Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#90
(Update No. 108)

রতীশ রচনার কথার জবাব দেবার আগেই গেটের পাশের ছোট একটা ঘর থেকে একজন বন্দুকধারী সেপাই বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, “কাকে চাই আপনাদের”?

রতীশ তাকে বলল, “আমরা ওএসডি সীমন্তিনী ভট্টচার্য্যির সাথে দেখা করতে চাই”।

লোকটা তীক্ষ্ণ চোখে রতীশ আর রচনাকে দেখতে দেখতে বলল, “ম্যাডাম তো এখন অফিসে আছেন। ছ’টার আগে ফিরবেন না। আপনারা বরং থানায় গিয়েই তার সাথে দেখা করুন, যান”।

রতীশ একটু থতমত খেয়ে বলল, “না মানে, আমরা তো বাইরে থেকে এসেছি। ভেবেছিলুম ওনাকে বোধ হয় এখন বাড়িতেই পাওয়া যাবে। তাছাড়া, আমরা তো এখানে নতুন, থানাটা কোনদিকে কতদুরে তা-ও সঠিক জানিনা। আসলে আমরা তার রিলেটিভ। তার সাথেই দেখা করব বলে এসেছি। থানায় তো আমাদের কোন কাজ নেই”।
 

কনস্টেবলটা বলল, “তাহলে আরেকটু ঘুরে আসুন। ছ’টার পর ম্যাডাম এলে, তখনই বরং আসবেন। সরি স্যার। কাউকে ঢুকতে দেবার পারমিশন নেই। একমাত্র ম্যাডাম পারমিশন দিলেই আমি আপনাদের ভেতরে যেতে দেব। তাই সরি। এখন যান, ছ’টার পর আসবেন”।

এবার রতীশ কিছু বলার আগেই রচনা বলে উঠল, “ঠিক আছে, দাদা। আপনার কথা বুঝেছি। কিন্তু এখানে দাঁড়িয়ে একটা ফোন করতে পারি”?

কনস্টেবলটা জবাবে বলল, “তা করতে পারেন। তবে গেটের কাছ থেকে একটু দুরে সরে গিয়ে ফোনটা করবেন”।
 

রচনা রতীশের হাত ধরে কিছুটা দুরে সরে গিয়ে সীমন্তিনীর ঘরের নাম্বারে ফোন করল। লক্ষ্মী ফোন ধরতেই রচনা জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছ লক্ষ্মীদি”?
 

রচনার গলার স্বর বুঝতে পেরেই লক্ষ্মী বলল, “ওমা বৌদিমণি, তুমি? হ্যাগো বৌদিমণি। আমি তো ভালই আছি। কিন্তু তোমরা তো শুনলুম কালচিনি এসেছ। তা এত কাছে এসেও তোমার দিদিভাইয়ের বাড়ি আসবে না, এ কেমন কথা গো”?

রচনা মিষ্টি সুরে বলল, “দিদিভাইয়ের সাথে তোমার সাথে দেখা না করেই আমরা চলে যাব এ’কথা তুমি ভাবলে কি করে গো লক্ষ্মীদি। একটু বাইরে বেরিয়ে এসে দেখো, আমরা তোমাদের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। গেটের পুলিশ পাহারাদার তো আমাদের ঢুকতে দিচ্ছে না”।
 

লক্ষ্মী এ’কথা শুনে প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বলল, “ওমা! এ কী কথা বলছ তুমি বৌদিমণি? দাঁড়াও দাঁড়াও, আমি এক্ষুনি আসছি গো” বলেই ফোন রেখে দিল।
 

খানিক বাদেই উঁচু কোয়ার্টারের বারান্দায় এক মহিলাকে দেখা গেল। গেটের দিকে একনজর তাকিয়েই সে পড়ি মরি করে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, “ওমা, দেখেছ কী কাণ্ড? এ মুখপোড়া গুলো আমার বৌদিমণিকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না”।

রচনাও চেঁচিয়ে উঠে বলল, “আস্তে আস্তে লক্ষ্মীদি। তুমি পড়ে যাবে তো”।

কনস্টেবলটা লক্ষ্মীকে সিঁড়ি দিয়ে ওভাবে নেমে আসতে দেখে আর রচনাকে লক্ষ্মীর সাথে কথা বলতে দেখে একটু অবাক হল। লক্ষ্মী ততক্ষণে গেটের কাছে এসে পড়েছে। গেটের পাশে গার্ডদের ঘরের দিকে তাকিয়ে সে বলল, “এই বিপিন, তোরা কাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিস না? এরা যে দিদিমণির দাদা বৌদি রে। শীগগির গেট খোল। দিদিমণি যদি জানতে পারে যে তার দাদা বৌদিকে তোরা এভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস, তাহলে তোদের গর্দান যাবে দেখে নিস। শীগগির গেট খুলে দে”?
 

ঘরের ভেতর থেকে আরেকজন সেপাই একটা চাবির গোছা হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেটের তালা খুলতে লাগল। আর রতীশদের কাছে দাঁড়ানো সেপাইটা তাদের কাছে এসে বলল, “সরি স্যার, আমি তো বুঝতে পারিনি যে আপনি ম্যাডামের দাদা। আমার অপরাধ নেবেন না স্যার। আসুন, আসুন। যান ভেতরে যান” বলে রতীশের হাত থেকে লাগেজটা নেবার জন্য হাত বাড়াল।
 

রতীশ হেসে বলল, “আরে না না, ঠিক আছে। আপনাকে নিতে হবে না”।

ততক্ষণে গেট খোলা পেয়েই লক্ষ্মী ছুটে এসে রতীশের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে রচনার পায়ের দিকে ঝুঁকতেই রচনা তার হাত ধরে ফেলে হেসে বলল, “হয়েছে হয়েছে, আমাকে আর প্রণাম করতে হবে না লক্ষ্মীদি” বলে লক্ষ্মীকে বুকে জড়িয়ে ধরল।
 

লক্ষ্মী রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। কেঁদে কেঁদে বলতে লাগল, “ট্রেন থেকে নেমেই যদি তুমি একটা ফোন করে দিতে, তাহলে এভাবে তোমাকে হেনস্থা হতে হত? ছিঃ ছিঃ কী লজ্জার কথা। দিদিমণি শুনলে নাজানি কত কষ্ট পাবেন বল তো। কিন্তু বৌদিমণি? দিদিমণি কি জানেন না তোমরা আসছ”?

রচনা নিজেকে লক্ষ্মীর হাত থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, “দিদিভাইকে আমরা কিচ্ছু বলিনি গো লক্ষ্মীদি। দিদিভাইকে চমকে দেব ভেবেই এভাবে খবর না দিয়ে চলে এসেছি”।

লক্ষ্মী হেসে বলল, “ঠিক আছে, চল, ঘরে চল। আর কতক্ষণ গেটে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। আর মনে হয় দিদিমণিও এখনই চলে আসবেন। দিদিমণিও বোধহয় আন্দাজ করেছেন যে তোমরা আজ আসতে পার। একটু আগেই আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করছিলেন যে ঘরে কেউ এসেছে কি না। এসো দাদাবাবু, দাও ব্যাগটা আমাকে দাও দিকিনি”।

রতীশ বারণ করা সত্বেও লক্ষ্মী ব্যাগটাকে প্রায় ছিনিয়েই নিল। প্রথম পুলিশটি রচনার কাছে এসে হাতজোড় করে বলল, “ম্যাডাম, আপনাদের চিনতে পারিনি বলেই এভাবে গেটে আঁটকে দিয়েছিলাম। প্লীজ কিছু মনে করবেন না”।

রচনা মিষ্টি করে হেসে বলল, “আরে না না, এ কী বলছেন আপনি! আমরা কেউ কিছু মনে করিনি। বরং আপনারা যে অজানা কাউকে আমার দিদিভাইয়ের কোয়ার্টারে ঢুকতে দিচ্ছেন না, সেটা দেখে তো আমরা খুশীই হয়েছি” বলে লক্ষ্মীর হাত ধরে ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।

লক্ষ্মীর ভাবসাব দেখে রতীশ আর রচনা দু’জনেই খুব মজা পাচ্ছিল। সে কী করবে না করবে কিছুই যেন ঠিক করতে পারছিল না। একবার গেস্ট রুমের দিকে যেতে যেতে বলে, “তোমরা এ ঘরে বস বৌদিমণি”। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেই বলে “না না এখানে নয়, দিদিমণির রুমের পাশের রুমটায় চল” আবার থমকে দাঁড়িয়ে বলল, “ও না না, ও’ঘরে বসালে দিদিমণি আবার রাগ করবে কি না জানিনে। কিন্তু তোমাদের গেস্টরুমে নিয়ে গেলেও দিদিমণি আবার গালমন্দ করতে পারেন”।

রচনা হেসে বলল, “লক্ষ্মীদি, তুমি এত ভাবছ কেন? আপাততঃ আমরা না হয় দিদিভাইয়ের ঘরেই বসছি। দিদিভাই এসে যে ঘরে থাকতে বলেন আমরা সে ঘরেই থাকব”।

লক্ষ্মী তাদেরকে সীমন্তিনীর ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বলল, “হ্যা হ্যা, সেটাই ভাল হবে। এস তোমরা। কিন্তু তোমরা কী খাবে বল তো? আগে থেকে কিচ্ছুটি জানাও নি। অন্ততঃ আধঘন্টা আগেও যদি জানতে পারতুম তোমরা আসছ, তাহলে তক্ষনি বাজারে চলে যেতুম”।
 

রচনা ঘরের ভেতরে চারদিকে চোখ বোলাতে বোলাতে বলল, “তোমাকে এখন কোত্থাও যেতে হবে না লক্ষ্মীদি। আমরা কালচিনি থেকে ভাল ভাল মিষ্টি নিয়ে এসেছি। দিদিভাই এলে সবাই মিলে ও’গুলো খাব। তুমি শুধু চা-টা বানিও, তাহলেই হবে। এখন তো ক্ষিদেই পায়নি। দুপুরের খাবার খেয়েই তো আমরা ট্রেনে উঠেছি”।

রতীশ একটা সোফায় বসে পড়েছিল। লক্ষ্মী রচনার কথা শুনে তার হাত ধরে বলল, “বেশ ঠিক আছে। কিন্তু একটু এদিকে এস তো তুমি। দাদাবাবুর পাশে একটুখানি বস তো। আমি একটু মন ভরে দেখি তোমাদের দু’টিকে” বলতে বলতে রচনাকে প্রায় জোর করেই রতীশের পাশে বসিয়ে দিল। তারপর সোফার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে তাদের দিকে দেখতে দেখতে গালে হাত দিয়ে বলল, “ইশ, এ যে সাক্ষাৎ হরপার্বতী গো! দিদিমণির এখানে আসবার দিনটি থেকে তোমাদের কথা শুনতে শুনতে বড্ড লোভ হয়েছিল তোমাদের দু’টিকে দেখতে। কত ভাগ্য করেছিলুম আমি। আজ আমার সে সাধ পূর্ণ করলে তোমরা” বলে মেঝেতে মাথা ঠেকিয়ে তাদের প্রণাম করতেই রচনা বলে উঠল, “আহ লক্ষ্মীদি, কি করছ বল তো তুমি? আমরা দু’জনেই তো তোমার চেয়ে ছোট। এভাবে প্রণাম করে আমাদের কেন লজ্জা দিচ্ছ বল তো”?

লক্ষ্মীকে জোর করে মেঝে থেকে টেনে তুলে রচনা বলল, “আর একটু বাদেই তো অন্ধকার হয়ে যাবে। তার আগে আগে সবগুলো ঘর একটু ঘুরে ঘুরে দেখাও না আমাদের লক্ষ্মীদি”।

লক্ষ্মী খুব খুশী হয়ে রতীশ আর রচনাকে সবগুলো ঘর ঘুরে ঘুরে দেখাতে লাগল। ছোট্ট একটা টিলার ওপর ছিমছাম বাংলো প্যাটার্নের বাড়িটা খুবই সুন্দর। ছোট বড় সব মিলিয়ে মোট ছ’খানা ঘর। আর প্রায় সব ক’টা রুমেরই জানালা দিয়ে চারপাশে যতটুকু দেখা যায় তা সত্যিই খুব মনোরম দৃশ্য। সব কিছু দেখিয়ে লক্ষ্মী বলল, “ও বৌদিমণি। তোমরা একটু বস। দিদি তো এখনও এল না। আমি সন্ধ্যে প্রদীপটা জ্বালিয়ে দিয়ে আসি”।
 

রচনা বলল, “ঠাকুরঘরটা তো দেখাও নি লক্ষ্মী দি? আচ্ছা তুমি যাও। আমি হাত মুখ ধুয়ে কাপড়টা পাল্টে পরে এসে ঠাকুর প্রণাম করছি”।
 

রচনা আর রতীশ দু’জনে হাত মুখ ধুয়ে ঘরের পোশাক পড়ে, ঠাকুরঘরের সামনে এসে প্রণাম করে, বাইরে থেকেই ঘরের ভেতরের সব কিছু দেখতে লাগল। রচনা তারপর রতীশকে বলল, “আমি একটু ঠাকুরের সামনে গিয়ে বসবো সোনা। তুমি কি ভেতরে যাবে? নইলে তুমি দিদিভাইয়ের ঘরে গিয়ে বসো। আমি একটু বাদেই আসছি”।

রতীশ এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বলল, “আমি পেছনের বাগানটা থেকে ঘুরে আসছি। তুমি ঠাকুর প্রণাম সেরে নাও”।

রতীশ চলে যেতে সীমন্তিনী ঠাকুরঘরের ভেতরে ঢুকে প্রথমে ঠাকুরের আসনের সামনে গিয়ে গলবস্ত্র হয়ে হাঁটু মুড়ে ঠাকুর প্রণাম করল। তারপর চোখ বুজে একমনে তার দিদি এবং দিদিভাইয়ের মঙ্গল কামনা করে ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করল। প্রায় মিনিট পাঁচেক বাদে আরেকবার ঠাকুর প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই তার নজর পড়ল একদিকের দেয়ালে টাঙানো একটা ছবির ওপরে। ছবিটা তার স্বামী রতীশের। তবে বেশ পুরনো। দেখে মনে হচ্ছে রতীশের কলেজ জীবনের ছবি এটা। রচনা খুব ভালভাবেই জানে তার দিদিভাই প্রায় সমবয়সী হলেও তার স্বামী রতীশকে যতটা শ্রদ্ধা করেন তার চেয়েও অনেক বেশী ভালোবাসেন। তাই তার ঘরে রতীশের ছবি থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঠাকুর ঘরের দেয়ালে কাউকে প্রিয়জনদের ছবি টাঙিয়ে রাখতে দেখে নি আগে কখনও। তাই মনে মনে একটু অবাক হয়ে ভাবল, দিদিভাই ছবিটা এ ঘরে রেখেছেন কেন? আর ছবিটার ফ্রেমের আকারটাও যেন কেমন অদ্ভুত। দেয়াল থেকে অনেকটাই সামনের দিকে এগিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ছবিটার কাঁচ আজ দেয়ালের মাঝে তিন চার ইঞ্চির মত একটা ফাঁক আছে। ছবিটার পেছনে এতোটা ফাঁক কিসের জন্যে হতে পারে? এ’কথা ভাবতে ভাবতেই রচনা ছবিটার খুব কাছে গিয়ে এ’পাশ ও’পাশ থেকে ছবিটাকে খুব ভালভাবে লক্ষ্য করতে লাগল। সত্যিই ছবির ফ্রেমটা একটা বাক্সের মত মনে হচ্ছে। বেশ শক্ত পোক্ত বাক্সের মত ছবির ফ্রেমটা দু’দিকে দুটো হুকের সাহায্যে দেয়ালে টাঙানো হয়েছে। মনে মনে কৌতূহলী হয়ে সে ছবিটার নিচের দিকের ফ্রেমটা ধরে ছবিটাকে একটু সামনের দিকে টানতেই তার মনে হল ছবিটা বেশ ভারী। আরেকবার অবাক হয়ে সামনে থেকে ছবিটাকে দেখে ভাবতে লাগল ‘ছবিটা এত ভারী হবার কারন কি’? কৌতুহলের নিবৃত্তি করতেই রচনা এবার ছবিটাকে দু’হাতে ধরে দেয়াল থেকে নামিয়ে আনতেই একটা প্লাস্টিকের বোতল ঝুপ করে নিচে পড়ল। রচনা প্রায় চমকে উঠে একবার দড়জার দিকে দেখেই তাড়াতাড়ি বোতলটাকে নিয়ে দেখল বোতলটার গলা অব্দি জল ভরা। কিন্তু এটা ছিল কোথায়? সে তো শুধু ছবিটাই দেয়াল থেকে খুলেছিল। এমন একটা জলের বোতল এখানে এল কোত্থেকে। সঙ্গে সঙ্গেই সে ছবিটাকে উল্টে পেছন দিকে নজর দিতেই দেখতে পেল ছবিটার পেছন দিকে ইঞ্চি চারেক চওড়া একটা তাকের মত। আর সেই তাকের দিকে তাকিয়েই সে বুঝল যে জলের বোতলটা সেখানেই রাখা ছিল। কিছুটা ধূলোর আস্তরনও জমে ছিল তাকটার ওপর। কিন্তু সেখানে বোতলের আকারের একটা পরিস্কার বৃত্ত দেখেই সে বুঝে গেল যে বোতলটা ঠিক এই খানটাতেই রাখা ছিল। এটাও পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল যে পেছনের ওই তাক এবং তাকের ওপর রাখা জলের বোতলটাকে অন্য সকলের চক্ষুর আড়ালে রাখবার জন্যেই ছবির ফ্রেমটাকে একটা বাক্সের আকার দেওয়া হয়েছে। তার মানে তার দিদিভাই এ বোতলটাকে লুকিয়ে রেখেছেন এই ছবির পেছনে। কিন্তু কেন?
 

এদিকে লক্ষ্মী যে কোনও সময় ধুনুচি আর প্রদীপ রাখতে ঠাকুর ঘরে এসে পড়তে পারে। তাই সময় নষ্ট না করে রচনা তাড়াতাড়ি জলের বোতলের মুখটা খুলে বোতলটাকে তার নাকের সামনে নিয়ে গিয়ে ঘ্রান শুঁকল। না, কোনও গন্ধ টন্ধ নেই। মনে হচ্ছে পরিস্কার জলই এটা। সীমন্তিনী এভাবে এমন একটা জলের বোতল এ ছবিটার পেছনে লুকিয়ে রেখেছে কেন তা যেন কিছুতেই তার মাথায় আসছিল না। আর জলটাই বা কিসের হতে পারে?

এ’সব ভাবতে ভাবতেই পাশের ঘরে কারো পায়ের শব্দ শুনেই সে সচকিত হয়ে তাড়াতাড়ি জলের বোতলটাকে ছবির পেছনের তাকটার ওপর রেখে ছবির ফ্রেমটাকে দেয়ালে টাঙিয়ে দিল।

আর প্রায় সাথে সাথেই লক্ষ্মী সব গুলো ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ দেখিয়ে ঠাকুর ঘরে এসে ঢুকল। ধুনুচি আর প্রদীপটা ঠাকুরের আসনের সামনে রেখে ঠাকুর প্রণাম করে উঠে দাঁড়াতেই রচনা তাকে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা লক্ষ্মীদি, এ ছবিটা ঠাকুরঘরে কেন টাঙিয়েছ গো? এটা অন্য কোথাও রাখতে পারতে না”?

লক্ষ্মী ছবিটার দিকে তাকিয়ে বলল, “এ তো দিদিমণিই টাঙিয়েছেন এখানে। দিদিমণি রোজ সকালে স্নান সেরে ঠাকুরঘরে এসে ঠাকুর প্রণাম করবার সময় দাদাবাবুর এ ছবিটাকেও রোজ প্রণাম করেন। অন্য ঘরে রাখলে তিনি হয়তো কোনদিন প্রণাম করতে ভুলে যাবেন। তাই এ ঘরে রেখেছেন, যাতে তিনি কোনদিন তার দাদাভাইকে প্রণাম করতে ভুলে না যান” বলে একটু থেমে আবার বলল, “দিদিমণি তোমাকে আর দাদাবাবুকে খুব ভালবাসেন গো বৌদিমণি”।

রচনা লক্ষ্মীর কথা শুনে বলল, “হ্যাঁগো লক্ষ্মীদি। দিদিভাই তোমার দাদাবাবুকে সত্যিই খুব ভালবাসেন। আর আমি তো আমাদের বিয়ের প্রায় একবছর আগে থেকেই দিদিভাইকে চিনতুম। তখন থেকেই তিনি আমাকে নিজের বোনের মত স্নেহ করেন, ভালবাসেন”।
 

এবার লক্ষ্মী বলল, “দিদিমণি যে এখনো কেন আসছেন না, সেটা তো বুঝতে পাচ্ছি না। কোনদিন ফিরতে দেরী হলে তো ফোন করে জানিয়ে দেন আমাকে। আজ তো ফোনও করেননি। দাঁড়াও, একটা ফোন করে দেখি। তুমিও এসো বৌদিমণি, দিদিমণির ঘরেই বস” বলে রচনাকে নিয়ে আবার সীমন্তিনীর ঘরে এল।
 

রচনা লক্ষ্মীকে বলল, “লক্ষ্মীদি, আমরা যে এসেছি, এ’কথাটা বোল না দিদিভাইকে”।

লক্ষ্মী মুচকি হেসে বলল, “ঠিক আছে”।

সীমন্তিনীর রুমে ঢুকে দেখে রতীশও সেখানে বসে আছে। ঘরের কোনার ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে লক্ষ্মী সীমন্তিনীকে ফোন করার সাথে সাথেই জবাব এল, “ভেবো না লক্ষ্মীদি। আমি ফেরার পথেই আছি। আর দশ মিনিটের ভেতরই পৌঁছে যাব” বলেই ফোন কেটে দিল।

লক্ষ্মী রচনাকে সে’কথা বলতেই রচনা তাদের লাগেজের ভেতর থেকে দুটো প্যাকেট বের করে লক্ষ্মীর হাতে দিয়ে বলল, “লক্ষ্মীদি এগুলো ফ্রিজের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখ। দিদিভাই এলে সবাই একসঙ্গে বসে খাব”।

রচনার কথা শেষ হতে না হতেই বাইরে থেকে সীমন্তিনীর গলা শোনা গেল, “রচু, দরজা খোল”।
 

লক্ষ্মী হেসে বলল, “ওই দিদিমণি এসে গেছেন”।
 

রচনা অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু আমার নাম ধরে ডাকছেন তো? তুমি কি বলে দিয়েছ যে আমরা এসে বসে আছি”।

লক্ষ্মীও একটু অবাক হয়ে বলল, “আমি তো কিছু বলার সুযোগই পাই নি বৌদিমণি! দিদিমণি তো ফোন ধরেই বললেন যে আমি এসে গেছি, ভেব না। আর তারপরই তো ফোন কেটে দিয়েছিলেন”।

বাইরে থেকে এমন সময় সীমন্তিনী আবার চেঁচিয়ে বলল, “কইরে রচু। দরজাটা খোল সোনা”?

রচনা আর দেরী না করে দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে সীমন্তিনীকে জড়িয়ে ধরতে গিয়েই থমকে গেল। সীমন্তিনীর দু’হাতে বেশ কয়েকটা ব্যাগ। সীমন্তিনী বলল, “দাঁড়া দাঁড়া। আগে আমার হাতের জিনিস গুলো রাখতে দে”।

রচনার পেছন পেছন লক্ষ্মীও চলে এসেছিল। সে সীমন্তিনীর হাত থেকে অফিসের ব্রীফকেস আর তিন চারটে ব্যাগ নিতে নিতে বলল, “ওমা, তুমি কি বাজারে গিয়েছিলে নাকি গো দিদিমণি? কিন্তু এত কিছু কী এনেছ”?
 

সীমন্তিনী ছুটে সামনের রান্না ঘরের বেসিনে হাতটা ধুয়েই রচনাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুই এত দুষ্টুমি কোথায় শিখেছিস বল তো রচু? আমাকে চমকে দেবার জন্য সব আটঘাট বেঁধেও তো শেষ রক্ষা করতে পারলি নে। তা দাদাভাই কোথায় রে”?

রচনা সীমন্তিনীর হাত ধরে বলল, “তোমার ঘরে বসে আছেন। চল। কিন্তু তুমি আগে থেকেই কিকরে জানতে পারলে যে আমরা এসেছি? ভাই তো আমাকে কথা দিয়েছিল তোমাকে বলবে না। আর লক্ষ্মীদিও জানায়নি, তাহলে”?
 

সীমন্তিনী নিজের ঘরে ঢুকে রতীশের পাশে বসে তার একটা হাত জড়িয়ে ধরে বলল, “ট্রেনটা আজ কুড়ি মিনিট লেটে এসেছে জানি। এছাড়া আর কোনও সমস্যা হয়নি তো রাস্তায় দাদাভাই”?
 

রতীশ বলল, “নারে, রাস্তায় আর কোন সমস্যা হয়নি। তবে সমস্যা একটু হয়েছিল তোর কোয়ার্টারের গেটে। তোর পাহারাদাররা তো ঢুকতেই দিচ্ছিল না আমাদের”।
 

সীমন্তিনী রতীশের হাতটা আগের মতই জড়িয়ে ধরে থেকে বলল, “সরি রে দাদাভাই। আসলে তোদেরকে তো এ’কথাটা কখনো বলিনি। ওদের ওপর ওপর থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অচেনা কাউকে যেন আমার কোয়ার্টারের কম্পাউণ্ডের ভেতর ঢুকতে না দেয়। তবে আমিও যদি তোদের আসবার ব্যাপারটা জানতুম তাহলে ওদের আগে থাকতেই বলে দিতুম। কিন্তু তোরা তো আমাকে সারপ্রাইজ দেবার প্ল্যান করে আগে থেকে কিছুই বুঝতে দিসনি। যাকগে, সে’জন্যে আমাকে ক্ষমা করিস দাদাভাই”।
 

রচনা সীমন্তিনীর আরেকপাশে বসে বলল, “কিন্তু তুমি আগে থেকেই বুঝে ফেললে কিকরে গো”?

সীমন্তিনী রচনার মুখটাকে নিজের কাঁধে চেপে ধরে আদুরে ভঙ্গীতে বলল, “আমার দুষ্টু রচু সোনা। আমি যে একজন আইপিএস অফিসার সেটা ভুলে গেছ তুমি? শোন, আমার আজ প্রায় সারাটা দিনই মিটিঙে মিটিঙে কেটেছে। প্রায় সওয়া পাঁচটার দিকে মিটিং শেষ হতেই তোকে ফোন করলুম। তুই তো তোর প্ল্যানমাফিকই কলটা রিসিভ করিস নি। তারপর দাদাভাইয়ের মোবাইলে করেও দেখলাম একই ব্যাপার। তখন মনে একটু ভাবনা হচ্ছিল। তারপর ভাইকে ফোন করলাম। ভাই বলল যে তোদের এখানে আসবার কথা সে শুনেছিল ঠিকই। কিন্তু তোরা ট্রেনে রওনা হয়েছিস কিনা তা সে জানে না। তখনই মনে প্রথম সন্দেহ হল। নিজের ছোড়দি জামাইবাবু তাদের বাড়িতে এসেছে, আর ভাই তাদের কথা ঠিক মত বলতে পারছে না! ভাই তো এতটা ইররেসপনসেবল ছেলে নয়। মনে মনে ভাবলাম আমাকে সারপ্রাইজ দিবি বলেই হয়ত তোরা ভাইকে ওভাবে শিখিয়ে পড়িয়ে এসেছিস। তখন ষ্টেশনে ফোন করে জানলুম, গাড়িটা কুড়ি মিনিট লেটে এসেছে। তারপর ঘরে ফোন করলাম। লক্ষ্মীদি জানাল ঘরে কেউ আসেনি। মনে মনে হিসেব কষে দেখলুম, তোরা হয়ত তখন ষ্টেশন থেকে আমার কোয়ার্টারের রাস্তায় আছিস। মিনিট দশেক বাদেই গেটে ডিউটিতে থাকা একটা গার্ডকে ফোন করে তোদের চেহারার বর্ণনা দিয়ে জিজ্ঞেস করলুম এমন দেখতে কেউ এসেছে কিনা। ওরা আমাকে কনফার্ম করল। ব্যস, হয়ে গেল। তারপর সোজা বাড়ি না এসে মার্কেটে চলে গেলাম। সেখান থেকে মাছ মাংস ফল আর কিছু ভেজিটেবলস কিনে ঘরে ফিরে বাইরে থেকেই তোর নাম ধরে ডাকলুম”।


______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 06-03-2020, 07:03 PM



Users browsing this thread: