Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 121)

রতীশ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই মহিমা নিজের চেয়ারের দিকে যেতে যেতে বলল, “এক মিনিট দাঁড়াও ভাই” বলে নিজের টেবিলের ড্রয়ার খুলে তার ভেতর থেকে একটা টিফিন কৌটো আর একটা কাগজের প্যাকেট বের করে রতীশের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “এ দুটো নিয়ে যাও। রচনাকে দিও। ওকে বোলো টিফিন কেরিয়ারের ভেতর যেটা আছে সেটা আমি কাল রাতে নিজে হাতে বানিয়েছি। একটা পাঞ্জাবী খাবার। আমরা এটাকে রাজমা চাওল বলি। অনেকদিন বাদে আমি কিচেনে কিছু রান্না করেছি। শুধু রচনার জন্য। আর এই প্যাকেটে দোকান থেকে অল্প কিছু মিষ্টি কিনে এনেছি। রচনাকে বোলো রাজমা চাওলটা যেন একটু গরম করে নেয়। তোমরা দু’জনে মিলে খেলে আমার ভাল লাগবে”।

রতীশ কিছু একটা বলতে যেতেই মহিমা তাকে বাঁধা দিয়ে বলে উঠল, “উহু, কোন কথা নয়। চুপচাপ নিয়ে যাও। আর নিয়ে সোজা রচনার হাতে জিনিসগুলো দেবে বুঝেছ”?

রতীশ আর কথা না বলে মহিমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেল।
 

*******************

মহিমা বাড়ি থেকে ইনস্টিটিউটে রওনা হবার আগে নিজের ঘরের তার ব্যক্তিগত লকার থেকে আশি হাজার টাকা নিজের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল। আজ নতুন মাসের শুরু। ইনস্টিটিউটের সবাইকে তাদের বেতন দিতে হবে। ইনস্টিটিউটে যাবার পথে গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে মহিমা ভাবল রতীশ তার ওখানে কাজে যোগ দিয়েছে গত মাসের মাঝামাঝি। খুব সম্ভবতঃ আঠারো তারিখে। সে হিসেবে ওকে এবার চৌদ্দ দিনের বেতন দেওয়া উচিৎ। কিন্তু মহিমা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল রতীশকে সে পুরো একমাসের বেতনই দিয়ে দেবে। পয়সার অভাব একসময় থাকলেও এখন তার হাতে প্রচুর পয়সা আসছে। তার বাইরের ব্যবসাই তাকে প্রচুর পয়সা এনে দিচ্ছে। তাই রতীশকে তার প্রাপ্যের চেয়ে কিছু বেশী দিতেও তার অসুবিধে হবে না। তাছাড়া রতীশ কাজে যোগ দেবার পর তার ইনস্টিটিউটের ট্রেনী সংখ্যাও লক্ষণীয় ভাবে বেড়েছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে ইনস্টিটিউটে নতুন কোন ট্রেনী ভর্তিই হত না। কিন্তু রতীশ কাজে যোগ দেবার সপ্তাহ খানেক পর থেকেই রোজ পাঁচ ছ’জন নতুন ট্রেনী অ্যাডমিশন নিচ্ছে। এমন ট্রেণ্ড চলতে থাকলে খুব অল্পদিনের ভেতরেই নতুন অ্যাডমিশন বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। কারন তার তিনটে সেকসনে দেড়শ’র বেশী ট্রেনীর স্থান সংকুলান হবে না। গত দশ দিনে মোট আটচল্লিশ জন নতুন ট্রেনী অ্যাডমিশন নিয়েছে। বছরের এমন ডাল সীজনেও যে রোজ নতুন ট্রেনী ভর্তি নিচ্ছে, এটা যে শুধু রতীশের জন্যেই হচ্ছে সে ব্যাপারে তার সাথে বীথিও একমত। ট্রেণীদের সাথে মহিমার সরাসরি বার্তালাপ খুব কমই হয়। তবে বীথিকাই তাকে বলেছে যে সব ট্রেনীই তাদের রতীশ স্যারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। আর লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে ইনস্টিটিউটের পুরনো ট্রেনারদের মধ্যেও। বরুন সুজয় এরা তার বাইরের কাজে যতটা এন্থুসিয়েস্টিক যোগা ট্রেনিংএর ব্যাপারে ততটা চনমনে ছিল না কখনও। ইনস্টিটিউটের কাজে তাদের কেমন যেন একটা গা-ছাড়া গা-ছাড়া ভাব চোখে পড়ত। কিন্তু রতীশ আসবার পর তাদের হাবভাবেও লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে। এখন বরুন সুজয় ওরা অনেক বেশী স্বতঃস্ফুর্ত হয়ে উঠেছে। রতীশ কাজে যোগ দেবার সময় ইনস্টিটিউটের ট্রেনী সংখ্যা ছিল একানব্বই। গতকাল অব্দি ট্রেনী সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে একশ’ ঊণচল্লিশ। আর স্টুডেন্টরাও আগের চেয়ে অনেক বেশী চনমনে আর মনযোগী হয়ে উঠেছে। আগে সবগুলো সেকশনেই শোরগোলটাই যেন বেশী হত। কিন্তু এখন সবক’টা সেকশনই খুব শান্ত থাকে। আর সব সেকসনের ট্রেনীরাই শুধু রতীশ স্যারের ক্লাস চায়। কিন্তু মহিমার নির্দেশেই রতীশ আর বরুন সুজয়রা রোজ আলাদা আলাদা সেকসনে ক্লাস নেয়। কেবিন সেশনের ক্ষেত্রেও মহিমা এমন নিয়মই চালু করেছে। যাতে সব কেবিন ক্লায়েণ্ট এবং সব সেকসনের ট্রেনীরা সমানভাবে রতীশের কাছে শিক্ষা নিতে পারে।

নিজের কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে মহিমা অজয়কে বলল, “বীথি এসেছে অজয়? ও এসে থাকলে আমার এখানে আসতে বল তো ওকে”।

নিজের চেয়ারে বসবার আগে আলমারি থেকে ল্যাপটপ আর ড্রয়ারের চাবিগুলো বের করে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসল। টেবিলের দু’পাশের ড্রয়ারগুলো চাবি দিয়ে খুলে নিজের ব্যাগে ভরে আনা টাকাগুলো টেবিলের ড্রয়ারে রেখে ব্যাগের ভেতর থেকে এক্সটারনাল হার্ড ডিস্কটা ল্যাপটপে কানেক্ট করে ল্যাপটপ চালাতেই বীথিকা বাইরে থেকে নক করে ভেতরে ঢোকবার অনুমতি চাইতেই বলল, “হ্যাঁ বীথি এসো”।

বীথিকা ভেতরে ঢুকে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “গুড মর্নিং ম্যাম”।

মহিমা জবাবে বলল, “হ্যাঁ বীথি, গুড মর্নিং। জেনারেল সেশন চলছে”?

বীথিকা বলল, “হ্যাঁ ম্যাম। তিন সেকশনই পুরোদমে চলছে। কিন্তু ম্যাম, একটা জিনিস লক্ষ্য করেছেন। আগে সবগুলো সেকসনে তুমুল হৈ হট্টগোল হত। কিন্তু ইদানীং সব কতোটা শান্ত লাগে”?

মহিমা একটু হেসে বলল, “হ্যাঁ বীথি সেটা আমিও লক্ষ্য করেছি। আসলে ভালো টিচারের ক্লাসে হৈ হট্টগোল কমই হয়। রতীশ আসবার পর ট্রেনীরাও বুঝে গেছে আসল যোগা টিচার কাকে বলে”।

বীথিকা আবার বলল, “কিন্তু ম্যাম শুধু রতীশদার সেকসনই নয়। বরুন সুজয় ওদের সেকসনেও এখন আগের মত অত শোরগোল হয় না”।

মহিমা আবার মিষ্টি করে হেসে বলল, “সেটাও রতীশের জন্যই হয়েছে। তুমি খেয়াল করেছ? যেদিন থেকে রতীশ বরুন আর সুজয়কে গাইড করতে শুরু করেছে সেদিন থেকে ওদের ভেতরেও একটা অন্যরকম ভাব দেখা যাচ্ছে। আগের মত সেই উড়ু উড়ু ভাবটা নেই। ওরা দু’জনেও অনেক বেশী সিরিয়াস হয়ে উঠেছে। আর এটা হয়েছে একমাত্র রতীশের কাজ আর মিষ্টি ব্যবহারে। সত্যি ছেলেটাকে আমি যত দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। আর তুমি তো ওর বৌকেও দেখেছ। যেমন দেবা তেমন দেবী, তাই না? ও যে কত ভাল একটা মেয়ে সেটা আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারব না। আমি একদিন হঠাৎ ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম। গিয়েছিলাম রতীশকেই কিছু বলব বলে। কিন্তু ওর বৌ রচনাকে দেখে আমি যেন কেমন হয়ে গিয়েছিলাম। নিজের কথা কিছু না বলেই পেট পুরে ওদের সাথে খেয়ে চলে এসেছিলাম। কী সুন্দর রান্না ওর হাতের বীথি। ওঃ কি একটা ডাল বানিয়েছিল যেন। ওঃ হ্যাঁ মনে পড়েছে, চালতা দিয়ে মটরের ডাল। আঃ কী অপূর্ব তার স্বাদ। সে তুমি না খেলে বুঝবে না। রচনাকে দেখার পর থেকেই আমিও যেন কেমন হয়ে গিয়েছিলাম। জীবনে প্রথম আমি গলায় কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণকে প্রণাম করেছি। উঃ, আমি ভাবতেই পাচ্ছি না। সে’কথাগুলো মনে পড়লে এখনও আমার গা শিড়িশিড় করে ওঠে”।

বীথিকা অবাক হয়ে মহিমাকে দেখে যাচ্ছিল। তার ম্যামের মুখে চোখে এ মূহুর্তে যেমন ভাবের প্রকাশ সে দেখতে পাচ্ছে এমনটা আগে কখনও দেখেনি। প্রায় ছ’বছর ধরে বীথিকা মহিমার সাথে এখানে কাজ করছে। ম্যামের ইনস্টিটিউট আর বাইরের এসকর্ট সার্ভিসের ব্যবসার সে অনেক কিছুই জানে। সে নিজেও ম্যামের এসকর্ট ব্যবসার একজন ফিমেল এসকর্ট। বরুন সুজয় ওরাও ম্যামের সে কাজের সাথে যুক্ত আছে। কিন্তু ম্যামের ব্যবসার ভেতরের কথা বীথিকা যতখানি জানে, ততখানি আর কেউ জানে না। তবে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকলেও মহিমা যে কারো ওপর কোন জুলুম করে না এটা বীথিকা খুব ভাল ভাবেই জানে। কিন্তু রতীশ এ ইনস্টিটিউটে জয়েন করবার পর ট্রেনীদের আচার আচরণে, বরুন সুজয়দের ভাবসাবে যে পরিবর্তন হয়েছে, বীথিকার মনে হচ্ছে সে পরিবর্তনের কিছুটা ছোঁয়া যেন তার ম্যামের ওপরেও পড়েছে। তার ম্যামও যেন এক মাস আগের ম্যাম নেই। যদিও ম্যাম বলেছে যে রতীশ তার দেবর। কিন্তু বীথিকা জানে ম্যামের স্বামী অরিন্দম সেনের কোন ভাই নেই। তাই এ সম্পর্কটা যে শুধুই একটা পাতানো সম্পর্ক, সেটা বুঝতে তার দেরী হয়নি। তার ম্যামও যে নিজেও নামী দামী ক্লায়েন্টদের মাঝে মাঝে এসকর্ট সার্ভিস দিয়ে থাকে সে’কথাও বীথিকার অজানা নয়। যে কোন পুরুষকে পরিপূর্ণ যৌনসুখ দিতে তার ম্যাম সক্ষম। রতীশের মত এমন হ্যাণ্ডসাম একটা ছেলেকে ম্যাম নিজের এসকর্ট ব্যবসায় তো নামাচ্ছেনই না। এমনকি সে নিজেও যে রতীশকে ভোগ করেছেন বা তেমন কোনও অভিসন্ধিও যে নিজের মনে পুষে রেখেছেন, সেটাও মনে হয় না বীথিকার। কিন্তু সুন্দর হ্যাণ্ডসাম সুপুরুষদের ওপর তার ম্যামেরও যে লোভ আছে, তার ম্যামও যে পছন্দসই অনেক পরপুরুষের সাথেই সেক্স করে থাকেন, এসব কথাও বীথিকার অজানা নয়। কিন্তু রতীশের প্রতি তার মনোভাব যেন একেবারেই আলাদা। রতীশকে সে দেবর বলে ভাবে। ভাই বলে ডাকে সব সময়। এ’সবের পেছনে ম্যামের কি অন্য কোনও উদ্দেশ্য আছে? সহজ সরল রতীশকে সহজেই যৌনতার দিকে আনা যাবেনা ভেবেই কি মহিমা অন্য কোনও প্ল্যান করছেন?

এসব ভাবতে ভাবতে বীথিকা বলল, “ম্যাম, রতীশদার স্ত্রীকে তো আমি দেখেছি। সত্যি খুব সুন্দরী। কিন্তু রতীশদা লোকটা সত্যিই বড় অদ্ভুত। এমন সহজ সরল ছেলেও যে আজকের যুগে আছে, এটা তাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। এ’ কটাদিনে আমি অন্ততঃ এটুকু বুঝেছি যে মেয়ে মহিলার ওপর রতীশদার একেবারেই লোভ নেই। আমার কেবিনে সে তো মাঝে মধ্যেই যায়। আমার আগ্রহেই সে আমাকে তুমি তুমি বলে ডাকে। কিন্তু সে আমার মুখ বাদে শরীরের অন্য কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের দিকে একেবারেই তাকায় না। কিন্তু বরুন সুজয় ওরা একটু সুযোগ পেলেই আমার গায়ে হাত দেয়। কিন্তু ম্যাম, আজ তো মাসের এক তারিখ। সবাইকে তো বেতন দিতে হবে। আমি তো সে জন্যেই আজ তাড়াতাড়ি এসেছি। কিন্তু রতীশদাকে নিয়ে আমরা যেমন গল্পে মেতে উঠলাম তাতে তো বেতন দেবার কাজে দেরী হয়ে যাবে। তাই আমার মনে হয়..”

বীথিকাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়েই মহিমা বলে উঠল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ইশ দেখেছ। এই ছেলেটা আমাকেও পাগল করে তুলেছে যেন। যাও যাও তুমি বরং ওদের বেতন দেবার ব্যাপারটাই দেখ এখন। আর এ জন্যেই আমি তোমাকে ডেকেছিলাম। কিন্তু কথায় কথায় আসল কথাটা ভুলেই গিয়েছি। শোনো বীথি, রতীশ তো আঠারো তারিখে জয়েন করেছে, তাই নিয়ম হিসেবে ওর চৌদ্দ দিনের বেতন পাবার কথা। কিন্তু তুমি ওর বেতনটা প্রোরাটা হিসেব কোরো না। ওকে আমি এ মাসে পুরো ছাব্বিশ হাজার টাকাই দেব, তুমি সেভাবেই সব কিছু বানিও। আর সকলের সেলারী বানানো হয়ে গেলে ফাইলটা নিয়ে আমার এখানে এসো”।

বীথিকা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “রতীশদাকে পুরো মাসের বেতন দেবেন? প্রোরাটা হিসেবে বানাতে বারণ করছেন? ঠিক আছে ম্যাম। আপনি যা বলছেন, তাই না হয় করব। কিন্তু ম্যাম, কিছু যদি মনে করেন তাহলে একটা কথা বলব”?
 

মহিমা বলল, “হ্যাঁ, বলো না কি বলবে? তুমি তো আমার ডান হাত। তোমার এমন অনেক কিছু বলার বা জানার অধিকার আছে, যা আর কারো নেই”।

বীথিকা একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “ম্যাম, বলছিলাম কি, রতীশদাকে তো এমনিতেই বরুন বা সুজয়ের থেকে বেশী সেলারী দেওয়া হচ্ছে। এটা কি ঠিক হচ্ছে? অন্যেরা জানলে তো তাদের মনেও প্রশ্ন উঠতে পারে”।

মহিমা হেসে বলল, “এটা তো সরকারি কোন অফিস নয় বীথি। কাকে কত বেতন দেব সেটা আমার নিজের ওপর নির্ভর করে। তবে কারো মনে প্রশ্ন এলে তারা সে প্রশ্ন আমাকে করতেই পারে। তাদের প্রশ্নের জবাব আমি দেব। কিন্তু তুমি তো নিজেই দেখেছ। এ অফ সীজনেও গত দশ দিনে আটচল্লিশ জন নতুন ট্রেণী আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছে। তাতে আমাদের মাসিক আয় বাড়ছে বাহাত্তর হাজার। আর এটা হয়েছে কেবল মাত্র রতীশের জন্য। বরুন সুজয় এরা আমার পুরনো স্টাফ হলেও এমনটা তো তারা কেউ করতে পারেনি কোনদিন। আর যার জন্যে আমি মাসে মাসে এ বাড়তি ইনকাম পাচ্ছি তাকে একটু বাড়তি সুবিধে আমি কেন দেব না। তুমি তো জানই বীথি, তোমরা সকলেই আমার ভেতরের বাইরের সব কাজে নানাভাবে সাহায্য করে থাক। আমিও তোমাদের সুবিধে অসুবিধের ওপর সব সময় নজর রাখি। আমার মনে হয় না আমি কখনও কাউকে কোনভাবে এক্সপ্লয়েট করেছি। আর সেটা করতেও আমি ঘৃণা করি। তোমাকেও যেমন সেলারী আর এসকর্ট ফি ছাড়াও নানাভাবে আমি আর্থিক সাহায্য করে থাকি, তেমনি ভাবে বরুন সুজয় অজয় ওদের সবাইকেও আমি প্রয়োজন মত সাহায্য করি। এটা তো তোমরা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তাই রতীশকেই বা ঠকাব কেন। একজন ক্লায়েন্টের কাছে তোমাকে পাঠিয়ে আমার এক্সট্রা ইনকাম হয় বলেই তোমাকে দশ হাজার করে দিই। বরুন সুজয়কে ফিমেল ক্লায়েন্টদের কাছে পাঠিয়ে আমার অতিরিক্ত কিছু আয় হয় বলেই আমি ওদেরকেও পাঁচ হাজার করে দিই। সেখানে রতীশের জন্য যখন আমার আয় প্রতি মাসে বাহাত্তর হাজার বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে ওকে একটু বেশী না দিলে ওর প্রতি অবিচার করা হবে না”?

বীথিকা মহিমার কথায় লজ্জা পেয়ে বলল, “সরি ম্যাম, ব্যাপারটা আমি সেভাবে ভেবে দেখিনি। আমার মনে হয়েছিল যে এমনিতেই রতীশদাকে বরুন আর সুজয়ের দেড়গুণ বেতন দেওয়া হচ্ছে। তার ওপর তার কনভেয়ান্স বাবদও চার হাজার দেওয়া হচ্ছে, তাই আমার মনে হচ্ছিল যে রতীশদাকে একটু বেশী দেওয়া হয়ে যাচ্ছে”।

মহিমা হেসে বলল, “তোমার এ’কথার জন্য অন্য যে কেউ তোমার ওপর চটে যেত বীথি। কিন্তু তুমি তো জানই আমি মানুষটা একটু অন্যরকম। তাই তোমার ওপর রাগ না করে আমি তোমাকে একটু বোঝাতে চাইছি। দেখ বীথি এই পৃথিবীতে আত্মীয় পরিজন আপন পর চেনা অচেনা ভাই বন্ধু- সব ধরণের সম্পর্কের ভেতরেই স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। সে স্বার্থ ইকনমিক্সের ভাষায় ক্যাশও হতে পারে, আবার ইন কাইন্ডও হতে পারে। অন্যান্য সম্পর্ক গুলোর কথা নাহয় ছেড়েই দিচ্ছি, আমরা যে সম্পর্কটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মহান আর পবিত্র বলে ভাবি, সেই মা-সন্তানের সম্পর্কের মধ্যেও স্বার্থ থাকে। সন্তান তার জন্মদাত্রীকে মা বলে ডাকবে, বুড়ো বয়সে সে সন্তান তার ভরণ পোষণ সহ অন্য সবকিছুর দিকে নজর রাখবে, এটাই মায়ের স্বার্থ। আর সন্তান মার কাছ থেকে স্নেহ মমতা ভালবাসা পরিচর্যা ভরণ পোষন পাবে এটা তার সন্তানের স্বার্থ। আমি তোমাকে এসকর্ট হিসেবে পাঠিয়ে অর্থ উপার্জন করি সেটা আমার স্বার্থ। তুমি আমার কথায় এসকর্টের কাজ করে আমার কাছ থেকে পয়সা পাও, এটা তোমার স্বার্থ। শারীরিক সম্পর্কের কথা না তুললেও একজন স্ত্রী স্বামীর সংসার সামলায় এটা স্বামীর স্বার্থ। স্ত্রী সংসারের কাজ করার বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে ভরণ পোষন সুরক্ষা পায়, এটা স্ত্রীর স্বার্থ। পৃথিবীতে এমন কোন সম্পর্ক নেই যার পেছনে বিনিময় বলতে কিছু নেই, কোন না কোন ধরণের স্বার্থ লুকিয়ে নেই। তোমাদের সকলের সাথে আর রতীশ আর ওর স্ত্রীর সাথেও আমার যেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার সবটার পেছনেই আছে স্বার্থ। রতীশের মাধ্যমে আমার বাড়তি আয় হচ্ছে এটা যেমন আমার স্বার্থ, তেমনি তার বাড়তি কিছু পাওয়াটাও রতীশের স্বার্থ। তাই একদিক দিয়ে বিচার করলে দেখবে এ পৃথিবীর প্রত্যেকটা লোকই স্বার্থপর। যারা দু’ তরফ থেকে বিনিময়ের কথা না ভেবে, অন্যের স্বার্থের কথা না ভেবে, শুধু নিজের স্বার্থের কথা ভাবে তাদেরকেই আমরা বলি স্বার্থপর। আমি তেমন স্বার্থপর উপাধি নিতে চাই না। তাই রতীশকেও বাড়তি সুবিধা দিচ্ছি। বরুন সুজয় ওরা আমাদের ইনস্টিটিউটের আয়ে এমন কোন বৃদ্ধি করতে পারেনি বলেই তোমার মনে হচ্ছে আমি রতীশকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছি। কিন্তু কেন দিচ্ছি সেটা এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারলে। সবটাই দেয়া নেয়া। বিনিময়ের ব্যাপার। বিনিময় না হলেই স্বার্থপরতা চলে আসবে। আর তাছাড়া আর একটা ব্যাপারও আছে। আচ্ছা বীথি, ধর তুমি একটা মলের কোন একটা দোকানে গিয়ে একটা ভাল কোয়ালিটির দামী টয়লেট সাবান কিনতে চাইলে। সেটার দাম ধর একশ’ টাকা। সেখানে সস্তার সাবান থাকতেও তুমি কমদামী সাবান না নিয়ে একটা একশ’ টাকার সাবান কিনে নিলে। আর ঠিক তখনই দেখতে পেলে, আরেকজন গ্রাহক এসে কুড়ি টাকায় একটা টয়লেট সাবান কিনে নিয়ে গেল। তোমরা দুজনেই টয়লেট সাবানই কিনলে। কিন্তু সে নিল কুড়ি টাকার জিনিস, আর তুমি নিলে একশ’ টাকার জিনিস। এমনটা কেন হয় বলো তো”?
 

বীথিকা একটু নড়েচড়ে বসে বলল, “ম্যাম সেটা তো কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে। কুড়ি টাকার সাবানের যে কোয়ালিটি, একশ’ টাকার সাবানের কোয়ালিটি তার থেকে অনেক ভাল”।

মহিমা হেসে বলল, “একদম ঠিক বলেছ তুমি। কোয়ালিটি। বরুন সুজয়দের যা সার্ভিস কোয়ালিটি তাতে পনের হাজার দেওয়া যায়। কিন্তু রতীশের সার্ভিস কোয়ালিটি যে ওদের থেকে কত বেশী, সেটা তো তুমিও এতদিনে বুঝতে পারছ। তাই না? আচ্ছা এ’সব কথায় সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তুমি সকলের সেলারী বানিয়ে রেজিস্টার আর খামগুলো নিয়ে আমার কাছে এসো”।

বীথিকা “ঠিক আছে ম্যাম” বলে চলে গেল। মহিমা তার ল্যাপটপ কাছে টেনে নিয়ে কাজ করতে শুরু করল। প্রায় আধঘণ্টা বাদে বীথিকা সেলারী রেজিস্টার আর কতগুলো খালি এনভেলপ নিয়ে মহিমার ঘরে এল। মহিমা সেলারী রেজিস্টারের এন্ট্রিগুলো ভাল ভাবে দেখে সন্তুষ্ট হয়ে নিজের ড্রয়ার থেকে টাকা বের করে দিল। বীথিকা সকলের নামে আলাদা আলাদা খাম বানিয়ে প্রত্যেকের বেতনের পয়সা যার যার খামে ঢুকিয়ে দিয়ে মহিমার হাতে দিতেই হলঘরের দিকে একটি শোরগোল শোনা গেল। বীথিকা সাথে সাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল, “ম্যাম, মনে হয় জেনারেল সেশন শেষ হল। আমি কেবিনে যাচ্ছি। এ সময় ট্রেনীরা অনেকেই তাদের ফি জমা দিতে চায়” বলে চলে গেল।
 

বীথিকা নিজের কেবিনের সামনে বেশ ভিড় দেখতে পেল। বরুন সুজয় আর রতীশকে সে মহিমার চেম্বারে যাবার কথা বলে নিজের কেবিনে গিয়ে ঢুকল। জেনারেল সেশন শেষ হবার পরের সময়টুকু বীথিকাকে বেশ ব্যস্ত থাকতে হয়। ট্রেনীরা তাদের মাসিক ফি জমা দিতে আর অন্যান্য অনেক ব্যাপারে কথা বলতে আসে তার সাথে। একজনের সাথে আরও দু’তিনজন করে বীথিকার চেম্বারে ঢুকে পড়ে। তারা বীথিকার সুন্দর শরীরটাকে একটু চোখের দেখা দেখতে আসে। তাতেই যেন তারা ধন্য হয়ে যায়। বীথিকাও এ ব্যাপারে সচেতন। কিন্তু সে জানে ওই চোখের দেখা ছাড়া তারা আর কেউ কিছু করবার সাহস পাবে না। বীথিকাও প্রয়োজনীয় গাম্ভীর্যটুকু বজায় রেখেই সকলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
 

সাড়ে দশটার পর কেবিন সেশন শেষ হবার পর সকলেই আবার মহিমার চেম্বারে এল। ট্রেনাররা সকলে তার আগে নিজেদের পোশাক পড়ে নিয়েছে। অফিসের জমাদার ছেলেটাকে অন্য কোন দিন এ সময়ে ইনস্টিটিউটে দেখা যায় না। রতীশ তাকে আজ প্রথম দেখল। মহিমা সকলের হাতে তাদের নামলেখা খামগুলো দিতেই সকলে এক এক করে ধন্যবাদ জানিয়ে বাইরে চলে গেল। কেউ খাম খুলে দেখল না। রতীশও নিজের খামটা হাতে নিয়ে মহিমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চেম্বার থেকে বেরিয়ে বাড়ি অভিমূখে রওনা হল।
 

******************

সবাই চলে যাবার পর মহিমা তার চেম্বারের জিনিসপত্র গুছিয়ে তার ল্যাপটপ আর এক্সটারনাল হার্ড ডিস্ক ব্যাগে ঢুকিয়ে ড্রয়ার আর আলমারি লক করে অজয়কে ইনস্টিটিউট বন্ধ করবার নির্দেশ দিল। তারপর সুজয় আর বরুনকে নিয়ে বীথিকাকে আসতে বলে নিচের তলার তার রেস্টরুমে এসে ঢুকল। রতীশ কাজে যোগ দেবার পর থেকে সে আর ওপর তলার নিজের চেম্বারে বসে তার এসকর্ট ব্যবসা সংক্রান্ত কোনও ব্যাপারে কারো সাথেই কথা বলে না। এসকর্ট ব্যবসার সব কিছুই সে এখন তার এই রেস্টরুমে এসেই করে। আর রতীশের কাছেও সে তার এই রেস্টরুমের কথাটা গোপন রেখেছে নিরূপায় হয়েই।
 

রেস্ট রুমে এসে আবার তার ল্যাপটপ অন করে এক্সটারনাল হার্ড ডিস্কটা ল্যাপটপের সাথে জুড়ে দিয়ে গভীর মনযোগ সহকারে কাজে মন দিল। বীথিকা বরুন আর সুজয়কে সাথে নিয়ে রেস্ট রুমে এসে ঢুকতেই বরুন আর সুজয়কে আলাদা করে পাঁচ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মহিমা তাদের বুঝিয়ে দিল কোন কোন ক্লায়েন্টের কাছে তাদের যেতে হবে। বরুন আর সুজয় বিদায় নিতে মহিমা বীথিকাকে বলল, “বীথি তোমাকে আজ দুটো ক্লায়েন্ট এটেণ্ড করতে হবে। তুমি যে মিঃ সরকারকে কী যাদু করেছ, তা তুমিই জানো। সে আজ লাঞ্চ টাইমে তোমাকে চেয়েছে। তুমি ঠিক দুটোয় তার অফিসে পৌছে যাবে। আর একটা বুকিং আছে মিঃ হালদারের। হালদারকে তো তুমি আগেও এটেণ্ড করেছ, তাই না”?

বীথিকা জবাব দিল, “হ্যা ম্যাম। গত মাসেও একবার মিঃ হালদারকে সার্ভিস দিয়েছিলাম আমি। তা আগের বার তো সে আমাকে হোটেলে নিয়ে গিয়েছিল সারা রাতের জন্যে। আজও কি তাই”?

মহিমা বলল, “না আজ সে হোল নাইটের জন্য বুক করেনি। সন্ধ্যে ছ’টা থেকে দু’ঘণ্টার জন্যে তোমাকে তাকে সার্ভিস দিতে হবে। কোন সমস্যা নেই তো”?

বীথিকা বলল, “না ম্যাম কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তার সাথে কোথায় মিট করব আমি? তার অফিসেই”?

মহিমা বলল, “তুমি সন্ধ্যে ঠিক সাড়ে পাঁচটায় তার অফিসের পার্কিংএ তার জন্য অপেক্ষা করবে। সে তোমাকে সেখান থেকেই পিকআপ করবে। তারপর তোমাকে কোন একটা হোটেলে নিয়ে যাবে সে”।

বীথিকা চলে যাবার পর মহিমা সাত আটটা ফোন কল করে অনেককে ডেকে পাঠালো। তারা এক এক করে আসবার পর মহিমা সকলকেই টাকা দিয়ে তাদের গন্তব্য এবং স্থান কাল পাত্রের ব্যাপারে সব কিছু বলে বুঝিয়ে বিদায় করল। অনেকে এসে টাকা ভর্তি খাম মহিমার হাতে দিয়ে চলে গেল। সবশেষে এল নবনীতা। মহিমা নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল, “বল নবনীতা, এ কাজ কেমন লাগছে তোমার? কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো”?

নবনীতা একটু হেসে বলল, “না ম্যাম, আমার কোন অসুবিধে হচ্ছে না। তা আজ কোন বুকিং আছে আমার”?

মহিমা বলল, “তুমি যদি চাও, তাহলে আজ তোমাকে দুটো ক্লায়েন্টের কাছে পাঠাতে পারি। একজনকে এটেণ্ড করতে হবে দুপুর আড়াইটেয়। একঘণ্টার সেডিউল। আর অন্যজনকে সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টা থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত। পারবে”?

নবনীতা বলল, “পারব ম্যাম”।

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 09-03-2020, 10:52 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)