11-03-2020, 10:14 PM
(Update No. 132)
নবনীতা সীমন্তিনীর কথা শুনে তাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “কেঁদো না দিদি। তুমি পরশ পাথর কিনা আমি তা জানিনা। কিন্তু তোমার দেখা না পেলে আজ এই মূহুর্তটা আমার জীবনে যে কখনোই আসত না সেটা আমি খুব ভালভাবেই জানি” বলে নিজেও ঝরঝর করে কেঁদে দিল।
লক্ষ্মী খালি চায়ের কাপ নিতে এসে দু’জনকে ওভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখে বলল, “ওমা! তোমরা এভাবে কাঁদছ কেন গো দিদিমণি”?
সীমন্তিনী নবনীতার চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি, কিছু হয়নি। তোমার রান্না হয়ে গেছে”?
লক্ষ্মী খাটের নিচে মেঝেয় হাঁটু গেঁড়ে বসে বলল, “বয়স তো একেবারে কম হয়নি আমার দিদিমণি। গরীব মুখ্যুসুখ্যু মানুষ হলেও মানুষের মনের কথা কিছু কিছু বুঝতে তো পারি। জানো ছোড়দি, প্রায় তিন বছর আমি এই দিদিমণির কাছে আছি। কতদিন তাকে একা একা কাঁদতে দেখেছি আমি। তার কষ্ট দেখে আমিও মনে মনে কাঁদতুম। কিন্তু তাকে কোনরকম সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পেতুম না আমি। আজ প্রথম দেখছি উনি আরেকজনের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে পারছেন। তুমি আমার দিদিমণিটাকে একটু দেখে রেখ গো। মুখ ফুটে নিজের মনের কথা খুলে বলবার মত কেউ তার পাশে নেই” বলে সেও নবনীতার কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলল।
পরের কয়েকটা মূহুর্ত শুধু তিনজনের ফোঁপানি ছাড়া ঘরে আর কোনও শব্দ শোনা গেল না। বেশ কিছুক্ষণ পর নবনীতা লক্ষ্মীর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “হ্যাঁ লক্ষ্মীদি। আমি আজ থেকে দিদির মনের সব দুঃখের কথা শুনে তাকে সান্ত্বনা দেব। আর শুধু মুখের সান্ত্বনাটুকু ছাড়া আপাততঃ তো আর কিছু নেই আমার। ভবিষ্যতে ভগবান যদি সামর্থ্য দেন তো দিদির কষ্ট দুর করবার চেষ্টা করব আমি”।
সীমন্তিনী এবার নিজেকে সামলে নিয়ে নবনীতা আর লক্ষ্মীর চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “আচ্ছা তোমরা দুটিতে মিলে কি শুরু করলে বল তো? যার কপালে যা আছে তাই তো হবে। আচ্ছা লক্ষ্মীদি, তোমার রান্না কি সাড়া হয়েছে”?
লক্ষ্মী সীমন্তিনীর চোখের জল মুছতে মুছতে জবাব দিল। “হ্যাঁ দিদিমণি। রান্না হয়ে গেছে”।
সীমন্তিনী আবার কিছু একটা বলতে যেতেই নবনীতার ফোনটা বেজে উঠল। নবনীতা ফোন হাতে নিয়ে দেখল রচনার ফোন। কল রিসিভ করে কানে লাগাতেই রচনা বলল, “হ্যাঁগো নীতাদি, দিদিভাইয়ের খবর কি গো? তখন থেকে একনাগাড়ে ফোন করে যাচ্ছি। একবারও তার সাড়া পাচ্ছি নে। দিদিভাই কি ঘরে ফেরেননি এত রাতেও”?
নবনীতা নিজের গলা পরিস্কার করে বলল, “না বৌদি, তা নয়। তোমার দিদিভাই আমার সাথেই আছেন। এই নাও তার সাথে কথা বলো” বলে ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিল।
সীমন্তিনী ফোন কানে লাগিয়েই বলল, “সরি রে রচু সোনা। কিছু মনে করিস না বোন। আমার ফোন দুটোই আমার ঘরে রেখে নীতার ঘরে বসে ওর সাথে কথা বলছিলুম। তাই তোর কল রিসিভ করতে পারিনি রে। রাগ করিস নে বোন”।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকবার পর রচনা ভারী গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে দিদিভাই? তোমার গলার স্বরটা এত ভারী লাগছে কেন গো? কাঁদছিলে না কি? তুমি ঠিক আছ তো”?
সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেবার চেষ্টা করল, “নারে পাগলী, কিচ্ছু হয়নি আমার। নীতার সাথে গল্প করতে করতে অর্চুর কথা এসে পড়তেই গলাটা একটু ধরে গেছে। তুই ও নিয়ে কিচ্ছু ভাবিস না সোনা”।
রচনা ও’পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছ তো”?
সীমন্তিনী এবার মুখে হাসি আনবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “হ্যারে সত্যি বলছি আমি। কিচ্ছু হয়নি আমার। তোর নামে দিব্যি করে বলছি, হল তো এবার”?
রচনা বলল, “উহু আমার নামে দিব্যি করলেও আমি মানব না দিদিভাই। যদি সত্যি তোমার আর কিছু হয়ে না থাকে তাহলে তোমার দাদাভাইয়ের নামে দিব্যি করে বলো দেখি”।
সীমন্তিনী হেসে জবাব দিল, “বেশ ঠিক আছে। আমি আমার দাদাভাইয়ের নামে শপথ করে বলছি, আর কিচ্ছু হয়নি। এবার হল তো”?
রচনা বলল, “হু এবার বিশ্বাস করছি। আচ্ছা দিদিভাই, ভাইয়ের সাথে আমার একটু আগে কথা হল। ভাই বলল তুমি নাকি কাল দিদিকে তোমার ওখানে নিয়ে যাচ্ছ? সত্যি”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে। ভাই তোকে সত্যি কথাই বলেছে। আমি তোকে আজ রাতেই কথাটা জানাতুম। আমি ভাইকে আজ দুপুরেই ফোন করে বলেছি সে কথা। যাতে করে অর্চু ওর জিনিসপত্র গোছগাছ করে রাখে। কাল আমি আলিপুরদুয়ার থেকে ফেরার পথে কালচিনি থেকে ওকে সঙ্গে নিয়ে আসবো। আসলে ডাক্তার সোম বললেন যে অর্চুর আর কোনরকম শারীরিক সমস্যা নেই। এখন আত্মীয় পরিজন প্রিয়জনদের সাথে থাকলেই ধীরে ধীরে তার মনের অবসাদটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আর এখন আমার এখানে নীতাও আছে। তাই আমি অফিসে চলে গেলেও অর্চুকে আর একা থাকতে হবে না। আর মেসো মাসির শরীরও ভাল আছে। সেজন্যেই কটা দিনের জন্য ওকে নিয়ে আসব বলে মেসো মাসির অনুমতিও চেয়ে নিয়েছি। আমি জানি তুইও এতে খুশী হবি। কারন, আত্মীয় পরিজন নাই বা হলাম আমি তো অর্চুর এক প্রিয়জন, তাই না”? বলে থামল।
রচনাও এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “ভাল হচ্ছে না কিন্তু দিদিভাই। আমি না তোমার ছোটবোন। তুমি আমাদের আত্মীয় পরিজন নও, এভাবে কথা বলে আমাকে কষ্ট দিতে পারলে তুমি”?
সীমন্তিনী হো হো করে হেসে উঠে বলল, “ক্ষেপেছিস তো? তোকে একটু ক্ষ্যাপাবার জন্যেই কথাটা বললাম শুধু। নইলে ভুলে যেতে পারিস তো যে কালচিনিতেও আমার মা বাবা ভাই বোন বলে কেউ আছে”।
রচনা অনুযোগের সুরে বলল, “ক্ষ্যাপাতেই যদি হয় তবে অন্য কোনভাবে ক্ষেপিও। এসব কথা কিন্তু একেবারেই ভাল লাগে না আমার”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “রচু সোনা আমার, রাগ করিস নে ভাই। একটু ঠাট্টা করলাম তোর সাথে। আমার বোন হলেও তুই তো আমার বান্ধবীও আবার বৌদিও। বান্ধবী আর বৌদির সাথে এটুকু মজা তো করাই যায়”।
রচনাও এবার হাল্কা ভাবে বলল, “কিন্তু তোমার বান্ধবী বা বৌদি হবার আগে কিন্তু আমি তোমার বোন হয়েছিলাম। সে’কথাটা ভুলে যেও না। আর এ বোনটা তোমার অমন ঠাট্টা শুনতে রাজি নয়”।
সীমন্তিনী হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা বাবা ঘাট হয়েছে। আর রাগ করিস নে লক্ষ্মীটি। আর শোন না লক্ষ্মীদি কী বায়না ধরেছে জানিস? লক্ষ্মীদি আমার সাথে কালচিনি গিয়ে মাসি মেসো আর ভাই বোনকে দেখার বায়না ধরেছে”।
রচনা বলল, “ওমা তাই? তাহলে নিয়েই যাও না। আর শুধু লক্ষ্মীদি কেন তুমি তো নীতাদিকেও সঙ্গে নিতে পার”।
সীমন্তিনী বলল, “এই আরেক পাগলীর পাল্লায় পড়েছি আমি। আরে বাবা, আমাকে একটা অফিসিয়াল কাজে আলিপুরদুয়ার যেতে হচ্ছে বলেই ফেরার পথে অর্চুকে সাথে নিয়ে আসব বলে ভেবেছি। সঙ্গে আমার অফিসিয়াল সিকিউরিটিও থাকবে। নীতা, লক্ষ্মীদিকে সাথে নিয়ে গেলে সারাটা দিন ওরা আলিপুরদুয়ারে কি করে সময় কাটাবে? সেটা সম্ভব নয় বলেই আমি লক্ষ্মীদিকে বোঝালাম যে লক্ষ্মীদিও যদি আমার সাথে যায় তাহলে অর্চুকে আমার ঘরে আনবার পর তো ওকে কিছু খেতে দিতে পারব না। লক্ষ্মীদি স্নান সেরে রান্নাঘরে ঢুকে কিছু একটা বানাবে। ততক্ষণে তো অনেক দেরী হয়ে যাবে”।
এতক্ষণ ফোনের স্পীকার অন করেই সীমন্তিনী কথা বলছিল। তাই লক্ষ্মী আর নবনীতা দু’জনেই দু’তরফের কথাবার্তা শুনতে পারছিল। এবার সীমন্তিনীর কথা শেষ হতেই লক্ষ্মী একটু গলা তুলে বলল, “ও বৌদিমণি, দিদিমণি বলেছে যে আর কিছু দিনের মধ্যেই তোমার মা বাবা আর ভাইকে একদিন আমাদের এখানে নিয়ে আসবেন। তাই তো আমি কাল যাবার বায়না ছেড়ে দিলুম”।
রচনা এবার খানিকটা বিস্মিত গলায় বলল, “তাই নাকি দিদিভাই? সত্যি মা বাবা আর ভাই তোমার ওখানে যাবে? কই ভাই তো এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলেনি”?
সীমন্তিনী বলল, “এখনও পাকাপাকি ভাবে কবে আনব সেটা ভাবিনি। তবে যখনই আনি তোকে সেটা আগেই জানাবো। এবার তোদের কথা বল তো? তোরা ভালো আছিস তো? রাতের খাবার খেয়েছিস”?
রচনা বলল, “এখানে সব ঠিক আছে দিদিভাই। রাতের রান্না হয়ে গেছে। তোমার সাথে কথা হচ্ছিল না বলেই একটু চিন্তায় ছিলাম। এবারে খেতে বসব। আচ্ছা দিদিভাই, এবার রাখি। তোমাদের সাথে আবার কাল কথা হবে। গুডনাইট”।
সীমন্তিনী “গুডনাইট সোনা’ বলে ফোন নামিয়ে রাখল। মোবাইলেই সময় দেখে নবনীতাকে বলল, “এখনই খাবে না আরেকটু গল্প করবে নীতা”?
নবনীতা জবাব দিল, “একটু আগেই চা খেলাম। একটু পরেই না হয় খাই। আচ্ছা দিদি, বৌদি তোমাকে খুব ভালবাসে তাই না”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁগো নীতা। রচু আমাকে খুব ভালবাসে। আসলে ও মেয়েটাই এমন ওর আশেপাশের সকলকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিতে ওর সমকক্ষ কাউকে দেখিনি আমি। আমাকে তো ও বিয়ের অনেক আগে থেকেই পেয়েছে। তখন থেকেই আমি ওর দিদি হয়েছিলুম। কিন্তু বিয়ের পর ও আমাদের বাড়ির বড় ছোট প্রত্যেকটা লোককে এমনভাবে কাছে টেনে নিয়েছিল যে দশ দিন যেতে না যেতেই বাড়ির সকলেই এক মুহূর্ত ওকে চোখের আড়াল করতে চাইত না। আর ও নিজেও কী অদ্ভুতভাবে যে সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে যেত সেটা আমি নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস করতে পারতুম না। কিন্তু কয়েক মাস আগে দাদাভাইয়ের সাথে কলকাতায় চলে যেতে হয়েছে বলে ওর মনটাও খুব একটা ভাল নেই। সারা দিনে তিনবার অন্ততঃ আমার সাথে কথা বলা চাইই ওর। লক্ষ্মীদিকে হাজার রকমের নির্দেশ দেয়। তাছাড়া বাড়ির সকলের সাথেও ভাল যোগাযোগ রাখে। নিজের বাপের বাড়ির সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। আসলে ও মেয়েটাই এমন যে ওর সাথে পরিচিত হলে কেউ ওকে না ভালবেসে থাকতে পারবে না”।
নবনীতা সায় দিয়ে বলল, “আমি তো তার সাথে কয়েকটা ঘন্টাই কাটিয়েছি শুধু। আমারও তাকে খুব মিষ্টি আর ভাল মনের মানুষ বলে মনে হয়েছে। আমার থেকেও নিশ্চয়ই বয়সে ছোট হবে। তা সত্বেও কেন জানিনা ওকে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে”।
সীমন্তিনী বলল, “রচু সত্যিই তেমনি একটা মেয়ে। বয়সে ও বোধহয় তোমার চেয়ে প্রায় বছর চারেক ছোট হবে। তাই তুমিও তাকে অনায়াসে তুই বা তুমি করে বলতে পারো। শুনেছি ওর দিদি অর্চনাও নাকি একই রকম স্বভাবের। ছোটবেলায় নাকি অর্চনা রচুর চাইতেও সুন্দরী ছিল। রচুদের বাড়িতে ওদের দু’বোনের একটা পুরনো ছবি আমি দেখেছিলাম। অবশ্য বিয়ের পর গত কয়েকটা বছরে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে ওর সমস্ত লালিমা সমস্ত সৌন্দর্যই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমি যখন ওকে প্রথম কালচিনি হাসপাতালের বেডে দেখেছিলাম সেদিন আমি তো দুরের কথা, প্রথম দেখায় ওর ছোটভাইও ওকে চিনতে পারছিল না। অবশ্য এখন হয়ত ওর স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি নিশ্চয়ই হয়েছে। ওর ডাক্তার তো বলল যে ও এখন শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। মানসিক অবসাদটা কাটতে নিশ্চয়ই আরও কিছু সময় লাগবে। তাই তো ওকে কিছুদিন আমার এখানে এনে রাখতে চাই। এখানে এলে আমরা তিনজন মিলে ওকে সব সময় হাসিখুশীতে ভরিয়ে রাখব বুঝেছ লক্ষ্মীদি”।
লক্ষ্মী বলল, “সেকথা আর তোমায় বলতে হবে দিদিমণি, আমার বৌদিমণির দিদিকে আমি সব রকম ভাবে যত্নে রাখব, দেখে নিও”।
সীমন্তিনী নবনীতার হাত ধরে বলল, “নীতা, আমাকে তো সারাটা দিন অফিসের কাজেই বাইরে থাকতে হয়। তাই এতদিন চাইলেও অর্চুকে এখানে আনতে পারিনি। তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ, তুমি তো দিনের পুরোটা সময় ওর সাথে থাকবে। তাই ওর মন ভাল করে তুলতে তুমিই সবচেয়ে বেশী সুযোগ পাবে। বয়সে ও তোমার চেয়ে মাত্র বছর দুয়েকের ছোট হবে। তাই খুব সহজেই তোমাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে। আমি কিন্তু মনে মনে সেটাই চাই। তুমি আমাকে নিরাশ কোরনা প্লীজ। আর তোমার যে কাজের কথা ভাবছি সেখানে তুমি সামনের মাসের এক তারিখ থেকে কাজে যোগ দিতে পারবে। তাই মাঝের ক’টা দিন তোমরা দু’জন যেন দুই বান্ধবীর মত হেসে খেলে ওকে আগের চেয়ে অনেক উৎফুল্ল আর প্রাণবন্ত করে তুলতে পারো”।
নবনীতাও সীমন্তিনীর একটা হাত ধরে বলল, “অবশ্যই করব দিদি। তোমার প্রিয়জন কাউকে আমি কি আর অবহেলা করতে পারি, বল? আমি সব রকম ভাবে তোমার পরামর্শ মেনে চলতে চেষ্টা করব”।
**************
নবনীতা সীমন্তিনীর কথা শুনে তাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “কেঁদো না দিদি। তুমি পরশ পাথর কিনা আমি তা জানিনা। কিন্তু তোমার দেখা না পেলে আজ এই মূহুর্তটা আমার জীবনে যে কখনোই আসত না সেটা আমি খুব ভালভাবেই জানি” বলে নিজেও ঝরঝর করে কেঁদে দিল।
লক্ষ্মী খালি চায়ের কাপ নিতে এসে দু’জনকে ওভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে দেখে বলল, “ওমা! তোমরা এভাবে কাঁদছ কেন গো দিদিমণি”?
সীমন্তিনী নবনীতার চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি, কিছু হয়নি। তোমার রান্না হয়ে গেছে”?
লক্ষ্মী খাটের নিচে মেঝেয় হাঁটু গেঁড়ে বসে বলল, “বয়স তো একেবারে কম হয়নি আমার দিদিমণি। গরীব মুখ্যুসুখ্যু মানুষ হলেও মানুষের মনের কথা কিছু কিছু বুঝতে তো পারি। জানো ছোড়দি, প্রায় তিন বছর আমি এই দিদিমণির কাছে আছি। কতদিন তাকে একা একা কাঁদতে দেখেছি আমি। তার কষ্ট দেখে আমিও মনে মনে কাঁদতুম। কিন্তু তাকে কোনরকম সান্ত্বনা দেবার ভাষা খুঁজে পেতুম না আমি। আজ প্রথম দেখছি উনি আরেকজনের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে পারছেন। তুমি আমার দিদিমণিটাকে একটু দেখে রেখ গো। মুখ ফুটে নিজের মনের কথা খুলে বলবার মত কেউ তার পাশে নেই” বলে সেও নবনীতার কোলে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেলল।
পরের কয়েকটা মূহুর্ত শুধু তিনজনের ফোঁপানি ছাড়া ঘরে আর কোনও শব্দ শোনা গেল না। বেশ কিছুক্ষণ পর নবনীতা লক্ষ্মীর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “হ্যাঁ লক্ষ্মীদি। আমি আজ থেকে দিদির মনের সব দুঃখের কথা শুনে তাকে সান্ত্বনা দেব। আর শুধু মুখের সান্ত্বনাটুকু ছাড়া আপাততঃ তো আর কিছু নেই আমার। ভবিষ্যতে ভগবান যদি সামর্থ্য দেন তো দিদির কষ্ট দুর করবার চেষ্টা করব আমি”।
সীমন্তিনী এবার নিজেকে সামলে নিয়ে নবনীতা আর লক্ষ্মীর চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, “আচ্ছা তোমরা দুটিতে মিলে কি শুরু করলে বল তো? যার কপালে যা আছে তাই তো হবে। আচ্ছা লক্ষ্মীদি, তোমার রান্না কি সাড়া হয়েছে”?
লক্ষ্মী সীমন্তিনীর চোখের জল মুছতে মুছতে জবাব দিল। “হ্যাঁ দিদিমণি। রান্না হয়ে গেছে”।
সীমন্তিনী আবার কিছু একটা বলতে যেতেই নবনীতার ফোনটা বেজে উঠল। নবনীতা ফোন হাতে নিয়ে দেখল রচনার ফোন। কল রিসিভ করে কানে লাগাতেই রচনা বলল, “হ্যাঁগো নীতাদি, দিদিভাইয়ের খবর কি গো? তখন থেকে একনাগাড়ে ফোন করে যাচ্ছি। একবারও তার সাড়া পাচ্ছি নে। দিদিভাই কি ঘরে ফেরেননি এত রাতেও”?
নবনীতা নিজের গলা পরিস্কার করে বলল, “না বৌদি, তা নয়। তোমার দিদিভাই আমার সাথেই আছেন। এই নাও তার সাথে কথা বলো” বলে ফোনটা সীমন্তিনীর দিকে এগিয়ে দিল।
সীমন্তিনী ফোন কানে লাগিয়েই বলল, “সরি রে রচু সোনা। কিছু মনে করিস না বোন। আমার ফোন দুটোই আমার ঘরে রেখে নীতার ঘরে বসে ওর সাথে কথা বলছিলুম। তাই তোর কল রিসিভ করতে পারিনি রে। রাগ করিস নে বোন”।
কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকবার পর রচনা ভারী গলায় জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে দিদিভাই? তোমার গলার স্বরটা এত ভারী লাগছে কেন গো? কাঁদছিলে না কি? তুমি ঠিক আছ তো”?
সীমন্তিনী তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক গলায় উত্তর দেবার চেষ্টা করল, “নারে পাগলী, কিচ্ছু হয়নি আমার। নীতার সাথে গল্প করতে করতে অর্চুর কথা এসে পড়তেই গলাটা একটু ধরে গেছে। তুই ও নিয়ে কিচ্ছু ভাবিস না সোনা”।
রচনা ও’পাশ থেকে জিজ্ঞেস করল, “সত্যি বলছ তো”?
সীমন্তিনী এবার মুখে হাসি আনবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “হ্যারে সত্যি বলছি আমি। কিচ্ছু হয়নি আমার। তোর নামে দিব্যি করে বলছি, হল তো এবার”?
রচনা বলল, “উহু আমার নামে দিব্যি করলেও আমি মানব না দিদিভাই। যদি সত্যি তোমার আর কিছু হয়ে না থাকে তাহলে তোমার দাদাভাইয়ের নামে দিব্যি করে বলো দেখি”।
সীমন্তিনী হেসে জবাব দিল, “বেশ ঠিক আছে। আমি আমার দাদাভাইয়ের নামে শপথ করে বলছি, আর কিচ্ছু হয়নি। এবার হল তো”?
রচনা বলল, “হু এবার বিশ্বাস করছি। আচ্ছা দিদিভাই, ভাইয়ের সাথে আমার একটু আগে কথা হল। ভাই বলল তুমি নাকি কাল দিদিকে তোমার ওখানে নিয়ে যাচ্ছ? সত্যি”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যারে। ভাই তোকে সত্যি কথাই বলেছে। আমি তোকে আজ রাতেই কথাটা জানাতুম। আমি ভাইকে আজ দুপুরেই ফোন করে বলেছি সে কথা। যাতে করে অর্চু ওর জিনিসপত্র গোছগাছ করে রাখে। কাল আমি আলিপুরদুয়ার থেকে ফেরার পথে কালচিনি থেকে ওকে সঙ্গে নিয়ে আসবো। আসলে ডাক্তার সোম বললেন যে অর্চুর আর কোনরকম শারীরিক সমস্যা নেই। এখন আত্মীয় পরিজন প্রিয়জনদের সাথে থাকলেই ধীরে ধীরে তার মনের অবসাদটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। আর এখন আমার এখানে নীতাও আছে। তাই আমি অফিসে চলে গেলেও অর্চুকে আর একা থাকতে হবে না। আর মেসো মাসির শরীরও ভাল আছে। সেজন্যেই কটা দিনের জন্য ওকে নিয়ে আসব বলে মেসো মাসির অনুমতিও চেয়ে নিয়েছি। আমি জানি তুইও এতে খুশী হবি। কারন, আত্মীয় পরিজন নাই বা হলাম আমি তো অর্চুর এক প্রিয়জন, তাই না”? বলে থামল।
রচনাও এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “ভাল হচ্ছে না কিন্তু দিদিভাই। আমি না তোমার ছোটবোন। তুমি আমাদের আত্মীয় পরিজন নও, এভাবে কথা বলে আমাকে কষ্ট দিতে পারলে তুমি”?
সীমন্তিনী হো হো করে হেসে উঠে বলল, “ক্ষেপেছিস তো? তোকে একটু ক্ষ্যাপাবার জন্যেই কথাটা বললাম শুধু। নইলে ভুলে যেতে পারিস তো যে কালচিনিতেও আমার মা বাবা ভাই বোন বলে কেউ আছে”।
রচনা অনুযোগের সুরে বলল, “ক্ষ্যাপাতেই যদি হয় তবে অন্য কোনভাবে ক্ষেপিও। এসব কথা কিন্তু একেবারেই ভাল লাগে না আমার”।
সীমন্তিনী এবার বলল, “রচু সোনা আমার, রাগ করিস নে ভাই। একটু ঠাট্টা করলাম তোর সাথে। আমার বোন হলেও তুই তো আমার বান্ধবীও আবার বৌদিও। বান্ধবী আর বৌদির সাথে এটুকু মজা তো করাই যায়”।
রচনাও এবার হাল্কা ভাবে বলল, “কিন্তু তোমার বান্ধবী বা বৌদি হবার আগে কিন্তু আমি তোমার বোন হয়েছিলাম। সে’কথাটা ভুলে যেও না। আর এ বোনটা তোমার অমন ঠাট্টা শুনতে রাজি নয়”।
সীমন্তিনী হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা বাবা ঘাট হয়েছে। আর রাগ করিস নে লক্ষ্মীটি। আর শোন না লক্ষ্মীদি কী বায়না ধরেছে জানিস? লক্ষ্মীদি আমার সাথে কালচিনি গিয়ে মাসি মেসো আর ভাই বোনকে দেখার বায়না ধরেছে”।
রচনা বলল, “ওমা তাই? তাহলে নিয়েই যাও না। আর শুধু লক্ষ্মীদি কেন তুমি তো নীতাদিকেও সঙ্গে নিতে পার”।
সীমন্তিনী বলল, “এই আরেক পাগলীর পাল্লায় পড়েছি আমি। আরে বাবা, আমাকে একটা অফিসিয়াল কাজে আলিপুরদুয়ার যেতে হচ্ছে বলেই ফেরার পথে অর্চুকে সাথে নিয়ে আসব বলে ভেবেছি। সঙ্গে আমার অফিসিয়াল সিকিউরিটিও থাকবে। নীতা, লক্ষ্মীদিকে সাথে নিয়ে গেলে সারাটা দিন ওরা আলিপুরদুয়ারে কি করে সময় কাটাবে? সেটা সম্ভব নয় বলেই আমি লক্ষ্মীদিকে বোঝালাম যে লক্ষ্মীদিও যদি আমার সাথে যায় তাহলে অর্চুকে আমার ঘরে আনবার পর তো ওকে কিছু খেতে দিতে পারব না। লক্ষ্মীদি স্নান সেরে রান্নাঘরে ঢুকে কিছু একটা বানাবে। ততক্ষণে তো অনেক দেরী হয়ে যাবে”।
এতক্ষণ ফোনের স্পীকার অন করেই সীমন্তিনী কথা বলছিল। তাই লক্ষ্মী আর নবনীতা দু’জনেই দু’তরফের কথাবার্তা শুনতে পারছিল। এবার সীমন্তিনীর কথা শেষ হতেই লক্ষ্মী একটু গলা তুলে বলল, “ও বৌদিমণি, দিদিমণি বলেছে যে আর কিছু দিনের মধ্যেই তোমার মা বাবা আর ভাইকে একদিন আমাদের এখানে নিয়ে আসবেন। তাই তো আমি কাল যাবার বায়না ছেড়ে দিলুম”।
রচনা এবার খানিকটা বিস্মিত গলায় বলল, “তাই নাকি দিদিভাই? সত্যি মা বাবা আর ভাই তোমার ওখানে যাবে? কই ভাই তো এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলেনি”?
সীমন্তিনী বলল, “এখনও পাকাপাকি ভাবে কবে আনব সেটা ভাবিনি। তবে যখনই আনি তোকে সেটা আগেই জানাবো। এবার তোদের কথা বল তো? তোরা ভালো আছিস তো? রাতের খাবার খেয়েছিস”?
রচনা বলল, “এখানে সব ঠিক আছে দিদিভাই। রাতের রান্না হয়ে গেছে। তোমার সাথে কথা হচ্ছিল না বলেই একটু চিন্তায় ছিলাম। এবারে খেতে বসব। আচ্ছা দিদিভাই, এবার রাখি। তোমাদের সাথে আবার কাল কথা হবে। গুডনাইট”।
সীমন্তিনী “গুডনাইট সোনা’ বলে ফোন নামিয়ে রাখল। মোবাইলেই সময় দেখে নবনীতাকে বলল, “এখনই খাবে না আরেকটু গল্প করবে নীতা”?
নবনীতা জবাব দিল, “একটু আগেই চা খেলাম। একটু পরেই না হয় খাই। আচ্ছা দিদি, বৌদি তোমাকে খুব ভালবাসে তাই না”?
সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁগো নীতা। রচু আমাকে খুব ভালবাসে। আসলে ও মেয়েটাই এমন ওর আশেপাশের সকলকে ভালবাসায় ভরিয়ে দিতে ওর সমকক্ষ কাউকে দেখিনি আমি। আমাকে তো ও বিয়ের অনেক আগে থেকেই পেয়েছে। তখন থেকেই আমি ওর দিদি হয়েছিলুম। কিন্তু বিয়ের পর ও আমাদের বাড়ির বড় ছোট প্রত্যেকটা লোককে এমনভাবে কাছে টেনে নিয়েছিল যে দশ দিন যেতে না যেতেই বাড়ির সকলেই এক মুহূর্ত ওকে চোখের আড়াল করতে চাইত না। আর ও নিজেও কী অদ্ভুতভাবে যে সকলের প্রয়োজন মিটিয়ে যেত সেটা আমি নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস করতে পারতুম না। কিন্তু কয়েক মাস আগে দাদাভাইয়ের সাথে কলকাতায় চলে যেতে হয়েছে বলে ওর মনটাও খুব একটা ভাল নেই। সারা দিনে তিনবার অন্ততঃ আমার সাথে কথা বলা চাইই ওর। লক্ষ্মীদিকে হাজার রকমের নির্দেশ দেয়। তাছাড়া বাড়ির সকলের সাথেও ভাল যোগাযোগ রাখে। নিজের বাপের বাড়ির সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। আসলে ও মেয়েটাই এমন যে ওর সাথে পরিচিত হলে কেউ ওকে না ভালবেসে থাকতে পারবে না”।
নবনীতা সায় দিয়ে বলল, “আমি তো তার সাথে কয়েকটা ঘন্টাই কাটিয়েছি শুধু। আমারও তাকে খুব মিষ্টি আর ভাল মনের মানুষ বলে মনে হয়েছে। আমার থেকেও নিশ্চয়ই বয়সে ছোট হবে। তা সত্বেও কেন জানিনা ওকে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে”।
সীমন্তিনী বলল, “রচু সত্যিই তেমনি একটা মেয়ে। বয়সে ও বোধহয় তোমার চেয়ে প্রায় বছর চারেক ছোট হবে। তাই তুমিও তাকে অনায়াসে তুই বা তুমি করে বলতে পারো। শুনেছি ওর দিদি অর্চনাও নাকি একই রকম স্বভাবের। ছোটবেলায় নাকি অর্চনা রচুর চাইতেও সুন্দরী ছিল। রচুদের বাড়িতে ওদের দু’বোনের একটা পুরনো ছবি আমি দেখেছিলাম। অবশ্য বিয়ের পর গত কয়েকটা বছরে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে ওর সমস্ত লালিমা সমস্ত সৌন্দর্যই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমি যখন ওকে প্রথম কালচিনি হাসপাতালের বেডে দেখেছিলাম সেদিন আমি তো দুরের কথা, প্রথম দেখায় ওর ছোটভাইও ওকে চিনতে পারছিল না। অবশ্য এখন হয়ত ওর স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি নিশ্চয়ই হয়েছে। ওর ডাক্তার তো বলল যে ও এখন শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। মানসিক অবসাদটা কাটতে নিশ্চয়ই আরও কিছু সময় লাগবে। তাই তো ওকে কিছুদিন আমার এখানে এনে রাখতে চাই। এখানে এলে আমরা তিনজন মিলে ওকে সব সময় হাসিখুশীতে ভরিয়ে রাখব বুঝেছ লক্ষ্মীদি”।
লক্ষ্মী বলল, “সেকথা আর তোমায় বলতে হবে দিদিমণি, আমার বৌদিমণির দিদিকে আমি সব রকম ভাবে যত্নে রাখব, দেখে নিও”।
সীমন্তিনী নবনীতার হাত ধরে বলল, “নীতা, আমাকে তো সারাটা দিন অফিসের কাজেই বাইরে থাকতে হয়। তাই এতদিন চাইলেও অর্চুকে এখানে আনতে পারিনি। তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ, তুমি তো দিনের পুরোটা সময় ওর সাথে থাকবে। তাই ওর মন ভাল করে তুলতে তুমিই সবচেয়ে বেশী সুযোগ পাবে। বয়সে ও তোমার চেয়ে মাত্র বছর দুয়েকের ছোট হবে। তাই খুব সহজেই তোমাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে। আমি কিন্তু মনে মনে সেটাই চাই। তুমি আমাকে নিরাশ কোরনা প্লীজ। আর তোমার যে কাজের কথা ভাবছি সেখানে তুমি সামনের মাসের এক তারিখ থেকে কাজে যোগ দিতে পারবে। তাই মাঝের ক’টা দিন তোমরা দু’জন যেন দুই বান্ধবীর মত হেসে খেলে ওকে আগের চেয়ে অনেক উৎফুল্ল আর প্রাণবন্ত করে তুলতে পারো”।
নবনীতাও সীমন্তিনীর একটা হাত ধরে বলল, “অবশ্যই করব দিদি। তোমার প্রিয়জন কাউকে আমি কি আর অবহেলা করতে পারি, বল? আমি সব রকম ভাবে তোমার পরামর্শ মেনে চলতে চেষ্টা করব”।
**************