12-03-2020, 07:55 PM
(Update No. 142)
সীমন্তিনী মহিমাকে আশ্বস্ত করে বলল, “বৌদি, কিছু ভেবো না তুমি। তুমি যখন আমার দাদাভাইকে আর বৌদিকে ভালবাসো, তোমার লজ্জার কথা অন্য কারুর সাথে আমি শেয়ার করবো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি”।
মহিমা এবার বলল, “ধন্যবাদ বোন। তবে শোনো, তুমি আমার ব্যাপারে রতীশ আর রচনার কাছ থেকে যতটুকু শুনেছ সেটাই আমার সম্পূর্ণ এবং একমাত্র পরিচয় নয়। আসলে রতীশ আর রচনা শুধু আমার একটা পরিচয়ই জানে। ওরাও আমার অন্য পরিচয়, আমার অন্য ব্যবসার কথা কিছু জানে না। আজ আমি নিজে তোমাকে সে’সব কথা বলতে চলেছি। তবে আগে তোমার কাছে একটা অনুরোধ করছি ভাই। আমার এ পরিচয়টা তুমি রচনা বা রতীশকে জানিও না প্লীজ। তাতে আমি ওদের কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো। ওরা আমায় ঘৃণা করতে শুরু করবে। আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না বোন। যেদিন আমি জানতে পারব যে রচনা আর রতীশ আমার ঘৃণ্য রূপটা জেনে ফেলেছে, সেদিন আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। থানা পুলিশ আইন আদালত নিয়ে আমার অতো দুশ্চিন্তা নেই। সেসব আমি কোন না কোন ভাবে ঠিক সামলে নিতে পারবো। কিন্তু আমার ভাই বোন দুটোর চোখে ছোট হয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না”।
সীমন্তিনী প্রবোধ দিয়ে বলল, “বৌদি, তুমি সেসব নিয়ে ভেবো না একদম। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, দাদাভাই আর রচু এসব কথা একেবারেই জানতে পারবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো”।
মহিমা এবার বেশ কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “শোনো বোন, আজ থেকে প্রায় ছ’ বছর আগে আমার যোগা ইনস্টিটিউটটা যে বছর শুরু করেছিলাম তখন আমার মেয়ের হায়ার এডুকেশনের জন্য এক থোকে অনেকগুলো টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। আমার স্বামীর ইলেকট্রনিক্স গুডসের দোকানটাও তখন নতুন। তাতেও আয় খুব বেশী হত না। তখন নিরূপায় হয়ে শুধু মাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আমি স্বেচ্ছায় দেহব্যবসায় নেমেছিলাম। ভগবানের দয়ায় আমার শরীরটা যে কোন পুরুষ মানুষের কাছে কামনার বস্তু ছিল তখন। কিন্তু সেটা করেও প্রয়োজনীয় টাকা আমি যোগাতে পারছিলাম না। আহমেদাবাদে মেয়েকে যে ইনস্টিটিউটে ভর্তি করাতে চাইছিলাম, সেখান থেকে একটা নোটিস এসে হাজির হল। পনেরো দিনের মধ্যেই তাদের কাছে কুড়ি লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে, নচেৎ তারা আমার মেয়ের অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট করে দেবে। তখন দিনে তিন চারজন পুরুষের মনোরঞ্জন করেও আমি ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজারের বেশী রোজগার করতে পারতাম না। তাই নিরূপায় হয়ে এক কামুক ধনী ব্যবসায়ীর কাছে নিজেকে সারা জীবনের জন্য বন্ধক রেখে আমি তার কাছ থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা অগ্রিম হিসেবে নিয়ে আমি মেয়েকে আহমেদাবাদে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। আবার ঠিক তার দু’বছর বাদেই ছেলেকে ব্যাঙ্গালোরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবার জন্য আরো তেইস চব্বিশ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তখনও ওই ধনী কামুক লোকটার কাছ থেকেই আমি আরও পনেরো লক্ষ টাকা অগ্রিম নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু ওই পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকার দেনার বোঝা কমাতে আমি নিজের সাথে সাথে অন্য আরও কয়েকজন মেয়ে মহিলার দালালী শুরু করি। বুঝতেই পারছ এ দালালীও দেহ ব্যবসারই। তাতে আমার আয় লক্ষণীয় ভাবে বাড়তে লাগলো। এইভাবে ধীরে ধীরে আমার একটা এসকর্ট এজেন্সী গড়ে উঠেছিল। আর থানা পুলিশ আইন আদালতের খপ্পড় থেকে বাঁচবার জন্যেও আমাকে নানান ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। পরের দু’বছরের মধ্যেই আমার হাতে প্রচুর পয়সা এসে গেল। সেই ধনী কামুক লোকটার কাছ থেকে নেওয়া সমস্ত টাকা আমি ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু টাকা ফিরে পেলেও সে আমাকে আমার অঙ্গীকার থেকে মুক্ত করেনি। তারপর থেকে আজ অব্দি সে সপ্তাহে তিনদিন নিয়মিত আমার শরীরটাকে ভোগ করে। আমাদের নতুন বাড়ি হল। পয়সার প্রাচুর্য এল। অর্থ প্রতিপত্তি বাড়তে লাগল। এক সময় নিজেকে অন্য পুরুষদের কাছে বিলিয়ে দেওয়াও কমলো। কিন্তু এখনও এমন কিছু কিছু ক্লায়েন্ট আমাকে নিজে এটেন্ড করতেই হয় যারা আমাকে ওই দেহব্যবসা চালিয়ে যেতে নানাভাবে সাহায্য করছে। আর রয়েছে ওই ধনী কামুক লোকটা যে আমার প্রয়োজনের সময় আমায় পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। এদের সকলের কাছেই আমি কোন না কোন ভাবে কৃতজ্ঞ”।
একসাথে এতগুলো কথা বলার পর মহিমা থেমে একটু দম নিল। আর সীমন্তিনী মহিমার কথা শুনতে শুনতে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছিল যে মহিমা নিজের জীবনের এত গোপনীয় কথাগুলো কেমন নির্দ্বিধায় সীমন্তিনীর মত এক আইপিএস অফিসারকে বলে যাচ্ছে! সীমন্তিনী চাইলে এক্ষুনি মহিমাকে পুলিশের জালে জড়িয়ে ফেলতে পারে। অবশ্য মহিমা যে সবদিকে আটঘাট বেঁধেই এ ব্যবসা চালাচ্ছে সে’কথাও তো তার কাছে গোপন করেনি। সত্যি মহিলার গাটস আছে, মানতেই হবে। তাকে অত সহজেই কাবু করা যাবে না। আর সেটা করতে গেলে হয়তো নিজেদের ডিপার্টমেন্টের এবং অন্য আরও অনেক সরকারি বেসরকারি রথী মহারথীর সাথে মোকাবিলা করতে হবে। তবে আপাততঃ আগে রতীশ আর রচনাকে বিপদমুক্ত করাই তার উদ্দেশ্য।
এমন সময় মহিমা ওদিক থেকে আবার বলল, “মন্তি, তুমি লাইনে আছো তো? আমার কথা শুনতে পাচ্ছো তো বোন”?
সীমন্তিনী সাথে সাথে জবাব দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ বৌদি, আমি তোমার সব কথাই শুনছি। কিন্তু এ সবের সাথে আমার দাদাভাই আর বৌদির সংযোগটা কী? আর তাদের ওপর বিপদ আসছেই বা কোনদিক থেকে”?
মহিমা বলল, “হ্যাঁ বোন, এখন সে কথাই বলবো। কিন্তু আগের কথাগুলো না বললে তোমাকে পরে যে কথাগুলো আমি বলতে যাচ্ছি সেটা বুঝতে তোমার কষ্ট হত। এবার শোনো। যে কামুক লোকটি আমাকে পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়ে একসময় আমাকে সাহায্য করেছিল, গত সপ্তাহে সেই কোটিপতি লোকটি এক অদ্ভুত বায়না নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। ওঃ, এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা তোমাকে না জানালেই নয়। আমার যোগা ইনস্টিটিউটে রতীশ ছাড়াও বরুন আর সুজয় নামে দু’জন ট্রেনার আছে। আর আমার অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট বীথিকাও সেখানে কাজ করে। এই বীথিকা আর বরুন সুজয়ও আমার এসকর্ট এজেন্সীর এসকর্ট হিসেবে কাজ করে। তবে ওদের প্রত্যেকেরই এসব করার পেছনে পারিবারিক কিছু কিছু কারণ আছে। কেউই শুধুমাত্র টাকা কামাবার জন্যে এ কাজে নামে নি। আর শুধু ওরাই নয়, আমার এজেন্সীতে যত মেয়ে মহিলা এসকর্ট আছে, তারা সকলেই অন্য কোন উপায়ে পরিবারের ভরণ পোষন করতে না পেরে প্রায় বাধ্য হয়ে এবং নিজেদের ইচ্ছেয় আমার এসকর্ট সার্ভিসে যোগ দিয়েছে। আমি কাউকে জোর করে বা কোনভাবে ঠকিয়ে আমার ব্যবসায় নামাইনি আজ পর্যন্ত। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো বোন। রতীশকে আমি এ কাজে ব্যবহার করবার কথা স্বপ্নেও ভাবি নি। আর ভগবান না করুন তেমন দুর্দিন কখনও যেন ওর ওপর নেমে না আসে। জীবনে অনেক পুরুষ মানুষের সাথে আমি শরীর নিয়ে ভালবাসার খেলা খেলেছি। কিন্তু সে’সব ছিল নেহাতই সেক্স। তার মধ্যে ভাব ভালবাসার কোনও ব্যাপার ছিল না। যেটা ছিল তা ছিল শুধু পয়সা কামানোর লোভ। ভালবেসেছিলাম শুধু একজনকেই। আমার স্বামী অরিন্দমকে। মা-বাবার অমত সত্ত্বেও তাকেই আমি বিয়ে করে তার সাথে চলে এসেছিলাম এই কলকাতায়। ছাব্বিশ বছর ধরে আমাদের দাম্পত্য জীবনে বেশ সুখেই আছি। বিয়ের পরের ঊণিশটা বছর স্বামী ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন পুরুষ ছিল না। কিন্তু খুব ছোট বয়স থেকেই আমি পকেটমানি উপার্জন করবার জন্যে দিল্লীতে অনেক ছেলে ছোকড়া আর সব রকম বয়সের পুরুষের সাথে সেক্স করতাম, আমাদের বিয়ের আগ পর্যন্ত। মেয়ের হায়ার এডুকেশনের জন্য যখন অতগুলো টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল তখন আবার আমি ছোটবেলার শেখা ওই সহজ রাস্তাতেই পা বাড়িয়েছিলাম। অবশ্য বছর দুয়েক আগে থেকেই আমি সে’সব কমিয়ে দিয়েছি। এখন শুধু আমি তাদের কাছেই নিজের শরীরটাকে তুলে দিই যারা এই এসকর্ট ব্যবসাটা চালিয়ে নিতে আমাকে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। তাদেরকে খুশী না রাখলে এই এসকর্ট ব্যবসা আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। এমন একটা বাজে মেয়ের মুখে তুমি কথাটা শুনে অবাকই হবে। তোমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে জানি। তবু না বলে পারছিনা ভাই। রতীশকে প্রথম দিন দেখেই ওর শান্ত সুন্দর চেহারা আর সুমিষ্ট কথার মোহে পড়ে আমি ওকে আমার দেবর আর ছোটভাইয়ের মত ভালোবেসে ফেলেছি। আর রচনার কথা তো আগেই বলেছি। ওকে দেখবার দিন থেকেই আমি একটা মূহুর্তের জন্যেও ওকে ভুলে থাকতে পাচ্ছি না। রতীশকে কোনও ভাবেই আমি বিপথে যেতে দেব না” বলে এক মূহুর্ত থেমে আবার বলল, “আচ্ছা, সে যাই হোক, আমার সেই কোটিপতি ক্লায়েন্ট সেদিন এসে আমাকে বলল যে তার ভোগের জন্যে এমন একটা মেয়েকে জোগার করে দিতে হবে, যার স্বামী আমার ইনস্টিটিউটেই কাজ করে। আমি পরিষ্কার করে বলার অনুরোধ করতে সে তার পকেট থেকে আমাকে একটা ছবি বের করে দেখায়। তুমি শুনে চমকে যাবে মন্তি, ছবিটা রচনার”।
এ’কথা শুনেই সীমন্তিনী প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কী বলছ বৌদি? রচুর ফটো? ওই লোকটা রচুর ফটো কোত্থেকে পেল”?
মহিমা বলল, “আমার সেই ক্লায়েন্ট তো জানতো না যে আমি রচনাকে চিনি বা ইতিমধ্যেই রচনার সাথে একটা সুন্দর সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছি। তাই সে ছবিটা দেখার সাথে সাথে আমিও ঠিক তোমার মতই চমকে উঠলেও তাকে বুঝতে দিই নি। কায়দা করে তার কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব জানবার চেষ্টা করলাম। শুনলাম যে এর আগে আরেকজন দালাল টাকার বিনিময়ে রচনাকে তার হাতে তুলে দেবার চুক্তি করেছিল। কিন্তু সে দালালটা নাকি কিছুদিন আগে অন্য কোনও একটা কেসে ফেঁসে গিয়ে এখন জেলে আছে। তাই আমার সেই কোটিপতি ক্লায়েন্টের সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। কিন্তু সে জানতো যে ছবির ওই মহিলার মানে রচনার স্বামী রতীশ আমার ইনস্টিটিউটেই কাজ করে। আর সে নিশ্চয়ই ভেবেছে যে আমার ইনস্টিটিউটের অন্য ট্রেনারদের মত আমি রতীশকেও এসকর্ট ব্যবসায় নামিয়েছি। তাই তার ধারণা যে আমি খুব সহজেই রচনাকে তার হাতে তুলে দিতে পারবো। আর সে জন্যেই সে আমার কাছে এসেছিল। রাগে ক্ষোভে আমার বুকের ভেতরটা জ্বলতে থাকলেও মুখে হাসি এনে আমি প্রথমে তাকে বলেছিলাম যে আমি এসকর্টের ব্যবসা করি ঠিকই। কিন্তু কারুর ইচ্ছের বিরূদ্ধে আমি কাউকে এ ব্যবসায় টেনে আনি না। তাই তার কথা মেনে তার কাজ করে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সে আমাকে আশাতীত পয়সা দেবার লোভ দেখাতে আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি তার প্রস্তাবটা মেনে না নিই তবে সে অর্থের লোভ দেখিয়েই কাউকে না কাউকে এ কাজ করবার জন্যে ঠিক নিয়োগ করতে পারবে। আর এ শহরে এমন লোকেরও অভাব নেই মোটেও। তখন আমি তাকে বললাম যে ঠিক আছে, একটা সময় সে যখন আমার এতোটা উপকার করেছে, আর এখনও তার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে, তাহলে তার জন্যে সে কাজটা আমি হাতে নিতে রাজি আছি। কিন্তু যে মেয়েটাকে আমি চিনি না জানিনা, তার সাথে পরিচিত হয়ে তাকে আমার কথার জালে জড়িয়ে ফন্দি ফিকির করে বিমলের হাতে তুলে দিতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। তখন সে লোকটা আমাকে ছ’মাস সময় দিল। এভাবে রচনার ক্ষতি করবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রচনাকে ছ’টা মাস বিপদ থেকে আগলে রাখতে আমি তার কথা মেনে নিয়েছি। কিন্তু সেদিন থেকেই ভাবছি, কি করে রতীশ আর রচনাকে এ বিপদ থেকে আমি পুরোপুরি ভাবে মুক্ত করতে পারি। গত সাতটা দিন ধরে ভাবতে ভাবতে আমি পাগল হয়ে গেছি বোন। কিছুতেই কোনও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না আমি” বলতে বলতে মহিমা কেঁদে ফেলল।
সীমন্তিনীর মনের মধ্যেও তখন বিশাল ঝড় বইতে শুরু করেছে। তবু সে নিজেকে সংযত রাখতে রাখতে বলল, “বৌদি, এভাবে ভেঙে পড়ো না প্লীজ। আমাকে তোমার আর যা কিছু জানাবার আছে তা সবটা খুলে বলো। তুমি যে আমার দাদাভাই আর রচনাকে এভাবে ভালবেসে ফেলেছো সেজন্যে তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজ তুমি আমাকে কথাগুলো বলে খুব ভাল করেছ। এখন আমরা দু’জনে মিলে একসাথে চেষ্টা করতে পারব ওদের বিপদ থেকে মুক্ত করতে। তুমি প্লীজ শান্ত হও। আর তোমার বলার আর কিছু বাকি থাকলে সেসব খুলে বলো আমায়”।
মহিমা এবার খানিকটা ক্লান্ত স্বরে বলল, “আর কী বলবো ভাই তোমাকে। আমার অর্থ প্রতিপত্তি যতটুকু আছে তার সাহায্যে রতীশ আর রচনার ওপর নেমে আসা যে কোন সংকটের মোকাবিলা আমি করতে পারতাম। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার বিরূদ্ধে গিয়ে আমি কিচ্ছুটি করতে পারবো না মন্তি। সে ক্ষমতা আমার নেই। কারন অর্থে প্রতিপত্তিতে আর বাহুবলে বিমল আমার চেয়ে অনেক অনেক ওপরে। ওর পেছনে লোক লাগিয়ে আমি একটা দিনও টিকতে পারবো না। ও যদি ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারে যে আমি রচনাকে বাঁচাবার জন্য ওর পেছনে লোক লাগিয়েছি, তাহলে সেদিনই সে আমাকে মেরে ফেলবে। আর রচনাকেও যে কাউকে দিয়ে কিডন্যাপ করে তুলে নেবে। আর শুধু তাই নয়। বিমল আমার এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারেও অনেক খবরই জানে। আমার সোর্স যতই থাকুক না কেন বিমল আমাকে ঠিক বিপদে ফেলতে পারবে। আমার হাতের লোককে দিয়েই ও আমাকে শেষ করে দিতে পারবে। তাই তো আমি এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে রতীশ আর রচনার হিতৈষী। যে নিঃস্বার্থ ভাবে ওদের ভালোবাসে। কিন্তু ওদের সাথে কথা বলেই বুঝলাম, কলকাতায় ওদের এমন হিতৈষী আর কেউ নেই। পেলাম শুধু তোমার খোঁজ। তাই তো তোমার সাথে দেখা করবার জন্য বা কথা বলবার জন্য ছটফট করছিলাম আজ বিকেল থেকেই”।
সীমন্তিনী এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বৌদি, তুমি বিমল বিমল বলছিলে। এটা কোন বিমল গো? এক বিমল আগরওয়ালা তো দাদাভাইকে তোমার কাছে নিয়ে গিয়েছিলো সেই বিমল আগরওয়ালাই নাকি”?
মহিমা জবাব দিল, “হ্যাঁ ভাই, সেই বিমল আগরওয়ালাই। পেশাগত ভাবে সে একজন নামকরা বিল্ডার এবং প্রোমোটার। কোটি কোটি টাকার মালিক। কিন্তু অসম্ভব রকমের কামুক লোকটা। নিজের কাম চরিতার্থ করতে এমন কোনও কাজ নেই যা সে করতে পারে না। এবার বুঝতে পারছ তো রচনার ওপর কত বড় একটা বিপদের খাঁড়া ঝুলছে। এখন তুমিই একমাত্র যদি কোনও উপায় খুঁজে বের করতে পারো”।
সীমন্তিনী বলল, “বৌদি তোমার মুখে এতসব শুনে তো আমার মাথা ভনভন করছে গো। আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। মাথা গরম হয়ে গেছে আমার। আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় ভাল করে ভেবে দেখতে হবে বৌদি। তারপর তোমাকে জানাবো। আচ্ছা তুমি আমার আর কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দেবে বৌদি”?
মহিমা ফোঁপাতে ফোঁপাতেই বলল, “জানা থাকলে নিশ্চয়ই উত্তর দেবো ভাই। বলো কী জানতে চাও”?
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি দাদাভাই বা রচনাকে এসব ঘটণার কোনও হিন্টস দিয়েছো”?
মহিমা সাথে সাথে জবাব দিল, “না না মন্তি। আমি সে চেষ্টাই করিনি। কারন সেটা করলে ওই সহজ সরল ছেলেমেয়েদুটো যে ভীষণ ঘাবড়ে যাবে। ওরা ভয় পেয়ে নাজানি কি বোকামি করে ফেলবে। তাতে হয়তো হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই না”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বৌদি, ঠিক বলেছ তুমি। ভালই করেছো যে ওদের কিছু জানতে দাও নি। আচ্ছা বৌদি আরেকটা কথা বল তো? বিমল আগরওয়ালা রচনার ছবিটা কোত্থেকে পেয়েছে সেটা কি আন্দাজ করতে পেরেছো”?
মহিমা বলল, “সেটা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবিনি ভাই। তবে জানোই তো, আজকাল মোবাইলের যুগ। সকলের হাতে হাতেই মোবাইল। মোবাইলে ক্যামেরাও থাকে। রাস্তা ঘাটে যে কেউ ইচ্ছে করলেই যে কারুর ছবি তুলে নিতে পারে। আর বিমলের হাতের ওই ছবিটা দেখেও আমার মনে হয়েছিলো ওটা কোনও মোবাইলে তোলা ছবিই। তবে যতদুর মনে হয় আগে যে লোকটার সাথে বিমল রচনার ব্যাপারে চুক্তি করেছিল, সেই লোকটাই হয়তো কোথাও কোনভাবে ও ছবিটা তুলেছে। কারন বিমল নিজেই বলেছে যে ও এখনও রচনাকে চাক্ষুষ দেখে নি”।
সীমন্তিনীও মনে মনে তেমনই কিছু একটা ভেবে আবার জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা বৌদি, ছবিটা কি এখন ওই বিমল আগরওয়ালার কাছেই আছে”?
মহিমা বলল, “না মন্তি, ছবিটা এখন আমার কাছে আছে। বিমলের কাছ থেকে আমি সেদিনই ওটা চেয়ে নিয়েছিলাম। বুঝিয়েছিলাম যে সঠিক ভাবে মেয়েটাকে চিনতে ছবিটা আমার কাছে রাখা দরকার”।
সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে বৌদি। আজ তো কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে গেল। আজ আর বেশী রাত না করে আমরা বরং এখানেই আজকের কথা শেষ করি। তবে শোনো, অন্য কারুর সাথে এ ব্যাপারে আর কোনও কথা বোল না। আর আমি তোমাকে এখনই আমার পার্সোনাল মোবাইল নাম্বারটা এসএমএস করে দিচ্ছি। তুমি রচুর ওই ফটোটার একটা ছবি তুলে আমার মোবাইলে পাঠিয়ে দিও। আজ না পারলেও, কাল সকালে অবশ্যই পাঠাবে। তবে আমার মনে হয়, বিমল আগরওয়ালা যখন তোমার ওপর ভরসা করে কাজটা তোমার হাতে দিয়ে গেছে, তাহলে এই ছ’মাসের সময়সীমার ভেতরে সে আর অন্য কোনভাবে রচনার ওপর হামলা করবার চেষ্টা করবে না। তোমার কি মনে হয়”?
মহিমা বলল, “হ্যাঁ বোন, আমারও তাই মনে হয়। আর এ’কথা ভেবেই আমি মৌখিক ভাবে তার চাহিদা পূরণ করতে রাজী হয়েছি। তবে আমার ওপর বিমলের যদি কোন সন্দেহ না হয় তাহলে এ সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পরেও আমি ওর কাছে হয়তো আরও খানিকটা সময় চেয়ে নিতে পারবো। ততদিনে তুমি প্লীজ কিছু একটা করো বোন”।
সীমন্তিনী বলল, “বেশ বৌদি, তুমি বিমলের সাথে সদ্ভাব রেখে চলো। ও যেন কোনভাবেই তোমার ওপর কোন সন্দেহ করতে না পারে। কিন্তু বৌদি, রচনাকে বাঁচাবার আর কোনও উপায় বা সম্ভাবনার কথা কি তোমার মাথায় এসেছে”?
মহিমা প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “নারে বোন। আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না। রতীশ আর রচনাকে কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে বললেও ওরা যে পুরোপুরি বিপদমুক্ত হয়ে যাবে, সেটা ভাবা ভুল হবে। আর আমি নিজেও ওদেরকে আমার থেকে দুরে চলে যেতে দিতে চাই না। বরানগরের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গেলেও ওদের বিপদ কাটবে না। আমার নিজের বাড়িতে এনে তুললে ওদের সাথে সাথে আমিও বিপদে পড়বো” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “বিমলকে মেরে ফেলতে পারলেই একমাত্র ওদের পুরোপুরি ভাবে বিপদমুক্ত করা যাবে। কিন্তু সেটা তো আর আমার তোমার পক্ষে সম্ভব নয় ভাই। আমি যতই অনৈতিক ব্যবসায় লিপ্ত থাকি না কেন, কাউকে মেরে ফেলবার মত মানসিকতা বা সাহস কোনটাই আমার নেই ভাই। এখন আমি শুধু তোমার ওপরেই ভরসা করছি। হাতে কিছুটা সময় তো আছে। তুমি ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করতে পারলেই আমি খুশী। তাতে যদি আমার তরফ থেকে কোনও সাহায্যের দরকার পড়ে, সেটাও আমি সকলের কাছে গোপন রাখবার চেষ্টা করে ঠিকই করবো। আর সেটা যদি তুমি কোনভাবে করতে পারো ভাই, তাহলে আমি তোমার গোলাম হয়ে থাকবো চিরদিন” বলতে বলতে আবার কাঁদতে শুরু করলো।
সীমন্তিনী আবার তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কেঁদো না বৌদি। তুমি আমাকে ব্যাপারটা জানিয়ে খুব ভালো করেছ। আমি দেখি কি করতে পারি। কিছু একটা উপায় তো বের করতেই হবে। তবে তোমাকে আমি এখনই আমার প্রাইভেট নাম্বারটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এ নাম্বারটা প্লীজ অন্য কাউকে জানাবে না। আর যদি আমাকে আর কোন কথা জানাতে চাও, তাহলে রাত এগারোটার পরেই শুধু ফোন করবে। অন্য সময় করো না। আমরা পরে এ ব্যাপারে আবার কথা বলবো। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। এবার একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো কেমন? রাখছি তাহলে”?
মহিমা কান্না মাখা গলায় বলল, “ঠিক আছে বোন। তোমার নাম্বার আমি অন্য কাউকে দেবো না। কিন্তু ঘুম যে আমার সাতদিন আগে থেকেই পালিয়ে গেছে। এই সাতটা রাত আমি শুধু ভেবে ভেবেই কাটিয়েছি। তবে আজ তোমার সাথে কথা বলতে পেরে মনটা কিছুটা হলেও শান্ত হলো। দেখি আজ ঘুমোতে পারি কি না। তুমিও ভালো থেকো ভাই। আর আমার সাথে যোগাযোগটা রাখবে কিন্তু প্লীজ”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বৌদি, তোমার সাথে আমার যোগাযোগ অবশ্যই থাকবে। তুমি আমার দাদাবৌদির জন্য এতো ভাবছো। আমি কি তোমাকে ভুলে যেতে পারি। তবে আজ আর কথা নয় প্লীজ বৌদি। গুড নাইট”।
ফোন সরিয়ে রেখে সীমন্তিনী জলের বোতল তুলে নিয়ে ঢকঢক করে বেশ কিছুটা জল খেয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। মহিমার বলা কথাগুলো আবার মনে মনে আওড়াতে লাগল। রচনার বিপদের কথা শুনে তার মনটা সত্যি খুব বিচলিত হয়ে উঠেছে। মাথার ভেতরটা দপদপ করছে এখনও। এ অবস্থায় ঘুম কিছুতেই আসবে না তার। রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে তখন। সীমন্তিনী ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মোবাইলে সকাল সাড়ে ছটার এলার্ম সেট করে, ঘরের লাইট নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল।
তখনও ঠিক ঘুম আসে নি। আচ্ছন্নপ্রায় অবস্থায় তার মনে হল মোবাইলে একটা শব্দ হল যেন। আর মনে হল কেউ যেন তার ঘরের দরজায় আস্তে আস্তে টোকা দিচ্ছে। “দিদিভাই, দিদি” বলে চাপা গলায় কেউ যেন ডাকছে তাকে। সীমন্তিনী আন্দাজ করল, নিশ্চয়ই অর্চনা আর নবনীতাই হবে। ওরা হয়তো কোন কারনে ওদের ঘর থেকে বেরিয়েছিল। আর সীমন্তিনীর ঘরে আলো জ্বলতে দেখেই হয়ত তারা জানতে চাইছিল এত রাতেও সীমন্তিনী জেগে আছে কেন। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রভাবেই সে আর চোখ খুলে তাকাতে পারছিল না তখন। কয়েকমূহুর্ত বাদেই সে ঘুমিয়ে পড়ল।
****************
______________________________
সীমন্তিনী মহিমাকে আশ্বস্ত করে বলল, “বৌদি, কিছু ভেবো না তুমি। তুমি যখন আমার দাদাভাইকে আর বৌদিকে ভালবাসো, তোমার লজ্জার কথা অন্য কারুর সাথে আমি শেয়ার করবো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি”।
মহিমা এবার বলল, “ধন্যবাদ বোন। তবে শোনো, তুমি আমার ব্যাপারে রতীশ আর রচনার কাছ থেকে যতটুকু শুনেছ সেটাই আমার সম্পূর্ণ এবং একমাত্র পরিচয় নয়। আসলে রতীশ আর রচনা শুধু আমার একটা পরিচয়ই জানে। ওরাও আমার অন্য পরিচয়, আমার অন্য ব্যবসার কথা কিছু জানে না। আজ আমি নিজে তোমাকে সে’সব কথা বলতে চলেছি। তবে আগে তোমার কাছে একটা অনুরোধ করছি ভাই। আমার এ পরিচয়টা তুমি রচনা বা রতীশকে জানিও না প্লীজ। তাতে আমি ওদের কাছে খুব ছোট হয়ে যাবো। ওরা আমায় ঘৃণা করতে শুরু করবে। আমি সেটা সহ্য করতে পারবো না বোন। যেদিন আমি জানতে পারব যে রচনা আর রতীশ আমার ঘৃণ্য রূপটা জেনে ফেলেছে, সেদিন আমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। থানা পুলিশ আইন আদালত নিয়ে আমার অতো দুশ্চিন্তা নেই। সেসব আমি কোন না কোন ভাবে ঠিক সামলে নিতে পারবো। কিন্তু আমার ভাই বোন দুটোর চোখে ছোট হয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না”।
সীমন্তিনী প্রবোধ দিয়ে বলল, “বৌদি, তুমি সেসব নিয়ে ভেবো না একদম। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, দাদাভাই আর রচু এসব কথা একেবারেই জানতে পারবে না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো”।
মহিমা এবার বেশ কয়েক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “শোনো বোন, আজ থেকে প্রায় ছ’ বছর আগে আমার যোগা ইনস্টিটিউটটা যে বছর শুরু করেছিলাম তখন আমার মেয়ের হায়ার এডুকেশনের জন্য এক থোকে অনেকগুলো টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। আমার স্বামীর ইলেকট্রনিক্স গুডসের দোকানটাও তখন নতুন। তাতেও আয় খুব বেশী হত না। তখন নিরূপায় হয়ে শুধু মাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে আমি স্বেচ্ছায় দেহব্যবসায় নেমেছিলাম। ভগবানের দয়ায় আমার শরীরটা যে কোন পুরুষ মানুষের কাছে কামনার বস্তু ছিল তখন। কিন্তু সেটা করেও প্রয়োজনীয় টাকা আমি যোগাতে পারছিলাম না। আহমেদাবাদে মেয়েকে যে ইনস্টিটিউটে ভর্তি করাতে চাইছিলাম, সেখান থেকে একটা নোটিস এসে হাজির হল। পনেরো দিনের মধ্যেই তাদের কাছে কুড়ি লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে, নচেৎ তারা আমার মেয়ের অ্যাপ্লিকেশন রিজেক্ট করে দেবে। তখন দিনে তিন চারজন পুরুষের মনোরঞ্জন করেও আমি ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজারের বেশী রোজগার করতে পারতাম না। তাই নিরূপায় হয়ে এক কামুক ধনী ব্যবসায়ীর কাছে নিজেকে সারা জীবনের জন্য বন্ধক রেখে আমি তার কাছ থেকে কুড়ি লক্ষ টাকা অগ্রিম হিসেবে নিয়ে আমি মেয়েকে আহমেদাবাদে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম। আবার ঠিক তার দু’বছর বাদেই ছেলেকে ব্যাঙ্গালোরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াবার জন্য আরো তেইস চব্বিশ লক্ষ টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তখনও ওই ধনী কামুক লোকটার কাছ থেকেই আমি আরও পনেরো লক্ষ টাকা অগ্রিম নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু ওই পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকার দেনার বোঝা কমাতে আমি নিজের সাথে সাথে অন্য আরও কয়েকজন মেয়ে মহিলার দালালী শুরু করি। বুঝতেই পারছ এ দালালীও দেহ ব্যবসারই। তাতে আমার আয় লক্ষণীয় ভাবে বাড়তে লাগলো। এইভাবে ধীরে ধীরে আমার একটা এসকর্ট এজেন্সী গড়ে উঠেছিল। আর থানা পুলিশ আইন আদালতের খপ্পড় থেকে বাঁচবার জন্যেও আমাকে নানান ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। পরের দু’বছরের মধ্যেই আমার হাতে প্রচুর পয়সা এসে গেল। সেই ধনী কামুক লোকটার কাছ থেকে নেওয়া সমস্ত টাকা আমি ফিরিয়ে দিতে পেরেছিলাম। কিন্তু টাকা ফিরে পেলেও সে আমাকে আমার অঙ্গীকার থেকে মুক্ত করেনি। তারপর থেকে আজ অব্দি সে সপ্তাহে তিনদিন নিয়মিত আমার শরীরটাকে ভোগ করে। আমাদের নতুন বাড়ি হল। পয়সার প্রাচুর্য এল। অর্থ প্রতিপত্তি বাড়তে লাগল। এক সময় নিজেকে অন্য পুরুষদের কাছে বিলিয়ে দেওয়াও কমলো। কিন্তু এখনও এমন কিছু কিছু ক্লায়েন্ট আমাকে নিজে এটেন্ড করতেই হয় যারা আমাকে ওই দেহব্যবসা চালিয়ে যেতে নানাভাবে সাহায্য করছে। আর রয়েছে ওই ধনী কামুক লোকটা যে আমার প্রয়োজনের সময় আমায় পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। এদের সকলের কাছেই আমি কোন না কোন ভাবে কৃতজ্ঞ”।
একসাথে এতগুলো কথা বলার পর মহিমা থেমে একটু দম নিল। আর সীমন্তিনী মহিমার কথা শুনতে শুনতে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছিল যে মহিমা নিজের জীবনের এত গোপনীয় কথাগুলো কেমন নির্দ্বিধায় সীমন্তিনীর মত এক আইপিএস অফিসারকে বলে যাচ্ছে! সীমন্তিনী চাইলে এক্ষুনি মহিমাকে পুলিশের জালে জড়িয়ে ফেলতে পারে। অবশ্য মহিমা যে সবদিকে আটঘাট বেঁধেই এ ব্যবসা চালাচ্ছে সে’কথাও তো তার কাছে গোপন করেনি। সত্যি মহিলার গাটস আছে, মানতেই হবে। তাকে অত সহজেই কাবু করা যাবে না। আর সেটা করতে গেলে হয়তো নিজেদের ডিপার্টমেন্টের এবং অন্য আরও অনেক সরকারি বেসরকারি রথী মহারথীর সাথে মোকাবিলা করতে হবে। তবে আপাততঃ আগে রতীশ আর রচনাকে বিপদমুক্ত করাই তার উদ্দেশ্য।
এমন সময় মহিমা ওদিক থেকে আবার বলল, “মন্তি, তুমি লাইনে আছো তো? আমার কথা শুনতে পাচ্ছো তো বোন”?
সীমন্তিনী সাথে সাথে জবাব দিল, “হ্যাঁ হ্যাঁ বৌদি, আমি তোমার সব কথাই শুনছি। কিন্তু এ সবের সাথে আমার দাদাভাই আর বৌদির সংযোগটা কী? আর তাদের ওপর বিপদ আসছেই বা কোনদিক থেকে”?
মহিমা বলল, “হ্যাঁ বোন, এখন সে কথাই বলবো। কিন্তু আগের কথাগুলো না বললে তোমাকে পরে যে কথাগুলো আমি বলতে যাচ্ছি সেটা বুঝতে তোমার কষ্ট হত। এবার শোনো। যে কামুক লোকটি আমাকে পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা দিয়ে একসময় আমাকে সাহায্য করেছিল, গত সপ্তাহে সেই কোটিপতি লোকটি এক অদ্ভুত বায়না নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। ওঃ, এ প্রসঙ্গে আর একটা কথা তোমাকে না জানালেই নয়। আমার যোগা ইনস্টিটিউটে রতীশ ছাড়াও বরুন আর সুজয় নামে দু’জন ট্রেনার আছে। আর আমার অফিস অ্যাসিস্ট্যান্ট বীথিকাও সেখানে কাজ করে। এই বীথিকা আর বরুন সুজয়ও আমার এসকর্ট এজেন্সীর এসকর্ট হিসেবে কাজ করে। তবে ওদের প্রত্যেকেরই এসব করার পেছনে পারিবারিক কিছু কিছু কারণ আছে। কেউই শুধুমাত্র টাকা কামাবার জন্যে এ কাজে নামে নি। আর শুধু ওরাই নয়, আমার এজেন্সীতে যত মেয়ে মহিলা এসকর্ট আছে, তারা সকলেই অন্য কোন উপায়ে পরিবারের ভরণ পোষন করতে না পেরে প্রায় বাধ্য হয়ে এবং নিজেদের ইচ্ছেয় আমার এসকর্ট সার্ভিসে যোগ দিয়েছে। আমি কাউকে জোর করে বা কোনভাবে ঠকিয়ে আমার ব্যবসায় নামাইনি আজ পর্যন্ত। তবে তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো বোন। রতীশকে আমি এ কাজে ব্যবহার করবার কথা স্বপ্নেও ভাবি নি। আর ভগবান না করুন তেমন দুর্দিন কখনও যেন ওর ওপর নেমে না আসে। জীবনে অনেক পুরুষ মানুষের সাথে আমি শরীর নিয়ে ভালবাসার খেলা খেলেছি। কিন্তু সে’সব ছিল নেহাতই সেক্স। তার মধ্যে ভাব ভালবাসার কোনও ব্যাপার ছিল না। যেটা ছিল তা ছিল শুধু পয়সা কামানোর লোভ। ভালবেসেছিলাম শুধু একজনকেই। আমার স্বামী অরিন্দমকে। মা-বাবার অমত সত্ত্বেও তাকেই আমি বিয়ে করে তার সাথে চলে এসেছিলাম এই কলকাতায়। ছাব্বিশ বছর ধরে আমাদের দাম্পত্য জীবনে বেশ সুখেই আছি। বিয়ের পরের ঊণিশটা বছর স্বামী ছাড়া আমার জীবনে অন্য কোন পুরুষ ছিল না। কিন্তু খুব ছোট বয়স থেকেই আমি পকেটমানি উপার্জন করবার জন্যে দিল্লীতে অনেক ছেলে ছোকড়া আর সব রকম বয়সের পুরুষের সাথে সেক্স করতাম, আমাদের বিয়ের আগ পর্যন্ত। মেয়ের হায়ার এডুকেশনের জন্য যখন অতগুলো টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল তখন আবার আমি ছোটবেলার শেখা ওই সহজ রাস্তাতেই পা বাড়িয়েছিলাম। অবশ্য বছর দুয়েক আগে থেকেই আমি সে’সব কমিয়ে দিয়েছি। এখন শুধু আমি তাদের কাছেই নিজের শরীরটাকে তুলে দিই যারা এই এসকর্ট ব্যবসাটা চালিয়ে নিতে আমাকে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। তাদেরকে খুশী না রাখলে এই এসকর্ট ব্যবসা আর চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না। এমন একটা বাজে মেয়ের মুখে তুমি কথাটা শুনে অবাকই হবে। তোমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে জানি। তবু না বলে পারছিনা ভাই। রতীশকে প্রথম দিন দেখেই ওর শান্ত সুন্দর চেহারা আর সুমিষ্ট কথার মোহে পড়ে আমি ওকে আমার দেবর আর ছোটভাইয়ের মত ভালোবেসে ফেলেছি। আর রচনার কথা তো আগেই বলেছি। ওকে দেখবার দিন থেকেই আমি একটা মূহুর্তের জন্যেও ওকে ভুলে থাকতে পাচ্ছি না। রতীশকে কোনও ভাবেই আমি বিপথে যেতে দেব না” বলে এক মূহুর্ত থেমে আবার বলল, “আচ্ছা, সে যাই হোক, আমার সেই কোটিপতি ক্লায়েন্ট সেদিন এসে আমাকে বলল যে তার ভোগের জন্যে এমন একটা মেয়েকে জোগার করে দিতে হবে, যার স্বামী আমার ইনস্টিটিউটেই কাজ করে। আমি পরিষ্কার করে বলার অনুরোধ করতে সে তার পকেট থেকে আমাকে একটা ছবি বের করে দেখায়। তুমি শুনে চমকে যাবে মন্তি, ছবিটা রচনার”।
এ’কথা শুনেই সীমন্তিনী প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কী বলছ বৌদি? রচুর ফটো? ওই লোকটা রচুর ফটো কোত্থেকে পেল”?
মহিমা বলল, “আমার সেই ক্লায়েন্ট তো জানতো না যে আমি রচনাকে চিনি বা ইতিমধ্যেই রচনার সাথে একটা সুন্দর সম্পর্ক পাতিয়ে ফেলেছি। তাই সে ছবিটা দেখার সাথে সাথে আমিও ঠিক তোমার মতই চমকে উঠলেও তাকে বুঝতে দিই নি। কায়দা করে তার কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব জানবার চেষ্টা করলাম। শুনলাম যে এর আগে আরেকজন দালাল টাকার বিনিময়ে রচনাকে তার হাতে তুলে দেবার চুক্তি করেছিল। কিন্তু সে দালালটা নাকি কিছুদিন আগে অন্য কোনও একটা কেসে ফেঁসে গিয়ে এখন জেলে আছে। তাই আমার সেই কোটিপতি ক্লায়েন্টের সে ইচ্ছে পূরণ হয়নি। কিন্তু সে জানতো যে ছবির ওই মহিলার মানে রচনার স্বামী রতীশ আমার ইনস্টিটিউটেই কাজ করে। আর সে নিশ্চয়ই ভেবেছে যে আমার ইনস্টিটিউটের অন্য ট্রেনারদের মত আমি রতীশকেও এসকর্ট ব্যবসায় নামিয়েছি। তাই তার ধারণা যে আমি খুব সহজেই রচনাকে তার হাতে তুলে দিতে পারবো। আর সে জন্যেই সে আমার কাছে এসেছিল। রাগে ক্ষোভে আমার বুকের ভেতরটা জ্বলতে থাকলেও মুখে হাসি এনে আমি প্রথমে তাকে বলেছিলাম যে আমি এসকর্টের ব্যবসা করি ঠিকই। কিন্তু কারুর ইচ্ছের বিরূদ্ধে আমি কাউকে এ ব্যবসায় টেনে আনি না। তাই তার কথা মেনে তার কাজ করে দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু সে আমাকে আশাতীত পয়সা দেবার লোভ দেখাতে আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি তার প্রস্তাবটা মেনে না নিই তবে সে অর্থের লোভ দেখিয়েই কাউকে না কাউকে এ কাজ করবার জন্যে ঠিক নিয়োগ করতে পারবে। আর এ শহরে এমন লোকেরও অভাব নেই মোটেও। তখন আমি তাকে বললাম যে ঠিক আছে, একটা সময় সে যখন আমার এতোটা উপকার করেছে, আর এখনও তার সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে, তাহলে তার জন্যে সে কাজটা আমি হাতে নিতে রাজি আছি। কিন্তু যে মেয়েটাকে আমি চিনি না জানিনা, তার সাথে পরিচিত হয়ে তাকে আমার কথার জালে জড়িয়ে ফন্দি ফিকির করে বিমলের হাতে তুলে দিতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। তখন সে লোকটা আমাকে ছ’মাস সময় দিল। এভাবে রচনার ক্ষতি করবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রচনাকে ছ’টা মাস বিপদ থেকে আগলে রাখতে আমি তার কথা মেনে নিয়েছি। কিন্তু সেদিন থেকেই ভাবছি, কি করে রতীশ আর রচনাকে এ বিপদ থেকে আমি পুরোপুরি ভাবে মুক্ত করতে পারি। গত সাতটা দিন ধরে ভাবতে ভাবতে আমি পাগল হয়ে গেছি বোন। কিছুতেই কোনও রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না আমি” বলতে বলতে মহিমা কেঁদে ফেলল।
সীমন্তিনীর মনের মধ্যেও তখন বিশাল ঝড় বইতে শুরু করেছে। তবু সে নিজেকে সংযত রাখতে রাখতে বলল, “বৌদি, এভাবে ভেঙে পড়ো না প্লীজ। আমাকে তোমার আর যা কিছু জানাবার আছে তা সবটা খুলে বলো। তুমি যে আমার দাদাভাই আর রচনাকে এভাবে ভালবেসে ফেলেছো সেজন্যে তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আজ তুমি আমাকে কথাগুলো বলে খুব ভাল করেছ। এখন আমরা দু’জনে মিলে একসাথে চেষ্টা করতে পারব ওদের বিপদ থেকে মুক্ত করতে। তুমি প্লীজ শান্ত হও। আর তোমার বলার আর কিছু বাকি থাকলে সেসব খুলে বলো আমায়”।
মহিমা এবার খানিকটা ক্লান্ত স্বরে বলল, “আর কী বলবো ভাই তোমাকে। আমার অর্থ প্রতিপত্তি যতটুকু আছে তার সাহায্যে রতীশ আর রচনার ওপর নেমে আসা যে কোন সংকটের মোকাবিলা আমি করতে পারতাম। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার বিরূদ্ধে গিয়ে আমি কিচ্ছুটি করতে পারবো না মন্তি। সে ক্ষমতা আমার নেই। কারন অর্থে প্রতিপত্তিতে আর বাহুবলে বিমল আমার চেয়ে অনেক অনেক ওপরে। ওর পেছনে লোক লাগিয়ে আমি একটা দিনও টিকতে পারবো না। ও যদি ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারে যে আমি রচনাকে বাঁচাবার জন্য ওর পেছনে লোক লাগিয়েছি, তাহলে সেদিনই সে আমাকে মেরে ফেলবে। আর রচনাকেও যে কাউকে দিয়ে কিডন্যাপ করে তুলে নেবে। আর শুধু তাই নয়। বিমল আমার এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারেও অনেক খবরই জানে। আমার সোর্স যতই থাকুক না কেন বিমল আমাকে ঠিক বিপদে ফেলতে পারবে। আমার হাতের লোককে দিয়েই ও আমাকে শেষ করে দিতে পারবে। তাই তো আমি এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে রতীশ আর রচনার হিতৈষী। যে নিঃস্বার্থ ভাবে ওদের ভালোবাসে। কিন্তু ওদের সাথে কথা বলেই বুঝলাম, কলকাতায় ওদের এমন হিতৈষী আর কেউ নেই। পেলাম শুধু তোমার খোঁজ। তাই তো তোমার সাথে দেখা করবার জন্য বা কথা বলবার জন্য ছটফট করছিলাম আজ বিকেল থেকেই”।
সীমন্তিনী এবার জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বৌদি, তুমি বিমল বিমল বলছিলে। এটা কোন বিমল গো? এক বিমল আগরওয়ালা তো দাদাভাইকে তোমার কাছে নিয়ে গিয়েছিলো সেই বিমল আগরওয়ালাই নাকি”?
মহিমা জবাব দিল, “হ্যাঁ ভাই, সেই বিমল আগরওয়ালাই। পেশাগত ভাবে সে একজন নামকরা বিল্ডার এবং প্রোমোটার। কোটি কোটি টাকার মালিক। কিন্তু অসম্ভব রকমের কামুক লোকটা। নিজের কাম চরিতার্থ করতে এমন কোনও কাজ নেই যা সে করতে পারে না। এবার বুঝতে পারছ তো রচনার ওপর কত বড় একটা বিপদের খাঁড়া ঝুলছে। এখন তুমিই একমাত্র যদি কোনও উপায় খুঁজে বের করতে পারো”।
সীমন্তিনী বলল, “বৌদি তোমার মুখে এতসব শুনে তো আমার মাথা ভনভন করছে গো। আমার হাত পা কাঁপতে শুরু করেছে। মাথা গরম হয়ে গেছে আমার। আমাকে ঠাণ্ডা মাথায় ভাল করে ভেবে দেখতে হবে বৌদি। তারপর তোমাকে জানাবো। আচ্ছা তুমি আমার আর কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দেবে বৌদি”?
মহিমা ফোঁপাতে ফোঁপাতেই বলল, “জানা থাকলে নিশ্চয়ই উত্তর দেবো ভাই। বলো কী জানতে চাও”?
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করলো, “তুমি কি দাদাভাই বা রচনাকে এসব ঘটণার কোনও হিন্টস দিয়েছো”?
মহিমা সাথে সাথে জবাব দিল, “না না মন্তি। আমি সে চেষ্টাই করিনি। কারন সেটা করলে ওই সহজ সরল ছেলেমেয়েদুটো যে ভীষণ ঘাবড়ে যাবে। ওরা ভয় পেয়ে নাজানি কি বোকামি করে ফেলবে। তাতে হয়তো হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তাই না”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বৌদি, ঠিক বলেছ তুমি। ভালই করেছো যে ওদের কিছু জানতে দাও নি। আচ্ছা বৌদি আরেকটা কথা বল তো? বিমল আগরওয়ালা রচনার ছবিটা কোত্থেকে পেয়েছে সেটা কি আন্দাজ করতে পেরেছো”?
মহিমা বলল, “সেটা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবিনি ভাই। তবে জানোই তো, আজকাল মোবাইলের যুগ। সকলের হাতে হাতেই মোবাইল। মোবাইলে ক্যামেরাও থাকে। রাস্তা ঘাটে যে কেউ ইচ্ছে করলেই যে কারুর ছবি তুলে নিতে পারে। আর বিমলের হাতের ওই ছবিটা দেখেও আমার মনে হয়েছিলো ওটা কোনও মোবাইলে তোলা ছবিই। তবে যতদুর মনে হয় আগে যে লোকটার সাথে বিমল রচনার ব্যাপারে চুক্তি করেছিল, সেই লোকটাই হয়তো কোথাও কোনভাবে ও ছবিটা তুলেছে। কারন বিমল নিজেই বলেছে যে ও এখনও রচনাকে চাক্ষুষ দেখে নি”।
সীমন্তিনীও মনে মনে তেমনই কিছু একটা ভেবে আবার জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা বৌদি, ছবিটা কি এখন ওই বিমল আগরওয়ালার কাছেই আছে”?
মহিমা বলল, “না মন্তি, ছবিটা এখন আমার কাছে আছে। বিমলের কাছ থেকে আমি সেদিনই ওটা চেয়ে নিয়েছিলাম। বুঝিয়েছিলাম যে সঠিক ভাবে মেয়েটাকে চিনতে ছবিটা আমার কাছে রাখা দরকার”।
সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে বৌদি। আজ তো কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে গেল। আজ আর বেশী রাত না করে আমরা বরং এখানেই আজকের কথা শেষ করি। তবে শোনো, অন্য কারুর সাথে এ ব্যাপারে আর কোনও কথা বোল না। আর আমি তোমাকে এখনই আমার পার্সোনাল মোবাইল নাম্বারটা এসএমএস করে দিচ্ছি। তুমি রচুর ওই ফটোটার একটা ছবি তুলে আমার মোবাইলে পাঠিয়ে দিও। আজ না পারলেও, কাল সকালে অবশ্যই পাঠাবে। তবে আমার মনে হয়, বিমল আগরওয়ালা যখন তোমার ওপর ভরসা করে কাজটা তোমার হাতে দিয়ে গেছে, তাহলে এই ছ’মাসের সময়সীমার ভেতরে সে আর অন্য কোনভাবে রচনার ওপর হামলা করবার চেষ্টা করবে না। তোমার কি মনে হয়”?
মহিমা বলল, “হ্যাঁ বোন, আমারও তাই মনে হয়। আর এ’কথা ভেবেই আমি মৌখিক ভাবে তার চাহিদা পূরণ করতে রাজী হয়েছি। তবে আমার ওপর বিমলের যদি কোন সন্দেহ না হয় তাহলে এ সময়সীমা পেরিয়ে যাবার পরেও আমি ওর কাছে হয়তো আরও খানিকটা সময় চেয়ে নিতে পারবো। ততদিনে তুমি প্লীজ কিছু একটা করো বোন”।
সীমন্তিনী বলল, “বেশ বৌদি, তুমি বিমলের সাথে সদ্ভাব রেখে চলো। ও যেন কোনভাবেই তোমার ওপর কোন সন্দেহ করতে না পারে। কিন্তু বৌদি, রচনাকে বাঁচাবার আর কোনও উপায় বা সম্ভাবনার কথা কি তোমার মাথায় এসেছে”?
মহিমা প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “নারে বোন। আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না। রতীশ আর রচনাকে কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে বললেও ওরা যে পুরোপুরি বিপদমুক্ত হয়ে যাবে, সেটা ভাবা ভুল হবে। আর আমি নিজেও ওদেরকে আমার থেকে দুরে চলে যেতে দিতে চাই না। বরানগরের ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও চলে গেলেও ওদের বিপদ কাটবে না। আমার নিজের বাড়িতে এনে তুললে ওদের সাথে সাথে আমিও বিপদে পড়বো” বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “বিমলকে মেরে ফেলতে পারলেই একমাত্র ওদের পুরোপুরি ভাবে বিপদমুক্ত করা যাবে। কিন্তু সেটা তো আর আমার তোমার পক্ষে সম্ভব নয় ভাই। আমি যতই অনৈতিক ব্যবসায় লিপ্ত থাকি না কেন, কাউকে মেরে ফেলবার মত মানসিকতা বা সাহস কোনটাই আমার নেই ভাই। এখন আমি শুধু তোমার ওপরেই ভরসা করছি। হাতে কিছুটা সময় তো আছে। তুমি ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করতে পারলেই আমি খুশী। তাতে যদি আমার তরফ থেকে কোনও সাহায্যের দরকার পড়ে, সেটাও আমি সকলের কাছে গোপন রাখবার চেষ্টা করে ঠিকই করবো। আর সেটা যদি তুমি কোনভাবে করতে পারো ভাই, তাহলে আমি তোমার গোলাম হয়ে থাকবো চিরদিন” বলতে বলতে আবার কাঁদতে শুরু করলো।
সীমন্তিনী আবার তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কেঁদো না বৌদি। তুমি আমাকে ব্যাপারটা জানিয়ে খুব ভালো করেছ। আমি দেখি কি করতে পারি। কিছু একটা উপায় তো বের করতেই হবে। তবে তোমাকে আমি এখনই আমার প্রাইভেট নাম্বারটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। এ নাম্বারটা প্লীজ অন্য কাউকে জানাবে না। আর যদি আমাকে আর কোন কথা জানাতে চাও, তাহলে রাত এগারোটার পরেই শুধু ফোন করবে। অন্য সময় করো না। আমরা পরে এ ব্যাপারে আবার কথা বলবো। আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। এবার একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো কেমন? রাখছি তাহলে”?
মহিমা কান্না মাখা গলায় বলল, “ঠিক আছে বোন। তোমার নাম্বার আমি অন্য কাউকে দেবো না। কিন্তু ঘুম যে আমার সাতদিন আগে থেকেই পালিয়ে গেছে। এই সাতটা রাত আমি শুধু ভেবে ভেবেই কাটিয়েছি। তবে আজ তোমার সাথে কথা বলতে পেরে মনটা কিছুটা হলেও শান্ত হলো। দেখি আজ ঘুমোতে পারি কি না। তুমিও ভালো থেকো ভাই। আর আমার সাথে যোগাযোগটা রাখবে কিন্তু প্লীজ”।
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বৌদি, তোমার সাথে আমার যোগাযোগ অবশ্যই থাকবে। তুমি আমার দাদাবৌদির জন্য এতো ভাবছো। আমি কি তোমাকে ভুলে যেতে পারি। তবে আজ আর কথা নয় প্লীজ বৌদি। গুড নাইট”।
ফোন সরিয়ে রেখে সীমন্তিনী জলের বোতল তুলে নিয়ে ঢকঢক করে বেশ কিছুটা জল খেয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। মহিমার বলা কথাগুলো আবার মনে মনে আওড়াতে লাগল। রচনার বিপদের কথা শুনে তার মনটা সত্যি খুব বিচলিত হয়ে উঠেছে। মাথার ভেতরটা দপদপ করছে এখনও। এ অবস্থায় ঘুম কিছুতেই আসবে না তার। রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে তখন। সীমন্তিনী ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে মোবাইলে সকাল সাড়ে ছটার এলার্ম সেট করে, ঘরের লাইট নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল।
তখনও ঠিক ঘুম আসে নি। আচ্ছন্নপ্রায় অবস্থায় তার মনে হল মোবাইলে একটা শব্দ হল যেন। আর মনে হল কেউ যেন তার ঘরের দরজায় আস্তে আস্তে টোকা দিচ্ছে। “দিদিভাই, দিদি” বলে চাপা গলায় কেউ যেন ডাকছে তাকে। সীমন্তিনী আন্দাজ করল, নিশ্চয়ই অর্চনা আর নবনীতাই হবে। ওরা হয়তো কোন কারনে ওদের ঘর থেকে বেরিয়েছিল। আর সীমন্তিনীর ঘরে আলো জ্বলতে দেখেই হয়ত তারা জানতে চাইছিল এত রাতেও সীমন্তিনী জেগে আছে কেন। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রভাবেই সে আর চোখ খুলে তাকাতে পারছিল না তখন। কয়েকমূহুর্ত বাদেই সে ঘুমিয়ে পড়ল।
****************
______________________________