Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 125)

ঠিক সাড়ে এগারোটায় রতীশ বাড়ি এল। সীমন্তিনীকে দেখে সে খুব খুশী। সীমন্তিনী রতীশের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই রচনা লক্ষ্য করল তার দিদিভাইয়ের চোখ দুটো যেন জলে ভরে আসছে।
 

সীমন্তিনীকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল, “ওমা এ কি দিদিভাই? তুমি কাঁদছ কেন”?

সীমন্তিনী নিজের চোখের কোল মুছতে মুছতে ম্লান হেসে বলল, “নারে, কিছু না। ছোটোবেলার কথাগুলো মনে পড়ছিল। একটা সময় ছিল যে কলেজের সময়টুকু ছাড়া দাদাভাই সব সময় আমার কাছে কাছে থাকত। আমিও দাদাভাইকে ছেড়ে একটা মূহুর্তও থাকতে পারতুম না। আর আজ দ্যাখ। দিনের পর দিন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পেরিয়ে যায় আমি আমার দাদাভাইকে একটু চোখের দেখাও দেখতে পাই না”।
 

রচনা আদর করে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমিও তো তোমাকে আমার সারাটা জীবন ধরে চোখের সামনে দেখতে চাই দিদিভাই। কিন্তু তুমি যে আগে থেকেই আমাদের কাছ থেকে দুরে সরে থাকবার প্ল্যান করে রেখেছ, সেটা যদি বিয়ের আগে বুঝতে পারতুম, তাহলে হয়তো এ বিয়েতে আমি রাজীই হতুম না”।
 

রচনার কথা শুনে সীমন্তিনী কিছু একটা বলে ওঠবার আগেই কথা ঘুরিয়ে রচনা নিজেই বলে উঠল, “আচ্ছা দিদিভাই, তোমার কালকের প্রোগ্রাম তো এখনও ঠিক হল না। তবে আজ বিকেলে কিন্তু আমরা তোমাকে নিয়ে গরিয়াহাট যাব একটু। তোমার আপত্তি নেই তো”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আবার গরিয়াহাট যাবি? সেদিন না নতুন শাড়িটা তোর হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আজ আবার সেখানেই যাবি”?

রচনা একটু হেসে বলল, “হ্যাঁগো দিদিভাই। ওই দোকানটাতেই যেতে হবে। ওই শাড়িটার জন্যেই একটা ব্লাউজ বানাতে দিতে হবে। সেদিন পুরোন ব্লাউজ সঙ্গে নিয়ে যাইনি বলে মাপ দিতে পারিনি। আজ ব্লাউজটা বানাতে দিয়ে আসব। তোমার ব্লাউজ এনেছ তো দিদিভাই? একটা নিয়ে নিও সাথে”।

সীমন্তিনী অবাক হয়ে বলল, “ওমা, ব্লাউজ বানাবি তুই। তাহলে আমার ব্লাউজ নিতে বলছিস কেন”?
 

রচনা দুষ্টুমির হাঁসি হেসে বলল, “কিছু কিছু কথা আমিও কিছু সময়ের জন্য গোপন রাখতে পারি কি না দেখি। আর ভাবছ কেন দিদিভাই। এখানে দর্জিরা নাকি খুব ভালো ব্লাউজ বানায়। তুমিও একটা বানিয়ে নিয়ে যেও”।

মিনিট দশেক বাদেই পরিতোষ ফোন করে জানাল যে মেয়েটার সাথে অন্য আরেক বাড়িতে দেখা করবার প্রোগ্রাম ঠিক করা হয়েছে। পরিতোষ ঠিক আটটার সময় সীমন্তিনীকে সামনের বড় রাস্তার মোড় থেকে গাড়িতে তুলে নেবে। সীমন্তিনীও রাজি হল। তবে সীমন্তিনী চেয়েছিল রচনাকেও সাথে নিয়ে যাবে। পরিকে সে কথা বলতেই সেও সহর্সে রাজি হল। ঠিক হল কাল সকালে সীমন্তিনীর সাথে রচনাও যাবে পরিতোষের জন্যে মেয়ে দেখতে।

বিকেলে নতুন শাড়িটার ব্লাউজ পিচটা কেটে নিয়ে রচনা রতীশ আর সীমন্তিনীকে নিয়ে গরিয়াহাটে গিয়ে দু’জনের জন্য ব্লাউজ বানাতে দিয়ে এল। ফেরার পথে একটা রেস্টুরেন্টে হাল্কা খাবার খেয়ে ঘরে ফিরল।
 

*****************

পরেরদিন শনিবার রতীশ ভোরে বেরিয়ে যাবার সময় বলে গেল ইনস্টিটিউট থেকে ফেরবার পথে বাজার থেকে মাছ নিয়ে আসবে। রচনা ইলিশ মাছ আনবার কথা বলে দিল রতীশকে। কিন্তু রতীশ বেরিয়ে যেতেই রচনা চিন্তিত ভাবে সীমন্তিনীকে বলল, “ও দিদিভাই, তোমার দাদাভাইকে তো বলে দিলাম মাছ আনতে। কিন্তু আমরা কি সাড়ে এগারোটার মধ্যে ফিরে আসতে পারব”?

সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “ভাবিস না রচু। আমাদের যদি ফিরতে দেরীও হয় তাহলেও এমন কিছু হবে না। দাদাভাইকে ফোন করে বলে দেব’খন। কিন্তু দাদাভাইয়ের কাছে কি ঘরের ডুপ্লিকেট চাবি আছে”?

রচনা বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই, আজ যাবার সময় ডূপ্লিকেট চাবিটা তাকে দিয়ে দিয়েছি আমি”।
 

সীমন্তিনী আর রচনা দু’জনেই বেরোবে বলে সাজগোজ করছিল তখন। সীমন্তিনী বলল, “যেভাবে তুই ঘরটা সাজিয়েছিস তা মোটামুটি ঠিকই আছে রচু। তবে আর দুটো জিনিস থাকলেই আর তেমন কোন অভাব থাকত না। একটা টিভি আর একটা ফ্রিজ। এ দুটো হলেই আপাততঃ আর কিছু না হলেও চলবে। দাদাভাই সকাল বেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পর তুই তো একেবারে একা একা থাকিস। একটা টিভি থাকলে তবু এতটা খারাপ লাগত না”।

রচনা বলল, “থাকলে তো মাঝে মাঝে দেখতামই। আর তাতে সবচেয়ে সুবিধে হত তোমার দাদাভাইয়েরই। তোমার দাদাভাই ঘরে ফিরে আসবার পর থেকে তার তো আর তেমন কোন কাজ থাকে না। সারাদিন শুধু এ’ঘর ও’ঘর করে ঘুরে বেড়ান। বাড়িতে থাকতে তো তিনি নিয়ম করে টিভিতে নিউজ দেখতেন। বিকেলের দিকে ছোটকাকুর দোকানে গিয়ে বসতেন। এখানে সে’সব করতে পারছেন না। খবরের কাগজ পড়ার অভ্যেসও তেমন নেই। আমি তো একটা বেলাই ঘরে একা থাকি। এটা সেটা করতে করতেই সময় কেটে যায়। তোমার দাদাভাই তো এ মাসেই মাইনে পেয়ে টিভি কিনতে চাইছিলেন। আমিই বারণ করেছি। বলেছি আর দু’ এক মাস যাক। তারপর না হয় কেনা যাবে। কিন্তু এখন বেশী দরকার একটা ফ্রিজের। তোমার দাদাভাই তো আর অন্যান্যদের মত রোজ সকালে বাজারে যেতে পারেন না। অফিস থেকে ফেরার পথে দু’ তিনদিন বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শাক সবজি, মাছ মাংস কিনে আনেন। একটা ফ্রিজ থাকলে সেসব ফ্রিজে রেখে দেওয়া যেত। কিন্তু বাড়ি থেকে যা নিয়ে এসেছিলেন তা থেকে দু’লাখ টাকা তো লুঠই হয়ে গেল। এখন হাতে জমা পুঁজি যেটুকু আছে সেটুকু তো হুটহাট করে খরচ করে ফেললে হবে না। এখানে তো মহিমা বৌদি ছাব্বিশ হাজার করে মাইনে দিচ্ছেন তাকে। কয়েকমাস না গেলে ফ্রিজ কেনা সম্ভব হবে না”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা সে’সব কথা এখন থাক। পরে আলাপ করা যাবে। তোর কদ্দুর? হয়েছে? তাহলে চল, আর দেরী না করে বেরিয়ে পড়ি”।

আটটা বাজবার মিনিট পাঁচেক আগেই তারা বেরিয়ে পড়ল। লিফটে চেপে নিচে নেমে বাইরের রাস্তায় আসতেই সীমন্তিনী লক্ষ্য করল, পরিতোষের ওয়াচাররা তখনও পানের দোকানটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবল, পরিতোষের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে হবে। এখন যখন দিবাকর আর রবিশঙ্কর পুলিশের হাতে ধরা পড়েই গেছে, তাহলে এখন আর রচু বা দাদাভাইয়ের ওপর নজর রাখবার তেমন কোন দরকার নেই।
 

বড় রাস্তার মোড়ে এসে রচনা সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করল, “দিদিভাই আমরা কি অটোতে যাব এখান থেকে”?

সীমন্তিনী বলল, “না রে, আমরা এ মোড়েই দাঁড়াব। পরি তো বলেছে ঠিক আটটায় গাড়ি এসে আমাদের নিয়ে যাবে”। কবজি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “সময়ের হেরফের করা পরি খুব অপছন্দ করে। এখনই কোন একটা গাড়ি আমাদের নিতে আসবে দেখিস”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “পরিতোষদা কি নিজেই আসবেন গাড়ি নিয়ে? না অন্য কাউকে পাঠাবেন”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “সেটা তো ও স্পেসিফিক কিছু বলেনি। আর আমিও জিজ্ঞেস করিনি। তবে আটটা তো বাজলই, দেখা যাক”।

তারা খেয়াল করেনি একটা গাড়ি আগে থেকেই মোড়ের একটু আগে দাঁড়িয়েছিল। তার ড্রাইভিং সীটে পরিতোষ বসে দুই রমণীকে গভীরভাবে দেখে যাচ্ছিল। একপাশ থেকে শাড়ি পড়া সীমন্তিনীকে দেখে সে এক পলকে চিনতে পারেনি। কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড বাদে রচনার মুখটা দেখতে পেয়েই সে গাড়ি ব্যাক গিয়ারে দিয়ে আস্তে আস্তে তাদের কাছে গাড়ি এনে থামিয়ে পেছনের দরজাটা খুলে দিয়ে বলল, “উঠে এস ডার্লিং”।

সীমন্তিনী পরিতোষকে দেখেই রচনার হাত ধরে পেছনের সীটে উঠে বসতেই পরিতোষ দরজা বন্ধ করে দিয়ে দু’ সীটের মাঝখান দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “গুড মর্নিং, বাব্বা এই ক’টা মাসেই চেহারার এত পরিবর্তন করে ফেলেছ সুইট হার্ট। আমি তো তোমায় চিনতেই পাচ্ছিলাম না”।
 

পরিতোষের কথা শুনে রচনা মনে মনে হেসে ফেলল। সীমন্তিনী পরিতোষের সাথে হ্যাণ্ডশেক করে মৃদু ধমক দিয়ে বলল, “আঃ পরিতোষ। আমার বৌদি সঙ্গে আছে। একটু ভদ্র ভাবে কথা বল প্লীজ। ও কী মনে করবে বল তো? কালও ফোনে তুমি এমন সব শব্দ উচ্চারণ করছিলে। ওকে ঠাণ্ডা করতে আমাকে কত কী না করতে হয়েছে”।

পরিতোষ হেসে বলল, “ও’টুকুতেই তো আমার আনন্দ সুইট হার্ট। নইলে আমার সারা জীবনে প্রাপ্তির ঘর তো একেবারে শূণ্য” বলেই রচনার দিকে মুখ করে হাতজোড় করে বলল, “নমস্কার বৌদি। আমি হচ্ছি ঠোঁট কাটা পরিতোষ। আপনার দিদিভাইয়ের বন্ধু”।

হাল ফ্যাশনের সানগ্লাস চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে রচনা হাতজোড় করে বলল, “নমস্কার দাদা। আমি কিচ্ছু মনে করছি না। কিন্তু আপনার গলার স্বরটা আমার এত চেনা চেনা লাগছে কেন বলুন তো? আমরা কি আগে কখনো মুখোমুখি হয়েছি”?

পরিতোষ চোখের ওপর থেকে সানগ্লাসটা সরিয়ে নিয়ে হঠাৎ বলল, “আরে হ্যা। আপনিই তো সেই মহিলা! ওই গরিয়াহাট- শাড়ি ছিনতাই- মনে পড়ছে”?

রচনা সাথে সাথে প্রায় চেচিয়ে বলে উঠল, “আরে আপনি? আপনিই পরিতোষদা। ছিঃ ছিঃ সেদিন ওই তালেগোলে আপনাকে ভাল করে একটু ধন্যবাদও দিতে পারিনি আমরা। কিন্তু সেদিন আপনি যা করেছেন তাতে আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকব আপনার কাছে”।

সীমন্তিনী জেনে বুঝেও না জানার ভাণ করে বলল, “কি ব্যাপার রে রচু? তুই পরিকে আগে কোথাও দেখেছিস? মানে গরিয়াহাটায় ওই শাড়ি ছিনতাইয়ের দিন”?

রচনা উচ্ছ্বসিত ভাবে বলল, “হ্যাঁ গো দিদিভাই। তোমায় সেদিন বললুম না? এই পরিতোষদাই তো সেদিন ছেলেটাকে ধরে পুলিশের হাতে দিয়ে শাড়িটা এনে আমায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ইশ, আমি তো ভাবতেই পারিনি এভাবে তোমার বন্ধুর সাথে আমার কখনো দেখা হতে পারে”।

পরিতোষ তখন বলল, “ঠিক আছে দেরী না করে বরং রওনা হই আমরা। যেতে যেতে কথা বলা যাবে” বলে গাড়ি স্টার্ট করল।
 

সীমন্তিনী পরিতোষের দিকে তাকিয়ে ছদ্ম অভিনয় করে বলল, “তুমি তো ফোনে আমাকে সে’কথা বলনি পরি”।

পরিতোষও সীমন্তিনীর দুষ্টুমি বুঝতে পেরে বলল, “আরে এটা আর একটা বলবার মত কথা হল নাকি? পথে ঘাটে এমন সব ঘটণা তো আকছার হচ্ছে। আর আমি তো সেদিন জানতাম না যে ওই মহিলাই তোমার রচু সোনা। জানলে নিশ্চয়ই বলতাম। তবে এখন আমার আরও বেশী ভাল লাগছে ডার্লিং। আমি না জেনেই সেদিন তোমার বৌদির শাড়িটা উদ্ধার করে এনেছিলাম বলে। যাক ভালই হল। এখন থেকে বৌদি যখনই শাড়িটা পড়তে যাবেন তখনই আমার কথা মনে পড়বে”।

সীমন্তিনী বলল, “ধ্যাত, তুমি যে ওকে বৌদি বলে ডাকছ, একদম ভাল লাগছে না পরি। তুমি ওকে বরং নাম ধরেই ডেকো, আর তুমি করে বোল। ও তো তোমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট”।

পরিতোষ বলল, “উহু আমার বন্ধুর বৌদিকে বৌদি বলে না ডাকলে কি চলে? তবে বৌদি যদি পারমিশন দেয় তাহলে তুমি করে বলতে আমার আপত্তি নেই”।

রচনা বেশ সহজ ভাবে বলল, “আমার একদম আপত্তি নেই। আপনি যদি আমাকে দিদিভাইয়ের মত রচু বলেও ডাকেন তাতেও আমার আপত্তি নেই। আর তুমি করেই বলবেন প্লীজ। ইশ আমি এখনও ভাবতেই পাচ্ছিনা দিদিভাই, পরিতোষদাই সেদিন আমার হারিয়ে যাওয়া শাড়িটা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তোমার দাদাভাই শুনলে তো বিশ্বাসই করবেন না”।

সীমন্তিনী প্রসঙ্গ পাল্টে পরিতোষকে বলল, “আচ্ছা পরি তুমি আমাদের নিয়ে কতদুর যাবে তা তো ঠিক জানিনা। কিন্তু আমাকে আর রচুকে কিন্তু সাড়ে এগারোটার মধ্যে ফিরতেই হবে”।

পরিতোষ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতেই বলল, “যে কাজে যাচ্ছ, মানে যাকে দেখতে যাচ্ছ, তার কাছে যদি দেরী না হয়, তাহলে কোন অসুবিধে হবে না সুইট হার্ট। কিন্তু সেখানে তোমরা তিন মহিলা মিলে কতক্ষণ সময় নষ্ট করবে, তা তো আর আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে আমার জন্যে যে তোমাদের দেরী হবে না সে গ্যারান্টি আমি দিতে পারি। আমার উদ্দেশ্য তো শুধু তোমাদের তিনজনকে ব্রেকফাস্ট খাওয়ানো। সেটা করতে পারলেই আমি খুশী”।
 

মিনিট পনেরো পর গাড়িটার গতি কমতে কমতে একসময় বাঁদিকে ফুটপাথ ঘেষে গাড়িটা দাঁড়িয়ে গেল। সীমন্তিনী লক্ষ্য করল নীল শাড়ি পড়া বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে ফুটপাথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িটা পুরোপুরি থেমে যেতেই পরিতোষ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, “মন্তি ডার্লিং, দরজাটা একটু খুলে দাও প্লীজ। আর ওনাকে গাড়িতে উঠতে দাও” বলেই জানালার দিকে তাকিয়ে একটু জোরে বলল, “এসো নবনীতা, উঠে এস”।

সীমন্তিনী দরজা খুলে দিতেই নবনীতা পেছনের সীটে উঠে বসতেই পরিতোষ গাড়ি ছুটিয়ে দিয়ে বলল, “নবনীতা, তুমি যার সাথে দেখা করতে চাইছিলে তিনি তোমার ঠিক পাশেই বসে আছেন। মিস সীমন্তিনী ভট্টাচার্যি। আর তার পাশে তার বৌদি রচনা” বলে সীমন্তিনীকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আর মন্তি, তোমাকে যার কাছে নিয়ে যাচ্ছিলাম ইনিই তিনি। মিস নবনীতা দেব। তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম। এখন তোমরা নিজেরা নিজেরা কথা বল। আমি ড্রাইভিংএ মন দিই”।
 

নবনীতা হাতজোড় করে সীমন্তিনী আর রচনাকে নমস্কার করে বলল, “পরিতোষের মুখে আপনার কথা অনেক শুনেছি দিদি। আপনাকে দেখবার খুব ইচ্ছে করছিল। আজ মনের সে সাধ পূর্ণ হল”।
 

সীমন্তিনী প্রথমে হাতজোড় করে প্রতি নমস্কার করেই নবনীতার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বলল, “আমিও তো আপনাকে দেখবার অপেক্ষায় ছিলাম। আশা করি আমাদের উদ্দেশ্য সফল করতে আপনি কোন বাধা দেবেন না”।
 

নবনীতা কিছুটা ভারী গলায় জবাব দিল, “নিজের নিজের চাওয়া মতই তো জীবনে সব কিছু ঘটে না সীমন্তিনীদি। যার ভাগ্যে যা আছে তাই তো হবে। তবে আমার মনে হয় সে ব্যাপারে আলাপ এ গাড়ির মধ্যে না করাই ভাল, তাই না”?

রচনা মন দিয়ে নবনীতাকে দেখে যাচ্ছিল। বেশ সুন্দরী দেখতে মেয়েটা। পরিতোষদার সাথে খুব ভাল মানাবে।

পরিতোষ চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। সীমন্তিনী নবনীতার হাতটাকে আগের মতই ধরে থেকে বলল, “অত কষ্ট করে আমাকে পুরো নামে ডাকতে হবে না। আর আপনি আজ্ঞে না করে তুমি করে বললেই আমি খুশী হব। আর ছোট্ট করে মন্তিদি বলে ডাকতে পার আমায়”।

রচনা একটু হেসে বলল, “নবনীতাদি বলে ডাকাটাও আমার পক্ষে একটু বিব্রতকর বলে হবে। আমি কিন্তু তোমাকে নীতাদি বলেই ডাকব”।

নবনীতাও এবার মিষ্টি করে হেসে বলল, “ঠিক আছে বৌদি, তাই বলো”।
 

আরও মিনিট পনের বাদে পরিতোষ একটা জায়গায় এসে গাড়ি সাইড করে থামিয়ে দিয়ে বলল, “ব্যস আমরা এসে গেছি। তবে নবনীতা, মন্তি তোমাদের সবাইকেই বলছি, আমরা যে বাড়িতে যাচ্ছি সে পরিবারের আর্থিক অবস্থা কিন্তু খুবই দৈন্য। তাই পুরোন ভাঙাচোরা বাড়ি বলে কেউ বাড়ির লোকগুলোকে কোন অসম্মানসূচক কথা বল না প্লীজ। এ বাড়িটা যার তাকে আমি আমার ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করি। সে-ও আমাকে দাদার মত সম্মান করে। এখানে সে আর তার বৃদ্ধা মা থাকেন শুধু”।

পরিতোষের কথা শেষ হতে পেছনের সীটের তিন মহিলা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই উল্টোদিকের পুরোন বাড়িটা থেকে একটা চব্বিশ পঁচিশ বছরের ছেলে দৌড়ে গাড়ির কাছে এসে বলল, “দাদা, আপনারা এসে গেছেন? আসুন আসুন”।

পরিতোষ গাড়ি লক করে ছেলেটার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, “একিরে? তুই আজ কলেজে যাসনি বিট্টু”?

বিট্টু বলল, “হ্যাঁ দাদা, গিয়েছিলাম। কিন্তু এগারোটার আগে আমার ক্লাস নেই বলে অ্যাটেনড্যানসে সই করে ম্যামকে বলে দু’ঘন্টার ছুটি নিয়ে এসেছি। আসলে আমিও একটু টেনশনে ছিলাম আপনারা সবাই আসবেন বলে। মা বুড়ো মানুষ। ঠিকমত আপনাদের দেখভাল করতে পারবেন কি না, তাই আর কি”।

পরিতোষ বিট্টুর হাত ধরে অন্য সকলের দিকে তাকিয়ে বলল, “মন্তি, এ হচ্ছে বিট্টু। আমার ছোটভাইয়ের মত। এদের বাড়িতেই আমরা আজ বসব” তারপর বিট্টুর দিকে ঘুরে বলল, “তুই যখন দু’ঘণ্টার ছুটি নিয়ে চলেই এসেছিস, তাহলে একটা কাজ করবি ভাই”?

বিট্টু সাথে সাথে বলল, “হ্যাঁ দাদা, বলুন না কী করতে হবে”?

পরিতোষ বলল, “সামনের ওই রেস্টুরেন্টে আমি ছটা ব্রেকফাস্ট প্যাক আর ছ’বোতল জলের অর্ডার দিয়ে অ্যাডভান্স পেমেন্ট দিয়ে এসেছি। আমরা তো তোদের বাড়িতে বসে আলাপে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। তাই বলছিলাম কি তুই যদি গিয়ে জিনিসগুলো নিয়ে আসতে পারতিস, তাহলে আমার একটু সুবিধে হত”।

বিট্টু বলল, “আপনি এমন করে বলছেন কেন দাদা। এ আর এমন কী কাজ। আমি আপনাদের ঘরে বসিয়ে দিয়ে এখনই সাইকেল নিয়ে গিয়ে জিনিসগুলো নিয়ে আসছি”।

সবাই মিলে রাস্তা পেরিয়ে বিট্টুদের বাড়ির দিকে চলল। পরিতোষ বিট্টুকে বলল, “না সাইকেল নিয়ে যাস নে ভাই। ওরা একটা কার্টনে সব প্যাকিং করে দেবে। সেটা সাইকেলে আনতে তোর অসুবিধে হতে পারে। তুই বরং যাবার সময় একটু কষ্ট করে হেঁটেই যা ভাই। ফেরবার পথে না হয়ে একটা অটো ভাড়া করে চলে আসিস”।

বিট্টু সবাইকে নিয়ে বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “আচ্ছা দাদা, ঠিক আছে। আমি সে’সব দেখে নেব’খন। তবে মা কিন্তু চায়ের অ্যারেঞ্জমেন্ট করে রেখেছেন নিজেই। তাই চা টুকু কিন্তু আমাদের তরফ থেকেই দেওয়া হবে আপনাদের সবাইকে”।

গেট দিয়ে ঢুকতেই বিট্টুর মাকে দেখা গেল ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে। সকলকে দেখেই তিনি বারান্দা থেকে নেমে তাদের কাছে আসতে আসতে বললেন, “এস বাবা পরিতোষ, এস। কত ভাগ্য আমাদের, এতসব মা লক্ষীদের তোমার সাথে নিয়ে এসেছ”।

পরিতোষ বিট্টুর মাকে প্রণাম করে বলল, “মাসিমা, এদের একজন হচ্ছে আমার অফিসের কলিগ সীমন্তিনী, আর একজন উনি হচ্ছেন আমার এই কলিগ বন্ধুর বৌদি রচনা। আর ইনি হচ্ছেন আমার আর এক বন্ধু নবনীতা” বলে তিন জনকে আলাদা আলাদা ভাবে দেখিয়ে দিয়ে বলল, “আসলে মাসিমা, এরা সকলেই প্রথমবার আমার বাড়ি আসতে চাইছিল একটা বিশেষ ব্যাপারে আলোচনা করতে। কিন্তু আমার ঘরের যা অবস্থা, এদেরকে নিয়ে গিয়ে আমার সাথে সাথে এদের সবাইকেও বিব্রত করে ফেলতাম আমি। তাই বাধ্য হয়ে আপনাদের এখানেই আসতে হল”।

পরিতোষের দেখাদেখি সীমন্তিনী, রচনা আর নবনীতা বিট্টুর মাকে প্রণাম করতে তিনি সবাইকে আশীর্বাদ করতে করতে বললেন, “খুব ভাল করেছ বাবা। তুমি যে এদের সবাইকে নিয়ে এসেছ তাতে আমরা খুব খুশী হয়েছি। কিন্তু তুমি তো আমাদের কথা সবই জানো বাবা। একটু খানি চা ছাড়া তোমাদের হাতে এক এক টুকরো বাতাসা দেবার সাধ্যও যে আমাদের ......”

বিট্টু তার মাকে মাঝপথে বাঁধা দিয়ে বলল, “আঃ, মা ও’সব কথা কেন টানছ। তুমি চা রেডি কর, আমি এনাদের আমার ঘরে বসিয়ে আসছি” বলে সবাইকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল, “দাদা, আপনারা সবাই মিলে বরং আমার ঘরেই বসুন। পেছনের ঘরে তো জায়গা বেশী নেই”।

পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “তোর অসুবিধে না হলে আমাদের আর কি? তবে শোন মাসিমাকে বেশী টেনশন নিতে বারণ কর। আর চা যদি বানানো হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে নিয়ে আয়। আর তুইও চা খেয়ে ছুটে ওই রেস্টুরেন্টে চলে যা। আমার নাম করে বললেই ওরা সব দিয়ে দেবে”।

ঘরের ভেতরের বিছানায় তিন রমণীকে বসিয়ে বিট্টু পরিতোষের জন্য একটা চেয়ার পেতে দিয়ে বেরিয়ে গেল। আর খানিক বাদেই ট্রেতে করে চা আর বিস্কুট এনে সকলকে দিয়ে আবার চলে গেল।

______________________________
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 09-03-2020, 10:55 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)