Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 119)

পরদিন সকাল সাতটায় চা খেতে খেতে পরিতোষ সীমন্তিনীকে ফোন করল। সীমন্তিনী সাড়া দিতেই সে বলল, “গুড মর্নিং ডার্লিং। ঘুম ভেঙেছে তো? না ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙল”?

সীমন্তিনী জবাব দিল, “গুড মর্নিং পরিতোষ। ঘুম অনেকক্ষণ আগেই ভেঙেছে। তা এত সকাল সকাল কি মনে করে? সব ঠিকঠাক আছে তো”?

পরিতোষ বলল, “আমার মত একটা থার্ড ক্লাস লোককে যমেও নিতে চায় না ডার্লিং। সেটা ....”

সীমন্তিনী পরিতোষকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিয়ে প্রায় ধমকের সুরে বলল, “আজেবাজে কথা না বলে কেন ফোন করেছ এ সকালে সেটা বল তো”।

পরিতোষ হেসে বলল, “জানি আমার নিজের মনের কথা শোনবার মত এ দুনিয়ায় একটা প্রাণীও নেই। ওকে ওকে ডার্লিং, তাহলে আসল কথাতেই আসছি। শোনো, তোমাকে আসলে কাল রাতেই ফোন করব ভাবছিলাম। কিন্তু ঘরে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল বলেই আর করা হয়নি। তবে একটা গুড নিউজ আছে। টারগেট ওয়ানে অপারেশন সাকসেসফুলি শেষ হয়েছে। আমার সতীনের জন্য হাতে পেয়েছি সাড়ে তিন লাখ। সেটাও আপাততঃ আমার কাছেই সুরক্ষিত রাখতে হবে জানি। তবে খবরটা তোমাকে জানানো উচিৎ বলেই এই সাত সকালে ফোনটা করেছি। ও আর হ্যাঁ, আরেকটা খবর আছে। রবিশঙ্কর আর তার দুষ্কর্মের আরও দুই পার্টনারকে গতকাল পুলিশ এরেস্ট করেছে। আর তাকে যেভাবে আইনের জালে আটকানো হয়েছে, তাতে অন্ততঃ বছর পাঁচেকের ইমপ্রিজন্টমেন্ট হতে পারে। তবে এটা অন্য একটা কেসে”।

সীমন্তিনী বেশ খুশী হয়ে বলল, “এরই মধ্যে দুটো টার্গেটই ফিনিশ হয়ে গেল? স্যালিউট স্যার। কিন্তু আমি যে আরেকটা কাজ তোমাকে দিয়েছিলাম সেটার ব্যাপারে তো কিছু বল এবার”?

পরিতোষ বলল, “হ্যাঁ টার্গেট থ্রি আর ফোরের ওপরেও আমার নজর আছে। তবে টার্গেট থ্রির ব্যাপারে পজিটিভ কোন রিপোর্ট এখনও পাইনি। তবে মনে হয় আমার সতীনের কেসটার ব্যাপারে সে বোধহয় তেমন ভাবে জড়ায় নি। আমার মনে হয় ডুপ্লিকেট চাবির সাহায্যেই তোমার দাদাভাইকে ঠকানো হয়েছিল। আর সে ব্যাপারে টার্গেট থ্রি নিজে হয়ত জড়িত ছিল না। তার মত একজন কোটিপতি সামান্য দু’লাখ টাকার জন্য এমন একটা কাজ করবে সেটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। তবে মালটা তো বেশ ঘাগু মাল। জোর দিয়ে বলাও যায় না কিছু। তবে ওয়াচ রাখছি তার ওপরেও। আর টার্গেট ফোর-এ তো দক্ষিণ কলকাতার এক যোগা ইনস্টিটিউটে কাজে যোগ দিয়েছে দিন তিনেক হল। আশা করি তুমি সেটা জানোই। আর টার্গেট ফোর-বি সুস্থ এবং ভাল আছে। ব্যস”?

সীমন্তিনী এবার বলল, “ব্যস মানে? তোমার বিয়ের নিমন্ত্রনটা কবে পাচ্ছি সেটার খবর কোথায়”?

পরিতোষ নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ওঃ ওটার কথা বলছ? সরি ডার্লিং। ও ব্যাপারে পজিটিভ কিছু শোনাতে পারছিনা তোমাকে। তবে এটুকু জেনে রাখো। নতুন একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল বটে। কিন্তু বেড়ালের ভাগ্যে শিকে এবারেও ছিঁড়ল না। কি করব বল”?
 

সীমন্তিনী একটু বেশী উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “নতুন সম্ভাবনা এসেছিল? কিন্তু সেটাও কব্জা করতে পারনি তুমি? আমাকে তো দু’দিন দেখেই তিন দিনের দিন সোজা প্রোপোজ করে বসেছিলে”!

পরিতোষ গম্ভীরভাবে জবাব দিল, “প্রোপোজ তো এবারেও করেছিলাম সুইট হার্ট। কিন্তু কথায় বলে না? কপালে না থাকলে ঘি- ঠকঠকালে হবে কি। আমারও সে অবস্থাই হয়েছে। আমার প্রোপোজাল তো নাকচ করেই দিল। সেই সাথে আরেক আবদার পেতে বসল। সে আমার ভূতপুর্ব প্রেমিকা সরি আমার বন্ধু এবং আইপিএস সীমন্তিনী ভট্টাচার্য্যির সাথে দেখা করতে চায়। এখন তুমি বলো। তুমি আছ পাঁচ ছশ’ মাইল দুরে আর তিনি আছেন এই কলকাতা শহরে। কিকরে তোমাদের দু’জনের সাক্ষাৎ ঘটাই বল তো? ওঃ ভাল কথা। তুমি কি কলকাতা আসবার প্ল্যান করছো”?

সীমন্তিনী এবার অবাক হয়ে বলল, “আমি কলকাতা যাচ্ছি? এ খবর কোথায় শুনলে? আমি তো কিছু জানি না”।

পরিতোষ বলল, “গোপন সূত্রের খবর। তোমাকে নাকি এখানে হেড কোয়ার্টারে তলব করা হচ্ছে। অবশ্য তারিখের ব্যাপারটা সঠিক বলতে পারছি না। তবে তোমার নর্থ-ওয়েস্ট ডুয়ার্সের রিপোর্টের ব্যাপারেই যে তলব করা হচ্ছে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত”।

সীমন্তিনী চিন্তিত সুরে বলল, “সেটা হলেও হতে পারে। কিন্তু এখন অব্দি আমি এ ব্যাপারে কিছু শুনিনি। ডিস্ট্রিক্ট হেড কোয়ার্টার থেকে আমাকে এমন কোন খবর পাঠায়নি। জানিনা। তবে অমন অর্ডার এলে তো আমাকে যেতেই হবে। আর তুমিও জানতেই পারবে”।
 

পরিতোষ এবার বলল, “আচ্ছা ম্যাডাম, এবার আমার আরেকটা কথার জবাব দাও তো। আমার সতীনের সম্পত্তিগুলো কবে আর কিভাবে কার হাতে দেব”?

সীমন্তিনী শান্তভাবে বলল, “ওগুলো আপাততঃ তোমার কাছেই থাক। যদি আমাকে কলকাতা যেতেই হয় তখন এ ব্যাপারে কথা বলব আমরা। কিন্তু তখন ..... না থাক। সেটা পরে দেখা যাবে”।

পরিতোষ বলল, “ওকে সুইট হার্ট। তাহলে আপাততঃ বার্তালাপ এখানেই শেষ করছি। ভাল থেক। হ্যাভ এ গুড ডে” বলে ফোন কেটে দিল।
 

*******************

রতীশ দিন চারেক আগে মহিমার ইনিস্টিটিউটে কাজে যোগ দিয়েছে। মহিমার কথা বার্তা ব্যবহারে সে খুব খুশী। ইনস্টিটিউটের অন্যান্যরাও, অফিসের জমাদার রাজু, পিয়ন অজয়দা থেকে শুরু করে অন্যান্য ট্রেনাররা এমনকি সব চেয়ে কম কথা বলা অফিস এসিস্ট্যান্ট বীথিকা পর্যন্ত সকলেই রতীশের সঙ্গে খুব ভাল ব্যবহার করে। রতীশও সকলের কাছ থেকে সুব্যবহার পেয়ে খুশী। কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে রোজ ভোর সাড়ে চারটেয় তাকে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। তবে বাড়ি থেকে বেরোনটা কোন সমস্যা নয়। আসল সমস্যাটা হচ্ছে ইনস্টিটিউটে সময়মত গিয়ে পৌঁছনোটা। অত সকালে বাস ট্যাক্সি পাওয়া যায় না। অটো দু’একটা চলে। কিন্তু সেগুলোর কোন নির্দ্দিষ্ট টাইম টেবিল নেই। পাওয়া যে যাবেই তাও জোর দিয়ে বলা যায় না। আর পাওয়া গেলেও বরানগর থেকে সরাসরি গড়িয়া পর্যন্ত কোন অটোই যায় না। কয়েকবার পাল্টাপাল্টি করে যেতে হয়। মহিমা বৌদি তার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঠিক করে দিয়েছেন বৃহস্পতি বার। গত চারদিনের মধ্যে একদিন বৃহস্পতি বার ছিল বলে সেদিন রতীশকে ভোরবেলা বাড়ি থেকে বের হতে হয়নি। কিন্তু আর তিনদিনই ইনস্টিটিউটে যাবার পথে তাকে প্রচণ্ড টেনশনে ভুগতে হয়েছিল। একদিন তো জেনারেল সেশন শুরুই হয়ে গিয়েছিল পৌঁছতে পৌঁছতে। যদিও মহিমা সেজন্যে তাকে বেশী কিছু বলেনি। কিন্তু সে নিজেই সে ব্যাপারে মনে মনে খুব অস্বস্তিতে আছে। সকাল ছ’টা থেকে সাড়ে দশটা অব্দি তাকে ডিউটি করতে হয়। সাড়ে দশটায় তার ছুটি। ফিরতি পথে তার কোন সমস্যা হয় না। বাস ট্যাক্সি অটো মেট্রো সব কিছুই পাওয়া যায়।
 

আজও ভোর সাড়ে চারটেয় সে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। নিচের রাস্তায় এসে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা রচনাকে হাতের ঈশারায় বাই জানিয়ে সে বড়রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। একবার কব্জি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা বেজে পাঁচ। এদিক ওদিক সবদিকে তাকিয়ে দেখল কোথাও কোন অটো দেখা যাচ্ছে না। শুধু তার কাছ থেকে হাত ছয়েক দুরে আরেক ভদ্রলোক ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় পাশের একটা গলি থেকে হুট করে একটা খালি অটো বেরিয়ে এল। রতীশ হাত দেখাবার আগেই পাশের লোকটাই অটোটাকে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করছে “ভাই নরেন্দ্রপুর যাবে”?
 

রতীশ ধীরে ধীরে অটোটার কাছে আসতে আসতে ভাবল যে ও লোকটা যদি আপত্তি না করে তাহলে সে নিজেও এই অটোটাতেই যেতে পারবে। তার ইনস্টিটিউট নরেন্দ্রপুরের রাস্তাতেই পড়ে। রতীশ ভাবল এই অজানা অচেনা লোকটাকে কিছু বলার চাইতে অটো ড্রাইভারটার সাথেই বরং কথা বলে দেখা যাক। এই ভেবে সে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে অটো ড্রাইভারটাকেই জিজ্ঞেস করল, “ভাই গড়িয়া যাওয়া যাবে”?

অটো ড্রাইভারটা জবাব দিল, “গড়িয়া মেট্রো হলে উঠে পড়ুন। কিন্তু অন্য কোনদিকে হলে হবে না দাদা। আমি বারুইপুরের রাস্তায় যাব”।
 

রতীশ সাথে সাথে বলল, “না মানে মেট্রো ঠিক নয়। তবে সেখানে পৌঁছে দিলেও হবে”।

ড্রাইভার বলল, “তাহলে আর দেরী না করে উঠে পড়ুন। ভাড়া কিন্তু সত্তর টাকা নেব দাদা। পরে ঝামেলা করবেন না কোন”।

রতীশ কোন কথা না বলে অটোয় ওঠা অন্য লোকটার পাশে গিয়ে বসতেই সেই লোকটা ড্রাইভারকে বলল, “সত্তর টাকা ভাড়া চাইছ মেট্রো পৌঁছাতে? তাহলে নরেন্দ্রপুর মিশন অব্দি কত নেবে”?

ড্রাইভার বলল, “মিশন গেটে নামলে আপনাকে নব্বই টাকা দিতে হবে স্যার। আর মন্দির গেটে নামলে আশি টাকা নেব”।

লোকটা বলল, “এত বেশী ভাড়া চাইছ কেন ভাই। মিটারে গেলে তো এত পয়সা পড়বে না”।

ড্রাইভার ছেলেটা একটু কর্কশ ভাবে বলল, “আপনি কি এই প্রথম এখান থেকে নরেন্দ্রপুর যাচ্ছেন দাদা? আপনি জানেন না? এদিক থেকে কোন অটোই ডাইরেক্ট নরেন্দ্রপুরের দিকে যায় না। দু’ তিন জায়গায় অটো পাল্টে পাল্টে যেতে হয়। আমার স্পেশাল পারমিট আছে বলেই আপনারা এমন সুযোগ পাচ্ছেন। আর এ’সময়ে মিটারে চলবে না দাদা। আর এই ভোরবেলায় ভাড়া সব রাস্তাতেই একটু বেশীই দিতে হবে। সে লোভেই তো ঘুম কামাই করে এত সকাল সকাল রাস্তায় বেরোই। আপনার না পোষালে আপনি নেমে যান। এভাবে সময় নষ্ট করবেন না আমাদের সবার”।

লোকটা এবার তর্ক করা ছেড়ে দিয়ে বলল, “বেশ ঠিক আছে ভাই, চল”।

ড্রাইভার অটো ছেড়ে দিল। পাশের লোকটা গোটা রাস্তাটা একদম চুপচাপ থাকলেও অটোর ড্রাইভার রতীশের সঙ্গে অনেক ব্যাপারে কথা বলল। সে বলল তার নাম নিখিল বারুই। তাকে এখন থেকে রোজ সকাল পাঁচটায় নাকি অটো নিয়ে বারুইপুর যেতে হবে। কোন এক হকার নাকি তাকে রোজকার জন্য বাধা করে নিয়েছে। রোজ সকাল সাড়ে ছ’টায় নিখিল তাকে বারুইপুর থেকে বরানগর নিয়ে আসবে। তার সাথে মাসকাবারি চুক্তি হয়েছে। সে কথা শুনে রতীশ তাকে বলল যে সেও রোজই তাহলে নিখিলের অটোতেই গড়িয়া আসবে। নিখিলও সে কথা শুনে খুব খুশী হয়ে বলল যে রতীশ যদি রোজ তার অটোতেই যায় তাহলে সে তার সাথেও মাসকাবারি চুক্তি করে নিতে পারে। তাহলে ভাড়ার দিক থেকে বেশ কিছুটা কম নিতে সে রাজি আছে। তবে রাস্তায় প্যাসেঞ্জার পেলেও সে তুলে নেবে। রতীশ তাকে জানাল যে মাসকাবারি চুক্তি সে এখনই করতে চায়না, কিছুদিন যাবার পর সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু সে যে রোজ নিখিলের অটোর জন্যেই বড় রাস্তার ওই মোড়েই দাঁড়িয়ে থাকবে, সেটা জানিয়ে দিল। নিখিল খুব খুশী হয়ে তাতে সম্মতি দিল। রতীশও মনে মনে খুব খুশী হল। ভাবল রোজ সকালে অটো খোঁজার টেনশন থেকে সে মুক্তি পেল।

প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদে গড়িয়া মেট্রো ষ্টেশনের কাছাকাছি আসতেই নিখিল জিজ্ঞেস করল, “দাদা আপনি মেট্রো ষ্টেশন থেকে ঠিক কোন দিকটায় যাবেন বলুন তো”?

রতীশ বলল, “তুমি তো বারুইপুর যাবে। আমাকে সে রাস্তাতেই মেট্রো থেকে মিনিট পাঁচেক যাবার পর একটা জায়গায় নামতে হবে”।
 

নিখিল গড়িয়া ষ্টেশন ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “তাহলে আর এখানে নামতে চাইছেন কেন। আপনি ঠিক জায়গা মতই নামতে পারবেন”।

অটো এগিয়ে চলল। কয়েক মিনিট বাদেই ইনস্টিটিউটের গলির মোড় আসতেই রতীশ অটো থামাতে বলল। অটো থেকে নামতে নামতে কব্জিঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা পঞ্চান্ন। পকেট থেকে পার্স বের করতেই নিখিল বলল, “দাদা সত্তর নয়, ষাট টাকা দিন। আপনি আমার বাধা প্যাসেঞ্জার হয়ে গেলেন, তাই দশ টাকা কনসেশন আপনি পেতেই পারেন”।

রতীশ মিষ্টি করে হেসে ভাড়া দিতে দিতে বলল, “ইস, আর পাঁচটা মিনিট আগে পৌঁছলে ভাল হত”।

নিখিল টাকা নিতে নিতে বলল, “কাল থেকে আরেকটু ডাবিয়ে আসব। আপনাকে ঠিক পাঁচটা পঞ্চাশের মধ্যেই এখানে নামিয়ে দেব দাদা, ভাববেন না। আপনি ওই মোড়েই আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। আমি ঠিক পাঁচটায় আপনাকে তুলে নেব। আচ্ছা চলি দাদা। ভাল থাকবেন”।

******************

সকালের জেনারেল সেশন শেষ হবার পর মহিমার চেম্বারে সকলে মিলে ব্রেকফাস্ট করবার সময় মহিমা বীথিকাকে জিজ্ঞেস করল, “আজ কেবিন সেশনে ক’জনকে ট্রিটমেন্ট দিতে হবে বীথি”?

বীথিকা জবাব দিল, “আজ তো তিনজন আসবে ম্যাম। মিসেস ডালমিয়া ফোন করে জানিয়েছেন আজ উনি আসতে পারবেন না। তার ঘরে নাকি কিছু একটা ফাংশন আছে। মিসেস আগরওয়ালা, মিসেস দাস আর মিসেস দত্ত আসবেন। কিন্তু ম্যাম, মিসেস আগরওয়ালা বুঝি আমাদের সার্ভিসে ইদানীং খুব খুশী নন। উনি কারো সাথে সেশন শেয়ার করতে চাইছেন না। বলছেন দেড় ঘণ্টার সেশনে আরেকজনের সাথে ট্রেনার শেয়ার করাটা তার মনঃপুত হচ্ছে না। তিনি ট্রেনারের সঙ্গে একাই সেশন এটেণ্ড করতে চান”।

মহিমা খেতে খেতেই জবাব দিল, “হুম, কথাটা উনি আমাকেও বলেছেন। কিন্তু কি করব বলো। কবিতাটা যে চলে গেল। এ অবস্থায় বুধবার, শুক্রবার, শনিবার আর রবিবার আমাদের তিনজন ট্রেনার থাকবে। একা করাতে গেলে তিনজন শুধু তিনজনকেই কোচিং দিতে পারবে। তিনজনের বেশী ট্রেণী হলে তো একসাথে দু’জনকে কোচিং না দিয়ে উপায় নেই। আর সোমবার, মঙ্গলবার আর বৃহস্পতি বার তো দু’জন ট্রেনার থাকে আমাদের হাতে। ওই তিনদিন তো একসাথে দু’জনকে কোচিং না দিয়ে উপায়ই নেই। আচ্ছা ঠিক আছে আমি তার হাসব্যাণ্ডের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলব। আচ্ছা মিসেস আগরওয়ালা কবে কবে আসছেন এখন”?

বীথিকা জবাব দিল, “উনি তো রবিবার আর বৃহস্পতি বার আসেন ম্যাম”।

মহিমা খেতে খেতেই কিছুক্ষণ মনে মনে কিছু একটা ভাবল। তারপর জিজ্ঞেস করল, “বুধবারে স্পেশাল ট্রেনী কে কে আসে”?

বীথিকা জবাব দিল, “ম্যাম, সেটা ফাইলে দেখতে হবে। ঠিক মনে পড়ছে না এখন”।

মহিমা নিজের সামনের ল্যাপটপের কী-প্যাডে খুটখাট করে একটা ফাইল বের করে দেখতে দেখতে বলল, “শোন বীথিকা। বুধবারে তো দেখতে পাচ্ছি তিনজনের এন্ট্রি আছে। মিঃ চৌরাশিয়া, মিসেস নটরাজন আর মিসেস বটব্যাল। তুমি ব্রেকফাস্ট করে তোমার কেবিনে গিয়ে দেখ যে এদের ভেতর কাউকে বৃহস্পতি বারে শিফট করা যায় কি না। যদি সম্ভব হয় তাহলে তাকে সেটা জানিয়ে দিয়ে মিসেস আগরওয়ালাকে বুধবার আর রবিবারের সিডিউলে ফেলে দাও। ওই দু’দিন তো বরুন, সুজয় আর রতীশ তিনজন থাকবে। তুমি এরপর থেকে একা মিসেস আগরওয়ালার জন্যে একজনকে এলট করে দিও। প্রয়োজন হলে অন্য দু’জনকে ডাবল ক্লায়েন্ট দিয়ে দিও। আপাততঃ এভাবে চালাও কিছুদিন। তারপর দেখা যাক। আর হ্যাঁ, আজ মিসেস আগরওয়ালার কেবিনে রতীশকে পাঠিও। আর তার আগে রতীশকে তোমার চেম্বারে নিয়ে গিয়ে মিসেস আগরওয়ালার ফাইলটা ওকে দেখিয়ে দিও। আর শুধু তাই নয়। যে সব ক্লায়েন্টের শারীরিক সমস্যা আছে, সময় করে তুমি তাদের সকলের ফাইলই রতীশকে দেখিও। রতীশ ফাইলগুলো ভাল করে স্টাডি করে বরুন আর সুজয়কে বুঝিয়ে দেবে কোন পেশেন্টের ক্ষেত্রে কি কি করা বারণ। বরুন সুজয়, তোমরাও শুনে রাখো। যেসব ব্যাপার তোমরা ঠিক বুঝতে পারবে না, সে সব ব্যাপারে রতীশের পরামর্শ নেবে। আর রতীশ, তোমাকে কথাটা আমি আগেও বলেছি। আর আজও বলছি, বীথিকার কাছ থেকে ফাইলগুলো নিয়ে স্টাডি করে তুমি ওদেরকে বুঝিয়ে দিও কাকে কোনটা করানো উচিৎ, কোনটা করানো অনুচিত। আশা করি তুমি কিছু মাইণ্ড করবে না”।

রতীশ প্রায় সাথে সাথে বলল, “না না ম্যাম, এতে মনে করার কি আছে? আমি বীথিদির কাছ থেকে ফাইলগুলো নিয়ে পড়ে বরুন-দা আর সুজয়-দাকে সব বুঝিয়ে দেব”।

রতীশের কথা শুনে ঘরের সকলেই অবাক হয়ে তার মুখের দিকে চাইল। রতীশ সেটা দেখে একটু অবাক হল। মনে মনে ভাবল, সে বেফাঁস কিছু বলে ফেলেনি তো?
 

এমন সময় সুজয় ‘হা হা’ করে হেসে উঠল। সাথে সাথে বাকিরাও। রতীশ সকলকে এভাবে হাসতে দেখে কিছু না বুঝেও লজ্জা পেল। একসময় হাসি থামিয়ে সুজয় বলল, “রতীশদা, আপনার যা বয়স এবং যা কোয়ালিফিকেশন, তাতে আমরা কেউই আপনার দাদা দিদি হবার উপযুক্ত নই। আপনি প্লীজ আমাদের নাম ধরে তুমি করে বলবেন। আমরা কেউই এখনও পঁচিশ পেরোই নি। তাই আমরাই আপনাকে রতীশদা বলব”।

রতীশ এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মিষ্টি করে হেসে বলল, “ওঃ, আমি তো ভাবছিলাম আমি বুঝি বেফাঁস কিছু ....”

রতীশকে মাঝপথে বাধা দিয়ে বরুন বলল, “হ্যাঁ রতীশদা, সুজয় একদম ঠিক বলেছে। আপনি আমাদের নাম ধরেই ডাকবেন। তবে আপনি যেহেতু বয়সে বা যোগ্যতায় আমাদের সকলের চেয়েই ওপরে, আমরা আপনাকে রতীশদা বলেই ডাকব। তবে আমার মনে হয় আপনি আজ্ঞে করলে নিজেদের মধ্যে দুরত্বটা একটু বেশী মনে হবে। তারচেয়ে সবাই সবাইকে তুমি তুমি করে বললেই ভাল হবে। তাই না ম্যাম”?

মহিমাও মিষ্টি করে হেসে বলল, “সেটা তোমাদের ওপর ডিপেণ্ড করে। আমি আর কি বলব। তবে রতীশ, তুমি কিন্তু আমাকে একটু আগেও ম্যাম বলে ডাকলে ভাই। আমার কিন্তু তাতে ভাল লাগেনি। আর এমন কথাও কিন্তু ছিল না। হ্যাঁ বীথি, বরুন, সুজয়, তোমরা সবাই জেনে রাখো। রতীশ আর ওর স্ত্রী রচনার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক আছে। ওরা আমার দেবর দেবরানী। তাই আমি রতীশকে বলেছি যে অফিসেও যেন ও আমাকে বৌদি বলেই ডাকে। তোমরা কেউ তাতে কিছু মনে কোর না প্লীজ”।
 

বরুন, সুজয় আর বীথিকা তিনজনেই একসাথে বলে উঠল যে তারা কেউ কিছু মনে করবে না। অমন সম্পর্ক যখন আছে, তখন অফিসের বস হলেও রতীশের ম্যামকে বৌদি বলেই ডাকা উচিৎ।

ব্রেকফাস্টের পর বীথিকা রতীশকে ডেকে তার কেবিনে নিয়ে গেল। রতীশকে উল্টোদিকের একটা চেয়ার দেখিয়ে বলল, “রতীশদা আপনি এখানে বসুন। আমি মিসেস আগরওয়ালার ফাইলটা আগে আপনাকে দিচ্ছি। আজই তো তাকে এটেণ্ড করতে হবে আপনাকে। অন্যদের ফাইলগুলো সময় সুযোগ মত আমার কাছ থেকে চেয়ে নেবেন”।

রতীশ চেয়ারে বসে বলল, “বেশ তা না হয় হল। কিন্তু খানিক আগেই বৌদির চেম্বারে যে বলা হল আপনি আজ্ঞে চলবে না, সেটা মানা হচ্ছে না কেন জানতে পারি”?
 

বীথিকা নিজের চেয়ারে বসে অদ্ভুত চোখে রতীশের মুখের দিকে চেয়ে বলল, “বাব্বা, তুমি তো খুব চালাক! কি সুন্দর ভাববাচ্যে কথাটা বললে? বাট আই লাইকড ইট। এই নাও মিসেস আগরওয়ালার ফাইল”।

রতীশ ফাইলটা হাতে নিয়ে মন দিয়ে দেখতে লাগল। হৃষ্টপুষ্ট এক মহিলার ছবি ফাইলের প্রথম পাতাতেই। দেখে মনে হয় এককালে বেশ সুন্দরীই ছিলেন ভদ্রমহিলা। কিন্তু মুটিয়ে যাবার ফলেই শরীরের লাবণ্য অনেকটাই হারিয়েছেন। বয়স তেতাল্লিশ। নাম মিসেস সবিতা আগরওয়ালা। স্বামীর নাম মিঃ বিমল আগরওয়ালা। রতীশের মনে পড়ল এ ইনস্টিটিউটে ইন্টারভিউএর দিন বিমল আগরওয়ালা তাকে বলেছিলেন যে তার স্ত্রীও এখানে যোগা করতে আসেন। মিসেস আগরওয়ালার শরীরে প্রচুর ফ্যাটস আছে। বডি ওয়েটও বেশ। পঁচানব্বই কেজি। শরীরের ফ্যাটস আর ওজন কম করার অভিপ্রায় নিয়েই তিনি এ ইনস্টিটিউটের ক্লায়েন্ট হয়েছেন। রতীশ মনে মনে ভেবে নিল এমন ধরণের মহিলাকে কোন কোন বিশেষ বিশেষ যোগাসন করান উচিৎ, তবে দু’বেলা প্রাণায়াম আর কপাল ভারতী চর্চা করা অবশ্য প্রয়োজনীয়।

______________________________

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 06-03-2020, 07:09 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)