Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 123)

গরিয়াহাটের প্রসিদ্ধ আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয় থেকে রচনা সীমন্তিনীর জন্য শাড়ি পছন্দ করল। টকটকে লাল রঙ, পারটা ঘণ সবুজ রঙের। রচনার ভারী পছন্দ হয়েছে শাড়িটা। সীমন্তিনীকে বড় চমৎকার লাগবে এ শাড়িতে। সঙ্গে ব্লাউজ পিস আছে। কিন্তু ব্লাউজের মাপ সঙ্গে নেই বলে ব্লাউজ বানানো সম্ভব ছিল না। তবে দোকানের লোকগুলো বলেছে মাস খানেকের মধ্যে ক্যাশমেমো সহ যে কোন দিন এসে তারা ব্লাউজের মাপ দিয়ে যেতে পারবে। দু’দিনের মধ্যেই ব্লাউজ বানিয়ে দেওয়া হবে। রচনা মনে মনে ভাবল, সীমন্তিনী যেদিন কলকাতা আসবে সেদিনই তাকে নিয়ে গরিয়াহাট এসে ব্লাউজ বানাতে দিয়ে যাবে। দু’দিন পর ডেলিভারি নিয়ে সীমন্তিনীকে দিয়ে দেওয়া যাবে।

কাপড়ের দোকান থেকে বেরিয়ে সামনের ফুটপাথ দিয়ে এগিয়ে চলল তারা। রচনা মনে মনে ভীষণ খুশী। এ শাড়িটা পড়লে তার দিদিভাইয়ের দিকে থেকে কেউ চোখ সরাতেই পারবে না মনে হয়। সরু ঘিঞ্জি ফুটপাথের ওপরেও একের পর এক হকারদের দোকান। বেশীর ভাগই নানা ধরণের কাপড়ের দোকান। আর একটু বাদে বাদেই ফুটপাথের ডানদিক দিয়ে এক একেকটা গলি বেরিয়ে গেছে। ফুটপাথ আর সব গুলো গলিতেই প্রচুর লোকের ভিড়। রতীশ রচনাকে সাথে নিয়ে ফুটপাথ ধরে জেব্রা ক্রসিং-এর দিকে এগিয়ে চলল। রাস্তা পেরিয়ে তাদের অন্যদিকে চলে যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে অটো ধরতে হবে।

হঠাতই সেই ভিড়ের মধ্যে কেউ রচনার হাতে ধরে থাকা ব্যাগটা ছিনিয়ে নিল। রচনা প্রায় সাথে সাথে চিৎকার করে উঠল। দু’একজন লোকও হা হা করে উঠল। রতীশ রচনার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারল কী হয়েছে। ডানদিকের একটা গলির অনেকটা ভেতর দিকে “চোর চোর” চিৎকারও শোনা গেল। কিন্তু ওই অবস্থায় রচনাকে একা ছেড়ে রতীশ চোরের পেছনে ধাওয়া করবার কথা ভাবল না। রচনা রতীশের হাত জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল। তার হাতের ব্যাগটা যে কে ছিনিয়ে নিয়ে কোন দিকে ছুটে পালিয়ে গেছে তা সে একেবারেই বুঝতে পারেনি। ভিড়ের মধ্যেও তাদেরকে ঘিড়ে একটা ছোট জটলা তৈরী হয়ে গেল। একজন বলল, “একটা কম বয়সী ছেলে ম্যাডামের ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে গেল”। আরেকজন বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিও দেখেছি। পাশের ওই গলিটার ভেতর দিয়ে পালিয়েছে বদমাশটা”। আরেকজন বলল, “ছিঃ ছিঃ কী দিনকাল পড়েছে। কোথাও এতটুকু নিরাপত্তা নেই মানুষের”।
 

রচনা যেন কারো কথা শুনতে পাচ্ছিল না। তার দিদিভাইয়ের জন্য কেনা এমন পছন্দের শাড়িটা যে এভাবে ছিনতাই হয়ে যেতে পারে, এ সে ভাবতেই পারেনি। তার বুকের ভেতর থেকে উথলে ঠেলে বেরিয়ে আসা কান্নাকে সামলাতে না পেরে সে ফুটপাথের ওপরেই বসে পড়ে কেঁদে ফেলল। রতীশ রচনাকে সামলাবার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু কিছুতেই যেন তাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। দু’একজন সমব্যথীও নানা প্রবোধ বাক্য বলতে লাগল। রতীশ রচনাকে ধরে তুলে তাকে প্রায় জড়িয়ে ধরে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে যাবার চেষ্টা করছিল। আশেপাশে মানুষের ভিড় যেন বেড়েই যাচ্ছিল। ঠিক এমন সময় পেছন দিকে থেকে কেউ বলে উঠল, “একটু সরুন দেখি। আমাকে একটু যাবার জায়গা দিন। বদমাশটা ধরা পড়েছে। ও ব্যাটাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি। ব্যাগটা ম্যাডামের হাতে ফিরিয়ে দিতে দিন আমাকে, একটু সরুন প্লীজ”।

অমনি অনেকে হৈ হৈ করে উঠল। ভিড় ঠেলে লোকটা রচনা আর রতীশের কাছাকাছি এসে বলল, “দেখুন তো ম্যাডাম। এটাই আপনার সে ব্যাগটা কি না”।

রচনা কান্না ভেজা চোখে লোকটার দিকে চাইতেই লোকটা বাদামী রঙের কাগজের ক্যারি ব্যাগটা উঁচিয়ে ধরল। রচনার চিনতে অসুবিধে হল না। সে হাত বাড়িয়ে লোকটার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়েই তার ভেতর হাত ঢুকিয়ে ভেতরের শাড়িটাকে বের করে দেখে বলল, “হ্যাঁ, এই তো। এটাই তো আমার ব্যাগ”।

রতীশ লোকটার কাছে এসে তার হাত ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ দাদা। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। কিন্তু আপনি এটা পেলেন কি করে”?

লোকটা বলল, “আমি তো ম্যাডামের ঠিক পেছন পেছনই আসছিলাম। বদমাশটা ব্যাগটা কেড়ে ঐ গলির ভেতর ঢুকে যেতে আমিও ছুটে গিয়েছিলাম তার পেছন পেছন। চোর চোর বলে চেঁচাচ্ছিলাম। ওই গলিটার ভেতরের দিকে একটা জায়গায় দু’ তিনজন পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। আমার চিৎকার শুনেই তারা বদমাশটাকে ধরে ফেলেছে। উত্তম মধ্যম দিতে দিতে ওকে তারা নিয়ে গেছে। আর ব্যাগটা আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আসলে তারা হয়ত ভেবেছিল যে আমার হাত থেকেই বদমাশটা ওটা ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু আমি তো জানি এটা আমার নয়, এটা এই ম্যাডামের। তাই আমিও আর দেরী না করে উল্টোপায়ে ছুটে এলাম। মনে মন ভয় হচ্ছিল, এসে আপনাদের দেখতে পাব কি না”।
 

রতীশ লোকটার সাথে হ্যাণ্ডশেক করে বলল, “আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা” বলতেই পেছন থেকে আরেকজন এসে বলল, “আরে দাদা! আপনি এখানে? কিছু হয়েছে না কি”?

রতীশ ঘাড় ঘুরিয়ে লোকটার দিকে চেয়েই বলে উঠল, “আরে নিখিল? তুমি এখানে”?

নিখিল বলল, “একটা জিনিস কিনতে এসেছিলাম দাদা। কিন্তু এখানে জটলা দেখেই এগিয়ে এলাম। আর আপনাকে দেখে আরও অবাক হলাম। কিন্তু হয়েছেটা কি? ইনি কাঁদছেন কেন”? বলে রচনার দিকে ইশারা করল।

রতীশ নিখিলের হাত ধরে বলল, “ওনার নতুন কেনা একটা শাড়ি ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। পেছন থেকে কেউ ছিনিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু এখন সেটা ফেরত পাওয়া গেছে। এই ভদ্রলোক সেটা উদ্ধার করে নিয়ে এসেছেন” বলে উদ্ধার কর্তার দিকে চেয়ে আরেকবার বলল, “সত্যি আপনাকে ধন্যবাদ জানাবার ভাষা আমার নেই। তবে এখন আসছি দাদা”।
 

নিখিল রতীশের হাত ধরে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ আসুন দাদা। আমার সঙ্গে আসুন। চলুন আমি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি”।

রতীশও আর কোন কথা না বলে রচনার হাত ধরে ভিড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল। একটু এগিয়ে যাবার পর নিখিল একটা গলির ভেতর ইশারা করে বলল, “দাদা এদিক দিয়ে চলুন। এ গলি থেকে বেরিয়েই ওদিকে আমার অটো পেয়ে যাবেন। তা দাদা, আপনার সঙ্গে ইনি বুঝি আমাদের বৌদি”?

রতীশ জবাব দিল, “হ্যাঁ ভাই, উনি আমার স্ত্রী”।

নিখিল এবার একটু হেসে বলল, “কিছু মনে করবেন না বৌদি, আপনার কপালটা কিন্তু সত্যিই ভাল। নইলে এভাবে ছিনতাই হয়ে যাওয়া জিনিস কখনোই ফিরে পেতেন না”।


****************

রাত দশটায় সীমন্তিনী পরিতোষকে ফোন করল। তার কোলকাতা আসবার খবরটা জানাতেই পরিতোষ বলল, “রাতের বেলা ট্রেন জার্নি করে আসছ, একটু এলার্ট থেকো। তা কোন রাস্তায় আসছ তুমি? ডুয়ার্সের রাস্তায় আসবে না নিউ আলিপুরদুয়ার হয়ে আসবে”।

সীমন্তিনী বলল, “না ডুয়ার্সের রাস্তায় যাব না। অনেক দেরী হয়ে যাবে। আমি এখান থেকে আলিপুরদুয়ার বা এনজেপি পর্যন্ত গাড়িতে চলে যাব বিকেলের দিকে। সেখান থেকে ট্রেণে যাব। তুমি অত টেনশন নিও না তো”।

পরিতোষ বলল, “আচ্ছা বেশ শোন। ডিপার্টমেন্ট থেকে কি সিকিউরিটি দিচ্ছে”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “হু পাঁচজন সিকিউরিটি থাকবে আমার সাথে সিভিল ড্রেসে। আর আমিও প্লেন ড্রেসেই যাচ্ছি। আমাকে দাদাভাইয়ের বাড়ি ড্রপ করে দেওয়া পর্যন্ত সিকিউরিটি থাকবে আমার সাথে। আর যেদিন আমি ফিরে আসব সেদিন সকাল থেকে সিকিউরিটি পাবো। তবে কলকাতায় থাকা কালীন কলকাতা পুলিশ আমাকে কোন সিকিউরিটি দেবে কিনা তা ঠিক জানতে পারিনি এখনও। এসপি সাহেব বলেছেন তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন। দেখা যাক কি হয়”।

পরিতোষ বলল, “কলকাতায় যতদিন থাকবে ততদিনকার ব্যাপার তুমি আমার ওপর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পার। কোলকাতা পুলিশের সাথে আলাদা ভাবে যোগাযোগ না করলেও চলবে। আই উইল টেক কেয়ার অফ দ্যাট। তোমার সিকিউরিটি তোমাকে তোমার দাদাভাইয়ের বাড়ি পৌঁছে দেবার সময় থেকে আমার পার্সোনাল টিম তোমার কেয়ার নেবে। কিন্তু একটা কথা বল তো ডার্লিং”।

সীমন্তিনী বলল, “তার আগে তুমি আমার একটা কথা শোনো পরিতোষ। এগারো তারিখ সকাল আটটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এর মধ্যে আমি তোমার সাথে ফিজিক্যালি দেখা করতে চাই। আর সেই সাথে তোমার ওই নতুন খুঁজে পাওয়া মহিলার সাথেও দেখা করতে চাই। ইজ ইট পসিবল”?

পরিতোষ এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “তুমি যখন চাইছ তাহলে পসিবল হতেই পারে। কিন্তু ডার্লিং নিজের তরফ থেকে আমি তো তোমাকে গ্যারান্টি দিতেই পারি। কিন্তু অন্য আরেকজনের সাথে কথা না বলে তো তোমাকে পুরোপুরি পাকা কথা দিতে পারছি না। তবে আমি চেষ্টা করব। তোমাদের দু’জনের মধ্যে এপয়েন্টমেন্টটা যাতে করতে পারি। কিন্তু তবু বলছি। আকাশ কুসুম কিছু ভেবে বসো না আগে থেকেই। কারন আমি জানি, তুমি যেমনটা ভাবছ, ব্যাপারটা তেমন একেবারেই হবে না। তবে আমি নিজেও চাই তোমরা দু’জন একবার একে অপরের মুখোমুখি হয়ে কথা বল”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আমিও তার সাথে কথা না বলে কলকাতা থেকে ফিরব না। যে করেই হোক তার সাথে আমাকে মুখোমুখি কথা বলতেই হবে। আচ্ছা সে’কথা এখন থাক। তুমি শুধু এপয়েন্টমেন্টটা কনফার্ম করো আমাকে। আর অন্যান্য খবর কি বল”?
 

পরিতোষ বলল, “নতুন খবর তো আর তেমন কিছু নেই আপাততঃ সুইট হার্ট। দিবাকর আর রবিশঙ্করের পাট তো চুকে গেছে। ওঃ হ্যাঁ, কলকাতা এসে এবার কিন্তু আমার কাছে গচ্ছিত থাকা আমার সতীনের সম্পদ গুলো নিয়ে আমার কাঁধ থেকে বোঝাটা নামিয়ে ফেলো প্লীজ”।
 

সীমন্তিনী বলল, “বরানগর এরিয়ায় কোন একটা ন্যাশনালাইজড ব্যাঙ্কে একটা একাউন্ট করতে হবে। আপাততঃ টাকাটা সেখানেই রাখতে হবে। ওই এরিয়ার কোন ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সাথে তোমার জানা শোনা আছে”?

পরিতোষ বলল, “ও নিয়ে ভেব না। ইটস এ ম্যাটার অফ হার্ডলি হাফ এন আওয়ার। হয়ে যাবে। কিন্তু যার নামে একাউন্ট খোলা হবে তার আইডি, প্যান কার্ড, আধার কার্ড বা ভোটার আইডি কিন্তু থাকতে হবে”।

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ সে’সব আছে। কিন্তু নর্থ বেঙ্গলের ভোটার আইডি চলবে তো”?

পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাতে কোন সমস্যা হবে না। আমি নিজে তোমাকে ব্যাঙ্কে নিয়ে যাব”।

সীমন্তিনী বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ পরিতোষ। কিন্তু তুমি কিছু মনে কোর না। আমি এখনই চাইছিনা যে আমার দাদাভাই বা আমার রচুসোনার সাথে তোমার এখনই পরিচয় হোক। আমি এখনই তাদের সাথে তোমার মুখোমুখি করাতে চাই না। তবে ব্যাপারটা অন্য রকমও হতে পারে। সেটা এখনই বলতে পারছি না। তবে আপাততঃ সেটা চাইছি না আমি”।

পরিতোষ বলল, “ওকে ডার্লিং। অ্যাজ ইউ উইশ। তবে তোমাকে আমি আগে বলেছি কিনা ঠিক মনে করতে পারছি না। তোমার দাদাভাই আর তোমার রচুসোনা আমাকে না চিনলেও, আমি কিন্তু দু’জনকেই ভাল ভাবে চিনি”।

সীমন্তিনী বলল, “সে আমি নিজেও আন্দাজ করতে পারছি। তবু আমি চাইনা তোমাদের মধ্যে ফরম্যাল পরিচয়টা এখনই হোক। হবে তো বটেই। এবারেই যে হবে না সেটাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। ইফ সিচুয়েশন ডিমান্ডস তবে সেটা হতেই পারে। তবে সবটাই ডিপেণ্ড করছে সারকামস্ট্যান্সের ওপর। দেখা যাক। তুমিও আমাকে প্রেসার দিও না এ ব্যাপারে প্লীজ”।
 

পরিতোষ বলল, “ওঃ হ্যাঁ, যে কথাটা আগে বলতে চেয়েছিলাম, একটা খবর দেবার আছে। তোমার দাদাভাই আর তোমার রচুসোনা আজ গরিয়াহাট মার্কেটে গিয়েছিল। সেখানে একটা শাড়ি কিনে ফুটপাথ দিয়ে যাবার সময়েই তোমার বৌদির হাত থেকে শাড়িটা ছিনতাই হয়ে যায়”।

সীমন্তিনী প্রায় আঁতকে উঠে বলল, “অ্যা? কী বলছ তুমি? ওরা আজ গরিয়াহাটায় গিয়ে ছিনতাইবাজের পাল্লায় পড়েছিল? আমার সাথে দুপুরে ওদের কথা হয়েছিল। তখন তো ওরা কেউ বেরোবার কথা বলেনি আমাকে? আর আমার মনে হয় দাদাভাই বোধহয় এই প্রথম রচুকে কিছু একটা কিনে দিয়েছিল। আর সেটা ছিনতাই হয়ে গেল? ইশ”।
 

পরিতোষ বলল, “এতোটা আফসোস করার কিছু নেই ডার্লিং। তুমি তো জানই, তারা দু’জনেই আমার কনস্ট্যান্ট ওয়াচে আছেন। দু’মিনিটের ভেতর ছিনতাইবাজ ধরা পড়েছে। তোমার বৌদিও তার ছিনতাই হয়ে যাওয়া জিনিস ফেরৎ পেয়ে খুশী হয়েছেন”।

সীমন্তিনী খুশী হয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক গড। তোমাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ পরিতোষ। বিয়ের পর রচুসোনা কখনও দাদাভাইয়ের কাছে কিছু কেনার বায়না ধরেনি, এ আমি খুব ভালভাবে জানি। এই প্রথম বুঝি দাদাভাই ওকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। সেটা হারিয়ে গেলে রচু আর দাদাভাই দু’জনেই খুব কষ্ট পেত। তাই তোমাকে আরও একবার থ্যাঙ্কস জানাচ্ছি”।

পরিতোষের সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করবার আগেই ফোনটা দু’বার বিপ করেছিল। পরিতোষ ফোন কাটতেই সীমন্তিনী দেখল রচনা ফোন করেছিল। মোবাইলটা রেখে সে ল্যাণ্ডলাইন ফোনটা টেনে নিয়ে রচনার মোবাইলে ফোন করল। রচনা ফোন ধরতেই সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “হ্যাঁরে রচু, তুই ফোন করেছিলি? আমি একটু আরেকজনের সাথে কথা বলছিলাম রে। বল কি খবর? রাতের খাওয়াদাওয়া হয়ে গেছে তোদের”?
 

রচনা বলল, “না দিদিভাই এখনও খাইনি। কিন্তু সন্ধ্যের পর তোমার সাথে কথা হয়নি বলেই ফোন করলাম। তুমি বাড়িতেই আছ তো? না কি”?

সীমন্তিনী বলল, “হ্যাঁরে, ঘরেই আছি”।

রচনা বলল, “কবে যে দশ তারিখ আসবে, আর কবে যে আমি তোমাকে দেখতে পাব, এটা ভেবেই আমি অস্থির হয়ে যাচ্ছি। আর দিদিভাই শোনো না, আজ না একটা ঘটণা ঘটে গেছে গো”।

সীমন্তিনী উদ্বিঘ্ন ভাবে জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে রে? তুই আর দাদাভাই ঠিক আছিস তো”?

রচনা তাড়াতাড়ি বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ দিদিভাই আমরা সবাই ঠিক আছি। আসলে আমরা আজ গরিয়াহাটে গিয়েছিলাম একটু ঘুরতে। না এমনি এমনি ঘুরতে যাই নি। আসলে তোমার দাদাভাই আজ প্রথম মাইনে পেয়েছেন মহিমা বৌদির কাছ থেকে। সেই খুশীতে তিনি আমাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। আর জানো দিদিভাই, শাড়ির দোকানটা থেকে বেরিয়ে ফুটপাথ দিয়ে আসবার সময়েই কেউ একজন ভিড়ের মধ্যে আমার হাত থেকে ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল”।

সীমন্তিনী সব জেনেও না জানার ভাব করে বলল, “ওমা সে কিরে? তারপর”?

রচনা বলল, “আমি তো কেঁদেই ফেলেছিলাম। শাড়িটা খুব পছন্দ করে কিনেছিলাম গো। তোমার দাদাভাই এই প্রথম একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। সেটা হাতছাড়া হয়ে যেতে আমি তো কাঁদতে কাঁদতে ফুটপাথের ওপরেই বসে পড়েছিলাম। তোমার দাদাভাই আমাকে কোনরকমে সামলেছিলেন। তারপর কোত্থেকে একটা লোক শাড়ির ব্যাগটা এনে আমার হাতে দিয়ে বলল যে ছিনতাইবাজটা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। আর লোকটা আমার শাড়ির ব্যাগটা নিয়ে এসেছে। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারিনি যে শাড়িটা আবার ফিরে পাব”?

সীমন্তিনীও খুশী হয়ে বলল, “সত্যিরে। আমার রচুসোনা নিশ্চয়ই খুব লাকি। নইলে গরিয়াহাটের মত ভিড় ভার এলাকায় এভাবে ছিনতাই হয়ে যাওয়া জিনিস কেউ খুঁজে পায়? আচ্ছা কেমন শাড়ি কিনেছিস রে? খুব দামী”?

রচনা বলল, “খুব দামী নয় গো দিদিভাই। আসলে তুমি তো জানই কলকাতা আসবার পর থেকে আমরা কত অশান্তির ভেতর দিন কাটাচ্ছি। কয়েকদিন হল মহিমা বৌদির ওখানে কাজ শুরু করবার পর থেকে তোমার দাদাভাই কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছেন। আজ উনি প্রথম মাইনে পেয়েছেন। বলছিলেন একটা টিভি কিনবেন। আমিই তাকে বাধা দিয়ে বললাম যে এখন টিভি কিনতে হবে না। টিভি এক দু’মাস পরে কিনব। তখন জোর করে আমাকে শাড়িটা কিনে দিলেন। আমি তো নিতেই চাইছিলাম না। আচ্ছা তুমি বল তো দিদিভাই, এমন সময় এসব ফালতু খরচা করবার কোন মানে হয়? সামনেই পূজো। তখনও তো কিছু খরচাপাতি আছে। আর জিনিসটাও দেখ, প্রায় হাতছাড়া হয়েই গিয়েছিল। ভাগ্যিস ফিরে পেয়েছি”।
 

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কেমন রে শাড়িটা? একটু বল না”।

রচনা বলল, “একটা সাউথ ইণ্ডিয়ান সিল্কের শাড়ি গো। টকটকে লাল। পাড়টা ডীপ গ্রীন কালারের। লাল সিল্কের ওপর লাল সিল্কের সুতো দিয়েই পাতা পাতার ডিজাইনের এমব্রয়ডারি করা। আমার খুব পছন্দ হয়েছে শাড়িটা। তুমি শাড়িটা পড়লে তোমাকে খুব দারুণ দেখাবে। তুমি যখন এখানে আসবে তখন তুমি সেটা প্রথম পড়বে দিদিভাই। এ কটা দিন শাড়িটা আমি তুলে রাখব”।

সীমন্তিনী হেসে বলল, “পাগলী সোনা আমার। তোর বর এই প্রথম তোকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছে। আর তুই নিজে সেটা না পড়ে আগেই আমাকে পড়াতে চাইছিস”?

রচনা ধীর গলায় বলল, “তাতে যদি আমার ভালো লাগে, তুমি তাতে বাঁধা দেবে দিদিভাই”?

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা পাগলী মেয়ের পাল্লায় পড়েছি তো? আচ্ছা বাবা দিস। পড়ব আমি। হয়েছে এবার খুশী তো”?

রচনা বলল, “নিজে নীলকণ্ঠ হয়ে আমার জীবনে সব খুশী তো তুমিই এনে দিয়েছ দিদিভাই। তুমি না থাকলে আমি কি আজকের এই দিনটা দেখতে পেতুম বল? এখানে আসবার পর থেকে বাড়ির সকলের জন্য মন কেমন করে। আমাদের বিয়ের পর থেকেই তুমি আমাদের কাছ থেকে দুরে সরে গেছ। আমার জীবনে যত আপনজন আছে তুমি হচ্ছ তাদের সবার ওপরে। তোমাকে যে আমার অনেক কিছু দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু পারছি কোথায়? তুমি তো স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে গেছ আমাদের সবাইকে ছেড়ে। দিদিকে দেখতে গিয়ে তোমার সাথে শুধু একটা রাত কাটিয়ে এসেছি। কিন্তু তাতে কি মন ভরেছে আমার? এখন মনে হচ্ছে তোমার দাদাভাইয়ের সাথে আমার বিয়েটা না হলেই বোধ হয় ভাল হত। আমাদের বিয়ের আগেই তো আমি তোমাকে বেশী কাছে পেতাম। বিয়ের পর তোমাদের সংসারে এসে সব কিছু পেয়ে আমি তোমাকেই হারিয়ে বসেছি”।
 

সীমন্তিনী রচনাকে থামিয়ে দিয়ে আদর ভরা সুরে বলল, “রচু সোনা বোন আমার, তুই মন খারাপ করিস নে বোন। দ্যাখ তোর এ দিদিভাইটা যে আর পাঁচটা অন্য মেয়ের মত নয়। বাড়িতে তো আমাকে বংশের কুলাঙ্গার বলে সবাই। আর সেটা যে মিথ্যে, তাও তো নয়। আমি সত্যিই খুব বেয়ারা মেয়ে। কিন্তু আমার জীবনের এখন শুধু একটাই চাওয়া। তুই আর দাদাভাই যেন সব সময় সুখে থাকিস। আমি আর কিছু চাই না রে। তোকে পেয়ে তোর মা বাবা ভাই বোনকেও কাছে পেয়েছি। আর কি চাই বল? আচ্ছা, ও’সব কথা থাক। শোন তোর সাথে আমার অনেক কথা আছে। সে’সব ফোনে বলব না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে তোকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে বলব। তোদের বিয়ের আগে কালচিনির বাড়িতে তোর বিছানায় শুয়ে যেভাবে গল্প করতাম, সেভাবে। এবার খুশী তো”?

রচনা খুশী ভরা গলায় বলল, “তাতেও তো দশটা দিন আমাকে স্বস্তিতে থাকতে দেবে না। এ দশটা দিন যে আমার কি করে কাটবে”!

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা রচু। এবার রাখতে হবে রে। খুব ক্ষিদে পেয়েছে। লক্ষীদিও খাবার বেড়ে ডাকছে। তাই এখন ছাড়ছি রে। তবে শোন। দশ তারিখ সকালে আমি যেন তোর হাতের স্পেশাল আলুর দম আর লুচি খেতে পারি”।

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 09-03-2020, 10:54 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)