড়ি ডাকতে। কিন্তু ওরা তো আর জানেনা যে, আপনি নিজেই সে পথ বন্ধ করে রেখেছেন। সে’কথা তো আর ওদের বলতে পারিনে আমি। তাই এক বছর আগে পর্যন্ত আমি ওদেরকে বলতাম যে ঠিক আছে আজই ফোন করব। আর রাতে বাড়ি ফিরে বলতাম প্রচণ্ড কাজের চাপে আপনাকে ফোন করবার কথা মনেই ছিল না। দীপা তো আমার কাছ থেকে বারবার আপনার ফোন নাম্বার নিতে চাইত। তাই নিরুপায় হয়ে তখন আমার মোবাইল থেকে আপনার কন্টাক্টটাই ডিলিট করে ফেলতে হয়েছে আমাকে। তারপর থেকে মুখে বলি, নাম্বারটা আমি ভুলে গেছি। যদিও আসলে সেটা মনে আছে”।

পরিতোষ ডাঃ দিব্যেন্দুর হাত ধরে তাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিতে দিতে বলল, “খুব ভাল করেছেন ডক্টর। বসুন বসুন। আপনাকে তো আগেই বুঝিয়ে বলেছি, আমার সাথে পার্সোনালি দেখা করা বা ফোনে কথা বলা, কোনটাই আপনাদের পক্ষে সেফ নয়। আপনাদের স্বার্থেই আপনাকে অমন নির্দেশ দিতে হয়েছে। কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই আপনাকে ডাকতে হয়েছে। এমন হঠাৎ আর জরুরী তলবে আপনার অসুবিধে হয়নি তো ডক্টর”?

দিব্যেন্দু সাথে সাথে বললেন, “না না স্যার। এ আপনি কী বলছেন বলুন তো? আমার পরিবারের চরম বিপদের দিনে আপনি যেভাবে আমাকে আর আমার পরিবারটাকে বাঁচিয়েছিলেন, তা তো আমরা সারা জীবনেও ভুলতে পারব না। আর আজ প্রায় দু’বছর বাদে আপনাকে মুখোমুখি দেখবার সুযোগ পেলাম। এ যে আমার কাছে কতটা খুশীর ব্যাপার তা বলে বোঝাবার মত ভাষা আমার নেই। কিন্তু আজ বাড়ি ফিরে আমি যে দীপা আর আকাঙ্ক্ষাকে কী বলব, সেটাই তো বুঝতে পাচ্ছিনা। ওরা যদি জানতে পারে যে আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল, তবু আমি আপনাকে নিয়ে বাড়ি যাই নি, এর কী জবাব যে দেব আমি”?

পরিতোষ বলল, “কেন জানিনা, আকাঙ্ক্ষা মামনিকে দেখতে আমার মনটাও খুব চাইছে আজ। আপনি ওদেরকে বলবেন, আমি কিছুদিনের মধ্যেই ওদের সাথে দেখা করব। আচ্ছা, আপনি তো আব্দুলকে চেনেনই। ওদের দু’জনকে চেনেন না। তাই আপনার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিই। এ হচ্ছে শেখর, আর ও হচ্ছে বিপ্লব। এরা আমার ছোট ভাইয়ের মত। প্রয়োজনে আমাকে অনেক কাজে এরা সাহায্য করে। আর শেখর বিপ্লব, ইনি হলেন ডক্টর দিব্যেন্দু বরুয়া”।

দিব্যেন্দু শেখর আর বিপ্লবের সাথে হ্যান্ডসেক করতেই বিট্টু ট্রেতে করে পাঁচ কাপ চা আর কিছু বিস্কুট নিয়ে ঘরে ঢুকল। বিট্টু বেরিয়ে যেতে সকলে চা খাওয়া শুরু করল। খেতে খেতেই পরিতোষ তার শার্টের বুক পকেট থেকে ভাঁজ করা কাগজ গুলো বের করে দেখতে দেখতে বলল, “এবার আমাকে এমন একজনকে শায়েস্তা করতে হবে যার এ শহরে খুব প্রভাব প্রতিপত্তি আছে। কোটি কোটি টাকার মালিক সে। টাকার জোরেই সে অনেক ধরণের কূ-কর্ম করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আর টাকার জোরেই সে সব রকম কূকর্ম করা সত্বেও বহাল তবিয়তে রাজা বাদশার মত দিন কাটাচ্ছে। সবদিকে তার আটঘাট বাঁধা আছে। তাকে আইনের জালে জড়িয়ে ফেলাটা প্রায় অসম্ভব। আর তোমরা সবাই জানো, এ ধরণের অপরাধীকে আমি কিভাবে শায়েস্তা করি। আজ সে এমন একজনকে তার ফাঁদে ফেলবার চেষ্টা করছে, যে কিনা আমার খুব কাছের একজন মানুষ। কিন্তু আমি তো সেটা হতে দিতে পারিনা, তাই একটা অ্যাকশন প্ল্যান আমি বানিয়েছি। আর এ ব্যাপারেই তোমাদের সকলের সাহায্য আমার চাই”।

আব্দুল, শেখর আর বিপ্লব প্রায় একসাথেই বলে উঠল, “আমরা সবাই আমাদের সাধ্যমত আপনাকে সাহায্য করব স্যার”।

পরিতোষ এবার ডাঃ দিব্যেন্দুর দিকে তাকিয়ে বলল, “ডক্টরদের প্রফেশনকে আমি একটা নোবল প্রফেশন বলেই ভাবি ডক্টর বরুয়া। আর প্রত্যেকটা ডাক্তারকেই নিজেদের পেশার প্রতি সৎ এবং নিষ্ঠাবান হওয়া জরুরী। আজ একজন গৃহবধূকে এক মহা বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে একটা অপারেশন শুরু করতে যাচ্ছি। আপনার কাছ থেকে এ ব্যাপারে বেশ বড়সড় একটা সাহায্যের আশা আমি করছি। তবে আপনার কাছ থেকে আমি যেটা চাইবো, সেটা আপনার মত সৎ এবং নিষ্ঠাবান একজন ডাক্তারের পক্ষে মেনে নেওয়া হয়তো সত্যিই খুব কঠিণ। আপনি তো জানেনই আইনের রক্ষক হয়েও আইনের বিধিনিষেধ অমান্য করে বাঁকা পথে আমি অনেক দোষীকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিই। অনেক নির্দোষকে বিপদমুক্ত করি। আর একাজে এদের মত ভাই বোনেরাই আমার শক্তি। দু’বছর আগে যেমন আমার নির্দেশে আব্দুলই তার দলবল নিয়ে আপনাকে বিপদমুক্ত করেছিল। আজ বিপদ এমন একজনের, যে আমার খুব কাছের মানুষ। বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট হলেও সম্পর্কে সে আমার বৌদি। তাকে আমি ঠিক তেমনই শ্রদ্ধা আর ভালবাসার চোখে দেখি। যদিও তার পরিচয়টা আপনাদের কাছে খুলে বলতে একটু বাঁধা আছে, তবে আমার মনে হয় আপনারা কেউই এ ব্যাপারে আমার ওপর কোনরকম সন্দেহ করবেন না। আপনার সাথে আমার পরিচয় বছর দুয়েক আগে হয়ে থাকলেও আমার এ ধরণের কোন কাজে আপনার সাহায্যের প্রয়োজন এর আগে কখনও পড়েনি। আজই প্রথম। তাই আপনার কাছে জানতে চাইছি, একজন প্রচুর ক্ষমতাশালী সমাজের শত্রুকে শায়েস্তা করতে আপনার প্রফেশনাল এথিক্স আর আদর্শকে উপেক্ষা করে আপনি কি সত্যি পারবেন আমাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে”?

ডাঃ দিব্যেন্দু বললেন, “স্যার ডাক্তারদের কাজ অসুস্থ লোকদের সুস্থ করে তোলা। কিন্তু আমার মত অনেক ডাক্তার মার্সি কিলিং-এর মত কাজও করে থাকেন। আইনের চোখে আজও মার্সি কিলিং অপরাধ। কিন্তু পরিস্থিতি বিশেষে আমার মত অনেক ডাক্তার স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এর সাথে জড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ হয়ত অর্থের বিনিময়েও এমন কাজে সহযোগিতা করেন। তবে আপনার কথায় মনে হচ্ছে মার্সি কিলিং-এর মত কোন ব্যাপার এটা নয়। আপনার আদর্শকে আমি মনে প্রাণে সাপোর্ট করি স্যার। আপনি আমার কাছ থেকে ঠিক কী ধরণের সাপোর্ট আশা করছেন সেটা তো এখনও জানিনা স্যার। তবু বলছি অপারেশন টেবিলে কাউকে মেরে ফেলা ছাড়া অন্য যেকোনও ধরণের সাহায্য করতে আমি প্রস্তুত”।

পরিতোষ প্রায় সাথে সাথেই আবার প্রশ্ন করল, “আমি যদি আপনাকে বলি সমাজের এক শত্রুকে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে হবে, তাতে আপনি রাজি হবেন ডক্টর”?
 

ডাঃ দিব্যেন্দু পরিতোষের কথা শুনে চমকে উঠে বললেন, “কী বলছেন স্যার? একজনকে পঙ্গু করে ফেলতে হবে সারা জীবনের জন্য”? দিব্যেন্দুর সাথে সাথে ঘরের বাকি সবাইও এবার বেশ নড়েচড়ে বসল।
 

পরিতোষ সামান্য হেসে জবাব দিল, “পঙ্গুই যে করে ফেলতে হবে তা ঠিক নয়। ওটা নেহাতই একটা কথার কথা হিসেবে ধরতে পারেন। আমি শুধু আপনার মতামতটা জানতে চাইছি। আমার বৌদিকে নিরাপদ রাখতে, তাকে বিপদমুক্ত করতে, প্রায় এমন ধরণেরই একটা কাজে আপনার সাহায্য আশা করছি। কারন লোকটার প্রভাব প্রতিপত্তি আর্থিক শক্তি এতটাই যে কোনভাবেই তাকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না”।

ডাঃ দিব্যেন্দু মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “স্যার, আমি তো ঠিক বুঝতে পারছি না আপনি ঠিক কী করাতে চাইছেন। একটু খুলে বলা যায় না কি”?
 

পরিতোষ বলল, “এই মূহুর্তেই পুরোপুরি ভাবে খুলে বলাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ডক্টর। তবে আমি আপনাকে একটা কাগজ দিচ্ছি। সেটা দেখে নিন। কাগজে যা লেখা আছে যদি আপনার পক্ষে তা করা সম্ভব হয়, তাহলে আমি আপনাকে পরে সব কিছু আলাদা ভাবে খুলে বলব। এদিকে আসুন। আমার পাশে দাঁড়িয়েই কাগজটা পড়ুন। আর এখানে যা লেখা আছে সে’সব শুধু নিজের মনের মধ্যে রাখবেন প্লীজ। মুখ ফুটে কোন কিচ্ছু বলবেন না। এ ঘরে এখন এই মূহুর্তে আর যারা আছে, তারা যেন কাগজে লেখা একটা বর্ণও জানতে বা আন্দাজ করতে না পারে। ও’ কথাগুলো কেবল আপনার আর আমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবেন। আমি চাইনা, অন্য কারো চোখে আপনি ছোট হয়ে যান। আমি আপনাকে আগেও বলেছি, এমন একটা কাজ করতে আপনার বিবেক হয়ত আপনাকে বাঁধা দেবে। তেমন হলে আমাকে শুধু আপনার অপারগতার কথাটুকুই জানিয়ে দেবেন। আমি আপনাকে কোনরকম জোর করব না। আপনার প্রত্যাক্ষানও আমি হাসি মুখে মেনে নেবো। শুধু মনে রাখবেন, আমার অত্যন্ত এক প্রিয়জনের প্রাণ সংশয়। তাকে বাঁচাতেই আমার এ প্রয়াস”।

ডাঃ দিব্যেন্দু শুকনো মুখে উঠে পরিতোষের পাশে এসে দাঁড়ালেন। পরিতোষ তার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বাকি দুটো কাগজ আব্দুল আর শেখরের দিকে এগিয়ে দিয়ে তাদের বলল, “তোরাও দেখে নে, তোদের কাকে কী করতে হবে। কাগজে সব লেখা আছে। আর কোনরকম ডিসকাশন নয়। শুধু ‘হ্যাঁ’ কিংবা ‘না’ বলবি তোরা। আর নিজের কাগজে যা লেখা আছে তা অন্য কাউকে জানাবি না। এখান থেকে বেরিয়ে যাবার পর আমার অবর্তমানে তো নয়ই এমনকি আমার সামনে এলেও এক টিমের কাজের ব্যাপারে অন্য টিমকে কোনকিছু জানানো চলবে না। যার যেটা কাজ সে ব্যাপারে আলোচনা শুধু নিজের টিম মেম্বারদের সাথে করবি, আর আমার সাথে আলাদা ভাবে করবি তোরা। শেখর, তুই আর বিপ্লব একসাথে কাজটা করবি। কিন্তু আব্দুলের সাথে বা ডক্টর বড়ুয়ার সাথে কোন আলোচনা বা পরামর্শ করতে পারবি না। ঠিক তেমনি আব্দুল তুইও শুধু তোর টিমের লোকজন নিয়ে কাজটা করবি। আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে কোন আলাপ আলোচনা নয়”।

আব্দুল, শেখর, বিপ্লব আর দিব্যেন্দু নিজের নিজের হাতের কাগজে চোখ বোলাতে লাগলো। সবাই চুপচাপ। ঘরে পিন স্টপ সাইলেন্স। প্রায় মিনিট দশেক বাদে আব্দুল প্রথম বলে উঠল, “নো প্রোব্লেম স্যার। হয়ে যাবে”।

মিনিট খানেক বাদে শেখর আর বিপ্লবও একই কথা বলল। ডাঃ দিব্যেন্দু তখনও তার হাতে ধরা কাগজের লেখাগুলো পড়ে যাচ্ছেন। আরও মিনিট দুয়েক বাদে তিনি বলে উঠলেন, “এ তো স্যার প্রায় ........”

পরিতোষ সাথে সাথে তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “প্লীজ ডক্টর। অন্য কোন কথা বলবেন না প্লীজ। এখন আমি শুধু আপনার ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ শুনতে চাই”।

ডাঃ দিব্যেন্দু পরিতোষের হাত ধরে বললেন, “হ্যাঁ স্যার। আমি রাজি”।

পরিতোষ এবার অনেকটা আশ্বস্ত হয়ে ডাঃ দিব্যেন্দুকে চেয়ারে বসতে বলল। দিব্যেন্দু চেয়ারে গিয়ে বসতেই পরিতোষ নিজের হাত সামনে বাড়িয়ে বলল, “এবার আপনারা সবাই ওই কাগজগুলো আমার হাতে ফেরত দিন”।

সবাই বিনা বাক্যব্যয়ে পরিতোষের হাতে কাগজগুলো ফিরিয়ে দিল। পরিতোষ কাগজগুলো ভাঁজ করে আবার নিজের পকেটে রেখে বলল, “আচ্ছা এবার শুনুন। ডক্টর বড়ুয়া, আপনি তো আমার সাথে এর আগে কোনও অপারেশন করেন নি। তাই আপনাকে অনেক কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে আমার। আর সে সব আমি যথা সময়ে করব। তবে শেখর, বিপ্লব আর আব্দুল, তোরা তো বুঝেই গেছিস যে তোদের কাজটাতে মোট তিনটে স্টেজ আছে। প্রথম স্টেজের কাজ শেখর আর বিপ্লবের। তোদের কাজে তিনটে ফেজ আছে বলে তোদের কাজটাতেই সময় সবচেয়ে বেশী লাগবে। কিন্তু আমি জানি তোরা খুব স্মুথলিই কাজটা করতে পারবি। তবে আমি একমাসের মধ্যে তোদেরকে পুরো কাজটা শেষ করতে বলছি। দ্বিতীয় স্টেজে আব্দুলের কাজে দুটো আলাদা আলাদা পার্ট আছে। প্রথম পার্টটাতে সময় লাগবে ছ’ থেকে দশ দিন। আর পরের পার্টটা একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। তবে শেখরদের ফেজের কাজ শেষ হবার পরেই আব্দুলের কাজ শুরু হবে। কিন্তু একমাস আব্দুলকে বসিয়ে রাখতে চাই না। তাই শেখর, তোরা চেষ্টা করবি তোদের প্রথম ফেজের কাজটা যেন দিন সাতেকের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। তোদের প্রথম পার্টের কাজ শেষ হলেই আব্দুল নিজের কাজ শুরু করতে পারবে। আর আব্দুল তার প্রথম পার্টের কাজ করতে করতে তোরা তোদের সেকেন্ড আর থার্ড পার্টের কাজটা করে ফেলবি। আর থার্ড স্টেজে ডক্টর বড়ুয়ার কাজ একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। আর সেটা হবে আব্দুলের কাজের সেকেন্ড পার্ট শেষ হবার দিনই। ডক্টর, আপনার মনে হয়ত অনেক প্রশ্ন অনেক ভাবনা উঠছে। আপনাকে আমি আলাদা ভাবে সে’সব কিছু বুঝিয়ে দেব। তবে নিজের ওপর যেন বিপদ না আসে, এ ব্যাপারে আপনাকে কিন্তু সতর্ক থাকতেই হবে। তবে ঝুঁট ঝামেলা কিছু এলেও আমিই তার মোকাবিলা করব। এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। তাই আপাততঃ আপনাকে আর আমি কিছু বলছি না। তবে আব্দুল, শেখর, তোদের কি কিছু বলার আছে”?
 

শেখর বলল, “স্যার কাজ তো হয়ে যাবে। কিন্তু টার্গেটগুলোকে আমরা আইডেন্টিফাই করব কিভাবে, তা তো বললেন না। তাদের ছবি বা নাম ঠিকানা কিছু জানা না থাকলে তো একমাসের মধ্যে কাজটা শেষ করা মুস্কিল হবে স্যার”।
 

আব্দুল বলল, “স্যার আমারও একই কথা। টার্গেটের নাম ঠিকানা, আর সম্ভব হলে একটা ছবি যদি পেতাম, তাহলে সুবিধে হত”।

পরিতোষ বলল, “সেটা কি আর আমি বুঝিনা বলে ভাবছিস তোরা? আসলে এ জিনিসগুলো যোগার করতে করতেই আসতে আমার একটু দেরী হয়ে গিয়েছিল” বলতে বলতে নিজের শার্টের ভেতরে লুকিয়ে রাখা একটা মাঝারী সাইজের খাম বের করল।
 

খামটা খুলে ভেতর থেকে কয়েকটা ছবি বের করে তার থেকে বেছে বেছে তিনটে ছবি শেখরের হাতে দিয়ে বলল, “এই তোদের তিন টার্গেট। ছবির পেছনে ডিটেইলস লেখা আছে” বলে আব্দুলের হাতে আরো দুটো ছবি ধরিয়ে দিয়ে বলল, “এটা তোর টার্গেট আব্দুল। একটা সিঙ্গেল ছবি। আর অন্যটা তার পরিবারের ছবি। যদিও তার পরিবারের অন্য কেউ তোর টার্গেট নয়। তবু তার পরিবারের লোকগুলোকে চিনে রাখা দরকার বলেই দিলাম”।

ডাঃ বড়ুয়ার দিকে চেয়ে বলল, “আপনাকে আমি কোন ছবি দিতে চাইছি না ডক্টর। আপনার জীবনে এ ধরণের কাজ আপনি এই প্রথম করছেন। তাই আপনাকে যতটা সম্ভব নিরাপদে রাখা আমার কর্তব্য। তাই আপনাকে কোন ছবি দিচ্ছি না। অবশ্য ছবির তেমন প্রয়োজনও পড়বে না আপনার। আপনার নার্সিংহোমের পেশেন্ট হিসেবেই সে আপনার কাছে যাবে। আপনি শুধু পেশেন্টের ট্রিটমেন্ট করবেন। তবু শুধু আপনার কৌতূহল মেটাতে আপনি ওদের হাতের ছবিগুলো দেখে নিতে পারেন”।

ডক্টর দিব্যেন্দু কৌতূহলী হয়েই আব্দুলের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। পরিতোষ লক্ষ্য করল আব্দুলের মুখটা ক্রমশঃ যেন হিংসক হয়ে উঠছে। তাই সে আব্দুলকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মাথা ঠাণ্ডা রেখে তোর টার্গেটকে ভাল করে চিনে নে আব্দুল”।


______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 12-03-2020, 07:58 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)