Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 122)

মহিমা দুটো চিরকুটে ক্লায়েণ্টদের নাম ঠিকানা লিখে চিরকুটদুটো নবনীতার হাতে দিয়ে বলল, “এখানে লেখা আছে তোমাকে কখন কোথায় যেতে হবে। তোমার কাছে এরা দু’জনই নতুন। একটু দেখে বলো এরা কেউ তোমার পরিচিত নয় তো”?

নবনীতা চিরকুটের লেখাগুলো পড়ে বলল, “ঠিক আছে ম্যাম। কোন সমস্যা নেই”।

মহিমা এবার নিজের ড্রয়ার থেকে পনের হাজার টাকা নবনীতার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এটা রেখে দাও। চৌদ্দ হাজার তোমার ফি। আর একহাজার কনভেয়ানস বাবদ দিলাম। আর কাগজটা সাবধানে ব্যাগে রেখে দাও। ঠিক সময় মত ক্লায়েন্টদের কাছে পৌছে যাবে”।

নবনীতা টাকা আর চিরকুটটা ব্যাগের ভেতর রেখে বলল, “আর কিছু ম্যাম”?

মহিমা একটু হেসে বলল, “না আজ আর কিছু বলার নেই। অ্যাসাইনমেন্টগুলো কমপ্লিট হলে আমাকে ফোন করে জানিও। এবার এসো। আর হ্যা শোন, কোনরকম অসুবিধে হলে আমাকে খুলে বোল”।

“ওকে ম্যাম” বলে নবনীতা বেরিয়ে গেল। মহিমা আবার নিজের ল্যাপটপে কিছু কাজ করে দেখে সন্তুষ্ট হল। এখনকার সব কাজ সাড়া। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল বেলা প্রায় বারোটা। রতীশ আসবার পর থেকে সে আর বারোটার আগে ইনস্টিটিউট থেকে বেরোতেই পারে না। রতীশ যতক্ষণ ইনস্টিটিউটে থাকে ততক্ষণ সে তার এই ব্যবসার ব্যাপারগুলো দেখতে পারে না। রতীশের কাছ থেকে ব্যাপারগুলো গোপন রাখতেই তাকে এমন করতে হচ্ছে। সব জিনিসপত্র গোছগাছ করে কলিং বেল বাজাতেই অজয় এসে হাজির। মহিমা তাকে রেস্ট রুম বন্ধ করবার কথা বলে সেখান থেকে নিজের ভারী ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।


****************

বেলা প্রায় বারোটা নাগাদ রতীশ বাড়ি পৌঁছল। ঘরে ঢুকেই রচনার হাতে বেতনের টাকা ভরা খামটা দিতেই রচনা জিজ্ঞেস করল, “এতে কি আছে সোনা”?
 

রতীশ ভেতরের ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “ওতে আমার গত মাসের মাইনে আছে। বাড়িতে থাকতে তো কলেজের বেতন সোজা আমার ব্যাঙ্ক একাউন্টে গিয়ে জমা হত। এখানে তো তা হবে না। প্রতি মাসের এক তারিখে মাইনে এনে এখন থেকে আমার ঘরের লক্ষ্মীর হাতে তুলে দেব। তুমিই তো এখন আমার ঘরের মালকিন”।

রচনা মনে মনে খুশী হলেও মুখে বলল, “আহা, ঢং দেখে আর বাঁচি না। কিন্তু আগে পোশাক খুলে একটু বসে জিরিয়ে নাও তো। আমি তোমার জন্য একটু শরবৎ বানিয়ে আনছি। যা গরম পড়েছে আজ। শরবৎ খেলে একটু ভাল লাগবে”।

রতীশ নিজের শার্ট আর গেঞ্জী খুলতে খুলতে দুষ্টুমি করে বলল, “পোশাক খুলে বসতে বলছ? সব খুলে”?

রচনা লাজুক ভাবে “ধ্যাত অসভ্য কোথাকার। সব কথার বাজে মানে বের করা তোমার একটা অভ্যেসে পরিণত হচ্ছে। দুষ্টু কোথাকার” বলে হাতের খামটাকে বিছানার তলায় রেখে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।

মিনিট দশেক বাদে দু’হাতে দু’গ্লাস শরবৎ এনে বেডরুমে এসে হাজির হল। রতীশ ততক্ষণে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে একটা পাজামা পড়ে নিয়েছে। রতীশের হাতে শরবতের গ্লাস দিয়ে রচনা বিছানার কোনায় বসে বলল, “বাড়ি থেকে মামনি ফোন করেছিলেন। বললেন সকলে ভালই আছে। চন্দুটাও আগের চেয়ে নাকি অনেক শান্ত হয়ে গেছে। মন দিয়ে লেখাপড়া করছে। ছোটমা নাকি ওকে বলেছেন ওকে ওর বৌমণির মত রেজাল্ট করতে হবে। চন্দুও নাকি খুব পড়াশোনা করছে”।

রতীশ হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করল, “তুমি কিন্তু চাইলে এবার গ্রাজুয়েশনটা করে নিতে পার রচু। কলকাতায় তো কত ভাল ভাল কলেজ আছে। বাড়ির কাছাকাছি কোনও একটা কলেজে কিন্তু তোমাকে ভর্তি করে দিতে পারি। তোমার কিছুটা সময় কলেজ আর পড়াশোনায় কেটে যাবে”।

রচনা মুখ বেঁকিয়ে বলল, “ধুর? কতদিন হল পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর ছাত্রী সেজে কলেজে যেতে ভাল লাগবে না। ও আচ্ছা শোন না, মামনি বলেছেন আর দু’মাস বাদেই তো পূজো। আমাদের পূজোর দু’দিন আগে যেতে বলেছেন। আর লক্ষ্মীপূজো পার করে ফিরতে বলেছেন। দুর্গাষষ্ঠী নাকি এবার অক্টোবরের কুড়ি তারিখ। আর লক্ষীপূজো পড়েছে ঊনত্রিশ তারিখে। মামনি চাইছেন দেরী হলেও আমরা যেন আঠারো তারিখে গিয়ে পৌঁছই। আর একত্রিশ তারিখের আগে নাকি আমাদের ফিরতে দেবেন না। তুমি কি এতদিন ছুটি নিতে পারবে”?

রতীশ শরবতের গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে বলল, “আঠার তারিখে পৌঁছতে হলে এখান থেকে রওনা হতে হবে সতের তারিখ। অবশ্য আঠার তারিখ সকালের কোন ট্রেনে রওনা হলেও সন্ধ্যের আগে পৌঁছে যাব। কিন্তু ফিরে আসতে আসতে তো তাহলে নভেম্বরের এক তারিখ হয়ে যাবে। দু’ তারিখের আগে আর কাজে জয়েন করা যাবে না। তাহলে তো প্রায় পনেরো ষোল দিনের ছুটি নিতে হবে। সেটা কি সম্ভব হবে? মাত্র দু’ আড়াই মাস কাজ করেই পনের দিনের ছুটি চাইলে বৌদি কী ভাববেন বল তো? অফিসের নিয়ম হিসেবে চার দিনের বেশী ছুটি কেউ একসঙ্গে নিতে পারে না। আর আমি তো সবে জয়েন করলাম। অত লম্বা ছুটি কি দেবেন আমাকে”?

রচনাও মুখ কালো করে বলল, “হ্যাঁগো, কথাটা তো তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু লক্ষ্মীপূজো পার না করে যে মামনি কিছুতেই ছাড়তে চাইবেন না আমাদের। আমাদেরও কি ভাল লাগবে? কতদিন বাদে আমরা বাড়ির সবাইকে কাছে পাব। পূজোর চারদিন তো হৈ হুল্লোরেই কেটে যাবে। ভাল করে মা-দের সাথে ভাইবোনদের সাথে একটু জমিয়ে গল্পও করা যাবে না”।

রতীশ রচনার কাঁধে হাত রেখে বলল, “দেখা যাক। ছুটি না পেলে তো আর কিছু করার থাকবে না। তবে বৌদিকে আমি শুরুতেই বলে দিয়েছিলাম যে পূজোর সময় আমার চারদিনের সাথেও যেতে আসতেও দুটো দিন আমার লাগবেই। তাই কম করেও আমাকে ছ’টা দিনের ছুটি দিতে হবে। বৌদি মনে হয় আমার সে আবদারটুকু রাখবেন। এর বেশী ছুটির কথা বলতে তো আমারই সঙ্কোচ হবে। মাত্র দু’আড়াই মাস চাকরি করে প্রাইভেট চাকরিতে এত বড় ছুটি চাওয়াটাই বেমানান। দেখা যাক কী হয়। আচ্ছা সে কথা থাক। খামটা খুলে দেখ তো। ওতে কত টাকা আছে”?

রচনা বিছানার নিচ থেকে খামটা বের করে সেটা খুলে ভেতরের নোটগুলো বের করল। রতীশ প্রথমটায় অতটা খেয়াল না করলেও রচনা যখন বলল “পাঁচশ টাকার বাহান্নটা নোট মানে ছাব্বিশ হাজার”, সে’কথা শুনেই রতীশ চমকে উঠে বলল, “কী বলছ তুমি রচু। আমি তো কালচিনি থেকে ফেরার পর আঠারো তারিখ কাজে জয়েন করেছি। তাই আমি চৌদ্দ দিনের মাইনেই শুধু পাব এ মাসে। বৌদি কি তাহলে ভুল করে পুরো এক মাসের মাইনে দিয়ে ফেলেছেন নাকি? তুমি ঠিক গুনেছ তো? ভুল করনি তো”?

রচনাও অবাক হয়ে বলল, “নাগো ভুল হয়নি। এখানে তো পাঁচশ টাকার বাহান্নটা নোটই আছে। তাহলে তো ছাব্বিশ হাজারই হল”।
 

রতীশ চরম অবাক হয়ে রচনার হাত থেকে টাকা গুলো নিয়ে গুণে দেখল, সত্যিই ছাব্বিশ হাজার আছে! সে কিছুক্ষণ হতভম্বের মত রচনার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে থেকে নিজের মোবাইলটা হাতে নিয়ে মহিমাকে ফোন করল। চার পাঁচবার রিং হবার পর মহিমার সাড়া পাওয়া গেল, “হ্যাঁ ভাই, বাড়ি গিয়ে পৌঁছেছ তো”?

রতীশ জবাব দিল, “বৌদি বাড়ি তো পৌঁছে গিয়েছি। কিন্তু ঘরে এসে খামটা খুলেই তো অবাক হয়ে গিয়েছি। আপনি তো ভুল করে আমাকে একমাসের পুরো মাইনে দিয়ে দিয়েছেন। আমার তো এমাসে শুধু চৌদ্দ দিনের মাইনে পাবার কথা”!
 

মহিমা দু’সেকেণ্ড চুপ করে থাকবার পর বলল, “ওঃ তাই বুঝি? তাহলে বোধহয় ভুল করেই সেটা খামে ভরে দিয়েছি। আচ্ছা ঠিক আছে, শোন ভাই, তুমি ওটা নিয়ে এত ভেব না। সামনের মাসে না হয় আমি সেটা অ্যাডজাস্ট করে দেব। ঠিক আছে? আমি এখন বাড়ি ফেরার পথে। গাড়ি ড্রাইভ করছি। তাই এখন রাখছি ভাই। রচনাকে আমার আদর দিও” বলে ফোন কেটে দিল।

ফোন নামিয়ে রেখে রতীশ রচনাকে বলল, “বৌদি বোধহয় ভুল করেই পুরো মাসের বেতন দিয়েছেন। কাল আমার অফ ডে। তাই ভাবছিলাম পরশু গিয়ে বৌদিকে বাড়তি টাকাটা ফিরিয়ে দেব। কিন্তু বৌদি বললেন, সামনের মাসে নাকি অ্যাডজাস্ট করে দেবেন”।

রচনা টাকাগুলো আবার খামের ভেতর ভরতে ভরতে বলল, “ঠিক আছে। বৌদিকে তো জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উনি যখন বলছেন পরের মাসের মাইনে থেকে অ্যাডজাস্ট করে দেবেন, তাহলে আর সমস্যার কিছু রইল না। আচ্ছা সোনা, এবার তুমি চানটা করে নাও। আমি তোমার খাবার রেডি করছি”।

***************

দুপুরের খাবার খেয়ে রতীশ আর রচনা বিছানায় শুয়ে শুয়ে গল্প করতে করতে রতীশ হঠাৎ রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “চল না সোনা, আজ বিকেলে একটা টিভি কিনে নিয়ে আসি। বৌদি যখন ভুল করে পুরো মাসের মাইনেটাই দিয়ে দিয়েছেন, তাহলে একটা টিভি কিনে আনাই যায়”।

রচনাও রতীশের একটা হাত জড়িয়ে ধরে বলল, “এখনই এত তাড়াহুড়ো করবার কি হল সোনা? আর একটা মাস যেতে দাও না। একটা টিভি আর সাথে ডিশ কিনতে গেলে তো পুরো টাকাটাই বেরিয়ে যাবে। আর সামনের মাসেও তো তুমি পুরো বেতন পাচ্ছ না। বৌদি তো এবারের বাড়তি টাকাটা কেটেই তোমাকে মাইনে দেবেন, আর একটা মাস পরে কিনলে কী এমন ক্ষতি হবে? অবশ্য বৌদির দেওয়া শগুণের টাকা গুলোও আছে। কিন্তু পূজোর সময় বাড়ি গেলে তখন টাকা পয়সার প্রয়োজন পড়বে না? সকলকেই কিছু দিতে পারি আর না পারি, ভাইবোনদের হাতে কিছু পূজোর উপহার তো তুলে দিতেই হবে। আর কিছুদিন পরেই না হয় টিভি কিনব”।

রচনার কথার জবাবে রতীশ কিছু একটা বলতে যেতেই তার ফোনটা বেজে উঠল। রচনা ফোনটা নিয়ে স্ক্রীনের দিকে দেখে বলল, “দিদিভাইয়ের ফোন। নাও কথা বল”।

রতীশ ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে স্পীকার অন করে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ মন্তি বল, লাঞ্চ করেছিস”?

রচনা রতীশের বুকে মাথা রেখে সীমন্তিনীর জবাব শুনল, “হ্যাঁরে দাদাভাই। লাঞ্চ হয়ে গেছে। হাতে কাজ একটু কম আছে বলেই তোকে ফোন করলাম। তা তোদের খাওয়া দাওয়া হয়েছে তো”?

রতীশ জবাব দিল, “হ্যাঁরে আমাদেরও খাওয়া হয়ে গেছে। এখন বিছানায় শুয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছি। তারপর বল কী খবর। তুই ঠিক আছিস তো”?

সীমন্তিনী ও’পাশ থেকে বলল, “হ্যাঁরে দাদাভাই, আমি ঠিক আছি। তা রচু কোথায় রে”?

রতীশ রচনার মাথার ওপর হাত বুলিয়ে বলল, “ও তো এখানেই আছে। নে কথা বল ওর সাথে” বলতেই রচনা ফোনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, “হ্যাঁ দিদিভাই বল”।

সীমন্তিনী ‘মুয়াআআ’ করে একটা চুমু খেয়ে বলল, “কেমন আছিস রচুসোনা”?

রচনাও খুশী গলায় জবাব দিল, “ভাল আছি দিদিভাই। তুমি তো আজ লাঞ্চ টাইমে ফোন করলে না। আমি ভাবছিলুম তুমি বুঝি কাজে খুব ব্যস্ত আছ”।

সীমন্তিনী বলল, “নারে, আজ কাজ একটু হাল্কা বলেই ভাবছিলাম লাঞ্চের পর তোকে ফোন করব। আচ্ছা রচু, একটা কথা বল তো। তোরা তো এক বেডরুমের ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিস। তোদের ঘরে যদি হঠাৎ কেউ এসে পড়ে তাহলে থাকবার জায়গা দিতে পারবি”?
 

রচনা খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্নের উত্তর দিল, “সে একজন বা দু’জন এলে কোন সমস্যা হবে না। আমাদের সামনের ঘরে মানে লিভিং রুমে একটা সোফা কাম বেড আছে। সেটায় দু’জন আরামে ঘুমোতে পারবে। তবে বাথরুম তো একটাই। সবাই মিলে সেটাই ইউজ করতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে কে আর আসবে বল। আমাদের এ বাড়িতে একমাত্র মহিমা বৌদি ছাড়া আর কেউই কখনো আসেনি। অবশ্য যেদিন আমরা ঘরে এসে ঢুকেছিলাম সেদিন ঘরের মালিক আর তার সাথে আরেকটা ছেলে একবার এ ঘরে এসেছিল। আর রাতে থাকবার মত তো কেউই নেই, কিন্তু তুমি .....” বলতেই কি মনে হতেই সে রতীশের বুক থেকে লাফ দিয়ে উঠে ফোনটা হাতে নিয়ে বলল, “দিদিভাই! তুমি আসছ? সত্যি বলছ তুমি কলকাতায় আসছ? ইশ আমি যে খুশীতে পাগল হয়ে যাচ্ছি গো। বলোনা দিদিভাই কবে আসছ? আজই কি রওনা হচ্ছ ওখান থেকে? বলো না দিদিভাই। তুমি চুপ করে আছ কেন”?

সীমন্তিনী শান্তভাবে জবাব দিল, “আমাকে বলতে দিচ্ছিস কোথায় তুই? তুই নিজেই তো বকবক করে যাচ্ছিস। শোন রচু। আজ তো এক তারিখ। আগামী তেরো তারিখ সোমবার কোলকাতার হেড কোয়ার্টারে আমাকে একটা মিটিংএ অ্যাটেণ্ড থাকতে হচ্ছে। আমাদের অফিসিয়াল মিটিং। আমি ভাবছিলাম তখন দুটো দিন তোদের সাথে কাটিয়ে আসব। তোদের অসুবিধে হবে না তো”?

রচনা খুশীর সাথে অবাক হয়ে বলল, “আমাদের অসুবিধে হবে? তুমি আমাদের এখানে এলে আমাদের অসুবিধে হবে, এমন কথা তুমি ভাবতে পারলে দিদিভাই? তোমার দাদাভাই আর তোমার রচু কি অমন মানুষ? শোনো দিদিভাই দু’দিন কলকাতায় কাটিয়ে যাওয়া নয়, অন্ততঃ চারটে দিন তোমাকে আমাদের সঙ্গে কাটাতে হবে। আর সেটা ওই মিটিং-এর দিন বাদ দিয়ে। আমি কিন্তু কোন কথা শুনব না”।

সীমন্তিনী হেসে বলল, “শোন রচু। মিটিং ছাড়াও কলকাতায় আমার আরও কিছু কাজ আছে। আর সে’সব কাজ যখন করব তখন আমাকে তোদের ছেড়ে বেরোতেই হবে। তবে দু’এক জায়গায় তোকেও হয়ত সাথে নিয়ে যেতে পারি। সেটা প্রয়োজন সাপেক্ষে। তাই মিটিং ছাড়াও দুটো দিন হয়ত আমাকে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকতে হবে। তাই আমি ন’ তারিখ অফিস করে রাতের ট্রেনে চাপবো। শুক্র, শনি আর মঙ্গলবার এ তিনদিন ছুটি নেব। সোমবার আমার মিটিং। আমি শুক্রবার সকালে কোলকাতা পৌঁছবো। শুক্র, শনি, রবি আর মঙ্গলবার এ চারটে দিন তোদের সাথে কাটাব। তবে এরই মধ্যে আমাকে একটু এদিক সেদিক যেতে হবে, সেটা নিয়ে কোন আপত্তি করিস না বোন আমার। বুধবার পনেরোই আগস্ট আমাকে কোলকাতার হেডকোয়ার্টারে হাজিরা দিতে হবে। আর সেদিন বিকেলের ট্রেনেই আমার ফেরার টিকিট কাটা হচ্ছে। এবার খুশী তো”?

রচনা খুশীতে আটখানা হয়ে বলল, “উঃ দিদিভাই কি বলছ তুমি? আমি তো আর ভাবতে পারছিনা গো। ইশ আজ সবে এক তারিখ। তোমাকে দেখতে পাব দশ তারিখে। এতগুলো দিন কি করে কাটাবো আমি বল তো? আচ্ছা দিদিভাই তুমি কি আর দুটো দিন আগে আসতে পারবে না? প্লীজ দিদিভাই”।

সীমন্তিনী বলল, “নারে সোনা। এর চেয়ে আর বেশী ছুটি নিতে পাচ্ছিনা এখন। তুই মন খারাপ করিসনে। কাল অফিসের মিটিং-এর খবরটা আসবার পর থেকেই আমি ছটফট করছিলাম তোকে খবরটা জানাতে। কিন্তু ক’দিনের ছুটি নিতে পারব এটা বুঝতে পারিনি বলেই তোকে আগে জানাইনি। আজ লাঞ্চের একটু আগে জলপাইগুড়ির অফিসের সাথে কথা বলে প্রোগ্রামটা ফাইনাল করেই তোকে জানাচ্ছি। শনিবার আর মঙ্গলবার এ দুদিন অফিসিয়ালি আমার জার্নি পেরিয়ড। এসপি অফিসের সাথে কথা বলে শুক্রবার আর বুধবারটাকে জার্নি পেরিয়ডে কনভার্ট করে শনিবার আর মঙ্গলবার দু’দিন ছুটি নিতে পারলাম। তাই তো বৃহস্পতিবার অফিস করে আমি রাতেই রওনা হচ্ছি। শুক্রবার সকালে পৌঁছে যাব। শুক্র, শনি, রবি আর মঙ্গলবার চারটে দিন ফ্রি থাকব। ওই চারিদনই আমি তোর সাথে সময় কাটাব। এর বেশী আর সম্ভব হচ্ছে নারে এবারে”।
 

রচনা বলল, “ঠিক আছে দিদিভাই, ছুটি না পেলে আর কি করা যাবে বল। কিন্তু শুক্রবারে কিন্তু আমাদের ঘরে বসে তোমাকে ব্রেকফাস্ট করতে হবে। ট্রেন থেকে নেমে তুমি সোজা বাড়ি চলে আসবে। অন্য কোথাও কিছু খাবে না কিন্তু”।

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আমাকে অত বোকা ভাবছিস তুই? তোর হাতের রান্না ছাড়া আমি কলকাতা গিয়ে আর কিছু খাব? আচ্ছা শোন রচু, দাদাভাইকে ফোনটা আরেকটু দে না”।

রচনা বলল “হ্যাঁ দিদিভাই, দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে আরেকটা কথা বল তো। পরশুদিন ভাই ফোন করেছিল। বলল তুমি নাকি আবার কালচিনি গিয়েছিলে। শুনে খুব ভাল লেগেছে আমার। কিন্তু দিদিভাই, দিদি কেমন আছে গো? ও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে তো? আমি যতবার ফোন করি তখন সবাই বলে দিদি ভাল আছে। কিন্তু দিদির গলার স্বর শুনেই আমার মনে হয় ও এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। তুমি আমায় সত্যি কথাটা বলনা দিদিভাই”।

সীমন্তিনী বলল, “রচু সোনা, অর্চুর ওপর এতগুলো বছর ধরে ওর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কি কম অত্যাচার করেছে? মেয়েটাকে তো প্রায় মেরেই ফেলেছিল তারা। ভগবানের আশীর্বাদেই তাকে আমরা ফিরে পেয়েছি। কিন্তু এতদিনের অত্যাচারের যন্ত্রণা এত তাড়াতাড়িই কি সারিয়ে ফেলা যায় রে? তবে সেদিন অর্চুকে দেখে আমার বেশ ভাল লেগেছে। ওপরে ওপরে তার শরীরের সৌন্দর্য অনেকটাই ফিরে এসেছে। খুব ভাল লেগেছে দেখতে। ভেতরের দুর্বলতাও নাকি অনেকটাই কমেছে। ওষুধপত্র ঠিকঠাক খাচ্ছে। সামনের দশ তারিখে ডক্টর সোম আবার তার চেকআপ করবেন। তুই একদম ভাবিস না। আমার মনে হয় আর অল্প ক’দিনের ভেতরেই তোর দিদি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে”।

রচনা সবটা শুনে একটু স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলল, “তুমি ছিলে বলেই বড় কোনও দুর্যোগ হল না। তোমার কথায় আমি অনেকটা আশ্বস্ত হলাম দিদিভাই। আচ্ছা এই নাও, তোমার দাদাভাইয়ের সাথে কথা বল” বলে রতীশের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে সে খুশীতে রতীশকে জড়িয়ে ধরল। রতীশ ফোন নিয়েই বলল, “ইস তুই যদি আর একটা দিন আগে আসতে পারতিস তাহলে তোকে রিসিভ করতে আমি ষ্টেশনে যেতে পারতামরে মন্তি। তুই শুক্রবার সকালে এখানে এসে পৌঁছবি। আমি তো তখন ইনস্টিটিউটেই থাকব। তোকে রিসিভ করতে যাব কিভাবে”?

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই তুই একদম ভাবিস না। আমি একা যাচ্ছি না। আমার সাথে সিকিউরিটি থাকবে। আমি তোদের বাড়ি গিয়ে না পৌঁছনো অব্দি চার পাঁচ জন সিকিউরিটি আমার সাথে থাকবে। আর তোর বাড়ির ঠিকানা তো আমার জানাই আছে। আমার কোন অসুবিধে হবে না। কিন্তু দাদাভাই একটা কথা শোন। আমি যে একজন পুলিশ অফিসার এটা তোরা কাউকে জানাবি না। আমি প্লেন ড্রেসে তোদের বাড়ি যাব। কারুর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবার সময় তোরা কিন্তু একবারের জন্যও বলবি না যে তোর বোন একজন পুলিশ অফিসার। আমি সেখানে শুধু তোর বোনের পরিচয় নিয়েই সকলের সাথে পরিচিত হতে চাই। বুঝেছিস”?

রতীশ বলল, “ঠিক আছে রে মন্তি। তাই হবে। তুই কিছু ভাবিস না”।
 

সীমন্তিনী আবার বলল, “আর রচুকেও কথাটা বুঝিয়ে দিস দাদাভাই। আজ ছাড়ছি তাহলে” বলে ফোন কেটে দিল।

রচনা রতীশের বুকে মুখ চেপে ধরে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “ইশ আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে। দিদিভাই আসছেন”?

রতীশও রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার মাথার চুলে নিজের নাক ডুবিয়ে দিল। রচনা স্বামীর আদর খেতে খেতে মনে মনে সীমন্তিনীর কথা ভাবতে ভাবতে হঠাতই বলে উঠল, “সোনা একটা কথা রাখবে? চল না আজ একটু গড়িয়াহাট থেকে ঘুরে আসি”।

রতীশ একটু অবাক হয়ে বলল, “গরিয়াহাট? কেন”?

রচনা বলল, “আমাদের বিয়ের পর থেকে আমি দিদিভাইকে কিচ্ছুটি দেবার সুযোগ পাইনি। এবার দিদিভাই প্রথম বাড়ি আসছে। চল না তার জন্যে একটা ভাল শাড়ি কিনে আনি। টিভি না হয় আমরা পরে কিনব”।

রতীশ রচনাকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় চুমু খেয়ে আদর করে বলল, “বেশ, তুমি যখন চাইছ, তাহলে চল যাওয়া যাক। চারটে তো বাজতেই চলল। তুমি তাহলে তৈরী হয়ে নাও। পাঁচটার আগে আগেই বেরিয়ে যাই তাহলে”।

***************
 
(To be cont'd ......)
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 09-03-2020, 10:54 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)