Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 141)

কিছুক্ষণ থেকে সীমন্তিনী আবার বলল, “আর অর্চু, পরিতোষকে তো তুমি চেনো না। তবে নীতা ওকে খুব ভালমত চেনে। রচুও চিনেছে ক’দিন আগে। আর পরিতোষ দাদাভাই আর রচুর সব ব্যাপারেই আমার সাথে সব সময় পরামর্শ করে। কথাগুলো তুমি জানতে না। তোমার মনের দুশ্চিন্তা কম করতেই আমি নীতাকে ঈশারা করেছিলুম, তোমাকে পরিতোষের কথা বলতে। নইলে তোমার মনের ওপর আবার একটা নতুন চাপ পড়ত। যেটা আমি একেবারেই চাই নে। মাসিকে আমি কথা দিয়ে এসেছি যে তোমাকে এখানে এনে আমি পুরোপুরি সুস্থ করে তুলবো। তাই মহিমার ব্যাপারটাও আমি তোমাকে সাথে নিয়েই আলোচনা করলুম। নইলে তোমাকে লুকিয়ে নীতার সাথে কথা বলতে হত আমায়। তখন আমাদের দু’জনকে গোপনে কথা বলতে দেখে তোমার মনে হয়ত সন্দেহের সৃষ্টি হত। তোমার মনের ওপর একটা আলাদা চাপ পড়বার ফলে মানসিক ভাবে তোমার আরও ক্ষতি হত। তাই তোমাকে সাথে নিয়েই আলোচনাগুলো আমরা করেছি। তবে ব্যাপারটা যে এতটা সিরিয়াস সেটা তো ভাবতে পারিনি আমি আগে। আর ও’সব কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর সেটা শুধু তুমি একা তো নও, আমার আর নীতারও প্রাথমিক ভাবে একই রকম দুশ্চিন্তা হয়েছিল। কিন্তু আমরা দু’জন তো জানি যে পরিতোষ সেখানে দাদাভাইয়ের ওপর সব সময় নজর রাখছে। তাই দুশ্চিন্তা হলেও আমরা ঘাবড়ে যাই নি। তুমি সেটা জানতে না। তাই নীতাকে ঈশারায় তোমাকে পরিতোষের ব্যাপারে জানাতে বলে ও’ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে আমি ব্যাপারটা নিয়ে ভালমত একটু ভাবলুম। আর সবকিছু ভাল করে ভেবে আমার যা মনে হচ্ছে সে কথাও তোমাকে খুলে বললুম। তোমরা এখন বুঝতে পারছো তো দাদাভাই আর রচুর ব্যাপারে আমি একদম নিশ্চিন্ত কি করে আছি? আর এ ব্যাপারে আমরা যখন যা জানতে পারব, তার কোনকিছুই তোমার কাছে গোপন করব না। তাই মনের ওপর একদম চাপ নেবে না কেমন। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি ওদের কারুর কোন বিপদ হতে আমি দেব না”।

অর্চনা সীমন্তিনীর কোলে মুখ গুঁজে বলল, “তোমার কথা অক্ষরে অক্ষরে মানবার চেষ্টা করব দিদিভাই। বাবা বলেন তুমি মা অন্নপূর্ণা, মা বলেন তুমি মা দুর্গা। আর আমার কাছে তুমি যে আমার ভগবান গো”।

সীমন্তিনী অর্চুর মাথায় স্নেহের হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “আমি তো তোমাদের সবাইকে আগেও বহুবার বলেছি এখনও বলছি আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে। খুব স্বার্থপর। আমি শুধু আমার দাদাভাই, রচু আর তাদের আশেপাশের লোকগুলোকে ভাল রাখতে চাই গো। আচ্ছা সে’সব কথা ছেড়ে এখন আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা শোনো তোমরা দু’জনেই। আমি আরেকটা কি অনুরোধ তোমাদের দু’জনের কাছে করতে চাইছি সেটা ভাল করে শুনে বুঝে নাও। পরিতোষ যে দাদাভাইয়ের ওপর নজর রেখে যাচ্ছে, নীতা সেটা আগে থেকেই জানে। আজ তুমি জানলে। তবে, এ’কথা কিন্তু দাদাভাই বা রচু কেউ জানে না। আর রাজগঞ্জ ও কালচিনির বাড়ির কেউও তা জানে না। আর তাদের কাছে গোপন রেখেছি শুধু এই জন্যেই যে ওরা ব্যাপারটা জানতে পারলে সকলেই কিছুটা হলেও ঘাবড়ে যাবে। ওরা আর সহজ স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। সকলেই ভাববে যে নিশ্চয়ই দাদাভাই বা রচু কোন বিপদের মধ্যে আছে। নইলে আমি তাদের ওপর নজর রাখছি কেন। আজ তুমি ব্যাপারটা জানলে বলে দাদাভাই আর রচুর ব্যাপারে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছো। কিন্তু বাড়ির লোকেরা বা রচু ওরা এ’কথা জানতে পারলে স্বস্তির বদলে তাদের শুধু দুশ্চিন্তাই হবে। তাই আগের অনুরোধটার সাথে আরেকটা অনুরোধ তোমাদের দু’জনকে করছি। এ সমস্ত কথাই যেন শুধু আমরা তিনজন আর পরিতোষের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। রচু, দাদাভাই, আমাদের দু’বাড়ির কেউ আর অন্য কেউই যেন এ’সব কথা জানতে না পারে, এ ব্যাপারেও সব সময় সতর্ক থাকবে তোমরা। কারন আমরা তিনজন নিশ্চিন্ত থাকলেও ব্যাপারটা যদি ফাঁস হয়ে যায় তাহলে পরিতোষের কিন্তু একটা বড়সড় বিপদ হতে পারে। আমি সেটা হতে দিতে পারি না। দাদাভাইয়ের যে দু’লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়েছিল ওই রবিশঙ্কর নামের লোকটা, সে টাকা যে আমরা ফিরে পেয়েছি তাতে কলকাতা পুলিশ বা আমার নিজের কোন অবদান নেই। গোটা কাজটাই পরিতোষ নিজের বুদ্ধিতে করেছে। আমি শুধু তাকে রবিশঙ্করের নাম ঠিকানাটুকুই দিয়েছিলুম। একবার গড়িয়াহাট থেকে রচু আমার জন্যে একটা শাড়ি কিনে ফুটপাথে হেঁটে যাবার সময় এক ছিনতাইবাজ সে শাড়িটাকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে তখন ওদের ওপর নজর রাখছিল পরিতোষ স্বয়ং। সে ওই ছিনতাইবাজকে ধরে তার কাছ থেকে শাড়িটা উদ্ধার করে দশ মিনিটের ভেতর দাদাভাই আর রচুর হাতে তুলে দিয়েছিল। সে ব্যাপারটা অবশ্য যেদিন নীতার সাথে আমাদের পরিচয় হল সেদিন রচু জানতে পেরেছে। তবে পরিতোষ যে সর্বক্ষণ দাদাভাইয়ায়ের ওপর নজর রাখছে, এ’কথাটা রচুর কাছে আমরা তখনও খোলসা করিনি। শাড়ি ছিনতাইয়ের দিন ঘটণাটা নেহাতই কাকতালীয় ভাবে ঘটে গেছে বলেই বোঝানো হয়েছে। কিন্তু আবারও বলছি, এসব ঘটণা যদি অন্য কেউ জেনে ফেলে তাহলে পরিতোষের খুব বিপদ হতে পারে। পরিতোষের মত বন্ধু এ পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। আমার জন্য ও কোনভাবে বিপদে পড়লে আমি নিজে কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। তাই তোমাদের দু’জনের কাছে আমি অনুরোধ করছি, এসব কথা কখনো কারুর সাথে শেয়ার করবে না। কারুর কাছে না। এমনকি লক্ষ্মীদির কাছেও না। লক্ষ্মীদি আমাদের কাছের, আমাদের আপন লোক হলেও, নিজের অজান্তেই বাইরে কোথাও মুখ ফসকে এসব কথা কাউকে বলে ফেলতে পারে। তাই তোমরা দু’জনেই আমাকে কথা দাও, এসব কথা যেন শুধু আমাদের তিনজনের বাইরে আর কারো কানে না যায়। আর রচু আর দাদাভাইও যেন এ’সব কথা জানতে না পারে”।
 

নবনীতা আর অর্চনা দু’জনেই সীমন্তিনীর হাতে হাত রেখে কথা দিল যে তারা সীমন্তিনীর কথা মেনে চলবে। এবার অর্চনা বেশ সহজ চটুল ভাবেই সীমন্তিনীর একটা হাত তার বুকের সাথে চেপে ধরে বলল, “আমার ওপরেও যে নজর রেখেছিলে সে’কথা মা বাবা ভাইয়ের কাছেও একই কারনে তুমি গোপন করে গিয়েছিলে, তাই না দিদিভাই”?
 

সীমন্তিনী হেসে ফেলে বলল, “হ্যাঁ অর্চু। ঠিক একই কারনে। মাসি, মেসো, ভাই, দাদাভাই, রচু এদের সকলের কাছেই আমি গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছিলুম। তারা একজন যদি আমার নজর রাখবার ব্যাপারটা জানতে পারত তাহলে অন্য সবাইও জেনে ফেলত। তাতে একদিকে যেমন কাজটা করতে আমার অসুবিধে হত, তেমনি অন্যদিকে সবাইকে এটা ওটা বলে বোঝাতে আমাকে মিথ্যে কথা বলতে হত। প্রয়োজনের খাতিরে কোন কথা লুকিয়ে যাওয়া এক কথা, আর মিথ্যে বলা আরেক কথা। এদের কাউকে কি আমি মিথ্যে কথা বলতে পারি, বলো? তাই নিরুপায় হয়ে কথাটা গোপন রাখতে হয়েছিল আমার”।

নবনীতা ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “তোমার ব্যাপারে দিদি এমন কি করেছিল অর্চু যা সবার কাছে গোপন রেখেছিল”?

অর্চনা নবনীতার দিকে চেয়ে বলল, “বলব নীতাদি। বলব তোমাকে। আজ তুমি তোমার জীবনের সবকথা আমায় খুলে বলে তোমার বুক যেমন হাল্কা করেছ, আমিও আমার সব কথা তোমায় খুলে বলবো। কিন্তু সাতটা বছরের গল্প অল্প কথায় তো সাড়া যাবে না। তাই আজ না হয় থাক। এখনই তো লক্ষ্মীদি খেতে ডাকবেন। সে’সব কথা তোমাকে কাল খুলে বলব, কেমন”?

সীমন্তিনী বলল, “বুকের ভেতরে চেপে রাখা কথাগুলো কাছের কোন মানুষকে খুলে বললে মন হাল্কা হয় বটে। কিন্তু নীতা, অর্চুর সব কথা শোনবার পর ওকে স্বাভাবিক রাখাটা কিন্তু তোমার দায়িত্ব হবে। ও যদি ঘটণাগুলো বলতে বলতে ইমোশনাল হয়ে পড়ে, কেঁদে ফেলে, তাহলে কিন্তু তোমাকে সামলাতে হবে”।

আর ঠিক তখনই লক্ষ্মী সবাইকে খেতে ডাকল।


****************

রাতের খাওয়া দাওয়া চুকে যাবার পর নবনীতা আর অর্চনা সীমন্তিনীকে গুডনাইট জানিয়ে তাদের ঘরে চলে যাবার পর সীমন্তিনী নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে ল্যান্ডলাইন ফোনটা হাতে নিয়ে বিছানায় বসে দেয়াল ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখল, রাত প্রায় এগারটা। এত রাতে অপরিচিত কাউকে ফোন করা মোটেই শোভনীয় নয়। কিন্তু মহিমার সাথে তার প্রথম কথা বলার ব্যাপারটা নবনীতা আর অর্চনার অজ্ঞাতেই করতে চেয়েছিল। যদিও এত রাতে মহিমা হয়তো জেগে না-ও থাকতে পারে। তবু একবার ট্রাই করে দেখবার কথা ভেবেই মোবাইলে রচনার পাঠানো এসএমএস-টা দেখে মহিমার ল্যান্ডলাইনের নাম্বার ডায়াল করল।

কয়েকবার রিং হতেই ও’পাশ থেকে সুন্দর মনমাতানো অদ্ভুত মিষ্টি কন্ঠের “হ্যালো” শুনেই সীমন্তিনী বলল, “হ্যালো, এক্সকিউজ মি, আমি কি মিসেস মহিমা মালহোত্রা সেনের সাথে কথা বলছি”?

মহিমা জবাব দিল, “হ্যাঁ আমি মহিমাই বলছি। আপনার পরিচয়”?

সীমন্তিনী বলল, “ম্যাডাম, আমি মন্তি। মন্তি ভট্টাচার্যি। নর্থ বেঙ্গল থেকে ......”

সীমন্তিনীর বলা শেষ না হতেই মহিমা ওপ্রান্তে এবার প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “সত্যি বলছ? তুমি, সরি, মানে আপনিই কি রতীশের সেই বোন মন্তি যে ওকে সব চেয়ে বেশী ভালবাসে”? বলেই গলার স্বর খানিকটা চাপা করে বলল, “আপনি এক সেকেন্ড লাইনে থাকুন প্লীজ। আমি পাশের ঘরে গিয়ে আপনার সাথে কথা বলছি। প্লীজ, কিছু মনে করবেন না”।

সীমন্তিনী মহিমার চিৎকার করে ওঠায় একটু অবাক হলেও মিষ্টি করে বলল, “না না, ঠিক আছে ম্যাডাম। আসলে আমিই বড্ড অসময়ে ফোনটা করে বসেছি। আমি না হয় কাল সন্ধ্যে সাতটার পর আপনার সাথে কথা ..........”।
 

এবারেও সীমন্তিনীকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে মহিমা হা হা করে উঠে বলল, “না না মন্তিজী, আপনি প্লীজ ফোনটা কাটবেন না। আসলে আমার স্বামী আজ একটু টায়ার্ড বলে ও একটু তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়েছে। তাই বেডরুমে বসে কথা বললে ওনার তো ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সেজন্যেই আমি পাশের ঘরে এলাম। এবার আর কোন অসুবিধে নেই। আচ্ছা আপনি সত্যিই রতীশের বোন মন্তি ভট্টাচারিয়াই তো”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ ম্যাডাম, আমি রতীশের বোন মন্তিই। রচু, মানে রচনা, আমার বৌদি আমাকে আপনার নাম্বার দিয়ে বলেছিল সন্ধ্যে সাতটার পর আপনাকে ফোন করতে। কিন্তু বিশেষ একটা কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। তারপর নটার দিকে রচু আবার আমাকে ফোন করে মনে করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু হাতের কাজটা শেষ না করে আর ফোনটা করে উঠতে পারিনি। কিন্তু বৌদি বলছিল, আপনি নাকি আমার সাথে কথা বলতে খুব ব্যগ্র হয়ে আছেন। তাই ঘুমোবার আগে ফোন করবার কথাটা মনে হতেই এতো রাত হয়ে যাওয়া সত্বেও ফোনটা করলাম। তবে আবারও বলছি ম্যাডাম। এমন অসময়ে ফোন করবার জন্য আমি দুঃখিত”।

মহিমা এবারেও বেশ ব্যগ্র ভাবে বলল, “না না মন্তিজী, আপনি একদম মন খারাপ করবেন না। আমি বিরক্ত তো একেবারেই হইনি। বরং এত রাতেও যে মনে করে ফোনটা করেছেন সেজন্য আমি খুব খুব খুশী হয়েছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ফোন করবার জন্য”।

সীমন্তিনী একটু কিন্তু কিন্তু করে বলল, “কিন্তু এতরাতে কাউকে ফোন করাটা তো একেবারেই ভদ্রোচিত ব্যাপার নয়। তাই একটু দ্বিধাবোধ হচ্ছে। আর দাদাভাইয়ের মানে রতীশের কথা বলছি আর কি। তার মুখে শুনেছি আপনি খুব ব্যস্ত মানুষ। তাই সারাদিন হয়ত কত খাটা খাটুনি করেছেন। আবার বিকেলের দিকে বরানগরেও গিয়েছিলেন। তাই আপনিও হয়ত টায়ার্ড। তাই ভাবছিলাম ....”

মহিমা এবার অনেকটা শান্ত স্বরে বলল, “শুনুন মন্তিজী। আপনি তো বুঝতেই পেরেছেন যে আপনার সাথে কথা বলতে আমি কতটা আগ্রহী ছিলাম। তাই আমার তরফ থেকে আপনার সাথে এত রাতেও অনেক সময় ধরে কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। আমি কতটা ব্যস্ত কতটা টায়ার্ড এসব ফ্যাক্টর এখন কোন কাজ করবে না। কিন্তু আমি তো শুনেছি যে আপনিও খুব ব্যস্তসমস্ত মানুষ। আপনারও কি অনেক সময় ধরে কথা বলবার ধৈর্য আছে এখন”?

সীমন্তিনী মহিমার ব্যাকুলতা দেখে মনে মনে আবার অবাক হল। মুখে বলল, “ম্যাডাম, আপনার সাথে তো আজই আমার প্রথম আলাপ হচ্ছে। তাই আপনি যে আমার দাদাভাইকে নিয়েই কিছু বলবেন, সেটা তো আন্দাজ করতেই পারছি। আর দাদাভাইয়ের ব্যাপারে সারারাত ধরে কথা বললেও আমার কোন ক্লান্তি আসবে না। আপনি বলুন, কি বলবেন। দাদাভাই কি গর্হিত কোন কাজ করে ফেলেছে আপনার ওখানে”?

মহিমা এবার বলল, “না না মন্তিজী, সেসব কিছু নয়। আসলে .....” এটুকু বলে থেমে যেতেই সীমন্তিনী কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করবার পর বলল, “হ্যাঁ ম্যাডাম, বলুন। আর শুনুন, আমি তো শুনেছি যে আপনি আমার দাদাভাইকে নিজের ভাইয়ের মত স্নেহ করেন। আমার বৌদিকেও আপনি আপনার ছোটবোন বলে ভাবেন। তাই আমাকে মন্তিজীও বলবেন না বা আপনি আজ্ঞে করেও কথা বলবেন না। আপনি আমাকে শুধু আমার নাম ধরে তুমি করে বলুন। আমি তাতেই খুশী হব”।

মহিমা এবার আরও শান্ত গলায় বলল, “সত্যি তোমাদের বাবা মায়েরা তোমাদের সকলকে কি সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন। আর এটাও বুঝতে পারছি, তুমি সত্যি রতীশকে খুব ভালবাস। তবে মন্তি, আমি তোমার কথামতই তোমাকে তুমি করে বলছি। আমি যদিও বয়সে তোমার থেকে বেশ বড়, তবু তুমিও আমাকে যদি রতীশের মতই বৌদি বলে ডাকো আর রচনার মত তুমি করে বলো, তাহলে আমিও খুব খুশী হব”।

সীমন্তিনী গলায় হাসির ছোঁয়া এনে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, আমিও তোমাকে বৌদিই বলব। এবার বল তো আমার সাথে কোন জরুরী ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে চাইছ তুমি”?

মহিমাও এবার খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ মন্তি। তবে শোন ভাই, তুমি যেটা ভাবছো যে রতীশের কোন কাজে আমি বুঝি অসন্তুষ্ট হয়েছি। তা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। রতীশের ওপর আমার কোনও অভিযোগ নেই। ও তো আমার এখানে কাজে জয়েন করবার পর আমার সেন্টারের খুব সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। ট্রেনী সংখ্যাও গত এক দেড় মাসে অনেক বেড়ে গেছে। আমার সেন্টারের মাসিক আয় প্রায় টুয়েন্টি পার্সেন্ট বেড়ে গেছে। সত্যি বলছি ভাই। সেজন্য রতীশের ওপর আমি কৃতজ্ঞ। রতীশকে নিয়ে আমি তোমাকে কিছু বলব না। আসলে কলকাতায় এসে রতীশ রচনা ওরা ওদের অজান্তেই ভীষণ একটা বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। আর তার ব্যাপারে ওরা এখনও কিছুই জানতে বা বুঝতে পারেনি। সত্যি বলছি ভাই। আমি নিজেও যে খুব ভাল মহিলা তা নয়। কিন্তু আমি চাই না ওরা কেউ কোন বিপদে পড়ুক। আসলে ভাই, রতীশের মত এমন মিষ্টি স্বভাবের কোন ছেলেকে আমি আর আগে কখনও দেখিনি। আর তোমার বৌদি, রচনা। তার কথাই বা আমি কী বলি। আমার জীবনেও আমি রচনার মত মেয়ে আর একটাও দেখিনি। যেদিন ওকে প্রথম দেখেছি আমি সেদিন থেকেই আমার ভেতরে ভেতরে কিজানি একটা হচ্ছে। কোন কিছুতেই যেন স্বস্তি পাচ্ছিনা আমি। আর ওদের দুটিকে দেখে তো আমার মনে হয় সাক্ষাৎ শিব-পার্বতীকে দেখছি আমি। বারবার ওদের দুটিকে কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় সব সময় ওই ছেলে মেয়ে দুটোকে আমি দু’হাতে আগলে রাখি। কিন্তু ওদের ওপর যে একটা বিপদের ছায়া ঘণিয়ে আসছে সেটা আমি জানতে পেরেছি আজ থেকে সাতদিন আগে। আর সেদিন থেকেই ওদেরকে বিপদমুক্ত করবার রাস্তা খুঁজে চলেছি। কারন আমি জানি রতীশ একটা স্বপ্ন নিয়ে এ শহরে এসেছে। ওর স্বপ্ন এখনও পূর্ণ হয়নি। আর আমিও রতীশকে আমার কাছেই রাখতে চাইছি। গত সাতটা দিন ধরে দিনরাত ভেবে আমি শুধু একটাই রাস্তা খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু আমি নিজেও চাই না রতীশ সে রাস্তা অনুসরন করুক। কারন তাতে ওর স্বপ্নটাও যেমন স্বপ্নই থেকে যাবে, তেমনি আমিও ওদের দুটিকে আমার জীবন থেকে হারিয়ে ফেলব। আমার অর্থ প্রতিপত্তি যতটুকু আছে তার সবটা দিয়েও আমি ওদের ওপর নেমে আসা বিপদটাকে কাটিয়ে দিতে পারব না। আমার প্রাণটা বিসর্জন দিয়েও সেটা করা সম্ভব নয়। তাই আমি নিরূপায় হয়ে এমন একজনকে খুঁজছিলাম যে ওদের এ বিপদ থেকে বাঁচাতে পারবে। তাই আজ বিকেলে ওদের ফ্ল্যাটে গিয়ে ওদের সাথে নানা কথা বলে আমি বোঝবার চেষ্টা করছিলাম যে কলকাতায় ওদের হিতাকাঙ্ক্ষী বা আপনজন আর কেউ আছে কি না, যে বিপদে আপদে ওদের পাসে এসে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু বুঝলাম যে কলকাতায় ওদের আপন স্বজন বলতে আর কেউ নেই। আর তুমিই ওদের সবচেয়ে বেশী ভালবাস। তাই আর কোন উপায় না পেয়ে আমি তোমার সাথেই ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিলাম। আর তাই তো তোমার ফোন পাবার জন্যে এতটা উদগ্রীব হয়েছিলাম আমি। তাই বুঝতে পাচ্ছ তো, রাত হয়ে গেছে কিনা, আমি টায়ার্ড কিনা, এসব আর কোনও ফ্যাক্টর নয়। তুমি যদি ক্লান্ত না হয়ে থাক তাহলে আমি ব্যাপারটা তোমার সাথে শেয়ার করতে চাই। আর তা এক্ষুনি করতে চাই”।
 

সীমন্তিনী মহিমার কথাগুলো শুনতে শুনতে একের পর এক অবাক হয়ে যাচ্ছিল। সে মনে মনে ভাবছিল যে সন্ধ্যের পর থেকে নবনীতার মুখে মহিমার কথা শুনে তার মনে হয়েছিল যে রতীশ বা রচনার ওপর মহিমার তরফ থেকেই কোনও বিপদ আসতে পারে। এখন তো দেখা যাচ্ছে ব্যাপারটা তা নয়। এখন তো তার মনে হচ্ছে মহিমা যতই খারাপ হোক না কেন, তার মনে এমন কোন দুরভিসন্ধি নেই। সে নিজেই তো সাতদিন আগে সে বিপদের আঁচ পাবার পর থেকেই দুর্ভাবনায় আছে। সে নিজেও তো রতীশ আর রচনাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছে।
 

মহিমা থামতেই সীমন্তিনী বলল, “বৌদি, তুমি আমাকে নিয়ে ভেবো না একদম। যতটুকু বলেছ তা শুনেই আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। তুমি ব্যাপারটা আমায় খুলে বলবে প্লীজ”।

মহিমা একটা শ্বাস ফেলে বললো, “মন্তি, তুমি যখন রতীশের এত প্রিয় বোন, তাহলে আমিও তোমাকে আজ থেকে আমার বোন বলেই ভাববো। কিন্তু মন্তি ওদের ব্যাপারে কথাগুলো খুলে বলার আগে তোমাকে আমার ব্যাপারে কিছু কথা বলা নিতান্তই প্রয়োজন। নইলে তুমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারবে না। কিন্তু বোন, আমার সে কথাগুলো যে নিতান্তই লজ্জার। তুমি আমাকে নিশ্চয়ই খারাপ বলে ভাববে। তুমি আমাকে খারাপ ভেবো বোন, তাতে আমার কিচ্ছু এসে যাবে না। কিন্তু যে করেই হোক ওদের বাঁচাবার চেষ্টা কর”।

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 12-03-2020, 07:54 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)