Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#91
(Update No. 109)

রচনা আর রতীশের সাথে সীমন্তিনী অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করল। রতীশের মহিমার ওখানে কাজে যোগ দেওয়া নিয়েই বেশী কথা হল। মহিমার সমস্ত কথা শুনে সীমন্তিনী রচনার মতেরই সমর্থন করল। স্থির হল কলকাতা ফিরে এসেই রতীশ মহিমার ওখানে কাজে যোগ দেবে। ইনস্টিটিউটের বাইরে গিয়ে যেন কোথাও ডিউটি করতে না যায়। আর ইনস্টিটিউটের ভেতরেও সব সময় চোখ কান খোলা রেখে চলার উপদেশ দিল সীমন্তিনী রতীশকে। আর কখনও বেচাল কিছু দেখলেই রতীশ যেন মহিমাকে কিছু বলার আগে রচনা আর সীমন্তিনীর সাথে কথা বলে।
 

***************

সীমন্তিনীর ওখানে একরাত থেকেই পরদিন সকালেই রতীশ আর রচনা সীমন্তিনীকে সাথে নিয়েই কালচিনি ফিরে এসেছিল। ডক্টর সোমের সাথে পরামর্শ করে সেদিন বিকেলেই অর্চনাকে হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করিয়ে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছিল। কালচিনি থেকে ফিরে মহিমার কথা মত রতীশ জুলাই মাসের আঠার তারিখে মহিমার ইনস্টিটিউটে কাজে যোগ দিল।
 

ঠিক সেদিনই দুপুর দুটো নাগাদ পরিতোষ পার্ক স্ট্রিট এলাকার একটা রাস্তা দিয়ে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে নিজের অফিসের দিকে যাচ্ছিল। একটা জায়গায় ভিড়ের মধ্যে একজনের মুখ দেখতে পেয়ে সে ভীষণ ভাবে চমকে উঠল। উল্টোদিকের ফুটপাতে ওটা কে দাঁড়িয়ে আছে! কাকে দেখল সে? এ মুখটা যে তার খুব চেনা। একটা সময় এ মুখটাকে সে রোজ তার চোখের সামনে দেখতে পেত। কিন্তু সাত বছর আগে এ মুখটা তার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
 

সাতবছর বাদে উল্টোদিকের ফুটপাতে সে মুখটাই কি সে দেখতে পেল? না এটা তার চোখের ভুল? কিন্তু সে মুখটা চোখে পড়তেই তার ডান পা-টা নিজেই যেন ব্রেক প্যাডে চাপ দিল। এরিয়াটা নো পার্কিং জোন হওয়া সত্বেও পরিতোষ গাড়ি বাঁ দিকে সাইড করে থামিয়ে দিল। গাড়ির দরজা না খুলেই সে উল্টোদিকের ফুটপাতের সে জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখল হাল্কা গোলাপী রঙের সালোয়ার কামিজ পড়া মেয়েটা রাস্তার ধারে এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন রাস্তা ক্রস করে আসবার চেষ্টা করছে। পরিতোষের গাড়িটা নো পার্কিং এরিয়াতে থামতেই সামনের দিক থেকে একজন ট্রাফিক পুলিশ তার দিকে তীব্র বেগে ছুটে এল। সে একেবারে কাছে আসবার আগেই পরিতোষ হাত তুলে তাকে তাড়াতাড়ি কাছে আসবার ঈশারা করতেই পুলিশটি দৌড়ে পরিতোষের কাছে এসে স্যালিউট ঠুকে বলল, “স্যার, এনি প্রব্লেম”?

পরিতোষ হাল্কা গোলাপী কামিজের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতেই ফিসফিস করে বলল, “আপনি আমাকে একটু হেল্প করবেন প্লীজ। আমি একজন ওয়ান্টেডকে ফলো করছি। রাস্তার উল্টোদিকে সে আছে। পঁচিশ ত্রিশ মিটার দুরে ওই হাল্কা গোলাপী রঙের পোশাক পড়া মহিলাটিকে দেখতে পাচ্ছেন? ওই যে দেখুন, রাস্তা ক্রস করবার জন্য ফুটপাতের একদম ধারে এসে দাঁড়িয়েছে। দেখতে পাচ্ছেন”?
 

পুলিশটি জবাব দিল, “হ্যা হ্যা স্যার, দেখতে পাচ্ছি”।

পরিতোষ বলল, “নো পার্কিং জোন বলেই আমি গাড়ি থেকে নামতে চাইছি না। আপনি তাকে ট্রাফিক বাঁচিয়ে আমার কাছে নিয়ে আসুন তো। প্লীজ তাড়াতাড়ি যান। আর শুনুন, সে যেন কিছু বুঝতে না পারে যে আমরা তাকে ট্র্যাপ করছি। আপনি তাকে রাস্তা পেরিয়ে আসতে সাহায্য করুন”।

ট্রাফিক পুলিশটি “ওকে স্যার” বলেই দৌড়ে পেছন দিকে চলে গেল। খানিক বাদেই পরিতোষ দেখতে পেল ট্রাফিক পুলিশটি পথ চলতি গাড়িগুলিকে নানাভাবে আয়ত্ব করে মেয়েটাকে রাস্তা ক্রস করে এদিকে এনে তার গাড়ির দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে। মেয়েটা পুলিশটির সাথে কিছু কথা বলতে বলতে পরিতোষের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। পরিতোষ সামনের বাঁ দিকের দরজাটা খুলে দিতেই ট্রাফিক পুলিশটি মেয়েটাকে দরজার কাছে এনে বলল, “উঠে পড়ুন ম্যাডাম”।

মেয়েটা চমকে উঠে বলল, “উঠে পড়ব মানে? আমি এ গাড়িতে উঠতে যাব কেন”।

এবার পুলিশটি কোন জবাব দেবার আগে পরিতোষ নিজেই বলল, “কোন কথা না বলে উঠে আসুন প্লীজ ম্যাডাম। এখানে রাস্তার মাঝে কোন ঝামেলা পাকাবেন না”।
 

পরিতোষের গম্ভীর গলা শুনেই মহিলা ঝুঁকে গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসা লোকটির দিকে চেয়ে অস্ফুট স্বরে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, “একি তুমি”?

পরিতোষ আগের মতই গম্ভীর গলায় বলে উঠল, “আর একটি কথাও নয়। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসুন”।

মহিলাটি একবার তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক পুলিশটির দিকে দেখে আর কোন কথা না বলে গাড়ির সামনের সীটে বসতেই ট্রাফিক পুলিশটি গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিয়ে পরিতোষকে একটা স্যালিউট ঠুকে বলল, “ওকে স্যার”।
 

পরিতোষ পুলিশিটিকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলেই গাড়ি ছেড়ে দিল। পরিতোষের মনের ভেতরটা উথাল পাথাল করছিল। কত বছর বাদে, কতদিন বাদে এ মেয়েটিকে সে তার এত কাছে দেখতে পাচ্ছে! তার মুখে যেন কথা সরছিল না। এ কি সত্যি? আজ থেকে সাত বছর আগে যে মেয়েটাকে সে তার স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে নিজের ঘরে তুলবে বলে ভেবেছিল। যে মেয়েটা সাত বছর আগে হঠাতই তার জীবনের আকাশ থেকে খসে পড়া তারার মত উধাও হয়ে গিয়েছিল, আজ এ মূহুর্তে সে তার পাশে বসে আছে! এই ভর দুপুর বেলায় কলকাতার এমন একটা ব্যস্ততম রাস্তায় যে হঠাৎ করেই সে এ মেয়েটিকে দেখতে পাবে, এমনটা তো সে স্বপ্নেও ভাবেনি। নিজের অস্থির মস্তিষ্কটাকে আয়ত্ত্বে রেখে সে কোন মতে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছিল। অনেক কথা অনেক প্রশ্ন তার মনে ভিড় করে আসছিল। কোনটা ছেড়ে কোন প্রশ্নটা আগে করবে, তাও যেন সে বুঝতে পাচ্ছিল না।
 

বাংলা সিনেমা টিভি সিরিয়ালে বিবাহিতা মহিলাদের হাতে শাখা পলা নোয়ার আর সিঁথিতে ও কপালে সিঁদুর দেবার ছবি যতই ঘনঘটা করে দেখানো হোক না কেন, বাংলার এই রাজধানী শহরের অধিকাংশ বিবাহিতা মহিলারাই নিজেদের শরীরে বিবাহিতা মহিলার পরিচয়বাহক এসব চিহ্ন রাখতে পছন্দ করে না। তাই কাউকে দেখে বিবাহিতা বা অবিবাহিতা কিংবা বিধবা বলে আন্দাজ করা প্রায়শই খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী হবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিয়ের কথা পাকা হবার দিনই যে মেয়েটা কোন একটা ছেলের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল আজ থেকে প্রায় সাত বছর আগে, সে কি সেই ছেলেটাকে বিয়ে করেছে? চেহারায় বা পোশাক আশাক দেখে সেটা অনুমান করা যাচ্ছে না। সে কি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েও সাত বছর ধরে এ শহরেই বাস করছে? স্বামীর সাথে সুখে সংসার করছে? সে কি মা হয়েছে? হয়ে থাকলে সে ক’টি সন্তানের মা হয়ে থাকতে পারে? সে যদি অন্য কোন ছেলেকেই বিয়ে করবে বলে ভেবেছিল, তাহলে পরিতোষকে সে কেন তার মা বাবার কাছে টেনে নিয়ে গিয়েছিল? কেন মা বাবার সম্মুখে তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল? পরিতোষের কোন কাজ বা কথায় সে কি তার ওপর আর নির্ভরশীল থাকতে পারছিল না? কী অপরাধ ছিল তার নিজের? সাত বছর পুরোন এমন আরও অনেক গুলো প্রশ্ন তার মনে ভিড় করে আসছিল। কিন্তু কোনটা দিয়ে কথা শুরু করবে, তা যেন পরিতোষের মাথাতেই আসছিল না।

মেয়েটাও গাড়িতে ওঠবার পর থেকে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে। দু’একবার চোরা চোখে সে পরিতোষের দিকে তাকিয়ে দেখবার চেষ্টা করেও যেন ঠিক সাহস জুটিয়ে উঠতে পারেনি। পরিতোষ যে তাকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে, সেটা সে ভালই বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু সে তো একটিও কথা না বলে একমনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পরিতোষ তাকে? কোনও থানায়? নাকি পরিতোষের নিজের বাড়িতে? এতদিন বাদেও কি পরিতোষ তার আশায় বসে আছে? না সে বিয়ে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সংসারী হয়েছে? সাত বছর আগে তাদের শেষ দেখা হবার সময় পরিতোষ তে হায়দ্রাবাদে ছিল। সে কলকাতা কবে এসেছে? সে কি এখনও তাদের পৈতৃক বাড়িতেই আছে? না অন্য কোথাও কোন আধুনিক ফ্ল্যাট কিনে সংসার পেতে বসেছে?
 

প্রায় পনের কুড়ি মিনিটের মত, গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ ছাড়া আর কারুর কোন কথা শোনা গেল না। তারপর একসময় পরিতোষ খুব শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, “লাঞ্চ করেছ”?
 

মেয়েটা সে প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে আমতা আমতা করে জবাব দিল, “অ্যা? না মানে এক জায়গায় দুপুরে খাবার নেমন্তন্ন আছ। তাই সেখানেই যাচ্ছিলুম”।
 

পরিতোষ এবার প্রথম মেয়েটার মুখের দিকে দেখে বলল, “ওহ, আই এম সরি। তোমাকে তো তাহলে অসুবিধেয় ফেলে দিয়েছি আমি। সরি, আসলে তোমাকে এভাবে হঠাৎ দেখে ফেলে, আমার কী করা উচিৎ অনুচিৎ বুঝতে না বুঝতেই তোমাকে গাড়িতে তুলে নিয়েছি। তুমি কোথায় যেতে চাইছিলে, সেটা জানতে পারলে সেখানে পৌঁছে দিতে পারতুম তোমাকে”।

মেয়েটা মাথা নিচু করেই জবাব দিল, “এদিকেই আসতে হত আমাকে। তুমি যদি আমাকে সামনের চৌপথীতে নামিয়ে দাও, তাহলেই হবে”।
 

পরিতোষ একটু অবাক হলেও মুখে বলল, “তোমাকে কোথাও নামিয়ে দেবার জন্যে তো তোমাকে গাড়িতে তুলিনি আমি। তোমার কাছ থেকে যে আমাকে অনেক কথা জানতে হবে। সাত বছর ধরে সে প্রশ্নগুলো বার বার আমার মনে ঘোরাফেরা করছে”।

মেয়েটি একইভাবে মাথা নিচু করে বলল, “হ্যা তা তো আমিও জানি। আর দেখা যখন হয়েই গেল এবার আমাকে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। তবে আজ আমাকে কিছু জিজ্ঞেস কোর না প্লীজ। একটা অফিসিয়াল মিটিঙে যাচ্ছিলুম আমি। সেখানেই লাঞ্চের আয়োজন করা আছে। তাই আজ তোমার কোন প্রশ্নের জবাব দেবার মত সময় আমার হাতে নেই। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি। আগামী পরশুদিন তোমার সুবিধে মত যে কোন সময় তোমার বাড়ি ছাড়া অন্য যে কোন জায়গায় আমি তোমার সাথে দেখা করতে পারি”।

চৌপথী এসে পড়াতে পরিতোষ একটা সুবিধেমত জায়গায় গাড়ি থামিয়ে দিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করে বলল, “তোমার অফিসিয়াল এপয়েন্টমেন্ট ভেস্তে দিতে চাই না আমি। কিন্তু পরশু দিন দেখা করার যে কথা দিচ্ছ সেটা আমাকে এড়াবার জন্যই বলছ না তো”?

মেয়েটি নিজের হাতঘড়ির দিকে দেখে বলল, “তোমার সঙ্গে আমার আবার দেখা হোক, এটা এতদিন আমি চাইছিলুম না। কিন্তু সেটা যখন হয়েই গেছে, তখন আর মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তো কোন লাভ নেই। তাই পরশু দিন আমি তোমার সাথে অবশ্যই দেখা করব। তবে তোমার বাড়িতে যেতে বলো না প্লীজ”।

পরিতোষ মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, “বেশ, তাই নাহয় হবে। পরশু দুপুরে আমার সাথে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করতে পারবে? আর আমি তোমাকে কন্টাক্টই বা করব কি করে? তুমি কোথায় থাকো? কোন অফিসে কাজ কর, এসব তো কিছুই জানিনা আমি। আর তাছাড়া এই দুটো দিন আমি কী করে কাটাব বল বনি? এতদিন তো মনকে প্রবোধ দিয়ে রেখেছিলুম এই বলে যে তুমি আর এ পৃথিবীতে বেঁচে নেই। কিন্তু আজ তোমাকে চাক্ষুষ দেখবার পর মনকে কিভাবে শান্ত রাখব বনি? দুটো দিন যে আমি অস্থির হয়ে থাকব”।
 

পরিতোষের মুখে তার হারিয়ে যাওয়া নাম শুনে নবনীতার শরীরটা যেন কেঁপে উঠল। তার মা বাবা দাদা আর চেনা পরিচিত সকলেই তার নামটাকে একটু ছোট করে নীতা বলে তাকে ডাকত। কিন্তু পরিতোষ তাকে সে নামে ডাকত না। চার অক্ষরের নামের প্রথম আর শেষ অক্ষরদুটো বাদ দিয়ে মাঝের দুটো অক্ষর নিয়েই নিজের নামটাকে ছোট করে সে নিজেই তার প্রেমাস্পদকে বলেছিল ওই নামে তাকে ডাকতে। সাত বছর আগে যেদিন সে শেষবার পরিতোষকে দেখেছিল, তার আগের দুটো বছর পরিতোষ তাকে ওই নামেই ডাকতো। আজও তাকে সে ওই নামেই সম্মোধন করছে।
 

সে মাথা নিচু করে বলল, “প্লীজ পরি, ওই নামে আমাকে আর ডেকো না তুমি। আমার ভাল লাগবে না। তুমি আমার ফোন নাম্বারটা নিয়ে নাও। ৮৯........৩৭। অবশ্য কাজে ব্যস্ত থাকলে ফোনটা সুইচ অফ করে রাখি মাঝে মাঝে। একবার সুইচ অফ পেলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে আর ফোন করো না, ঘন্টা খানেক বাদেই আবার ট্রাই করো। আর সরি, আমার বাড়ির বা অফিসের ঠিকানাটা আমি তোমাকে জানাতে চাই না। তাই ও’সব জিজ্ঞেস করো না। কী কাজ করি, সেটা পরশু দিনই বলব। কথা যখন দিয়েছি, দেখা নিশ্চয়ই করব তোমার সাথে। কিন্তু এই দুটো দিন মনকে আগের মতই সামলে রেখ। সাত বছর আগে যা ভেঙে গেছে, বা বলা ভাল, আমি নিজেই যা ভেঙে দিয়েছি, তা আর জোড়া লাগবে না। সে পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে পরি। তবু তোমার সাথে দেখাটা ঠিকই করব। এবার দরজার লকটা খুলে দাও প্লীজ। নইলে আমার দেরী হয়ে যাবে”।
 

পরিতোষ এবার আর নিজেকে সামলাতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, “সাত বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবার পর থেকে তুমি কি এ শহরেই ছিলে”?
 

মেয়েটা কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে জবাব দিল, “না। কলকাতা এসেছি প্রায় বছর দেড়েক হল। কিন্তু আর কোন প্রশ্ন কোর না প্লীজ। নিয়তি যখন আবার আমাকে তোমার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তখন সব কথাই তোমাকে খুলে বলব আমি। তোমাকে কিচ্ছুটি জিজ্ঞেস করতে হবে না। আমার সব কথা শুনলেই তুমি তোমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। আমার হাতে আর সময় নেই একদম। প্লীজ। পরশু সকালে আমাকে ফোন করে জানিয়ে দিও কোথায় কখন গিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে হবে। আমি ঠিক চলে আসব সেখানে। এবার প্লীজ দরজার লকটা খুলে দাও”।

পরিতোষ দরজা আনলক করে বলল, “কোথায় যাবে, সেটা বললে আমি পৌঁছে দিতে পারতাম”।

নবনীতা গাড়ি থেকে নেমে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বলল, “আমি সেটা চাই না। তুমি গাড়ি নিয়ে চলে যাও। আমি আমার জায়গায় চলে যাব”।
 

পরিতোষ আবার জিজ্ঞেস করল, “রাতে ফোন করতে পারি”?
 

নবনীতা জবাব দিল, “প্লীজ না পরি। তুমি সকাল সাতটা থেকে দুপুর এগারটার মধ্যে যে কোন সময় আমাকে ফোন করো। এগারটার পর থেকে আমি রাত দশটা এগারটা অব্দি ব্যস্ত থাকি। তখন ফোন সুইচ অফ করে রাখি। মাঝে মাঝে হোল নাইটও ডিউটি করতে হয়। আর তখন সারা রাতই ফোন অফ থাকে আমার। তাই তুমি অন্য সময় ফোন করো না প্লীজ। পরশু সকালে আমাকে জানিয়ে দিও কোন রেস্টুরেন্টে যেতে হবে আমায়। আমি ঠিক পৌঁছে যাব। এবার তুমি যাও। আর মাথা ঠাণ্ডা রেখে গাড়ি চালিও, কেমন”?

পরিতোষ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল, “তোমার মোবাইলে একটা কল করছি আমি। নাম্বারটা সেভ করে রেখো। আর তোমার সময় হলে বা ইচ্ছে হলে যে কোন সময় ফোন করো” বলেই নিজের মোবাইল থেকে নবনীতার ফোনে ডায়াল করল। নবনীতার ফোন বেজে উঠতেই নবনীতা বলল, “হু ঠিক আছে, এবার তুমি এস”।

***************

আগের দুটো রাত পরিতোষ ঠিক মত ঘুমোতেই পারেনি। সারাটা দিন নিজেকে কাজে ডুবিয়ে রাখতে পারলেও রাতে রেস্টুরেন্টে ডিনার খাবার পর ঘরে এসে ঢুকতেই নবনীতার কথা তার মাথায় এসে ভর করত। চোখ বুজলেই ন’ বছর আগের নবনীতার সঙ্গে কাটানো মূহুর্তের বিভিন্ন দৃশ্যগুলো সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মত তার চোখের সামনে ভেসে ভেসে উঠছিল। ওই দুটো বছরের ভেতরের অনেক কথা অনেক স্মৃতি সে তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। অপ্রত্যাশিত ভাবে নবনীতাকে আবার চোখের সামনে দেখতে পেয়েই পুরোনো সমস্ত স্মৃতি সব কথা যেন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে তার মনের ভেতর।

আগের দিন লাঞ্চ করতে করতে হঠাতই সে নবনীতার নাম্বারে একটা ফোন করেছিল। কিন্তু ফোন সুইচড অফ পেয়েছিল। অবশ্য নবনীতা তাকে সেদিনই বলে দিয়েছিল যে সে ডিউটিতে থাকলে বেশীর ভাগ সময়েই তার ফোন সুইচ অফ করে রাখে। বলেছিল সকাল সাতটা থেকে দুপুর এগারটার মধ্যে তাকে ফোন করতে। আগের দিন সকালে ফোন করে নবনীতাকে আজ তার সাথে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করবার কথা বলেছে। নবনীতাও আসবে বলেছে। তবু কাল দুপুরের পর আরো একবার কথাটা মনে করিয়ে দিতে চাইছিল সে। কিন্তু কথা হয়নি।

শেষ রাতের দিকেই সে শুধু একটু ঘুমোতে পেরেছিল। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃকৃত্য সেরে চা খেতে খেতে সে নবনীতার নাম্বারে আবার ফোন করল। কয়েকবার রিং হবার পর নবনীতার সাড়া পাওয়া গেল।

পরিতোষ জিজ্ঞেস করল, “দুপুরে আসছ তো”?
 

নবনীতা জবাব দিল, “হ্যা আসব। তোমার ওই রেস্টুরেন্টে আমি দুটোর আগেই পৌঁছে যাব”।

পরিতোষ বলল, “এ কথাটা মনে করিয়ে দেব বলে কাল তোমাকে দু’বার ফোন করেছিলাম। কিন্তু দু’বারই তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েছিলাম। তাই এখন আবার ফোন করছি। আমিও চেষ্টা করব যাতে দুটোর আগেই সেখানে পৌঁছে যেতে পারি। টেবিল বুক করা আছে আমার নামে। তুমি যদি কোনও ভাবে আমার আগেই সেখানে পৌঁছে যাও, তাহলে রিসেপশন কাউন্টারে যে থাকবে তাকে আমার নাম করে বললেই তোমাকে সে টেবিলে পৌঁছে দেবে ওরা। আমি কিন্তু খুব আশা নিয়ে থাকব। আশা করি আমাকে নিরাশ করবে না তুমি”।

নবনীতা জবাব দিল, “না, আগের ঘটণার পুনরাবৃত্তি আর করব না, সে’কথা তো তোমাকে সেদিনই বলে দিয়েছি। আর আমিও আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। তাই তোমার সাথে অবশ্যই দেখা করব আজ। আমি ঠিক সময় পৌঁছে যাব”।

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 06-03-2020, 07:03 PM



Users browsing this thread: 14 Guest(s)