Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 120)

বীথিকা নিজের কাজ করতে করতে বার বার চোরা চোখে রতীশের দিকে দেখছিল। কিন্তু রতীশকে মগ্ন হয়ে ফাইলের লেখাগুলো পড়তে দেখে সে মনে মনে কিছুটা অবাকই হল। একবারও মুখ তুলে বীথিকার দিকে তাকাচ্ছেনা সে। বরুন সুজয় ওরা হলে এতক্ষণ কত খুনসুটিই না করত তার সাথে। রতীশের সুন্দর দেহসৌষ্ঠব দেখে বীথিকা মনে মনে ভাবছিল রতীশকে মহিমার ক্লায়েণ্টরা একবার দেখতে পেলেই তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে। আর একবার যদি রতীশ তাদের পূর্ণ তৃপ্তি দিতে পারে তাহলে ম্যামের সমস্ত ফিমেল ক্লায়েণ্ট একে কাছে পেতে চাইবে বারবার। ম্যাম যে একে দিয়ে প্রচুর পয়সা কামাতে পারবেন এতে কোন ভুল নেই। কিন্তু ম্যাম তো বললেন রতীশ তার দেবর। কেমন দেবর? রতীশ তো ',। মহিমা ম্যাম বা তার স্বামী তো ', নন। কতটা কাছের সম্পর্ক তাদের? ম্যাম কি সত্যিই তার দেবরকেও দেহব্যবসার কাজে নামাবেন? রতীশের স্ত্রী রচনাকেও কি ম্যাম তার ওই কাজে ব্যবহার করবেন? রচনাও তো দেখতে শুনতে যথেষ্ট সুন্দরী। ম্যামের আসল ব্যবসায় ফিমেল এসকর্ট হবার মত যোগ্যতাও তার যথেষ্টই আছে।
 

এমন সময়ে দু’জন বয়স্কা মহিলা বীথিকার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াতেই বীথিকা তাদের উদ্দেশ্যে বলল, “ওহ, আপনারা এসে গেছেন? ওয়েল, মিসেস দাস আপনি দু’নম্বর কেবিনে আর মিসেস দত্ত আপনি তিন নম্বর কেবিনে চলে যান প্লীজ”।
 

ভদ্রমহিলা দু’জন চলে যেতেই বীথিকা তার টেবিলের কলিং বেলে চাপ দিল। রতীশ মিসেস আগরওয়ালার ফাইলটা পড়ে এমন গভীরভাবে কিছু একটা ভেবে যাচ্ছিল যে কলিং বেলের শব্দে সে একেবারে চমকে উঠল। বীথিকার সাথে চোখাচোখি হতেই সে হেসে ফেলল। কয়েক সেকেণ্ড বাদে অজয় কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াতেই বীথিকা তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “অজয়দা, বরুন আর সুজয়কে দু’নম্বর আর তিন নম্বর কেবিনে যেতে বল, সেখানে ক্লায়েন্টরা এসে গেছে”।

অজয় চলে যেতেই রতীশ জিজ্ঞেস করল, “এখানে কেবিনে যারা যোগা ক্লাস করতে আসে তাদের বুঝি ক্লায়েণ্ট বলা হয়”?

বীথিকা একটু হেসে বলল, “ঠিক ধরেছ তুমি রতীশদা। ম্যামের নির্দেশেই এমন বলি আমরা। কেবিনে যারা ট্রিটমেন্ট নেন তারা ক্লায়েণ্ট আর জেনারেল সেশনে যারা ক্লাস এটেণ্ড করে তারা হচ্ছে এখানকার ট্রেইনী। আর কেবিনের সেশনটাকে ঠিক ক্লাস তো বলা যায় না। ক্লায়েণ্টরা কেউই যোগা শিখতে এখানে আসেন না। তারা সকলেই আসেন তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যা সারিয়ে তুলতে। তাই কেবিন ক্লাস না বলে আমরা কেবিন সেশনই বলি। ওহ, রতীশদা তোমার আজকের ক্লায়েন্টও এসে গেছেন” বলে দরজার দিকে তাকিয়ে বলল, “আসুন মিসেস আগরওয়ালা”।

রতীশও ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল একটু আগে সে যে ভদ্রমহিলার ফাইলটা পড়ছিল সেই সবিতা আগরওয়ালা। রতীশ ফাইলের ছবি দেখে ভদ্রমহিলাকে যতটা মোটা বলে ভেবেছিল ভদ্রমহিলাকে দেখে তেমন মোটা বলে মনে হচ্ছে না। অবশ্য ভদ্রমহিলার হাইট খুব ভাল বলেই বুঝি এমনটা মনে হচ্ছে। তিনি যদি আরেকটু খাটো হতেন তাহলে তাকে সত্যিই বেঢপ লাগত দেখতে। এখন তাকে দেখে মনে হল ভদ্রমহিলা সত্যিই বেশ সুন্দরী। দামী শাড়ি ব্লাউজ পড়ে এসেছেন। দেখেই বোঝা যায় যে বেশ পয়সাওয়ালা ঘরের রমণী। অবশ্য মহিলার স্বামী বিমল আগরওয়ালাকে রতীশ তো আগে থেকেই চেনে। পয়সা প্রতিপত্তির অভাব নেই তাদের।

মিসেস আগরওয়ালা বীথিকার কেবিনে ঢুকে রতীশের পাশের চেয়ারটায় বসতেই বীথিকা বলল, “মিসেস আগরওয়ালা আপনি বৃহস্পতি বার না এসে বুধবারে আসতে পারবেন”?

পাশের চেয়ারে ভদ্রমহিলা বসতেই সুন্দর পারফিউমের গন্ধে ঘরটা ভরে গেল। বীথিকার প্রশ্নের জবাবে ভদ্রমহিলা বললেন, “হ্যা তা হয়ত পারব। কিন্তু এর কারনটা জানতে পারি বীথি”?
 

বীথিকা বলল, “আসলে মিসেস আগরওয়ালা, আপনার কমপ্লেনটা নিয়েই ম্যামের সাথে আলোচনা করেছি। বৃহস্পতি বারে আমাদের এখানে শুধু দু’জন ট্রেনার থাকে। তাই আপনাকে একা ট্রিটমেন্ট দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। আপনি যদি বুধবার আসতে পারেন তাহলে আপনাকে আমরা হয়ত সে সুযোগটা দিতে পারব। বুধবার আমাদের তিনজন ট্রেনার ইনস্টিটিউটে থাকে। তাই বলছি আর কি”।

ভদ্রমহিলা তবু জিজ্ঞেস করল, “নতুন আর কোন ট্রেনার এসেছে না কি”?

বীথিকা এবার একটু হেসে রতীশের দিকে ইশারা করে বলল, “হ্যা মিসেস আগরওয়ালা। ইনি আমাদের একজন নতুন ট্রেনার। মিঃ রতীশ ভট্টাচার্যি। বর্তমানে কোলকাতায় এনার মত কোয়ালিফায়েড যোগা ট্রেনার আর কেউ নেই। আমাদের সৌভাগ্য, তিন চার দিন আগেই উনি আমাদের এখানে কাজে যোগ দিয়েছেন। আজ ইনিই আপনাকে কোচিং দেবেন”।

মিসেস আগরওয়ালা রতীশের মুখোমুখি হয়ে তার একটা ভারী মাংসল হাত রতীশের দিকে এগিয়ে দিল। রতীশ সৌজন্যতা বজায় রাখতেই তার হাত নিজের হাতে নিয়ে হ্যাণ্ডশেক করল। সবিতা আগরওয়ালা রতীশের চেহারা ভাল করে দেখতে দেখতে মৃদু হাসলেন। তারপর বীথিকাকে বললেন, “বাহ, এ তো দারুণ খবর একটা। ঠিক আছে বীথি, আমি তাহলে বৃহস্পতিবার না এসে সামনের সপ্তাহ থেকে বুধবারেই আসব”।

বীথিকাও মিষ্টি করে হেসে বলল, “বেশ মিসেস আগরওয়ালা। আমি আপনার সিডিউলটা এখনই চেঞ্জ করে দিচ্ছি। আপনি বুধবার আর রবিবার আসবেন এখন থেকে। আর আজ আপনি এক নম্বর কেবিনে চলে যান। আপনার ড্রেস চেঞ্জ করে নিন। ইনি একটু বাদেই আপনার কেবিনে যাচ্ছেন”।
 

ভদ্রমহিলা আর কথা না বলে “থ্যাঙ্ক ইউ বীথি” বলে রতীশের দিকে চেয়ে হাসিমুখে বলল, “আপনি পাঁচ মিনিট বাদেই কেবিনে আসুন” বলে বেরিয়ে গেল।
 

মিসেস আগরওয়ালা বেরিয়ে যেতেই রতীশ বীথিকাকে প্রশ্ন করল, “চেঞ্জ করে নেবেন মানে? উনি কি ট্রেনীদের ওই কস্টিউম পড়বেন না কি”?

বীথিকা হেসে বলল, “না রতীশদা ঠিক তা নয়। ট্রেনীদের কস্টিউম শুধু জেনারেল সেকশনের ট্রেনীদের জন্যই। তবে শাড়ি পড়া অবস্থায় তো কাউকে ঠিকমত যোগাসন করানো যায় না। তাই কেবিনে যারা আসেন তারা নিজেদের পছন্দমত সালোয়ার কামিজ বা চুড়িদার বা অন্য কোন ধরণের কোন পোশাক বা কস্টিউম সঙ্গে নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউটের কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তারা যে যেটাতে সাচ্ছন্দ বোধ করে তেমন পোশাকই পড়ে”।

রতীশ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ওকে বীথি। আমিও তাহলে যাচ্ছি”।

রতীশ পেছন ফিরতেই বীথিকা বলল, “বেস্ট অফ লাক রতীশদা”।

রতীশ বীথিকার কেবিন থেকে বেরোতে বেরোতেও একটু অবাক হয়ে একবার পেছন ফিরে বীথিকাকে দেখল। বীথিকার মুখে এক রহস্যময় হাসি দেখা গেল যেন। কেবিনে যাবার আগে রতীশ টয়লেটে গেল। তারপর এক নম্বর কেবিনে ঢুকেই সে চমকে উঠল। বিশাল বপুর অধিকারিনী মিসেস আগরওয়ালা একটা সুইমিং কস্টিউম পড়ে কেবিনের সরু বিছানায় বসে আছেন। উজ্জ্বল ফর্সা লম্বা আর যথেষ্ট স্বাস্থবতী সবিতা আগরওয়ালাকে সুইমিং কস্টিউমে একেবারে দুর্ধস্য লাগছিল। রতীশ তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে দরজার পর্দাটা নামিয়ে দিয়ে বলল, “মিসেস আগরওয়ালা, আমি এখানে নতুন। কিন্তু সঠিক ভাবে যোগা চিকিৎসা করতে আপনার বর্তমান শারীরিক সমস্যার কথা গুলো আমাকে জেনে নিতে হবে। আপনার ফাইলে আমি দেখেছি যে আপনি শরীরের ফ্যাটস আর ওজন কমাবার জন্যেই এ সেন্টারে এসেছেন। কিন্তু এখানে গত বছর দুয়েক যোগাচর্চা করে উন্নতি বা অবনতি কিছু হয়েছে কিনা সেটা আমার জানা দরকার। তাই এখন আপনার শরীরের কোথায় কী ধরণের সমস্যা আছে তা যদি আপনি আমাকে একটু বুঝিয়ে বলেন তাহলে আমি আপনার সঠিক যোগা চিকিৎসার ব্যাপারটা ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব”।

মিসেস আগরওয়ালা রতীশকে দেখেই বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল, “প্রায় দু’বছর ধরে এখানে আসছি। কিন্তু এখন অব্দি বিশেষ কোন পরিবর্তন আমি বুঝতে পারছিনা রতীশ। কিছুটা চেঞ্জ অবশ্যই হয়েছে। তবে যতখানি আশা করেছিলাম, ততখানি হয়নি। আমি যখন এখানে যোগা করতে শুরু করেছিলাম তখন আমার ওয়েট ছিল পঞ্চানব্বই কেজি। আজ দু’বছর বাদে আমার ওয়েট হয়েছে পচ্চাশি কেজি। আর গত ছ’ সাত মাসে মনে হচ্ছে কোন চেঞ্জই হয়নি আমার। এমনিতে আমার অন্য কোন বড় সমস্যা নেই। শুধু মোটা হয়ে গেছি বলেই ভাল লাগছে না। ডাক্তাররা বলেছে আমার শরীরে নাকি খুব ফ্যাটস জমে গেছে। তারাই আমাকে যোগাচর্চা করবার নির্দেশ দিয়েছিল। তাই এখানে জয়েন করেছি। বন্ধু বান্ধবেরা সকলেই বলে বেশী মোটা হয়ে গেছি বলেই নাকি আমাকে আর আগের মত সুন্দরী লাগছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আমারও তাই মনে হয়। বরুন সুজয় কবিতাদের নির্দেশ মত সব কিছু করেও তো দু’বছরে যতোখানি স্লিম হতে চেয়েছিলাম তার অনেকটাই হয়নি। তুমি প্লীজ আমাকে হেল্প কর রতীশ। তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে আজ আমি আসল লোক খুঁজে পেয়েছি। এবার আমার সমস্যার সমাধান হবেই”।

রতীশ কোণার চেয়ারে বসে বলল, “মিসেস আগরওয়ালা। আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দুর করতে। কিন্তু আসল কথা কি জানেন মিসেস আগরওয়ালা। শুধু যোগাচর্চা করলেই যে আপনার সমস্যা সেরে যাবে, সেটা ঠিক নয়। আপনার দৈনন্দিন জীবনের কিছু কিছু ব্যাপারও শরীরের চর্বি কম করার ব্যাপারে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আপনি যদি যোগাচর্চার সাথে সাথে আমার কয়েকটা নির্দেশ মেনে চলেন তাহলে আপনি নিশ্চিত ফল পাবেন। যোগাচর্চার দিকটা তো আমরাই দেখব। কিন্তু অন্য ব্যাপারগুলো কিন্তু আপনাকেই কন্ট্রোল করতে হবে। আর এ কন্ট্রোলটা করতে হবে খাওয়া দাওয়া, ঘুম, বিছানা, শোবার পদ্ধতি এ’সব ব্যাপারে। এ ব্যাপারগুলো তো আর আমরা দেখতে বা শোধরাতে পারব না। এটা আপনার নিজেকেই দেখতে হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনার ইচ্ছাশক্তি
নিজের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে গেলে আপনাকেই সবচেয়ে বেশী সচেষ্ট হতে হবে। আমি আপনাকে কিছু কিছু নির্দেশ দিয়ে যাব। আপনি যদি সেগুলো মেনে চলেন তাহলে সেন্টারে এসে যেটুকু যোগাচর্চা করবেন, আপনি তাতেই ফল পাবেন। তবে কত তাড়াতাড়ি সে ফল পাবেন সেটা কিন্তু আপনার ওপরেই নির্ভর করবে। এবার আসুন, আমি আপনাকে যোগার ব্যাপারগুলো আগে বুঝিয়ে দিই। প্রথমে আপনাকে দশ মিনিট প্রাণায়াম করতে হবে। আমি যেভাবে দেখাচ্ছি, আপনিও সেভাবে চেষ্টা করুন। একেবারেই কঠিন কিছু নয়। এভাবে করুন” বলে মেঝের কার্পেটের ওপর বসে প্রাণায়াম শুরু করল।

মিসেস আগরওয়ালাও রতীশের নির্দেশ মত প্রাণায়াম করতে শুরু করল। দশ মিনিট পর রতীশ কপাল ভারতী শুরু করল। কিন্তু মিসেস আগরওয়ালা কিছুতেই ঠিকঠাক মত সেটা করতে পারছিলেন না। রতীশ তাকে নানা ভাবে বুঝিয়েও পারছিল না। একসময় রতীশ নিজের ঊর্ধাঙ্গের পোশাকটা ওপরে টেনে তুলে নিজের পেট উন্মুক্ত করে বলল, “একটা জিনিস লক্ষ্য করুন মিসেস আগরওয়ালা। আমি যখন নাক দিয়ে ভেতর থেকে হাওয়া বের করব, তখন আমার পেটের মাঝখানের মাংসপেশীগুলো ভেতরের দিকে ঢুকে যাবে। আপনাকেও ঠিক তেমনটাই করবার চেষ্টা করতে হবে। তবে এখনই যে আপনি পুরোপুরি সঠিক ভাবে করতে পারবেন তা হয়ত হবে না। তবে চেষ্টাটা করতে হবে। করতে করতে ধীরে ধীরে ব্যাপারটা রপ্ত হবে। আর হাত দুটো কোমড়ের দু’পাশে রাখবেন, এভাবে” বলে আবার কয়েকবার করে দেখাল।

মিসেস আগরওয়ালাও রতীশের কথামত একবার চেষ্টা করেই বললেন, “তুমি একটু হাত দিয়ে দেখিয়ে দাও না ঠিক কোথায় কিভাবে কী করতে হয়। আমি ঠিক বুঝতে পাচ্ছি না জিনিসটা। আর বরুন সুজয় ওরাও কোনদিন এভাবে করতে বলেনি”।

রতীশ মিসেস আগরওয়ালার হাতদুটো ধরে তার কোমড়ের দু’পাশে বসিয়ে দিয়ে বলল, “হাতদুটো এই দুদিকে এভাবে চেপে ধরবেন” বলে তার হাতের ওপর চাপ দিতেই তুলতুলে মাংসপিণ্ডের ভেতর মিসেস আগরওয়ালার হাত দুটো ডেবে গেল। রতীশ এবার নিজের পেটের মাঝখানটায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল, “যখন নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়বেন তখন পেটের এই জায়গাটাকে ভেতরের দিকে টেনে নেবার চেষ্টা করবেন। আর একই সাথে কোমরে হাত দিয়ে চাপ দেবেন দু’দিক থেকে, এভাবে” বলে নিজে আরেকবার করে দেখাল।

কিন্তু দশ মিনিটের প্রচেষ্টাতেও মিসেস আগরওয়ালা একবারও সঠিক ভাবে করতে পারল না ব্যাপারটা। তখন রতীশ যোগাসন দেখাতে শুরু করল। ছ’ সাতটা আসন করাতে করাতে মিসেস আগরওয়ালার অনুরোধেই সে বেশ কয়েকবার তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিতে বা চেপে ধরতে সাহায্য করেছে।

সাড়ে দশটায় সেশন শেষ করলে মিসেস আগরওয়ালা মিষ্টি করে হেসে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “দু’বছর ধরে আমি এ সেন্টারে আসছি। এতদিন মনেও হয়নি যে আমি যোগা করছি। আজ এই প্রথমবার মনে হচ্ছে এবার আমি সঠিক ট্রেনার পেয়েছি”।
 

রতীশ একটু হেসে বলল, “শুধু ট্রেনার দিয়ে কাজ হয়না মিসেস আগরওয়ালা। ট্রেনারের শিক্ষাটা ভালো করে কাজে লাগাতে পারলে তবেই ফল পাবেন। আপনি তো এখানে আসবেন সপ্তাহে মোটে দু’দিন। কিন্তু সপ্তাহের বাকি দিন গুলোতেও আপনাকে বাড়ীতে বসেই রোজ দুবেলা চর্চা করে যেতে হবে। ঠিক যেভাবে আমি আপনাকে দেখিয়ে দেব সেভাবে। আর বাইরের জাঙ্ক ফুড আর বিরিয়ানী খাওয়া একেবারে বন্ধ করতে হবে। আর যা যা করতে হবে সে’গুলো আমি আপনাকে বুধবারে একটা কাগজে লিখে দেব হিন্দিতে। সেগুলো মেনে চললে আগামী চারমাসের ভেতরেই আপনি অনেক পরিবর্তন দেখতে পাবেন। এ’কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি”।

মিসেস আগরওয়ালা বেশ খুশী মনে বলল, “আমার মন বলছে, তোমার ট্রেনিংএ আমি খুব তাড়াতাড়িই আবার স্লিম হয়ে উঠতে পারব। কিন্তু রতীশ, এখানে তো সপ্তাহে দু’দিনের বেশী আসতে পারি না। তুমি আলাদাভাবে আমাকে অন্য কোথাও স্পেশাল ট্রেনিং দিতে পারবে না? না মানে। এজন্যে তুমি যত টাকা চাইবে, যা চাইবে, তোমাকে আমি সে’সব দেব। তুমি যেখানে যেতে বলবে আমি সেখানেই যাবো। তুমি অন্ততঃ সপ্তাহে আরও দু’দিন আমাকে এক্সট্রা কোচিং কর প্লীজ”।
 

রতীশ মিষ্টি হেসে জবাব দিল, “সেটা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না মিসেস আগরওয়ালা। আমি এই সেন্টারের বাইরে কোথাও গিয়ে কোনও ট্রেনিং বা কোচিং দিই না। তবে কয়েক মাস পর আমি নিজেও একটা যোগা সেন্টার খুলতে চলেছি। আপনি চাইলে সেখানেও সপ্তাহে দু’দিন কোচিং নিতে পারবেন”।
 

কেবিন কোচিং শেষ করে রতীশ নিজের কস্টিউম বদলে প্রথমে বীথিকার কেবিনে গিয়ে দেখে দু’ চেয়ারে সুজয় আর বরুন বসে বীথিকার সাথে গল্প করছে। রতীশ আর সেখানে না ঢুকে মহিমার চেম্বারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করে জিজ্ঞেস করল, “বৌদি, ভেতরে আসব”?
 

ভেতর থেকে মহিমা জবাব দিল “হ্যা ভাই এসো”।

রতীশ ভেতরে ঢুকতেই মহিমা মিষ্টি করে হেসে রতীশকে বলল, “বোসো ভাই। তারপর বল তো শুনি। চারদিন তো এখানে কাজ করলে। কেমন লাগছে? কোন অসুবিধে হচ্ছে না তো”?
 

রতীশ চেয়ারে বসতে বসতে জবাব দিল, “না বৌদি কোন অসুবিধেয় পড়িনি এখনও। তবে বৌদি একটা কথা বলার ছিল। না না আপনি এমন ভাববেন না যে আমি কোন কমপ্লেন করছি আপনার কাছে”।

মহিমা নিজের হাতের কাজ থামিয়ে রতীশের মুখের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বলল, “আহা, তুমি এমন করে বলছ কেন ভাই। বলনা কী বলতে চাও? ডিড ইয়ু ফেস এনি প্রব্লেম”?

রতীশ একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “না বৌদি আমার কোন অসুবিধের কথা নয়। কিন্তু একটা ব্যাপার আমার নজরে এল। আর সেটা এ ইনস্টিটিউটের পক্ষেই ক্ষতিকারক হবে বলে মনে হচ্ছে আমার। সে’কথাই বলতে চাইছি। কিন্তু ভাবছি, এতে করে আমি অনধিকার চর্চা করে ফেলব না তো”?

মহিমা একটু সতর্ক হয়ে বলল, “না রতীশ। কোন অনধিকার চর্চা হবে না। আমার বিশ্বাস আমার ইনস্টিটিউটের ভালর জন্যেই তুমি কিছু বলতে চাইছ। খুলে বল তো ব্যাপারটা কি? কেবিন কোচিংএ কোন সমস্যা হয়েছে”?

রতীশ তবু একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “আসলে বৌদি, আজ কেবিনে আমি মিসেস আগরওয়ালাকে কোচিং দিলাম। মানে বিমল আগরওয়ালার স্ত্রীকে। তার শারীরিক সমস্যাটার কথাও জানলাম। উনি বলছিলেন যে উনি প্রায় দু’বছর যাবত এখানে আসছেন। কিছুটা উপকারও পেয়েছে। কিন্তু তার সমস্যার খুব বেশী রকম পরিবর্তন হয়নি এখনও। তার সাথে কথা বলে আমার মনে হল তার সমস্যাটা দুর করতে তাকে যে সব আসন আর প্রাণায়াম করানো উচিত ছিল, এখানে সে সব করানোই হয়নি। আর তাছাড়া বৌদি, মিসেস আগরওয়ালার যেটা মূল সমস্যা এমন সমস্যা তো পয়ত্রিশ বছর পেরিয়ে যাবার পর যে কোন মহিলার ক্ষেত্রেই হতে পারে। আর তার মত আরও হয়ত কিছু পেশেন্ট আমাদের এ সেন্টারে আছে। আমার মনে হচ্ছে, এমন সমস্যা যাদের আছে, তাদের কারুর ক্ষেত্রেই সঠিক এক্সারসাইজ প্রেসক্রিপশন করা হয়নি। তাই তারা আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না। আমার মনে হয় এদিকটা আপনার একটু ভাবা উচিৎ”।
 

রতীশ থামতে মহিমা চট করেই কিছু বলল না। বেশ কিছুক্ষন চুপ করে মনে মনে কিছু একটা ভেবে সে “এক মিনিট’ বলে কলিং বেলে চাপ দিল। অজয় চেম্বারে এসে ঢুকতেই মহিমা তাকে বলল, “বরুন আর সুজয় বোধহয় বীথির কেবিনে আছে। ওদের দু’জনকে আমার এখানে আসতে বল”।

অজয় বেরিয়ে যেতেই মহিমা রতীশকে বলল, “আমার মনে হচ্ছে এ ব্যাপারে তুমি আমাকে কিছু সাজেস্ট করতে চাইছ। তাই না ভাই”?

রতীশ নিজের দু’হাত কচলে আমতা আমতা করে বলল, “হ্যা বৌদি, আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন। কিন্তু আমি সবে এখানে জয়েন করেছি। অন্য সকলেই এখানকার পুরোন স্টাফ। আমার সিনিয়র তারা। তাদেরকে তো আমি কিছু নির্দেশ দিতে পারি না। আর যেহেতু এটা ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত, তাই ভাবলাম, যদি আপনি এটাকে আমার ধৃষ্টতা বলে মনে না করেন, তাহলে কথাগুলো আপনাকেই বলা ভাল। তাই বলছিলাম আর কি। কিন্তু আপনি তো ওদেরকে ডেকে পাঠা....”

রতীশকে মাঝপথে বাঁধা দিয়ে মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “দেখ ভাই, মিসেস আগরওয়ালা বা তার মত একই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে আরও যারা এখানে আসেন, তাদের চিকিৎসার যদি কোন ত্রুটি হয়ে থাকে, তাহলে সে ত্রুটিটা হয়েছে বরুন সুজয় আর কবিতার। কবিতা তো এখন নেইই। কিন্তু বরুন আর সুজয়রা কী ভুল করছে এটা ওদের বোঝা উচিৎ। ব্যাপারটা আমার নলেজে আজই এল। তাই আমি চাই তুমি এ ভুল শোধরাবার জন্য যে উপায় বলবে সেটা আমাদের মেনে নেওয়াই উচিৎ। আর সেটা আমার চেয়ে বেশী দরকার বরুন আর সুজয়ের। কারন প্র্যাকটিকালি ওরাই পেশেন্টদের কোচিং দেয়। তাই আমি চাই ওরাও তোমার পরামর্শগুলো শুনুক আর শিখুক। যাতে ভবিষ্যতে আর এমন ভুল ওরা না করে। সেজন্যেই ওদের ডেকেছি। আর আমি তো তোমাকে এবং ওদের দু’জনকেও বলেছি যে তোমার মতো এক্সপার্ট ওরা কেউই নয়। তুমি যোগার সমস্ত ব্যাপারে ওদের গাইড করবে। আজই যে তুমি এ ব্যাপারে আমার সাথে আলোচনা করতে এসেছ, এতে আমি খুব খুশী হয়েছি। কিন্তু আমি চাই, বরুন সুজয়কেও তুমি নিজেই বলে বুঝিয়ে দাও”।

মহিমার কথা শেষ হতেই কেউ দরজায় নক করল। মহিমা ভেতরে আসবার অনুমতি দিতেই বরুন সুজয়ের সাথে বীথিকাও চেম্বারের ভেতর ঢুকল। মহিমার সেক্রেটারিয়েট টেবিলের উল্টোদিকে পাঁচখানা চেয়ার সব সময়ই রাখা থাকে। মহিমা সবাইকে বসতে বলে বলল, “বরুন সুজয়, তোমাদের আমি প্রথম দিনই বলেছি যে রতীশের মত এক্সপার্ট যোগা টিচার এ কোলকাতায় বর্তমানে আর কেউ নেই। তাই তোমাদের দু’জনকেই আমি বলেছি যে যোগা ট্রেনিং আর কোচিংএর ব্যাপারে সব সময় ওর পরামর্শ মেনে চলবে। আজ ও মিসেস আগরওয়ালাকে কোচিং দিয়ে বুঝেছে যে এতদিন ধরে আমরা যেভাবে তাকে গাইড করেছি তাতে তার খুব একটা উপকার হয়নি। এ ব্যাপারে রতীশ তোমাদের কিছু বলবে। তোমরা মন দিয়ে কথাগুলো শোন”।

রতীশ বলল, “বরুন সুজয়। সবার প্রথমেই তোমাদের দু’জনের কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ভাই। তোমরা ভেবো না যে আমি তোমাদের কাজের ভুল ধরবার জন্য এ’সব বলছি। যারা আমাদের এখানে শারীরিক সমস্যা দুর করতে আসেন, তারা যদি এখানে এসে সুফল পান তাহলেই বাজারে আমাদের সুনাম হবে। আমি শুধু চাইছি যে আমাদের এই ইনস্টিটিউটের যেন কোন বদনাম না হয়”।

তারপর প্রায় আধঘণ্টা ধরে রতীশ একনাগারে সবাইকে বুঝিয়ে গেল। তার বলা শেষ হলে বরুন আর সুজয় দু’জনেই এককথায় রতীশের পরামর্শ মেনে নিল। মহিমা তাদের সকলকে চেম্বার থেকে বিদেয় করে রতীশের কাছে এসে তার হাতদুটো ধরে মিষ্টি গলায় বলল, “তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। বরুন আর সুজয়কে যেভাবে যুক্তি দিয়ে সবটা বুঝিয়ে বললে, এত সুন্দরভাবে বুঝি আমিও ওদের বোঝাতে পারতাম না। কিন্তু তোমাকে আমি আজ কয়েকটা কথা বলব বলে ভেবেছিলাম, সেটা হল না। আজ তো তোমার অনেক দেরী হয়ে গেল। তোমার দেরী হচ্ছে দেখে রচনা নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তা করবে। তাই আজ তুমি বরং বেরিয়ে পড়ো। আর বরুন সুজয়কে কিছু বোঝাবার হলে বা পরামর্শ দেবার হলে ব্রেকফাস্টের সময় সেটা করবে। নইলে রোজ রোজ এভাবে তোমার দেরী হয়ে গেলে আমি নিজেই রচনার কাছে অপরাধী হয়ে যাব ভাই”।


______________________________
ss_sexy
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 06-03-2020, 07:10 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)