06-03-2020, 07:04 PM
(Update No. 110)
রেস্টুরেন্টের দোতলায় একটা কেবিন বুক করে রেখেছিল পরিতোষ। নবনীতার সাথে মন খুলে সব কথা বলা যাবে ভেবেই কেবিন বুক করেছে সে। সকাল থেকেই তার মনটা বড় ছটফট করছিল। বার বার ঘড়ির দিকে দেখে মনে হচ্ছিল ঘড়ি বুঝি চলছে না। অফিস থেকে সে দেড়টা নাগাদ বেরিয়ে পড়ল। রেস্টুরেন্টের সামনে এসে পৌঁছল পৌনে দুটো নাগাদ। গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়েই সে চারপাশে তাকিয়ে দেখল। না নবনীতাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি লক করে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল নীল শাড়ি ব্লাউজ পড়া নবনীতা কাউন্টারে বসে থাকা রিসেপশনিস্টের সাথে কথা বলছে। সে তাড়াতাড়ি কাউন্টারের দিকে এগোতেই কাউন্টারে বসা মেয়েটি হাতের ইশারায় তাকে দেখিয়ে দিতেই নবনীতা ঘুরে তাকাল। পরিতোষ ততক্ষণে নবনীতার সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, “কতক্ষণ এসেছ”?
নবনীতা সাবলীল ভাবে জবাব দিল, “এই তো জাস্ট এলুম”।
পরিতোষ রিসেপশনিস্ট মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কত নাম্বার রেখেছ আমার জন্যে”?
রিসেপশনিস্ট মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, “স্যার আপনি তো এসি কেবিন চেয়েছিলেন। ওপরের দু’শ চার নাম্বার”।
পরিতোষ মেয়েটাকে বলল, “দীপুদা কোথায়? দেখছি না তো”?
মেয়েটি হেসেই বলল, “উনি বাড়িতে লাঞ্চ করতে গেছেন স্যার। তবে আমাকে বলে গেছেন। আপনারা যতক্ষণ খুশী বসতে পারেন সেখানে। লাঞ্চ কি এখনই সার্ভ করে দেব স্যার”?
পরিতোষ বলল, “হ্যা, লাঞ্চটা পাঠিয়ে দাও আগে। আমাদের মিটিং লাঞ্চের পরই করব ভাবছি”।
মেয়েটি বলল, “ওকে স্যার, আপনারা কেবিনে গিয়ে বসুন”।
পরিতোষ নবনীতাকে ঈশারা করে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। দোতলার কেবিনে এসে বসেই নবনীতা প্রশ্ন করল, “এ রেস্টুরেন্টের রিসেপশনিস্ট ম্যানেজার সবাই তোমায় চেনে বুঝি”?
পরিতোষ ওপরের ঘুরন্ত সিলিং ফ্যানের দিকে দেখে বলল, “হ্যা, তা বলতে পার। আসলে প্রায় রোজই তো এখানে লাঞ্চ ডিনার করতে আসি, তাই”।
নবনীতা নিজের মুখের ঘাম মুছতে মুছতে পরিতোষের দিকে অবাক চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি রোজ এখানে এসে লাঞ্চ ডিনার করো”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “আর তো কোন উপায় নেই। সকাল ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। আর রাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কম করেও রাত দশটা বেজে যায়। রান্না বান্না করার মত সময়টা কোথায় পাই”।
নবনীতা আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কেন বাড়িতে আর কেউ নেই? তোমার স্ত্রী....”
পরিতোষ নবনীতার কথার মাঝে হেসে উঠেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যা, একজনকে স্ত্রী করে আনব বলেই তো ভেবেছিলুম। কিন্তু তা আর হল কই”?
পরিতোষের কথা শেষ হতে না হতেই একজন উর্দিপড়া বেয়ারা স্যুপ নিয়ে ঘরে ঢুকতেই পরিতোষ তাকে বলল, “এই রুপু, এসি কাজ করছে না কেন রে? খারাপ হয়েছে”?
বেয়ারাটা স্যুপের বাটি টেবিলে রাখতে রাখতে বলল, “হ্যা স্যার, এ কেবিনের এসিটা খারাপ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সকালেই তো সারানো হল। দাঁড়ান, আমি দেখছি”।
পরিতোষের জবাব শুনে নবনীতার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। এ কী বলছে পরিতোষ? সে এখনও কাউকে বিয়ে করেনি?
বেয়ারাটা কেবিনের এক কোনায় গিয়ে কয়েক সেকেণ্ড বাদেই ঘুরে এসে বলল, “স্যার, এসির সুইচটা অফ ছিল। আমি চালিয়ে দিয়েছি। আর সমস্যা হবে না”।
বেয়ারাটা বেরিয়ে যেতেই পরিতোষ স্যুপের দিকে ঈশারা করে বলল, “নাও, খাও”।
নবনীতা এক চামচ স্যুপ মুখে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমার একমাত্র চিঠিটা কি তোমার কাছে পৌঁছোয় নি? তোমার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়েছিলুম। ঠিকানা তো ভুল হবার কথা ছিল না”?
পরিতোষও স্যুপ খেতে খেতেই জবাব দিল, “চিঠিটা ঠিকানায় এসে পৌঁছেছিল ঠিক সময়েই। কিন্তু আমি তো তখন বাড়ি ছিলাম না। বাড়িতে অন্য কেউও ছিল না। আমি তখন হায়দ্রাবাদে আড়াই বছরের ট্রেনিঙে ছিলুম। ট্রেনিং শেষে আমার পোস্টিং হয়েছিল অন্ধ্রতেই। ভাইজ্যাগে। ট্রেনিং শেষে একবার একদিনের জন্য বাড়ি এসেছিলাম কিছু জিনিস পত্র নিতে। তখন লেটার বক্সে তোমার চিঠিটা পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। কবে লিখেছিলে, সে তারিখ চিঠিটায় ছিল না। তবে সেটা আমি পেয়েছিলুম ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে”।
নবনীতা আনমনে স্যুপ খেতে খেতেই জবাব দিল, “ও তারিখ দিই নি বুঝি? আসলে তখন তো মাথার ঠিক ছিল না। তাই হয়ত তারিখটা লিখতে ভুলে গিয়েছিলুম। তা চিঠিটা দেরীতে হলেও তোমার হাতে তো পড়েছিল। সে চিঠিতে তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করেছিলুম আমি। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, আমার সে অনুরোধটা রাখো নি তুমি”?
পরিতোষ একটু ম্লান হেসে বলল, “তোমার কোন কথাটা আমি কবে অমান্য করেছি বল তো? ন’ বছর আগেও যেমন তা করিনি, আজও সেটা করছি না। এই তো, গত পরশু দিনের ঘটণাটাই ধর না। পুরোন অভ্যেস মতই তোমাকে সেদিন ‘বনি’ বলে ডেকে ফেলেছিলুম। কিন্তু তোমার হয়ত সেটা ভাল লাগেনি। তুমি বারণ করলে ও নামে তোমাকে ডাকতে। তারপর থেকে তো একবারও তোমাকে আমি ও নামে ডাকিনি”।
নবনীতা মাথা নিচু করে এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করল, “আমিও আশা করেছিলুম, যে কষ্ট হলেও আমার চিঠির কথাগুলো তুমি মেনে নেবে। আমিও তো গত সাতটা বছর ধরে মনে মনে এ’কথা ভেবেই খুশী থাকবার চেষ্টা করেছি, যে তুমি আমার অনুরোধটা নিশ্চয়ই রেখেছ। কিন্তু সেটা সত্যি হলে আজ তোমাকে রেস্টুরেন্টে এসে লাঞ্চ ডিনার করতে হবে কেন”?
পরিতোষ আগের মতই ম্লান হেসে জবাব দিল, “তোমার সে অনুরোধটাও রাখবার চেষ্টা যে করিনি তা তো নয়। কিন্তু কথায় আছে না? বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে না। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। জীবনের প্রথম এবং একমাত্র ভালবাসার পাত্রিটিকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেও তোমার কথা মেনেই অন্য আরেকটি মেয়েকে মনে মনে পছন্দ করেছিলাম একটা সময়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তা, সে’সব কথা বলতে গেলে তো অনেক কিছুই বলতে হবে। নইলে তুমি ঠিক বুঝতে পারবে না। ব্যাপারটা একটু কমপ্লিকেটেড”।
নবনীতা কৌতূহলী হয়ে বলল, “আমি জানতে চাইলেও বলবে না”?
পরিতোষ বলল, “বলব না, কখন বললাম? আমি তো বলছি যে সে ঘটণাটা তোমাকে বলে বোঝাতে গেলে এই লাঞ্চ টাইম সাক্ষাতের সময়টুকু যথেষ্ট নয়। আর রেস্টুরেন্টের কেবিনে অত সময় বসে থাকাটাও সম্ভব নয়”।
নবনীতা তবু অনুরোধের সুরে বলল, “খুব ডিটেইলসে না গিয়ে যতটা সম্ভব সংক্ষেপে বল না প্লীজ”।
এমন সময়ে দু’জন বেয়ারা একসাথে কেবিনে ঢুকে তাদের খাবার পরিবেশন করে গেল। দু’জনে খেতে শুরু করতে পরিতোষ বলল, “তোমাকে হারাবার প্রায় দু’বছর বাদে আমি যখন ভাইজ্যাগে পোস্টেড ছিলুম তখন হায়দ্রাবাদে পুলিশ ট্রেনিং একাডেমীতে গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে যেতে হয়েছিল আমাকে কয়েকবার। সেটা ২০০৯ সালের ঘটণা। নতুন আইপিএস অফিসারদের প্রিলিমিনারি ট্রেনিং ছিল সেটা। সে ব্যাচে ফ্যাকাল্টি হিসেবে ক্লাস নিতে গিয়েই সীমন্তিনীকে আমি প্রথম দেখেছিলাম। মেয়েটা গোটা ব্যাচের ভেতর সবচেয়ে বুদ্ধিমতী ছিল। ওর ভাবভঙ্গী চলাফেরা কথা বার্তা আচার ব্যবহার দেখে তোমাকে হারিয়ে ফেলবার দুঃখ ভুলতে আমি ধীরে ধীরে ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু নিজের মনকে সংযত রেখে, তার সাথে ভাব ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলবার আগেই, একদিন একাডেমীর ক্যান্টিনে লাঞ্চ করবার সময় আমি তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেছিলাম। মেয়েটা আমার কথা শুনে খুব শান্তভাবে জবাব দিয়েছিল যে তার পরিচিত সকলেই তাকে অবিবাহিতা বলে জানলেও খুব ছোটবেলাতেই সে নাকি একজনকে ভালবেসে মনে মনে তাকে তার স্বামীর আসনে বসিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তার প্রেমিক তার এমনই ঘণিষ্ঠ এক আত্মীয় ছিল যে সামাজিক ভাবে তাকে বিয়ে করা তো দুর, অমন সম্পর্কের কথা কেউ ভাবতেও পারবে না। তাদের একান্নবর্তী পরিবারের বড়রা সকলেই তাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েও, অনেক মারধোর করেও তাকে নিরস্ত করতে পারেনি। তাই সে তার বাড়ি ঘর আত্মীয় স্বজন সকলের কাছ থেকে দুরে সরে গেছে। তার নিজের সেই প্রেমিকের কাছ থেকেও। কিন্তু এখনও সে নিজেকে একজন বিবাহিতা মেয়ে বলেই ভাবে। আর সারা জীবন সে তার ওই আত্মীয় ছেলেটিকেই নিজের স্বামী বলে পূজো করে যাবার পণ করেছে। তাই অন্য কোনও পুরুষকে বিয়ে করা তো দুরের কথা, তেমন কথা কল্পনা করাও তার পক্ষে অসম্ভব”।
বলে একটু থেমে আবার বলল, “আমি নিজেও তো একজনকে কোনও এক সময় ভাল বেসেছিলাম। মনে মনে ভাবতাম, আমার ভালবাসায় কোন খাঁদ ছিল না, কোনও খুঁত ছিল না। কিন্তু সে ভালবাসাকে আমি খুব বেশীদিন আগলে ধরে থাকতে পারিনি। আর সীমন্তিনী! আজও সে তার ছোটবেলার প্রেমিককেই তার মনে স্বামীর আসনে বসিয়ে রেখেছে। কিন্তু কি মজার ব্যাপার দেখ, আমার সাথে তার পরিচয় হবার কয়েক মাস আগেই সে তার প্রেমিকের সাথে আরেকটি মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাকে সংসারী করে তুলেছে। কিন্তু দুরে থেকেই তার প্রেমিক আর তার স্ত্রীর সব সুখ স্বাচ্ছন্দের প্রতি সে নজর রেখে চলছে। আজও সে তাই করে যাচ্ছে। এখনও তার ধ্যান জ্ঞান, তার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য সব কিছুই তার ওই প্রেমিকই। আর প্রেমিকের স্ত্রীটিকেও সে নিজের ছোটবোনের মত ভালবাসে। আর তাদের দু’জনের জন্য সে নিজের প্রাণটুকু পর্যন্তও হাসিমুখে বিসর্জন দিতে পারে। এমনভাবে যে কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে তা সীমন্তিনীকে না দেখলে আমি বিশ্বাসই করতে পারতুম না। সেদিনই যেন আমি প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, সত্যিকারের ভালবাসা কী। আমার প্রস্তাব সে সাদরে অস্বীকার করলেও আমার অনুরোধে সে আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেছে সেদিন থেকে। তার ভালবাসাকে আমি শ্রদ্ধা না জানিয়ে থাকতে পারিনি। আমাদের মধ্যে এখনও নিয়মিত ফোনে কথা হয়। আজও সে আমার পাশে আমার পরম বন্ধু হয়ে আছে”।
পরিতোষের কথা শুনতে শুনতে নবনীতা তার খাওয়া থামিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। পরিতোষ এক গ্রাস খাবার খেয়ে বলল, “কাউকে ভালবাসা এক কথা, আর কারুর ভালবাসা কেড়ে নেওয়া আরেক কথা। সীমন্তিনীর ভালবাসা কেড়ে নিয়ে তার ভালবাসাকে অসম্মান করতে পারিনি আমি। তাই আমরা একে অপরের বন্ধু হয়েই আছি”।
একটু থেমে হতভম্ব নবনীতার মুখের দিকে তাকিয়ে পরিতোষ বলল, “খাবার যে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তোমার, সেদিকে খেয়াল আছে”?
নবনীতা সচেতন হয়ে খাওয়া শুরু করল। অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না। একসময় নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “তার বয়স কেমন? আমার থেকে বড়? আর সে কি কলকাতাতেই আছে”?
পরিতোষ জবাব দিল, “না তার পোস্টিং এখান থেকে অনেক দুরে। ডুয়ার্সে। তার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছে প্রায় বছর দুয়েক আগে। আর বয়সে সে তোমার থেকে বছর তিনেকের মত বড়”।
নবনীতা মনে মনে আবার কিছুক্ষণ ভেবে জিজ্ঞেস করল, “সীমন্তিনীদি কাকে ভালবাসতো”?
পরিতোষ প্রায় সাথে সাথে জবাব দিল, “বাসতো নয়। এখনও ভালবাসে। আর সে ভালবাসা যে কতটা পবিত্র কতটা তীব্র সেটা মাপবার মত মাপকাঠি খুঁজেও পাওয়া যাবে না। তার প্রেমিকের পরিচয় তার বাড়ির লোকেরা বাদে শুধু আমিই জানি। একমাত্র আমাকেই সে সেটা জানিয়েছে। কিন্তু শপথ ভেঙে তার পরিচয়টা তোমাকে জানাতে পারব না আমি। আমায় ক্ষমা কোর। আশা করি, আমি যে কাউকে দেওয়া কথার অন্যথা কখনো করিনা, এটা তোমার জানা আছে”।
নবনীতা একটু একটু করে খেতে খেতে মনে মনে আরও কিছু ভাবতে লাগল। পরিতোষও আনমনে নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছিল। একসময় নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “সীমন্তিনীদির সাথে কি আমি দেখা করতে পারি একবার”?
পরিতোষ একটু অবাক হয়ে জবাব দিল, “তুমি তার সাথে দেখা করতে চাও? কিন্তু কেন? তার সাথে দেখা করে তোমার তো কোনও লাভ হবার কথা নয়”!
নবনীতা শান্তভাবে বলল, “লাভ ক্ষতির অঙ্ক কষাকষির পালা তো কবেই শেষ হয়ে গেছে। এখন তো শুধু দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার সংঘর্ষ। কিন্তু ভালবাসার লোকটাকে দুরে সরিয়ে দিয়েও কী করে তাকেই আজীবন ভালবেসে যাওয়া যায়, তার কাছ থেকে এ শিক্ষাটা নিতুম। নিজের প্রেমিককে অন্য আরেকটা মেয়ের হাতে তুলে দিয়েও যে এখনও তার প্রেমিকের জন্য সর্বস্য ছেড়ে দিতে পারে, সে তো বিশাল বিরাট একটা মনের মানুষ। এমন একজন মহীয়ষী নারীকে চাক্ষুষ দেখতে ইচ্ছে করছে। অনেকেই তো ভালবাসার সাথে সাথে ভালবাসার মানুষটিকেও হারিয়ে ফেলে। আর তোমার সীমন্তিনী সবকিছু দুরে সরিয়ে দিয়েও কি অদ্ভুত ভাবে সব কিছু আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে! ভালবাসার কতটা জোর থাকলে এমনটা করা সম্ভব সেটা তো আমি আন্দাজও করতে পারছি না”।
পরিতোষ বলল, “ঠিক বলেছ তুমি। তাই তো আমাকে ফিরিয়ে দিলেও সে আমার কাছ থেকে দুরে সরে যায়নি। আজ তোমাকে ‘বনি’ বলে ডাকার অধিকারটুকুও তুমি আমাকে দিচ্ছ না। কিন্তু সীমন্তিনী! তার প্রেমিক তাকে যে নামে ডাকত আমাকেও সে নামে ডাকবার অনুমতি দিয়েছে। অবশ্য আমার যখন যেটা মনে আসে, সে নামেই তাকে ডাকি। ডার্লিং, প্রেয়সী, মুন ডার্লিং, মন্তি সোনা আরও কত কী। মন্তি কোন সম্মোধনেই রাগ করে না। সে সেগুলোকে শুধুই বন্ধুত্বের সম্ভাষণ বলে ভাবে। আর আমিও জানি যে মুখের সমস্ত সম্মোধন মেনে নিলেও, পরম বন্ধুর মত আমার পাশে থাকলেও, সে কখনই আমার জীবনের সাথে জড়াবে না। আর আমিও সেটাই মেনে নিয়েছি। তাকে বন্ধু বলে ভেবেই খুশী আছি। কিন্তু তোমার সাথে তার কখনও দেখা হবে কি না, সেটা কি করে বলি বলো। সে থাকে এখান থেকে প্রায় পাঁচ’শ মাইল দুরে। ট্রেনে কলকাতা থেকে সেখানে যেতে প্রায় তের চৌদ্দ ঘন্টা সময় লেগে যায়। সে কলকাতায় থাকলে বা কাছাকাছি কোথাও থাকলেও হয়ত একটা সম্ভাবনা থাকত”।
নবনীতা মাথা নিচু করে বলল, “তোমার সীমন্তিনীর মত মহীয়ষী তো আমি হতে পারব না পরি। আমার ভালবাসার অত জোরও নেই। কিন্তু আমি মনে মনে আমার ভালবাসাকে কোনভাবে কলুষিত করতে চাই নি। এখনও চাই না। কিন্তু তোমার মন্তির মত আমিও চাই, তুমি কাউকে বিয়ে করে সংসারী হও। তাই তার সাথে আমার একবার দেখা হওয়াটা খুব প্রয়োজনীয়”।
পরিতোষ বলল, “সেটা একমাত্র তখনই সম্ভব, যদি সে কখনও কলকাতা এসে আমার সাথে দেখা করে। তবে এটা ঠিক, কলকাতা আসলে সে আমার সাথে অবশ্যই দেখা করবে। কিন্তু সে আদৌ কখনও কলকাতা আসবে কিনা সেটা বলা মুস্কিল। তার অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে সে যে কতখানি ব্যস্ত, তা একই ডীপার্টমেন্টে কাজ করছি বলে আমি বুঝি। কিন্তু তার, কথা এখন না হয় থাক। তোমার কথা বল না এবার”।
নবনীতা আবার কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, “আজ তোমাকে সব কথা বলে তোমার মনের সব প্রশ্নের জবাব দেব ভেবেই তো এখানে এসেছিলুম। কিন্তু সেটা আর আপাততঃ করছি না। সে সব কথা আমি এখন শুধু একা তোমার কাছে বলতে চাইনে। তোমাদের দু’জনকে একসাথে শোনাব সে সব কথা। আর সব কথা শুনিয়ে আমি সীমন্তিনীদির কাছে হাত পেতে ভিক্ষে চাইব। আমার মনে হয়, আমার সব কথা শুনলে সে আমার প্রার্থণা অবশ্যই রাখবে। তাই আজ আর সেসব কথা বলছি না। তুমি চেষ্টা কর। একবার তাকে কলকাতা আনবার ব্যবস্থা কর। বাকিটুকু না হয় আমি দেখব”।
পরিতোষ হতভম্ব হয়ে নবনীতার মুখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, “তুমি বলতে না চাইলে, আমি তোমাকে জোর করব না। কিন্তু তুমি যেটা ভাবছ, তা কখনই হবে না। সীমন্তিনীকে আমি খুব ভালভাবেই চিনে ফেলেছি এতদিনে। তার সাধনা থেকে তাকে সরিয়ে আনতে, আমি বা তুমি কেন, স্বয়ং ভগবানও সেটা করতে পারবেন না”।
নবনীতা বলল, “হয়ত তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু আমি তোমাদের দু’জনের সাথে একসাথে মুখোমুখি বসেই আমার সব কথা বলব। তারপর দেখা যাক কী হয়”।
পরিতোষ আর কোন কথা না বলে নিজের খাওয়া শেষ করল। তারপর বলল, “বেশ, তোমাকে আমি জোর করছি না। কিন্তু গত সাত বছরের কথা ছেড়ে দিয়ে তোমার বর্তমান নিয়ে আমার দু’একটা প্রশ্নের জবাব দেবে তুমি”?
নবনীতাও নিজের খাওয়া শেষ করে বলল, “প্রশ্নগুলো করতে পার। কিন্তু যতটুকুর জবাব দেওয়া সম্ভব, ঠিক ততটুকুই দেব। বাকিটুকুর জন্যেও পীড়াপীড়ি করো না”।
পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি এখানে স্বামী সন্তানের সঙ্গেই আছ”?
নবনীতা ছোট্ট করে জবাব দিল, “আমি অবিবাহিতা”।
পরিতোষ নবনীতার কথায় থমকে গেল। বেশ কিছুক্ষণ বাদে জিজ্ঞেস করল, “এখানে কোথায় থাকো? তোমার বাপের বাড়িতেই? না আলাদাভাবে কোথাও”?
নবনীতা বলল, “আমি আমার এক কলেজ জীবনের বান্ধবীর সাথে একটা ফ্ল্যাট শেয়ার করে আছি। তবে তার লোকেশান বা ঠিকানা জানতে চেও না”।
পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “সেদিন তুমি বলছিলে, দেড় বছর আগে কলকাতায় এসেছ। তখন থেকেই ওই বান্ধবীর ফ্ল্যাটেই আছো”?
নবনীতা বলল, “না, বান্ধবীর ফ্ল্যাটে মাত্র মাস চারেক হল উঠেছি। তার আগে আলাদা আলাদা জায়গায় থাকতুম”।
পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “কি কাজ করছ তুমি”?
নবনীতা জবাব দিল, “সেটাও এখন বলছি না। সীমন্তিনীদির সাথে যখন কথা হবে, তখন জানতে পারবে”।
পরিতোষ একটু চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার সাথে যোগাযোগ রেখে যেতে পারব আমি? না তাতেও বাঁধা আছে”?
নবনীতা একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখবার প্রয়াস করতে করতে জবাব দিল, “সেটা না করলেই আমি খুশী হব। তবে সীমন্তিনীদির সাথে দেখা হওয়া পর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ রেখে যেতে পার। দেখা সাক্ষাৎ বেশী না হওয়াই বাঞ্ছনীয়”।
পরিতোষ এবার অনেকক্ষণ চুপ করে থাকবার পর বলল, “বুঝেছি। আর যে’সব প্রশ্ন করতে চাই, তার জবাবও হয়তো একই রকম হবে। তাই সেসব আর জিজ্ঞেস করছি না। তবে তোমার পছন্দ না হলেও আর শুধু একটাই প্রশ্ন করব। সাত বছর আগে যে স্বপ্নটা ভেঙে গিয়েছিল, নতুন করে আবার তেমন কোন স্বপ্ন দেখা যায় কি”?
নবনীতা স্পষ্ট জবাব দিল, “ছোট্ট কথায় জবাব দিচ্ছি। না। তবে বিস্তৃত জবাবটা পরে কোন সময় পেতে পার। তবে আমি শুধু একটা অনুরোধ করতে চাই তোমাকে। সম্ভব হলে রেখো। তুমি আর দেরী না করে এবার একটা বিয়ে করে ফেলো। বয়স তো অনেক হয়েছে”।
পরিতোষ এবার কিছুটা উত্তেজিত ভাবে বলে উঠল, “তোমরা সবাই আমাকে ......” কিন্তু কথা অসম্পূর্ণ রেখেই থেমে গেল। তারপর কিছু সময় চুপ করে থেকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, “তোমার সুন্দর পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। মনে রাখব। চল, এবার ওঠা যাক”।
****************
রেস্টুরেন্টের দোতলায় একটা কেবিন বুক করে রেখেছিল পরিতোষ। নবনীতার সাথে মন খুলে সব কথা বলা যাবে ভেবেই কেবিন বুক করেছে সে। সকাল থেকেই তার মনটা বড় ছটফট করছিল। বার বার ঘড়ির দিকে দেখে মনে হচ্ছিল ঘড়ি বুঝি চলছে না। অফিস থেকে সে দেড়টা নাগাদ বেরিয়ে পড়ল। রেস্টুরেন্টের সামনে এসে পৌঁছল পৌনে দুটো নাগাদ। গাড়ি পার্ক করে গাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়েই সে চারপাশে তাকিয়ে দেখল। না নবনীতাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গাড়ি লক করে রেস্টুরেন্টের ভেতর ঢুকে কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পেল নীল শাড়ি ব্লাউজ পড়া নবনীতা কাউন্টারে বসে থাকা রিসেপশনিস্টের সাথে কথা বলছে। সে তাড়াতাড়ি কাউন্টারের দিকে এগোতেই কাউন্টারে বসা মেয়েটি হাতের ইশারায় তাকে দেখিয়ে দিতেই নবনীতা ঘুরে তাকাল। পরিতোষ ততক্ষণে নবনীতার সামনে এসে জিজ্ঞেস করল, “কতক্ষণ এসেছ”?
নবনীতা সাবলীল ভাবে জবাব দিল, “এই তো জাস্ট এলুম”।
পরিতোষ রিসেপশনিস্ট মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কত নাম্বার রেখেছ আমার জন্যে”?
রিসেপশনিস্ট মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, “স্যার আপনি তো এসি কেবিন চেয়েছিলেন। ওপরের দু’শ চার নাম্বার”।
পরিতোষ মেয়েটাকে বলল, “দীপুদা কোথায়? দেখছি না তো”?
মেয়েটি হেসেই বলল, “উনি বাড়িতে লাঞ্চ করতে গেছেন স্যার। তবে আমাকে বলে গেছেন। আপনারা যতক্ষণ খুশী বসতে পারেন সেখানে। লাঞ্চ কি এখনই সার্ভ করে দেব স্যার”?
পরিতোষ বলল, “হ্যা, লাঞ্চটা পাঠিয়ে দাও আগে। আমাদের মিটিং লাঞ্চের পরই করব ভাবছি”।
মেয়েটি বলল, “ওকে স্যার, আপনারা কেবিনে গিয়ে বসুন”।
পরিতোষ নবনীতাকে ঈশারা করে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। দোতলার কেবিনে এসে বসেই নবনীতা প্রশ্ন করল, “এ রেস্টুরেন্টের রিসেপশনিস্ট ম্যানেজার সবাই তোমায় চেনে বুঝি”?
পরিতোষ ওপরের ঘুরন্ত সিলিং ফ্যানের দিকে দেখে বলল, “হ্যা, তা বলতে পার। আসলে প্রায় রোজই তো এখানে লাঞ্চ ডিনার করতে আসি, তাই”।
নবনীতা নিজের মুখের ঘাম মুছতে মুছতে পরিতোষের দিকে অবাক চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি রোজ এখানে এসে লাঞ্চ ডিনার করো”?
পরিতোষ একটু হেসে বলল, “আর তো কোন উপায় নেই। সকাল ন’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি। আর রাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে কম করেও রাত দশটা বেজে যায়। রান্না বান্না করার মত সময়টা কোথায় পাই”।
নবনীতা আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কেন বাড়িতে আর কেউ নেই? তোমার স্ত্রী....”
পরিতোষ নবনীতার কথার মাঝে হেসে উঠেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “হ্যা, একজনকে স্ত্রী করে আনব বলেই তো ভেবেছিলুম। কিন্তু তা আর হল কই”?
পরিতোষের কথা শেষ হতে না হতেই একজন উর্দিপড়া বেয়ারা স্যুপ নিয়ে ঘরে ঢুকতেই পরিতোষ তাকে বলল, “এই রুপু, এসি কাজ করছে না কেন রে? খারাপ হয়েছে”?
বেয়ারাটা স্যুপের বাটি টেবিলে রাখতে রাখতে বলল, “হ্যা স্যার, এ কেবিনের এসিটা খারাপ হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সকালেই তো সারানো হল। দাঁড়ান, আমি দেখছি”।
পরিতোষের জবাব শুনে নবনীতার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিল। এ কী বলছে পরিতোষ? সে এখনও কাউকে বিয়ে করেনি?
বেয়ারাটা কেবিনের এক কোনায় গিয়ে কয়েক সেকেণ্ড বাদেই ঘুরে এসে বলল, “স্যার, এসির সুইচটা অফ ছিল। আমি চালিয়ে দিয়েছি। আর সমস্যা হবে না”।
বেয়ারাটা বেরিয়ে যেতেই পরিতোষ স্যুপের দিকে ঈশারা করে বলল, “নাও, খাও”।
নবনীতা এক চামচ স্যুপ মুখে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমার একমাত্র চিঠিটা কি তোমার কাছে পৌঁছোয় নি? তোমার বাড়ির ঠিকানায় পাঠিয়েছিলুম। ঠিকানা তো ভুল হবার কথা ছিল না”?
পরিতোষও স্যুপ খেতে খেতেই জবাব দিল, “চিঠিটা ঠিকানায় এসে পৌঁছেছিল ঠিক সময়েই। কিন্তু আমি তো তখন বাড়ি ছিলাম না। বাড়িতে অন্য কেউও ছিল না। আমি তখন হায়দ্রাবাদে আড়াই বছরের ট্রেনিঙে ছিলুম। ট্রেনিং শেষে আমার পোস্টিং হয়েছিল অন্ধ্রতেই। ভাইজ্যাগে। ট্রেনিং শেষে একবার একদিনের জন্য বাড়ি এসেছিলাম কিছু জিনিস পত্র নিতে। তখন লেটার বক্সে তোমার চিঠিটা পড়ে থাকতে দেখেছিলাম। কবে লিখেছিলে, সে তারিখ চিঠিটায় ছিল না। তবে সেটা আমি পেয়েছিলুম ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে”।
নবনীতা আনমনে স্যুপ খেতে খেতেই জবাব দিল, “ও তারিখ দিই নি বুঝি? আসলে তখন তো মাথার ঠিক ছিল না। তাই হয়ত তারিখটা লিখতে ভুলে গিয়েছিলুম। তা চিঠিটা দেরীতে হলেও তোমার হাতে তো পড়েছিল। সে চিঠিতে তোমাকে একটা রিকোয়েস্ট করেছিলুম আমি। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, আমার সে অনুরোধটা রাখো নি তুমি”?
পরিতোষ একটু ম্লান হেসে বলল, “তোমার কোন কথাটা আমি কবে অমান্য করেছি বল তো? ন’ বছর আগেও যেমন তা করিনি, আজও সেটা করছি না। এই তো, গত পরশু দিনের ঘটণাটাই ধর না। পুরোন অভ্যেস মতই তোমাকে সেদিন ‘বনি’ বলে ডেকে ফেলেছিলুম। কিন্তু তোমার হয়ত সেটা ভাল লাগেনি। তুমি বারণ করলে ও নামে তোমাকে ডাকতে। তারপর থেকে তো একবারও তোমাকে আমি ও নামে ডাকিনি”।
নবনীতা মাথা নিচু করে এক মূহুর্ত চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করল, “আমিও আশা করেছিলুম, যে কষ্ট হলেও আমার চিঠির কথাগুলো তুমি মেনে নেবে। আমিও তো গত সাতটা বছর ধরে মনে মনে এ’কথা ভেবেই খুশী থাকবার চেষ্টা করেছি, যে তুমি আমার অনুরোধটা নিশ্চয়ই রেখেছ। কিন্তু সেটা সত্যি হলে আজ তোমাকে রেস্টুরেন্টে এসে লাঞ্চ ডিনার করতে হবে কেন”?
পরিতোষ আগের মতই ম্লান হেসে জবাব দিল, “তোমার সে অনুরোধটাও রাখবার চেষ্টা যে করিনি তা তো নয়। কিন্তু কথায় আছে না? বেড়ালের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে না। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। জীবনের প্রথম এবং একমাত্র ভালবাসার পাত্রিটিকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলেও তোমার কথা মেনেই অন্য আরেকটি মেয়েকে মনে মনে পছন্দ করেছিলাম একটা সময়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। তা, সে’সব কথা বলতে গেলে তো অনেক কিছুই বলতে হবে। নইলে তুমি ঠিক বুঝতে পারবে না। ব্যাপারটা একটু কমপ্লিকেটেড”।
নবনীতা কৌতূহলী হয়ে বলল, “আমি জানতে চাইলেও বলবে না”?
পরিতোষ বলল, “বলব না, কখন বললাম? আমি তো বলছি যে সে ঘটণাটা তোমাকে বলে বোঝাতে গেলে এই লাঞ্চ টাইম সাক্ষাতের সময়টুকু যথেষ্ট নয়। আর রেস্টুরেন্টের কেবিনে অত সময় বসে থাকাটাও সম্ভব নয়”।
নবনীতা তবু অনুরোধের সুরে বলল, “খুব ডিটেইলসে না গিয়ে যতটা সম্ভব সংক্ষেপে বল না প্লীজ”।
এমন সময়ে দু’জন বেয়ারা একসাথে কেবিনে ঢুকে তাদের খাবার পরিবেশন করে গেল। দু’জনে খেতে শুরু করতে পরিতোষ বলল, “তোমাকে হারাবার প্রায় দু’বছর বাদে আমি যখন ভাইজ্যাগে পোস্টেড ছিলুম তখন হায়দ্রাবাদে পুলিশ ট্রেনিং একাডেমীতে গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে যেতে হয়েছিল আমাকে কয়েকবার। সেটা ২০০৯ সালের ঘটণা। নতুন আইপিএস অফিসারদের প্রিলিমিনারি ট্রেনিং ছিল সেটা। সে ব্যাচে ফ্যাকাল্টি হিসেবে ক্লাস নিতে গিয়েই সীমন্তিনীকে আমি প্রথম দেখেছিলাম। মেয়েটা গোটা ব্যাচের ভেতর সবচেয়ে বুদ্ধিমতী ছিল। ওর ভাবভঙ্গী চলাফেরা কথা বার্তা আচার ব্যবহার দেখে তোমাকে হারিয়ে ফেলবার দুঃখ ভুলতে আমি ধীরে ধীরে ওর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু নিজের মনকে সংযত রেখে, তার সাথে ভাব ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলবার আগেই, একদিন একাডেমীর ক্যান্টিনে লাঞ্চ করবার সময় আমি তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসেছিলাম। মেয়েটা আমার কথা শুনে খুব শান্তভাবে জবাব দিয়েছিল যে তার পরিচিত সকলেই তাকে অবিবাহিতা বলে জানলেও খুব ছোটবেলাতেই সে নাকি একজনকে ভালবেসে মনে মনে তাকে তার স্বামীর আসনে বসিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তার প্রেমিক তার এমনই ঘণিষ্ঠ এক আত্মীয় ছিল যে সামাজিক ভাবে তাকে বিয়ে করা তো দুর, অমন সম্পর্কের কথা কেউ ভাবতেও পারবে না। তাদের একান্নবর্তী পরিবারের বড়রা সকলেই তাকে অনেক ভাবে বুঝিয়েও, অনেক মারধোর করেও তাকে নিরস্ত করতে পারেনি। তাই সে তার বাড়ি ঘর আত্মীয় স্বজন সকলের কাছ থেকে দুরে সরে গেছে। তার নিজের সেই প্রেমিকের কাছ থেকেও। কিন্তু এখনও সে নিজেকে একজন বিবাহিতা মেয়ে বলেই ভাবে। আর সারা জীবন সে তার ওই আত্মীয় ছেলেটিকেই নিজের স্বামী বলে পূজো করে যাবার পণ করেছে। তাই অন্য কোনও পুরুষকে বিয়ে করা তো দুরের কথা, তেমন কথা কল্পনা করাও তার পক্ষে অসম্ভব”।
বলে একটু থেমে আবার বলল, “আমি নিজেও তো একজনকে কোনও এক সময় ভাল বেসেছিলাম। মনে মনে ভাবতাম, আমার ভালবাসায় কোন খাঁদ ছিল না, কোনও খুঁত ছিল না। কিন্তু সে ভালবাসাকে আমি খুব বেশীদিন আগলে ধরে থাকতে পারিনি। আর সীমন্তিনী! আজও সে তার ছোটবেলার প্রেমিককেই তার মনে স্বামীর আসনে বসিয়ে রেখেছে। কিন্তু কি মজার ব্যাপার দেখ, আমার সাথে তার পরিচয় হবার কয়েক মাস আগেই সে তার প্রেমিকের সাথে আরেকটি মেয়ের বিয়ে দিয়ে তাকে সংসারী করে তুলেছে। কিন্তু দুরে থেকেই তার প্রেমিক আর তার স্ত্রীর সব সুখ স্বাচ্ছন্দের প্রতি সে নজর রেখে চলছে। আজও সে তাই করে যাচ্ছে। এখনও তার ধ্যান জ্ঞান, তার বেঁচে থাকার উদ্দেশ্য সব কিছুই তার ওই প্রেমিকই। আর প্রেমিকের স্ত্রীটিকেও সে নিজের ছোটবোনের মত ভালবাসে। আর তাদের দু’জনের জন্য সে নিজের প্রাণটুকু পর্যন্তও হাসিমুখে বিসর্জন দিতে পারে। এমনভাবে যে কেউ কাউকে ভালবাসতে পারে তা সীমন্তিনীকে না দেখলে আমি বিশ্বাসই করতে পারতুম না। সেদিনই যেন আমি প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম, সত্যিকারের ভালবাসা কী। আমার প্রস্তাব সে সাদরে অস্বীকার করলেও আমার অনুরোধে সে আমার খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেছে সেদিন থেকে। তার ভালবাসাকে আমি শ্রদ্ধা না জানিয়ে থাকতে পারিনি। আমাদের মধ্যে এখনও নিয়মিত ফোনে কথা হয়। আজও সে আমার পাশে আমার পরম বন্ধু হয়ে আছে”।
পরিতোষের কথা শুনতে শুনতে নবনীতা তার খাওয়া থামিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। পরিতোষ এক গ্রাস খাবার খেয়ে বলল, “কাউকে ভালবাসা এক কথা, আর কারুর ভালবাসা কেড়ে নেওয়া আরেক কথা। সীমন্তিনীর ভালবাসা কেড়ে নিয়ে তার ভালবাসাকে অসম্মান করতে পারিনি আমি। তাই আমরা একে অপরের বন্ধু হয়েই আছি”।
একটু থেমে হতভম্ব নবনীতার মুখের দিকে তাকিয়ে পরিতোষ বলল, “খাবার যে ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে তোমার, সেদিকে খেয়াল আছে”?
নবনীতা সচেতন হয়ে খাওয়া শুরু করল। অনেকক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না। একসময় নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “তার বয়স কেমন? আমার থেকে বড়? আর সে কি কলকাতাতেই আছে”?
পরিতোষ জবাব দিল, “না তার পোস্টিং এখান থেকে অনেক দুরে। ডুয়ার্সে। তার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছে প্রায় বছর দুয়েক আগে। আর বয়সে সে তোমার থেকে বছর তিনেকের মত বড়”।
নবনীতা মনে মনে আবার কিছুক্ষণ ভেবে জিজ্ঞেস করল, “সীমন্তিনীদি কাকে ভালবাসতো”?
পরিতোষ প্রায় সাথে সাথে জবাব দিল, “বাসতো নয়। এখনও ভালবাসে। আর সে ভালবাসা যে কতটা পবিত্র কতটা তীব্র সেটা মাপবার মত মাপকাঠি খুঁজেও পাওয়া যাবে না। তার প্রেমিকের পরিচয় তার বাড়ির লোকেরা বাদে শুধু আমিই জানি। একমাত্র আমাকেই সে সেটা জানিয়েছে। কিন্তু শপথ ভেঙে তার পরিচয়টা তোমাকে জানাতে পারব না আমি। আমায় ক্ষমা কোর। আশা করি, আমি যে কাউকে দেওয়া কথার অন্যথা কখনো করিনা, এটা তোমার জানা আছে”।
নবনীতা একটু একটু করে খেতে খেতে মনে মনে আরও কিছু ভাবতে লাগল। পরিতোষও আনমনে নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছিল। একসময় নবনীতা জিজ্ঞেস করল, “সীমন্তিনীদির সাথে কি আমি দেখা করতে পারি একবার”?
পরিতোষ একটু অবাক হয়ে জবাব দিল, “তুমি তার সাথে দেখা করতে চাও? কিন্তু কেন? তার সাথে দেখা করে তোমার তো কোনও লাভ হবার কথা নয়”!
নবনীতা শান্তভাবে বলল, “লাভ ক্ষতির অঙ্ক কষাকষির পালা তো কবেই শেষ হয়ে গেছে। এখন তো শুধু দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার সংঘর্ষ। কিন্তু ভালবাসার লোকটাকে দুরে সরিয়ে দিয়েও কী করে তাকেই আজীবন ভালবেসে যাওয়া যায়, তার কাছ থেকে এ শিক্ষাটা নিতুম। নিজের প্রেমিককে অন্য আরেকটা মেয়ের হাতে তুলে দিয়েও যে এখনও তার প্রেমিকের জন্য সর্বস্য ছেড়ে দিতে পারে, সে তো বিশাল বিরাট একটা মনের মানুষ। এমন একজন মহীয়ষী নারীকে চাক্ষুষ দেখতে ইচ্ছে করছে। অনেকেই তো ভালবাসার সাথে সাথে ভালবাসার মানুষটিকেও হারিয়ে ফেলে। আর তোমার সীমন্তিনী সবকিছু দুরে সরিয়ে দিয়েও কি অদ্ভুত ভাবে সব কিছু আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে! ভালবাসার কতটা জোর থাকলে এমনটা করা সম্ভব সেটা তো আমি আন্দাজও করতে পারছি না”।
পরিতোষ বলল, “ঠিক বলেছ তুমি। তাই তো আমাকে ফিরিয়ে দিলেও সে আমার কাছ থেকে দুরে সরে যায়নি। আজ তোমাকে ‘বনি’ বলে ডাকার অধিকারটুকুও তুমি আমাকে দিচ্ছ না। কিন্তু সীমন্তিনী! তার প্রেমিক তাকে যে নামে ডাকত আমাকেও সে নামে ডাকবার অনুমতি দিয়েছে। অবশ্য আমার যখন যেটা মনে আসে, সে নামেই তাকে ডাকি। ডার্লিং, প্রেয়সী, মুন ডার্লিং, মন্তি সোনা আরও কত কী। মন্তি কোন সম্মোধনেই রাগ করে না। সে সেগুলোকে শুধুই বন্ধুত্বের সম্ভাষণ বলে ভাবে। আর আমিও জানি যে মুখের সমস্ত সম্মোধন মেনে নিলেও, পরম বন্ধুর মত আমার পাশে থাকলেও, সে কখনই আমার জীবনের সাথে জড়াবে না। আর আমিও সেটাই মেনে নিয়েছি। তাকে বন্ধু বলে ভেবেই খুশী আছি। কিন্তু তোমার সাথে তার কখনও দেখা হবে কি না, সেটা কি করে বলি বলো। সে থাকে এখান থেকে প্রায় পাঁচ’শ মাইল দুরে। ট্রেনে কলকাতা থেকে সেখানে যেতে প্রায় তের চৌদ্দ ঘন্টা সময় লেগে যায়। সে কলকাতায় থাকলে বা কাছাকাছি কোথাও থাকলেও হয়ত একটা সম্ভাবনা থাকত”।
নবনীতা মাথা নিচু করে বলল, “তোমার সীমন্তিনীর মত মহীয়ষী তো আমি হতে পারব না পরি। আমার ভালবাসার অত জোরও নেই। কিন্তু আমি মনে মনে আমার ভালবাসাকে কোনভাবে কলুষিত করতে চাই নি। এখনও চাই না। কিন্তু তোমার মন্তির মত আমিও চাই, তুমি কাউকে বিয়ে করে সংসারী হও। তাই তার সাথে আমার একবার দেখা হওয়াটা খুব প্রয়োজনীয়”।
পরিতোষ বলল, “সেটা একমাত্র তখনই সম্ভব, যদি সে কখনও কলকাতা এসে আমার সাথে দেখা করে। তবে এটা ঠিক, কলকাতা আসলে সে আমার সাথে অবশ্যই দেখা করবে। কিন্তু সে আদৌ কখনও কলকাতা আসবে কিনা সেটা বলা মুস্কিল। তার অফিসিয়াল অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে সে যে কতখানি ব্যস্ত, তা একই ডীপার্টমেন্টে কাজ করছি বলে আমি বুঝি। কিন্তু তার, কথা এখন না হয় থাক। তোমার কথা বল না এবার”।
নবনীতা আবার কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, “আজ তোমাকে সব কথা বলে তোমার মনের সব প্রশ্নের জবাব দেব ভেবেই তো এখানে এসেছিলুম। কিন্তু সেটা আর আপাততঃ করছি না। সে সব কথা আমি এখন শুধু একা তোমার কাছে বলতে চাইনে। তোমাদের দু’জনকে একসাথে শোনাব সে সব কথা। আর সব কথা শুনিয়ে আমি সীমন্তিনীদির কাছে হাত পেতে ভিক্ষে চাইব। আমার মনে হয়, আমার সব কথা শুনলে সে আমার প্রার্থণা অবশ্যই রাখবে। তাই আজ আর সেসব কথা বলছি না। তুমি চেষ্টা কর। একবার তাকে কলকাতা আনবার ব্যবস্থা কর। বাকিটুকু না হয় আমি দেখব”।
পরিতোষ হতভম্ব হয়ে নবনীতার মুখের দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থেকে বলল, “তুমি বলতে না চাইলে, আমি তোমাকে জোর করব না। কিন্তু তুমি যেটা ভাবছ, তা কখনই হবে না। সীমন্তিনীকে আমি খুব ভালভাবেই চিনে ফেলেছি এতদিনে। তার সাধনা থেকে তাকে সরিয়ে আনতে, আমি বা তুমি কেন, স্বয়ং ভগবানও সেটা করতে পারবেন না”।
নবনীতা বলল, “হয়ত তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু আমি তোমাদের দু’জনের সাথে একসাথে মুখোমুখি বসেই আমার সব কথা বলব। তারপর দেখা যাক কী হয়”।
পরিতোষ আর কোন কথা না বলে নিজের খাওয়া শেষ করল। তারপর বলল, “বেশ, তোমাকে আমি জোর করছি না। কিন্তু গত সাত বছরের কথা ছেড়ে দিয়ে তোমার বর্তমান নিয়ে আমার দু’একটা প্রশ্নের জবাব দেবে তুমি”?
নবনীতাও নিজের খাওয়া শেষ করে বলল, “প্রশ্নগুলো করতে পার। কিন্তু যতটুকুর জবাব দেওয়া সম্ভব, ঠিক ততটুকুই দেব। বাকিটুকুর জন্যেও পীড়াপীড়ি করো না”।
পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি এখানে স্বামী সন্তানের সঙ্গেই আছ”?
নবনীতা ছোট্ট করে জবাব দিল, “আমি অবিবাহিতা”।
পরিতোষ নবনীতার কথায় থমকে গেল। বেশ কিছুক্ষণ বাদে জিজ্ঞেস করল, “এখানে কোথায় থাকো? তোমার বাপের বাড়িতেই? না আলাদাভাবে কোথাও”?
নবনীতা বলল, “আমি আমার এক কলেজ জীবনের বান্ধবীর সাথে একটা ফ্ল্যাট শেয়ার করে আছি। তবে তার লোকেশান বা ঠিকানা জানতে চেও না”।
পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “সেদিন তুমি বলছিলে, দেড় বছর আগে কলকাতায় এসেছ। তখন থেকেই ওই বান্ধবীর ফ্ল্যাটেই আছো”?
নবনীতা বলল, “না, বান্ধবীর ফ্ল্যাটে মাত্র মাস চারেক হল উঠেছি। তার আগে আলাদা আলাদা জায়গায় থাকতুম”।
পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “কি কাজ করছ তুমি”?
নবনীতা জবাব দিল, “সেটাও এখন বলছি না। সীমন্তিনীদির সাথে যখন কথা হবে, তখন জানতে পারবে”।
পরিতোষ একটু চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার সাথে যোগাযোগ রেখে যেতে পারব আমি? না তাতেও বাঁধা আছে”?
নবনীতা একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে রাখবার প্রয়াস করতে করতে জবাব দিল, “সেটা না করলেই আমি খুশী হব। তবে সীমন্তিনীদির সাথে দেখা হওয়া পর্যন্ত ফোনে যোগাযোগ রেখে যেতে পার। দেখা সাক্ষাৎ বেশী না হওয়াই বাঞ্ছনীয়”।
পরিতোষ এবার অনেকক্ষণ চুপ করে থাকবার পর বলল, “বুঝেছি। আর যে’সব প্রশ্ন করতে চাই, তার জবাবও হয়তো একই রকম হবে। তাই সেসব আর জিজ্ঞেস করছি না। তবে তোমার পছন্দ না হলেও আর শুধু একটাই প্রশ্ন করব। সাত বছর আগে যে স্বপ্নটা ভেঙে গিয়েছিল, নতুন করে আবার তেমন কোন স্বপ্ন দেখা যায় কি”?
নবনীতা স্পষ্ট জবাব দিল, “ছোট্ট কথায় জবাব দিচ্ছি। না। তবে বিস্তৃত জবাবটা পরে কোন সময় পেতে পার। তবে আমি শুধু একটা অনুরোধ করতে চাই তোমাকে। সম্ভব হলে রেখো। তুমি আর দেরী না করে এবার একটা বিয়ে করে ফেলো। বয়স তো অনেক হয়েছে”।
পরিতোষ এবার কিছুটা উত্তেজিত ভাবে বলে উঠল, “তোমরা সবাই আমাকে ......” কিন্তু কথা অসম্পূর্ণ রেখেই থেমে গেল। তারপর কিছু সময় চুপ করে থেকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল, “তোমার সুন্দর পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। মনে রাখব। চল, এবার ওঠা যাক”।
****************