Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 130)

রবিবার বলে মহিমার কাজ আজ অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশী। আজ পনেরজন ক্লায়েন্টের কাছে এসকর্ট পাঠাতে হবে। ইনস্টিটিউটের কাজ শেষ হবার পর সে ইনস্টিটিউট বন্ধ করে নিজের প্রাইভেট রেস্ট রুমে এসে ঢুকল। আগে সে ইনস্টিটিউটে নিজের চেম্বারে বসেই তার এসকর্ট ব্যবসার যোগাযোগ আর কথা বার্তা চালিয়ে যেত। কিন্তু রতীশ তার ইনস্টিটিউটে যোগ দেবার পর সে আর নিজের চেম্বারে বসে সে’সব করে না। রতীশ যাতে কোনভাবেই তার এসকর্ট ব্যবসার কথা জানতে না পারে, তাই সে এমন সতর্কতা অবলম্বন করেছে। সাড়ে দশটার পর ইনস্টিটিউট বন্ধ করে বরুন সুজয় আর বীথিকাকে নিয়ে সে তার রেস্ট রুমে এসে ঢোকে। তারপর বরুন সুজয় আর বীথিকে তাদের নিজের নিজের কাজের দায়িত্ব দিয়ে বিদেয় করে সে অন্য সব ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করে। তাদের জন্য এসকর্টের বন্দোবস্ত করে।
 

বিমল আগরওয়ালা আজ আবার আসবে বলেছে। রতীশ কাজে যোগ দেবার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই মহিমা নিজে কোন ক্লায়েন্টের মনোরঞ্জন করা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। কিন্তু এমন বাছা বাছা কয়েকজন ক্লায়েন্ট আছে, যাদেরকে সে আর ফিরিয়ে দিতে পারে না। নিজের শরীর বা মন না চাইলেও নিজের এই অনৈতিক ব্যবসাটা নির্ঝঞ্ঝাটে চালিয়ে নিয়ে যেতে, হাতে গোনা কয়েকজন পুরুষ ক্লায়েন্টকে সুখ দিতেই হয়। তবে রতীশ কাজে যোগ দেবার পর গত একমাসে সে শুধুমাত্র নিজের স্বামী অরিন্দম ছাড়া কেবল বিমল আগরওয়ালার কাছেই নিজের শরীরটাকে সমর্পন করেছে। তার নিজের ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুক, আট দশ দিন বাদে বাদেই বিমল তার কাছে আসে। ঘন্টাখানেক ধরে মহিমার লোভনীয় শরীরটা নিয়ে নিজের বাসনার ক্ষুধা মেটায়। আজ আবার বিমল আসছে। বিমল নিশ্চয়ই একই উদ্দেশ্যে আসছে। কিন্তু মহিমার মনটা আজ কেন যেন সায় দিচ্ছে না। বিমলকে আজ নিজের শরীরটা ভোগ করতে দিতে তার একদম ইচ্ছে করছে না। কিন্তু বিমল তার একটা সময় খুব উপকার করেছে। বিমলের সাহায্য না পেলে সে ওই সময়ে তার ছেলেমেয়ে দুটিকে ব্যাঙ্গালোর আর আহমেদাবাদে পাঠাতে পারত না। তাই তারপর থেকে বিমল প্রায় প্রতি মাসেই দু’বার বা তিনবার তার শরীরটাকে ভোগ করে। প্রথম প্রথম পয়সার তাগিদেই সে বিমলের সাথে এ’সব করত। কিন্তু এখন আর তার পয়সার অভাব নেই। তাই সে নিজে কাস্টমার নেওয়া পুরোপুরি ভাবেই ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু উকিল আর পুলিশ অফিসারদের আবদার তাকে রাখতেই হয়। এসকর্ট ব্যবসা চালাতে গেলে এদের সাথে ভাল রিলেশান রাখাটা নিতান্তই দরকারি। ব্যতিক্রম শুধু এই বিমল। বিমল তার ব্যবসার ব্যাপারে তেমন কোন সাহায্য করে না। কিন্তু একটা সময় সে মহিমাকে বড়সড় রকমের এমন আর্থিক সাহায্য করেছিল যে মহিমা নেহাত কৃতজ্ঞতা বোধেই বিমলের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে এখনও। কিন্তু আজ কেন জানিনা বিমলের কাছে নিজের শরীরটাকে মেলে ধরতে তার একেবারেই ইচ্ছে করছে না।
 

বিমলকে সাড়ে বারোটায় আসতে বলেছে সে। তার আগে নিজের অন্য কাজগুলো মহিমা গুটিয়ে নিয়েছে। সময়ের আগেই বিমল এসে পৌঁছল। ইচ্ছে না থাকলেও বিমলের আবদার সে ফেলতে পারল না। আধঘণ্টা ধরে মহিমাকে ভোগ করে তৃপ্ত হয়ে বিমল তাকে রেহাই দিল। কিন্তু কাজের শেষে বিমল মহিমাকে বলল, “ডার্লিং, তোমার সাথে আমার আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে। আর আমি আজই সেটা বলতে চাই”।

মহিমা নিজের নগ্ন দেহটাকে ভালভাবে পোশাকাচ্ছন্ন করে বলল, “বল কি বলবে”?

বিমল আগরওয়ালা বলল, “ডার্লিং, রতীশবাবু কেমন কাজ করছে? ঠিক ঠাক আছে তো”?

মহিমা একটু ভুরু কুঁচকে বলল, “রতীশ? তুমি রতীশের ব্যাপারে এমন কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলতে চাও বিমল”?

বিমল হেসে বলল, “আরে না না, রতীশ বাবুর ব্যাপারে আমি তেমন কিছু বলব না। আমি বলতে চাই তার স্ত্রীর কথা। জবরদস্ত মাল একটা। তুমি রতীশবাবুর বৌকে দেখেছ কখনও”?

মহিমা বিমলের মুখে রচনার কথা শুনে মনে মনে ভীষন অবাক হলেও মুখে সে ভাব প্রকাশ না করে বলল, “রতীশের বৌকে তো আমি ঠিক দেখিনি বিমল। কিন্তু তুমি হঠাৎ তার বৌয়ের ব্যাপারে এত ইন্টারেস্টেড হয়ে উঠেছ কেন? খুব সেক্সী নাকি সে”?

বিমল নিজের শার্টের বুক পকেট থেকে একটা ছবি বের করে মহিমার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল, “এই ছবিটা দেখ। তাহলেই বুঝতে পারবে কেমন মাল”।

মহিমা হাত বাড়িয়ে ছবিটা নিয়ে তার দিকে তাকিয়েই ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠল। এ যে সত্যি রচনার ছবি! কিন্তু নিজের মনের ভাব খুব পারদর্শিতার সাথে গোপন রেখে সে জিজ্ঞেস করল, “কার ছবি এটা? রতীশের বৌয়ের”?

বিমল আগরওয়ালা মুখ বেঁকিয়ে হেসে জবাব দিল, “হ্যাঁ ডার্লিং। এটা রতীশবাবুর বৌয়েরই ছবি। নাম রচনা। কি সাংঘাতিক মাল দেখেছ? এমন মাল তোমার কোম্পানীতে আর একটাও আছে”?

মহিমা ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড অবাক হলেও সন্তর্পণে মুখের ভাব বজায় রাখতে রাখতে বলল, “হু, সত্যিই দারুণ সুন্দরী। আমি তো একে দেখিনি কখনও। কিন্তু ছবিটা দেখে তো দারুণ লাগছে। কিন্তু তুমি তার ছবি পেলে কোত্থেকে বিমল”?

বিমল শয়তানী হাসি হাসতে হাসতে বলল, “অনেক কষ্ট করে যোগার করেছি ডার্লিং। তোমার কাছে তো কতবার বলেছি যে এমন একটা ঊণিশ কুড়ি বছরের মাল আমাকে একদিন দাও, যে বিবাহিতা আর নিজের স্বামী ছাড়া অন্য কারুর সাথে সেক্স করেনি। তুমি তো সেটা দিতে পারলে না। আমার আরেক বন্ধু এ মেয়েটার খোঁজ এনেছিল মাস দুয়েক আগে। কিন্তু একটা মুস্কিল হয়ে গেছে বলেই তোমার কাছে আসতে হল আমাকে”।

মহিমা এবার চেষ্টা করেও যেন নিজের গলার স্বর আয়ত্বে রাখতে পারল না। প্রায় শুকনো গলায় সে বলল, “এ ছবি দিয়ে আমি কী করব”?

বিমল আগরওয়ালা বলল, “শোনো ডার্লিং। তোমার সেন্টারের অন্যদের মত রতীশও যে তোমার আসল ব্যবসায় নেমে পড়বে সে’কথা তো আমি জানিই। আর তোমার লেডি কাস্টমারদের কাছে তার ডিমাণ্ডও খুব হবে। আমি জানি তাকে দিয়ে তুমি অনেক পয়সা কামাবে। আর রতীশের বৌকেও তুমি যে একটু চেষ্টা করলেই তোমার ব্যবসার এসকর্ট বানিয়ে নিতে পারবে, এটাও আমি জানি। কিন্তু আমি চাই রতীশবাবুর বৌকে অন্য কেউ নেবার আগে আমি যেন প্রথম খেতে পারি। আর এ কাজটা আমার জন্যে তুমিই করতে পার”।

বিমলের কথা শুনে মহিমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। রচনার ওপর এমন একটা বিপদ ঘণিয়ে আসছে ভেবে সে মনে মনে অস্থির হয়ে উঠলেও নিজেকে স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “দ্যাখ বিমল, রতীশ সবে মাস খানেক হল আমার এখানে কাজে যোগ দিয়েছে। ওকে আমি এখনও আমার আসল ব্যবসায় নামাতে পারিনি। একটু সময় লাগবে। কারন ও যতটা ভদ্র ঠিক ততটাই মুখচোড়া। তাই ওকে লাইনে আনতে আমাকে ধীরে সুস্থে এগোতে হবে। এমন লাজুক স্বভাবের একটা ছেলেকে এ লাইনে নামাতে অনেকটা সময়ের প্রয়োজন। আর রতীশের বৌকে তো আমি চিনিই না। তাকে লাইনে আনতে চাইলেও হুট করে তো আনতে পারব না। অনেক সময় লাগবে। কিন্তু তুমি তো বললে দু’মাস আগে তুমি এ ছবি যোগার করেছ। এতদিন তো এ ব্যাপারে আমাকে কিছু বলনি তুমি”?

বিমল আগরওয়ালা বলল, “তোমার কাছে যে এ ব্যাপারে আমাকে আসতে হবে, সেটা তো আমি আগে জানতাম না ডার্লিং। কাজটা আরেকজন করবে বলে কথা দিয়েছিল। কিন্তু অন্য একটা ব্যাপারে সে নিজেই থানা পুলিশের জালে জড়িয়ে পড়েছে বলেই সে আর এদিকের কাজটা করতে পারেনি। আর আমি তো নিজেই জানি, মালটা তোমার হাতের আওতার ভেতরেই আছে। তুমিও একদিন না একদিন মালটাকে ঠিক লাইনে এনে তুলবেই। হয়ত তোমার মাধ্যমেই আমিও কখনও মালটাকে ভোগ করতে পারব। কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে আমার আগে তুমি অন্য কারো হাতে মালটাকে তুলে দিতে পার। তাই আমি তো আর তাকে ফ্রেশ খেতে পারব না। তাই আর কোথাও না গিয়ে আমি তোমার কাছেই এলাম সরাসরি। তুমি মালটাকে তোমার বড়শীতে গেথে তোল। আর সবার আগে তাকে আমাকে ভোগ করতে দিও। তুমি তার যা রেট ধরবে আমি তোমাকে তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী পয়সা দেব। কিন্তু এই মালটাকে আমার চাইই চাই”।

মহিমা বিমলের কথা শুনে রচনার সমূহ বিপদের কথা ভেবে ভেতরে ভেতরে চিন্তিত হয়ে উঠল। রচনার ওপর বিমলের নজর যখন একবার পড়েছে, তাহলে আজ হোক বা কাল হোক বিমল রচনাকে ভোগ করবেই। ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়েও কোনও ফল হবে না। কিন্তু রতীশ আর রচনাকে সে পরিচয় হবার দিনটি থেকেই অন্যভাবে ভালবেসে ফেলেছে। তাই রতীশকে যেমন সে নিজের এসকর্ট ব্যবসায় নামাতে চায়নি, তেমনই রচনাকেও সে তার ব্যবসার মূলধন করবার কথা কখনও ভাবে নি। দেখতে অত সেক্সী মনে না হলেও রচনা সত্যিই খুবই সুন্দরী। এসকর্টের ব্যবসায় নামলে তার ক্লায়েন্টের অভাব হবে না। কিন্তু রচনার অমায়িক ব্যবহার আর কথাবার্তায় তার মনে সে চিন্তা কখনই আসেনি। রচনাকে দেখলেই খুব পবিত্র পবিত্র মনে হয়। ওর সুন্দর মিষ্টি মুখটা মনে পড়লেই মহিমার মনটা যেন শান্ত হয়ে ওঠে। রচনা আর রতীশের সুন্দর ব্যবহার দেখে আর তাদের মিষ্টি কথা শুনে মহিমাও মনে মনে তাদের দু’জনকে নিজের বড় আপন বলে ভাবতে শুরু করেছে। কিন্তু বিমল আগরওয়ালার হাতে রচনা নষ্ট হয়ে যাক, ওদের সুন্দর সংসারে অশান্তি নেমে আসুক, এমনটা মহিমা ভাবতেও চায় না। কিন্তু রচনাকে বিমলের হাত থেকে সে বাঁচাবেই বা কি করে? বিমল তার কাছে যে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে সে প্রস্তাব সে মেনে না নিয়ে বিমলকে ফিরিয়ে দিলে বিমল তো অন্যভাবে রচনাকে ভোগ করবার প্ল্যান করবে। হয়ত অন্য কাউকে সে এ কাজের এ দায়িত্ব দেবে। আর তখন রচনার ওপর কোনদিক থেকে কখন বিপদ নেমে আসবে, তা সে নিজেও বুঝতে পারবে না। তার চেয়ে বিমলের কাজটা হাতে নিয়ে নিলে তবু কিছুদিনের জন্য বিমলকে চুপ করিয়ে রাখা যাবে। আর রচনাকে বাঁচাবার চেষ্টা করা যাবে। ভেবেচিন্তে যে করেই হোক একটা পথ বের করতেই হবে। আর কোনভাবেই যদি রচনাকে বাঁচাবার কোন পথ খুঁজে না পায়, তাহলে রতীশকে বলবে সে যেন রচনাকে নিয়ে কলকাতা ছেড়ে চলে যায়। রতীশ বা রচনার কোনও রকম বিপদ হোক এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারবে না। রতীশ চলে গেলে তার ইনস্টিটিউটের ক্ষতি হবে। তা সত্বেও সে প্রয়োজন হলে রতীশকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে রচনাকে বাঁচাবে।
 

মহিমাকে চুপ করে থাকতে দেখে বিমল আগরওয়ালা বলল, “কি হল ডার্লিং? কি ভাবছ? এ মালটাকে জালে ফেলতে পারলে তোমার ব্যবসাও চড়চড়িয়ে বাড়বে দেখো। হেভি ডিমাণ্ড হবে মার্কেটে। কিন্তু সবার আগে আমিই মালটাকে পেতে চাই বলে তোমাকে এভাবে বলছি। ওকে প্রথমদিন করবার সুযোগ পেলে আমি তোমাকে এক লাখ দেব ডার্লিং”।

মহিমা একটু আমতা আমতা করে বলল, “কী যে বলি তোমাকে সেটাই ভাবছি বিমল। তবে এটা যদি সত্যিই রতীশের বৌয়ের ছবিই হয়ে থাকে তাহলে তুমি যা বলছ সেটা মিথ্যে হবে না। মার্কেটে এর ডিমাণ্ড বেশ ভালই হবে। কিন্তু আমি তো এখনও রতীশকেই নিজের আসল কাজে লাগাতে পারিনি। ওর মত ভদ্র ছেলেকে লাইনে নামাতে বেশ সময় লাগবে। আর তুমি তো জানই কাউকে আমি জোর করে এ লাইনে আনিনা। তবে রতীশকে যদি লাইনে আনতে পারি তাহলে তার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমি ওর বৌকেও জালে ফেলতে পারব। কিন্তু এ’সব করতে তো বেশ সময় লাগবে। চট করেই তো আমি কিছু করতে পারব না। রতীশকে খুব ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে আস্তে আস্তে পটাতে হবে। হয়ত মাস ছয়েকও লেগে যেতে পারে। বা তার বেশীও লাগতে পারে। কিন্তু তুমি কি আর ততদিন এ ছবিটাকে বুকে নিয়ে ঘুরেই শান্ত থাকতে পারবে”?

বিমল আগরওয়ালা বলল, “তুমি যদি আমাকে পাকা কথা দাও যে কাজটা তুমি করবে, তাহলে সে আশাতেই আমি বসে থাকতে পারব। লাগুক না ছ’মাস। তুমি চেষ্টা কর। আর তুমি নিজে তো আমার হাতে আছই। তোমার কাছ থেকে মাঝে মাঝে এসকর্ট নিয়ে আর মাঝে মধ্যে তোমাকে করেই যেভাবে দিন কাটাচ্ছি, সে ভাবেই না হয় আরও ছ’টা মাস কাটিয়ে দেব। কিন্তু ওই মালটা অন্য কারো ভোগে লাগবার আগে আমিই যেন ওকে আমার ভোগে লাগাতে পারি, তুমি শুধু এই কথাটা আমায় দাও ডার্লিং। তাহলেই হবে”।

মহিমা মনে মনে একটু আশ্বস্ত হয়ে বলল, “বেশ, তাহলে আমি তোমার কথা মত ওকে লাইনে আনার চেষ্টা করব। কিন্তু তোমার কাছে মেয়েটার আর কোনও ছবি আছে বিমল”?

বিমল জবাব দিল, “না ডার্লিং, আর কোন ছবি আমার কাছে নেই। শুধু এটাই আছে। কিন্তু তুমি কি ওর কোনও ছবি তোমার কাছে রাখতে চাইছ”?

মহিমা বলল, “যদি অন্য কাউকে কাজে লাগাতে হয়, তাহলে তো একটা ছবির প্রয়োজন পড়বেই। নইলে কাজে ভুল হয়ে যেতে পারে”।

বিমল বলল, “তাহলে তুমি এ ছবিটাই তোমার কাছে রেখে দাও। আমার কাছে তো আর ছবি নেই”।

মহিমা এবার রচনার ছবিটাকে আবার দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল, “এ ছবিটা কোত্থেকে পেয়েছ তুমি? তুমি নিজে তুলেছ”?

বিমল বলল, “না ডার্লিং। আমি তো মালটাকে নিজের চোখে দেখিইনি এখন পর্যন্ত। এই ছবিটা দেখেই ফিদা হয়ে গেছি। আগে যে কাজটা করবে বলে বলেছিল, সেই-ই এটা আমাকে দিয়েছিল। একবার ভেবেছিলাম রতীশবাবুর সাথে একদিন তার বাড়িতে গিয়ে স্বচক্ষে দেখে আসব। কিন্তু সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তোমার এখানে কাজে যোগ দেবার পর রতীশবাবুর সাথেও তো আমার দেখা হয় নি। কিন্তু আবার ভাবছি এতে আসল কাজটা বিগড়ে না যায়”।

মহিমা বলল, “ঠিক আছে বিমল। আমি তাহলে এ ছবিটাই রেখে দিচ্ছি আমার কাছে। কিন্তু আগেই বলে রাখছি, কাজটা সমাধা করতে কিন্তু বেশ সময় লাগবে। তুমি কিন্তু আমাকে বেশী প্রেসার দিও না কাজটা তাড়াতাড়ি করবার জন্য”।

বিমল বলল, “ঠিক আছে ডার্লিং। আমি তোমাকে সময় নিয়ে আর কোন কথা বলব না। আমি জানি, তুমি ওকে ঠিক লাইনে আনতে পারবে। কিন্তু আমিই যেন ওর প্রথম ক্লায়েন্ট হই। এ’দিক দিয়ে তুমি আমাকে ঠকিও না প্লীজ”।

মহিমা বলল, “আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি বিমল। যতই সময় লাগুক কাজটা করতে, তুমিই হবে ওর প্রথম ক্লায়েন্ট। ওকে”?

বিমল “ওকে ডার্লিং” বলে মহিমাকে জড়িয়ে ধরে তার গালে আর ঠোঁটে দুটো চুমু খেয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। আর মহিমা দু’হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে চোখ বুজে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ল। রচনার নিষ্পাপ সুন্দর মুখটা তার মনের পর্দায় ভেসে উঠল। আর সেই সাথে রাজ্যের দুশ্চিন্তা।


******************

আজ দিন সাতেক হল নবনীতা সীমন্তিনীর এখানে এসেছে। এই ক’টা দিনেই তার মনে হচ্ছে সীমন্তিনী যেন তার কত কাছের, কত আপনজন। গত কয়েকটা দিন সীমন্তিনী যতক্ষণ নিজের কোয়ার্টারে ছিল ততক্ষণ প্রায় সব সময়ই তারা দু’জন একসাথে সময় কাটিয়েছে। সীমন্তিনীর মিষ্টি কথাবার্তায় আর অমায়িক ব্যবহারে নবনীতার মনে হচ্ছে সীমন্তিনী যেন ঠিক তার নিজেরই দিদি। সীমন্তিনী কাজে বেরিয়ে গেলে নবনীতা নিজের আর সীমন্তিনীর ঘর দুটো সাফ সুতরো করে ভালো করে সব কিছু গোছগাছ করে রাখে। তারপর লক্ষীদির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কিছু করবার চেষ্টা করে। বিকেলের দিকে লক্ষীদির সাথে বেড়িয়ে আশেপাশে একটু ঘুরে আসে। এ পাহাড়ি ছোট্ট শহরটা সত্যিই খুব সুন্দর। কলকাতার মত হুলুস্থুল হৈ হট্টগোল এখানে নেই। শুধু বাজার এলাকাটাই যা একটু কোলাহলমুখর। দু’চার জনের সাথে কথা বার্তা বলেও তার মনে হয়েছে, এখানকার লোকগুলো বেশ সহজ সরল। শহুরে নোংরামো নেই তাদের ভেতরে। আর প্রাকৃতিক পরিবেশ তো ভীষণ রকমের সুন্দর। কোয়ার্টারের জানলায় দাঁড়িয়ে দুরের সবুজ পাহাড় গুলোর দিকে তাকিয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়। ওদিকে চেয়ে থাকলেই মনটা এক অদ্ভুত শান্তিতে ভরে ওঠে যেন। তখন তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটণাগুলো কতগুলো দুঃস্বপ্নের মতই মনে হয় তার।
 

সীমন্তিনীর এখানে আসবার পর থেকে গত কয়েকদিনের ভেতর তিন চার দিন সীমন্তিনীর অফিস থেকে ফিরতে বেশ দেরী হয়েছিল। তবে সীমন্তিনী আগেই ফোন করে সেকথা জানিয়ে দিত। আজ সীমন্তিনী এখনও না ফেরায় নবনীতার খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। আজ যে সীমন্তিনীর ঘরে ফিরতে দেরী হবে এ’কথা সে আগে জানায়নি। অবশ্য সীমন্তিনী তাকে আগেই বুঝিয়েছে, পুলিশের চাকরিতে ডিউটি আওয়ার্স বলে কোনও কথা নেই। যখন তখন যে কোনও কাজে তাদেরকে বাড়ি বা অফিস ছেড়ে ডিউটিতে চলে যেতে হয়। দিন তিনেক আগে সীমন্তিনী একবার দেরী করে কোয়ার্টারে আসবার পরেও অন্যান্য দিনের মত নবনীতার সাথে গল্প করতে বসেনি। তাকে একটু চিন্তিত দেখাচ্ছিল। সেদিন চা খেয়েই নবনীতাকে বলেছিল, “নীতা আমার একটা কথা শোনো বোন”।

নবনীতা জিজ্ঞাসু চোখে সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলেছিল, “হ্যাঁ দিদি, বলো”।

সীমন্তিনী বলেছিল, “দ্যাখো নীতা, আমাদের পুলিশের যেমন ডিউটি আওয়ার্স বলে কিছু নেই তেমনি আমরা সব সময় সকলের কাছে অনেক সত্যি কথা বলতে পারিনা। আমাদের ডিউটির খাতিরেই আমাদের পরিজন বা বন্ধুবান্ধবদের কাছে আমাদের অনেক কিছুই লুকিয়ে রাখতে হয়। নইলে মাঝে মাঝে আমাদের নিজেদেরই বিপদে পড়তে হয়। আমি নিজের প্রাণের চাইতেও যাদেরকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসি, সেই দাদাভাই আর রচুর কাছেও আমার কর্মসংক্রান্ত ব্যাপারগুলো অনেক সময়েই লুকিয়ে রাখতে হয়। তাই অনেক সময় হয়তো তোমার কাছেও আমাকে অনেক কিছু লুকিয়ে যেতে হবে। কিন্তু শুধু আমার একটা কথায় আমার সাথে চলে আসবার পর তুমি যদি কখনও বুঝতে পারো যে আমি তোমার কাছে কোন কথা লুকিয়ে গেছি, তাহলে তুমি মনে কষ্ট পেতে পারো। কিন্তু আমি তোমাকে অনুরোধ করছি, তুমি সেভাবে কষ্ট পেও না ভাই। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনও ব্যাপারেই আমি তোমাকে কখনও মিথ্যে কথা বলব না। কিন্তু আমার অফিসিয়াল কিছু কিছু ব্যাপার তোমাকে আমি জানাতে পারব না। তুমি এটাকে কিন্তু তোমার প্রতি আমার অবহেলা বলে বিবেচনা কোর না বোন”।
 

নবনীতা সীমন্তিনীর কথা শুনে বলেছিল, “দিদি, তোমার কথা আমি বুঝেছি। আমারও ধারণা যে পুলিশের চাকরি যে সে চাকরি নয়। এ কাজে অনেক ঝুঁকি আছে। জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত। আর মেয়েদের পক্ষে তো ঝুঁকি আরও বেশী। তাই তোমাদের অফিসিয়াল ব্যাপারে যে কিছু কিছু গোপনীয়তা রাখতেই হবে সে কি আর আমি বুঝি না”?

সীমন্তিনী নবনীতাকে কাছে টেনে এনে তার কপালে আদর করে একটা চুমু খেয়ে বলেছিল, “লক্ষ্মী বোন আমার। আমি জানি তুমি খুব ভাল মনের একটা মিষ্টি মেয়ে। তাই তো তোমাকে এভাবে আমি নিজের কাছে নিয়ে এসেছি। তা হ্যারে বোন, আজ পরিতোষের সাথে কথা হয়েছে তোমার”?

নবনীতা জবাবে বলেছিল, “হ্যাঁ দিদি। দুপুরের দিকে আমার মোবাইলে ফোন করেছিল একবার। আমার এখানে কেমন লাগছে, জায়গাটা কেমন, তোমাকে আর লক্ষ্মীদিকে কেমন লাগছে, এসবই জিজ্ঞেস করছিল”।
 

সীমন্তিনী একটু মুচকি হেসে ঠাট্টা করে বলেছিল, “তুমি নিশ্চয়ই বলেছ যে আমি তোমার ব্যাপারে কিছু ভাবছি না। তোমাকে দিয়ে শুধু আমার ঘরের কাজকর্ম করিয়ে যাচ্ছি, তাই না”?
 

নবনীতা অভিমানী গলায় বলেছিল, “তোমার সম্বন্ধে আমি তেমন কথা বলতে পারি বলে ভাবো তুমি দিদি? আমি যে এখানে খুব ভাল আছি, খুব স্বস্তিতে আছি একথাই বলেছি”।
 

সীমন্তিনী হেসে বলেছিল, “আরে আমি তো ঠাট্টা করছিলাম রে পাগলী। তবে শোনো নীতা, একটা কাজের কথা বলি তোমাকে এখন। এরপর কিছুটা সময় কিন্তু তুমি আমার রুমে থাকবে না। একটা জরুরী ব্যাপারে আমাকে কয়েকজনের সাথে ফোনে কথা বলতে হবে। তখন আমি চাই না তুমি বা লক্ষ্মীদি কেউ আমার কাছাকাছি থাকো। তবে তার আগে তোমাকে একটা কথা বলি। কথাটা ভাল করে মন দিয়ে শোনো। তারপর আমি ওদিকে ফোনে ব্যস্ত থাকতে থাকতে আমার কথাটা নিয়ে ভালো করে ভাবনা চিন্তা কোর। তারপর আমাকে তোমার মতামত জানিও, কেমন”?
 

নবনীতা কিছু না বলে মাথা কাত করে সম্মতি দিতে সীমন্তিনী বলেছিল, “এখানে বাজারে একটা গারমেন্টস শপ আছে। তাদের নিজস্ব টেইলারিং আর ডিজাইনিং-এর ইউনিট আছে। সেখানে পনের কুড়ি জন মেয়ে মহিলা কাজ করে। তারা এমন কিছু কিছু গারমেন্টস তৈরী করে যা বাজারে আর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। শুধু তাদের নিজস্ব ওই গারমেণ্টসের দোকানেই পাওয়া যায়। তাই দোকানটার এ শহরে আলাদা একটা নামডাক আছে। তার মালিক এক বিধবা মহিলা। এখন তাদের দোকান আর ফ্যাক্টরী মিলে প্রায় তেইশ চব্বিশ জন এমপ্লয়ী। সে ভদ্রমহিলার সাথে আমার ভাল পরিচয় আছে। কোনও একটা সময়ে একটা উটকো ঝামেলার হাত থেকে তাকে আমি বাঁচিয়ে ছিলাম। তখন থেকেই তিনি আমাকে খুব স্নেহ করেন। তুমি যদি চাও তাহলে তুমি তার ওখানে কোনও একটা কাজে ঢুকে পড়তে পার। আমি তাকে এখনও কিছু বলিনি। তবে আমি অনুরোধ করলে মনে হয় সে তোমাকে নিশ্চয়ই কাজে রাখবে। কিন্তু আমি চাই তুমি আগে আমার কথাটা ভেবে দেখ। তুমি তাদের ডিজাইনিং টেলরিং ইউনিটে কাজ করতে চাও, না তাদের শোরুমে সেলস গার্ল হতে চাও, সেটা ভেবে দেখ। তোমার যদি মনে হয় তুমি সেটা করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে তাহলে আমার ফোনে কথা বলা শেষ হলে আমরা এ বিষয়ে কথা বলব। চাইলে তুমি এ সময়ের মধ্যে পরিতোষের সাথেও কথা বলে নিতে পারো। তবে আমার একটা অনুরোধ মাথায় রেখো ভাই। সেখানে তোমার পূর্বজীবনের কোনও কথা কারো সাথে শেয়ার করবে না। সেখানে তোমার পরিচয় হবে শুধু আমার মাসতুতো বোন হিসেবে। আর তোমার বাবার আর্থিক অবস্থা ভাল নয় বলেই তুমি আমার কাছে এসেছ এমন কথাই সবাইকে বলবে”।
 

প্রায় ঘন্টাখানেক বাদে সীমন্তিনী তার ঘর থেকে বেড়িয়ে নবনীতার ঘরে এসেছিল। ততক্ষণে নবনীতা পরিতোষের সাথেও ফোনে কথা সেরে নিয়েছিল। পরিতোষ তাকে এক কথায় বলেছিল যে সীমন্তিনীকে সে চোখ বুজে ভরসা করতে পারে। তবে ডিজাইনিং আর টেলারিং-এর ইউনিটে কাজে ঢুকলেই বোধহয় বেটার হবে। কারন ভেতরের কাজকর্মগুলো শিখে নিতে পারলে ভবিষ্যতে নবনীতা নিজেই হয়তো কোথাও এমন একটা কাজ শুরু করতে পারবে। শো-রুমের সেলস গার্ল হলে তো উন্নতির তেমন সুযোগ থাকবে না।

সীমন্তিনীকে সে পরিতোষের কথাগুলোই বলেছিল। তখন সীমন্তিনী বলেছিল দু’এক দিনের ভেতরেই সে ওই দোকানের মালিকের সাথে কথা বলবে।
 

আজও সীমন্তিনীর ফিরতে দেরী হচ্ছে। সন্ধ্যা ঘণিয়ে এসেছে। নবনীতা সামনের বারান্দায় পায়চারী করতে করতে বার বার সামনের পথের দিকে তাকাচ্ছিল। সীমন্তিনী ঘরে ফিরে এলেই তার মনটা কেমন যেন চনমনে হয়ে ওঠে। তাই রোজ দিনের শেষে এ সময়টাতে সে অধীর হয়ে সীমন্তিনীর জন্য অপেক্ষা করে। বড় ভাল লাগে কারুর জন্যে এভাবে প্রতীক্ষা করতে। গত সাত বছরে তার জীবনের ওপর যত ঝড় ঝাপটা বয়ে গেছে, তাতে করে এক সপ্তাহ আগেও, কলকাতায় থাকতে সে ঘূণাক্ষরেও ভাবেনি যে এক সপ্তাহ পর সে বিশেষ একজনের জন্যে এভাবে প্রতীক্ষায় থাকবে।

(To be cont'd ......)
______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 11-03-2020, 10:12 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)