12-03-2020, 01:56 PM
[৫২]
সন্ধ্যে বেলা তপাদার দোকান থেকে বেরিয়ে দিলীপ হাটতে হাটতে জগা উকিলের ফ্লাটের নীচে এসে উপরে তাকিয়ে দেখল রমির মা দাঁড়িয়ে আছেন বারান্দায়। মাথা নীচু করে চলে আসছে উপর থেকে সুমিত্রা আণ্টি ডাকলেন,এই দিলীপ শোনো।
দিলীপ ঘাবড়ে গিয়ে উপরে তাকাতে আণ্টি হাত নেড়ে উপরে যেতে বলছেন।কি করবে চলে যাবে কিনা ভাবছে না গেলে অসভ্যতা হবে। রমি কি বাড়ীতে নেই?রমির ব্যাপারে কিছু বলবেন নাতো? বলে বলবে, নিরুপায় হয়ে উপরে উঠে গেল।দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছেন সুমিত্রা আণ্টি। দিলীপকে দেখে বললেন,ভিতরে এসো বাবা।
মাথা নীচু করে ভিতরে ঢুকতে আণ্টি সোফায় বসতে বললেন।মনে হচ্ছে বাড়ীতে আর কেউ নেই। দিলীপ বসে বসে ঘামে। আণ্টি সামনে একটা সোফায় বসলেন।দিলীপ না তাকিয়ে বুঝতে পারে আণ্টি তাকে দেখছেন।
--তুমি কি করো বাবা?আণ্টি জিজ্ঞেস করেন।
--বিসিএ পরীক্ষা দিয়েছি কদিন পর রেজাল্ট বের হবে।
--তুমি বিএ পাস না?
--হ্যা বিএ পাস করে বিসিএ তে ভর্তি হয়েছিলাম। দিলীপ বুঝতে পারে আণ্টি বিসিএ ব্যাপারটা বোঝেন নি।
--চাকরি টাকরি কিছু করোনা।তোমার বাবার সামান্য চাকরি খুব টানাটানির মধ্যে আছো তাহলে?
দিলীপ কোনো কথা বলে না।তারিণী বাবু ঢুকলন। এই লোকটি উপর তলায় থাকেন, তারিণি বাবুর আগমনে দিলীপ বিরক্ত হয়। দিলীপ জিজ্ঞেস করে,আণ্টী আমাকে কেন ডাকলেন বললেন না তো?
--কেন ডেকেছে বোঝো নি? তারিণী বললেন।
--আণ্টি ইনি কি আপনার কেউ হয়?
--আঃ আপনি চুপ করুন তো,যা বোঝেন না তা নিয়ে কথা বলবেন না।আণ্টি বিরক্ত হয়ে বললেন। দিলীপকে বললেন,শোনো বাবা যে জন্য ডেকেছি।তুমি জানো রমি ছেলে মানুষ ভাল মন্দ বোঝার মত বয়স ওর হয়নি। তুমিও চাইবে না রমির কোনো ক্ষতি হোক। ঠিক কিনা বলো?
--আণ্টি আপনি রমির মা আপনার দুটো কথা আমি শূনবো কিন্তু এই বুড়োটার সামনে আমি রমিকে নিয়ে কোনো কথা বলবো না।
তারিণীর বুড়ো কথাটা ভাল লাগে না কিন্তু ছেলেটা গুণ্ডা টাইপ,সুমির সামনে যদি চড় থাপ্পড় দিয়ে দেয় তাহলে ইজ্জৎ থাকবে না তাই শুনেও না শোনার ভাব করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
বাইরে দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। সুমিত্রা বললেন,বোধ হয় রমি এসেছে। তুমি বাবা ওকে কিছু বোল না।
দরজা খুলতে রমি শমি ঢুকলো। সুমিত্রা বললেন,কোথায় ছিলি দিলীপ এসে বসে আছে।
তারিণীকে দেখে রমিতা বলল,এখানে কি চাই? এখন পড়াশোনার সময় যান নিজের ফ্লাটে যান। তারিণী একবার সুমিত্রার দিকে তাকালো। সুমিত্রা বললেন,আঃ রমি কি হচ্ছে কি বুড়ো মানুষ।
--বুড়ো মানুষের অত ছোক ছোকনি কিসের? রমির কথায় চলে গেল তারিণী।
দিলীপের দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার আক্কেলটা কি? আমি আর শমি তোমায় সারা পাড়া খুজে বেড়াচ্ছি।
--ন না মানে আণ্টির সঙ্গে কথা বলছিলাম।দিলীপ আমতা আমতা করে বলল।
দিলীপ কি করবে বুঝতে পারে না। আণ্টি তাকে ডেকে আনলেন এখন বলছেন দিলীপ এসে বসে আছে।আণ্টির দিকে চোখ পড়তে দেখল আন্টির কাচুমাচু মুখ। রমি বলল, মা ওকে চা দাও নি?
দিলীপ বলল,এখন চা থাক আমি এখন আসি রমি?
--আসি মানে?আমি এলাম আর তুমি চলে যাবে?বোসো চুপ করে বোসো।আমি চা আনছি।
--হ্যা বাবা একটু বোসো তোমার কি কোনো কাজ আছে এখন?আণ্টি বললেন।
দিলীপ বোঝে আণ্টির ইচ্ছে কাজের অজুহাত দেখিয়ে দিলীপ বিদায় হোক।রমি আসায় দিলীপের সাহস বেড়ে গেছে।সোফায় বসে বলল,না কাজ আর কি? কি শমি কোথায় গেছলে?
--কোথাও না, দিদির সঙ্গে ঘুরছিলাম পাড়ায়।আচ্ছা দিলীপদা পল্টূদা কি আর এ পাড়ায় আসবে না?
দিলীপ মনে মনে বলে সে তোমার বাবা ভাল জানে। হেসে বলল,আসবে না কেন? পল্টূ কি আমাদের ভুলতে পারবে?
রমিতা চা নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল,পল্টূ দা কি যত্ন করছিল প্রত্যেকের তপাদাকে জোর করে বাড়ীর জন্য একটা পার্শেল পাঠিয়ে দিল। যারা ভাল মানুষ তারা অতীতকে কোনোদিন অস্বীকার করে না।
দিলীপ চায়ের কাপ নিতে নিতে অবাক হয়,রমি কি সুন্দর করে বলল। 'অতীতকে অস্বীকার করা' দারুণ।
সুমিত্রা ভাবছেন তারই ফ্লাটে বসে দিলীপ তারিয়ে তারিয়ে চা খাচ্ছে। যা করতে গেছিলেন এ তার উল্টো হল।শমিতার দিকে তাকিয়ে বললেন,এখনে দাঁড়িয়ে গল্প গিললে হবে,তোমার না বিএ পরীক্ষা?যাও পড়তে বসো।
দিলীপ চা শেষ করে উঠে দাড়ীয়ে বলল,আসি আণ্টি?
--চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।রমিতা বলে।
সুমিত্রার শঙ্কা হয় দিলীপ আবার মেয়েকে না বলে দেয় যে তিনি দিলীপকে উপরে ডেকে এনেছিলেন।মেয়েকে বললেন, তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস,এই তো ফিরলি?
রমিতা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,আসছি।
দিলীপ আগে আগে পিছনে রমিতা সিড়ি দিয়ে নেমে এল। দিলীপ বেরোতে যাবে রমিতা ডাকলো,দাড়াও,মনে হচ্ছে খুব তাড়া আছে?
দিলীপ পিছন ফিরে হেসে বলল, কি বলবে বলো?
দিলীপ তাকে কিছু চেপে যাচ্ছে রমিতার মনে হল।এতক্ষণ কি কথা বলছিল মায়ের সঙ্গে? রমিতা দিলীপের হাত চেপে ধরে বলল, আমাকে ছুয়ে বলতো আজ একেবারে বাড়ীতে চলে এলে,কি বলতে এসেছিলে মাকে? সত্যি করে বলতে না পারলে বলতে হবে না।
--কি বলছো তুমি?আমি তোমাকে মিথ্যে বলবো?
--যে কথা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।রমিতা অন্য কথায় কান দেয় না।
--তার আগে বলো তুমি আণ্টিকে কিছু বলবে না?
মায়ের সঙ্গে কি কথা হয়েছে সে কথা আমাকে বলতে শঙ্কা কেন? রমিতা বলল,ঠিক আছে বলব না,বলো তুমি কেন এসেছিলে?
--আমি আসিনি।তপাদা বলল তুমি আমার খোজ করছিলে তাই এসেছিলাম--।
--তাই একেবারে উপরে উঠে এলে?রমিতা বলল।
--বিশ্বাস করো তোমার বুক ছুয়ে বলছি আমি নিজে যাইনি। রমিতা চোখ নামিয়ে দিলীপের হাতের দিকে দেখে। দিলীপ আঙ্গুলে নরম স্তনের স্পর্শ পেয়ে দ্রুত হাত সরিয়ে নিল।
--তুমি নিজে যাওনি মা তোমাকে ডেকেছে?
--সত্যি বলছি বারান্দায় তোমাকে না দেখে আমি চলে যাবার জন্য পা বাড়িয়েছি অমনি উপর থেকে আণ্টি আমাকে ডাকলেন।
রমিতা মনে মনে হাসে ব্যাপারটা এতক্ষণে পরিস্কার হল জিজ্ঞেস করল,মা তোমাকে কি বলছিল?
--উপরের ফ্লাটের বুড়োটা ছিল বলে আমি আণ্টীকে বললাম ওর সামনে রমির ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলব না।
--ওই তারিণীর সামনে মা আমার কথা বলছিল?
রমিকে বিশ্বাস নেই দিলীপ শঙ্কিত হয় কাছে গিয়ে বলে,লক্ষীটি রমি তুমি আণ্টিকে কিছু বলবে না। রমিতার মজা লাগে দিলীপের ভয়ার্ত মুখ দেখে গলা জড়িয়ে ধরে বলল,ঠিক আছে বলব না তুমি তাহলে একটা...দাও। মুখ তুলে ঠোট ফুলিয়ে রাখে রমি।
দিলীপ দু-গাল ধরে রমির ঠোট মুখে নিয়ে চুষে বলল,টক টক লাগছে,কি খেয়েছো?
--হি-হি-হি,আমি আর শমি বড় রাস্তায় গিয়ে একটু আগে চুড়মুড় খেয়ে এসেছি।
রমিতা দিলীপকে বিদায় করে উপরে আসতে সুমিত্রা জিজ্ঞেস করেন,কিরে কি বলছিল দিলীপ?
--কি আবার বলবে?
--তা হলে এত দেরী করলি যে? কি করছিলি এতক্ষণ?
--শোনো মা তুমি বুড়োটাকে মানা করে দেবে আমাদের সংসারের ব্যাপারে যে নাক না গলায়--ব্যাটা বুড়ো ভাম।
সুমিত্রা মনে মনে ভাবে মেয়েরা বড় হয়েছে এখন তাকে সংযত হতে হবে।চেটে চেটে গুদের ছাল তুলে দেবার যোগাড়।জানাজানি হলে লজ্জায় মুখ দেখাবার যো থাকবে না।
গাড়ী থেকে নেমে দুজনে উপরে উঠে গেল। অনির্বান বাড়ীতে ছিল।দেবকে বসিয়ে পার্বতী ম্যামকে নিয়ে খাদিজা পাশের ঘরে গিয়ে ব্যাগ থেকে কাগজ পত্তর বের করে দিল।
--পল্টু সই করেছে?
--হ্যা কিন্তু ও কিছু জানে না।আপনি চিন্তা করবেন না।
পার্বতী ভাবেন,ছেলেটা একেবারে বাপের ধাত পেয়েছে।প্রথম মিলনের দিনটির কথা মনে পড়ল।সেদিন কি যে হয়েছিল নিজেকে সামলাতে পারেনি।সোম ভীষণ লাজুক মুখ ফুটে নিজের অনিচ্ছের কথাটাও বলতে পারে না।
অনির্বান পল্টুকে জিজ্ঞেস করে,তোমার রেজাল্টের কোনো খবর পেলে?
--পাইনি শুনেছি এই সপ্তাহে খবর পেতে পারি।
খাদিজা ঢুকল সঙ্গে পার্বতী ম্যাম।চা দিয়ে গেছে,চা খেতে খেতে পার্বতী ম্যাম বললেন, শূনলাম তুমি ক্যাশিয়ারকে টাকা দিয়ে গেছো,অসুবিধে থাকলে পরে দিতে পারতে।
দেবকে বলেনি পার্বতী ম্যামের জানার কথা নয়,আড়চোখে দেবকে দেখে বলল, না না অসুবিধে থাকলে আমি নিজেই আপনাকে বলতাম।
--অনি তুমি বলোনি? জানো পল্টূ সামনের মাসে তোমার দাদা এ্যামেরিকা যাচ্ছে স্কলারশিপ নিয়ে।
--কনগ্রাচুলেশন। হেসে পল্টূ বলল।
খাদিজা বেগম বলল,আমিও ভাবছি ওকে এফআরসিএস পড়তে পাঠাবো। এই ঝামেলার জন্য এত ব্যস্ত ছিলাম।
পল্টু অবাক হয়ে খাদিজার দিকে তাকালো।
গল্প গুজব সেরে দেবকে নিয়ে খাদিজা বেগম নীচে নেমে গাড়ীতে উঠল।ইকবাল জিজ্ঞেস করল,মেমসাব এখন কোথায়?
--চলো ফ্লাটে।ইকবাল গাড়ীটা কেমন হল?
--ভালো হয়েছে।
গাড়ী ছাড়তে পল্টু হাত দিয়ে খাদিজার কোমর খামচে ধরল। যন্ত্রণায় খাদিজা পল্টূর হাত চেপে ধরে বলল,গাড়ীর মধ্যে কি হচ্ছে?
--আমাকে তোমার সহ্য হচ্ছে না? পরিস্কার করে বললে ফ্লাট ছেড়ে দেবো।
--কি আবোল তাবোল বকছো? সহ্য না হবার কি দেখলে?
--এতদিন দিল্লী ছিলাম আবার লণ্ডন?
খাদিজার হাসি পায় এতক্ষণে বুঝতে পারে রাগের কারণ। খাদিজা দেবের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,আমি আর তোমাকে একা একা ছাড়বো ভেবেছো?লণ্ডন গেলে আমি তোমার সঙ্গে যাবো।
--তুমি নার্সিং হোমের পেমেণ্ট করে দিয়েছো আমাকে বলো নি তো?
--সব তোমাকে বলতে হবে? আমি তোমার বড় না তুমি আমার বড়?তোমার মম কি সব কাজ তোমাকে জিজ্ঞেস করে করতো?
পল্টু চোখ তুলে পাশে বসা খাদিজা বেগমকে অদ্ভুত চোখে দেখে।বেগমের ডান হাত তুলে নিজের গালে বোলায়।সামনে ইকবাল থাকলেও খাদিজা বেগম অমৃতময় মুহুর্তে দেবকে কোনো বাধা দেয় না। মনে মনে ভাবে আজ রাতে মায়ের স্নেহ পত্নী প্রেম দিয়ে দেবকে ভরিয়ে দেবে।কোনোভাবে মায়ের অভাব দেবকে বুঝতে দেবে না।মনে মনে আওড়ায় "নহ মাতা নহ কন্যা নহ বধূ সুন্দরী রূপসী/ হে নন্দন বাসিনী ঊর্বশী/ কুন্দশুভ্র নগ্ন কান্তি সুরেন্দ্র বন্দিতা তুমি অনিন্দিতা।" কবির চোখে নারীর চিরন্তন রূপকে সার্থক করে তোলা খাদিজা বেগমের সাধনা।