11-03-2020, 10:17 PM
(Update No. 135)
বিগত কয়েকটা দিন ধরে মহিমা বড় দুশ্চিন্তায় আছে। বিমল আগরওয়ালার শ্যেনদৃষ্টি রচনার ওপর পড়েছে সেটা জানবার পর থেকেই সে আর নিজের মনকে শান্ত রাখতে পারছে না। বিমলের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ছ’বছর আগে। ২০০৬ সালে তার যোগা ইনস্টিটিউট চালু হবার কয়েক মাস পরেই। তখন তার মেয়ে রিতিকা হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছিল। মহিমা আর অরবিন্দ দু’জনেই চাইছিল ছেলে মেয়েদুটোকে ভাল উচ্চশিক্ষা দিতে। রিতিকার ইচ্ছে ছিল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়ার। তাই অনেক খোঁজাখুঁজি খবরাখবর করবার পর আমেদাবাদের একটা ভাল প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে সেখানে রিতিকার অ্যাডমিশনের বন্দোবস্ত করেছিল। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন, কোর্স ফি, এক্সাম ফি, হোস্টেল একোমোডেশন আরও নানা খরচ খরচাপাতি মিলিয়ে প্রায় কুড়ি লাখ টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। তখন তার স্বামী অরিন্দমের ব্যবসাটাও তেমন দাঁড়ায় নি। আর যোগা ইনস্টিটিউটটা তার মাস পাঁচ ছয় আগেই শুরু করা হয়েছিল। তাই স্বামী স্ত্রী কারো হাতেই তেমন পুঁজি ছিল না। কিন্তু দুজনেই চাইছিল তাদের মেয়েটা ওই ইনস্টিটিউটেই পড়ুক। তখন অরিন্দমের কাছে ব্যাপারটা গোপন রেখেই টাকার বিনিময়ে সে নিজের যুবতী শরীরটাকে বিভিন্ন কামপিপাসু পুরুষের হাতে তুলে দিতে শুরু করেছিল। বিমলও ছিল তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু তখন সে এক এক দিনে তিরিশ চল্লিশ হাজার টাকাই উপার্জন করতে পারত। কিন্তু রিতিকার অ্যাডমিশনের জন্য পনেরো দিনের ভেতর কুড়ি লাখ টাকা আমেদাবাদের ইনস্টিটিউটে জমা দেবার নোটিস পেয়েই সে বিমলের কাছে হাত পেতেছিল। কামুক বিমল পাক্কা ব্যবসাদার হলেও মহিমাকে সেদিন ফিরিয়ে দেয়নি। সে বলেছিল পুরো টাকাটাই সে মহিমাকে দেবে, আর সে টাকার ওপর মহিমাকে কোনও সুদও দিতে হবে না। কিন্তু মহিমাকে তার একটা শর্ত মানতে হবে। বিমল সারাজীবন ধরে মহিমার সুন্দর শরীরটাকে মুফতে প্রতি মাসে দু’দিন করে ভোগ করতে চেয়েছিল। মহিমা তাতে আপত্তি করবার মত কিছু দেখেনি। বাইশ বছর বয়সে অরিন্দমকে বিয়ে করবার পর থেকে সে স্বামী ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক না করলেও, বিয়ের আগে পর্যন্ত নিজের হাতখরচা মেটাতে সে অনেক ছোট বয়স থেকেই দিল্লীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পুরুষের সাথে যৌন সম্ভোগ করত। আর মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে তো সে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনের সাথে সম্ভোগে লিপ্তা হয়েছে। তাই একথোকে কুড়ি লক্ষ টাকা জোটাবার অন্য কোন পথ না পাওয়ায় সে বিমলের প্রস্তাবে রাজী হয়েছিল। সেই থেকেই প্রতি মাসে বিমল তাকে দু’দিন করে ভোগ করে আসছে। আর মেয়েকে আমেদাবাদ পাঠাবার দু’বছর বাদে ছেলেকে ব্যাঙ্গালোরে পড়তে পাঠাবার সময় আরও একুশ লাখ টাকার প্রয়োজন পড়েছিল। তখন বিমল পুরনো শর্তেই তাকে আরও পনের লাখ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। অবশ্য তারপর থেকে বিমল তাকে মাসে দু’দিনের বদলে তিনদিন করে ভোগ করতে শুরু করেছে। তখনই সে এসকর্ট ব্যবসায় অন্য ছেলেমেয়ে কাজে লাগাতে শুরু করেছিল। তাতে প্রচুর আয় হতে লাগল। বছর খানেকের ভেতরেই বিমলের পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা সে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তারপরের আরও দুটো বছর সে এসকর্ট ব্যবসায় নিজেকেও কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু তারপর সে নিজে গ্রাহকদের কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে তার আর কোনও অসুবিধে হয়নি, কারন অন্যান্য মেয়ে মহিলা আর পুরুষকে এসকর্টের কাজে লাগিয়েই তার প্রচুর আয় হত। তবে সে যে নিজেকে আর পরপুরুষদের হাতে একেবারেই সমর্পন করত না, তা নয়। এই সাতচল্লিশ বছর বয়সেও সে এখনও যথেষ্ট রূপবতী আর যৌন আবেদনময়ী। এখনও যে কোন বয়সী পুরুষ মানুষকে আকৃষ্ট করতে সে সক্ষম। এখনও বিমলের মত আরও অনেকেই তার শরীরটাকে পেতে চায়। কিন্তু সে নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। যে সব গ্রাহকরা তাকে চায় তাদের নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে বা অন্য কোন ছুতো দেখিয়ে অন্য কোনও এসকর্ট তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তবে নিজের এসকর্ট ব্যাবসায় যাতে তাকে প্রশাসনিক কোন ঝামেলায় পড়তে না হয়, সেজন্য তাকে বিভিন্ন মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার, আইনজীবি ও সরকারি অফিসারদের বিনে পয়সায় মনোরঞ্জন করে যেতেই হচ্ছে। নইলে তাকে এ ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। আর বিমলের শর্তপূরনও করে যেতে হচ্ছে তাকে।
বিমলের সাথে সম্ভোগে মহিমা নিজে যে খুব তৃপ্তি পায়, তা নয়। কিন্তু বিমলের উপকারের কথা মাথায় রেখেই সে এখনও বিমলের শর্তানুযায়ী তাকে নিজের যৌবন সঁপে দিচ্ছে। বিমলের স্ত্রী সবিতাও তার যোগা ইনস্টিটিউটের ক্লায়েন্ট। সে নিজেও মহিমার কাছ থেকে এসকর্ট চেয়ে নেয় মাঝে মাঝে। তবে তার পছন্দ তার ছেলের বয়সী আঠার ঊণিশ বছরের কচি কচি ছেলে। মহিমার এসকর্টের কাজে কুড়ি বছরের নিচে কেউ নেই। অমন কচি কাঁচাদের নিয়ে মহিমা ব্যবসা করে না। সবিতা তাই বেশীরভাগ সময় অন্য কোন মাধ্যমে কচি কাঁচা ছেলে যোগার করে নিজের যৌন বাসনা মেটায়। তবু সবিতা মাঝে মাঝে কুড়ি একুশ বছরের মেল এসকর্ট হায়ার করে থাকে মহিমার কাছ থেকে। কিন্তু সবিতার প্রতি মহিমার তেমন কোনও দায়বদ্ধতা না থাকলেও বিমলের কাছে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সারা জীবন বা বলা ভাল যতদিন তার দেহে যৌবনের লালিমা থাকবে ততদিন পর্যন্ত সময়ে সময়ে তাকে বিমলের অঙ্কশায়িনী হতেই হবে। সবিতার মুখেই সে শুনেছে যে অনেকটা মুটিয়ে যাবার ফলে তার স্বামী বিমল নাকি তার সাথে সম্ভোগ করে আর তৃপ্তি পায় না। তাই হয়ত বিমল এখনও মহিমার কাছে আসে। তবে মুটিয়ে গেলেও সবিতার চেহারার লালিমা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি তা মহিমা জানে। সে এটাও জানে যে বিমল শুধু তার কাছেই আসে না, মহিমা ছাড়াও অন্য অনেক মেয়ে মহিলার সাথেও তার যৌন সম্পর্ক আছে। অবশ্য যাদের হাতে পয়সা আছে তাদের মেয়ে যোগার করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। কিন্তু ওর কূনজর যে রচনার ওপরেও পরেছে তাতেই মহিমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
প্রথম দর্শনে রতীশের সুগঠিত সুঠাম শরীরটা দেখে মহিমার ভেতরেও এক মূহুর্তের জন্য যৌন ক্ষুধা জেগে উঠেছিল। মনে হয়েছিল এ ছেলেটার সাথে শরীরের খেলা খেলে খুব তৃপ্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু রতীশের সরল সুন্দর মুখশ্রী, ভদ্রতা আর সুমিষ্ট ব্যবহারে তার মনের সে ভাবনা উধাও হয়ে গিয়েছিল। কামের পরিবর্তে তার মনে নিখাদ স্নেহ আর মমতা জেগে উঠেছিল। আর রতীশ কাজে যোগ দেবার পর তার যোগা ইনস্টিটিউটের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে এ ক’টা দিনেই। আর রতীশকে যে সে নিজের ভাই বলে ডাকে সেটাও একেবারেই মেকি নয়। সে সত্যি মনে মনে তাকে নিজের ছোটভাই বা নিজের দেবরের মতই ভালবাসতে শুরু করেছে। এ ভালবাসায় কাম নেই। আছে অন্য এক নেশা। এর কাছে তার শরীরের নেশাও হার মেনেছে। কোনও ছেলের প্রতি সে যে এমনভাবে আকৃষ্ট হতে পারে, এ’কথা মহিমা ভাবতেও পারত না। আর রচনাকে প্রথম দিন দেখার পর থেকে তার ভেতর কী যে হয়েছে তা সে নিজেও ভেবে পায় না। মেয়েটার মধ্যে কী যেন আছে। মূহুর্তের মধ্যে তাকে কেমন আপন করে নিয়েছিল রচনা। মহিমার জীবনে এমন মেয়ে সে আর আগে কখনো দেখেনি। রতীশ কাজে যোগ দেবার পর থেকে রোজ মেয়েটার সাথে একটু কথা না বললে মহিমার ভাল লাগে না। বড্ড আপন, বড্ড কাছের মানুষ বলে মনে হয় মেয়েটাকে। সুন্দরী তো সে বটেই। কিন্তু রচনার চেয়েও অনেক বেশী সুন্দরী মেয়ে সে অনেক দেখেছে জীবনে। তার এসকর্টের কাজেও রচনার চাইতে সুন্দরী দু’ তিনজন মেয়ে আছে। কিন্তু তাদের কাউকে দেখেই এভাবে ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনি মহিমার। মহিমা তখন থেকেই মনে মনে ভেবে নিয়েছিল যে ভবিষ্যতে যাই হোক না কেন, রচনা ও রতীশের সাথে তার নিষ্কাম ভালবাসার সম্পর্কটা সে আমৃত্যু বজায় রাখবে। ওদের পাশে সে সব সময় তাদের পরম বন্ধুর মত থাকবে। কিন্তু বিমলের বদ অভিসন্ধি জানবার পর থেকেই মহিমা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
তার মন চাইছে রতীশ আর রচনার পাশে বড়দিদির মত স্নেহ ভালবাসার বৃত্ত রচনা করে তাদের সমস্ত বিপদ আপদ থেকে দুরে রাখতে। বিমলের মুখেই সে শুনেছে যে রতীশ একটা যোগা ইনস্টিটিউট করবে বলেই কলকাতায় এসেছিল। সেটা তার বহুদিনের স্বপ্ন। কোন এক ঠগের পাল্লায় পড়ে টাকাটা খুইয়ে বসতে রতীশের পক্ষে আর তার ইচ্ছে পূরণ করবার সাধ্য ছিল না বলেই রতীশ তার ওখানে কাজে যোগ দিয়েছে। রচনার সাথে পরিচিত হবার পর, তাকে ভালবেসে ফেলার পর মহিমা ভেবেছিল, কিছুদিন রতীশকে দিয়ে বরুন সুজয় ওদেরকে কিছুটা ট্রেইনড করে তুলতে পারলেই সে নিজেই রতীশকে সাহায্য করবে একটা যোগা সেন্টার খুলবার জন্যে। অর্থের অভাব এখন আর মহিমার নেই। আর্থিক ভাবে তো বটেই, সে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েও রতীশকে সবরকম ভাবে সাহায্য করতে পারবে। মাস ছয়েক বাদে সে এ ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বিমলের প্রস্তাব শুনেই তার ভেতরের সবকিছু যেন ওলোট পালট হয়ে যাচ্ছে।
বিমলকে আটকানো প্রায় অসম্ভব। সে প্রচুর পয়সার মালিক। পয়সা খরচ করেই সে যে কোন মেয়ে বা মহিলাকে তাদের ইচ্ছের বিরূদ্ধেও ভোগ করতে পারে। আর মন্ত্রী আমলা থেকে শুরু করে থানা পুলিশ দারোগা সব কিছুই বিমলের হাতের মুঠোয়। একবার যখন রচনার ওপর তার নজর পড়েছে, যে কোন ভাবেই হোক, সে রচনাকে ভোগ না করে নিবৃত্ত হবে না, এ’কথা মহিমা খুব ভাল করেই জানে। বিমল মহিমাকে যে কাজটা করতে বলেছে সেটা মহিমা পারবে না বলে ফিরিয়ে দিলে বিমল অন্য কাউকে এ কাজ দেবে। পয়সার বিনিময়ে এ শহরে অনেকেই এমন কাজ করতে ওস্তাদ। তারা যে কোন ভাবেই হোক একদিন না একদিন রচনাকে বিমলের হাতে তুলে দেবেই দেবে। আর তার খবরও হয়ত মহিমা জানতে পারবে না। তাই অনেক ভেবে চিন্তেই বিমলের কাজটা হাতে নিয়ে সে তার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে। যাতে রচনার ওপর অন্যকোন দিক থেকে বিপদ নেমে না আসে। কিন্তু মহিমা তো এটা হতে দিতে চায় না। তার মন বলছে যেকোন ভাবে রচনাকে বিপদমুক্ত করতে। বিমল তাকে আপাততঃ ছ’মাস সময় দিয়েছে। যার মানে এই ছ’টা মাস বিমল এ কাজে মহিমার সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করবে। তবে ছ’মাস পেরিয়ে যাবার পরেও হয়ত বিমলকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আরও কিছু সময় চেয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু রচনার ওপর বিপদের খাঁড়া তো ঝুলতেই থাকবে। কী করে বাঁচাবে সে রচনা আর রতীশকে?
একবার যখন বিমলের নজর রচনার ওপর পড়েছে, তাহলে রতীশের বাসা বদলে ওদের অন্যত্র সরিয়ে নিলেও বিপদ কাটবে না। সারা কলকাতার যেখানেই ওরা যাক না কেন বিমল ওদের ঠিক খুঁজে বের করবে। তাই মোটামুটি ধরে নেওয়া যায় যে রতীশ আর রচনা কলকাতায় একেবারেই সেফ নয়। তবে কি মহিমা রতীশ আর রচনাকে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলবে? কিন্তু রতীশের স্বপ্নের যোগা সেন্টার তো সে খুলতে পারবে না তাহলে। আর মহিমাও তাদের কাছ থেকে দুরে চলে যেতে বাধ্য হবে। তাতে তার নিজের যোগা সেন্টারেরও ক্ষতি হবে। অবশ্য সেটা মূখ্য ভাবনা নয় মহিমার। নিজের যে কোন রকম ক্ষতি সে স্বীকার করে নেবে রচনা আর রতীশের মুখ চেয়ে। নিজেদের জায়গায় যোগা সেন্টার ভাল চলবেনা বলেই ছেলেটা কলেজের চাকরি ছেড়ে এখানে এসেছে। এখান থেকে ফিরে গিয়ে সে কি সেখানেই গিয়ে সেন্টার খুলতে পারবে? আর তা করতে না পারলে সে আর কী করবে? কলেজের চাকরিটা কি আর ফিরে পাবে? নাহ, সেটাও তো দুরাশা। তাহলে তো ওদের জীবনে নানা কষ্ট নেমে আসবে। দু’দিন পর ওদের বাচ্চা কাচ্চা হবে। সংসারের খরচ আরও বাড়বে। কিকরে সামলাবে রতীশ? না, না, রতীশকে ফিরে যেতে বলা ঠিক হবে না।
কিন্তু তাহলে অন্য আর কী উপায় থাকতে পারে রচনাকে বাঁচাবার! গত একটা সপ্তাহ থেকে মহিমা সারাক্ষণ এ ব্যাপারেই ভেবে যাচ্ছে। বিমলের মন থেকে রচনার নাম মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। বিমলের যা সোর্স আর যত অর্থ প্রতিপত্তি আছে, তাতে তাকে কোনভাবেই বিরত করা সম্ভব নয়। মহিমার নিজেরও কিছু সোর্স, অর্থ প্রতিপত্তি আছে। নিজের এসকর্ট ব্যবসা সুচারু ভাবে চালাতে অনেকের মত তাকেও কিছু কিছু গুন্ডা বদমাশ পুষতে হয়। কিছু কিছু থানা পুলিশ আমলা মন্ত্রীও তাকে অনেক সময় অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত করে। তারা মহিমার আদেশে বা অনুরোধে অন্য সব কিছু করলেও বিমলের মত লোকের পেছনে কিছুতেই লাগতে চাইবে না। আর তাতে করে মহিমার নিজেরও বড় বিপদ হতে পারে। বিমল একবার যদি ঘূণাক্ষরেও টের পায় যে এ সবের পেছনে মহিমার হাত আছে, তাহলে সে দিনটাই হবে মহিমার জীবনের শেষ দিন। মহিমাকে এ পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দিতে দু’মিনিটও লাগবে না বিমলের। অনেক ভাবনা চিন্তা করেও মহিমা কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না।
এদিকে ব্যাপারটা নিয়ে যে রতীশ বা রচনার সাথে সে পরামর্শ করবে তাও সম্ভব নয়। ওরা দু’জনেই খুব সহজ সরল। ওরা ঘাবড়ে যাবে। ভয় পেয়ে যাবে। হয়ত উপায়ান্তর না পেয়ে তারা তাদের বাড়িতেই ফিরে যাবে। মহিমা সেটাও চায় না। তাহলে আর কী করতে পারে সে! গত সাতদিন ধরেও নানাদিক দিয়ে বিচার করেও কোন সমাধান সূত্র পেল না মহিমা। অবশেষ সিদ্ধান্ত নিল ভেতরের কথাগুলো পুরো খুলে না বলেই রতীশের সাথে একটু আলোচনা করে দেখা যাক না কিছু সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায় কি না। এ কলকাতা শহরে তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী বলে কি আর কেউ নেই? যে তাদের বিপদে আপদে তাদের কিছুটা সাহায্য করতে পারে!
**************
বিগত কয়েকটা দিন ধরে মহিমা বড় দুশ্চিন্তায় আছে। বিমল আগরওয়ালার শ্যেনদৃষ্টি রচনার ওপর পড়েছে সেটা জানবার পর থেকেই সে আর নিজের মনকে শান্ত রাখতে পারছে না। বিমলের সাথে তার পরিচয় হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ছ’বছর আগে। ২০০৬ সালে তার যোগা ইনস্টিটিউট চালু হবার কয়েক মাস পরেই। তখন তার মেয়ে রিতিকা হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছিল। মহিমা আর অরবিন্দ দু’জনেই চাইছিল ছেলে মেয়েদুটোকে ভাল উচ্চশিক্ষা দিতে। রিতিকার ইচ্ছে ছিল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়ার। তাই অনেক খোঁজাখুঁজি খবরাখবর করবার পর আমেদাবাদের একটা ভাল প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে সেখানে রিতিকার অ্যাডমিশনের বন্দোবস্ত করেছিল। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন, কোর্স ফি, এক্সাম ফি, হোস্টেল একোমোডেশন আরও নানা খরচ খরচাপাতি মিলিয়ে প্রায় কুড়ি লাখ টাকার প্রয়োজন হয়েছিল। তখন তার স্বামী অরিন্দমের ব্যবসাটাও তেমন দাঁড়ায় নি। আর যোগা ইনস্টিটিউটটা তার মাস পাঁচ ছয় আগেই শুরু করা হয়েছিল। তাই স্বামী স্ত্রী কারো হাতেই তেমন পুঁজি ছিল না। কিন্তু দুজনেই চাইছিল তাদের মেয়েটা ওই ইনস্টিটিউটেই পড়ুক। তখন অরিন্দমের কাছে ব্যাপারটা গোপন রেখেই টাকার বিনিময়ে সে নিজের যুবতী শরীরটাকে বিভিন্ন কামপিপাসু পুরুষের হাতে তুলে দিতে শুরু করেছিল। বিমলও ছিল তাদের মধ্যে একজন। কিন্তু তখন সে এক এক দিনে তিরিশ চল্লিশ হাজার টাকাই উপার্জন করতে পারত। কিন্তু রিতিকার অ্যাডমিশনের জন্য পনেরো দিনের ভেতর কুড়ি লাখ টাকা আমেদাবাদের ইনস্টিটিউটে জমা দেবার নোটিস পেয়েই সে বিমলের কাছে হাত পেতেছিল। কামুক বিমল পাক্কা ব্যবসাদার হলেও মহিমাকে সেদিন ফিরিয়ে দেয়নি। সে বলেছিল পুরো টাকাটাই সে মহিমাকে দেবে, আর সে টাকার ওপর মহিমাকে কোনও সুদও দিতে হবে না। কিন্তু মহিমাকে তার একটা শর্ত মানতে হবে। বিমল সারাজীবন ধরে মহিমার সুন্দর শরীরটাকে মুফতে প্রতি মাসে দু’দিন করে ভোগ করতে চেয়েছিল। মহিমা তাতে আপত্তি করবার মত কিছু দেখেনি। বাইশ বছর বয়সে অরিন্দমকে বিয়ে করবার পর থেকে সে স্বামী ছাড়া অন্য কোনও পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক না করলেও, বিয়ের আগে পর্যন্ত নিজের হাতখরচা মেটাতে সে অনেক ছোট বয়স থেকেই দিল্লীর বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পুরুষের সাথে যৌন সম্ভোগ করত। আর মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে তো সে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনের সাথে সম্ভোগে লিপ্তা হয়েছে। তাই একথোকে কুড়ি লক্ষ টাকা জোটাবার অন্য কোন পথ না পাওয়ায় সে বিমলের প্রস্তাবে রাজী হয়েছিল। সেই থেকেই প্রতি মাসে বিমল তাকে দু’দিন করে ভোগ করে আসছে। আর মেয়েকে আমেদাবাদ পাঠাবার দু’বছর বাদে ছেলেকে ব্যাঙ্গালোরে পড়তে পাঠাবার সময় আরও একুশ লাখ টাকার প্রয়োজন পড়েছিল। তখন বিমল পুরনো শর্তেই তাকে আরও পনের লাখ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল। অবশ্য তারপর থেকে বিমল তাকে মাসে দু’দিনের বদলে তিনদিন করে ভোগ করতে শুরু করেছে। তখনই সে এসকর্ট ব্যবসায় অন্য ছেলেমেয়ে কাজে লাগাতে শুরু করেছিল। তাতে প্রচুর আয় হতে লাগল। বছর খানেকের ভেতরেই বিমলের পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা সে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তারপরের আরও দুটো বছর সে এসকর্ট ব্যবসায় নিজেকেও কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু তারপর সে নিজে গ্রাহকদের কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তাতে তার আর কোনও অসুবিধে হয়নি, কারন অন্যান্য মেয়ে মহিলা আর পুরুষকে এসকর্টের কাজে লাগিয়েই তার প্রচুর আয় হত। তবে সে যে নিজেকে আর পরপুরুষদের হাতে একেবারেই সমর্পন করত না, তা নয়। এই সাতচল্লিশ বছর বয়সেও সে এখনও যথেষ্ট রূপবতী আর যৌন আবেদনময়ী। এখনও যে কোন বয়সী পুরুষ মানুষকে আকৃষ্ট করতে সে সক্ষম। এখনও বিমলের মত আরও অনেকেই তার শরীরটাকে পেতে চায়। কিন্তু সে নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। যে সব গ্রাহকরা তাকে চায় তাদের নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে বা অন্য কোন ছুতো দেখিয়ে অন্য কোনও এসকর্ট তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তবে নিজের এসকর্ট ব্যাবসায় যাতে তাকে প্রশাসনিক কোন ঝামেলায় পড়তে না হয়, সেজন্য তাকে বিভিন্ন মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার, আইনজীবি ও সরকারি অফিসারদের বিনে পয়সায় মনোরঞ্জন করে যেতেই হচ্ছে। নইলে তাকে এ ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। আর বিমলের শর্তপূরনও করে যেতে হচ্ছে তাকে।
বিমলের সাথে সম্ভোগে মহিমা নিজে যে খুব তৃপ্তি পায়, তা নয়। কিন্তু বিমলের উপকারের কথা মাথায় রেখেই সে এখনও বিমলের শর্তানুযায়ী তাকে নিজের যৌবন সঁপে দিচ্ছে। বিমলের স্ত্রী সবিতাও তার যোগা ইনস্টিটিউটের ক্লায়েন্ট। সে নিজেও মহিমার কাছ থেকে এসকর্ট চেয়ে নেয় মাঝে মাঝে। তবে তার পছন্দ তার ছেলের বয়সী আঠার ঊণিশ বছরের কচি কচি ছেলে। মহিমার এসকর্টের কাজে কুড়ি বছরের নিচে কেউ নেই। অমন কচি কাঁচাদের নিয়ে মহিমা ব্যবসা করে না। সবিতা তাই বেশীরভাগ সময় অন্য কোন মাধ্যমে কচি কাঁচা ছেলে যোগার করে নিজের যৌন বাসনা মেটায়। তবু সবিতা মাঝে মাঝে কুড়ি একুশ বছরের মেল এসকর্ট হায়ার করে থাকে মহিমার কাছ থেকে। কিন্তু সবিতার প্রতি মহিমার তেমন কোনও দায়বদ্ধতা না থাকলেও বিমলের কাছে সে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সারা জীবন বা বলা ভাল যতদিন তার দেহে যৌবনের লালিমা থাকবে ততদিন পর্যন্ত সময়ে সময়ে তাকে বিমলের অঙ্কশায়িনী হতেই হবে। সবিতার মুখেই সে শুনেছে যে অনেকটা মুটিয়ে যাবার ফলে তার স্বামী বিমল নাকি তার সাথে সম্ভোগ করে আর তৃপ্তি পায় না। তাই হয়ত বিমল এখনও মহিমার কাছে আসে। তবে মুটিয়ে গেলেও সবিতার চেহারার লালিমা একেবারে শেষ হয়ে যায়নি তা মহিমা জানে। সে এটাও জানে যে বিমল শুধু তার কাছেই আসে না, মহিমা ছাড়াও অন্য অনেক মেয়ে মহিলার সাথেও তার যৌন সম্পর্ক আছে। অবশ্য যাদের হাতে পয়সা আছে তাদের মেয়ে যোগার করতে খুব একটা বেগ পেতে হয় না। কিন্তু ওর কূনজর যে রচনার ওপরেও পরেছে তাতেই মহিমার দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
প্রথম দর্শনে রতীশের সুগঠিত সুঠাম শরীরটা দেখে মহিমার ভেতরেও এক মূহুর্তের জন্য যৌন ক্ষুধা জেগে উঠেছিল। মনে হয়েছিল এ ছেলেটার সাথে শরীরের খেলা খেলে খুব তৃপ্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু রতীশের সরল সুন্দর মুখশ্রী, ভদ্রতা আর সুমিষ্ট ব্যবহারে তার মনের সে ভাবনা উধাও হয়ে গিয়েছিল। কামের পরিবর্তে তার মনে নিখাদ স্নেহ আর মমতা জেগে উঠেছিল। আর রতীশ কাজে যোগ দেবার পর তার যোগা ইনস্টিটিউটের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে এ ক’টা দিনেই। আর রতীশকে যে সে নিজের ভাই বলে ডাকে সেটাও একেবারেই মেকি নয়। সে সত্যি মনে মনে তাকে নিজের ছোটভাই বা নিজের দেবরের মতই ভালবাসতে শুরু করেছে। এ ভালবাসায় কাম নেই। আছে অন্য এক নেশা। এর কাছে তার শরীরের নেশাও হার মেনেছে। কোনও ছেলের প্রতি সে যে এমনভাবে আকৃষ্ট হতে পারে, এ’কথা মহিমা ভাবতেও পারত না। আর রচনাকে প্রথম দিন দেখার পর থেকে তার ভেতর কী যে হয়েছে তা সে নিজেও ভেবে পায় না। মেয়েটার মধ্যে কী যেন আছে। মূহুর্তের মধ্যে তাকে কেমন আপন করে নিয়েছিল রচনা। মহিমার জীবনে এমন মেয়ে সে আর আগে কখনো দেখেনি। রতীশ কাজে যোগ দেবার পর থেকে রোজ মেয়েটার সাথে একটু কথা না বললে মহিমার ভাল লাগে না। বড্ড আপন, বড্ড কাছের মানুষ বলে মনে হয় মেয়েটাকে। সুন্দরী তো সে বটেই। কিন্তু রচনার চেয়েও অনেক বেশী সুন্দরী মেয়ে সে অনেক দেখেছে জীবনে। তার এসকর্টের কাজেও রচনার চাইতে সুন্দরী দু’ তিনজন মেয়ে আছে। কিন্তু তাদের কাউকে দেখেই এভাবে ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনি মহিমার। মহিমা তখন থেকেই মনে মনে ভেবে নিয়েছিল যে ভবিষ্যতে যাই হোক না কেন, রচনা ও রতীশের সাথে তার নিষ্কাম ভালবাসার সম্পর্কটা সে আমৃত্যু বজায় রাখবে। ওদের পাশে সে সব সময় তাদের পরম বন্ধুর মত থাকবে। কিন্তু বিমলের বদ অভিসন্ধি জানবার পর থেকেই মহিমা বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে।
তার মন চাইছে রতীশ আর রচনার পাশে বড়দিদির মত স্নেহ ভালবাসার বৃত্ত রচনা করে তাদের সমস্ত বিপদ আপদ থেকে দুরে রাখতে। বিমলের মুখেই সে শুনেছে যে রতীশ একটা যোগা ইনস্টিটিউট করবে বলেই কলকাতায় এসেছিল। সেটা তার বহুদিনের স্বপ্ন। কোন এক ঠগের পাল্লায় পড়ে টাকাটা খুইয়ে বসতে রতীশের পক্ষে আর তার ইচ্ছে পূরণ করবার সাধ্য ছিল না বলেই রতীশ তার ওখানে কাজে যোগ দিয়েছে। রচনার সাথে পরিচিত হবার পর, তাকে ভালবেসে ফেলার পর মহিমা ভেবেছিল, কিছুদিন রতীশকে দিয়ে বরুন সুজয় ওদেরকে কিছুটা ট্রেইনড করে তুলতে পারলেই সে নিজেই রতীশকে সাহায্য করবে একটা যোগা সেন্টার খুলবার জন্যে। অর্থের অভাব এখন আর মহিমার নেই। আর্থিক ভাবে তো বটেই, সে নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েও রতীশকে সবরকম ভাবে সাহায্য করতে পারবে। মাস ছয়েক বাদে সে এ ব্যাপারটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বিমলের প্রস্তাব শুনেই তার ভেতরের সবকিছু যেন ওলোট পালট হয়ে যাচ্ছে।
বিমলকে আটকানো প্রায় অসম্ভব। সে প্রচুর পয়সার মালিক। পয়সা খরচ করেই সে যে কোন মেয়ে বা মহিলাকে তাদের ইচ্ছের বিরূদ্ধেও ভোগ করতে পারে। আর মন্ত্রী আমলা থেকে শুরু করে থানা পুলিশ দারোগা সব কিছুই বিমলের হাতের মুঠোয়। একবার যখন রচনার ওপর তার নজর পড়েছে, যে কোন ভাবেই হোক, সে রচনাকে ভোগ না করে নিবৃত্ত হবে না, এ’কথা মহিমা খুব ভাল করেই জানে। বিমল মহিমাকে যে কাজটা করতে বলেছে সেটা মহিমা পারবে না বলে ফিরিয়ে দিলে বিমল অন্য কাউকে এ কাজ দেবে। পয়সার বিনিময়ে এ শহরে অনেকেই এমন কাজ করতে ওস্তাদ। তারা যে কোন ভাবেই হোক একদিন না একদিন রচনাকে বিমলের হাতে তুলে দেবেই দেবে। আর তার খবরও হয়ত মহিমা জানতে পারবে না। তাই অনেক ভেবে চিন্তেই বিমলের কাজটা হাতে নিয়ে সে তার কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে। যাতে রচনার ওপর অন্যকোন দিক থেকে বিপদ নেমে না আসে। কিন্তু মহিমা তো এটা হতে দিতে চায় না। তার মন বলছে যেকোন ভাবে রচনাকে বিপদমুক্ত করতে। বিমল তাকে আপাততঃ ছ’মাস সময় দিয়েছে। যার মানে এই ছ’টা মাস বিমল এ কাজে মহিমার সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করবে। তবে ছ’মাস পেরিয়ে যাবার পরেও হয়ত বিমলকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আরও কিছু সময় চেয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু রচনার ওপর বিপদের খাঁড়া তো ঝুলতেই থাকবে। কী করে বাঁচাবে সে রচনা আর রতীশকে?
একবার যখন বিমলের নজর রচনার ওপর পড়েছে, তাহলে রতীশের বাসা বদলে ওদের অন্যত্র সরিয়ে নিলেও বিপদ কাটবে না। সারা কলকাতার যেখানেই ওরা যাক না কেন বিমল ওদের ঠিক খুঁজে বের করবে। তাই মোটামুটি ধরে নেওয়া যায় যে রতীশ আর রচনা কলকাতায় একেবারেই সেফ নয়। তবে কি মহিমা রতীশ আর রচনাকে তাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলবে? কিন্তু রতীশের স্বপ্নের যোগা সেন্টার তো সে খুলতে পারবে না তাহলে। আর মহিমাও তাদের কাছ থেকে দুরে চলে যেতে বাধ্য হবে। তাতে তার নিজের যোগা সেন্টারেরও ক্ষতি হবে। অবশ্য সেটা মূখ্য ভাবনা নয় মহিমার। নিজের যে কোন রকম ক্ষতি সে স্বীকার করে নেবে রচনা আর রতীশের মুখ চেয়ে। নিজেদের জায়গায় যোগা সেন্টার ভাল চলবেনা বলেই ছেলেটা কলেজের চাকরি ছেড়ে এখানে এসেছে। এখান থেকে ফিরে গিয়ে সে কি সেখানেই গিয়ে সেন্টার খুলতে পারবে? আর তা করতে না পারলে সে আর কী করবে? কলেজের চাকরিটা কি আর ফিরে পাবে? নাহ, সেটাও তো দুরাশা। তাহলে তো ওদের জীবনে নানা কষ্ট নেমে আসবে। দু’দিন পর ওদের বাচ্চা কাচ্চা হবে। সংসারের খরচ আরও বাড়বে। কিকরে সামলাবে রতীশ? না, না, রতীশকে ফিরে যেতে বলা ঠিক হবে না।
কিন্তু তাহলে অন্য আর কী উপায় থাকতে পারে রচনাকে বাঁচাবার! গত একটা সপ্তাহ থেকে মহিমা সারাক্ষণ এ ব্যাপারেই ভেবে যাচ্ছে। বিমলের মন থেকে রচনার নাম মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। বিমলের যা সোর্স আর যত অর্থ প্রতিপত্তি আছে, তাতে তাকে কোনভাবেই বিরত করা সম্ভব নয়। মহিমার নিজেরও কিছু সোর্স, অর্থ প্রতিপত্তি আছে। নিজের এসকর্ট ব্যবসা সুচারু ভাবে চালাতে অনেকের মত তাকেও কিছু কিছু গুন্ডা বদমাশ পুষতে হয়। কিছু কিছু থানা পুলিশ আমলা মন্ত্রীও তাকে অনেক সময় অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত করে। তারা মহিমার আদেশে বা অনুরোধে অন্য সব কিছু করলেও বিমলের মত লোকের পেছনে কিছুতেই লাগতে চাইবে না। আর তাতে করে মহিমার নিজেরও বড় বিপদ হতে পারে। বিমল একবার যদি ঘূণাক্ষরেও টের পায় যে এ সবের পেছনে মহিমার হাত আছে, তাহলে সে দিনটাই হবে মহিমার জীবনের শেষ দিন। মহিমাকে এ পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দিতে দু’মিনিটও লাগবে না বিমলের। অনেক ভাবনা চিন্তা করেও মহিমা কোন কুল কিনারা পাচ্ছে না।
এদিকে ব্যাপারটা নিয়ে যে রতীশ বা রচনার সাথে সে পরামর্শ করবে তাও সম্ভব নয়। ওরা দু’জনেই খুব সহজ সরল। ওরা ঘাবড়ে যাবে। ভয় পেয়ে যাবে। হয়ত উপায়ান্তর না পেয়ে তারা তাদের বাড়িতেই ফিরে যাবে। মহিমা সেটাও চায় না। তাহলে আর কী করতে পারে সে! গত সাতদিন ধরেও নানাদিক দিয়ে বিচার করেও কোন সমাধান সূত্র পেল না মহিমা। অবশেষ সিদ্ধান্ত নিল ভেতরের কথাগুলো পুরো খুলে না বলেই রতীশের সাথে একটু আলোচনা করে দেখা যাক না কিছু সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায় কি না। এ কলকাতা শহরে তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী বলে কি আর কেউ নেই? যে তাদের বিপদে আপদে তাদের কিছুটা সাহায্য করতে পারে!
**************
(To be cont'd .....)