11-03-2020, 03:20 AM
পর্ব-১৪
দরজার তালা কোন রকমে খুলে, পুবালির ঘরের বিছানায় শুইয়ে দেয় বন্দনা কে, মাথার পেছনে দুটি বালিশ দিয়ে মাথাটা একটু উঁচু করে দেয়। গায়ে চাদর ঢাকা দেবার সময় বুকের ওপরে নজর পরে যায় স্যামন্তকের। বুকের নরম তুলতুলে উপরি অংশে আঁচরের দাগ, দাঁতের দাগ। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় স্যামন্তকের, ঐ দেখে। হাত দিয়ে দেখবে কি দেখবে না ভেবে পায়না। বন্দনা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে স্যামন্তক ওর দুই বুকের ক্ষত দেখছে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় বন্দনা, নিজে থেকে চাদরটা টেনে বুক ঢেকে ফেলে। সেটা বুঝতে পেরে স্যামন্তক বেশ লজ্জায় পরে যায়।
স্যামন্তক বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে “বাড়ির ফোন নাম্বারটা দাও, তোমার বাবাকে একবার জানানো উচিৎ। পরশু বেরিয়েছ না বলে, তারা অনেক চিন্তায় থাকবেন।”
“না, কি হবে জানিয়ে তাদের। আমি ঠিক হলে চলে যাবো এখান থেকে” ভয়ে আর গ্লানিতে ভরা বন্দনার চোখ ছলছল করে ওঠে “বাবা মা সবাই আমাকে বারবার বারন করেছিল, কারুর কথা আমি শুনিনি। আমার তো এই হবার ছিল।”
স্যামন্তক ওর পাশে বসে ওর মুখটা নিজের হাতের মধ্যে করে নিয়ে দুচোখে গভীর ভাবে তাকায়। সেই গভীর চাহনিতে বন্দনার মনে হয় যেন ওর বুকের অলিগলি সব কিছু যেন স্যামন্তক দেখতে পাচ্ছে। ওর হাতের উষ্ণ পরশে বন্দনার ক্ষত বিক্ষত গালে যেন এক কেউ চন্দনের শীতল প্রলেপ লাগিয়ে দেয়।
—“আমি আছি তো ভয় কিসের, ফোন নাম্বারটা দাও ফোন করে দেই, বাবা মা চিন্তায় আছেন। তাদের দিকটা তো একবার ভেবে দেখনি।”
মনের ভেতর থেকে কেউ যেন চিৎকার করে বলে “তুমি কে?” তারপরে বন্দনা বাড়ির ফোন নাম্বারটা স্যামন্তক কে দিয়ে দেয়।
“গুড গার্ল, এখন চুপ করে শুয়ে পড়। আমার অনেক কাজ আছে, দুপুরবেলা খাবার আগে ডেকে দেবো।” নাকের ওপরে আলতো করে ডান হাতের তর্জনীটা ছুঁয়ে ঘরের থেকে বেড়িয়ে যায় স্যামন্তক।
বন্দনা একপাশ ফিরে শুয়ে, স্যামন্তকের চলে যাওয়া দেখে। পর্দার আড়ালে চলে যেতেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে বন্দনার। বাইরে আকাশ যদিও পরিষ্কার তবু মনের ভেতরে গুমরে ওঠে ব্যাথা আর কান্না। নিজের ওপরে একটা বিকট ধিক্কার জন্মায়, যারা ওকে ভালবাসত তারা সবাই ওকে বারন করেছিলো, বন্দনা শোনেনি তাদের কথা। বাবা মা আর তার প্রানের বান্ধবী পুবালি, সবাই ওর চোখে বিষ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কেন নিরুপম ওর সাথে এত ছল করল, কেন সকাল থেকে একবারের জন্য ওকে বুঝতে দিলো না যে ওর মনে অন্য কিছু। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বন্দনা, বুকের ভেতরে এক অসীম শূন্যতা ভর করে। এই শ্রাবণেও ওর মনে হয় বৈশাখের দুপুরে এক বিশাল ফাঁকা মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ও, মাথার ওপরে তপ্ত সূর্য কিরণ ঝলসে দিচ্ছে ওর মন শরীর আত্মা। দুমড়ে মুচড়ে নিঙরে কেউ যেন ওর বুকের মাঝে এক তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করছে, মরতে চেয়েও মরতে পারছেনা বন্দনা। এই সব ভাবতে ভাবতে মাথাটা আবার ঝিম ঝিম করতে থাকে। ওপাশ ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করে স্যামন্তক কোথায়। ঘরে কি নেই, আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না যে। ওর মনের ভেতরে আর এক ভয় ভর করে, কত টুকু জানি আমি ছেলেটাকে যে ওর ওপরে আমার এত অগাধ বিশ্বাস। বিশ্বাস তো আমি নিরুপম কেও করেছিলাম, কিন্তু কি পেলাম। বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে চেষ্টা করে বন্দনা। খোলা জানালা দিয়ে সকালের নরম রদ্দুর গায়ে এসে পড়ছে, যেন সদ্য স্নাত ঊষা ওকে আহ্বান করছে এক নতুন জীবনের গণ্ডীতে।
চুপ করে হাঁটু মুড়ে বিছানার ওপরে উঠে বসে বন্দনা, হাঁটুর ওপরে থুতনি রেখে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে, সামনে বড় ফাঁকা মাঠ, লাল মাটি, ঐ দুরে জি টি রোড দিয়ে কত গাড়ির আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। কাল রাতের বৃষ্টির পড়ে আকাশটা বড় বেশি পরিস্কার মনে হচ্ছে। রাস্তার পাশের বিপিন দেবদারুর গাছ গুলো যেন আজ একটু বেশি করে সবুজ, আলতো মাথা নাড়িয়ে বন্দনাকে যেন ডাকছে “বাড়ির ভেতরে বসে কেন, ঝড় তো কাল রাতে যা হবার হয়ে গেছে, দেখ আজ আমারা কেমন সবুজে ঢেকে আছি, তুই ও বেড়িয়ে পড়।”
“খেয়ে নাও, তার পড়ে ওষুধ খেতে হবে আর ড্রেসিং তা করতে হবে।” স্যামন্তকের গলা শুনে কেঁপে ওঠে বন্দনা। এতক্ষণ এত নিস্তব্ধ ছিল সারা বাড়িটা যে ও হারিয়ে গেছিলো সেই নিস্তব্ধতায়। ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ উঁচু করে দেখে যে স্যামন্তক একটা বাটিতে দুধ আর কলা মেখে এনেছে, সাথে একটা প্লেটে দুটি ব্রেড।
কাঁপা হাতে স্যামন্তকের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে, চুমুক দিয়ে খেতে থাকে দুধ টুকু। বুঝে গেছে বন্দনা, এই ছেলের সামনে ওর কোন জোর চলবে না। স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে দুধের বাটি খালি করে। ঠোঁটের ওপরে একটু দুধ লেগে থাকে, বাটিটা হাতে ধরাবার সময়, আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে ঠোঁটটা মুছিয়ে দেয় স্যামন্তক। ঠোঁটের ওপরে ওর আঙ্গুলের পরশে কেমন যেন করে ওঠে ওর মুখের শিরা, কি বলবে কি করবে কিছু ভেবে পায়না বন্দনা। একভাবে দেখতে থাকে স্যামন্তককে।
“তোমার বাড়িতে ফোন করে দিয়েছি, তোমার বাবা মা বিকেলের মধ্যে চলে আসবেন, চিন্তা নেই তোমার।” স্যামন্তক বন্দনাকে জানায় “আমি বলেছি যে তুমি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়েছ আর তারপরে তোমার জ্বর হয়েছে। সুতরাং সেটা যেন মনে থাকে। কি হয়েছে না হয়েছে তা আবার কাউকে বলতে যেওনা।”
বাবা মা আসবেন শুনে বন্দনার ভেতরে এক অদ্ভুত গ্লানিতে ভরে যায় কাঁপা গলায় কিছু বলার চেষ্টা করে “তুমি কে আমার।” গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।
“কিছু বলবে কি তুমি?” জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক, তারপরে একটু মাথা চুলকে বলে “আমাকে যে ড্রেসিং করতে হবে।”
“আমি করে নিতে পারবো” একটা ছোট্ট হাসি হেসে উত্তর দেয় বন্দনা “আমি একটু বাথরুমে যাবো।”
“ঠিক আছে, আমি দিদির জামাকাপড় বের করে রেখেছি, পড়ে নিও, আর বাথরুমের দরজা বন্দ করবে না” বলে স্যামন্তক চলে যায় ঘর থেকে।
বাথরুমে ঢুকে আপন মনেই হেসে ফেলে বন্দনা “দরজা বন্দ করবে না, ধুর ছাই।” পরনের শাড়ীটা খোলা মাত্রই বেড়িয়ে পড়ে সারা শরীরের ক্ষত। বুকের ওপরে দাঁতের দাগ কেটে বসা, ঘাড়ের কাছেও দাঁতের দাগ, পেটে ওপরে, নাভির কাছে আঁচড়ের দাগ, শুকিয়ে কালো হয়ে আছে একটু জ্বলছে সেই সব ক্ষত। কপালে ডান দিকে কালশিটে পড়া, চোখের কোণে একটু রক্ত জমা। বাবা মা কি বাইরের দাগ গুলো দেখে বিশ্বাস করবে যে ও বাথরুমে পড়ে গেছিলো? মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা, চুলে জট কিন্তু মাথায় তো আর জল দেওয়া যাবেনা। আস্তে আস্তে গায়ে জল ঢেলে পরিষ্কার হয়ে নেয়। তোয়ালে জড়িয়ে ঘরে ঢুকে দেখে, বিছানার ওপরে পুবালির সালোয়ার কামিজ, ড্রেসিং গাউন, মাক্সি সব রাখা। বন্দনা একটা মাক্সি পড়ে ধিরে ধিরে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে ডাইনিং রুমের দিকে।
স্যামন্তক রান্না ঘরে একটা প্রেসার কুকারে ডাল চাল মিলিয়ে খিচুড়ি রান্নার তোড়জোড় করছিল বন্দনা ওকে দেখে হেসে বলে “তুমি কবে থেকে রান্না করতে জানো?”
“তোমাকে বাইরে কে আসতে বলেছে?” স্যামন্তক ওর দিকে একটু কড়া নজরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
—“আর শুয়ে শুয়ে ভালো লাগছেনা তাই বাইরে এলাম।”
“সোফায় বস, আমি আসছি।” প্রেসার কুকারটা গ্যাসে চাপিয়ে কিছু সবজি কাটতে কাটতে বলে “দিদি ফোন করেছিলো, এখনো আমি কিছু জানাইনি।”
এতো বড় ঘটনাটা চেপে গেছে স্যামন্তক? ওর জন্য আর কার কার কাছে মিথ্যে কথা বলবে, স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “কেন চেপে গেলে? বলে দিতে পারতে সব, ও তো তোমার দিদি।”
মাথা না উঠিয়েই উত্তর দেয় স্যামন্তক “সব কথার একটা সময় আছে, আমি মিথ্যে বলিনি দিদিকে শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি। যখন সময় হবে তখন আমি দিদিকে জানাবো।”
মনে মনে বলে বন্দনা “এই সময়টাকেই তো ঠিক ভাবে ধরতে পারলাম না তাই তো আমার আজ এই অবস্থা।” ধিরে ধিরে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে, মাথার পেছনটা একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে, গা হাত পা ও ব্যাথা ব্যাথা করছে। চুপ করে সোফার ওপরে পা গুটিয়ে কুঁকড়ে বসে থাকে বন্দনা, নিজেকে নিজের কাছে খুব ছোটো মনে হয়। দুমড়ে ফুঁপিয়ে ওঠে বুক, বেড়িয়ে পরে রক্ত না সেটা জল হয়ে চোখ দিয়ে ঝরছে।
কিছুক্ষণ পরে স্যামন্তক এক কাপ কফি নিয়ে ওর পাশে একটা ছোটো সোফায় বসে পরে। ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে “শরীর কেমন আছে?”
বন্দনা মুখ তুলে তাকায়, এক ফোঁটা জল গাল বেয়ে গরিয়ে পরে। আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় “ঠিক আছে।” তারপরে উলটো হাতে গাল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করে “আমি খুব খারাপ মেয়ে তাই না।”
কথাটা শুনে স্যামন্তকের ভেতরে যেন এক প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে, বুঝতে পাড়ে স্যামন্তক যে বন্দনা ভেতরে ভেতরে কতটা ভেঙ্গে গেছে। ছোটো সোফা থেকে উঠে ওর বাঁ পাশে বসে, হাতের কফি কাপটা টি টেবিলে ওপরে রেখে আস্তে করে ডান হাতটা ওর ঘাড়ের পেছন দিয়ে ডান কাঁধের ওপরে রাখে। বন্দনা জল ভরা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে “আমি জানতাম তুমি আসবে।” ডান কাঁধের গোলায় স্যামন্তকের শক্ত মুঠি ওকে টেনে নেয় বুকের ওপরে। চওড়া বুকে আছড়ে পরে বন্দনা, মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে “আমি খুব খারাপ মেয়ে তাই না।”
মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে স্যামন্তক, বাঁ হাতের তালু বন্দনার গাল স্পর্শ করে। স্যামন্তক ওকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিতে চায় যেন আর বন্দনা প্রানপন চেষ্টা করে ঐ বুকের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে।
—“মানুষ খারাপ হয় না বন্দনা, খারাপ হয় তার কর্ম। তুমি ফিরে এসেছ সেটা অনেক বড় ব্যাপার।”
বন্দনার কান্না যেন আর থামতে চায় না, দু হাত দিয়ে ওর বুকের পেশীর আঁকড়ে ধরে, মনে হয় যেন কেউ যদি ছাড়াতে আসে তাহলে ওর আত্মা খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবে। স্যামন্তক কোন বাধা দেয়না বন্দনাকে, মনের ভেতরে যত পাপ যত গ্লানি আছে সব ধুয়ে যাক। চোখের জলে বুকের অনেকটা ভিজে যায়। অনেকক্ষণ ধরে দুজনা দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। স্যামন্তক আস্তে আস্তে বন্দনার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়, বাঁ হাত দিয়ে বন্দনার মুখটা তুলে ধরে। ভিজে চোখের পাতা, ছোটো ছোটো দুটি চোখ যেন কত আশা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। বন্দনার মনে হয় যেন, ঐ চশমার পেছনের দুটি চোখ ওকে টেনে নেবে। নাকের ওপরে আলতো করে নাকটা ঘষে স্যামন্তক, ঠোঁট জোড়া খুব কাছে। বন্দনা নিজের ঠোঁটের ওপরে স্যামন্তকের গরম প্রস্বাস অনুভব করতে পেরে কেঁপে ওঠে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে নরম লাল ঠোঁট দুটি, যেন বলতে চায় তুমি এতো দুরে কেন। আস্তে করে, স্যামুন্তকের নিচের ঠোঁটটি বন্দনার ওপরে ঠোঁটের সাথে ছুঁয়ে যায়। আপনা হতেই বন্দনার দু চোখ বন্দ হয়ে যায়। স্যামন্তক ডান হাত দিয়ে জাপটে ধরে বন্দনার কাঁধ আর টেনে নেয় নিজের ওপরে, বাঁ হাত দিয়ে গাল ছুঁয়ে চেপে ধরে নিজের ঠোঁট ওর আধরে। বন্দনা হারিয়ে যায় ওর বুকের মাঝে, নিজের অধরটি স্যামন্তকের দুটি ঠোঁটের মাঝে পেয়ে। খুব নরম করে চুষতে থাকে স্যামন্তক ঐ দুটি ঠোঁট, যেন কোন গোলাপ পাপড়ি, বেশি জোরে চিপলে যেন ছিঁড়ে যাবে। জিবের ডগা দিয়ে মাঝে মাঝে যেন বন্দনার ঠোঁট দুটি নিজের মনের গভিরে আঁকতে চেষ্টা করে। সময় থমকে দাঁড়ায়, চুম্বনটি গভীর থেকে গভীরতর মনে হয়। বন্দনা দশটি আঙ্গুলের নখ দিয়ে স্যামন্তকের বুক খামচে ধরে। চেপে ধরে স্যামন্তক, নিজের প্রশস্ত বুকের ওপরে বন্দনার নরম সুগৌল বুকে যেন মাখনের মতন গলতে শুরু করে। বন্দনা চেপে ধরে ওর ক্ষত বিক্ষত বুক, আজ যেন কৃষ্ণের মস্তকের মণি ওর সব দুঃখ সব ক্ষত পূরণ করে দেবে উষ্ণ চন্দনের প্রলেপে। কার ঠোঁটে কার লালা মাখা সেটা ভুলে যায়। বন্দনার শরীরের ব্যাথা বেদনা যেন এক চুম্বনে সব মুছে গেছে, হৃদয়ের কোন কোণে যে টুকু গ্লানি আর ভীতি ছিল সেটা কর্পূরের ন্যায় উবে গেছে। নিজের নিঃশ্বাস ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে, তার সাথে সাথে বুঝতে পাড়ে যে স্যামন্তক ওর কোমরটা কত শক্ত করে জড়িয়ে ওর দিকে টেনে এনেছে। স্যামন্তক বন্দনাকে নিজের ওপরে জড়িয়ে ধিরে ধিরে সোফার ওপরে শুয়ে পরে।
বন্দনা ধিরে ধিরে নিজেকে ওর আলিঙ্গন মুক্ত করে ওর বুকে মাথা রেখে চোখ বন্দ করে থাকে। কারুর গলা দিয়ে কোন আওয়াজ নেই স্যামন্তক ওর পিঠের উপরে হাত বোলাতে থাকে। দুজনারই মনে হয়, মাঝে মাঝে এই নীরবতা ভারী সুন্দর হতে পারে। কিছুক্ষণ না অনেকক্ষণ, বন্দনা ওর বুকের ওপরে হাত দুটি ভাজ করে রেখে মুখ তুলে ওর দিকে তাকায় একটা দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করে “কি করলে এটা?”
স্যামন্তক ওর ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে বন্দনার শিরদাঁড়ার ওপর থেকে নিচ অবধি বুলিয়ে দেয়, বন্দনা কেঁপে ওঠে নরম আঙ্গুলের ডগার স্পর্শে, নিজের ভরাট বুক দুটি পিষে ধরে ওর নিচের মানুষটির প্রসস্থ বুকের ওপরে।
—“দুষ্টুমি করছ?”
—“না করছি না, চিন্তা নেই।”
—“আমার না শরীর খারাপা তার ওপরে তুমি আমাকে ঐ রকম ভাবে সাজা দেবে?”
—“ঠিক আছে দেব না।”
—“কিন্তু একটু আগে কি করলে আমার সাথে?”
—“কি করলাম আবার?”
—“উঁহু যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা, একলা একটা অবলা নারী পেয়ে আমাকে চুমু খেলে।”
—“যেটা তুমি অনেক আগে শুরু করেছিলে সেটা আজ ফুল স্টপ লাগিয়ে দিলাম।”
“পাগল ছেলে একটা।” তারপরে একটু থেমে বিষণ্ণ গোলায় বলে “আজকেই চলে যেতে হবে আমাকে?”
“তোমার বাবা মা যদি আজ এসে পড়েন আর নিয়ে যেতে চান, তাহলে তো আমি বাধা দিতে পারিনা” স্যামন্তকের মনটা চুমু খাওয়ার পরে বেশ উড়ুউড়ু করছিলো, মনের বাতায়নে যেন এক দখিনা বাতাস বইছিল, বন্দনার এক কথায় সব প্রসন্নতা যেন আছড়ে পড়লো খরা বালুচরে।
“তুমি সত্যি বাধা দিতে পারনা?” বুকের মাঝে কেমন একটা মোচড় দিয়ে ওঠে বন্দনার “কেন পারনা?”
প্রেমঘন বাহুবেষ্টনী আর দৃঢ় করে স্যামন্তক নিজের বুকের উপরে বন্দনার পেলব কমনীয় শরীরটিকে জাপটে ধরে “ভয় কেন পাচ্ছ আমি আছি তো।”
কান্না ভেজা স্বরে বলে ওঠে বন্দনা “ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়, আমার তাই অবস্থা। কাউকে আর বিশ্বাস হয়না।”
বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে বন্দনার মুখের দিকে, উত্তর দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না স্যামন্তক। এর কি উত্তর দেবে নিজেও জানেনা। বন্দনা বুঝতে পারে যে কথাটা বড় বেদনা দায়ক কিন্তু ওর এখন সব থেকে ভয় ওটাই, কাকে ও বিশ্বাস করে নিজেকে বিলিয়ে দেবে। না এবারে উঠতে হবে আর নয়। বন্দনা স্যামন্তকের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে বসে।
“কখন আসবে বাবা মা?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়, কি বলে বন্দনা কে বঝাবে যে ও ভালবাসে “বিকেলের দিকে। তুমি ওষুধ খেয়ে নাও তারপরে তোমার ড্রেসিং করে দিতে হবে।”
উঠে পরে বন্দনা সোফা থেকে, পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে স্যামন্তক চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায় আলতো হেসে বলে “আমি নিজের ড্রেসিং নিজে করে নিতে পারবো। যেখানে যা লাগানোর সেটা করে নেব।” এই বলে পুবালির ঘরে ঢুকে পরে। মনের ভেতরটা আজ কেমন মিলিত ভাবাবেগ আচ্ছন্ন, রাতের বজ্র বিদুত্য আর প্রবল ঝড়, সকালের মিষ্টি রোদে, প্রেমঘন চুম্বনে সিক্ত অধরওষ্ঠ, বুকের মাঝের ফাঁকা স্থান টিকে সিক্ত চুম্বনের প্রলেপে ভরিয়ে নিতে প্রবল হয়ে ওঠে মনটা, কিন্তু বিশ্বাস করা কঠিন। খাটের ওপরে দেখে ওষুধ গুলো পরে আছে তার সাথে একটি আন্টিসেপ্টিক মলম রাখা। হটাৎ করে মনে হল ওর পেছনে যেন স্যামন্তক দাঁড়িয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে হ্যাঁ ছেলেটা দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক “লাগিয়ে নিতে পারবে ক্রিমটা?”
ক্রিমটা আর বাকি জামা কাপড় নিয়ে চুপ করে বাথরুমে ঢুকে যায় বন্দনা। স্যামন্তকের মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে যায়, আজকেই চলে যাবে বন্দনা, ওকে এখানে পরে থাকতে হবে আরও দিন পনেরো তারপরে চাকরি যেখানে হবে সেখানে চলে যেতে হবে। কলকাতায় কোন নামকরা আই.টি. কম্পানি নেই যেখানে চাকরি পেতে পারে।
দুপুরে খাবার সময় অতিরিক্ত ভাবে শান্ত ছিল বন্দনা, ফিরে আসা কেন যদি ছেড়ে যেতেই হবে? খিচুড়িটা মুখের মধ্যে তেতো লাগছে, বারেবারে কেন ওকে হারাতে হয় যাকে ও আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়? গাল গড়িয়ে দু ফোঁটা জল পরে যায় থালায়। ঠিক সামনে বসে স্যামন্তক বন্দনার ভারাক্রান্ত চেহারা দেখে নিজের খাওয়া ভুলে যায়। চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে স্যামন্তক এমন সময় বন্দনা বলে ওঠে “বসে থাকো আর উঠনা। শুধু একটি বারের জন্য কথা দাও ফিরে আসবে।”
স্যামন্তক মাথা নাড়িয়ে বলে “হ্যাঁ ফিরে আসবো।”
দুপুরের পরেই বন্দনার বাবা মা দুর্গাপুর পৌঁছে যান। মা মেয়ের কান্না দেখে স্যামন্তক চুপ করে থাকে। বন্দনার মা জিজ্ঞেস করেন স্যামন্তক কে “আচ্ছা বাবা, তুমি কি করে পেলে ওকে?”
স্যামন্তক একবার বন্দনার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর মাকে উত্তর দেয় “ওতো গতকাল দুপুরে শান্তিনিকেতন যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলো সেই সময়ে বাথরুমে পরে যায় আর মাথা ফেটে যায়। তাই ওর যাওয়া হয়নি। কাল রাতে আমাকে বলে যে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তাই তো জোর করে ওর কাছ থেকে আপনাদের ফোন নাম্বার নিয়ে আপনাদের ফোন করা।” এতো বড় ঘটনাটা লুকিয়ে রেখে, অবান্তর অজুহাত দেবার পরে স্যামন্তক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বুকের ভেতরে অনেকক্ষণ থেকে একটা বড় পাথর পড়েছিল কি জিজ্ঞেস করবে, কি উত্তর দেবে ও। হোক না মিথ্যে কিন্তু মেয়েটাকে তো কারুর সামনে মাথা নিচু হয়ে থাকতে হবেনা, নিজের সামনে না।
সন্ধ্যের পরে বন্দনার বাবা মা ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। স্টেশান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসে স্যামন্তক। গাড়িতে চড়ার আগে পর্যন্ত বন্দনা ওর পাশ ছাড়তে চায়না। ট্রেনে উঠে পড়ার সময় স্যামন্তকের মুখটা খুব ছোটো হয়ে যায়। বন্দনার মনের ভেতরটা দুমড়ে ওঠে। জল ভরা চোখ আজ, দুরে চলে যাবার করুন সুর বেজে ওঠে বন্দনার বুকের মাঝে। ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল আর কড়ে আঙ্গুল দিয়ে ফোনের ইশারা করে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা স্যামন্তকের দিকে “আমাকে ফোন কোরো আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
আজ আর পিছিয়ে থাকে না স্যামন্তক, হাত নেড়ে জানিয়ে দেয় “হ্যাঁ আমি করবো।”
চলবে.....
দরজার তালা কোন রকমে খুলে, পুবালির ঘরের বিছানায় শুইয়ে দেয় বন্দনা কে, মাথার পেছনে দুটি বালিশ দিয়ে মাথাটা একটু উঁচু করে দেয়। গায়ে চাদর ঢাকা দেবার সময় বুকের ওপরে নজর পরে যায় স্যামন্তকের। বুকের নরম তুলতুলে উপরি অংশে আঁচরের দাগ, দাঁতের দাগ। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় স্যামন্তকের, ঐ দেখে। হাত দিয়ে দেখবে কি দেখবে না ভেবে পায়না। বন্দনা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে স্যামন্তক ওর দুই বুকের ক্ষত দেখছে। লজ্জায় লাল হয়ে যায় বন্দনা, নিজে থেকে চাদরটা টেনে বুক ঢেকে ফেলে। সেটা বুঝতে পেরে স্যামন্তক বেশ লজ্জায় পরে যায়।
স্যামন্তক বন্দনা কে জিজ্ঞেস করে “বাড়ির ফোন নাম্বারটা দাও, তোমার বাবাকে একবার জানানো উচিৎ। পরশু বেরিয়েছ না বলে, তারা অনেক চিন্তায় থাকবেন।”
“না, কি হবে জানিয়ে তাদের। আমি ঠিক হলে চলে যাবো এখান থেকে” ভয়ে আর গ্লানিতে ভরা বন্দনার চোখ ছলছল করে ওঠে “বাবা মা সবাই আমাকে বারবার বারন করেছিল, কারুর কথা আমি শুনিনি। আমার তো এই হবার ছিল।”
স্যামন্তক ওর পাশে বসে ওর মুখটা নিজের হাতের মধ্যে করে নিয়ে দুচোখে গভীর ভাবে তাকায়। সেই গভীর চাহনিতে বন্দনার মনে হয় যেন ওর বুকের অলিগলি সব কিছু যেন স্যামন্তক দেখতে পাচ্ছে। ওর হাতের উষ্ণ পরশে বন্দনার ক্ষত বিক্ষত গালে যেন এক কেউ চন্দনের শীতল প্রলেপ লাগিয়ে দেয়।
—“আমি আছি তো ভয় কিসের, ফোন নাম্বারটা দাও ফোন করে দেই, বাবা মা চিন্তায় আছেন। তাদের দিকটা তো একবার ভেবে দেখনি।”
মনের ভেতর থেকে কেউ যেন চিৎকার করে বলে “তুমি কে?” তারপরে বন্দনা বাড়ির ফোন নাম্বারটা স্যামন্তক কে দিয়ে দেয়।
“গুড গার্ল, এখন চুপ করে শুয়ে পড়। আমার অনেক কাজ আছে, দুপুরবেলা খাবার আগে ডেকে দেবো।” নাকের ওপরে আলতো করে ডান হাতের তর্জনীটা ছুঁয়ে ঘরের থেকে বেড়িয়ে যায় স্যামন্তক।
বন্দনা একপাশ ফিরে শুয়ে, স্যামন্তকের চলে যাওয়া দেখে। পর্দার আড়ালে চলে যেতেই মনটা বিষণ্ণ হয়ে ওঠে বন্দনার। বাইরে আকাশ যদিও পরিষ্কার তবু মনের ভেতরে গুমরে ওঠে ব্যাথা আর কান্না। নিজের ওপরে একটা বিকট ধিক্কার জন্মায়, যারা ওকে ভালবাসত তারা সবাই ওকে বারন করেছিলো, বন্দনা শোনেনি তাদের কথা। বাবা মা আর তার প্রানের বান্ধবী পুবালি, সবাই ওর চোখে বিষ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কেন নিরুপম ওর সাথে এত ছল করল, কেন সকাল থেকে একবারের জন্য ওকে বুঝতে দিলো না যে ওর মনে অন্য কিছু। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বন্দনা, বুকের ভেতরে এক অসীম শূন্যতা ভর করে। এই শ্রাবণেও ওর মনে হয় বৈশাখের দুপুরে এক বিশাল ফাঁকা মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ও, মাথার ওপরে তপ্ত সূর্য কিরণ ঝলসে দিচ্ছে ওর মন শরীর আত্মা। দুমড়ে মুচড়ে নিঙরে কেউ যেন ওর বুকের মাঝে এক তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে বারবার আঘাত করছে, মরতে চেয়েও মরতে পারছেনা বন্দনা। এই সব ভাবতে ভাবতে মাথাটা আবার ঝিম ঝিম করতে থাকে। ওপাশ ফিরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করে স্যামন্তক কোথায়। ঘরে কি নেই, আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না যে। ওর মনের ভেতরে আর এক ভয় ভর করে, কত টুকু জানি আমি ছেলেটাকে যে ওর ওপরে আমার এত অগাধ বিশ্বাস। বিশ্বাস তো আমি নিরুপম কেও করেছিলাম, কিন্তু কি পেলাম। বিছানা ছেড়ে উঠে বসতে চেষ্টা করে বন্দনা। খোলা জানালা দিয়ে সকালের নরম রদ্দুর গায়ে এসে পড়ছে, যেন সদ্য স্নাত ঊষা ওকে আহ্বান করছে এক নতুন জীবনের গণ্ডীতে।
চুপ করে হাঁটু মুড়ে বিছানার ওপরে উঠে বসে বন্দনা, হাঁটুর ওপরে থুতনি রেখে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে, সামনে বড় ফাঁকা মাঠ, লাল মাটি, ঐ দুরে জি টি রোড দিয়ে কত গাড়ির আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। কাল রাতের বৃষ্টির পড়ে আকাশটা বড় বেশি পরিস্কার মনে হচ্ছে। রাস্তার পাশের বিপিন দেবদারুর গাছ গুলো যেন আজ একটু বেশি করে সবুজ, আলতো মাথা নাড়িয়ে বন্দনাকে যেন ডাকছে “বাড়ির ভেতরে বসে কেন, ঝড় তো কাল রাতে যা হবার হয়ে গেছে, দেখ আজ আমারা কেমন সবুজে ঢেকে আছি, তুই ও বেড়িয়ে পড়।”
“খেয়ে নাও, তার পড়ে ওষুধ খেতে হবে আর ড্রেসিং তা করতে হবে।” স্যামন্তকের গলা শুনে কেঁপে ওঠে বন্দনা। এতক্ষণ এত নিস্তব্ধ ছিল সারা বাড়িটা যে ও হারিয়ে গেছিলো সেই নিস্তব্ধতায়। ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ উঁচু করে দেখে যে স্যামন্তক একটা বাটিতে দুধ আর কলা মেখে এনেছে, সাথে একটা প্লেটে দুটি ব্রেড।
কাঁপা হাতে স্যামন্তকের হাত থেকে বাটিটা নিয়ে, চুমুক দিয়ে খেতে থাকে দুধ টুকু। বুঝে গেছে বন্দনা, এই ছেলের সামনে ওর কোন জোর চলবে না। স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে দুধের বাটি খালি করে। ঠোঁটের ওপরে একটু দুধ লেগে থাকে, বাটিটা হাতে ধরাবার সময়, আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে ঠোঁটটা মুছিয়ে দেয় স্যামন্তক। ঠোঁটের ওপরে ওর আঙ্গুলের পরশে কেমন যেন করে ওঠে ওর মুখের শিরা, কি বলবে কি করবে কিছু ভেবে পায়না বন্দনা। একভাবে দেখতে থাকে স্যামন্তককে।
“তোমার বাড়িতে ফোন করে দিয়েছি, তোমার বাবা মা বিকেলের মধ্যে চলে আসবেন, চিন্তা নেই তোমার।” স্যামন্তক বন্দনাকে জানায় “আমি বলেছি যে তুমি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়েছ আর তারপরে তোমার জ্বর হয়েছে। সুতরাং সেটা যেন মনে থাকে। কি হয়েছে না হয়েছে তা আবার কাউকে বলতে যেওনা।”
বাবা মা আসবেন শুনে বন্দনার ভেতরে এক অদ্ভুত গ্লানিতে ভরে যায় কাঁপা গলায় কিছু বলার চেষ্টা করে “তুমি কে আমার।” গলা দিয়ে আওয়াজ বের হয় না।
“কিছু বলবে কি তুমি?” জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক, তারপরে একটু মাথা চুলকে বলে “আমাকে যে ড্রেসিং করতে হবে।”
“আমি করে নিতে পারবো” একটা ছোট্ট হাসি হেসে উত্তর দেয় বন্দনা “আমি একটু বাথরুমে যাবো।”
“ঠিক আছে, আমি দিদির জামাকাপড় বের করে রেখেছি, পড়ে নিও, আর বাথরুমের দরজা বন্দ করবে না” বলে স্যামন্তক চলে যায় ঘর থেকে।
বাথরুমে ঢুকে আপন মনেই হেসে ফেলে বন্দনা “দরজা বন্দ করবে না, ধুর ছাই।” পরনের শাড়ীটা খোলা মাত্রই বেড়িয়ে পড়ে সারা শরীরের ক্ষত। বুকের ওপরে দাঁতের দাগ কেটে বসা, ঘাড়ের কাছেও দাঁতের দাগ, পেটে ওপরে, নাভির কাছে আঁচড়ের দাগ, শুকিয়ে কালো হয়ে আছে একটু জ্বলছে সেই সব ক্ষত। কপালে ডান দিকে কালশিটে পড়া, চোখের কোণে একটু রক্ত জমা। বাবা মা কি বাইরের দাগ গুলো দেখে বিশ্বাস করবে যে ও বাথরুমে পড়ে গেছিলো? মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা, চুলে জট কিন্তু মাথায় তো আর জল দেওয়া যাবেনা। আস্তে আস্তে গায়ে জল ঢেলে পরিষ্কার হয়ে নেয়। তোয়ালে জড়িয়ে ঘরে ঢুকে দেখে, বিছানার ওপরে পুবালির সালোয়ার কামিজ, ড্রেসিং গাউন, মাক্সি সব রাখা। বন্দনা একটা মাক্সি পড়ে ধিরে ধিরে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে ডাইনিং রুমের দিকে।
স্যামন্তক রান্না ঘরে একটা প্রেসার কুকারে ডাল চাল মিলিয়ে খিচুড়ি রান্নার তোড়জোড় করছিল বন্দনা ওকে দেখে হেসে বলে “তুমি কবে থেকে রান্না করতে জানো?”
“তোমাকে বাইরে কে আসতে বলেছে?” স্যামন্তক ওর দিকে একটু কড়া নজরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
—“আর শুয়ে শুয়ে ভালো লাগছেনা তাই বাইরে এলাম।”
“সোফায় বস, আমি আসছি।” প্রেসার কুকারটা গ্যাসে চাপিয়ে কিছু সবজি কাটতে কাটতে বলে “দিদি ফোন করেছিলো, এখনো আমি কিছু জানাইনি।”
এতো বড় ঘটনাটা চেপে গেছে স্যামন্তক? ওর জন্য আর কার কার কাছে মিথ্যে কথা বলবে, স্যামন্তকের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “কেন চেপে গেলে? বলে দিতে পারতে সব, ও তো তোমার দিদি।”
মাথা না উঠিয়েই উত্তর দেয় স্যামন্তক “সব কথার একটা সময় আছে, আমি মিথ্যে বলিনি দিদিকে শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি। যখন সময় হবে তখন আমি দিদিকে জানাবো।”
মনে মনে বলে বন্দনা “এই সময়টাকেই তো ঠিক ভাবে ধরতে পারলাম না তাই তো আমার আজ এই অবস্থা।” ধিরে ধিরে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে, মাথার পেছনটা একটু ব্যাথা ব্যাথা করছে, গা হাত পা ও ব্যাথা ব্যাথা করছে। চুপ করে সোফার ওপরে পা গুটিয়ে কুঁকড়ে বসে থাকে বন্দনা, নিজেকে নিজের কাছে খুব ছোটো মনে হয়। দুমড়ে ফুঁপিয়ে ওঠে বুক, বেড়িয়ে পরে রক্ত না সেটা জল হয়ে চোখ দিয়ে ঝরছে।
কিছুক্ষণ পরে স্যামন্তক এক কাপ কফি নিয়ে ওর পাশে একটা ছোটো সোফায় বসে পরে। ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে “শরীর কেমন আছে?”
বন্দনা মুখ তুলে তাকায়, এক ফোঁটা জল গাল বেয়ে গরিয়ে পরে। আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয় “ঠিক আছে।” তারপরে উলটো হাতে গাল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করে “আমি খুব খারাপ মেয়ে তাই না।”
কথাটা শুনে স্যামন্তকের ভেতরে যেন এক প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে, বুঝতে পাড়ে স্যামন্তক যে বন্দনা ভেতরে ভেতরে কতটা ভেঙ্গে গেছে। ছোটো সোফা থেকে উঠে ওর বাঁ পাশে বসে, হাতের কফি কাপটা টি টেবিলে ওপরে রেখে আস্তে করে ডান হাতটা ওর ঘাড়ের পেছন দিয়ে ডান কাঁধের ওপরে রাখে। বন্দনা জল ভরা চোখে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে “আমি জানতাম তুমি আসবে।” ডান কাঁধের গোলায় স্যামন্তকের শক্ত মুঠি ওকে টেনে নেয় বুকের ওপরে। চওড়া বুকে আছড়ে পরে বন্দনা, মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে “আমি খুব খারাপ মেয়ে তাই না।”
মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে স্যামন্তক, বাঁ হাতের তালু বন্দনার গাল স্পর্শ করে। স্যামন্তক ওকে নিজের বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিতে চায় যেন আর বন্দনা প্রানপন চেষ্টা করে ঐ বুকের মাঝে নিজেকে বিলীন করে দিতে।
—“মানুষ খারাপ হয় না বন্দনা, খারাপ হয় তার কর্ম। তুমি ফিরে এসেছ সেটা অনেক বড় ব্যাপার।”
বন্দনার কান্না যেন আর থামতে চায় না, দু হাত দিয়ে ওর বুকের পেশীর আঁকড়ে ধরে, মনে হয় যেন কেউ যদি ছাড়াতে আসে তাহলে ওর আত্মা খাঁচা ছাড়া হয়ে যাবে। স্যামন্তক কোন বাধা দেয়না বন্দনাকে, মনের ভেতরে যত পাপ যত গ্লানি আছে সব ধুয়ে যাক। চোখের জলে বুকের অনেকটা ভিজে যায়। অনেকক্ষণ ধরে দুজনা দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। স্যামন্তক আস্তে আস্তে বন্দনার পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়, বাঁ হাত দিয়ে বন্দনার মুখটা তুলে ধরে। ভিজে চোখের পাতা, ছোটো ছোটো দুটি চোখ যেন কত আশা নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। বন্দনার মনে হয় যেন, ঐ চশমার পেছনের দুটি চোখ ওকে টেনে নেবে। নাকের ওপরে আলতো করে নাকটা ঘষে স্যামন্তক, ঠোঁট জোড়া খুব কাছে। বন্দনা নিজের ঠোঁটের ওপরে স্যামন্তকের গরম প্রস্বাস অনুভব করতে পেরে কেঁপে ওঠে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে নরম লাল ঠোঁট দুটি, যেন বলতে চায় তুমি এতো দুরে কেন। আস্তে করে, স্যামুন্তকের নিচের ঠোঁটটি বন্দনার ওপরে ঠোঁটের সাথে ছুঁয়ে যায়। আপনা হতেই বন্দনার দু চোখ বন্দ হয়ে যায়। স্যামন্তক ডান হাত দিয়ে জাপটে ধরে বন্দনার কাঁধ আর টেনে নেয় নিজের ওপরে, বাঁ হাত দিয়ে গাল ছুঁয়ে চেপে ধরে নিজের ঠোঁট ওর আধরে। বন্দনা হারিয়ে যায় ওর বুকের মাঝে, নিজের অধরটি স্যামন্তকের দুটি ঠোঁটের মাঝে পেয়ে। খুব নরম করে চুষতে থাকে স্যামন্তক ঐ দুটি ঠোঁট, যেন কোন গোলাপ পাপড়ি, বেশি জোরে চিপলে যেন ছিঁড়ে যাবে। জিবের ডগা দিয়ে মাঝে মাঝে যেন বন্দনার ঠোঁট দুটি নিজের মনের গভিরে আঁকতে চেষ্টা করে। সময় থমকে দাঁড়ায়, চুম্বনটি গভীর থেকে গভীরতর মনে হয়। বন্দনা দশটি আঙ্গুলের নখ দিয়ে স্যামন্তকের বুক খামচে ধরে। চেপে ধরে স্যামন্তক, নিজের প্রশস্ত বুকের ওপরে বন্দনার নরম সুগৌল বুকে যেন মাখনের মতন গলতে শুরু করে। বন্দনা চেপে ধরে ওর ক্ষত বিক্ষত বুক, আজ যেন কৃষ্ণের মস্তকের মণি ওর সব দুঃখ সব ক্ষত পূরণ করে দেবে উষ্ণ চন্দনের প্রলেপে। কার ঠোঁটে কার লালা মাখা সেটা ভুলে যায়। বন্দনার শরীরের ব্যাথা বেদনা যেন এক চুম্বনে সব মুছে গেছে, হৃদয়ের কোন কোণে যে টুকু গ্লানি আর ভীতি ছিল সেটা কর্পূরের ন্যায় উবে গেছে। নিজের নিঃশ্বাস ঘন থেকে ঘনতর হচ্ছে, তার সাথে সাথে বুঝতে পাড়ে যে স্যামন্তক ওর কোমরটা কত শক্ত করে জড়িয়ে ওর দিকে টেনে এনেছে। স্যামন্তক বন্দনাকে নিজের ওপরে জড়িয়ে ধিরে ধিরে সোফার ওপরে শুয়ে পরে।
বন্দনা ধিরে ধিরে নিজেকে ওর আলিঙ্গন মুক্ত করে ওর বুকে মাথা রেখে চোখ বন্দ করে থাকে। কারুর গলা দিয়ে কোন আওয়াজ নেই স্যামন্তক ওর পিঠের উপরে হাত বোলাতে থাকে। দুজনারই মনে হয়, মাঝে মাঝে এই নীরবতা ভারী সুন্দর হতে পারে। কিছুক্ষণ না অনেকক্ষণ, বন্দনা ওর বুকের ওপরে হাত দুটি ভাজ করে রেখে মুখ তুলে ওর দিকে তাকায় একটা দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করে “কি করলে এটা?”
স্যামন্তক ওর ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে বন্দনার শিরদাঁড়ার ওপর থেকে নিচ অবধি বুলিয়ে দেয়, বন্দনা কেঁপে ওঠে নরম আঙ্গুলের ডগার স্পর্শে, নিজের ভরাট বুক দুটি পিষে ধরে ওর নিচের মানুষটির প্রসস্থ বুকের ওপরে।
—“দুষ্টুমি করছ?”
—“না করছি না, চিন্তা নেই।”
—“আমার না শরীর খারাপা তার ওপরে তুমি আমাকে ঐ রকম ভাবে সাজা দেবে?”
—“ঠিক আছে দেব না।”
—“কিন্তু একটু আগে কি করলে আমার সাথে?”
—“কি করলাম আবার?”
—“উঁহু যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা, একলা একটা অবলা নারী পেয়ে আমাকে চুমু খেলে।”
—“যেটা তুমি অনেক আগে শুরু করেছিলে সেটা আজ ফুল স্টপ লাগিয়ে দিলাম।”
“পাগল ছেলে একটা।” তারপরে একটু থেমে বিষণ্ণ গোলায় বলে “আজকেই চলে যেতে হবে আমাকে?”
“তোমার বাবা মা যদি আজ এসে পড়েন আর নিয়ে যেতে চান, তাহলে তো আমি বাধা দিতে পারিনা” স্যামন্তকের মনটা চুমু খাওয়ার পরে বেশ উড়ুউড়ু করছিলো, মনের বাতায়নে যেন এক দখিনা বাতাস বইছিল, বন্দনার এক কথায় সব প্রসন্নতা যেন আছড়ে পড়লো খরা বালুচরে।
“তুমি সত্যি বাধা দিতে পারনা?” বুকের মাঝে কেমন একটা মোচড় দিয়ে ওঠে বন্দনার “কেন পারনা?”
প্রেমঘন বাহুবেষ্টনী আর দৃঢ় করে স্যামন্তক নিজের বুকের উপরে বন্দনার পেলব কমনীয় শরীরটিকে জাপটে ধরে “ভয় কেন পাচ্ছ আমি আছি তো।”
কান্না ভেজা স্বরে বলে ওঠে বন্দনা “ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়, আমার তাই অবস্থা। কাউকে আর বিশ্বাস হয়না।”
বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে বন্দনার মুখের দিকে, উত্তর দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না স্যামন্তক। এর কি উত্তর দেবে নিজেও জানেনা। বন্দনা বুঝতে পারে যে কথাটা বড় বেদনা দায়ক কিন্তু ওর এখন সব থেকে ভয় ওটাই, কাকে ও বিশ্বাস করে নিজেকে বিলিয়ে দেবে। না এবারে উঠতে হবে আর নয়। বন্দনা স্যামন্তকের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে বসে।
“কখন আসবে বাবা মা?” জিজ্ঞেস করে বন্দনা।
নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়, কি বলে বন্দনা কে বঝাবে যে ও ভালবাসে “বিকেলের দিকে। তুমি ওষুধ খেয়ে নাও তারপরে তোমার ড্রেসিং করে দিতে হবে।”
উঠে পরে বন্দনা সোফা থেকে, পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে স্যামন্তক চুপ করে ওর দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায় আলতো হেসে বলে “আমি নিজের ড্রেসিং নিজে করে নিতে পারবো। যেখানে যা লাগানোর সেটা করে নেব।” এই বলে পুবালির ঘরে ঢুকে পরে। মনের ভেতরটা আজ কেমন মিলিত ভাবাবেগ আচ্ছন্ন, রাতের বজ্র বিদুত্য আর প্রবল ঝড়, সকালের মিষ্টি রোদে, প্রেমঘন চুম্বনে সিক্ত অধরওষ্ঠ, বুকের মাঝের ফাঁকা স্থান টিকে সিক্ত চুম্বনের প্রলেপে ভরিয়ে নিতে প্রবল হয়ে ওঠে মনটা, কিন্তু বিশ্বাস করা কঠিন। খাটের ওপরে দেখে ওষুধ গুলো পরে আছে তার সাথে একটি আন্টিসেপ্টিক মলম রাখা। হটাৎ করে মনে হল ওর পেছনে যেন স্যামন্তক দাঁড়িয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে হ্যাঁ ছেলেটা দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
জিজ্ঞেস করে স্যামন্তক “লাগিয়ে নিতে পারবে ক্রিমটা?”
ক্রিমটা আর বাকি জামা কাপড় নিয়ে চুপ করে বাথরুমে ঢুকে যায় বন্দনা। স্যামন্তকের মনটা বড় বিষণ্ণ হয়ে যায়, আজকেই চলে যাবে বন্দনা, ওকে এখানে পরে থাকতে হবে আরও দিন পনেরো তারপরে চাকরি যেখানে হবে সেখানে চলে যেতে হবে। কলকাতায় কোন নামকরা আই.টি. কম্পানি নেই যেখানে চাকরি পেতে পারে।
দুপুরে খাবার সময় অতিরিক্ত ভাবে শান্ত ছিল বন্দনা, ফিরে আসা কেন যদি ছেড়ে যেতেই হবে? খিচুড়িটা মুখের মধ্যে তেতো লাগছে, বারেবারে কেন ওকে হারাতে হয় যাকে ও আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়? গাল গড়িয়ে দু ফোঁটা জল পরে যায় থালায়। ঠিক সামনে বসে স্যামন্তক বন্দনার ভারাক্রান্ত চেহারা দেখে নিজের খাওয়া ভুলে যায়। চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাবে স্যামন্তক এমন সময় বন্দনা বলে ওঠে “বসে থাকো আর উঠনা। শুধু একটি বারের জন্য কথা দাও ফিরে আসবে।”
স্যামন্তক মাথা নাড়িয়ে বলে “হ্যাঁ ফিরে আসবো।”
দুপুরের পরেই বন্দনার বাবা মা দুর্গাপুর পৌঁছে যান। মা মেয়ের কান্না দেখে স্যামন্তক চুপ করে থাকে। বন্দনার মা জিজ্ঞেস করেন স্যামন্তক কে “আচ্ছা বাবা, তুমি কি করে পেলে ওকে?”
স্যামন্তক একবার বন্দনার মুখের দিকে তাকিয়ে ওর মাকে উত্তর দেয় “ওতো গতকাল দুপুরে শান্তিনিকেতন যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিলো সেই সময়ে বাথরুমে পরে যায় আর মাথা ফেটে যায়। তাই ওর যাওয়া হয়নি। কাল রাতে আমাকে বলে যে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তাই তো জোর করে ওর কাছ থেকে আপনাদের ফোন নাম্বার নিয়ে আপনাদের ফোন করা।” এতো বড় ঘটনাটা লুকিয়ে রেখে, অবান্তর অজুহাত দেবার পরে স্যামন্তক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। বুকের ভেতরে অনেকক্ষণ থেকে একটা বড় পাথর পড়েছিল কি জিজ্ঞেস করবে, কি উত্তর দেবে ও। হোক না মিথ্যে কিন্তু মেয়েটাকে তো কারুর সামনে মাথা নিচু হয়ে থাকতে হবেনা, নিজের সামনে না।
সন্ধ্যের পরে বন্দনার বাবা মা ওকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। স্টেশান পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসে স্যামন্তক। গাড়িতে চড়ার আগে পর্যন্ত বন্দনা ওর পাশ ছাড়তে চায়না। ট্রেনে উঠে পড়ার সময় স্যামন্তকের মুখটা খুব ছোটো হয়ে যায়। বন্দনার মনের ভেতরটা দুমড়ে ওঠে। জল ভরা চোখ আজ, দুরে চলে যাবার করুন সুর বেজে ওঠে বন্দনার বুকের মাঝে। ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল আর কড়ে আঙ্গুল দিয়ে ফোনের ইশারা করে প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা স্যামন্তকের দিকে “আমাকে ফোন কোরো আমি অপেক্ষায় থাকবো।”
আজ আর পিছিয়ে থাকে না স্যামন্তক, হাত নেড়ে জানিয়ে দেয় “হ্যাঁ আমি করবো।”
চলবে.....