12-03-2020, 07:57 PM
(Update No. 146)
এবার সীমন্তিনী নিজের পার্সোনাল মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলল, “এখন আমি পরিতোষকে ফোন করছি। স্পীকার অন করে দেবো। তোমরা সব কিছু শুনতে পারবে। আর গোটা ঘটনাটা বুঝতে পারবে। কিন্তু মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে শুনে যাবে। কেউ কোন শব্দ করবে না, প্লীজ” বলেই পরিতোষের নাম্বার ডায়াল করল।
পরিতোষের গলা শোনা গেল, “কি আশ্চর্য, এমন অসময়ে আমার অধরা রূপসী মুন ডার্লিং-এর ফোন? সব ঠিকঠাক আছে তো ডার্লিং”?
এমন সম্বোধন শুনে অর্চনা অবাক হয়ে নবনীতার মুখের দিকে চাইতেই নবনীতা তাকে ঈশারায় চুপ করে থাকতে বলল। সীমন্তিনী তখন বলছে, “আমি আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। বাড়িতেই আছি। একটা জরুরী ব্যাপারে তোমাকে এ’সময় ফোন করতে বাধ্য হলাম। কিন্তু তুমি কি ব্যস্ত আছো? আমার কথাটা সারতে কিন্তু অনেক সময় লাগবে”।
পরিতোষ তখন “এক সেকেন্ড ডার্লিং” বলে চুপ করে গেল। তারপর প্রায় আধ মিনিট বাদে আবার বলল, “আমার চেম্বারে কয়েকজন লোক ছিল। তাদের সরিয়ে দিলাম। এখন আমি একা আছি। এবার বল তো কি হয়েছে মন্তি? বনি আর তুমি ঠিক আছো তো। কোনও সমস্যা হয়নি তো”?
সীমন্তিনী বলল, “সমস্যা একটা হয়েছে পরি। তবে সেটা আমাকে বা নীতাকে নিয়ে নয়। কিন্তু আগে তুমি একটা কথা বলো তো। টার্গেট থ্রি সম্বন্ধে তোমার কাছ থেকে কোন আপডেট পাচ্ছি না কেন পরি? তুমি কি তোমার ভিজিল্যান্স সরিয়ে নিয়েছ সেখান থেকে”?
পরিতোষ অবাক গলায় বলল, “না তো। নজরদারি তো চলছেই। আমি রেগুলার ফিডব্যাকও পাচ্ছি। তবে তেমন কোন ইম্পরট্যান্ট আপডেট দেবার নেই বলেই তোমাকে কিছু বলিনি”।
সীমন্তিনী বলল, “এটা আমি সত্যিই তোমার কাছ থেকে আশা করিনি পরি। আমি তো ভেবেছিলুম যে তুমি কলকাতায় থাকতে আমার দাদাভাই আর রচু সোনাকে নিয়ে আমাকে কিছু ভাবতেই হবে না। তারা সর্বক্ষণ তোমার ভিজিল্যান্সে সেফ থাকবে”।
পরিতোষ আরও অবাক হয়ে বলল, “কী বলছ তুমি মন্তি! আমার লোকেরা তো ভোর চারটে থেকে রাত বারোটা অব্দি তোমার দাদাভাইয়ের ওপর নজর রাখছে। তারা তো পুরোপুরি সুস্থ ও নিরাপদ আছে। তবু তুমি এমন কথা বলছ”?
সীমন্তিনী বলল, “কারন না থাকলে এমন কথা তোমাকে নিশ্চয়ই বলতুম না আমি। আমার রচু সোনা যে বড় একটা বিপদের সম্মুখীন হয়ে রয়েছে। বিমল আগরওয়ালার টার্গেট হয়ে গেছে সে, সেটা তুমি জানতে পারনি এখনও”?
পরিতোষ এবার প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “হোয়াট? কী বলছ তুমি মন্তি? রচনা বৌদি ওই বিল্ডার বিমল আগরওয়ালার টার্গেট? তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছো”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “এমন একটা সিরিয়াস কথা নিয়ে আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করব বলে ভাবছ তুমি পরি? রচু আমার জান, আমার প্রাণ। একথা তুমি জানো না”?
পরিতোষ এবার দাঁতে দাঁতে চেপে চেপে বলল, “তুমি এমন কি শুনেছো তা আমাকে এক্ষুনি সব খুলে বল মন্তি প্লীজ। যদি তোমার কথা সত্যি হয়, তাহলে বিমল আগরওয়ালা খুব শিগগীরই এ পৃথিবী থেকে বিদেয় নেবে। প্লীজ আমাকে খুলে বলো”।
সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “না পরি, কোনও রকম এনকাউন্টার বা খুন খারাপি হোক, এটা আমি চাই না। অন্ততঃ এখনই সেটা চাইছি না আমি। তবে আমি যতটুকু ডিটেইলস জানতে পেরেছি, সে-সব তোমায় সংক্ষেপে জানাচ্ছি। তারপর অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কথা বলা যাবে” বলে একটু থেমে আবার বলল, “শোনো পরি, বিমল আগরওয়ালার সাথে রবিশঙ্কর অনেক আগে থেকেই পরিচিত ছিল। হয়তো রবিশঙ্করকে ওই কমপ্লেক্সের চাবি বিমল আগরওয়ালা নিজেই দিয়েছিল। তবে রবিশঙ্করের উদ্দেশ্য শুধু দাদাভাইয়ের দু’লাখ টাকা লুটে নেওয়াই ছিল না পরি। ওর আরও একটা মারাত্মক দুরভিসন্ধি ছিল। সে গোপনে ওই বিমল আগরওয়ালার সাথে আরো একটা চুক্তি করেছিল। বেশ কিছু টাকার বিনিময়ে রচুকে সে বিমলের হাতে তুলে দেবে। রবিশঙ্কর অন্য কেসে ফেঁসে এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। তাই বিমল অন্য আরেকজনের সাথে কন্টাক্ট করছে রচুর সর্বনাশ করবার উদ্দেশ্যে”।
পরিতোষ চমকে উঠে বলল, “আর ইউ শিওর মন্তি? তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো”?
সীমন্তিনী শান্ত গলাতেই জবাব দিল, “আমি তো তোমারই শিষ্যা পরি। আমি হান্ড্রেড টেন পার্সেন্ট শিওর হয়েই তোমাকে এসব কথা বলছি। এ চুক্তিটা সম্ভবতঃ দাদাভাই আর রচু কলকাতা যাবার আগেই হয়েছিল। তবে যেদিন দাদাভাই আর রচু বাড়ি ছেড়ে কলকাতা রওনা হয়েছিল সেদিন রবিশঙ্করও তাদের সাথে ছিল। রবিশঙ্করই যে দাদাভাইকে ফ্ল্যাট আর ওই কমপ্লেক্স লিজে নেবার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিল তা তো তোমাকে আমি আগেই জানিয়েছিলুম। কলকাতা যাবার পথে কোন এক মূহুর্তে ট্রেণের মধ্যেই রবিশঙ্কর তার মোবাইলে রচুর এক বা একাধিক ছবি তুলে নিয়েছিল। সে ছবিগুলো সে বিমলকে দিয়েছিল। বিমল চরিত্রগত দিক দিয়ে একজন নারী মাংসলোভী। এমন হতে পারে যে বিমল সে ছবি দেখেই রচুকে পাবার জন্যে উতলা হয়ে উঠেছিল। আবার এমনও হতে পারে যে ওই ছবি দেখাবার আগেই রবি বিমলের সাথে চুক্তি করেছিল। রবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ফলে বিমলের ওই অভিসন্ধি পূরণ হয়নি। আট দিন আগে বিমল অন্য আরেকজনের সাথে এ ব্যাপারে চুক্তি করেছে। কিন্তু এবার সে যার সাথে চুক্তিটা করেছে, ঘটণাচক্রে গতকালই কাকতালীয় ভাবে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়ে গেছে। আর পুরো ব্যাপারটা আমি সবে গতকাল রাতেই জানতে পেরেছি। আজ সকাল থেকে ব্যাপারটাকে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে এনালাইসিস করাতে সব কিছু আমার কাছে পরিষ্কার হল। এই নতুন এজেন্টকে বিমল রচনার একটা ছবিটা দেখিয়েছে, যেটা রবিশঙ্কর ট্রেনের কামরায় তুলে তাকে দিয়েছিল আগে। দাদাভাইয়ের ফ্ল্যাটের ঠিকানা ও রচুর ছবিটা দিয়ে সে এজেন্টকে বিমল ছ’ মাস সময় দিয়েছে। আর সে এজেন্টও বিমলকে আশ্বাস দিয়ে কাজটা হাতে নিয়েছে। এটুকুতে আমার আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই”।
পরিতোষ এবার দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “ওই হারামীর বাচ্চাটার দিন ফুরিয়ে এসেছে বলেই সে বৌদির পেছনে লেগেছে। তুমি কিচ্ছু ভেবো না মন্তি। আমি এখনই আমার স্পেশাল একটা টিম এ কাজে লাগাচ্ছি। কিন্তু বিমলের এই নতুন এজেন্টটা কে, সেটা তো বললে না”?
সীমন্তিনী একবার নবনীতার দিকে দেখে বলল, “অবশ্যই বলব পরি। তবে তার আগে আমি তোমাকে জানাতে চাই যে সে এজেন্ট নিজে এক ধরণের অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকলেও এমন ধরণের কন্টাক্ট নেবার কাজ সে আগে কখনও করেনি। আমি তো তোমারই শিষ্যা পরি। তোমার আর আমার আদর্শ তো একই। সেই এজেন্ট যদিও এক ধরণের অসামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে, যদিও সে আমাদের দেশের আইন ভঙ্গ করছে, সে একেবারেই বোর্ন ক্রিমিনাল নয়। একটা সময় বিপাকে পড়েই সে এমন একটা অসামাজিক কাজ শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল। আর কাজটা করতে করতে অনেকগুলো নির্দোষ নিপীড়িত অসহায় মানুষকে তার নিজের কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে। সে নিজেই এখন এ ব্যাপারে অনুতপ্ত। কিন্তু সে ওই অসামাজিক ব্যবসা ছেড়ে দিলে তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া ওই নির্দোষ নিপীড়িতা মেয়েগুলোরই বেশী আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই আমি অন্যভাবে ট্রিট করে তাকে ওই অন্ধকার জগত থেকে বের করে আনবো বলে ভাবছি। আশা করি তুমি আমার এ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে”।
পরিতোষ এবার অনেকটা শান্ত স্বরে জবাব দিল, “আমি জানি মন্তি। আমার প্রিন্সিপল আর তোমার প্রিন্সিপল আলাদা কিছু নয়। তোমার কথার অর্থ আমি বুঝেছি। তবে তুমি যদি আমাকে অ্যাসুরেন্স দাও যে অমন একজন ক্রিমিনালকে তুমি অপরাধের জগত থেকে বের করে আনতে পারবে, তাহলে আমিও তোমাকে ফুল সাপোর্ট দেব। তুমি তার নাম ঠিকানা নিশ্চিন্তে আমাকে জানাতে পারো। আমি তোমাকে কথা দিলাম, তোমার এমন একটা শুভ প্রচেষ্টায় আমি তোমাকে কক্ষনো বাঁধা দেব না। আর যতদিন তোমার প্রচেষ্টা চলতে থাকবে ততদিন আমি নিজেও তার এগেন্সটে কোন স্টেপ নেব না। সে শুধু তোমার প্রোজেক্ট হয়েই থাকবে”।
সীমন্তিনী এবার একটা হাঁপ ছেড়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরি। আমার ওপর এমন ভরসা রাখছো বলে আমি সত্যিই থ্যাঙ্কফুল তোমার কাছে। তবে তার ঠিকানা তুমি আগে থেকেই জানো। তাই সেটা বলার আর প্রয়োজন হবে না। নামটাই শুধু বলছি তোমায়। তার নাম মিসেস মহিমা মালহোত্রা সেন”।
এবারে পরিতোষের গলা শুনে মনে হল না যে সে মহিমার নাম শুনে চমকে গেছে বা অবাক হয়েছে। সে খুব শান্ত স্বরে বলল, “সে তো তোমার দাদাভাই যে যোগা ইনস্টিটিউটে কাজ করেন সে ইনস্টিটিউটের মালিক। কিন্তু ওই যোগা ইনস্টিটিউটের ওপরেও তো আমি নজর রেখেছি। সেখানে অনৈতিক কোন কাজ হয় বলে তো খবর পাইনি এখনও। আর ইউ শিওর? বিমল এ কাজের জন্য মহিমাকেই কন্টাক্ট করেছে”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ পরিতোষ, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত এ ব্যাপারে। আর তুমি হয়তো শুনে অবাক হবে যে মহিমা নিজে মুখে গতকাল রাতে এ’সব কথা বলেছে আমাকে। গত সাতদিন ধরে অনবরত ভেবেও সে রচুকে বাঁচাবার কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে গতকাল দুপুর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছিল। অবশ্য সে এখনও জানে না যে আমি একজন পুলিশ অফিসার। সে আমাকে কেবলই দাদাভাইয়ের বোন আর রচুর হিতৈষী বলে ভেবে আমাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলেছে। তার বেআইনি ব্যবসার কথাও সে নিজে মুখেই স্বীকার করেছে আমার কাছে। কোন বোর্ন ক্রিমিনাল তো এমনটা করতে পারে না। মহিমার সাথে বিমলের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। একটা সময় বিমল নাকি তার খুব উপকার করেছিল। তাই সে সারাজীবন বিমলের অনুগত হয়ে থাকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মহিমা নিজে অসামাজিক ব্যবসা করলেও এ ধরণের কন্ট্রাক্টের কাজ সে কোনদিন করেনি। তাই প্রথমে বিমলের অফার নিতে স্বীকার করেনি সে। পরে কথায় কথায় যখন বিমল তাকে প্রচুর টাকা দেবার কথা বলছে তখন তার মনে হয়েছে যে সে যদি বিমলের কাজটা হাতে না নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে বিমল হয়তো আরও বেশী টাকার লোভ দেখিয়ে অন্য কাউকে কাজটার দায়িত্ব দেবে। রচুকে মহিমাও খুব ভালবেসে ফেলেছে গত কয়েকটা দিনে। রচু বা দাদাভাইয়ের কোন ক্ষতি করবার কথা সে ভাবছে না। কিন্তু রচনার ওপর বিমলের কূনজর অন্ততঃ মাস ছয়েকের মত আটকে দিতে পারছে ভেবেই বিমলের কথায় রাজি হয়েছে। কিন্তু নিজে কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। তাই বুঝতে পারছ তো, এমন যার মানসিকতা, সে যত জঘণ্য কাজেই লিপ্ত থাকুক না কেন, একটু চেষ্টা করলেই তাকে মেইন স্ট্রীমে ফিরিয়ে আনা যাবে। আমি জানি এধরণের বহু প্রোজেক্ট তুমি সাকসেসফুলি হ্যান্ডেল করেছ। আমি এই প্রথম একটা সুযোগ পেলাম। আর তোমার শিষ্যা হয়ে এ কাজটা আমি করতে চাই। আর এ জন্যেই আমি চাইছি যে ইনভেস্টিগেশনের জন্য তোমাকে যদি তার কাছে যেতেও হয়, তুমি তাকে অন্য কোনভাবে হ্যারাসড কোর না প্লীজ। এই সিক্রেট প্রোজেক্টটা ডিল করতে প্লীজ বাঁধা দিও না আমাকে”।
পরিতোষ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকবার পর বলল, “তুমি যে আমার আদর্শকে পাথেয় করে একটা শুভ কাজে হাত দিতে চাইছো, এ’কথা শুনে আমার মনটা যে কতটা খুশীতে ভরে গেল, এ আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারব না ডার্লিং। আমার তরফ থেকে বাঁধা তো উঠবেই না, বরং আমি তোমাকে বেস্ট অফ লাক জানাচ্ছি। আর আমি বুঝতে পাচ্ছি তোমার কাছ থেকে আজ যেমন রিপোর্ট আমি পেলাম, তাতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই আমি আজ থেকেই ফুল ফোর্সে কাজ শুরু করে দিচ্ছি। তবে একটা কথা কিন্তু তুমি ভুল বলেছ ডার্লিং। এটাই তোমার নিজস্ব ফার্স্ট রিহাবিলিটেশন প্রোজেক্ট নয়। তোমার ফার্স্ট প্রোজেক্ট নিয়ে তুমি অলরেডি কাজ শুরু দিয়েছ, সেটা তো আমি জানিই। বনিই তো তোমার ফার্স্ট রিহেব প্রোজেক্ট। এটা তুমি বোধহয় ভুলেই গেছ। তাই মহিমা হবে তোমার সেকেন্ড রিহেব প্রোজেক্ট। বাই দা বাই, বনির ব্যাপারে ফারদার কোন ডেভেলপমেন্ট হয়েছে কি”?
সীমন্তিনী নবনীতার মুখের দিকে এক নজর দেখে জবাব দিল, “গতকালই তো তোমাকে লেটেস্ট ডেভেলপমেন্টের খবর দিয়েছি পরি। ও সামনের এক তারিখ থেকেই ওর নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে। ওর ভেতর আমি একটা পজিটিভ এনার্জির আঁচ দেখতে পাচ্ছি। ও নিশ্চয়ই সফল হবে দেখো”।
পরিতোষ বলল, “তোমার ভেতরের পজিটিভ এনার্জিই ওর ভেতরে ইন্ডিউসড হচ্ছে ডার্লিং। এ আমি খুব ভালভাবেই বুঝতে পাচ্ছি। তোমার ছোঁয়ায় ওর জীবনের পুরনো সব কালিমা মুছে যাবে। নবনীতা সত্যিই এক নতুন নীতা হয়ে উঠবে এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। সে জন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাই আদর আর কৃতজ্ঞতা বশতঃ তোমাকে একটা চুমু উপহার দিচ্ছি। আচ্ছা ও এখন ঠিক কোথায় আছে? তোমার সঙ্গেই? না পাশের ঘরে”?
সীমন্তিনী এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “আঃ, পরি সব সময় তোমার এ’সব ঠাট্টা ভালো লাগে বলো? আর এ মূহুর্তে নীতা আমার সাথেই আছে। আমাদের সব কথা শুনছেও। তোমার ফাজলামো নীতা বুঝতে পারলেও এ ঘরে এমন আরও একজন আছে যে তোমার এ’সব ফাজলামো শুনে ঘাবড়ে যাবে। তাই প্লীজ, মুখে লাগাম লাগাও”?
পরিতোষ এবার আবার অবাক হবার সুরে বলল, “সরি মন্তি। কিন্তু তোমার ঘরে এ মূহুর্তে নীতা ছাড়া আর কে থাকতে পারে বল? তোমার ওই লক্ষ্মীদি? না আর কেউ”?
সীমন্তিনী বলল, “না, লক্ষ্মীদি নয়। আমার আরেকটা বোন। যে আমার রচুসোনার নিজের মায়ের পেটের দিদি। বড়দিদি। ওর নাম অর্চনা”।
পরিতোষ বলল, “এগেন সরি মন্তি। আমি তো ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। এসমস্ত সিক্রেট আলোচনার সময়েও যে তোমার আশে পাশে অন্য কেউ থাকতে পারে, এ তো আমি ভাবতেই পারিনি। কিন্তু মন্তি, ব্যাপারটা তো বেশ রিস্কি হয়ে গেল। তোমার বৌদির দিদি এ’সব জেনে ফেলা মানে তোমার বৌদি আর তোমার দাদাভাইও জেনে যাবে। হয়তো তোমাদের বা তাদের বাড়ির লোকজনেরাও এসব ব্যাপার জেনে ফেলবে। আর তার ফলে আমার কাজটা কতটা কঠিন হয়ে যাবে, এটা তুমি ভাবোনি”?
সীমন্তিনী অর্চনার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “সব ভেবে দেখেছি আমি পরি। তুমি সেটা নিয়ে ভেবো না। তোমার কাজে নতুন করে কোনও কঠিনতা আসবে না। নীতা আর অর্চু, দু’জনেই আমাকে ভালোবাসে। ওরা কেউ কোনভাবে আমাদের কাজে কোনরকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। ওরা দু’জনেই আমার কাছে শপথ করেছে, এ’সব ব্যাপার শুধু আমাদের এ চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই রচু আর দাদাভাই এ’সবের কোন আঁচও পাবে না, আর ঘাবড়ে গিয়ে তোমার কাজকে কঠিন করে তোলার সুযোগও পাবে না। তুমি এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো”।
পরিতোষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, “বেশ, তুমি যখন সে ভরসা দিচ্ছ, তাহলে আর আমার বলবার কিছু থাকে না। তবু বলছি মন্তি। আমার নিজের কোন ভাই বোন নেই। কিন্তু ভাইবোনেদের মধ্যে যে কত মধুর কত মিষ্টি সম্পর্ক থাকতে পারে, তা কিছুটা হলেও আমি দেখেছি। তাই তিনি যখন এখন তোমার সাথেই আছেন, তোমার মাধ্যমেই তাকে একটা ছোট্ট কথা বলতে চাইছি। ম্যাডাম, মন্তির আর আমার সম্পর্কটা যে ঠিক কেমন সেটা হয়ত আপনি কিছুটা শুনে থাকবেন। আবার এমনও হতে পারে যে পুরোটা শোনেন নি। তবে যেটুকু শোনেননি, সেটুকুও হয়ত পরে জানতে পারবেন। আপনার ছোট বোন রচনাকে আমিও নিজের বৌদি বলেই ভাবি। ওনারা যেদিন কলকাতা এসেছেন তার দু’দিন পর থেকেই আমি তাদের অজ্ঞাতে তাদের ওপর নজর রেখে যাচ্ছি। আমি থাকতে মন্তির দাদাভাই আর বৌদির ওপর কোন বিপত্তি আসতে পারবে না বলেই আমি মনে করি। তবে মন্তির দাদাভাইয়ের টাকাটা লুট হবার আগে আমি তাদের ব্যাপারে কিছু জানতুম না। সে ঘটণাটা ঘটে যাবার পরেই মন্তি আমাকে তাদের কথা বলেছিল। তাই তার পর থেকেই আমি ওদেরকে চোখে চোখে রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু রচনা বৌদি বা মন্তির দাদাভাই যদি জানতে পারে যে তাদেরকে কেউ ফলো করছে, বা কেউ তাদের ওপর নজর রাখছে, তাহলে তারা খুব স্বভাবতই একটু ভীত হয়ে পড়বে। এতদিন আমরা গোপনে যে কাজটা করে এসেছি, সেটা এখন আপনার কাছে আর গোপন নেই। ছোটবোনের প্রতি স্নেহ বশতঃ বা ভাবুক হয়ে আপনি যদি কখনও মুখ ফস্কেও এসব কথা বলে ফেলেন, তাহলে কিন্তু আমাকে কাজটা করতে খুব কষ্ট পেতে হবে। তাই আমি আশা করব, এ ব্যাপারে আপনি প্লীজ খুব সতর্ক থাকবেন। আপনার ছোটবোন আর ভগ্নীপতির সুরক্ষার জন্যই আপনাকে এ অনুরোধটুকু করছি আমি। প্লীজ আমার অনুরোধটা রাখবেন”।
অর্চনা সীমন্তিনীর হাত আঁকড়ে ধরে করুন চোখে তার মুখের দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই সীমন্তিনী ফোনে বলল, “তোমার অনুরোধ সে রাখবে বলে কথা দিলো পরি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো”।
পরিতোষ তারপর বলল, “বেশ, তাহলে এবার তুমি কি আর কিছু বলতে চাও মন্তি”?
সীমন্তিনী বলল, “আরো একটা ছোট্ট অনুরোধ আছে পরি। তুমি যদি মহিমাকে ইন্টারোগেশন কর, তাহলে দুটো কথা মাথায় রাখবে। আমার অফিশিয়াল আইডেন্টিটি মহিমার কাছে খোলসা কোর না। আর আমিই যে তোমাকে এসব ফিডব্যাক দিচ্ছি তা যেন মহিমা কোনভাবে জানতে না পারে। পারতপক্ষে তোমার সাথে যে আমার পরিচয় আছে, এটাও যেন সে জানতে না পারে। আমাকে যেন সে শুধুমাত্র রতীশ ভট্টাচার্য্যির ছোট বোন হিসেবেই জানে। এমন অনুরোধ কেন করছি, আশা করি তুমি তা বুঝতে পেরেছ”।
পরিতোষ বলল, “নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি। আর তোমার এ অনুরোধও আমি রাখব। আর কিছু”?
সীমন্তিনী বলল, “আপাততঃ আর কিছু বলার নেই। তবে বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে যদি তোমার আর কিছু জানবার দরকার হয় তা আমাকে জানিও। আমি সে সব রিপোর্ট তোমায় দেবার চেষ্টা করবো। ওকে”?
পরিতোষ বলল, “ওকে মন্তি, হ্যাভ এ গুড ডে” বলে ফোন কেটে দিল।
*****************
সীমন্তিনীর সাথে কথা বলা শেষ হতে পরিতোষ একমনে গভীরভাবে অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করল। তারপর নিজের পকেট থেকে আরেকটা মোবাইল বের করে কাউকে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সে বলল, “আব্দুল, আজ সন্ধ্যের পর তুই কি ব্যস্ত আছিস”?
ও’পাশ থেকে আব্দুল জবাব দিল, “নমস্কার স্যার। আজ সন্ধ্যেয় কাজ তো একটু আছেই। তবে আপনার ডাকের কাছে সে সব কিছুই না। আপনি বলুন, কোথায় ক’টার সময় আমাকে যেতে হবে”।
পরিতোষ বলল, “আজ রাত ঠিক আটটায় আমার দু’নম্বর আড্ডায় চলে আসবি। একটা নতুন কাজ করতে হবে। আর শোন, এ কাজে তোর টিম ছাড়াও একটা হাসপাতাল এবং বিশ্বস্ত একজন ডাক্তারের প্রয়োজন পড়বে। সার্জেন হলে ভাল হয়। ভরসা করবার মত এমন কোনও ডাক্তার তোর খোঁজে আছে নাকি রে”?
আব্দুল দু’সেকেন্ড চুপ থেকেই বলল, “কেন স্যার, বাইরে খুঁজতে হবে কেন? আমাদের দিব্যেন্দু ডাক্তারকে দিয়ে কাজ চলবে না? সেও তো সার্জেনই”।
পরিতোষের চোখ মুখ যেন হঠাতই চকচক করে উঠল। সে বলল, “ওঃ, ঠিক বলেছিস তুই আব্দুল। ওনার কথা তো আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম রে। আচ্ছা উনি কোথায় আছেন এখন বল তো? তখন তো তিনি নাগের বাজারে থাকতেন”।
আব্দুল বলল, “স্যার, নাগের বাজারে তো তার বাড়ি। সে তো তখন দমদমের একটা নার্সিং হোমে কাজ করত। তিন চারদিন আগে ডাক্তার তার গাড়ি সার্ভিসিং করাতে আমার গ্যারাজে এসেছিল। তখন বলল যে সে এখন বাইপাসের ধারে একটা বড় প্রাইভেট নার্সিং হোমে আছে। আপনার কথাও জিজ্ঞেস করছিল সেদিন”।
পরিতোষ এবার জিজ্ঞেস করল, “আমি তো বোধহয় ওনার নাম্বারটাও হারিয়ে ফেলেছি রে। আচ্ছা তোর কাছে কি তার নাম্বার আছে”?
আব্দুল জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার আছে। আপনি বললে আমি এখনই তাকে ফোন করতে পারি”।
পরিতোষ বলল, “আচ্ছা বেশ, তবে শোন। তুই তার সাথে কন্টাক্ট কর। আর বল যে আমি আজ রাত আটটায় তার সাথে দেখা করতে চাই। যদি তিনি রাজী হন, তাহলে তুই আমার আড্ডায় আসবার আগে তার ওখানে যাবি। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসবি। পারবি তো”?
আব্দুল বলল, “পারব না কেন স্যার। নিশ্চয়ই পারব। আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকুন এ ব্যাপারে। আপনার জন্য এ আব্দুলের জান হাজির আছে স্যার”।
পরিতোষ বলল, “তুই তাহলে তার সাথে কথা বলে নে। আর তিনি আসতে পারবেন কিনা সেটা আমাকে সন্ধ্যের আগেই ফোন করে জানাবি। ঠিক আছে”?
আব্দুল বলল, “ঠিক আছে স্যার। আমি সন্ধ্যের আগেই আপনাকে তা জানিয়ে দেব। আর কিছু”?
পরিতোষ বলল, “না এখন আর কিছু নয়। বাদবাকি সব রাতে আলোচনা করব। আচ্ছা আপ্রীত আর প্রীতিদি কেমন আছে রে”?
আব্দুল বেশ খুশী গলায় বলল, “ওরা সকলেই ভাল আছে স্যার। ছেলেটা দিনে দিনে খুব ছটফটে হচ্ছে। প্রীতিও খুব ভাল আছে। পরশু রাতেই তো বলছিল, যে এক মাসের মধ্যে সে তার ভাইকে দেখতে পায়নি”।
পরিতোষ বলল, “তাকে বলিস, আমি এ সপ্তাহেই একবার তার সাথে দেখা করব। কেমন”?
আব্দুল খুশীতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, “সত্যি বলছেন স্যার। ঠিক আছে, আমি এখনই প্রীতিকে এ সুখবরটা শোনাচ্ছি। ও খুব খুশী হবে এ’কথা শুনে”।
পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে রে আব্দুল। এখন ছাড়ছি তাহলে। সন্ধ্যের আগেই কিন্তু আমাকে ফোন করে কনফার্ম করবি”।
আব্দুল ‘হ্যাঁ’ করতেই পরিতোষ ফোন কেটে দিল। তারপর আবার চোখ বুজে একমনে কিছু একটা ভাবতে শুরু করল।
______________________________
এবার সীমন্তিনী নিজের পার্সোনাল মোবাইলটা হাতে নিয়ে বলল, “এখন আমি পরিতোষকে ফোন করছি। স্পীকার অন করে দেবো। তোমরা সব কিছু শুনতে পারবে। আর গোটা ঘটনাটা বুঝতে পারবে। কিন্তু মুখে একেবারে কুলুপ এঁটে শুনে যাবে। কেউ কোন শব্দ করবে না, প্লীজ” বলেই পরিতোষের নাম্বার ডায়াল করল।
পরিতোষের গলা শোনা গেল, “কি আশ্চর্য, এমন অসময়ে আমার অধরা রূপসী মুন ডার্লিং-এর ফোন? সব ঠিকঠাক আছে তো ডার্লিং”?
এমন সম্বোধন শুনে অর্চনা অবাক হয়ে নবনীতার মুখের দিকে চাইতেই নবনীতা তাকে ঈশারায় চুপ করে থাকতে বলল। সীমন্তিনী তখন বলছে, “আমি আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। বাড়িতেই আছি। একটা জরুরী ব্যাপারে তোমাকে এ’সময় ফোন করতে বাধ্য হলাম। কিন্তু তুমি কি ব্যস্ত আছো? আমার কথাটা সারতে কিন্তু অনেক সময় লাগবে”।
পরিতোষ তখন “এক সেকেন্ড ডার্লিং” বলে চুপ করে গেল। তারপর প্রায় আধ মিনিট বাদে আবার বলল, “আমার চেম্বারে কয়েকজন লোক ছিল। তাদের সরিয়ে দিলাম। এখন আমি একা আছি। এবার বল তো কি হয়েছে মন্তি? বনি আর তুমি ঠিক আছো তো। কোনও সমস্যা হয়নি তো”?
সীমন্তিনী বলল, “সমস্যা একটা হয়েছে পরি। তবে সেটা আমাকে বা নীতাকে নিয়ে নয়। কিন্তু আগে তুমি একটা কথা বলো তো। টার্গেট থ্রি সম্বন্ধে তোমার কাছ থেকে কোন আপডেট পাচ্ছি না কেন পরি? তুমি কি তোমার ভিজিল্যান্স সরিয়ে নিয়েছ সেখান থেকে”?
পরিতোষ অবাক গলায় বলল, “না তো। নজরদারি তো চলছেই। আমি রেগুলার ফিডব্যাকও পাচ্ছি। তবে তেমন কোন ইম্পরট্যান্ট আপডেট দেবার নেই বলেই তোমাকে কিছু বলিনি”।
সীমন্তিনী বলল, “এটা আমি সত্যিই তোমার কাছ থেকে আশা করিনি পরি। আমি তো ভেবেছিলুম যে তুমি কলকাতায় থাকতে আমার দাদাভাই আর রচু সোনাকে নিয়ে আমাকে কিছু ভাবতেই হবে না। তারা সর্বক্ষণ তোমার ভিজিল্যান্সে সেফ থাকবে”।
পরিতোষ আরও অবাক হয়ে বলল, “কী বলছ তুমি মন্তি! আমার লোকেরা তো ভোর চারটে থেকে রাত বারোটা অব্দি তোমার দাদাভাইয়ের ওপর নজর রাখছে। তারা তো পুরোপুরি সুস্থ ও নিরাপদ আছে। তবু তুমি এমন কথা বলছ”?
সীমন্তিনী বলল, “কারন না থাকলে এমন কথা তোমাকে নিশ্চয়ই বলতুম না আমি। আমার রচু সোনা যে বড় একটা বিপদের সম্মুখীন হয়ে রয়েছে। বিমল আগরওয়ালার টার্গেট হয়ে গেছে সে, সেটা তুমি জানতে পারনি এখনও”?
পরিতোষ এবার প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “হোয়াট? কী বলছ তুমি মন্তি? রচনা বৌদি ওই বিল্ডার বিমল আগরওয়ালার টার্গেট? তুমি আমার সাথে ঠাট্টা করছো”?
সীমন্তিনী জবাব দিল, “এমন একটা সিরিয়াস কথা নিয়ে আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করব বলে ভাবছ তুমি পরি? রচু আমার জান, আমার প্রাণ। একথা তুমি জানো না”?
পরিতোষ এবার দাঁতে দাঁতে চেপে চেপে বলল, “তুমি এমন কি শুনেছো তা আমাকে এক্ষুনি সব খুলে বল মন্তি প্লীজ। যদি তোমার কথা সত্যি হয়, তাহলে বিমল আগরওয়ালা খুব শিগগীরই এ পৃথিবী থেকে বিদেয় নেবে। প্লীজ আমাকে খুলে বলো”।
সীমন্তিনী শান্ত গলায় বলল, “না পরি, কোনও রকম এনকাউন্টার বা খুন খারাপি হোক, এটা আমি চাই না। অন্ততঃ এখনই সেটা চাইছি না আমি। তবে আমি যতটুকু ডিটেইলস জানতে পেরেছি, সে-সব তোমায় সংক্ষেপে জানাচ্ছি। তারপর অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কথা বলা যাবে” বলে একটু থেমে আবার বলল, “শোনো পরি, বিমল আগরওয়ালার সাথে রবিশঙ্কর অনেক আগে থেকেই পরিচিত ছিল। হয়তো রবিশঙ্করকে ওই কমপ্লেক্সের চাবি বিমল আগরওয়ালা নিজেই দিয়েছিল। তবে রবিশঙ্করের উদ্দেশ্য শুধু দাদাভাইয়ের দু’লাখ টাকা লুটে নেওয়াই ছিল না পরি। ওর আরও একটা মারাত্মক দুরভিসন্ধি ছিল। সে গোপনে ওই বিমল আগরওয়ালার সাথে আরো একটা চুক্তি করেছিল। বেশ কিছু টাকার বিনিময়ে রচুকে সে বিমলের হাতে তুলে দেবে। রবিশঙ্কর অন্য কেসে ফেঁসে এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। তাই বিমল অন্য আরেকজনের সাথে কন্টাক্ট করছে রচুর সর্বনাশ করবার উদ্দেশ্যে”।
পরিতোষ চমকে উঠে বলল, “আর ইউ শিওর মন্তি? তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো”?
সীমন্তিনী শান্ত গলাতেই জবাব দিল, “আমি তো তোমারই শিষ্যা পরি। আমি হান্ড্রেড টেন পার্সেন্ট শিওর হয়েই তোমাকে এসব কথা বলছি। এ চুক্তিটা সম্ভবতঃ দাদাভাই আর রচু কলকাতা যাবার আগেই হয়েছিল। তবে যেদিন দাদাভাই আর রচু বাড়ি ছেড়ে কলকাতা রওনা হয়েছিল সেদিন রবিশঙ্করও তাদের সাথে ছিল। রবিশঙ্করই যে দাদাভাইকে ফ্ল্যাট আর ওই কমপ্লেক্স লিজে নেবার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছিল তা তো তোমাকে আমি আগেই জানিয়েছিলুম। কলকাতা যাবার পথে কোন এক মূহুর্তে ট্রেণের মধ্যেই রবিশঙ্কর তার মোবাইলে রচুর এক বা একাধিক ছবি তুলে নিয়েছিল। সে ছবিগুলো সে বিমলকে দিয়েছিল। বিমল চরিত্রগত দিক দিয়ে একজন নারী মাংসলোভী। এমন হতে পারে যে বিমল সে ছবি দেখেই রচুকে পাবার জন্যে উতলা হয়ে উঠেছিল। আবার এমনও হতে পারে যে ওই ছবি দেখাবার আগেই রবি বিমলের সাথে চুক্তি করেছিল। রবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ফলে বিমলের ওই অভিসন্ধি পূরণ হয়নি। আট দিন আগে বিমল অন্য আরেকজনের সাথে এ ব্যাপারে চুক্তি করেছে। কিন্তু এবার সে যার সাথে চুক্তিটা করেছে, ঘটণাচক্রে গতকালই কাকতালীয় ভাবে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়ে গেছে। আর পুরো ব্যাপারটা আমি সবে গতকাল রাতেই জানতে পেরেছি। আজ সকাল থেকে ব্যাপারটাকে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে এনালাইসিস করাতে সব কিছু আমার কাছে পরিষ্কার হল। এই নতুন এজেন্টকে বিমল রচনার একটা ছবিটা দেখিয়েছে, যেটা রবিশঙ্কর ট্রেনের কামরায় তুলে তাকে দিয়েছিল আগে। দাদাভাইয়ের ফ্ল্যাটের ঠিকানা ও রচুর ছবিটা দিয়ে সে এজেন্টকে বিমল ছ’ মাস সময় দিয়েছে। আর সে এজেন্টও বিমলকে আশ্বাস দিয়ে কাজটা হাতে নিয়েছে। এটুকুতে আমার আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই”।
পরিতোষ এবার দাঁত কিড়মিড় করে বলল, “ওই হারামীর বাচ্চাটার দিন ফুরিয়ে এসেছে বলেই সে বৌদির পেছনে লেগেছে। তুমি কিচ্ছু ভেবো না মন্তি। আমি এখনই আমার স্পেশাল একটা টিম এ কাজে লাগাচ্ছি। কিন্তু বিমলের এই নতুন এজেন্টটা কে, সেটা তো বললে না”?
সীমন্তিনী একবার নবনীতার দিকে দেখে বলল, “অবশ্যই বলব পরি। তবে তার আগে আমি তোমাকে জানাতে চাই যে সে এজেন্ট নিজে এক ধরণের অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকলেও এমন ধরণের কন্টাক্ট নেবার কাজ সে আগে কখনও করেনি। আমি তো তোমারই শিষ্যা পরি। তোমার আর আমার আদর্শ তো একই। সেই এজেন্ট যদিও এক ধরণের অসামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে, যদিও সে আমাদের দেশের আইন ভঙ্গ করছে, সে একেবারেই বোর্ন ক্রিমিনাল নয়। একটা সময় বিপাকে পড়েই সে এমন একটা অসামাজিক কাজ শুরু করতে বাধ্য হয়েছিল। আর কাজটা করতে করতে অনেকগুলো নির্দোষ নিপীড়িত অসহায় মানুষকে তার নিজের কাজের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে। সে নিজেই এখন এ ব্যাপারে অনুতপ্ত। কিন্তু সে ওই অসামাজিক ব্যবসা ছেড়ে দিলে তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া ওই নির্দোষ নিপীড়িতা মেয়েগুলোরই বেশী আর্থিক ক্ষতি হবে। তাই আমি অন্যভাবে ট্রিট করে তাকে ওই অন্ধকার জগত থেকে বের করে আনবো বলে ভাবছি। আশা করি তুমি আমার এ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে”।
পরিতোষ এবার অনেকটা শান্ত স্বরে জবাব দিল, “আমি জানি মন্তি। আমার প্রিন্সিপল আর তোমার প্রিন্সিপল আলাদা কিছু নয়। তোমার কথার অর্থ আমি বুঝেছি। তবে তুমি যদি আমাকে অ্যাসুরেন্স দাও যে অমন একজন ক্রিমিনালকে তুমি অপরাধের জগত থেকে বের করে আনতে পারবে, তাহলে আমিও তোমাকে ফুল সাপোর্ট দেব। তুমি তার নাম ঠিকানা নিশ্চিন্তে আমাকে জানাতে পারো। আমি তোমাকে কথা দিলাম, তোমার এমন একটা শুভ প্রচেষ্টায় আমি তোমাকে কক্ষনো বাঁধা দেব না। আর যতদিন তোমার প্রচেষ্টা চলতে থাকবে ততদিন আমি নিজেও তার এগেন্সটে কোন স্টেপ নেব না। সে শুধু তোমার প্রোজেক্ট হয়েই থাকবে”।
সীমন্তিনী এবার একটা হাঁপ ছেড়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরি। আমার ওপর এমন ভরসা রাখছো বলে আমি সত্যিই থ্যাঙ্কফুল তোমার কাছে। তবে তার ঠিকানা তুমি আগে থেকেই জানো। তাই সেটা বলার আর প্রয়োজন হবে না। নামটাই শুধু বলছি তোমায়। তার নাম মিসেস মহিমা মালহোত্রা সেন”।
এবারে পরিতোষের গলা শুনে মনে হল না যে সে মহিমার নাম শুনে চমকে গেছে বা অবাক হয়েছে। সে খুব শান্ত স্বরে বলল, “সে তো তোমার দাদাভাই যে যোগা ইনস্টিটিউটে কাজ করেন সে ইনস্টিটিউটের মালিক। কিন্তু ওই যোগা ইনস্টিটিউটের ওপরেও তো আমি নজর রেখেছি। সেখানে অনৈতিক কোন কাজ হয় বলে তো খবর পাইনি এখনও। আর ইউ শিওর? বিমল এ কাজের জন্য মহিমাকেই কন্টাক্ট করেছে”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ পরিতোষ, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত এ ব্যাপারে। আর তুমি হয়তো শুনে অবাক হবে যে মহিমা নিজে মুখে গতকাল রাতে এ’সব কথা বলেছে আমাকে। গত সাতদিন ধরে অনবরত ভেবেও সে রচুকে বাঁচাবার কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে গতকাল দুপুর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইছিল। অবশ্য সে এখনও জানে না যে আমি একজন পুলিশ অফিসার। সে আমাকে কেবলই দাদাভাইয়ের বোন আর রচুর হিতৈষী বলে ভেবে আমাকে পুরো ব্যাপারটা খুলে বলেছে। তার বেআইনি ব্যবসার কথাও সে নিজে মুখেই স্বীকার করেছে আমার কাছে। কোন বোর্ন ক্রিমিনাল তো এমনটা করতে পারে না। মহিমার সাথে বিমলের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ। একটা সময় বিমল নাকি তার খুব উপকার করেছিল। তাই সে সারাজীবন বিমলের অনুগত হয়ে থাকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মহিমা নিজে অসামাজিক ব্যবসা করলেও এ ধরণের কন্ট্রাক্টের কাজ সে কোনদিন করেনি। তাই প্রথমে বিমলের অফার নিতে স্বীকার করেনি সে। পরে কথায় কথায় যখন বিমল তাকে প্রচুর টাকা দেবার কথা বলছে তখন তার মনে হয়েছে যে সে যদি বিমলের কাজটা হাতে না নিয়ে তাকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে বিমল হয়তো আরও বেশী টাকার লোভ দেখিয়ে অন্য কাউকে কাজটার দায়িত্ব দেবে। রচুকে মহিমাও খুব ভালবেসে ফেলেছে গত কয়েকটা দিনে। রচু বা দাদাভাইয়ের কোন ক্ষতি করবার কথা সে ভাবছে না। কিন্তু রচনার ওপর বিমলের কূনজর অন্ততঃ মাস ছয়েকের মত আটকে দিতে পারছে ভেবেই বিমলের কথায় রাজি হয়েছে। কিন্তু নিজে কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। তাই বুঝতে পারছ তো, এমন যার মানসিকতা, সে যত জঘণ্য কাজেই লিপ্ত থাকুক না কেন, একটু চেষ্টা করলেই তাকে মেইন স্ট্রীমে ফিরিয়ে আনা যাবে। আমি জানি এধরণের বহু প্রোজেক্ট তুমি সাকসেসফুলি হ্যান্ডেল করেছ। আমি এই প্রথম একটা সুযোগ পেলাম। আর তোমার শিষ্যা হয়ে এ কাজটা আমি করতে চাই। আর এ জন্যেই আমি চাইছি যে ইনভেস্টিগেশনের জন্য তোমাকে যদি তার কাছে যেতেও হয়, তুমি তাকে অন্য কোনভাবে হ্যারাসড কোর না প্লীজ। এই সিক্রেট প্রোজেক্টটা ডিল করতে প্লীজ বাঁধা দিও না আমাকে”।
পরিতোষ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকবার পর বলল, “তুমি যে আমার আদর্শকে পাথেয় করে একটা শুভ কাজে হাত দিতে চাইছো, এ’কথা শুনে আমার মনটা যে কতটা খুশীতে ভরে গেল, এ আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারব না ডার্লিং। আমার তরফ থেকে বাঁধা তো উঠবেই না, বরং আমি তোমাকে বেস্ট অফ লাক জানাচ্ছি। আর আমি বুঝতে পাচ্ছি তোমার কাছ থেকে আজ যেমন রিপোর্ট আমি পেলাম, তাতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তাই আমি আজ থেকেই ফুল ফোর্সে কাজ শুরু করে দিচ্ছি। তবে একটা কথা কিন্তু তুমি ভুল বলেছ ডার্লিং। এটাই তোমার নিজস্ব ফার্স্ট রিহাবিলিটেশন প্রোজেক্ট নয়। তোমার ফার্স্ট প্রোজেক্ট নিয়ে তুমি অলরেডি কাজ শুরু দিয়েছ, সেটা তো আমি জানিই। বনিই তো তোমার ফার্স্ট রিহেব প্রোজেক্ট। এটা তুমি বোধহয় ভুলেই গেছ। তাই মহিমা হবে তোমার সেকেন্ড রিহেব প্রোজেক্ট। বাই দা বাই, বনির ব্যাপারে ফারদার কোন ডেভেলপমেন্ট হয়েছে কি”?
সীমন্তিনী নবনীতার মুখের দিকে এক নজর দেখে জবাব দিল, “গতকালই তো তোমাকে লেটেস্ট ডেভেলপমেন্টের খবর দিয়েছি পরি। ও সামনের এক তারিখ থেকেই ওর নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে। ওর ভেতর আমি একটা পজিটিভ এনার্জির আঁচ দেখতে পাচ্ছি। ও নিশ্চয়ই সফল হবে দেখো”।
পরিতোষ বলল, “তোমার ভেতরের পজিটিভ এনার্জিই ওর ভেতরে ইন্ডিউসড হচ্ছে ডার্লিং। এ আমি খুব ভালভাবেই বুঝতে পাচ্ছি। তোমার ছোঁয়ায় ওর জীবনের পুরনো সব কালিমা মুছে যাবে। নবনীতা সত্যিই এক নতুন নীতা হয়ে উঠবে এ ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। সে জন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাই আদর আর কৃতজ্ঞতা বশতঃ তোমাকে একটা চুমু উপহার দিচ্ছি। আচ্ছা ও এখন ঠিক কোথায় আছে? তোমার সঙ্গেই? না পাশের ঘরে”?
সীমন্তিনী এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলল, “আঃ, পরি সব সময় তোমার এ’সব ঠাট্টা ভালো লাগে বলো? আর এ মূহুর্তে নীতা আমার সাথেই আছে। আমাদের সব কথা শুনছেও। তোমার ফাজলামো নীতা বুঝতে পারলেও এ ঘরে এমন আরও একজন আছে যে তোমার এ’সব ফাজলামো শুনে ঘাবড়ে যাবে। তাই প্লীজ, মুখে লাগাম লাগাও”?
পরিতোষ এবার আবার অবাক হবার সুরে বলল, “সরি মন্তি। কিন্তু তোমার ঘরে এ মূহুর্তে নীতা ছাড়া আর কে থাকতে পারে বল? তোমার ওই লক্ষ্মীদি? না আর কেউ”?
সীমন্তিনী বলল, “না, লক্ষ্মীদি নয়। আমার আরেকটা বোন। যে আমার রচুসোনার নিজের মায়ের পেটের দিদি। বড়দিদি। ওর নাম অর্চনা”।
পরিতোষ বলল, “এগেন সরি মন্তি। আমি তো ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। এসমস্ত সিক্রেট আলোচনার সময়েও যে তোমার আশে পাশে অন্য কেউ থাকতে পারে, এ তো আমি ভাবতেই পারিনি। কিন্তু মন্তি, ব্যাপারটা তো বেশ রিস্কি হয়ে গেল। তোমার বৌদির দিদি এ’সব জেনে ফেলা মানে তোমার বৌদি আর তোমার দাদাভাইও জেনে যাবে। হয়তো তোমাদের বা তাদের বাড়ির লোকজনেরাও এসব ব্যাপার জেনে ফেলবে। আর তার ফলে আমার কাজটা কতটা কঠিন হয়ে যাবে, এটা তুমি ভাবোনি”?
সীমন্তিনী অর্চনার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “সব ভেবে দেখেছি আমি পরি। তুমি সেটা নিয়ে ভেবো না। তোমার কাজে নতুন করে কোনও কঠিনতা আসবে না। নীতা আর অর্চু, দু’জনেই আমাকে ভালোবাসে। ওরা কেউ কোনভাবে আমাদের কাজে কোনরকম ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। ওরা দু’জনেই আমার কাছে শপথ করেছে, এ’সব ব্যাপার শুধু আমাদের এ চারজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই রচু আর দাদাভাই এ’সবের কোন আঁচও পাবে না, আর ঘাবড়ে গিয়ে তোমার কাজকে কঠিন করে তোলার সুযোগও পাবে না। তুমি এ ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো”।
পরিতোষ কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে বলল, “বেশ, তুমি যখন সে ভরসা দিচ্ছ, তাহলে আর আমার বলবার কিছু থাকে না। তবু বলছি মন্তি। আমার নিজের কোন ভাই বোন নেই। কিন্তু ভাইবোনেদের মধ্যে যে কত মধুর কত মিষ্টি সম্পর্ক থাকতে পারে, তা কিছুটা হলেও আমি দেখেছি। তাই তিনি যখন এখন তোমার সাথেই আছেন, তোমার মাধ্যমেই তাকে একটা ছোট্ট কথা বলতে চাইছি। ম্যাডাম, মন্তির আর আমার সম্পর্কটা যে ঠিক কেমন সেটা হয়ত আপনি কিছুটা শুনে থাকবেন। আবার এমনও হতে পারে যে পুরোটা শোনেন নি। তবে যেটুকু শোনেননি, সেটুকুও হয়ত পরে জানতে পারবেন। আপনার ছোট বোন রচনাকে আমিও নিজের বৌদি বলেই ভাবি। ওনারা যেদিন কলকাতা এসেছেন তার দু’দিন পর থেকেই আমি তাদের অজ্ঞাতে তাদের ওপর নজর রেখে যাচ্ছি। আমি থাকতে মন্তির দাদাভাই আর বৌদির ওপর কোন বিপত্তি আসতে পারবে না বলেই আমি মনে করি। তবে মন্তির দাদাভাইয়ের টাকাটা লুট হবার আগে আমি তাদের ব্যাপারে কিছু জানতুম না। সে ঘটণাটা ঘটে যাবার পরেই মন্তি আমাকে তাদের কথা বলেছিল। তাই তার পর থেকেই আমি ওদেরকে চোখে চোখে রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু রচনা বৌদি বা মন্তির দাদাভাই যদি জানতে পারে যে তাদেরকে কেউ ফলো করছে, বা কেউ তাদের ওপর নজর রাখছে, তাহলে তারা খুব স্বভাবতই একটু ভীত হয়ে পড়বে। এতদিন আমরা গোপনে যে কাজটা করে এসেছি, সেটা এখন আপনার কাছে আর গোপন নেই। ছোটবোনের প্রতি স্নেহ বশতঃ বা ভাবুক হয়ে আপনি যদি কখনও মুখ ফস্কেও এসব কথা বলে ফেলেন, তাহলে কিন্তু আমাকে কাজটা করতে খুব কষ্ট পেতে হবে। তাই আমি আশা করব, এ ব্যাপারে আপনি প্লীজ খুব সতর্ক থাকবেন। আপনার ছোটবোন আর ভগ্নীপতির সুরক্ষার জন্যই আপনাকে এ অনুরোধটুকু করছি আমি। প্লীজ আমার অনুরোধটা রাখবেন”।
অর্চনা সীমন্তিনীর হাত আঁকড়ে ধরে করুন চোখে তার মুখের দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাতেই সীমন্তিনী ফোনে বলল, “তোমার অনুরোধ সে রাখবে বলে কথা দিলো পরি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো”।
পরিতোষ তারপর বলল, “বেশ, তাহলে এবার তুমি কি আর কিছু বলতে চাও মন্তি”?
সীমন্তিনী বলল, “আরো একটা ছোট্ট অনুরোধ আছে পরি। তুমি যদি মহিমাকে ইন্টারোগেশন কর, তাহলে দুটো কথা মাথায় রাখবে। আমার অফিশিয়াল আইডেন্টিটি মহিমার কাছে খোলসা কোর না। আর আমিই যে তোমাকে এসব ফিডব্যাক দিচ্ছি তা যেন মহিমা কোনভাবে জানতে না পারে। পারতপক্ষে তোমার সাথে যে আমার পরিচয় আছে, এটাও যেন সে জানতে না পারে। আমাকে যেন সে শুধুমাত্র রতীশ ভট্টাচার্য্যির ছোট বোন হিসেবেই জানে। এমন অনুরোধ কেন করছি, আশা করি তুমি তা বুঝতে পেরেছ”।
পরিতোষ বলল, “নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি। আর তোমার এ অনুরোধও আমি রাখব। আর কিছু”?
সীমন্তিনী বলল, “আপাততঃ আর কিছু বলার নেই। তবে বিমল আগরওয়ালার ব্যাপারে যদি তোমার আর কিছু জানবার দরকার হয় তা আমাকে জানিও। আমি সে সব রিপোর্ট তোমায় দেবার চেষ্টা করবো। ওকে”?
পরিতোষ বলল, “ওকে মন্তি, হ্যাভ এ গুড ডে” বলে ফোন কেটে দিল।
*****************
সীমন্তিনীর সাথে কথা বলা শেষ হতে পরিতোষ একমনে গভীরভাবে অনেকক্ষণ ধরে চিন্তা করল। তারপর নিজের পকেট থেকে আরেকটা মোবাইল বের করে কাউকে ফোন করল। ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই সে বলল, “আব্দুল, আজ সন্ধ্যের পর তুই কি ব্যস্ত আছিস”?
ও’পাশ থেকে আব্দুল জবাব দিল, “নমস্কার স্যার। আজ সন্ধ্যেয় কাজ তো একটু আছেই। তবে আপনার ডাকের কাছে সে সব কিছুই না। আপনি বলুন, কোথায় ক’টার সময় আমাকে যেতে হবে”।
পরিতোষ বলল, “আজ রাত ঠিক আটটায় আমার দু’নম্বর আড্ডায় চলে আসবি। একটা নতুন কাজ করতে হবে। আর শোন, এ কাজে তোর টিম ছাড়াও একটা হাসপাতাল এবং বিশ্বস্ত একজন ডাক্তারের প্রয়োজন পড়বে। সার্জেন হলে ভাল হয়। ভরসা করবার মত এমন কোনও ডাক্তার তোর খোঁজে আছে নাকি রে”?
আব্দুল দু’সেকেন্ড চুপ থেকেই বলল, “কেন স্যার, বাইরে খুঁজতে হবে কেন? আমাদের দিব্যেন্দু ডাক্তারকে দিয়ে কাজ চলবে না? সেও তো সার্জেনই”।
পরিতোষের চোখ মুখ যেন হঠাতই চকচক করে উঠল। সে বলল, “ওঃ, ঠিক বলেছিস তুই আব্দুল। ওনার কথা তো আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম রে। আচ্ছা উনি কোথায় আছেন এখন বল তো? তখন তো তিনি নাগের বাজারে থাকতেন”।
আব্দুল বলল, “স্যার, নাগের বাজারে তো তার বাড়ি। সে তো তখন দমদমের একটা নার্সিং হোমে কাজ করত। তিন চারদিন আগে ডাক্তার তার গাড়ি সার্ভিসিং করাতে আমার গ্যারাজে এসেছিল। তখন বলল যে সে এখন বাইপাসের ধারে একটা বড় প্রাইভেট নার্সিং হোমে আছে। আপনার কথাও জিজ্ঞেস করছিল সেদিন”।
পরিতোষ এবার জিজ্ঞেস করল, “আমি তো বোধহয় ওনার নাম্বারটাও হারিয়ে ফেলেছি রে। আচ্ছা তোর কাছে কি তার নাম্বার আছে”?
আব্দুল জবাব দিল, “হ্যাঁ স্যার আছে। আপনি বললে আমি এখনই তাকে ফোন করতে পারি”।
পরিতোষ বলল, “আচ্ছা বেশ, তবে শোন। তুই তার সাথে কন্টাক্ট কর। আর বল যে আমি আজ রাত আটটায় তার সাথে দেখা করতে চাই। যদি তিনি রাজী হন, তাহলে তুই আমার আড্ডায় আসবার আগে তার ওখানে যাবি। তাকে সঙ্গে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসবি। পারবি তো”?
আব্দুল বলল, “পারব না কেন স্যার। নিশ্চয়ই পারব। আপনি একদম নিশ্চিন্ত থাকুন এ ব্যাপারে। আপনার জন্য এ আব্দুলের জান হাজির আছে স্যার”।
পরিতোষ বলল, “তুই তাহলে তার সাথে কথা বলে নে। আর তিনি আসতে পারবেন কিনা সেটা আমাকে সন্ধ্যের আগেই ফোন করে জানাবি। ঠিক আছে”?
আব্দুল বলল, “ঠিক আছে স্যার। আমি সন্ধ্যের আগেই আপনাকে তা জানিয়ে দেব। আর কিছু”?
পরিতোষ বলল, “না এখন আর কিছু নয়। বাদবাকি সব রাতে আলোচনা করব। আচ্ছা আপ্রীত আর প্রীতিদি কেমন আছে রে”?
আব্দুল বেশ খুশী গলায় বলল, “ওরা সকলেই ভাল আছে স্যার। ছেলেটা দিনে দিনে খুব ছটফটে হচ্ছে। প্রীতিও খুব ভাল আছে। পরশু রাতেই তো বলছিল, যে এক মাসের মধ্যে সে তার ভাইকে দেখতে পায়নি”।
পরিতোষ বলল, “তাকে বলিস, আমি এ সপ্তাহেই একবার তার সাথে দেখা করব। কেমন”?
আব্দুল খুশীতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল, “সত্যি বলছেন স্যার। ঠিক আছে, আমি এখনই প্রীতিকে এ সুখবরটা শোনাচ্ছি। ও খুব খুশী হবে এ’কথা শুনে”।
পরিতোষ বলল, “ঠিক আছে রে আব্দুল। এখন ছাড়ছি তাহলে। সন্ধ্যের আগেই কিন্তু আমাকে ফোন করে কনফার্ম করবি”।
আব্দুল ‘হ্যাঁ’ করতেই পরিতোষ ফোন কেটে দিল। তারপর আবার চোখ বুজে একমনে কিছু একটা ভাবতে শুরু করল।
______________________________