Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 138)

জয়া বসাক সীমন্তিনীকে সাদর আমন্ত্রণ করে তাকে নিয়ে নিজের কেবিনে বসিয়ে নবনীতার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। সীমন্তিনীর অনুরোধে তিনি নবনীতাকে তার শোরুমের সেলস গার্ল হিসেবে কাজে নিতে রাজি হলেন। আর সীমন্তিনীর কথাতেই রোজ দুপুরের আগে দু’ঘন্টা নীতাকে তাদের কারখানায় গিয়ে কাজকর্ম দেখতে দেবার ব্যাপারেও সম্মত হলেন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হল প্রথম দিন সীমন্তিনী নবনীতাকে বসাক গারমেন্টসে নিয়ে গিয়ে জয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। নবনীতা সামনের মাসের এক তারিখ থেকেই বসাক গারমেন্টসে কাজে যোগ দেবে। আর নবনীতাকে দুপুর দুটো থেকে রাত আটটা অব্দি শোরুমে থাকতে হবে। সেখানে সেলস গার্ল হিসেবেই তাকে মাসে মাসে আট হাজার করে বেতন দেওয়া হবে। আর সে রোজ দুপুর বারোটা থেকে দুটো পর্যন্ত কারখানায় যেতে পারলেও ওই সময়ের জন্য তাকে কোনও পারিশ্রমিক দেওয়া হবে না। আর জয়া বসাকের আরেকটা শর্তও নবনীতাকে মেনে নিতে হবে। জয়ার কারখানায় ডিজাইনিং টেলারিং-এর কাজকর্ম শিখে নেবার পর নবনীতা যদি নিজস্ব কোনও কারখানা বা দোকান খুলতে চায় সেটা সে ওই শহরে করতে পারবে না। সেটা তাকে অন্যত্র করতে হবে।
 

সীমন্তিনী বেশ খুশী মনেই বসাক গারমেন্টসের শোরুম থেকে বেরিয়ে এল। যাক নবনীতার কিছু একটা ব্যবস্থা তো আপাততঃ করা গেল। তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। বাজার থেকে টাটকা কিছু ফল কিনে গাড়িতে উঠে বসতেই রাম সিং কোয়ার্টারের পথে গাড়ি হাকিয়ে দিল। ফিরতে ফিরতে মহিমার কথা মনে পড়ল সীমন্তিনীর। মহিলা তার সাথে কথা বলতে এত আগ্রহী হয়ে ওঠবার কারন কি? দাদাভাই তার ওখানে কাজ করছে বলে কি তিনি কোন সমস্যায় পড়েছেন? দাদাভাইয়ের কাজে কি তিনি সন্তুষ্ট নন? না অন্য কিছু? অনেক ভেবেও কোন পরিষ্কার ধারণা করে উঠতে পারল না সীমন্তিনী। মনে মনে ভাবল আজ রাতে ভদ্রমহিলাকে ফোন করেই ব্যাপারটা জানতে হবে। আর পরিতোষকেও একটা ফোন করতে হবে।
 

*******************

পরিতোষের কথা মনে হবার সাথে সাথে সীমন্তিনী পকেট থেকে ফোন বের করে পরিতোষকে কল করল। নীতার কাজের ব্যাপারে জয়া বসাকের সাথে যেসব কথা হল তা ডিটেইলসে জানিয়ে দিল। পরিতোষও সায় দিল যে এ কাজটাই নবনীতার পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত হবে। পরিতোষের সাথে কথা বলা শেষ হতেই গাড়ি কোয়ার্টারের কম্পাউন্ডের মেইন গেটের কাছে এসে পৌঁছল।
 

সীমন্তিনী ঘরের কলিং বেল বাজাতেই অর্চনা আর নবনীতা দু’জনে ছুটে এসে দরজা খুলে দিতেই সীমন্তিনী দু’হাতে তাদের দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বলল, “কেমন আছে আমার বোন দুটো শুনি? সারাদিন কপোত কপোতীর মত গুটুর গুটুর করেছ বোধহয় তাইনা”?

অর্চনা সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরেই ঘরের ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “হ্যাঁ গো দিদিভাই, আজ প্রায় সারাটা দিনই আমরা দু’জন গল্প করে কাটিয়েছি। কিন্তু তোমার আজকের দিনটা কেমন কেটেছে বল”?

নবনীতা সীমন্তিনীর হাত থেকে ফলের ব্যাগটা নিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই লক্ষ্মীদি ব্যাগটা তার হাত থেকে নিয়ে বলল, “দাও ছোড়দি, এটা আমাকে দাও। তুমি বরং দিদিমণির কাছেই বসো গিয়ে”।

সীমন্তিনী অর্চনাকে বলল, “আজ আমার দিনটাও মোটামুটি ভালই কেটেছে গো। ফেরবার পথে বাজারে গিয়ে নীতার কাজের ব্যাপারটাও পাকাপাকি করে এলুম। আর তোমার জন্যে একটু ফলও নিয়ে এলাম। তা হ্যাগো অর্চুসোনা, আমি যেসব ফলটল এনে দিচ্ছি সেগুলো খাচ্ছ তো তুমি”?

অর্চনা বলল, “খাচ্ছি তো দিদিভাই। আমি কি তোমার কথার অন্যথা করতে পারি বলে ভাবো তুমি”?

নবনীতা কাছে এসে বলল, “এমনিতে কি আর খায় দিদি? সে একা কিছুতেই ওসব খাবে না। আমাকে আর লক্ষ্মীদিকেও তার সাথে বসে খেতে হয়। নইলে সে তো .....”

অর্চনা অনুযোগের সুরে নবনীতাকে বলল, “কেন বানিয়ে বানিয়ে বলছ নীতাদি? আমি কি খাই নে”?

লক্ষ্মী কিচেন থেকে ডাইনিং রুমে যেতে যেতে অর্চনার কথার জবাবে বলল, “হ্যাঁ খাও তো বটেই। কিন্তু দিদিমণিকে এটাও বল যে আমাদের দু’জনের হাতে না দিয়ে তুমি নিজের মুখে কিচ্ছুটি তোল না” বলে ডাইনিং রুমে কিছু একটা রেখেই সীমন্তিনীর কাছে এসে বলল, “জানো দিদিমণি, তোমার অর্চু সোনার স্বভাবও একেবারে তোমার রচু সোনার মতই। বৌদিমণি শুধু একটা দিনের জন্যে এখানে এসে আমাকে কতবার জোর করে এটা ওটা খাইয়েছেন। সোনাদিও এখানে আসবার পর থেকেই ঠিক তেমন করে যাচ্ছে। আর বলে কি জানো? আমরা না খেলে সে নাকি একটা টুকরোও মুখে দেবে না”।
 

সীমন্তিনী নিজের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। তোমাদের সব কথা আমি একটু বাদে শুনছি। আগে আমাকে ফ্রেশ হয়ে নিতে দাও। তারপর সবাই মিলে ডাইনিং রুমে বসে জল খাবার খেতে খেতে সবাই মিলে গল্প করব। নীতার সুখবরটাও বলব”।

অর্চনা নবনীতার একটা হাত জড়িয়ে ধরে খুশীতে ঝলমল করে উঠে বলল, “তাই নাকি দিদিভাই? কি সুখবর গো বলো না”।

সীমন্তিনী আদর করে অর্চনার গালে হাত বুলিয়ে বলল, “বললুম না, যে ওর কাজের ব্যাপারটা পাকা করে এলুম। সেটাই খুলে বলব। কিন্তু আমাকে একটু ফ্রেশ হয়ে আসতে দাও। এই ইউনিফর্ম পড়েই সারাটা দিন থাকতে হয়। ঘরে এসে ফ্রেশ না হলে ভাল লাগে বলো”?

বাথরুমে স্নান করতে করতে সীমন্তিনী ভাবল অর্চনা আর নবনীতার মাঝে বেশ ভাব হয়ে গেছে মনে হয়। এমনটাই সে মনে মনে চেয়েছিল। ওরা যেন দু’জনে দুই বান্ধবী হয়ে উঠতে পারে। তাহলে অর্চনাকে মানসিক দিক দিয়ে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা যাবে। প্রায় আধঘণ্টা বাদে ডাইনিং রুমে বসে জলখাবার খেতে খেতে সীমন্তিনী প্রথমে নবনীতার কাজের ব্যাপারে সবাইকে খুলে বলল। সবাই খুশী হলেও নবনীতার মুখটা একটু ভার হয়ে গেল। সেটা দেখেই সীমন্তিনী তাকে সান্ত্বনা দিতে বলল, “তোমার মুখ ভার হল কেন নীতা? আট হাজার টাকা বেতন দেবে শুনে মনটা ছোট হয়ে গেল নাকি? আরে তুমি ওটা নিয়ে একদম ভেব না। তোমাকে তো এখানে আর কোনও খরচ করতে হচ্ছে না। তুমি তো আমার সাথেই থাকছ। তাই মাসে মাসে যে টাকাটা পাবে সেটা তুমি পুরোটাই ভবিষ্যতের কাজের জন্য জমা করে রাখবে। এ মাসেই তোমার নামে ব্যাঙ্কে একটা একাউন্ট খুলে দেব। আর তোমার বেতনের পুরো টাকাটাই প্রতি মাসে সেখানে জমা করে দেবে। তবে আমি নিজেও চাই না যে ওই সেলস গার্লের চাকরি তুমি বেশীদিন করো। আমি চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তুমি ডিজাইনিং আর টেলারিং-এর কাজগুলো শিখে ফ্যালো। তারপর তুমি স্বাধীনভাবে নিজেই একটা ছোটখাট কাজ শুরু করে দিতে পারবে”।

নবনীতা চিন্তিত ভাবেই বলল, “নাগো দিদি আমি মাইনে নিয়ে কিছু ভাবছি না। আমি নিজে কোনও কাজ শুরু করতে গেলে তো এখানে কিছু করতে পারব না। তার মানে তোমাকে ছেড়ে আমাকে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে”?

সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “এখনই সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না তোমাকে নীতা। আর তুমি কি ভাবছ যে আমি চিরদিন এখানেই থাকব? আমাদের ট্রান্সফারেবল সার্ভিস। যে কোনদিন অন্য যে কোনখানে আমার ট্র্যান্সফার হয়ে যেতে পারে। তখন কি আমি তোমাকে এখানে একা ফেলে যাবো বলে ভাবছো? আমি তখন তোমাকেও আমার সাথে নিয়ে যাব। আমি যেখানে থাকব, তুমিও সেখানেই থাকবে। আর নিজে কাজগুলো শিখে ফেলতে পারলে তুমি যে কোনও জায়গায় গিয়ে নিজের মত করে কাজ করতে পারবে। আর আমি তো তোমার সাথেই থাকব। ভাবছ কেন”?

এবার নবনীতার মুখের কালো মেঘ যেন কেটে গেল। সে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “ওঃ আমি তো এদিকটা ভেবেই দেখিনি। সত্যি তো, তোমাকে বা আমাকে তো চিরটা কাল এখানে থাকতে হবে না। কিন্তু দিদি, আমাকে কিন্তু কোন অবস্থাতেই তোমার কাছ থেকে দুরে পাঠিয়ে দিও না। এখান থেকে তোমার অন্যত্র ট্র্যান্সফার হলে আমি যদি সেখানে গিয়ে কিছু করতে না-ও পারি, আমি তোমার ছোট বোনটি হয়েই ঘর সংসার সামলাবার কাজ করব”।

নবনীতাকে মৃদু ধমক দিয়ে সীমন্তিনী বলল, “দুর পাগলী। এভাবে ভাবছ কেন? আমি পরিতোষকে কথা দিয়ে এসেছি না, তোমার সমস্ত দায়িত্ব আমার। তা আমার দায়িত্ব নিয়ে আমাকেই ভাবতে দাও না। তুমি শুধু সামনে আসা পরিস্থিতির কথা ভাবো। জয়াদি যে যে শর্তের কথা বলেছেন, সেসব মেনে তুমি কাজটা করতে রাজি আছ তো”?

নবনীতা বলল, “সে তো রাজি আছিই দিদি। কিন্তু অর্চনাকে তো ঘরে একা ছেড়ে যেতে হবে”।

সীমন্তিনী আবার হেসে বলল, “ওমা একা কোথায়? লক্ষ্মীদি আছে না? আর তোমাকে তো সকাল থেকে সারাটা দিন সেখানে থাকতে হচ্ছে না। হ্যাঁ রাত আটটার আগে ওখান থেকে ছুটি পাচ্ছ না সেকথা ঠিকই। কিন্তু তোমাকে তো ঘর থেকে সাড়ে এগারটায় বেরোলেই চলবে। বারোটা থেকে দুটো পর্যন্ত কারখানায় থাকবে, তারপর দুটো থেকে রাত আটটা অব্দি শোরুমে থাকবে। আর তোমার যাতায়াতের ব্যাপার নিয়েও চিন্তার কিছু নেই। একটা ভাল রিক্সাওয়ালাকে ঠিক করে দেব। সে তোমায় সাড়ে এগারোটায় এখান থেকে নিয়েও যাবে আর রাত আটটায় তোমাকে বাড়িতে এনে ফিরিয়েও দিয়ে যাবে। তাই অর্চুকে সাড়ে এগারোটা থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত, এই একটা বেলাই শুধু লক্ষ্মীদির সাথে থাকতে হবে। আমার বাইরে কোথাও ডিউটিতে যেতে না হলে আমি তো সাড়ে পাঁচটা ছ’টার মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসব। কী অর্চু, তোমার কি খুব অসুবিধে হবে”?

অর্চনা বলল, “না দিদিভাই, লক্ষ্মীদির সাথে থাকতে আমার কোনও অসুবিধে হবে না। তাছাড়া আমার জন্য তোমাদের কাউকে যদি কাজের ক্ষতি করতে হয় তাহলে আমারও সেটা ভাল লাগবে না। তুমি কিচ্ছু ভেব না নীতাদি। এমন একটা কাজ যখন পেয়েছ সেটা না করা মোটেও ঠিক হবে না”।

নবনীতা অর্চনার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে চেপে ধরে শুধু মাথা নাড়ল। সীমন্তিনী এবার বলল, “আচ্ছা অর্চু সোনা, আজ তোমার কার কার সাথে কথা হয়েছে শুনি। বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেনি”?

অর্চনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই, ভাই বিকেলে ফোন করেছিল। তখন মা বাবার সাথেও কথা হয়েছে। রচুও ফোন করেছিল এগারোটা নাগাদ। আমার সাথে আর নীতাদির সাথে কথা বলেছে”।

সীমন্তিনী তাকে জিজ্ঞেস করল, “দু’দিন ধরে মা বাবা ভাইকে দেখতে পাচ্ছ না বলে কি মন খারাপ করছে তোমার? আমার এখানে ভাল লাগছে তো”?
 

অর্চনা একটু ভাবুক হয়ে জবাব দিল, “যেদিন থেকে তুমি আমার জীবনে এসেছ, সেদিন থেকেই তো আমার জীবনটা পাল্টে গেছে দিদিভাই। সেদিন থেকেই তো আমার জীবনে নতুন সূর্য্যের আলো পাচ্ছি আমি। আমার জীবনের সব আঁধার তো সেদিন থেকেই কেটে গেছে। দু’দিন ধরে মা বাবা ভাইকে দেখতে না পেলেও তাদের সাথে রোজ কথা তো বলতে পারছি। আগের সাতটা বছর যে আমার কপালে সেটুকুও জোটেনি দিদিভাই। আর তোমার কাছে এসে তো আমার মনে হচ্ছে আমি সত্যিই বোধহয় স্বর্গে আছি। সারাটা দিন তুমি বাইরে থাকলেও নীতাদি লক্ষ্মীদির সাথে থাকতে আমার খুবই ভাল লাগে। আর দিনের শেষে যখন তোমাকে দেখি তখন মনে হয় আর কিছুই যেন আমার চাওয়ার নেই। আমার দিদিভাইকে আমি পেয়ে গেছি”।

সীমন্তিনী একটু ঝুঁকে অর্চনার মাথাটাকে নিজের কাঁধের সাথে চেপে ধরে বলল, “ও’সব পুরনো কথাগুলো ভুলে যাবার চেষ্টা করো না বোন। মনে করো ওগুলো দুঃস্বপ্ন ছিল। ভগবানের আশীর্বাদে সে দুঃস্বপ্ন তুমি কাটিয়ে উঠেছো। এখন অতীতের ওই সাতটা বছরের কথা একদম ভুলে যাও। আর এখন শুধু তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো। আমি চাই আমার আশেপাশের মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ জীবন খুব সুন্দর হয়ে উঠুক সবদিক দিয়ে। আর আমার বর্তমান তো এখন শুধু তোমরা। আমার দাদাভাই, রচু, তুমি, ভাই, মাসি মেসো, নীতা, লক্ষ্মী, পরিতোষ। আমিও তো আমার জীবনের আগের সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি তোমাদের সবাইকে আঁকড়ে ধরে। পুরনোদের মধ্যে তো একমাত্র দাদাভাইই শুধু আমার জীবনে রয়ে গেছে। জ্ঞান বোধ হবার আগে থেকেই দাদাভাই আর আমি দু’বন্ধুর মত বড় হয়েছি। তাই আমার অতীতের অন্য সকলের মত দাদাভাইকে আমি ভুলে যেতে পারিনি। আর সত্যি কথা বলতে ভুলতে চাইও না। ওই দাদাভাই আমার জীবনে ছিল বলেই না আমি রচুকে, তোমাকে, ভাইকে, মেসো মাসিকে কাছে পেয়েছি। তাই দাদাভাইয়ের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। যতদিন পর্যন্ত আমার হৃদয়ে স্পন্দন থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমি শুধু তোমাদের সকলের কাছের লোক হয়ে থাকতে চাই। আর আরেকটা কথা ......” বলেই সে থেমে গেল।
 

তারপর আবার বলল, “নাহ, এসব ফালতু কথা নিয়ে সময় নষ্ট করে কোনও লাভ নেই। বিকেলে রচু ফোন করে আমাকে একজনকে ফোন করবার কথা বলছিল সাতটার পর। সাতটা তো প্রায় হতেই চলল। চলো, তোমরা সবাই আমার ঘরে চল”।

***************

সীমন্তিনীর ঘরের দিকে যেতে যেতে অর্চনা জিজ্ঞেস করল, “রচু কাকে ফোন করতে বলেছে গো দিদিভাই”?

সীমন্তিনীও ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই জবাব দিল, “ওই দাদাভাই যে ইনস্টিটিউটে কাজ করে তার মালিক। সে নাকি আজ রচুদের ফ্ল্যাটে এসেছিল। রচু আর দাদাভাইয়ের মুখে শুনেছে যে ক’দিন আগে আমি কলকাতা গিয়ে চারদিন ছিলাম। কিন্তু তার সাথে আমার দেখা হয়নি বলে সে নাকি রচু আর দাদাভাইয়ের ওপর খুব অভিমান করেছে। তাই রচু আমাকে বলেছে আজ রাত সাতটার পর আমি যেন তাকে ফোন করি”।

সীমন্তিনীর ঘরে তিনজন বিছানার ওপর বসতে প্রথম কথা বলল নবনীতা, “আচ্ছা দিদি, রতীশ-দা কলকাতার কোন যোগা ইনস্টিটিউটে কাজ করেন গো”?

সীমন্তিনী তার একটা মোবাইল হাতে নিয়ে সেটা অন করে দেখল রচনার মেসেজটা আনরেড দেখাচ্ছে। মেসেজ খুলতে খুলতে সে জবাব দিল, “দক্ষিণ কলকাতার একটা জায়গায়। ইনস্টিটিউটটার নাম যতদুর মনে পড়ছে, মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউট। এক পাঞ্জাবী মহিলা তার মালিক”।

সীমন্তিনীর মুখে এ কথা শুনেই নবনীতা প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, “কি বলছো তুমি দিদি? মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউট? গড়িয়া থেকে বারুইপুরের রাস্তায় যেতে পড়ে তো? সেটা তো মহিমা মালহোত্রা সেনের ইনস্টিটিউট”!
 

সীমন্তিনী রচনার মেসেজ খুলে মহিমার কন্টাক্ট নাম্বার দুটো দেখতে দেখতে নবনীতার গলার স্বরে অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “হ্যাঁ, মহিমা মালহোত্রা সেন। তা তুমি তাকে চেনো নাকি”?
 

নবনীতা কি বলবে না বলবে বুঝতে না পেরে হতভম্বের মত একবার সীমন্তিনী আরেকবার অর্চনার মুখের দিকে চাইতে লাগল। অর্চনাও এবার জিজ্ঞেস করল, “তুমি ওই মহিলাকে সত্যি চেনো নীতাদি”?
 

সীমন্তিনী কোন কথা না বলে হাতে মোবাইলটা ধরে রেখেই তীক্ষ্ণ চোখে নবনীতার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। নবনীতার মুখে দুশ্চিন্তা আর ভয়ের মিশ্রিত একটা ছায়া যেন তার চোখে পড়ল। সে বুঝতে পারল নবনীতা নিশ্চয়ই ওই মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউট আর মহিমার সাথে পরিচিত। নইলে সে ওই যোগা ইনস্টিটিউটের নাম শুনেই ওভাবে চমকে উঠতো না। সীমন্তিনী মোবাইলে রচনার পাঠানো ফোন নাম্বার দুটোর দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবলো, না ফোনটা এখনই না করে আগে নবনীতার চমকে ওঠার কারনটা জেনে নেওয়া বেশী প্রয়োজন।

অর্চনা আবার নবনীতাকে বলল, “ও নীতাদি, বলোনা তুমি কি রতু-দার মালিককে চেনো নাকি”?
 

নবনীতা অর্চনার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় চেপে ধরে বলল, “দাঁড়াও অর্চনা। আমাকে একটু ভাবতে দাও”। নবনীতা নিজের গলার স্বর স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা করলেও সীমন্তিনী বুঝল, নবনীতা ভেতর ভেতরে যথেষ্ট উত্তেজিত এবং উৎকণ্ঠিত। তবু সে ওই মূহুর্তেই সরাসরি নবনীতাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে মনে মনে ভাবল পরিতোষের সাথে নীতার যখন পুনরায় দেখা হয় তখন নীতা ওর এক বান্ধবীর ফ্ল্যাটে থাকত। অন্য কোনও কাজ যোগার করতে না পেরে ওর বান্ধবীর মাধ্যমেই এক ম্যাডামের এসকর্ট ব্যবসায় নিজের নাম লিখিয়েছিল। ও বলেছিল ওর ওই ম্যাডামের একটা যোগা সেন্টারও ছিল। সে ম্যাডাম কি তবে এই মহিমাই? কিন্তু রচু আর রতীশ তো মহিমার প্রসংশায় প্রায় পঞ্চমুখ। মহিমা নাকি রতীশকে নিজের ভাইয়ের মত স্নেহ করে, রচুকেও নাকি খুব ভালবাসে। আর রতীশ তো তাকে বলেছে যে সে ইনস্টিটিউটে কোনও নোংড়া কাজ হয় বলে তার মনে হয়নি। আর মহিমাও তো রতীশকে বলেছিল যে রতীশের যদি কখনও কোনও ধারণা বা সন্দেহ হয় যে মহিমার ইনস্টিটিউটে কোনরকম অনৈতিক কাজকর্ম হয়, তাহলে রতীশ সে দিনই সেখানে কাজ ছেড়ে দিতে পারে। এমন চ্যালেঞ্জিং কথা যখন মহিমা বলেছিল তখন ধরেই নেওয়া যায় যে সে ইনস্টিটিউটে এমন কোন কাজকর্ম হয় না। তাহলে সে ইনস্টিটিউটের নাম শুনে নবনীতার এমনভাবে চমকে ওঠার কারন কি? কিন্তু ওই মহিমা মালহোত্রাই যদি নবনীতার সেই ম্যাডাম হয়ে থাকে, তাহলে তো ধরেই নেওয়া যায় যে তার সহজ সরল দাদাভাই নিজের অজান্তেই আরেক চরম এক বিপদের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে।

মহিমাকে ফোন করবার আগে নবনীতার কাছ থেকে ব্যাপারটা পরিস্কার করে জানতে হবে। কিন্তু নবনীতা কি অর্চনার সামনে সব কথা খুলে বলতে পারবে? সে যে একটা সময় পরিস্থিতির শিকার হয়েই দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য হয়েছিল, আর এর উদ্দেশ্য যে শুধু তার খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই ছিল তা কি অর্চনা সাদা মনে মেনে নিতে পারবে? অর্চনার মনে কি নীতার প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণাভাব জন্মাবে না? সে কি এত সহজ ভাবে নীতার সাথে মিশতে পারবে? আর সেটা করতে না পারলে তো অর্চনা নিজেও স্বাচ্ছন্দে থাকতে পারবে না এখানে। তাহলে নবনীতার সাথে মহিমার ব্যাপারে জিজ্ঞসাবাদ করার আগে তো অর্চনাকে এ ঘর থেকে সরিয়ে দিতে হবে। কিন্তু অর্চনার মনেও তো এতে একটা সন্দেহ তৈরী হতে পারে। সে ভাবতে পারে সীমন্তিনী আর নবনীতা তার কাছে কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে। তাই সে আর তাদের কাছে আগের মত সহজ খোলামেলা ব্যবহার করতে পারবে না। এটাও তো সীমন্তিনীর একেবারেই কাম্য নয়। কিন্তু নবনীতার এভাবে আঁতকে ওঠার কারনটাও যে তাকে জানতেই হবে। সীমন্তিনী শান্ত হয়ে ভাবতে চেষ্টা করল এমন পরিস্থিতিতে তার ঠিক কী করা উচিৎ।
 

এমন সময় নবনীতা প্রায় হঠাতই বলে উঠল, “দিদি সেদিন আমি তুমি আর বৌদি যখন পরির সাথে দেখা করতে ...............”।

সীমন্তিনী সাথে সাথে নবনীতার হাত চেপে ধরে তার চোখের দিকে চেয়ে ঈশারা করতেই নবনীতা থেমে গেল। তারপর চোখে চোখেই সীমন্তিনীকে অভয় দেবার ইঙ্গিত করে একটু ম্লান হেসে বলল, “ভেবো না দিদি। অর্চনাকে আমি আজ আমার জীবনের সব কথাই খুলে বলেছি। তাই ওর এখন আর নতুন করে চমকাবার কিছু নেই। আর আমরা যখন ওর ছোটবোন আর তার স্বামীকে নিয়ে কথা বলছি, সেসব ওর কাছে লুকিয়ে গেলে ওর মনের ওপর একটা বাড়তি চাপ পড়বে। সেটা তো ভাল হবে না। তাই বৌদি আর রতীশদার ওপর নেমে আসা কোন আপদ বিপদ বা ঝামেলার সম্ভাবনার কথা তার সামনেই আলোচনা করলেই অর্চু স্বাভাবিক ভাবে আমাদের সাথে আলোচনায় অংশ নিতে পারবে। আমরা তিনজনে মিলে একসাথে বিচার বিবেচনা করেই দাদা-বৌদিকে সব ঝামেলা থেকে মুক্ত করতে পারব। আমার মনে হয় অর্চনাও তাতে স্বস্তি পাবে। তাইনা অর্চু”?
 

অর্চনা একটু চিন্তান্বিত ভাবে বলল, “হ্যাঁ, তা তো তুমি ঠিকই বলছ নীতাদি। কিন্তু তুমি রচু আর রতু-দার ওপর আপদ বিপদ নেমে আসবে বলছ কেন? কি হয়েছে গো? আমাকে খুলে বলো না দয়া করে”? বলতে বলতে ওর গলা শুকিয়ে এল যেন।

______________________________
ss_sexy
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 11-03-2020, 10:21 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)