Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 143)

দরজায় বেশ জোরে জোরে ধাক্কার শব্দে সীমন্তিনীর ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙতেই দরজার বাইরে থেকে দু’ তিন জনের গলায় “দিদি, দিদিভাই, দিদিমণি” ডাক শুনেই সে ধরমর করে বিছানা থেকে নেমে গিয়ে প্রায় ছুটে গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজার বাইরে লক্ষ্মী, অর্চনা আর নবনীতাকে উৎকণ্ঠিত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সে অর্চনা আর নবনীতাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, “কি হয়েছে অর্চু সোনা? কি হয়েছে গো নীতা? তোমরা এত ঘাবড়ে গিয়েছ কেন? বল না কী হয়েছে? রচু কি ফোন করেছিল”?

নবনীতা আর অর্চনা দু’জনেই সীমন্তিনীর কথায় অবাক হয়ে গেল। একে অপরের মুখ দেখাদেখি করে অর্চনা সীমন্তিনীর কপালে আর গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “তুমি ঠিক আছ তো দিদিভাই? কিছু হয়নি তো তোমার”?

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে বলল, “কই কিছু হয়নি তো আমার। কিন্তু তোমরা এমন করছ কেন বলো তো”?

এবার লক্ষ্মী বলে উঠল, “এতদিন ধরে তোমার এখানে কাজ করছি। কোনদিন তো তোমাকে বেলা ন’টা অব্দি ঘুমোতে দেখিনি। তুমি ঘুম থেকে ওঠোনি বলে এনারা দু’জনেও চা খায়নি। তুমি উঠছ না দেখে আমাদের তো দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। কিন্তু তুমি নাকি রাতে অনেকক্ষণ জেগে ছিলে। তাই আমরা আগে তোমাকে ডাকিনি। ওদিকে বৌদিমণি তোমার ফোনে তোমাকে না পেয়ে সোনাদির মোবাইলে ফোন করে যখন শুনলেন যে তুমি এখনও ঘুম থেকে ওঠো নি, অমনি আমাকে ডেকে বকলেন। আর বললেন যে এক্ষুণি যেন যে করে হোক তোমাকে ডেকে তুলি। আর তুমি এমন ভাব করছ যেন কিচ্ছুটি হয় নি”।

সীমন্তিনী নবনীতা আর অর্চনাকে ছেড়ে দিয়ে পেছন ঘুরে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ন’টা কুড়ি। সেটা দেখেই সে বলল, “ইশ, কত বেলা হয়ে গেছে গো। কিন্তু আমি তো আমার মোবাইলে সাড়ে ছটার এলার্ম দিয়ে রেখেছিলুম! এলার্মটা কি তাহলে বাজে নি? ইশ দেখেছ, এখন আমি কি ছেড়ে কি করি বল তো? আমার যে সকাল সাড়ে নটায় অফিসে একটা জরুরী মিটিং আছে”।

অর্চনা এবার সীমন্তিনীর একটা হাত ধরে বলল, “ও দিদিভাই, তুমি আমার কথাটার জবাব দিচ্ছ না কেন গো? বল না, তোমার কিছু হয়নি তো? তুমি ঠিক আছ তো”?
 

সীমন্তিনী এবার অনেকটা স্বাভাবিক স্বরে অর্চনার হাত ধরে বলল, “আমার কিচ্ছু হয়নি গো সোনা। আমি একদম ঠিক আছি। শুধু ঘুমটাই দেরীতে ভাঙল আমার। আসলে কাল রাতে সত্যি আমার অনেকক্ষণ ঘুম আসছিল না। শেষে একটা স্লিপিং ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়েছিলুম। তাই বোধ হয় দেরী হল। আর গভীর ঘুমে ছিলুম বলেই হয়ত এলার্মের শব্দ বা ফোনের রিংটোনের শব্দও শুনতে পাই নি। সত্যি খুব লজ্জা লাগছে আমার এখন। কিন্তু আমি উঠিনি বলে তোমরাও চা না খেয়েই বসে থাকবে এটা কেমন কথা বল তো বোন। আচ্ছা, যা হয়েছে সব তো আমার জন্যেই হয়েছে। লক্ষ্মীদি তুমি চা বানাতে থাকো। আমি এক্ষুনি বাথরুম সেরে হাত মুখ ধুয়ে আসছি। আর শোনো, আমার সত্যি দেরী হয়ে গেছে। আমার জন্য তোমাকে আর এখন খাবার কিছু বানাতে হবে না। আমি চা খেয়েই বেরিয়ে পড়ব। অফিসের ক্যান্টিনেই কিছু একটা খেয়ে নেবো’খন। তোমরা তোমাদের জন্য খাবার বানিও” বলেই অর্চনাকে ছেড়ে প্রায় ছুটে বাথরুমে ঢুকে গেল।

আর প্রায় সাথে সাথেই নবনীতার হাতের ফোনটা বেজে উঠল। রচনার নাম দেখে নবনীতা কল রিসিভ করে বলল, “হ্যাঁ বৌদি, সব ঠিক আছে। তুমি ভেবো না। দিদি উঠেছে। এখন বাথরুমে আছে। কাল রাতে নাকি অনেক দেরীতে তার ঘুম এসেছিল, তাই তার উঠতে দেরী হয়ে গেছে” তারপর কিছুক্ষণ ওদিকের কথা শুনে আবার বলল, “না না বৌদি। তেমন কোন ব্যাপার নেই। দিদি ভালই আছে। আর সে হাতমুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেই আমরা একসাথে চা খাবো। তবে দিদি বোধহয় সকালের খাবার না খেয়েই বেরিয়ে যাবে। বলছিল অফিসে নাকি সাড়ে নটায় কিছু জরুরী কাজ ছিল। তাই লক্ষ্মীদিকে খাবার বানাতে বারণ করল” আবার কিছুক্ষণ রচনার কথা শুনে বলল, “আচ্ছা বৌদি এই নাও অর্চুর সাথে কথা বলো” বলে ফোনটা অর্চনার হাতে দিল।

অর্চনা ফোন কানে লাগিয়েই বলল, “হ্যাঁ রচু, তুই ভাবিস নে। দিদিভাই ঠিক আছেন”।

রচনা বলল, “শোন দিদি, দিদিভাইয়ের এত দেরীতে ঘুম ভাঙ্গাটা আমার ভালো লাগছে না। নিশ্চয়ই কোন ব্যাপার আছে। তুই একটা কাজ করিস তো। দিদিভাইকে আজ অফিসে যেতে দিস না। আমি একটু বাদেই আবার তাকে ফোন করছি”।

অর্চনা আমতা আমতা করে বলল, “বারে এ তুই কেমন কথা বলছিস রচু? নীতাদি বা আমি কি আর দিদিভাইকে কোন কিছুতে বাঁধা দিতে পারি? সে অধিকার কি আমাদের আছে বল”?

রচনা একমূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “অধিকার তো কেউ কাউকে দেয় না রে দিদি। সেটা তো নিজেদেরকেই অর্জন করে নিতে হয়। আমাদের ছোটবেলায় বাবা মা তো আমাদের এ শিক্ষাই দিয়েছেন। তুই কি তা ভুলে গেছিস? আচ্ছা শোন, তোরা যখন চা খেতে বসবি, তখন দিদিভাইকে বলিস তিনি যেন আমাকে তখনই একটু ফোন করেন। এ’টুকু তো তাকে বলতে পারবি”?

অর্চনা জবাব দিল, “ঠিক আছে, তা-ই বলবো”।

রচনা তখন “আচ্ছা ঠিক আছে, রাখছি তাহলে” বলে ফোন কেটে দিল।

নবনীতা আর অর্চনা ডাইনিং টেবিলে সীমন্তিনীর প্রতীক্ষা করছিল। খানিক বাদেই সীমন্তিনী এসে বসতে বসতে বলল, “লক্ষ্মীদি, তাড়াতাড়ি চা দাও গো। বড্ড দেরী হয়ে গেছে”।

লক্ষ্মী সবাইকে চা বিস্কুট এগিয়ে দিতেই অর্চনা বলল, “দিদিভাই, রচু তোমার সাথে কথা বলতে পারেনি বলে খুব উশখুস করছে। তুমি যখন বাথরুমে ছিলে তখন আবার নীতাদির মোবাইলে ফোন করেছিল। বলছিলাম কি, ওর সাথে একটু কথা বলে নাও না”।

সীমন্তিনী চা খেতে খেতেই বলল, “অর্চু সোনা, আমার সত্যিই খুব দেরী হয়ে গেছে গো আজ। সকাল সাড়ে নটায় এসপি অফিস থেকে কয়েকজন লোক আসবার কথা। তাদের সাথে আমার জরুরী একটা মিটিং আছে। সাড়ে ন’টা তো বেজেই গেছে। এখন রচুর সাথে কথা বলতে গেলে আমার আরো দেরী হয়ে যাবে বোন। আমি না হয় অফিসে যাবার পথেই ওকে ফোন .....”
 

তার কথা শেষ হবার আগেই সীমন্তিনীর রুমের ভেতর একটা মোবাইল বেজে উঠল। সীমন্তিনী চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রায় ছুটে গিয়ে দেখে রচনার ফোন। কল রিসিভ করে ফোন কানে লাগাতেই রচনা জিজ্ঞেস করল, “তোমার কি হয়েছে দিদিভাই? রাতে ঘুম হয়নি কেন তোমার? তোমার শরীর ঠিক আছে তো”?

সীমন্তিনী আবার ডাইনিং রুমে আসতে আসতে বলল, “রচু সোনা। সোনা বোন আমার। তুই উতলা হোস নে। আমার কিচ্ছু হয়নি রে। আসলে কাল রাতে খেয়েদেয়ে শোবার আগে একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবতে ভাবতে অনেক সময় কেটে গিয়েছিল। তারপর যখন ঘুমোতে গেলুম, তখন আর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। শেষে একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়েছিলুম। তাই সকালের দিকে হয়তো ঘুমটা ভাঙে নি। এলার্মের শব্দ বা ফোনের শব্দেও ঘুম ভাঙেনি। তোর বকুনি খেয়েই লক্ষ্মীদি, অর্চু আর নীতাকে নিয়ে এসে আমার দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাকাডাকি করাতেই আমার ঘুম ভাঙল। এদিকে আজ সকাল সাড়ে নটায় আমার অফিসের একটা জরুরী মিটিং আছে বলেই তাড়াহুড়ো করে চা খাচ্ছি। অলরেডি দেরী হয়ে গেছে। তাই তুই ভাবিস না। আমি লাঞ্চ আওয়ারে তোকে ফোন করবো, কেমন”?

রচনা ও’পাশ থেকে বেশ জোরে বলে উঠল, “না দিদিভাই। আজ তুমি কিছুতেই অফিসে যাবে না। কাল রাতে তোমার ভাল ঘুম হয়নি। আজ ঘরে বসে একটু রেস্ট নাও। পারলে আরো একটু ঘুমিয়ে নাও। আমি তোমাকে দিব্যি দিচ্ছি। তুমি যদি আজ অফিসে যাও তাহলে কিন্তু আমি আজ সারাদিনে কিচ্ছুটি খাবো না এই বলে দিলুম”।

সীমন্তিনী অসহায় মুখ করে বলল, “একি করছিস রচু? তুই তো এর আগে কোনদিন আমাকে আমার অফিসিয়াল ডিউটি করতে বাধা দিস নি। আজ তোর কি হল হঠাৎ ? হ্যারে, তোরা ভাল আছিস তো। কোনও সমস্যা হয়নি তো তোদের? দাদাভাই কোথায়? সে ঠিক আছে তো”?

রচনার ভারী গলা শোনা গেল, “তোমার দাদাভাই রোজকার মতই সকাল সাড়ে চারটেতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন। এখন তিনি নিশ্চয়ই তাদের ইনস্টিটিউটেই আছেন। আর আমাদের কারুর কিছু হয়নি। যদি কিছু হয়ে থাকে তো সেটা তোমার হয়েছে। আমি চাই তুমি আজ অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে রেস্ট নেবে। ব্যস আর কিচ্ছু না। নইলে আমি তোমার নামে শপথ করে বলছি, আমি কিন্তু আজ সারাদিনে কুটোটিও দাঁতে কাটবো না বলে দিচ্ছি। আমি তখন বুঝবো যে আমার দিদিভাই আমাকে ভুলে গেছেন। তিনি আর আমাকে ভালবাসেন না” বলেই হঠাৎ করেই ফোন কেটে দিল।

সীমন্তিনী সাথে সাথে বলে উঠবার চেষ্টা করল, “রচু, শোন শোন, আমার কথাটা .....”। কিন্তু রচনা যে ফোনটা ততক্ষণে কেটে দিয়েছে এ’কথা বুঝতে পেরেই সে অর্চনা আর নবনীতার দিকে চেয়ে বলল, “কি মুস্কিল বল তো? কিছুতেই কথা শুনলো না। আমি আজ অফিসে গেলে সে নাকি আজ সারাদিন না খেয়ে থাকবে, এ’কথা বলেই লাইনটা কেটে দিল। এদিকে আমার যে আজ অফিসে না গিয়ে কোন উপায়ই নেই সে’কথাটাও বলবার সুযোগ দিল না”।

অর্চনা আর নবনীতা কোন কথা না বলে চুপ করে রইল। কিন্তু তারা দু’জনেই জানে রচনার কথা সীমন্তিনী কিছুতেই ফেলতে পারবে না। সীমন্তিনী কিছু সময় হতাশ ভঙ্গীতে বসে থাকবার পর উঠে নিজের রুমে গিয়ে ঢুকল। তারপর তার অন্য মোবাইলটা থেকে একটা নাম্বার ডায়াল করে ফোনটা কানে লাগাতে ও’পাশ থেকে সাড়া পেতেই বলল, “হ্যালো, শুনুন, আজ এসপি সাহেবের আমাদের এখানে আসবার কথা ছিল। কিন্তু আমি ........”

তার কথা শেষ হবার আগেই ও প্রান্ত থেকে জবাব এলো, “আমি সিকদার বলছি ম্যাম। কিন্তু ম্যাম, এসপি সাহেব তো এখানকার আজকের মিটিংটা পোস্টপন্ড করেছেন। আধঘণ্টা আগেই ডিসট্রিক্ট হেড কোয়ার্টার থেকে খবর পাঠিয়েছে যে গত রাতে জলপাইগুড়িতে একটা মার্কেট কমপ্লেক্সে বিরাট বড়সড় একটা ডাকাতির ঘটণা ঘটে গেছে। তাই এসপি সাহেব সকালে এখানে আসবার প্রোগ্রামটা ক্যানসেল করেছেন। আর পরবর্তীতে মিটিংটা কবে কখন হবে তা নাকি আগামীকাল বা পরশুর মধ্যে জানিয়ে দেবেন। খবরটা আপনাকে সাথে সাথে দিইনি বলে ক্ষমা করবেন ম্যাম। আসলে আমি ভেবেছিলাম যে আপনি হয়ত অলরেডি অফিসে আসবার জন্য বেরিয়ে পড়েছেন। তাই ভেবেছিলাম যে আপনি অফিসে এলেই কথাটা আপনাকে জানাবো”।

সীমন্তিনী চোখ বুজে একটা স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বলল, “ও তাই নাকি? আর আমাদের এদিকের খবর কি? কোন আর্জেন্সীর খবর আছে কিছু? কোথাও কোন ডেপুটেশন পাঠাবার প্রয়োজন আছে কি”?

ও’পাশ থেকে সিকদার বলল, “না ম্যাম, এখনও অব্দি কোনও আর্জেন্সী বা ডেপুটেশন পাঠাবার কোন খবর নেই। তা আপনি যদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে না থাকেন তাহলে একটু দেরী করে এলেও কোন ক্ষতি নেই ম্যাম”।
 

সীমন্তিনী এবার আরো শান্তভাবে জবাব দিল, “না মিঃ সিকদার, আমি এখনও আমার কোয়ার্টার থেকে বেরোতে পারিনি। আসলে, গতকাল রাতে আমি প্রায় ঘুমোতেই পারিনি। সকাল প্রায় সাড়ে ন’টায় আমার ঘুম ভেঙেছে। শরীরে একটা আলসেমি ভাব আছে, আর মাথাটাও খুব ভারী ভারী লাগছে। কিন্তু সাড়ে ন’টার মিটিংটায় সময় মতো এটেন্ড হতে পারলাম না বলেই খুব চিন্তায় ছিলুম। তবে মিটিংটা পোস্টপন্ড হয়েছে শুনে খুব রিলিভড ফীল করছি এখন। কিন্তু মিঃ সিকদার, আপনি কি একটু হেল্প করতে পারবেন আজ আমাকে প্লীজ”?

মিঃ সিকদার বলল, “অবশ্যই ম্যাম। বলুন কি করতে হবে আমাকে”।

সীমন্তিনী বলল, “আসলে আমার শরীরটা একটু উইক লাগছে বলেই আমি একটু রেস্টে থাকতে চাইছি। যদি আপনি কাইন্ডলি আজকের দিনটা একটু সামলে নিতে পারেন, তাহলে ....”

তার কথা শেষ হবার আগেই সিকদার বলে উঠল, “ঠিক আছে ম্যাম, নো প্রব্লেম। আমি সব সামলে নেব। আপনি নিশ্চিন্তে রেস্ট নিন। তেমন প্রয়োজন হলে আমি আপনাকে ফোন করবো। কিন্তু ম্যাম, আপনার শরীরে ঠিক সমস্যাটা কেমন? মানে আমি জানতে চাইছি যে ডাক্তার বা কোনও ওষুধপত্রের দরকার হলে আমাকে বলুন। আমি পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করবো”।
 

সীমন্তিনী বলল, “না না মিঃ সিকদার। আপনি অতোটা ভাববেন না। আমার স্টকে কিছু মেডিসিন আছে। মনে হয় তাতেই কাজ হয়ে যাবে। আর নিতান্তই যদি কিছু প্রয়োজন হয় তাহলে আমিই আপনাকে খবর দেব। তবে আপনি যে আজকের জন্য অফিস সামলাবার দায়িত্বটা নিলেন, সেজন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। তবে কোন ইমারজেন্সী হলেই কিন্তু আমাকে জানাবেন প্লীজ। আচ্ছা রাখছি তাহলে, কেমন”?
 

ফোন রেখে একটা বড় করে দীর্ঘশাস ছাড়তেই অর্চনা আর নবনীতা ছুটে তার ঘরে ঢুকল। অর্চনা সীমন্তিনীকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমি জানতুম দিদিভাই। রচুর কথা তুমি কিছুতেই ফেলতে পারবে না”।
 

অর্চনার একটা হাত ধরে স্মিত হেসে সীমন্তিনী বলল, “তোমার ছোটবোনটার জন্যে এবার আমাকে চাকরিটাই না খোয়াতে হয়। কী দুষ্টু মেয়ে রে বাবা। আমি অফিসে গেলে উনি সারাদিন উপোষ করে থাকবেন বলে আমার নামে দিব্যি কেটে বসলেন”।

অর্চনা সীমন্তিনীর গালে নিজের গাল চেপে ধরে বলল, “ও, এখন বুঝি সে শুধু আমার ছোটবোন হয়ে গেল। আর অন্য সময় সে তোমার ছোটবোন, তোমার বান্ধবী, তোমার বৌদি আর তোমার রচু সোনা, তোমার জীবন, তোমার মরন, তাই না”?

সীমন্তিনীও অর্চনার গালে নিজের গাল ঘসতে ঘসতে হেসে ফেলল। আর নবনীতা রুম থেকে বাইরে যাবার জন্য পা বাড়িয়ে বলল, “আমি তাহলে লক্ষ্মীদির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তাড়াতাড়ি সকালের খাবারটা বানিয়ে ফেলি গিয়ে”।
 

কিন্তু সে বেরিয়ে যাবার আগেই সীমন্তিনী বলল, “নীতা শোনো, লক্ষ্মীদিকে খাবার বানাতে বলে এসো তুমি। কিন্তু তুমি এখানে চলে এসো। তোমাদের সাথে আমার কিছু আলোচনা আছে। সেটা এখনই সেরে ফেলি”।

“ঠিক আছে দিদি” বলে নবনীতা বেরিয়ে যেতেই সীমন্তিনী অর্চনাকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যাগো অর্চু, রচু তো রেগে মেগে আমার সাথে ঠিক মত কথাই বলল না। তা তোমাদেরকে কি কিছু বলেছে? মানে দাদাভাই আর ও ঠিকঠাক আছে তো”?
 

অর্চনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই। ওরা দু’জনেই ঠিক আছে, ভাল আছে। রতু-দা রোজকার মতই আজও একই সময়ে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেছেন। রচুও সকালের খাবার খেতে খেতেই তোমাকে ফোন করেছিল। কিন্তু ফোনে তোমাকে না পেয়েই নীতাদির ফোনে ফোন করে আমাদের সাথে কথা বলল। তুমি ভেবো না। আর ও যখন জানতে পারবে যে তুমি আজ অফিসে যাও নি, তখন আনন্দে ঘরের মধ্যে নাচতে শুরু করবে। কিন্তু দিদিভাই, কাল রাতে তুমি অতো রাত পর্যন্ত জেগেছিলে কেন গো? রচু আর রতুদার কথাই ভাবছিলে বুঝি? আমরা শুয়ে পড়বার অনেক পর একবার জল নেবার জন্য বেরোতে দেখি তোমার ঘরে তখনও আলো জ্বলছে। জল নিয়ে ঘরে ফেরবার সময় দেখলুম তোমার ঘর অন্ধকার। ঘরে ঢুকে নীতাদিকে যখন বললুম, তখন নীতাদি আমাকে সাথে নিয়েই আবার তোমার ঘরের দরজায় এসে কড়া নাড়লো। আমিও তোমাকে ডেকেছিলুম। কিন্তু তোমার সাড়া না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলুম। ভেবেছিলুম তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো। সকালে এত বেলা পর্যন্ত তোমাকে ঘুমোতে দেখে আমরা সত্যিই ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলুম, জানো”?

নবনীতাও তখন ফিরে এসে সীমন্তিনীর ঘরে ঢুকেছে। সীমন্তিনী নবনীতার একটা হাত ধরে তাকে নিজের অপর পাশে বসিয়ে বলল, “তুমি তো একসাথে কত কিছু জিজ্ঞেস করে ফেললে অর্চু। আমি কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিই বলো তো? তবে রচু যখন আজ আমাকে ঘরেই আটকে দিল, তাহলে তোমাদের সাথে অনেক গল্প করবো এখন। নবনীতা তুমি আরেকটু ও’পাশে সরে বসো তো। আর দরজার দিকে খেয়াল রেখো। লক্ষ্মীদি যেন আমাদের কথার মাঝে হঠাৎ করে ঘরে এসে না ঢোকে। তাকে আসতে দেখলেই তুমি আমায় ঈশারা করবে, কেমন? নইলে সে আরেক পাগলামী শুরু করবে”।

নবনীতা সীমন্তিনীর দেখানো জায়গায় বসতে বসতে বলল, “কিন্তু দিদি, তোমার শরীর সত্যি ঠিক আছে তো? কোনও সমস্যা নেই তো”?
 

সীমন্তিনী দু’হাতে দু’জনের দুটো হাত একসাথে ধরে বলল, “কিচ্ছু ভেবো না তোমরা। আমি একদম ঠিক আছি। আমি যে আমার অফিসের সিকদারবাবুকে বললুম যে আমার শরীরটা ভাল নেই, সে’কথা শুনেই তো তোমরা এ’কথা বলছো? সেটা তো আমি মিথ্যে কথা বলেছি গো। রচুর দেওয়া দিব্যি আমি কি ফেলতে পারি বলো? আর কেন অফিসে যাচ্ছিনা আজ, সেটার তো একটা যুক্তিসংগত কারন দেখাতে হবে। আমি তো আর অফিসে এ’কথা বলতে পারব না যে আমার আদরের বোন আমাকে দিব্যি দিয়েছে বলেই আমি অফিস যাচ্ছি না। তবে সত্যি কাল রাতে মাথার ভেতরে এতকিছু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল যে রাত একটা পর্যন্ত জেগে থাকবার পরেও মাথার ভেতরটা দপদপ করছিল। তখন বাধ্য হয়েই একটা স্লিপিং পিল খেয়ে শুয়ে পড়েছিলুম। একটু যখন আচ্ছন্ন আচ্ছন্ন ভাব এসেছিল, তখনি বোধ হয় তোমরা দুটিতে আমায় ডেকেছিলে। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রভাবেই তখন আর চোখ খুলতে পারিনি। তাছাড়া তখন যদি আবার উঠে পড়তুম তাহলে বোধহয় আরও ঘন্টা দুয়েক আমাকে জেগে থাকতে হত। তাই তখন আমি খানিকটা ইচ্ছে করেই উঠিনি। আর ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়েও পড়েছিলুম। আজ ঘুমটা দেরী করে ভাঙতে যদিও তোমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলে ঠিকই, কিন্তু সাত আটঘন্টা সলিড ঘুম হতে শরীরটা এখন বেশ ঝরঝরে লাগছে। এখন আর কোনরকম মাথা ভার বা অন্য কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তোমাদের ভাবনায় ফেলে দিয়েছিলুম বলে তোমাদের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি ভাই”।

অর্চনা আর নবনীতা হাঁ হাঁ করে কিছু একটা বলে উঠতেই সীমন্তিনী তাদের থামিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠল, “প্লীজ নীতা, অর্চু। তোমরা আমাকে এখন এ ব্যাপারে আর কিচ্ছুটি বোল না প্লীজ। আমার মনের ভেতরটা যে এ মূহুর্তে কত খুশীতে ভরা, সেটা তোমরা বুঝতে পারবে না। তাই আর কিছু বলে আমার মনের সে খুশীটাকে নষ্ট করে দিও না তোমরা প্লীজ। জীবনের অনেকগুলো বছর শুধু দাদাভাইয়ের কাছ থেকে দূরে ছিলুম বলে অনেক কেঁদেছি। আমার চোখের জল মুছিয়ে একটু সান্ত্বনা দেবার মত কেউ আমার পাশে ছিল না। তারপর ভগবানের অশেষ কৃপায় রচু এল আমার জীবনে। সেদিন থেকেই দুরে থেকেও রচুর ভালবাসা আর আদর পেয়ে আমার জীবনটাই যেন বদলে গিয়েছিল। আর সেই রচুর মাধ্যমেই আমি অর্চু, মাসি, মেসো, আর ভাইকে পেয়ে আমার সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়েছি। রচু তো সকাল বিকেল রাতে ফোনে ফোনেই আমার সব খবর রাখে। ভালবাসায় আমার মন ভরিয়ে দেয়। প্রয়োজনে রাগ অভিমানও করে। কিন্তু ওর আদর আবদার ভালবাসা রাগ অভিমান কোনকিছুই আমি ফেলতে পারিনা। আজ নীতার মত আরেকটা মিষ্টি মেয়েকে আমার পাশে পেয়েছি। আর দ্যাখো, এখন তোমরা দু’জন কিভাবে আমায় আগলে আছো। রাতে আমার ঘুম ঠিক হয়নি ভেবে আমার জন্যে তোমরাও কত দুশ্চিন্তা করছো। এ কি আমার কম ভাগ্য বলো। ছোটবেলা থেকেই যে মেয়েটা মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত, যে মেয়েটা একদিন শুধু ভেতরে ভেতরে গুমড়ে গুমড়ে কাঁদতো, যাকে সান্ত্বনা দেবার মত কেউ তার পাশে ছিল না, আজ তোমাদের মত দুটো মিষ্টি মেয়ে কী ভালবাসায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছো। আর আমার রচু সোনা। আমার থেকে এত দূরে থেকেও কিভাবে আমার পাশে আছে দ্যাখো। আমাকে এ সুখটা একটু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে দাও না। অন্য কোনও কথা বলে আমার মন থেকে এমন সুখের আবেশটুকু নষ্ট করে দিও না প্লীজ”।

অর্চনা আর নবনীতাও কোন কথা না বলে দু’পাশ থেকে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে থাকলো। বেশ খানিকক্ষণ পরে অর্চনাই প্রথম কথা বলল, “রতু-দা আর রচুর কথা ভাবতে ভাবতে আমরাও তো কাল অনেকক্ষণ ঘুমোতে পারিনি দিদিভাই। তুমিও যে এ’ঘরে একা একা তাদের কথাই ভাবছিলে, এটা তো আমরাও জানতুম। কিন্তু প্রায় দু’ঘন্টা পরেও জল নিতে বেরিয়ে তোমার ঘরে আলো দেখে তোমাকে ডেকেছিলুম। কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ বুঝতে পেরেই আমরা আর তোমাকে ডিসটার্ব করিনি। কিন্তু দিদিভাই, চরম স্বার্থপরের মতই একটা প্রশ্ন না করে যে আর থাকতে পারছি না গো। নীতাদির মুখে কাল যা সব শুনলুম, সে ব্যাপারে কতটা কি করতে পারব আমরা এতদুর থেকে, আর পরিতোষবাবুই বা কতটা কি করতে পারবেন, এ ব্যাপারে কিছু ভেবেছো কি”?


______________________________

Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 12-03-2020, 07:55 PM



Users browsing this thread: 7 Guest(s)