Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 144)

সীমন্তিনী এবার মিষ্টি করে হেসে বলল, “কাল রাতে তোমরা ঘুমোতে যাবার পর অনেক ব্যাপার ঘটে গেছে গেছে অর্চু। এখন আমি তোমাদের দু’জনকে সে’সব কথাই বলব বলে ভেবেছি। তবে তুমি একদম দুশ্চিন্তা কোর না বোন। রচু আর দাদাভাই ওরা একদম নিরাপদে আছে। একটা ঝামেলা অবশ্য হয়েছে যে ব্যাপারে ওরা কেউই কিছু জানতে বা বুঝতে পারেনি এখনও। তবে এ ঝামেলাও ঠিক মিটে যাবে। সব কথাই আমি তোমাদের খুলে বলব এখন। কিন্তু ওই রচু পাগলীটা তো এখনই আবার নীতার ফোনে ফোন করবে বলে মনে হচ্ছে। তাই সেটার জন্য একটু অপেক্ষা করি। ওর সাথে কথা বলা শেষ হতেই, তোমাদেরকে সব খুলে বলব। তবে তার আগে তুমি রান্নাঘরে গিয়ে লক্ষ্মীদিকে একটু বলে আসো, সে যেন আমার জন্যে আদা দিয়ে এক কাপ লিকার চা বানিয়ে আনে। আর তোমরা যদি এখন চা খেতে চাও, তাহলে সে’কথাও বলে এস”।

অর্চনা উঠতে উঠতে বলল, “আমি আর খাবো না এখন চা। নীতাদি, তুমি খাবে”?

নবনীতা বলল, “আমার জন্যেও দিদির মতই লিকার চা বানিয়ে দিতে বোলো একটু”।

অর্চনা রুম থেকে বেরোতে না বেরোতেই সীমন্তিনীর কথা সত্যি প্রমাণিত করে রচনার ফোন এল নবনীতার মোবাইলে। নবনীতা ফোনের দিকে দেখেই হেসে ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, “নাও দিদি, কথা বল”।

সীমন্তিনী কল রিসিভ করে বলল, “বলো ঠাকুমা আমার”।

ও’পাশ থেকে অনেকক্ষণ সাড়া না পেয়ে সীমন্তিনী আবার বলল, “এখনও আমার ওপর এতটাই অভিমান করে আছিস সোনা, যে আমার ফোনে কল না করে তুই নীতার ফোনে কল করলি”?

ওদিক থেকে রচনার ফোঁপানির শব্দ পেয়েই সীমন্তিনী বললো, “রচু, সোনা বোন আমার। কাঁদিস নে প্লীজ। তুই হয়ত ভেবেছিলি যে আমি সত্যি অফিসে চলে গেছি। আর সে ব্যাপারে জানতেই তুই নীতাকে ফোন করেছিস, তাই তো? আরে পাগলী, আমি কি তোর কথা ফেলতে পারি রে? তুই তো জানিস তুই আমার কী। তবু ভাবছিস যে আমি তোর কথা অবহেলা করে অফিসে চলে যাবো”?
 

অর্চনা প্রায় ছুটে এসে ঘরে ঢুকতেই সীমন্তিনী ফোনের স্পীকার অন করে দিতেই রচনা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দাও দিদিভাই। না জেনে না বুঝেই আমি তোমার ওপর এমন অন্যায় আবদার করে বসেছিলুম। কিন্তু কী করব বলো তো? তুমি রাত একটা পর্যন্ত ঘুমোও নি। সকালে নীতাদি, লক্ষ্মীদি, দিদি সবাই মিলে ডেকেও তোমার ঘুম ভাঙাতে পারেনি, এসব শুনে দুশ্চিন্তা হবে না আমার বলো? ঘরে একা একা তখন থেকে আবোল তাবোল কত কিই যে আমার মনে আসছে, সে’কথা আমি কিকরে তোমাকে বোঝাবো। দুটো সান্ত্বনা দেবারও তো কেউ নেই আমার পাশে। একা একা শুধু চিন্তা করে মরছি আমি। শুধু একটা কথা ভেবেই এখনও পর্যন্ত নিজেকে সামলে রাখতে পেরেছি যে নীতাদি আর দিদি তোমার সঙ্গে আছে। কিন্তু তুমি একবারও ভেবেছো যে সকাল সকাল অমন খবর শুনে একা ঘরে আমার মনের কি অবস্থা হতে পারে” বলতে বলতে রচনা কেঁদেই ফেলল।

রচনার কান্না শুনে নবনীতা আর অর্চনার চোখেও জল চলে এল। সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি বলল, “কাঁদিস নে বোন। শোন আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি একদম ঠিক আছি। রাতে দেরীতে ঘুমিয়েছিলুম সেটা সত্যিই। কিন্তু দেরী করে ঘুম ভাঙতে ঘুমটা পুষিয়ে গেছে। এখন আমি একদম ঠিক আছি রে। কিন্তু জানিস, আজ সত্যি সাড়ে ন’টায় অফিসে একটা আর্জেন্ট মিটিং ছিল আমার। তাই যাওয়াটা নিতান্তই দরকারী ছিল। কিন্তু তুই ওভাবে আমার দিব্যি দিয়ে সারাদিন উপোষ থাকবি বলাতে আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলুম। ভাগ্যিস, এসপি অফিস থেকেই সকালে অফিসে খবর পাঠিয়েছিল যে মিটিংটা পোস্টপন্ড করা হয়েছে। তাই তো তোর দিব্যি রাখতে আমাকে বাধ্য হয়ে অফিসে মিথ্যে কথা বলতে হল যে আমার শরীর অসুস্থ, আমি আজ আর অফিস যেতে পারছি না। কিন্তু রচু সোনা, এমন দিব্যি কিন্তু তুই আর কক্ষনো আমাকে দিবি নে। তুই জানিসনা, পুলিশ অফিসারেরা এভাবে যখন তখন নিজেদের মর্জি মত অফিস কামাই করতে পারে না। তাতে অনেকের অনেক রকম অসুবিধে হতে পারে”।
 

রচনা বলল, “আমি বুঝেছি দিদিভাই। আর কক্ষনো এমন করে বলব না। এবারকার মত আমায় ক্ষমা করে দাও প্লীজ”।
 

সীমন্তিনী এবার নরম স্বরে বলল, “তোর মত বুদ্ধিমতী মেয়ে যে তার ভুল বুঝতে পারবে, এটা কি আর আমি জানিনে ভাবছিস? আর মন খারাপ করে থাকিস নে বোন। শুনেছি দাদাভাই বেরিয়ে যাবার পর সকালের খাবার খেতে খেতেই তুই নীতাকে ফোন করেছিলি। আমাকে দিব্যি দেবার পর তো মনে হয় আর কিচেনে ঢুকিসই নি। যা এবার খুশী মনে গিয়ে দুপুরের রান্না চাপিয়ে দে। আর আমাকে নিয়ে একদম আজে বাজে কিছু ভাববি না কিন্তু। এখন কি আর আমি এখানে একা আছি? আমার আরো দুটো বোন আমার সাথে আছে না এখন। আমার আর চিন্তা কিসের? আমি তো এখন পরমানন্দে আছি। আচ্ছা, তুই কি এখন আর কারুর সাথে কথা বলবি”?

রচনা এবার অনেকটা স্বাভাবিক গলায় বলল, “না দিদিভাই, এখন রান্না শুরু করতে হবেই গো। তোমার দাদাভাই ফিরে আসবার আগেই তো রান্না শেষ করে ফেলতে হবে। তাই এখন আর কথা বলছি না তাদের সাথে। তুমি ভাল থেক। রাখছি”।
 

ফোনটা নবনীতার হাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে সীমন্তিনী নিজের ভিজে ওঠা চোখের পাতা মুছতে লাগল। এমন সময় লক্ষ্মী ট্রে হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, “ওমা দিদিমণি, তুমি কাঁদছ কেন গো? কি হল আবার”?

নবনীতা জবাবে বলল, “কিচ্ছু হয়নি লক্ষ্মীদি। বৌদির সাথে ফোনে কথা বলছিল তো তাই”।

লক্ষ্মী সকলের সামনে জলখাবার রাখতে রাখতে রাখতে বলল, “ও এই ব্যাপার? এ আর নতুন কি? এই দুই ননদ-বৌদির ভালবাসা দেখে মরে যাই আর কি। এনারা সুখেও কাঁদেন, দুঃখেও কাঁদেন। তা তোমাদের চা এখনই বানিয়ে আনছি। আগে এ খাবারটুকু তোমরা খেয়ে নাও। নইলে সব কিছুই ঠান্ডা হয়ে যাবে”।


(To be cont'd .....)
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 12-03-2020, 07:56 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)