Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 136)

আজ রবিবার। অফিস ছুটির দিন। তাই আজ বেশ কিছু এসকর্ট পাঠাতে হবে অনেকের কাছে। রতীশ কেবিন কোচিং শেষ করে বেলা পৌনে এগারটা নাগাদ মহিমাকে বলে চলে গেছে। মহিমা মনে মনে ভেবেছিল আজ সে রতীশের ফ্ল্যাটে গিয়ে তার সাথে আর রচনার সাথে কথা বলবে। কিন্তু প্রায় ডজন খানেক ক্লায়েন্টের কাছে এসকর্ট পাঠাবার বন্দোবস্ত করতে করতে বেলা প্রায় একটা বেজে গেল। যখন তার এ বেলার কাজ শেষ হল তখন ভেবে দেখল বরানগর পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা দুটো পেড়িয়ে যাবে। আর এই দুপুরে রচনা তাকে না খাইয়ে কিছুতেই তাদের ফ্ল্যাট থেকে বেরোতে দেবে না। তাই সে মনে মনে ভাবল, বাড়ি গিয়ে স্নান খাওয়া দাওয়ার পর কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে বিকেল তিনটে নাগাদ সে বরানগর যাবে।

দুপুরের পর রতীশ আর রচনা যখন তাদের বেডরুমে শুয়ে শুয়ে গল্প করছিল তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। কলিং বেলের শব্দে দু’জনেই যথেষ্ট অবাক হয়েছিল। রচনা প্রায় লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে নিজের ত্রস্ত ব্যস্ত শাড়িটাকে ঠিকঠাক করতে করতে বলল, “সোনা, আমার কপালের সিঁদুরটা ঘেঁটে গেছে। আমি বাথরুমে ঢুকছি। তুমি গিয়ে দেখো এ অসময়ে আবার কে এল”।
 

রতীশ বিছানা থেকে নেমে আয়নায় নিজের মুখে বা গালে কোন সিঁদুরের দাগ নেই দেখেই লিভিং রুমের দিকে এগিয়ে গেল। রচনা বাথরুমে ঢুকে গিয়ে নিজের মুখ ধুতে লাগল।

রতীশ দরজার ম্যাজিক আইতে চোখ লাগিয়ে মহিমাকে দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি দড়জা খুলে অবাক গলায় জিজ্ঞেস করল, “একি বৌদি? আপনি এ সময়ে”?

মহিমা মুখে হাসি টেনে এনে বলল, “একটা কাজে এদিকে আসতে হয়েছিল ভাই। কাজটা খুব অল্প সময়েই শেষ হয়ে গেল। তাই ভাবলাম, অনেকদিন ধরে রচনাকে দেখিনি। একবার দেখা করে যাই। তা রচনা কোথায়? ঘুমোচ্ছে নাকি”?
 

রতীশ জবাব দিল, “না না বৌদি। ঘুমোয়নি। ও বাথরুমে আছে। আপনি বসুন প্লীজ। ও এক্ষুনি এসে পড়বে। আর আপনাকে দেখেও খুব খুশী হবে” বলতে বলতে দেয়ালে লাগানো সুইচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেল। সিলিং ফ্যান চালিয়ে দিয়ে মহিমার উল্টোদিকের সোফায় বসে জিজ্ঞেস করল, “আপনি কি সেন্টার থেকে বেরিয়েই এদিকে এসেছিলেন নাকি বৌদি? তাহলে তো লাঞ্চ করা হয়নি আপনার”!

মহিমা নিজের হাতব্যাগ থেকে রুমাল বের করে নিজের গাল আর গলা মুছতে মুছতে জবাব দিল, “না না ভাই, তা নয়। আমি বাড়িতে লাঞ্চ করে তারপরেই বেড়িয়েছিলাম”।

রচনা বাথরুম থেকে বেরিয়েই লিভিং রুম থেকে মহিমার গলার আওয়াজ পেয়ে যতটা খুশী হল তার চেয়ে বেশী অবাক হল। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কপালে সিঁদুরের ফোঁটা লাগিয়েই ছুটে লিভিং রুমে এসে মহিমার কাছে এসে উৎফুল্ল গলায় বলল, “ওমা বৌদি, তুমি”?

মহিমা রচনাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুমু খেয়ে আদর করে বলল, “হ্যাঁগো। তোমাকে বেশ কটা দিন ধরে দেখিনি। তাই মনটা খুব চাইছিল তোমাকে দেখতে। আজ এদিকে অন্য একটা কাজে আসতে হল। তাই কাজটা শেষ করেই তোমাকে দেখতে এলাম ভাই। বল, কেমন আছ”?

রচনা মহিমার একটা হাত নিজের দু’হাতে নিয়ে বলল, “ভাল আছি বৌদি। কিন্তু একটু দাঁড়াও। আমি আগে তোমার জন্যে একটু শরবৎ বানিয়ে আনি। গরমে ঘেমে নেয়ে এসেছ। তুমি ততক্ষণ হাত মুখ ধুয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর কথা হবে”।

মহিমার মৃদু আপত্তি সত্বেও রচনা তাকে জোর করে বাথরুমের দিকে টেনে নিয়ে গেল। বাথরুমের দরজা খুলে দিয়ে বলল, “সাবান, হ্যান্ডওয়াস, ফেসওয়াস, টাওয়েল সব রাখা আছে। ভাল করে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। একদম হেজিটেট করবে না। আমি শরবৎ তৈরী করছি”।
 

মহিমা বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে রচনাকে কিচেনে দেখে সেখানে চলে এল। রচনা তাকে দেখে শরবতের সাথে বরফ মেশাতে মেশাতে মিষ্টি হেসে বলল, “আজ প্রচণ্ড গরম পড়েছে, তাই না বৌদি। আমাদের ঘরে তো এসি নেই। তোমার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে না গো”?
 

মহিমা রচনার পেছনে দাঁড়িয়ে তার দুটো কাঁধ ধরে গালে গাল ঘসতে ঘসতে বলল, “কিচ্ছু কষ্ট হচ্ছে না আমার। অত ভেবো না তো তুমি। তোমাকে দেখেই তো আমার শরীর মন জুড়িয়ে যাচ্ছে গো। আর এটা কিসের শরবৎ বানাচ্ছ তুমি বলো তো”?

রচনা হাতের কাজ করতে করতেই জবাব দিল, “লস্যি বানাচ্ছি বৌদি। গরমের মধ্যে খেতে খুব ভাল লাগবে দেখো। কিন্তু বৌদি, এদিকে যদি তোমার আসবারই দরকার ছিল, তাহলে লাঞ্চের আগে এলেনা কেন? আমাদের সাথে লাঞ্চ করলে আমাদের খুব ভাল লাগত। এর আগে যেদিন এসেছিলে সেদিনও বিনা নোটিশে এসেছিলে। তোমাকে সাধারণ খাবার খাইয়েছিলাম। আজ যদি তোমার দেবরকে আগে থাকতে বলে দিতে তাহলে তোমার জন্যে একটু ভালো আয়োজন করতে পারতাম”।

মহিমা আগের মতই রচনার গালে গাল লাগিয়ে জবাব দিল, “তোমার হাতের রান্নার স্বাদ এখনও আমার মুখে লেগে আছে রচনা। আর তুমি বলছ সাধারণ খাবার? কিন্তু আজ যে এদিকে আসব সেটা সত্যিই আগে থেকে প্ল্যান করা ছিল না। হঠাৎ একটা জরুরী কাজ পড়ে যাওয়াতেই আসতে হল। আর এদিকে এসে তোমার সাথে দেখা না করে চলে যাব, তাতে মনটা সায় দিচ্ছিল না। তাই তো শুধু তোমাকে একটু চোখের দেখা দেখতেই চলে এলাম। কিন্তু তোমরা দু’জনেই হয়ত খেয়ে দেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলে। অসময়ে এভাবে এসে তোমাদের ডিসটার্ব করে ফেললাম”।

রচনা হাঁ হাঁ করে উঠে বলল, “এমা, না না বৌদি। একদমই তা নয়। আমরা কেউই দিনের বেলায় ঘুমোই না। আমরা তো এমনি এটা সেটা নিয়ে কথা বলে সময় কাটাচ্ছিলাম। তুমি আসাতে তো ভালই হল। এখন তিনজনে মিলেই গল্প করতে পারব। আচ্ছা বৌদি। এ ঘরে ফ্যান নেই, গরম বেশী লাগে। আর দু মিনিটেই আমার কাজ শেষ হয়ে যাবে। তুমি বরং ততক্ষণ তোমার দেবরের সাথে কথা বলতে থাক। লিভিং রুমটায় গরম এ রুমের চাইতে অনেক কম”।

মহিমা একটু হেসে বলল, “আমার দেবরের সাথে দেখা তো আমার রোজই হয়। আজও হয়েছে। আমি তো তোমার সাথে দেখা করতে এখানে এসেছি। আর তুমি আমাকে তোমার কাছ থেকে দুরে চলে যেতে বলছ”?

রচনা নিজের কাজ থামিয়ে মহিমার দিকে ঘার বেঁকিয়ে উত্তর দিল, “এমা, দেখেছ? আমি কি সেটা মিন করে বলেছি নাকি? ছিঃ ছিঃ। আমাকে তুমি এই ভাবলে বৌদি? এ ঘরের গরমে তোমার কষ্ট হবে বলেই ও’কথা বলছিলাম”।

মহিমা একহাতে রচনার একটা গাল টিপে দিয়ে বলল, “আরে বাবা তোমার সাথে একটু ঠাট্টা করছিলাম শুধু। কিছু মনে করো না ভাই। তা একটা প্রাইভেট কথা জিজ্ঞেস করতে পারি তোমাকে? সিরিয়াসলি। কিছু মনে করবে না তো”?
 

রচনা আবার কাজ করতে করতে বলল, “না কিচ্ছু মনে করব না। বল, কী জানতে চাও”?

মহিমা বলল, “তোমাদের বিয়ের তো তিন বছর পেরিয়ে গেছে। আমি তো বিয়ের প্রথম বছরের মধ্যেই মা হয়ে গিয়েছিলাম। আমার এই দেবরানীটা কবে মা হচ্ছে শুনি”? বলে রচনার চিবুকটা ধরে নাড়িয়ে দিল।

রচনা একটু সময় চুপ করে থেকে লাজুক গলায় জবাব দিল, “কি বলব বৌদি তোমাকে। আসলে আমরা তো এ বছরই বাচ্চা নেবার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু জানোই তো, এখন আমাদের সময়টা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। যেটা ভেবে আমরা কলকাতা এসেছিলাম, তোমার দেবর যদি তেমন ভাবে একটা যোগা সেন্টার খুলতে পারতেন, তাহলে হয়ত আর কোন সমস্যা হত না। তবু তোমার ওখানে ও কাজের সুযোগ পাওয়াতে কিছুটা হলেও সামলে উঠেছেন। ওদিকে যে টাকাটা লুট হয়ে গিয়েছিল পুলিশ সেটা উদ্ধার করেছে শুনেছি। এখন আবার সে নিজের সেন্টার খুলবার চেষ্টা করতে পারবে। কিন্তু আমাদের এই চরম বিপদের দিনে তুমি ওকে কাজ দিয়ে যে উপকার করেছ, সে’কথা ভেবেই ও এখনই তোমার সেন্টারে কাজ করা ছেড়ে দিতে চাইছে না। আর আমি নিজেও সেটা চাই না। তাই আমরা ভেবেছি যে আর কয়েকটা মাস তোমার ওখানে কাজ করার পর তুমি যদি ওকে ছাড়তে রাজী হও, তখন সে কোথাও একটা কমপ্লেক্স ভাড়া নিয়ে নিজের যোগা সেন্টার খুলবে। আর ভগবান চাইলে তখনই হয়ত আমরা আবার বাচ্চা নেবার কথা ভাবতে পারব” বলে একটু থেমে প্রায় সাথে সাথেই আবার বলল, “তোমার ওখানে কাজ ছেড়ে দেবে বলাতে তুমি রাগ করলে বৌদি”?
 

মহিমা রচনার কাঁধে তার থুতনী চেপে ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “নাগো বোন, রাগ করিনি। রতীশ যে কোন না কোন সময় আমার ইনস্টিটিউট ছেড়ে যাবেই এটা তো আগে থেকেই জানা আমার। তাই ওকে কাজ দেবার সময়েই আমি সেকথা পরিস্কার বলে দিয়েছিলাম যে ওর যখন খুশী ও আমার কাজ ছেড়ে চলে যাবার সুযোগ পাবে। কিন্তু এ ক’টা দিনে রতীশকে আর তোমাকে এমন ভালবেসে ফেলেছি যে তোমার কথায় মনে একটা ধাক্কা লাগল আমার। তোমরা আমাকে ছেড়ে যাবে, এ’কথা শুনেই বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠল গো”।

রচনার হাতের কাজ ততক্ষণে শেষ হয়ে এসেছে। সে তিনটে গ্লাসে লস্যি ঢেলে ঘুরে দাঁড়িয়ে মহিমার মুখোমুখি হয়ে বলল, “তোমার মত হিতাকাঙ্ক্ষী এ কলকাতায় তো আমাদের আর কেউ নেই গো বৌদি। তাই তোমাকে ছেড়ে যাবার কথা তো আমরা ভাবতেই পারি না। তোমাকে সারা জীবন একজন পরম বন্ধু হিসেবে আমাদের পাশে দেখতে চাই। ও শুধু তোমার ওখানে কাজটাই ছেড়ে দেবে। নিজের সেন্টার খুললে তো আর তোমার ওখানে কাজ করা ওর পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু তোমার সাথে আমাদের যে এমন একটা সুসম্পর্ক তৈরী হয়েছে, সেটা আমরা কিছুতেই নষ্ট হতে দিতে চাই না”।
 

মহিমা ম্লান হেসে বলল, “জানি রে বোন। আমার ওখানে কাজ না ছাড়লে তো নিজের সেন্টার খোলা সম্ভব হবে না রতীশের পক্ষে। আর রতীশের স্বপ্নপূরনে আমিও কোন বাঁধা দেব না। বাঁধা দেবার তো প্রশ্নই ওঠে না বরং আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, সমস্ত ভাবে ওকে সাহায্যই করব। ওর যা প্রয়োজন হয় আমি তাই ওকে দেব। আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে এমনকি টাকা পয়সা দিয়েও আমি ওকে সাহায্য করতে রাজী আছি। কিন্তু রচনা বোন আমার, তোমরা আমাকে ভুলে যেও না। আমার সাথে তোমরা যোগাযোগটা কিন্তু রাখবে। আর আমাকেও তোমাদের ফ্ল্যাটে আসতে বারণ কোর না, প্লীজ”।

রচনা এবার দু’হাতে মহিমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “অমন কথা স্বপ্নেও ভেব না বৌদি। তোমার মত বন্ধু তো আমাদের আর কেউ নেই। তোমার দেবর চিরদিন তোমার দেবর তোমার ভাই হয়েই থাকবে। আর আমিও চিরদিন তোমার ছোট বোন হয়েই থাকব। তোমার আর আমাদের সম্পর্ক এমনই থাকবে। আমিও তোমাকে এ কথা দিলুম আজ”।

মহিমা রচনাকে আদর করে চুমু খেয়ে বলল, “তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বোন। আমার বুকের একটা বোঝা তুমি আজ হাল্কা করে দিলে”।

রচনা মৃদু হেসে বলল, “হয়েছে আর মন খারাপ কোর না। এবার ও ঘরে চলো। লস্যির ঠান্ডাটা কেটে যাচ্ছে। ওঘরে গিয়ে সবাই একসাথে বসে গল্প করব, এসো”।

রচনার হাতের সুস্বাদু লস্যি খেতে খেতে তিনজনে মিলে টুকটাক কথাবার্তা বলে চলছিল। একসম মহিমা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ভাই, তোমাদের বাড়ি তো শুনেছি রাজগঞ্জে। আর রচুর বাপের বাড়ি কালচিনিতে। কলকাতায় তোমাদের কোন আত্মীয় স্বজন নেই”?

রতীশ জবাব দিল, “না বৌদি, কলকাতায় আমাদের আত্মীয় স্বজন কেউ তো নেইই, এমনকি চেনা পরিচিত বলতেও তেমন কেউ নেই। ওই রবিশঙ্কর বলে লোকটার সাথেই কেবল আগে থেকে জানাশোনা ছিল আমাদের পরিবারের। তার কথায় ভরসা করেই এখানে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে আসবার পরের দিনই সে আর তার সাথে আরেকজন মিলে আমার দু’লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছিল। অনেক খুঁজেও তার আর দেখা পাইনি। বেলেঘাটায় তার বাড়িতে গিয়েও তাকে ধরতে পারিনি। তখনই ভগবানের আশীর্বাদের মত আপনি এলেন আমাদের জীবনে। এখন এ কলকাতায় কেবল আপনিই আছেন আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হিতৈষী। অবশ্য এ জন্যে বিমল আগরওয়ালার প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ”।

মহিমা রতীশের কথা শুনে মনে মনে কিছু একটা ভেবে আবার জিজ্ঞেস করল, “বিমলের কাছে আমিও কৃতজ্ঞ ভাই। বিমল তোমাকে আমার কাছে না গিয়ে গেলে আমি কি এমন একটা হীরের টুকরোর খোঁজ পেতাম কখনো? তা ভাই বিমলের সাথে কি তোমাদের আগে থেকে কোনও পরিচয় ছিল”?

রতীশ বলল, “না বৌদি, একেবারেই না। তবে রবিশঙ্কর অন্য এক ভদ্রলোককে বিমল আগরওয়ালা সাজিয়েই আমার সাথে একটা কমপ্লেক্স লিজ দেবার ব্যাপারে আলোচনা করেছিল। যেদিন আমি ওদের হাতে টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলাম, তার পরের দিনই আমি জানতে পারলাম যে আসল বিমল আগরওয়ালা অন্য লোক। আর তার সাথে আমার সেদিনই আলাপ”।

মহিমা অবাক হয়ে বলল, “ওঃ মাই গড! এত বড় জোচ্চুরি করেছে ওরা! কিন্তু ওরা যে কমপ্লেক্সটা তোমাকে লিজ দিতে চেয়েছিল সেটা তাহলে কার ছিল”?
 

রতীশ বলল, “সেটা আসলে এই বিমল আগরওয়ালারই। আমিও তার কিছুদিন আগে আরেকবার এসে আশেপাশের লোকজনদের কাছে শুনেছিলাম যে ওই কমপ্লেক্সটার মালিক বিমল আগরওয়ালা। তাই রবি শঙ্কর ওই ভুয়ো লোকটাকে বিমল আগরওয়ালা বলে পরিচয় করিয়ে দিতে আমার মনে কোনও সন্দেহ হয়নি। আমি তাকেই কমপ্লেক্সের মালিক ভেবে তার সাথে ডিলটা করেছিলাম। ছেলের কলেজের অ্যাডমিশনের জন্য টাকাটা তার সেদিনই দরকার ছিল বলে সরল বিশ্বাসে তার হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আর সেই রবিশঙ্করও ভরসা দিয়েছিল যে কোনরকম উল্টোপাল্টা কিছু হবে না। পরের দিন সকালেই লিজ এগ্রিমেন্ট সাইন হয়ে যাবে। কিন্তু পরের দিন আর তাদের কাউকে দেখা গেল না। দেখা পেলাম আসল বিমল আগরওয়ালার। তার কাছে গিয়েই আমি রবিশঙ্কর আর তার সাথের লোকটার ব্যাপারে কথা বলতে বলতে পুরো ঘটণাটা খুলে বলেছিলাম, সব কথা শুনে তিনি শুধু সমবেদনাই জানিয়েছিলেন আমাকে। আর তার নাম ভাড়িয়ে কেউ আমাকে ঠকিয়েছে বলে তিনি খুব অনুশোচনাও করছিলেন। তিনি আমাকে থানায় গিয়ে ডাইরী করবার উপদেশ দিয়ে তার কার্ড দিয়ে বলেছিলেন যে প্রয়োজন হলে যেন আমি তার সাথে দেখা করি। সেদিন সন্ধ্যের পর রবিশঙ্কর আর তার সাথের ওই লোকটার ব্যাপারে খবরাখবর করতেই আমি তার অফিসে গিয়েছিলাম। আর তখনই তিনি আমাকে আপনার ওখানে কাজের খবর দিয়েছিলেন”।

মহিমা রতীশের কথাগুলো খুব মন দিয়ে শুনছিল। রতীশ থামতেই সে বলল, “তুমি কমপ্লেক্সের ভেতরটা দেখতে চাও নি কখনও”?

রতীশ জানাল, “হ্যাঁ বৌদি, তার মাস দুয়েক আগে সে লোকটা আমাকে কমপ্লেক্সের ভেতরে নিয়ে সব কিছু দেখিয়েছিল। আমিও দেখে শুনে খুশী হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম যে খুব বড়সড় না হলেও একটা নতুন সেন্টার খুলবার পক্ষে কমপ্লেক্সটা মোটামুটি মানানসই হবে। তাই তো দরদাম করে দু’লাখ টাকায় এক বছরের জন্য সেটা লিজ নিতে রাজী হয়েছিলাম। আর যেদিন আমি তাদের টাকাটা দিলাম, সেদিনও তাদের সাথে আমি কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে বসে কথাবার্তা বলেছিলাম। কিন্তু তার পরের দিনই জানতে পারলাম যে সে কমপ্লেক্সটা অন্য আরেক জনের। আরেক বিমল আগরওয়ালার”।

মহিমা অবাক হয়ে বলল, “এটা কি করে সম্ভব? কমপ্লেক্সটা যদি তার না হবে তাহলে ওই কমপ্লেক্সের চাবি তার কাছে গেল কি করে”?

রতীশ বলল, “সে প্রশ্নের জবাব নিতেই আমি সেদিন রাতে বিমলজীর অফিসে গিয়েছিলাম বৌদি। সে আমাকে আদর আপ্যায়ন করে কফি খাইয়ে আমাকে জানিয়েছিলেন যে ওই কমপ্লেক্সের তালার দুটো চাবি আছে। একটা চাবি তার অফিসের একটা লকারে রাখা থাকে। আর ওই লকারের চাবি শুধু তার কাছেই থাকে। তাই অন্য কেউ সে লকার খুলতেই পারে না। আর অন্য চাবিটা তার ব্যাঙ্কের লকারে। তাই অন্য কারুর হাতে এ চাবি যাবার কোন সম্ভাবনাই নেই। তাই কেউ যদি তার কমপ্লেক্স খুলে আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে থাকে, তাহলে সে কোন না কোনভাবে ওই তালার ডুপ্লিকেট চাবি বানিয়ে নিয়েছিল। আর এ’কথাও বলেছিলেন যে তিনি রবিশঙ্কর প্রসাদ নামে কাউকে চেনেন না। কিন্তু ব্যাপারটা আজও আমার মাথায় ঢুকছে না বৌদি”।
 

মহিমা বেশ কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে স্বগতোক্তির মত করে বলল, “যে চাবি বিমল ছাড়া আর কারুর হাতে যাবার সম্ভাবনা নেই, সে তালার চাবি ওই ঠকবাজ গুলো পেল কি করে? আশ্চর্য তো”।

এবার রচনা বলল, “বৌদি, এ কথাটাই আমি সেদিন থেকে তোমার ভাইকে আর পুলিশকে বলে আসছি। কিন্তু পুলিশ সেভাবে এ কথাটার ওপর কোনও গুরুত্বও দেয় নি। কিন্তু আমার মনটা সেদিন থেকেই বলছিল যে ওই ঘটণার পেছনে বিমল আগরওয়ালার কোন না কোন হাত নিশ্চয়ই ছিল। তাই তো আমি ওকে বলেছি যে ওই লোকটার সাথে যেন আর যোগাযোগ না রাখে”।
 

মহিমাও মনে মনে ভেবে এতক্ষণে নিশ্চিত যে রচনার কথা মিথ্যে হতে পারে না। হঠাতই তার মনে হল আচ্ছা বিমল কি কোথাও রচনাকে চাক্ষুস দেখেছে? কথাটা মনে হতেই সে রচনার দিকে চেয়ে বলল, “আচ্ছা রচনা, তুমি কি বিমল আগরওয়ালাকে কখনও দেখেছ কোথাও”?
 

রচনা জবাব দিল, “না বৌদি, আমি তাকে কক্ষনো দেখিনি কোথাও। আমি শুধু তোমার ভাইয়ের মুখে তার নামটাই শুনেছি। তবে তার ভিজিটিং কার্ড একটা সে দিয়েছিল তোমার ভাইকে। তাতে তার ছবিও ছিল। সে ছবি আমি দেখেছি। কিন্তু তাকে চাক্ষুস কখনো দেখিনি আমি”।

মহিমা সাথে সাথেই আবার জিজ্ঞেস করল, “বিমল কি তোমাকে কোথাও দেখেছে বলে মনে হয়”?
 

রচনা এবার একটু ভেবে একবার রতীশের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার তো তেমন মনে হয় না। মানে আমি তো আর ওই কমপ্লেক্সে বা বিমল আগরওয়ালার অফিসে কখনও যাই নি। তাছাড়া কলকাতা আসবার পর আমি খুব বেশী এদিক সেদিকেও ঘোরাফেরা করিনি। তবে বৌদি, দু’চার দিন যেখানে যেখানে গেছিও সেসব জায়গায় বিমল আগরওয়ালা ছিল কিনা, বা সে আমাকে দুর থেকে দেখেছে কি না, তা তো আর জোর দিয়ে বলা যায় না। তবে সেভাবে দেখে থাকলেও আমার সাথে তার মুখোমুখি দেখা কখনোও হয়নি। কারন তেমন হলে তোমার ভাই আমাকে নিশ্চয়ই বলতেন যে ওই লোকটাই বিমল আগরওয়ালা”।
 

সাথে সাথে রতীশও রচনার কথায় সায় দিয়ে বলল, “হ্যাঁ বৌদি, রচু যা বলছে তা ঠিকই। কারন ও তো একা কোনদিন রাস্তায় বেরোয় না। যে ক’দিন বেড়িয়েছে সে আমার সাথেই বেড়িয়েছে। সে কদিন বিমল আগরওয়ালাকে আমরা ধারে কাছে কোথাও দেখিনি। তবে একদিন ও আমার বোনের সাথে বেরিয়েছিল। সেদিন আমি সঙ্গে ছিলাম না। তবে সেদিনও বিমল তাকে দেখেছে বলে মনে হয় না। কারন ওরা আমাদের ফ্ল্যাটের সামনের মোড় থেকেই দিদির এক বন্ধুর গাড়িতে উঠেছিল। আর ফেরার পথেও ফ্ল্যাটের সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমেছে। তাই সেদিনও বিমলের সাথে ওর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না”।
 

মহিমা রচনা আর রতীশের কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “ব্যাপারটা কিছুতেই পরিস্কার হচ্ছে না। আচ্ছা সে’কথা থাক এখন। আচ্ছা ভাই, একদিন তো তুমি আমায় বলেছিলে যে তোমরা ছ’ ভাই বোন। এছাড়াও বাড়িতে মা বাবা, কাকা কাকিমারা আছেন। এদের মধ্যে কে তোমাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে বলো তো? মা”?


______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 11-03-2020, 10:18 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)