Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
(Update No. 118)

দুপুর প্রায় আড়াইটে নাগাদ পরিতোষ লাঞ্চ করবার জন্য রেস্টুরেন্টে এসে খাবারের অর্ডার দিয়ে একটা টেবিলে বসে ভাবতে লাগল আব্দুল এখনও ফোন করছে না কেন। পরিকল্পনা মাফিক কাজ হলে তো অপারেশনটা বেলা একটার মধ্যেই শেষ হবার কথা। আর তার পর পরই সে আশা করছিল যে আব্দুল তাকে ফোন করে জানাবে পুরো কাজটা কিভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পরেও আব্দুলের কাছ থেকে কল না আসায় সে মনে মনে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিল।
 

মিনিট দশেক বাদে রেস্টুরেন্টের ওয়েটার যখন তার খাবার নিয়ে এল ঠিক তখনই তার ফোন বেজে উঠল। সে তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল আব্দুল ফোন করেছে। কলটা রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই ও’পাশ থেকে আব্দুল বলল, “নমস্কার স্যার। আমাদের কাজটা ভালোভাবে সারা হয়ে গেছে”।

পরিতোষ একটু ক্ষুব্ধ ভাবে বলল, “আম গত দেড় ঘণ্টা ধরে তোর ফোনের আশায় ছিলাম। এত দেরী করলি কেন ফোন করতে”?

আব্দুল বলল, “স্যার, আমার যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। কিন্তু স্যার, আমি ভেবেছিলাম, মালগুলোকে যত তাড়াতাড়ি কোলকাতা থেকে বিদেয় করা যায়, আমাদের পক্ষে ততই মঙ্গল। তাই ওদেরকে আমি শিয়ালদা থেকে ট্রেণে রওনা করে দিয়ে তবে আপনাকে ফোন করছি। আসলে স্যার ওরা কাজটা শেষ করে ষ্টেশনে এসেছে প্রায় পৌনে দুটোয়। আমি ওদের বেলা দুটো পনেরোর ট্রেনে উঠিয়ে দেব বলে আগে থেকেই টিকিট কেটে ষ্টেশনে অপেক্ষা করছিলাম। ওরা আসা মাত্র এক জায়গায় গিয়ে ওদের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দিতে হল। তারপর ওদের সবাইকে ট্রেনে চাপিয়ে ট্রেন ছাড়বার অপেক্ষা করছিলাম। ট্রেনটা প্লাটফর্ম ছেড়ে যেতেই আমি আপনাকে ফোন করছি। এইমাত্রই আমি ষ্টেশনের বাইরে বেরিয়ে এসেছি”।

পরিতোষ সব শুনে বলল, “কাজটা ঠিক মত হয়েছে তো? কোনরকম ঝামেলা হয়নি তো”?

আব্দুল বলল, “হ্যাঁ স্যার, আমরা যেমন প্ল্যান করেছিলাম কাজটা একেবারে ঠিকঠাক সেভাবেই করা হয়েছে। ওদের কাছ থেকে ব্যাগটা আমি নিয়ে নিয়েছি। সেটা আমার কাছেই আছে। কিন্তু স্যার আমি কি এখনই আপনার কাছে চলে আসব”?

পরিতোষ খানিকটা সহজ ভাবে বলল, “নারে আব্দুল। এখনই তোর সাথে দেখা করা সম্ভব হবে না। আসলে আজ অফিসে একটু বেশী ব্যস্ত আছি। সন্ধ্যে সাতটার আগে আজ বেরোতেই পারব না। তুই এক কাজ কর। ব্যাগটা আপাততঃ তোর বাড়িতেই নিয়ে যা। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আমি ওই জায়গায় চলে যাব। তুইও তখন ওখানে আসিস, ঠিক আছে”?

আব্দুল বলল, “ঠিক আছে স্যার। কোন সমস্যা হবে না। আমি ঠিক সময় সেখানে পৌঁছে যাব”।

পরিতোষ কথা শেষ করতে করতে বলল, “ঠিক আছে। সাবধানে রাখিস ব্যাগটা। রাতে দেখা হচ্ছে তাহলে” বলেই ফোন কেটে দিল।
 

******************

রাত ঠিক পৌনে আটটায় পরিতোষ মিষ্টি ভর্তি একটা বড় প্যাকেট হাতে নিয়ে বিট্টুদের বাড়ি এসে হাজির হল। বিট্টু সামনের দরজা খুলে পরিতোষকে দেখেই খুব খুশী হয়ে বলল, “দাদা আপনি? আসুন আসুন। আমি তো আপনার সাথে দেখা করবার জন্য উসখুস করছিলাম। আপনি তো আমায় ফোন করতে বারণ করেছেন। ভাবছিলাম এর মধ্যে দেখা না হলে রবিবার সকালেই আপনার বাড়ি চলে যাব”।

পরিতোষ ভেতরে ঢুকতে বিট্টু দরজা বন্ধ করে ঘুরে দাঁড়াতেই পরিতোষ বিট্টুর হাত ধরে বলল, “তোর জীবনের প্রথম চাকরির জন্য আমার তরফ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। এবার এই প্যাকেটটা নিয়ে মাসিমার হাতে দে। হ্যাঁরে, মাসিমার শরীর ভাল আছে তো”?

বিট্টুও পরিতোষের সাথে হ্যাণ্ডশেক করে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ দাদা। তবে সবটাই হয়েছে আপনার জন্য। চলুন, মা তার ঘরেই আছেন” বলেই পরিতোষের হাত ধরে ভেতরে যেতে যেতে উৎফুল্ল গলায় জোরে বলে উঠল, “মা ও মা, কোথায় তুমি? দ্যাখ পরিতোষদা এসেছেন”।

একটা ঘরের সামনে যেতেই ভেতর থেকে বিট্টুর মা বেরিয়ে এলেন। পরিতোষকে দেখেই তিনি খুব খুশী গলায় বলে উঠলেন, “তুমি এসেছ বাবা? খুব ভাল করেছ। চারদিন আগে থেকেই খোকাকে বলছিলাম একবার যেন তোমাকে ডেকে আনে। তোমার দয়াতেই তো ওর কপালে একটা কাজ জুটল। একটু তোমার মিষ্টিমুখ না করালে কি চলে বল তো”?
 

পরিতোষ বিট্টুর মাকে প্রণাম করে বলল, “মাসিমা, মিষ্টিমুখ করব বলেই তো এসেছি। কিন্তু আগে বলুন তো, আপনার শরীর ঠিক আছে তো”?

বিট্টুর মা মিষ্টি করে হেসে বললেন, “হ্যাঁ বাবা, ভাল আছি। তুমি বসো বাবা”।

পরিতোষ মিষ্টির প্যাকেটটা বিট্টুর মার হাতে দিতে বলল, “মাসিমা এটা নিন। আর আমাদের দু’ ভাইকে খেতে দিন। আর আপনিও খাবেন কিন্তু। আর হ্যাঁ, আমরা বরং বিট্টুর ঘরের গিয়ে বসছি। আপনি আমাদের তিনজনের জন্যই মিষ্টি নিয়ে আসুন ওখানে”।

বিট্টুর মা খুশী হয়ে বললেন, “ঠিক আছে বাবা, তাই যাও। আমিও আসছি”।

বিট্টু পরিতোষকে নিয়ে নিজের ঘরে এসে তাকে বিছানায় বসিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কলেজের চাকরিটা যে আমার হয়ে গেছে এটা আপনি জানলেন কিকরে দাদা? আমি তো আপনাকে খবরই দিতে পারিনি”।

পরিতোষ একটু হেসে বলল, “যেদিন তুই অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেয়েছিস সেদিনই তোদের প্রিন্সিপ্যাল হৈমন্তীদির সাথে আমার একটা মলে দেখা হয়েছিল। তিনিই বললেন আমাকে। আমিও একটু ব্যস্ত ছিলাম বলে এখানে আসতে পারিনি ক’টা দিন। আজ সুযোগ হল বলে চলে এলাম। তা বল দেখি। দিন চারেক তো পার হয়ে গেছে। কেমন লাগছে টিচারের চাকরি? করতে পারবি তো ভাল করে”?

বিট্টু বলল, “পারব দাদা নিশ্চয়ই পারব”।

পরিতোষ বিট্টুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “ভাল করে কাজ করবি। আর ভাল টিচার হতে গেলে আগে কিন্তু নিজেকে উপযুক্ত টিচার করে তুলতে হবে। স্টুডেন্টদের সব কিছু ভালভাবে তখনই বোঝাতে পারবি যখন তুই নিজে বিষয়গুলো ভালভাবে বুঝতে পারবি। আর কোনরকম উল্টোপাল্টা কাজ করবি না। মনে রাখিস তুই কিছু উল্টোপাল্টা করলে তোর সাথে সাথে কিন্তু আমার সম্মানটাও যাবে। এ’কথাটা মাথায় রাখিস। আর ভাল ভাল চাকরির ইন্টারভিউ দিতে থাক। বেটার জব পেলে না হয় এটা ছেড়ে দিবি। তবে তোর প্রিন্সিপ্যাল সেদিন যা বলল তাতে মনে হয় সামনের বছরই তোদের বেতন বাড়িয়ে দেবে কলেজের ম্যানেজিং কমিটি। তবে মন দিয়ে কাজটা করতে হবে”।

বিট্টুর মুখ চোখের চেহারাই বলে দিচ্ছিল যে আগের চেয়ে অনেক বেশী খুশী হয়েছে। পরিতোষের কথা শুনে বিট্টু বলল, “আপনি ভাববেন না দাদা। আমি মরে গেলেও এমন কিছু করবনা যাতে আপনার কোন ক্ষতি বা অসম্মান হয়। আত্মীয় স্বজন তো কতই আছে আমাদের। কিন্তু বিপদের দিনে কেউ আমাদের দিকে চোখ তুলে পর্যন্ত চায় নি। শুধুমাত্র প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আপনাকেই আমাদের মা ছেলের পাশে পেয়েছি। আমাদের জন্য আপনি যা করেছেন তার এক কনাও কেউ কখনও করেনি। তাই আপনার সম্মান আপনার খুশী আমার কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আমার জন্যে আপনাকে কখনও ছোট হতে হবে না দাদা”।

পরিতোষ বিট্টুর মাথায় সস্নেহে হাত বুকিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যাঁ এ কথাটাই মনে রাখিস সব সময় ভাই। আর মাসিমার দিকে খেয়াল রাখবি। কোন কিছু প্রয়োজন হলে কোন রকম দ্বিধা না করে আমাকে জানাবি। মনে রাখিস মা-র মত আপনজন এ পৃথিবীতে আর কেউ হয় না। সব সময় মার সুখ সুবিধে চিকিৎসার প্রতি নজর রাখবি”।

বিট্টু পরিতোষের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে বলল, “তাই করব দাদা। আপনি শুধু আমাকে আশীর্বাদ করুন আমি যেন আপনার মত হতে পারি”।

পরিতোষ বিট্টুর মাথায় আগের মতই হাত রেখে বলল, “মানুষের মনটা যদি ঠিক থাকে তাহলে তারা কেউ কখনো খারাপ হয় না রে। আর আমার কথা বলছিস? আমি এমন কি করেছি? নিজের মাকে তো জন্মাবার পরেই হারিয়ে বসেছি। তার মুখটাও আমার মনে নেই। শুধু বাবাকে দেখেছি। কিন্তু বাবার জন্যেও আমি কিছুই তেমন করতে পারিনি। আর বাবা চলে যাবার পর থেকে আমার তো তিনকুলে আর কেউ নেই। তাই আমার আশেপাশে যাদের দেখি তাদের সবাইকে সুখে থাকতে দেখলেই আমি খুশী হই”।

বিট্টুর মা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, “আমার ছেলেটাকে তুমি আশীর্বাদ কর বাবা। ও-ও যেন তোমার মত ওর আশেপাশের সকলকে খুশীতে রাখতে পারে”।

বিট্টু উঠে গিয়ে মা-র হাত থেকে ট্রেটা এনে বিছানার ওপরেই নামিয়ে রেখে মাকে বিছানাতেই বসিয়ে দিল। বিট্টুর মা পরিতোষের হাতে প্লেট তুলে দিয়ে বলল, “নাও বাবা। তোমার আনা মিষ্টিই তোমাকে খাইয়ে গঙ্গা জলে গঙ্গাপুজো করতে হচ্ছে আমাকে। কিছু মনে কোর না। আমাদের হাতে যা আছে তা তো আমার ওষুধ আর চিকিৎসার পেছনেই খরচ হয়ে যাচ্ছে। খোকা বেতন না পাওয়া অব্দি নিজে থেকে তোমাকে কিছু দিতে পারব না”।
 

পরিতোষ প্লেটটা হাতে নিয়ে বলল, “মাসিমা আপনি একদম ভাববেন না। চাকরী একটা তো জুটেছে। এবার অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন তো নিশ্চয়ই হবে। আর তাছাড়া আমি তো আছিই। আমিও তো আপনার ছেলের মতই। আমার তো আর তিনকুলে কেউ নেই। যা বেতন পাই সে পয়সা খরচ করবার জায়গাও নেই আমার। আপনি শুধু দেখবেন আপনার খোকা যেন কখনও মানুষের ক্ষতি না করে”।

গল্পকথায় খেতে খেতে রাত প্রায় সাড়ে আটটা হতে চলল। বিট্টুর মা অন্য ঘরে চলে যেতেই পরিতোষ বিট্টুকে বলল, “বিট্টু আমি এখন পেছনের ঘরে গিয়ে একটু বসব রে। দু’জন আসবে আমার সাথে দেখা করতে। পেছনের দরজায় কেউ কড়া নাড়লে একটু খুলে দিস ভাই”।

বিট্টু বলল, “হ্যাঁ দাদা। কোন অসুবিধে নেই। আমি তো এখানেই থাকব”।

পরিতোষ পেছনের ঘরে এসে আব্দুলকে ফোন করে তাকে আসতে বলল। মিনিট দশেক বাদেই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আব্দুল এসে হাজির। আব্দুল টেবিলের উল্টোদিকে একটা চেয়ারে বসতেই পরিতোষ বলল, “এবার তুই ডিটেইলস খুলে বল তো শুনি”।

আব্দুল ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে বলল, “ওরা পৌনে দশটায় রবিশঙ্করের ঘরে গিয়ে ঢুকেছিল। আর যেভাবে প্ল্যান করেছিলাম সেভাবেই সবকিছু করে বেলা একটায় সে বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে। তারপর শিয়ালদা ষ্টেশনে আমার সাথে দেখা করল প্রায় পৌনে দুটো নাগাদ। আমি ওদের ট্রেনের টিকিট নিয়ে সেখানেই ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ওরা আসতেই আমি ওদেরকে নিয়ে একটা ঘাঁটিতে চলে গিয়েছিলাম। সেখানে সব কিছু শুনে ওদের প্রত্যেককে এক এক লাখ টাকা দিয়ে ট্রেণে তুলে দিয়েছি। ওরা এতক্ষণে বোধহয় উড়িষ্যায় ঢুকে গেছে”।

পরিতোষ মন দিয়ে সব শুনে বলল, “হু, ঠিক আছে। তা এই ব্যাগে কি এনেছিস? ওই হ্যাণ্ডিক্যামটা? না অন্য কিছু”?

আব্দুল ব্যাগের চেন খুলতে খুলতে বলল, “হ্যাঁ হ্যান্ডিক্যামটা তো আছেই। আর আছে ন’ লাখ টাকা। সব পাঁচশ আর হাজার টাকার নোট। মোট চৌদ্দ ছিল। সেখান থেকেই পাঁচ ওদের পাঁচজনকে দিয়ে বিদেয় করেছি। এখানে নয় আছে”।
 

পরিতোষ বলল, “হ্যান্ডিক্যামটা ব্যাগের ভেতরেই ভরে রাখ আপাততঃ আর এখান থেকে এক লাখ এক জায়গায় কর। আর চল্লিশ হাজার করে দুটো ভাগ কর। আর একটা ভাগে তিন লাখ বাষট্টি হাজার রাখ। আর একটা ভাগে শুধু আট হাজার রাখ। তারপর বাকি টাকাটা গুনে দ্যাখ সেখানে সাড়ে তিন লাখ থাকে কি না” বলে একটা সিগারেট ধরিয়ে খেতে শুরু করল।

পরিতোষের নির্দেশ অনুযায়ী টাকা গুলো আলাদা আলাদা ভাগে ভাগ করবার পর বাকি টাকাটা গুণে বলল, “হ্যাঁ স্যার, এখানে আর সাড়ে তিন লাখই রইল”।

পরিতোষ সিগারেটের টুকরোটা অ্যাশট্রেতে ফেলে দিয়ে বলল, “এবার প্যাকেটগুলো আলাদা আলাদা করে গার্ডার লাগা। তারপর সাড়ে তিন লাখ টাকার বাণ্ডেল আর একটা চল্লিশ হাজারের বাণ্ডেল ব্যাগে ঢুকিয়ে দে”।

আব্দুল সেটা করতেই পরিতোষ চল্লিশ হাজারের আরেকটা বাণ্ডেল আর এক লাখ টাকার বাণ্ডেলটা আব্দুলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এ দুটো তুই নিয়ে যা। তোর ইনফর্মারদের জন্য চল্লিশ হাজার দিলাম আর এক লাখটা প্রীতিদিকে দিবি, বুঝেছিস? ওটা আসলে তোর পারিশ্রমিক। তুই যে নিবি না সেটা জানি বলেই প্রীতিদির আর আপ্রীতের নামে ওটা দিলাম। প্রীতিদিকে বলিস এটা আমি তাকে দিয়েছি”।

আব্দুল অনেকক্ষণ হতভম্বের মত পরিতোষের দিকে চেয়ে থেকে অবাক গলায় বলল, “স্যার এটা কি ঠিক হচ্ছে? আপনার এই সামান্য একটা কাজ করে দিয়েছি বলে এতগুলো টাকা আমাকে দেবেন আপনি”?

পরিতোষ একটু হেসে বলল, “দ্যাখ আব্দুল প্রত্যেকটা লোকেরই পরিশ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাবার অধিকার আছে। আর আমার তো সব মিলিয়ে সাড়ে বারো লাখ টাকা পেলেই হয়ে যেত। সেখানে তোর টিমের লোকেরা চৌদ্দ লাখ এনেছে। তাই কিছু বাড়তি হয়ে গেল বলেই এমনটা করছি। আর তুই তো জানিস আমি নিজে এর একটা পয়সাও নেব না। যার কাজটা করলাম তার কাছ থেকে রবিশঙ্কর দু’লাখ টাকা লুঠ করেছিল। ওই সাড়ে তিন লাখ টাকাটা তাদের জন্য রইল আমার কাছে। আর আমার অন্যান্য ইনফর্মারদের পঁচিশ হাজার দেবার কথা ছিল। বাড়তি হল বলেই ওরাও চল্লিশ হাজার টাকা পাচ্ছে। আর অন্যগুলো যে টিমটা ভিডিও রেকর্ডিং আর সিডির কাজ করেছিল তাদের দিতে হবে এই তিন লাখ বাষট্টি হাজার। শুধু এই আট হাজার এ বাড়ির ছেলেটাকে দিয়ে যাব। ওদের কাছ থেকেও বিনে পয়সায় সার্ভিস নেওয়া তো ভাল দেখায় না। তুই যে আমার কাছ থেকে কিছু নিতে চাইবি না, এ কথা তো আমি আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু আগে ভেবেছিলাম প্রীতিদিকে পঞ্চাশ হাজার দেব। কিন্তু সাড়ে বারোর জায়গায় চৌদ্দ এনেছিস বলেই প্রীতিদিকে এক লাখ দিলাম। তোর গ্যারেজ করবার কাজে লেগে যাবে টাকাটা। আর হ্যাঁ শোন। তোর ট্রেডিং লাইসেন্সের কাজটা বোধহয় হয়ে গেছে। কাল পরশুর মধ্যে একবার গিয়ে দেখিস। হয়ত সেটা পেয়ে যাবি। আচ্ছা শোন। আর কথা না বলে তুই এ গুলো নিয়ে চলে যা। আমার আরেকটা খুব জরুরী কাজ আছে তাই আমিও এখনই বেরিয়ে যাব”।

আব্দুল টাকার বাণ্ডিলদুটো পকেটে পুরতে পুরতে বলল, “জানিনা প্রীতি আমাকে গালমন্দ করবে কি না। কিন্তু স্যার, প্রীতি যে কথাটা বলেছিল, সে ব্যাপারে তো এখনও কিছু বললেন না আপনি! আপনি আসবেন তো আপনার ভাগ্নের অন্নপ্রাশনে”?

পরিতোষ হেসে বলল, “প্রীতিদির কথা কি আমি ফেলতে পারি রে? তোরা আমাকে জানিয়ে দিস কবে যেতে হবে। আমি ঠিক চলে যাব। তবে দু’একদিন আগে অবশ্যই জানাবি। নইলে কোন কাজে আঁটকে যেতে পারি”।
 

আব্দুল হাতজোড় করে নমস্কার করে “আচ্ছা স্যার” বলে বেরিয়ে গেল। পরিতোষ প্রায় সাথে সাথেই শেখরকে ফোন করে বলল, “তাড়াতাড়ি চলে আয় এখানে। আমি তোর জন্যেই এখানে অপেক্ষা করছি”।

মিনিট পনের বাদেই পেছনের গেটে আবার শব্দ হতেই বিট্টু গিয়ে গেট খুলে দিল। শেখর ঘরে এসে ঢুকতেই পরিতোষ বলল, “অপারেশনটা খুব ভাল ভাবে শেষ হয়ে গেছে। তোর বিলের পেমেন্টটা দেবার জন্যেই তোকে ডেকেছি আজ” বলে তিনলাখ বাষট্টি হাজারের বান্ডিলটা শেখরের হাতে দিয়ে বলল, “এতে মোট তিন লাখ বাষট্টি হাজার আছে। তোর সাকরেদদের যাকে যা দেবার দিয়ে এক লাখ তুই রেখে দিবি তোর জন্য”।

শেখর টাকার বাণ্ডেলটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “জানি স্যার, আপনাকে বলেও কোন লাভ হবে না। তবু বলছি, এক লাখ টাকা কম দিলেই আমি খুশী হতাম। আপনার একটা কাজ করে দিয়ে তার বিনিময়ে টাকা নিতে আমার ভাল লাগে না। কিন্তু আপনি তো শুনবেন না জানি। তাই ঠিক আছে, আপনি যা দিচ্ছেন, তাই নিচ্ছি”।

পরিতোষ বেশী কিছু না বলে ব্যাগটা নিজের কাঁধে নিতে নিতে বলল, “আজ আর বসতে পারছিনা রে। আমাকে এখনই বেরোতে হবে। তুইও বেরিয়ে যা, পরে কথা হবে” বলে বিট্টুকে ডাকল।

বিট্টু এসে দাঁড়াতেই পরিতোষ তার হাতে আট হাজার টাকার প্যাকেটটা দিয়ে বলল, “শোন ভাই, এটা তোর কাছে রাখ। মাসিমাকে দুটো ভাল শাড়ি কিনে দিবি। আর বাকিটা তোর কাছে রাখবি। আর মাসিমার ওষুধপত্র যেন বাদ না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখিস। আর শোন, আমরা দু’জন এখন পেছনের গেট দিয়েই বেরিয়ে যাচ্ছি। একটা জরুরী কাজে যেতে হচ্ছে আমাকে। তুই পেছনের গেটটা আঁটকে দিয়ে যা ভাই। আর মাসিমাকে বলিস পরে আরেকদিন এসে রাতে ভাত খেয়ে যাব। কেমন? আর মন দিয়ে কাজ করিস। পরে আবার দেখা হবে” বলে শেখরকে নিয়ে পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল।
 

পেছনের গলিটা দিয়ে বেরিয়েই শেখর পরিতোষের অনুমতি নিয়ে একদিকে চলে গেল। আর পরিতোষ অন্য দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে রাস্তার ধারে পার্ক করে রাখা তার গাড়িতে উঠে একদিকে গাড়ি চালিয়ে দিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তার গাড়িটা একটা জিমন্যাসিয়ামের সামনে এসে থাকল। পরিতোষ গাড়ি লক করে ভেতরে ঢুকে লকার রুমে চলে গেল। পকেট থেকে একটা চাবি বের করে একটা লকার খুলে ব্যাগ শুদ্ধ লকারে ভরে দিয়েই সে জিমন্যাসিয়ামের পোশাক পড়ে ভেতর ঢুকে গেল। ঘণ্টাখানেক বাদে পোশাক পাল্টে সে জিমন্যাসিয়াম থেকে বেরিয়ে গাড়ি চালিয়ে রেস্টুরেন্টে এসে থামল।

রেস্টুরেন্টে বসে খেতে খেতে এক কলিগের ফোনে জানতে পারল যে রবিশঙ্কর প্রসাদকে এরেস্ট করা হয়েছে। আর সুখলাল যাদব আর দিবাকর মিশ্র নামে রবিশঙ্করের দুই সহযোগী আছে। এই দিবাকর প্রসাদ সপ্তাহ দুয়েক আগে একটা চোরাই গাড়ি কেনার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিল। গত সপ্তাহেই নাকি সে জামিনে ছাড়া পেয়েছিল। কিন্তু আজই আবার তাকে এবং সুখলাল যাদবকে নতুন এই কেসে অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ অ্যারেস্ট করেছে। মনে মনে খুশী হয়ে ডিনার করে বেরিয়েই নিজের বাড়ির দিকে গাড়ি ছুটিয়ে দিল। ঘরে এসে যখন ঢুকল তখন রাত প্রায় বারোটা। এত রাতে সীমন্তিনীকে ফোন করা ঠিক হবে না ভেবে সে বিছানায় শুয়ে পড়ল।

****************
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 06-03-2020, 07:09 PM



Users browsing this thread: