11-03-2020, 10:20 PM
(Update No. 137)
রতীশ প্রায় সাথে সাথেই জবাব দিল, “মা তো সন্তানকে ভাল বাসবেনই বৌদি। কিন্তু আমার মনে হয় আমার বোন মানে আমার থেকে মাত্র ছ’মাসের ছোট আমার খুড়তুতো বোন, যে ক’দিন আগেই আমাদের এখানে এসেছিল, সে-ই আমাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে”।
রচনাও সাথে সাথেই বলল, “হ্যাঁ বৌদি, দিদিভাইই তোমার ভাইকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। আর আমাকেও তিনি একেবারে নিজের ছোট বোনের মত ভালবাসেন। সেই দিদিভাইই তো আমাদের বিয়েটা দিয়েছিলেন বলতে গেলে” বলে একটু হেসে বলল, “জানো বৌদি, প্রথমে ওদের বাড়ি থেকে যখন বিয়ের সম্মন্ধ গিয়েছিল তখন তো আমি না করে দিয়েছিলাম। তারপর ওই দিদিভাইয়ের কথাতেই আমি রাজি হয়েছিলাম”।
মহিমা একটু হেসে বলল, “ওমা, তাই নাকি? তা তোমার সে দিদিভাইয়ের কি বিয়ে হয়ে গেছে? সে কোথায় থাকে”?
এবার রচনা একটু সতর্ক হয়ে রতীশ কিছু জবাব দেবার আগেই বলেছিল, “না বৌদি, দিদিভাই এখনও অবিবাহিতা আছেন। আসলে উনি সার্ভিসে আছেন। সরকারি অফিসে চাকরী করেন। আর নর্থ বেঙ্গলের ডুয়ার্সে একটা ছোট জায়গায় আছেন। এই তো কিছুদিন আগেই উনি অফিসের একটা কাজেই কলকাতা এসেছিলেন। তখন আমাদের এখানে চারদিন ছিলেন” বলতে বলতে রতীশের দিকে চেয়ে মহিমার চোখের আড়ালে ঈশারা করে চুপ থাকতে বলল।
রতীশ রচনার ইঙ্গিত বুঝতে পারল। তার মনে পড়ল মন্তি যে পুলিশ অফিসার এ’কথা কাউকে বলতে বারণ করে গেছে। মহিমা রচনার কথা শুনে বলল, “হু, তাহলে তোমার সেই দিদিভাইই তোমাকে আর রতীশকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। তা সে এসে এখানে চারদিন থেকে গেল, তোমরা কেউ তো আমাকে সে’কথা বলনি। আমিও একটিবার এসে তাকে দেখে যেতে পারতাম”।
রচনাও প্রায় সাথে সাথে জবাব দিল, “সে ইচ্ছে তো আমারও ছিল বৌদি। আমি সে’কথা দিদিভাইকে বলেও ছিলাম। আমি বলেছিলাম যে তুমি আমাদের খুব ভালবাসো। তোমার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেব। তোমার ওখানে একবার তাকে নিয়ে যাব বলেও ভেবেছিলাম। কিন্তু বাব্বা, সে আর সম্ভব হল কই। দিদিভাই তো রোজই সকাল আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ বেরিয়ে যেতেন। কোথায় কোথায় ঘুরে অফিসের কাজকর্ম করে সন্ধ্যেবেলায় টায়ার্ড হয়ে ঘরে ফিরতেন। তাই আর সেটা হয়ে ওঠেনি গো”।
মহিমা এবার রতীশের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “ইশ, আমার খুব আফসোস হচ্ছে ভাই। আমাকে যদি তুমি একটু বলতে যে তোমার বোন এখানে এসেছে, তবে আমি নিজেই এসে তার সাথে দেখা করতাম। তা তোমার সে বোনের নাম কি ভাই”?
এবারেও রতীশের জবাব দেবার আগেই রচনা বলে উঠল, “দিদিভাইয়ের নাম মন্তি গো বৌদি। খুব ভাল মেয়ে। প্রায় তোমার সমান হাইট। যেমন দেখতে তেমনি গুনে। এরপর তিনি যদি আর কখনও আসেন, তবে তোমার সাথে তার নিশ্চয়ই দেখা করাব”।
মহিমা একটু হেসে বলল, “সেটা না করলে আমি তোমাকে তখন খুব বকবো, এ কিন্তু আগে থেকেই বলে রাখছি” বলে রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “তা ভাই, তোমার সে বোনের কন্টাক্ট নাম্বারটা আমায় দেবে? আমার খুব ইচ্ছে করছে তার সাথে একটু কথা বলতে”।
রতীশ একবার রচনার দিকে তাকিয়ে খুব সতর্ক ভাবে বলল, “বৌদি, আপনি প্লীজ কিছু মনে করবেন না। মন্তির নাম্বার আপনাকে দিলেও কোন লাভ হবে না। আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন না। আসলে মন্তি সরকারি অফিসের এমন একটা পদে কাজ করে যে চেনা অচেনা সকলেই তাকে যখন তখন ফোন করে নানারকম আর্জি করে তাকে বিরক্ত করে। তাই ও আননোন নাম্বারের কল রিসিভই করে না। আপনার নাম্বারও তো তার ফোনে সেভ করা নেই। তাই আপনি ফোন করলেও সে ধরবে না। তখন আপনি মনে দুঃখ পাবেন। তারচেয়ে ......”
রতীশের কথা শেষ হবার আগেই রচনা মহিমার পাশে বসে তার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “সে নিয়ে তুমি ভেবনা বৌদি। দিদিভাইয়ের সাথে তোমার কথাও হবে আর তুমি তাকে দেখতেও পাবে। তবে তোমার ভাই, ঠিক কথাই বলেছেন। দিদিভাই নিজেও আমাদের বারণ করেছেন কাউকে তার নাম্বার দিতে। তবে আমি আজই দিদিভাইকে বলব যে তুমি তার সাথে কথা বলতে চাইছ। আর দিদিভাই তো জানেনই যে এ কলকাতায় তুমিই বর্তমানে আমাদের একমাত্র হিতৈষী। তোমার সাথে তিনি কথা বলবেন না এমন তো হতেই পারে না। তুমি তার সাথে কথা বলতে চাইছ শুনলে তিনি নিজেই তোমাকে ফোন করবেন দেখো। হয়ত আজ রাতেই তোমাকে ফোন করে বসবেন। আচ্ছা দাঁড়াও। আমি এখনই দিদিভাইকে ফোন করছি” বলে বেডরুমে নিজের ফোন আনতে চলে গেল।
রতীশ একটু হেসে মহিমাকে বলল, “রচনা ভুলেই গেছে যে মন্তি এখন ওর ফোনও ধরবে না। ও অফিসে এত ব্যস্ত থাকে যে আমাদের ফোনও ধরে না। ও ফোনটাকে সাইলেন্ট করে রেখে দেয়। তাই ওর কথা মতই আমরা ওর লাঞ্চ টাইমে ফোন করি আর বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর। অবশ্য পাঁচটা তো বাজতেই চলল। আপনি আর কিছুক্ষণ বসলে আমাদের ফোনেই হয়ত তার সাথে কথা বলতে পারবেন”।
মহিমাও তার হাতের ঘড়ির দিকে দেখে বলল, “আরে সত্যিই তো পাঁচটা তো হতেই চলল। রতীশ, আজ আর আমি বসতে পারব না ভাই। আসলে রোজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা অব্দি আমি যোগাচর্চা করি। তাই আমাকে এখন উঠতেই হবে ভাই। তুমি তোমার বোনকে বোলো সে যেন একবার আমায় ফোন করে। তবে যোগাচর্চার ওই সময়টা তো আমিও সব ফোন বন্ধ করে রাখি। তাই তাকে বলে দিও যে সন্ধ্যে সাতটার পর যেন সে আমাকে ফোন করে”।
রতীশ বলল, “ঠিক আছে বৌদি, আমি মন্তিকে সেভাবেই .....” তার কথার মাঝেই রচনা ফোন হাতে নিয়ে লিভিং রুমে এসে বলল, “নাগো বৌদি, দিদিভাই ফোন ধরছেন না। আসলে তার ফোনটা এ সময় সাইলেন্ট থাকে বলেই বুঝি বুঝতে পারছেন না”।
মহিমা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মহিমার হাত ধরে বলল, “ঠিক আছে রচনা। এখন নয় নাই বা কথা হল। তোমরা তাকে পরেই নাহয় জানিয়ে দিও। আর এখন আমাকেও বেরোতে হবে। তাই তোমরা তাকে বলে দিও সে যেন সন্ধ্যে সাতটার পর আমাকে ফোন করে। আসলে তার সাথে কথা বলতে আমার খুবই ইচ্ছে করছে”।
রচনাও মহিমার একটা হাত ধরে বলল, “সে তো বলবই। কিন্তু তুমি কি এখনই চলে যাবে বৌদি”?
মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “হ্যাঁগো, সোনা বোন আমার। আমাকে এখন যেতেই হবে। নইলে বাড়ি পৌঁছতে দেরী হয়ে যাবে”।
রচনা তবু বলল, “আরেকটু বসো না বৌদি। আমাদের সাথে এক কাপ কফি খেয়ে যাও, প্লীজ”।
মহিমা এবার রচনাকে কাছে টেনে তার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “নারে বোন। আজ আর বসা সম্ভব হবে না। সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা অব্দি আমি নিজে যোগা চর্চা করি। বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে আজ তো দেরীই হয়ে যাবে। তাই আজ যাচ্ছি আমি। আরেকদিন তোমাদের এখানে এসে আরও অনেক গল্প করব, কেমন”?
রচনা রতীশের দিকে একনজর তাকিয়ে বলে উঠল, “কিন্তু ......”
মহিমা রচনার কাছ থেকে সরে গিয়ে রতীশের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বলল, “আর কিছু বোলো না রচনা। রতীশ আমি যাচ্ছি ভাই”।
রচনা উপুড় হয়ে মহিমার পায়ের দিকে ঝুঁকে বলল, “আবার বলছ যাচ্ছি? সেদিন বলেছি না যাচ্ছি বলবে না”।
মহিমা রতীশের হাত ছেড়ে দিয়ে রচনাকে ধরে টেনে উঠিয়ে বলল, “হয়েছে, আর প্রণাম করতে হবে না। আচ্ছা, এবার আসছি তাহলে? হল তো”?
রচনাও এবার মিষ্টি হেসে বলল, “ঠিক আছে, এস বৌদি। আরেকদিন কিন্তু আগে থেকে জানিয়ে দুপুরের আগে এসে আমাদের সাথে খাবে। আর সেদিন খুব খুব গল্প করব আমরা”।
মহিমাও আদর করে রচনার গালটা একটু টিপে দিয়ে হেসে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আচ্ছা রতীশ, আমি আসি ভাই” বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। রতীশ আর রচনা তার সাথে বেরিয়ে তাকে লিফট অব্দি পৌঁছে দিল।
****************
সীমন্তিনী বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে তার গাড়ির ড্রাইভার রাম সিংকে বাজারের দিকে যেতে বলল। গাড়ি বাজার অভিমুখে চলতেই তার পকেটের মোবাইল বেজে উঠল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে রচনার নাম দেখেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। কল রিসিভ করে বলল, “রচু সোনা, আমি তো তোকে এখনই ফোন করতে যাচ্ছিলুম রে। বল সোনা কেমন আছিস”?
রচনা বলল, “ভাল আছি দিদিভাই। তুমি কি বাড়ি যাচ্ছ এখন? গাড়ির ইঞ্জনের শব্দ পাচ্ছি মনে হচ্ছে”।
সীমন্তিনী বলল, “নারে ঠিক বাড়ি যাচ্ছি না। তোকে সেদিন বলেছিলুম না যে নীতার জন্যে একটা কাজের ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করছি। সে ব্যাপারেই একটু মার্কেটে যাচ্ছি রে। একটু আগেই তো আমি অফিস থেকে বেরোলাম”।
রচনা বলল, “ও তা বেশ। নীতাদি একটা কাজ পেয়ে গেলে বেশ ভাল হবে। তবে দিদিভাই তুমি কি বাজারে পৌঁছে গেছ নাকি? না মানে একটা কথা বলতুম তোমাকে। এখন সময় হবে”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বল না। বাজারে পৌঁছতে আরও মিনিট পনের লাগবে আমাদের”।
রচনা বলল, “জানো দিদিভাই, আজ বৌদি আবার আমাদের বাড়ি এসেছিলেন”।
সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোন বৌদি রে? ওই দাদাভাই যার ওখানে কাজ করে, সেই মহিমা মালহোত্রা না কি, সে”?
রচনা বলল, “হ্যাঁগো দিদিভাই, তিনিই। তার সাথে কথায় কথায় তোমার কথা উঠতেই তোমার ভাই বলে ফেলেছেন যে তুমি কদিন আগেই কলকাতা এসেছিলে। আমাদের ফ্ল্যাটেই চারদিন ছিলে। সে’কথা শুনে ভদ্রমহিলা আমাদের ওপর খুব অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাইনি কেন, তার সাথে তোমার আলাপ করালাম না কেন, এসব নিয়ে খুব দুঃখ করছিলেন। আর তোমার সাথে কথা বলবেন বলে তিনি তোমার ফোন নাম্বারও চেয়েছিলেন আমাদের কাছে। কিন্তু তোমার কথা মতই আমরা তাকে তোমার কন্টাক্ট নাম্বার দিই নি। এটা সেটা বলে বুঝিয়ে দিয়েছি যে কোনও আননোন নাম্বার থেকে কল গেলেও তুমি সে কল রিসিভ কর না। কিন্তু তার আগ্রহ দেখে আমরা শেষ পর্যন্ত তাকে বলেছি যে আমরা তোমাকে তার কথা বললে তুমি নিজেই তাকে ফোন করবে। ও দিদিভাই, আমরা কি ভুল কিছু করেছি? তুমি কি রাগ করলে”?
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “তোরা কি তাকে বলে দিয়েছিস যে আমি পুলিশে কাজ করি”?
রচনা তাড়াতাড়ি বলল, “না না দিদিভাই, আমরা তাকে এ’কথা বলিনি। আমরা শুধু তাকে বলেছি যে তুমি এখনও বিয়ে থা করনি। আর সরকারি অফিসের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা পদে তুমি কাজ কর। আর তোমার পুরো নামটাও তাকে আমরা বলিনি। শুধু মন্তি বলা হয়েছে”।
সীমন্তিনী একটু ভেবে বলল, “সে কি আমার বিয়ের ব্যাপারে কোন ছেলের সম্মন্ধ আনতে চাইছে নাকি”?
রচনা এবার হেসে বলল, “তা তো তিনি আমাদের বলেন নি দিদিভাই। তবে তেমন আশা থাকলেও যে সে আশায় গুড়ে বালি, তা তো আমি জানিই। তবে উনি বলছিলেন যে তোমার সাথে কথা বলতে তার ভীষন ইচ্ছে করছে”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “আমি যে তাকে ফোন করব এ ব্যাপারে তোরা তাকে ঠিক কী বলেছিস বল তো”?
রচনা বলল, “তেমন বিশেষ কিছু বলিনি দিদিভাই। বলেছি যে কলকাতায় তিনিই যে আমাদের সবথেকে কাছের সবচেয়ে প্রিয়জন সে’কথা তুমিও জানো। আর আমাদের যারা ভালবাসেন তাদের তুমিও ভালবাস। তুমি তোমার দাদাভাইকে সবচেয়ে বেশী ভালবাস শুনেই তিনি তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন। তোমার ফোন নাম্বার চেয়েছিলেন। কিন্তু তোমার আগের কথাগুলো আমাদের মনে ছিল বলেই তাকে আমরা তোমার পুরো নামটা বলিনি। তুমি যে পুলিশে কাজ কর এ কথাও বলিনি। আননোন নাম্বারের ফোনকল তুমি রিসিভ করবে না বলেই তাকে তোমার ফোন নাম্বার দিলেও কাজের কাজ কিছু হবে না, এভাবে বুঝিয়েই আমরা তোমার ফোন নাম্বারও দিই নি। তবে আমি তাকে বলেছি যে আমি তোমাকে অনুরোধ করব তার সাথে কথা বলতে। আর আমার অনুরোধে তুমি নিশ্চয়ই তাকে ফোন করবে। শুধু এ কথাগুলোই বলেছি”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, তার কন্টাক্ট নাম্বারটা আমাকে এসএমএস করে পাঠিয়ে দে। আমি বাড়ি গিয়ে তাকে ফোন করব’খন। আর শোন তাদের বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারটাও পাঠাস”।
রচনা খুশী হয়ে বলল, “হ্যাঁ তা পাঠাচ্ছি। কিন্তু দিদিভাই, বৌদির মোবাইল আর ল্যান্ডলাইন সব ফোনই সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত উনি যোগাভ্যাস করেন। তাই তুমি সাতটার পর তাকে ফোন কোরো”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি সাতটার পরেই তাকে ফোন করব। তা তোরা দুটিতে কেমন আছিস বল তো? দাদাভাই ভাল আছে তো”?
রচনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই, আমরা দুজনেই ভাল আছি। আচ্ছা দিদিভাই, দিদি কেমন আছে গো? নীতাদি আর লক্ষ্মীদি তার সাথে ভাল ব্যবহার করছে তো”?
সীমন্তিনী বেশ খুশী খুশী গলায় বলল, “ওই দু’ পাগলীর কথা আর বলিস নে রচু। অর্চুকে ওরা মাথায় করে রাখবে না বুকে করে রাখবে, এ যেন তারা বুঝতেই পারছে না। সব সময় অর্চনার সাথে নানারকম গল্প করতে থাকে। লক্ষ্মীদি তো অর্চুকে কি খাওয়াবে না খাওয়াবে তা নিয়েই দিশেহারা হয়ে গেছে প্রায়। আর জানিস? লক্ষ্মীদি কি নামে ডাকে অর্চুকে? সোনাদি। একটা মূহুর্তও অর্চুকে ওরা একা থাকতে দেয় না। আর অর্চুকে দেখেও খুব ভাল লাগছে রে রচু। আমার এখানে যদি একটা মাস ওকে রাখতে পারি তাহলে মনে হয় ওকে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ করে তুলতে পারব। আর লক্ষ্মীদি নীতাও আমাকে এ ব্যাপারে খুব ভাল সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু একটা কথাই ভাবছি। নীতাকে খুব সম্ভবতঃ সামনের মাসের এক তারিখ থেকেই ওখানে কাজে যোগ দিতে হবে। এখন যেমন নীতা সারাক্ষণ রচুর সাথে থাকতে পারছে, তখন তো আর তেমনটা পারবে না। আর ও হয়ত রাত আটটা নটার আগে কাজ থেকে ছুটিও পাবে না”।
রচনা বলল, “সে নিয়ে আমার মনে কোন চিন্তা নেই। তুমি নিজেই সব সামলে নেবে এ বিশ্বাস আমার আছে। আমার দিদিভাই কি আমার দিদির অবহেলা হতে দেবেন”?
সীমন্তিনী সামনের রাস্তার দিকে দেখতে দেখতে বলল, “হয়েছে, দিদিভাইকে আর গ্যাস দিয়ে ফোলাতে হবে না তোমাকে। এই শোন, আমি আমার গন্তব্যে এসে পৌঁছে গেছি রে। ছাড়ছি এখন। পরে রাতে কথা হবে আবার” বলে ড্রাইভারকে বলল, “রামসিং, বসাক গারমেন্টসের সামনে গাড়ি সাইড করে রেখো”।
**********************
______________________________
রতীশ প্রায় সাথে সাথেই জবাব দিল, “মা তো সন্তানকে ভাল বাসবেনই বৌদি। কিন্তু আমার মনে হয় আমার বোন মানে আমার থেকে মাত্র ছ’মাসের ছোট আমার খুড়তুতো বোন, যে ক’দিন আগেই আমাদের এখানে এসেছিল, সে-ই আমাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে”।
রচনাও সাথে সাথেই বলল, “হ্যাঁ বৌদি, দিদিভাইই তোমার ভাইকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। আর আমাকেও তিনি একেবারে নিজের ছোট বোনের মত ভালবাসেন। সেই দিদিভাইই তো আমাদের বিয়েটা দিয়েছিলেন বলতে গেলে” বলে একটু হেসে বলল, “জানো বৌদি, প্রথমে ওদের বাড়ি থেকে যখন বিয়ের সম্মন্ধ গিয়েছিল তখন তো আমি না করে দিয়েছিলাম। তারপর ওই দিদিভাইয়ের কথাতেই আমি রাজি হয়েছিলাম”।
মহিমা একটু হেসে বলল, “ওমা, তাই নাকি? তা তোমার সে দিদিভাইয়ের কি বিয়ে হয়ে গেছে? সে কোথায় থাকে”?
এবার রচনা একটু সতর্ক হয়ে রতীশ কিছু জবাব দেবার আগেই বলেছিল, “না বৌদি, দিদিভাই এখনও অবিবাহিতা আছেন। আসলে উনি সার্ভিসে আছেন। সরকারি অফিসে চাকরী করেন। আর নর্থ বেঙ্গলের ডুয়ার্সে একটা ছোট জায়গায় আছেন। এই তো কিছুদিন আগেই উনি অফিসের একটা কাজেই কলকাতা এসেছিলেন। তখন আমাদের এখানে চারদিন ছিলেন” বলতে বলতে রতীশের দিকে চেয়ে মহিমার চোখের আড়ালে ঈশারা করে চুপ থাকতে বলল।
রতীশ রচনার ইঙ্গিত বুঝতে পারল। তার মনে পড়ল মন্তি যে পুলিশ অফিসার এ’কথা কাউকে বলতে বারণ করে গেছে। মহিমা রচনার কথা শুনে বলল, “হু, তাহলে তোমার সেই দিদিভাইই তোমাকে আর রতীশকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। তা সে এসে এখানে চারদিন থেকে গেল, তোমরা কেউ তো আমাকে সে’কথা বলনি। আমিও একটিবার এসে তাকে দেখে যেতে পারতাম”।
রচনাও প্রায় সাথে সাথে জবাব দিল, “সে ইচ্ছে তো আমারও ছিল বৌদি। আমি সে’কথা দিদিভাইকে বলেও ছিলাম। আমি বলেছিলাম যে তুমি আমাদের খুব ভালবাসো। তোমার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেব। তোমার ওখানে একবার তাকে নিয়ে যাব বলেও ভেবেছিলাম। কিন্তু বাব্বা, সে আর সম্ভব হল কই। দিদিভাই তো রোজই সকাল আটটা সাড়ে আটটা নাগাদ বেরিয়ে যেতেন। কোথায় কোথায় ঘুরে অফিসের কাজকর্ম করে সন্ধ্যেবেলায় টায়ার্ড হয়ে ঘরে ফিরতেন। তাই আর সেটা হয়ে ওঠেনি গো”।
মহিমা এবার রতীশের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “ইশ, আমার খুব আফসোস হচ্ছে ভাই। আমাকে যদি তুমি একটু বলতে যে তোমার বোন এখানে এসেছে, তবে আমি নিজেই এসে তার সাথে দেখা করতাম। তা তোমার সে বোনের নাম কি ভাই”?
এবারেও রতীশের জবাব দেবার আগেই রচনা বলে উঠল, “দিদিভাইয়ের নাম মন্তি গো বৌদি। খুব ভাল মেয়ে। প্রায় তোমার সমান হাইট। যেমন দেখতে তেমনি গুনে। এরপর তিনি যদি আর কখনও আসেন, তবে তোমার সাথে তার নিশ্চয়ই দেখা করাব”।
মহিমা একটু হেসে বলল, “সেটা না করলে আমি তোমাকে তখন খুব বকবো, এ কিন্তু আগে থেকেই বলে রাখছি” বলে রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “তা ভাই, তোমার সে বোনের কন্টাক্ট নাম্বারটা আমায় দেবে? আমার খুব ইচ্ছে করছে তার সাথে একটু কথা বলতে”।
রতীশ একবার রচনার দিকে তাকিয়ে খুব সতর্ক ভাবে বলল, “বৌদি, আপনি প্লীজ কিছু মনে করবেন না। মন্তির নাম্বার আপনাকে দিলেও কোন লাভ হবে না। আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন না। আসলে মন্তি সরকারি অফিসের এমন একটা পদে কাজ করে যে চেনা অচেনা সকলেই তাকে যখন তখন ফোন করে নানারকম আর্জি করে তাকে বিরক্ত করে। তাই ও আননোন নাম্বারের কল রিসিভই করে না। আপনার নাম্বারও তো তার ফোনে সেভ করা নেই। তাই আপনি ফোন করলেও সে ধরবে না। তখন আপনি মনে দুঃখ পাবেন। তারচেয়ে ......”
রতীশের কথা শেষ হবার আগেই রচনা মহিমার পাশে বসে তার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল, “সে নিয়ে তুমি ভেবনা বৌদি। দিদিভাইয়ের সাথে তোমার কথাও হবে আর তুমি তাকে দেখতেও পাবে। তবে তোমার ভাই, ঠিক কথাই বলেছেন। দিদিভাই নিজেও আমাদের বারণ করেছেন কাউকে তার নাম্বার দিতে। তবে আমি আজই দিদিভাইকে বলব যে তুমি তার সাথে কথা বলতে চাইছ। আর দিদিভাই তো জানেনই যে এ কলকাতায় তুমিই বর্তমানে আমাদের একমাত্র হিতৈষী। তোমার সাথে তিনি কথা বলবেন না এমন তো হতেই পারে না। তুমি তার সাথে কথা বলতে চাইছ শুনলে তিনি নিজেই তোমাকে ফোন করবেন দেখো। হয়ত আজ রাতেই তোমাকে ফোন করে বসবেন। আচ্ছা দাঁড়াও। আমি এখনই দিদিভাইকে ফোন করছি” বলে বেডরুমে নিজের ফোন আনতে চলে গেল।
রতীশ একটু হেসে মহিমাকে বলল, “রচনা ভুলেই গেছে যে মন্তি এখন ওর ফোনও ধরবে না। ও অফিসে এত ব্যস্ত থাকে যে আমাদের ফোনও ধরে না। ও ফোনটাকে সাইলেন্ট করে রেখে দেয়। তাই ওর কথা মতই আমরা ওর লাঞ্চ টাইমে ফোন করি আর বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর। অবশ্য পাঁচটা তো বাজতেই চলল। আপনি আর কিছুক্ষণ বসলে আমাদের ফোনেই হয়ত তার সাথে কথা বলতে পারবেন”।
মহিমাও তার হাতের ঘড়ির দিকে দেখে বলল, “আরে সত্যিই তো পাঁচটা তো হতেই চলল। রতীশ, আজ আর আমি বসতে পারব না ভাই। আসলে রোজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা অব্দি আমি যোগাচর্চা করি। তাই আমাকে এখন উঠতেই হবে ভাই। তুমি তোমার বোনকে বোলো সে যেন একবার আমায় ফোন করে। তবে যোগাচর্চার ওই সময়টা তো আমিও সব ফোন বন্ধ করে রাখি। তাই তাকে বলে দিও যে সন্ধ্যে সাতটার পর যেন সে আমাকে ফোন করে”।
রতীশ বলল, “ঠিক আছে বৌদি, আমি মন্তিকে সেভাবেই .....” তার কথার মাঝেই রচনা ফোন হাতে নিয়ে লিভিং রুমে এসে বলল, “নাগো বৌদি, দিদিভাই ফোন ধরছেন না। আসলে তার ফোনটা এ সময় সাইলেন্ট থাকে বলেই বুঝি বুঝতে পারছেন না”।
মহিমা সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মহিমার হাত ধরে বলল, “ঠিক আছে রচনা। এখন নয় নাই বা কথা হল। তোমরা তাকে পরেই নাহয় জানিয়ে দিও। আর এখন আমাকেও বেরোতে হবে। তাই তোমরা তাকে বলে দিও সে যেন সন্ধ্যে সাতটার পর আমাকে ফোন করে। আসলে তার সাথে কথা বলতে আমার খুবই ইচ্ছে করছে”।
রচনাও মহিমার একটা হাত ধরে বলল, “সে তো বলবই। কিন্তু তুমি কি এখনই চলে যাবে বৌদি”?
মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “হ্যাঁগো, সোনা বোন আমার। আমাকে এখন যেতেই হবে। নইলে বাড়ি পৌঁছতে দেরী হয়ে যাবে”।
রচনা তবু বলল, “আরেকটু বসো না বৌদি। আমাদের সাথে এক কাপ কফি খেয়ে যাও, প্লীজ”।
মহিমা এবার রচনাকে কাছে টেনে তার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “নারে বোন। আজ আর বসা সম্ভব হবে না। সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা অব্দি আমি নিজে যোগা চর্চা করি। বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে আজ তো দেরীই হয়ে যাবে। তাই আজ যাচ্ছি আমি। আরেকদিন তোমাদের এখানে এসে আরও অনেক গল্প করব, কেমন”?
রচনা রতীশের দিকে একনজর তাকিয়ে বলে উঠল, “কিন্তু ......”
মহিমা রচনার কাছ থেকে সরে গিয়ে রতীশের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বলল, “আর কিছু বোলো না রচনা। রতীশ আমি যাচ্ছি ভাই”।
রচনা উপুড় হয়ে মহিমার পায়ের দিকে ঝুঁকে বলল, “আবার বলছ যাচ্ছি? সেদিন বলেছি না যাচ্ছি বলবে না”।
মহিমা রতীশের হাত ছেড়ে দিয়ে রচনাকে ধরে টেনে উঠিয়ে বলল, “হয়েছে, আর প্রণাম করতে হবে না। আচ্ছা, এবার আসছি তাহলে? হল তো”?
রচনাও এবার মিষ্টি হেসে বলল, “ঠিক আছে, এস বৌদি। আরেকদিন কিন্তু আগে থেকে জানিয়ে দুপুরের আগে এসে আমাদের সাথে খাবে। আর সেদিন খুব খুব গল্প করব আমরা”।
মহিমাও আদর করে রচনার গালটা একটু টিপে দিয়ে হেসে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আচ্ছা রতীশ, আমি আসি ভাই” বলে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। রতীশ আর রচনা তার সাথে বেরিয়ে তাকে লিফট অব্দি পৌঁছে দিল।
****************
সীমন্তিনী বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে তার গাড়ির ড্রাইভার রাম সিংকে বাজারের দিকে যেতে বলল। গাড়ি বাজার অভিমুখে চলতেই তার পকেটের মোবাইল বেজে উঠল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে রচনার নাম দেখেই তার মুখে হাসি ফুটে উঠল। কল রিসিভ করে বলল, “রচু সোনা, আমি তো তোকে এখনই ফোন করতে যাচ্ছিলুম রে। বল সোনা কেমন আছিস”?
রচনা বলল, “ভাল আছি দিদিভাই। তুমি কি বাড়ি যাচ্ছ এখন? গাড়ির ইঞ্জনের শব্দ পাচ্ছি মনে হচ্ছে”।
সীমন্তিনী বলল, “নারে ঠিক বাড়ি যাচ্ছি না। তোকে সেদিন বলেছিলুম না যে নীতার জন্যে একটা কাজের ব্যবস্থা করবার চেষ্টা করছি। সে ব্যাপারেই একটু মার্কেটে যাচ্ছি রে। একটু আগেই তো আমি অফিস থেকে বেরোলাম”।
রচনা বলল, “ও তা বেশ। নীতাদি একটা কাজ পেয়ে গেলে বেশ ভাল হবে। তবে দিদিভাই তুমি কি বাজারে পৌঁছে গেছ নাকি? না মানে একটা কথা বলতুম তোমাকে। এখন সময় হবে”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ বল না। বাজারে পৌঁছতে আরও মিনিট পনের লাগবে আমাদের”।
রচনা বলল, “জানো দিদিভাই, আজ বৌদি আবার আমাদের বাড়ি এসেছিলেন”।
সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোন বৌদি রে? ওই দাদাভাই যার ওখানে কাজ করে, সেই মহিমা মালহোত্রা না কি, সে”?
রচনা বলল, “হ্যাঁগো দিদিভাই, তিনিই। তার সাথে কথায় কথায় তোমার কথা উঠতেই তোমার ভাই বলে ফেলেছেন যে তুমি কদিন আগেই কলকাতা এসেছিলে। আমাদের ফ্ল্যাটেই চারদিন ছিলে। সে’কথা শুনে ভদ্রমহিলা আমাদের ওপর খুব অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাইনি কেন, তার সাথে তোমার আলাপ করালাম না কেন, এসব নিয়ে খুব দুঃখ করছিলেন। আর তোমার সাথে কথা বলবেন বলে তিনি তোমার ফোন নাম্বারও চেয়েছিলেন আমাদের কাছে। কিন্তু তোমার কথা মতই আমরা তাকে তোমার কন্টাক্ট নাম্বার দিই নি। এটা সেটা বলে বুঝিয়ে দিয়েছি যে কোনও আননোন নাম্বার থেকে কল গেলেও তুমি সে কল রিসিভ কর না। কিন্তু তার আগ্রহ দেখে আমরা শেষ পর্যন্ত তাকে বলেছি যে আমরা তোমাকে তার কথা বললে তুমি নিজেই তাকে ফোন করবে। ও দিদিভাই, আমরা কি ভুল কিছু করেছি? তুমি কি রাগ করলে”?
সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “তোরা কি তাকে বলে দিয়েছিস যে আমি পুলিশে কাজ করি”?
রচনা তাড়াতাড়ি বলল, “না না দিদিভাই, আমরা তাকে এ’কথা বলিনি। আমরা শুধু তাকে বলেছি যে তুমি এখনও বিয়ে থা করনি। আর সরকারি অফিসের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা পদে তুমি কাজ কর। আর তোমার পুরো নামটাও তাকে আমরা বলিনি। শুধু মন্তি বলা হয়েছে”।
সীমন্তিনী একটু ভেবে বলল, “সে কি আমার বিয়ের ব্যাপারে কোন ছেলের সম্মন্ধ আনতে চাইছে নাকি”?
রচনা এবার হেসে বলল, “তা তো তিনি আমাদের বলেন নি দিদিভাই। তবে তেমন আশা থাকলেও যে সে আশায় গুড়ে বালি, তা তো আমি জানিই। তবে উনি বলছিলেন যে তোমার সাথে কথা বলতে তার ভীষন ইচ্ছে করছে”।
সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “আমি যে তাকে ফোন করব এ ব্যাপারে তোরা তাকে ঠিক কী বলেছিস বল তো”?
রচনা বলল, “তেমন বিশেষ কিছু বলিনি দিদিভাই। বলেছি যে কলকাতায় তিনিই যে আমাদের সবথেকে কাছের সবচেয়ে প্রিয়জন সে’কথা তুমিও জানো। আর আমাদের যারা ভালবাসেন তাদের তুমিও ভালবাস। তুমি তোমার দাদাভাইকে সবচেয়ে বেশী ভালবাস শুনেই তিনি তোমার সাথে কথা বলতে চাইছিলেন। তোমার ফোন নাম্বার চেয়েছিলেন। কিন্তু তোমার আগের কথাগুলো আমাদের মনে ছিল বলেই তাকে আমরা তোমার পুরো নামটা বলিনি। তুমি যে পুলিশে কাজ কর এ কথাও বলিনি। আননোন নাম্বারের ফোনকল তুমি রিসিভ করবে না বলেই তাকে তোমার ফোন নাম্বার দিলেও কাজের কাজ কিছু হবে না, এভাবে বুঝিয়েই আমরা তোমার ফোন নাম্বারও দিই নি। তবে আমি তাকে বলেছি যে আমি তোমাকে অনুরোধ করব তার সাথে কথা বলতে। আর আমার অনুরোধে তুমি নিশ্চয়ই তাকে ফোন করবে। শুধু এ কথাগুলোই বলেছি”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, তার কন্টাক্ট নাম্বারটা আমাকে এসএমএস করে পাঠিয়ে দে। আমি বাড়ি গিয়ে তাকে ফোন করব’খন। আর শোন তাদের বাড়ির ল্যান্ডলাইন নাম্বারটাও পাঠাস”।
রচনা খুশী হয়ে বলল, “হ্যাঁ তা পাঠাচ্ছি। কিন্তু দিদিভাই, বৌদির মোবাইল আর ল্যান্ডলাইন সব ফোনই সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত উনি যোগাভ্যাস করেন। তাই তুমি সাতটার পর তাকে ফোন কোরো”।
সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি সাতটার পরেই তাকে ফোন করব। তা তোরা দুটিতে কেমন আছিস বল তো? দাদাভাই ভাল আছে তো”?
রচনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই, আমরা দুজনেই ভাল আছি। আচ্ছা দিদিভাই, দিদি কেমন আছে গো? নীতাদি আর লক্ষ্মীদি তার সাথে ভাল ব্যবহার করছে তো”?
সীমন্তিনী বেশ খুশী খুশী গলায় বলল, “ওই দু’ পাগলীর কথা আর বলিস নে রচু। অর্চুকে ওরা মাথায় করে রাখবে না বুকে করে রাখবে, এ যেন তারা বুঝতেই পারছে না। সব সময় অর্চনার সাথে নানারকম গল্প করতে থাকে। লক্ষ্মীদি তো অর্চুকে কি খাওয়াবে না খাওয়াবে তা নিয়েই দিশেহারা হয়ে গেছে প্রায়। আর জানিস? লক্ষ্মীদি কি নামে ডাকে অর্চুকে? সোনাদি। একটা মূহুর্তও অর্চুকে ওরা একা থাকতে দেয় না। আর অর্চুকে দেখেও খুব ভাল লাগছে রে রচু। আমার এখানে যদি একটা মাস ওকে রাখতে পারি তাহলে মনে হয় ওকে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ করে তুলতে পারব। আর লক্ষ্মীদি নীতাও আমাকে এ ব্যাপারে খুব ভাল সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু একটা কথাই ভাবছি। নীতাকে খুব সম্ভবতঃ সামনের মাসের এক তারিখ থেকেই ওখানে কাজে যোগ দিতে হবে। এখন যেমন নীতা সারাক্ষণ রচুর সাথে থাকতে পারছে, তখন তো আর তেমনটা পারবে না। আর ও হয়ত রাত আটটা নটার আগে কাজ থেকে ছুটিও পাবে না”।
রচনা বলল, “সে নিয়ে আমার মনে কোন চিন্তা নেই। তুমি নিজেই সব সামলে নেবে এ বিশ্বাস আমার আছে। আমার দিদিভাই কি আমার দিদির অবহেলা হতে দেবেন”?
সীমন্তিনী সামনের রাস্তার দিকে দেখতে দেখতে বলল, “হয়েছে, দিদিভাইকে আর গ্যাস দিয়ে ফোলাতে হবে না তোমাকে। এই শোন, আমি আমার গন্তব্যে এসে পৌঁছে গেছি রে। ছাড়ছি এখন। পরে রাতে কথা হবে আবার” বলে ড্রাইভারকে বলল, “রামসিং, বসাক গারমেন্টসের সামনে গাড়ি সাইড করে রেখো”।
**********************
______________________________