05-03-2020, 02:11 AM
পর্ব-০৯
বন্দনা ফিরে যায় তার নিজের জীবনে ডিব্রুগড়ে, তার নাচের কলেজ তার পুরনো বন্ধু বান্ধবীদের কাছে। নিরুপম বেশ কয়েক বার ফোন করেছিলো কিন্তু আসেনি। বন্দনা অনেক বার করে জিজ্ঞেস করে “আমরা কবে বিয়েটা করবো?” নিরুপম প্রত্যেক বার একই উত্তর দেয় “আরে হানি, একটু দাঁড়াও আমি কয়েকটা এক্সিবিশন করে নেই তারপরে বিয়ে করে ফেলব। এতো তারা কিসের? মন থেকে তো আমরা বিয়েটা করেই ফেলেছি তাই না হানি!“
মার্চ মাসে বন্দনার বাবা রিটায়ার করেন। কৃষ্ণনগরের পুরানো বাড়ির ভাগ বিক্রি করে এপ্রিল মাসে বন্দনারা কলকাতায় চলে আসে। ওর বাবা বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে একটা তিন রুমের ফ্লাট কেনেন। পুবালির বিয়ে পরে বন্দনা প্রথম প্রথম বেশ কয়েক বার বম্বেতে ফোন করেছিলো, দিনে দিনে সেটা কমে যায়। পুবালি অনেক বার ওকে বম্বে ঘুরে যেতে বলে, কিন্তু নিজের নাচের ক্লাস ছেড়ে বন্দনার আর বম্বে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
কলকাতায় ফিরে বন্দনা ভাবে শান্তিনিকেতন অনেক কাছে, নিরুপমের সাথে দেখা করার আর তাদের মাঝে যে দূরত্বটা ছিল সেটা পুশিয়ে নেবার ভাল সময়। কলকাতায় বন্দনা মমতাশঙ্করের নাচের ট্রুপ জয়েন করে। মাঝে মাঝেই ওর প্রোগ্রাম হয় বাংলাদেশ দিল্লি বম্বে আরও নানান জায়গায়। বন্দনা শান্তিনিকেতন এবং ওর নাচ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। মেয়ের বয়স চব্বিশ পার হতে চলে, বন্দনার বাবা মেয়ের জন্য ছেলে দেখতে শুরু করে দেন। প্রথম প্রথম বন্দনা বেশ কয়েকবার বাধা দিয়েছিলো, কিন্তু বাবা বেশি দিন দেরি করতে চাননি।
একদিন বন্দনা ফোন করে নিরুপমকে জানায় যে বাবা তার বিয়ে দিতে চাইছেন। সেই শুনে নিরুপম আবার বলে “কিছু দিন ওয়েট করো আমি কিছু একটা ব্যাবস্তা করে নেবো।“ বন্দনার একগুঁয়েমি দেখে বাবা শেষ পর্যন্ত একটা ছেলে দেখেন, ছেলেটি বিডিও, ঝারগ্রামের দিকে পোস্টিং। প্রেমে পাগল বন্দনা কারুর কথায় কান দেয়না, নিরুপম কে ওর চাই ই চাই।
প্রায় এক মাস নিরুপমের সাথে দেখা হয়নি বন্দনার। মনটা আর বাড়িতে থাকতে চাইলনা। সকাল থেকে ইলশেগুরি বৃষ্টির খেলা চলেছে, এই রকম দিনে, ভেজা ভেজা হাওয়ায় বন্দনার হৃদয়টা দুলে ওঠে, “যদি কাছে পেতাম আমি তাহলে নিজেকে উজার করে খেলায় মত্ত হতাম। ডুবিয়ে দিতাম নিজেকে নিরুপমের ভালবাসায়।“ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের হাত চলে যায় উন্নত বক্ষে, রক্ত গরম হয়ে ওঠে, মত্ত খেলায় কেলি করতে মন ভীষণ ভাবে উন্মুখ হয়ে পরে। কোমল বক্ষ যুগল শির শির করে কাঁপতে থাকে, হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরে নিজের ভরাট উন্নত কুচ। বৃন্ত দুটি যেন ফেটে বেরিয়ে আসবে মনে হয়, দুই সুডৌল থাইএর মাঝে শিরশির করে ওঠে রক্ত। ঝির ঝির বারী ধারা যেমন জানালার বাইরে ঝরতে থাকে তেমনি বন্দনার নাভির নিচে বইতে থাকে নিজের ফল্গু নদী। সর্ব শক্তি দিয়ে সুন্দর মসৃণ থাই দুটি পরস্পরের সাথে ঘসতে লাগলো নিজের জ্বালা নিবারন করবার জন্য। এখনি ওর চাই নিরুপমকে না হলে ওর পিপাসা মিটবে না। নাভির নিচে, তলপেটের নিচ থেকে শিরশির করতে করতে কেমন যেন শক্তি হারিয়ে এলিয়ে পরে বিছানার ওপরে। অনেক ক্ষণ পরে চোখ মেলে তাকায় বন্দনা “না আমাকে যেতেই হবে।” পাগল হয়ে উঠেছে সে এক মত্ত হস্তিনির ন্যায়।
“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, কমলিকার বাড়িতে” এই বলে একটা ছোটো ব্যাগে নিজের কিছু জামা কাপড় নিয়ে বেরিয়ে যায়। একটা চিঠি লিখে রেখে যায় ড্রেসিং টেবিলের ওপরে
“আমি নিরুপমের কাছে চললাম, আমাকে খুঁজতে এসনা লাভ হবে না।”
দুর্গাপুর থেকে বাস ধরে ও অনায়াসে শান্তিনিকেতন পৌঁছে যাবে, নিরুপম কে একটা বড় সারপ্রাইস দেবে। ব্যাস চনমনে উচ্ছল তরঙ্গের ন্যায় বন্দনা বেরিয়ে পরে বাড়ি থেকে তার হৃদয়ের মোহনার সঙ্গমে।
ট্রেন থেকে নেমে দেখে চারদিকে কালো করে মেঘ জমে এসেছে, ঝড় বইছে, তুমুল বৃষ্টি। এই ঝড় মাথায় নিয়ে বেরিয়ে কি করবে বন্দনা সাত পাঁচ ভাবতে থাকে “পুবালি বাড়িতে আজ রাতটা কাটিয়ে দিলে হয়, কাল সকালের বাস ধরে যাওয়া যাবে।” বাবা মা যে চিন্তা করবেন সেই টুকুও ওর মাথায় খেলে না।
দিদির বিয়ে হয়ে যাবার পরে স্যামন্তক পরীক্ষার জন্য নিজেকে পরাশুনায় ডুবিয়ে ফেলে। মে মাসে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার দু দিন পরেই চলে গেছিলো দিদির কাছে বম্বেতে, বাড়িতে মন লাগছিলনা ওর। হপ্তা দুএক থাকার পরে ফিরে আসে। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার পরে বেশ কয়েকটা কোম্পানিতে চাকরির দরখাস্ত দিয়েছে কিন্তু গ্র্যাজুয়েট না হওয়া পর্যন্ত কেউ চাকরি দেবে না। ইতি মধ্যে ও দিল্লি এবং পুনে তে গিয়ে কয়েকটা ইন্টারভিউ ও দিয়ে এসেছে।
বম্বে গিয়ে এলিফেন্তা কেভে হারিয়ে গেছিলো স্যামন্তক, দিদি জামাইবাবুর সাথে ঘুরতে ঘুরতে, কিছু না পেয়ে শেষ মেশ জেটি তে বসে থাকে কখনো তো আসবে। স্যামন্তককে খুঁজে না পেয়ে পুবালির চেয়ে সিতাভ্রর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেছিলো “বউয়ের একটি মাত্র ভাই আমার একটি মাত্র শালা, তার দর অনেক বেশি।”
দুপুরের পর থেকেই আকাশে মেঘ জমে এসেছে। মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া বইছে। তার সাথে ভেসে আসছে শুকনো মাটির গন্ধ, লাল মাটি একটু পরেই ভিজে যাবে বরষার জলে। স্যামন্তকের ঐ মাটি ভেজা সোঁদা সোঁদা গন্ধটা বুক ভরে নিতে খুব ভাল লাগে। মাঝে মাঝে গুর গুর করে ওঠে আকাশের কালো মেঘ। রাস্তার পাশের বিপিন দেবদারুর গাছ গুলো হাওয়ার দলে মাথা নাড়াতে থাকে। সন্ধ্যে প্রায় ঘনিয়ে আসে। স্যামন্তক একা একা বসে ছিল সোফায়, কিছু করার নেই। কত আর টিভি দেখে কাটানো যায়। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই রকম ঝড় বৃষ্টি তো অবশ্যম্ভাবী কিছু তো করার নেই। বাবা মা, বোন জেঠু জেঠিমা সবাই মিলে বম্বে ঘুরতে গেছে দিদির বাড়িতে। সিতাভ্রদা দুই মাসের জন্য রাশিয়া গেছে কোনও ট্রেনিংএ, তাই স্যামন্তক বাড়ি পাহারা দিচ্ছে।
একবার জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকাল স্যামন্তক “আজকে আর আড্ডা মারতে যাওয়া হবেনা।” মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির অনির্বাণএর সাথে সিটি সেন্টাররে গিয়ে আড্ডা মারে। কিন্তু আজ সেটা আকাশের বাদল ভাঞ্ছি দিল। দিদি দিনে তিন বার করে ফোন করবে, সকাল বেলা খাওয়া হল কিনা, দুপুরে খেয়েছিস আবার রাতে একবার করে ফোন করা চাই “কি খেলি আজ, কি রান্না করে গেছিলো কাজের মাসি।“ রোজ একই উত্তর দিতে হয় তাও ভাল লাগে। কাজের মাসি দু দিন আসবেনা, ওর ছেলের শরীর খারাপ তাই দু দিনের রান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে।
বৃষ্টিটা শুরু হয়ে গেলো, প্রথম প্রথম ঝিরঝিরে তার পরে দমকা এক বাতাসে মেঘ গুলো গরগর করতে শুরু করলো। করকর করাৎ করে পাশেই কোথাও বাজ পড়লো মনে হল। জানালা গুলো বন্ধ করে রান্না ঘরে ঢোকে। এক কাপ কফি খেলে ভাল হতো। কফিটা একটু করা করে বানিয়ে একটা সিগারেট জ্বালায় স্যামন্তক, বাল্কনিতে বসে বৃষ্টির আনন্দ নিতে নিতে কফির কাপে ছোটো করে চুমুক দিতে থাকে। ঘরের সব আলো নিভিয়ে দেয় আজ ওর অন্ধকারে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। এমন সময় টেলিফোনটা বেজে ওঠে, ভাবতে থাকে কে ফোন করে ওয়ি সময় দিদি তো দুপুরে একবার ফোন করেছিলো আবার কি ফোন করবে
“এই কাক কি করছিস একা একা, দুপুরে খেয়েছিলিস ঠিক করে…”
দিদির গলা শুনে চমকে ওঠে স্যামন্তক “তুই আবার এখন ফোন করলি…”
“একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল তোর কাছে…” গলায় একটু দুষ্টুমি মাখিয়ে পুবালি জিজ্ঞেস করে ভাইকে।
“কি বল?” প্রশ্ন করে স্যামন্তক।
–“পুনেতে যখন ইন্টার্ভিউ দিতে গেছিলি তখন শকুন্তলার সাথে দেখা করেছিলি? কেমন লাগে তোর মেয়েটাকে।”
সিতাভ্রর খুড়তুতো বোন শকুন্তলা, বিয়ের সময়ে আলাপ হয়েছিল মানে এক বার দেখা হয়েছিল। কিন্তু ওর সাথে সেই রকম ভাবে কথা হয়নি স্যামন্তকের। মেয়েটা কচি কিন্তু বেশ ডাগর দেখতে। কাঁচা বয়সের তুলনায় শরীরের গঠনটা বেশ উন্নত। পুবালি অনেক বার বলেছিল ওকে দেখা করতে কিন্তু সময়ের অভাবে ওর দেখা করে ওঠে হয় নি। সেটা ও আর জানায় নি দিদিকে।
আর তো মিথ্যে কথা বলা যায়না “না রে কাজের চাপে আর দেখা করা হয়ে ওঠে নি।”
—“ধুর তোর দারা কিছুই হবেনা, পুনের ইন্টারভিউ টা যদি হয়ে যায় তাহলে খুব ভাল হবে। তুই আমার কাছে প্রত্যেক শুক্রবার রাতে চলে আসতে পারবি আর সোমবার সকালে ফিরে যেতে পারবি।”
“তুই এই জন্যে ফোন করেছিলি? তুই ও না একটা পাগলী মেয়ে।” হাসতে হাসতে বলে স্যামন্তক “এখানে খুব ঝড় হচ্ছে, দারুন লাগছেরে। বেশ একটা কড়া করে কফি বানিয়েছি আর সাথে একটা সিগারেট।”
একটু রাগত শুরে দিদি ধমক দেয় “একা একা দিনে কটা করে সিগারেট খাওয়া হচ্ছে রে তোর?”
এই প্রশ্নের উত্তর ও দিতে চায়না “ফোন রাখ…”
একটু রেগেই ফোনটা কেটে দেয় পুবালি “মড় গে যা… যাই হোক রাতে খাওয়ার পরে ফোন করিস।”
একটু পড়ে কারেন্ট চলে যায়, স্যামন্তক দুটো মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়ে একটা ফ্রিজের ওপরে রাখে একটা খাবার টেবিলে রাখে। চফির কাপটা নিয়ে চুপ করে বসে পড়ে সোফায় “ধুর শালা, এই সময়ে কি কারেন্ট যায়।” একবার মনে করতে চেষ্টা করে শকুন্তলার মুখটা, বড় মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে, যদিও বিশেষ কিছু মনে করে উঠতে পারেনা মুখের আদল আর মিষ্টতা টাকে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। “কে এলরে বাবা এই ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে।” যাই হোক নিচে তো যেতে হবে, টর্চটা হাতে নিয়ে নিচে গিয়ে দরজা খুলতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভিজে চুপসা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা সাদা পায়রা থর থর করে কাঁপছে, পায়রাটার নাম বন্দনা।
চলবে....
বন্দনা ফিরে যায় তার নিজের জীবনে ডিব্রুগড়ে, তার নাচের কলেজ তার পুরনো বন্ধু বান্ধবীদের কাছে। নিরুপম বেশ কয়েক বার ফোন করেছিলো কিন্তু আসেনি। বন্দনা অনেক বার করে জিজ্ঞেস করে “আমরা কবে বিয়েটা করবো?” নিরুপম প্রত্যেক বার একই উত্তর দেয় “আরে হানি, একটু দাঁড়াও আমি কয়েকটা এক্সিবিশন করে নেই তারপরে বিয়ে করে ফেলব। এতো তারা কিসের? মন থেকে তো আমরা বিয়েটা করেই ফেলেছি তাই না হানি!“
মার্চ মাসে বন্দনার বাবা রিটায়ার করেন। কৃষ্ণনগরের পুরানো বাড়ির ভাগ বিক্রি করে এপ্রিল মাসে বন্দনারা কলকাতায় চলে আসে। ওর বাবা বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে একটা তিন রুমের ফ্লাট কেনেন। পুবালির বিয়ে পরে বন্দনা প্রথম প্রথম বেশ কয়েক বার বম্বেতে ফোন করেছিলো, দিনে দিনে সেটা কমে যায়। পুবালি অনেক বার ওকে বম্বে ঘুরে যেতে বলে, কিন্তু নিজের নাচের ক্লাস ছেড়ে বন্দনার আর বম্বে যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
কলকাতায় ফিরে বন্দনা ভাবে শান্তিনিকেতন অনেক কাছে, নিরুপমের সাথে দেখা করার আর তাদের মাঝে যে দূরত্বটা ছিল সেটা পুশিয়ে নেবার ভাল সময়। কলকাতায় বন্দনা মমতাশঙ্করের নাচের ট্রুপ জয়েন করে। মাঝে মাঝেই ওর প্রোগ্রাম হয় বাংলাদেশ দিল্লি বম্বে আরও নানান জায়গায়। বন্দনা শান্তিনিকেতন এবং ওর নাচ নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরে। মেয়ের বয়স চব্বিশ পার হতে চলে, বন্দনার বাবা মেয়ের জন্য ছেলে দেখতে শুরু করে দেন। প্রথম প্রথম বন্দনা বেশ কয়েকবার বাধা দিয়েছিলো, কিন্তু বাবা বেশি দিন দেরি করতে চাননি।
একদিন বন্দনা ফোন করে নিরুপমকে জানায় যে বাবা তার বিয়ে দিতে চাইছেন। সেই শুনে নিরুপম আবার বলে “কিছু দিন ওয়েট করো আমি কিছু একটা ব্যাবস্তা করে নেবো।“ বন্দনার একগুঁয়েমি দেখে বাবা শেষ পর্যন্ত একটা ছেলে দেখেন, ছেলেটি বিডিও, ঝারগ্রামের দিকে পোস্টিং। প্রেমে পাগল বন্দনা কারুর কথায় কান দেয়না, নিরুপম কে ওর চাই ই চাই।
প্রায় এক মাস নিরুপমের সাথে দেখা হয়নি বন্দনার। মনটা আর বাড়িতে থাকতে চাইলনা। সকাল থেকে ইলশেগুরি বৃষ্টির খেলা চলেছে, এই রকম দিনে, ভেজা ভেজা হাওয়ায় বন্দনার হৃদয়টা দুলে ওঠে, “যদি কাছে পেতাম আমি তাহলে নিজেকে উজার করে খেলায় মত্ত হতাম। ডুবিয়ে দিতাম নিজেকে নিরুপমের ভালবাসায়।“ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের হাত চলে যায় উন্নত বক্ষে, রক্ত গরম হয়ে ওঠে, মত্ত খেলায় কেলি করতে মন ভীষণ ভাবে উন্মুখ হয়ে পরে। কোমল বক্ষ যুগল শির শির করে কাঁপতে থাকে, হাতের তালু দিয়ে চেপে ধরে নিজের ভরাট উন্নত কুচ। বৃন্ত দুটি যেন ফেটে বেরিয়ে আসবে মনে হয়, দুই সুডৌল থাইএর মাঝে শিরশির করে ওঠে রক্ত। ঝির ঝির বারী ধারা যেমন জানালার বাইরে ঝরতে থাকে তেমনি বন্দনার নাভির নিচে বইতে থাকে নিজের ফল্গু নদী। সর্ব শক্তি দিয়ে সুন্দর মসৃণ থাই দুটি পরস্পরের সাথে ঘসতে লাগলো নিজের জ্বালা নিবারন করবার জন্য। এখনি ওর চাই নিরুপমকে না হলে ওর পিপাসা মিটবে না। নাভির নিচে, তলপেটের নিচ থেকে শিরশির করতে করতে কেমন যেন শক্তি হারিয়ে এলিয়ে পরে বিছানার ওপরে। অনেক ক্ষণ পরে চোখ মেলে তাকায় বন্দনা “না আমাকে যেতেই হবে।” পাগল হয়ে উঠেছে সে এক মত্ত হস্তিনির ন্যায়।
“আমি একটু বাইরে যাচ্ছি, কমলিকার বাড়িতে” এই বলে একটা ছোটো ব্যাগে নিজের কিছু জামা কাপড় নিয়ে বেরিয়ে যায়। একটা চিঠি লিখে রেখে যায় ড্রেসিং টেবিলের ওপরে
“আমি নিরুপমের কাছে চললাম, আমাকে খুঁজতে এসনা লাভ হবে না।”
দুর্গাপুর থেকে বাস ধরে ও অনায়াসে শান্তিনিকেতন পৌঁছে যাবে, নিরুপম কে একটা বড় সারপ্রাইস দেবে। ব্যাস চনমনে উচ্ছল তরঙ্গের ন্যায় বন্দনা বেরিয়ে পরে বাড়ি থেকে তার হৃদয়ের মোহনার সঙ্গমে।
ট্রেন থেকে নেমে দেখে চারদিকে কালো করে মেঘ জমে এসেছে, ঝড় বইছে, তুমুল বৃষ্টি। এই ঝড় মাথায় নিয়ে বেরিয়ে কি করবে বন্দনা সাত পাঁচ ভাবতে থাকে “পুবালি বাড়িতে আজ রাতটা কাটিয়ে দিলে হয়, কাল সকালের বাস ধরে যাওয়া যাবে।” বাবা মা যে চিন্তা করবেন সেই টুকুও ওর মাথায় খেলে না।
দিদির বিয়ে হয়ে যাবার পরে স্যামন্তক পরীক্ষার জন্য নিজেকে পরাশুনায় ডুবিয়ে ফেলে। মে মাসে পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার দু দিন পরেই চলে গেছিলো দিদির কাছে বম্বেতে, বাড়িতে মন লাগছিলনা ওর। হপ্তা দুএক থাকার পরে ফিরে আসে। পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবার পরে বেশ কয়েকটা কোম্পানিতে চাকরির দরখাস্ত দিয়েছে কিন্তু গ্র্যাজুয়েট না হওয়া পর্যন্ত কেউ চাকরি দেবে না। ইতি মধ্যে ও দিল্লি এবং পুনে তে গিয়ে কয়েকটা ইন্টারভিউ ও দিয়ে এসেছে।
বম্বে গিয়ে এলিফেন্তা কেভে হারিয়ে গেছিলো স্যামন্তক, দিদি জামাইবাবুর সাথে ঘুরতে ঘুরতে, কিছু না পেয়ে শেষ মেশ জেটি তে বসে থাকে কখনো তো আসবে। স্যামন্তককে খুঁজে না পেয়ে পুবালির চেয়ে সিতাভ্রর অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে গেছিলো “বউয়ের একটি মাত্র ভাই আমার একটি মাত্র শালা, তার দর অনেক বেশি।”
দুপুরের পর থেকেই আকাশে মেঘ জমে এসেছে। মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া বইছে। তার সাথে ভেসে আসছে শুকনো মাটির গন্ধ, লাল মাটি একটু পরেই ভিজে যাবে বরষার জলে। স্যামন্তকের ঐ মাটি ভেজা সোঁদা সোঁদা গন্ধটা বুক ভরে নিতে খুব ভাল লাগে। মাঝে মাঝে গুর গুর করে ওঠে আকাশের কালো মেঘ। রাস্তার পাশের বিপিন দেবদারুর গাছ গুলো হাওয়ার দলে মাথা নাড়াতে থাকে। সন্ধ্যে প্রায় ঘনিয়ে আসে। স্যামন্তক একা একা বসে ছিল সোফায়, কিছু করার নেই। কত আর টিভি দেখে কাটানো যায়। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই রকম ঝড় বৃষ্টি তো অবশ্যম্ভাবী কিছু তো করার নেই। বাবা মা, বোন জেঠু জেঠিমা সবাই মিলে বম্বে ঘুরতে গেছে দিদির বাড়িতে। সিতাভ্রদা দুই মাসের জন্য রাশিয়া গেছে কোনও ট্রেনিংএ, তাই স্যামন্তক বাড়ি পাহারা দিচ্ছে।
একবার জানালার বাইরে আকাশের দিকে তাকাল স্যামন্তক “আজকে আর আড্ডা মারতে যাওয়া হবেনা।” মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির অনির্বাণএর সাথে সিটি সেন্টাররে গিয়ে আড্ডা মারে। কিন্তু আজ সেটা আকাশের বাদল ভাঞ্ছি দিল। দিদি দিনে তিন বার করে ফোন করবে, সকাল বেলা খাওয়া হল কিনা, দুপুরে খেয়েছিস আবার রাতে একবার করে ফোন করা চাই “কি খেলি আজ, কি রান্না করে গেছিলো কাজের মাসি।“ রোজ একই উত্তর দিতে হয় তাও ভাল লাগে। কাজের মাসি দু দিন আসবেনা, ওর ছেলের শরীর খারাপ তাই দু দিনের রান্না করে ফ্রিজে রেখে গেছে।
বৃষ্টিটা শুরু হয়ে গেলো, প্রথম প্রথম ঝিরঝিরে তার পরে দমকা এক বাতাসে মেঘ গুলো গরগর করতে শুরু করলো। করকর করাৎ করে পাশেই কোথাও বাজ পড়লো মনে হল। জানালা গুলো বন্ধ করে রান্না ঘরে ঢোকে। এক কাপ কফি খেলে ভাল হতো। কফিটা একটু করা করে বানিয়ে একটা সিগারেট জ্বালায় স্যামন্তক, বাল্কনিতে বসে বৃষ্টির আনন্দ নিতে নিতে কফির কাপে ছোটো করে চুমুক দিতে থাকে। ঘরের সব আলো নিভিয়ে দেয় আজ ওর অন্ধকারে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে। এমন সময় টেলিফোনটা বেজে ওঠে, ভাবতে থাকে কে ফোন করে ওয়ি সময় দিদি তো দুপুরে একবার ফোন করেছিলো আবার কি ফোন করবে
“এই কাক কি করছিস একা একা, দুপুরে খেয়েছিলিস ঠিক করে…”
দিদির গলা শুনে চমকে ওঠে স্যামন্তক “তুই আবার এখন ফোন করলি…”
“একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল তোর কাছে…” গলায় একটু দুষ্টুমি মাখিয়ে পুবালি জিজ্ঞেস করে ভাইকে।
“কি বল?” প্রশ্ন করে স্যামন্তক।
–“পুনেতে যখন ইন্টার্ভিউ দিতে গেছিলি তখন শকুন্তলার সাথে দেখা করেছিলি? কেমন লাগে তোর মেয়েটাকে।”
সিতাভ্রর খুড়তুতো বোন শকুন্তলা, বিয়ের সময়ে আলাপ হয়েছিল মানে এক বার দেখা হয়েছিল। কিন্তু ওর সাথে সেই রকম ভাবে কথা হয়নি স্যামন্তকের। মেয়েটা কচি কিন্তু বেশ ডাগর দেখতে। কাঁচা বয়সের তুলনায় শরীরের গঠনটা বেশ উন্নত। পুবালি অনেক বার বলেছিল ওকে দেখা করতে কিন্তু সময়ের অভাবে ওর দেখা করে ওঠে হয় নি। সেটা ও আর জানায় নি দিদিকে।
আর তো মিথ্যে কথা বলা যায়না “না রে কাজের চাপে আর দেখা করা হয়ে ওঠে নি।”
—“ধুর তোর দারা কিছুই হবেনা, পুনের ইন্টারভিউ টা যদি হয়ে যায় তাহলে খুব ভাল হবে। তুই আমার কাছে প্রত্যেক শুক্রবার রাতে চলে আসতে পারবি আর সোমবার সকালে ফিরে যেতে পারবি।”
“তুই এই জন্যে ফোন করেছিলি? তুই ও না একটা পাগলী মেয়ে।” হাসতে হাসতে বলে স্যামন্তক “এখানে খুব ঝড় হচ্ছে, দারুন লাগছেরে। বেশ একটা কড়া করে কফি বানিয়েছি আর সাথে একটা সিগারেট।”
একটু রাগত শুরে দিদি ধমক দেয় “একা একা দিনে কটা করে সিগারেট খাওয়া হচ্ছে রে তোর?”
এই প্রশ্নের উত্তর ও দিতে চায়না “ফোন রাখ…”
একটু রেগেই ফোনটা কেটে দেয় পুবালি “মড় গে যা… যাই হোক রাতে খাওয়ার পরে ফোন করিস।”
একটু পড়ে কারেন্ট চলে যায়, স্যামন্তক দুটো মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়ে একটা ফ্রিজের ওপরে রাখে একটা খাবার টেবিলে রাখে। চফির কাপটা নিয়ে চুপ করে বসে পড়ে সোফায় “ধুর শালা, এই সময়ে কি কারেন্ট যায়।” একবার মনে করতে চেষ্টা করে শকুন্তলার মুখটা, বড় মিষ্টি দেখতে মেয়েটাকে, যদিও বিশেষ কিছু মনে করে উঠতে পারেনা মুখের আদল আর মিষ্টতা টাকে। এমন সময় দরজায় কেউ নক করে। “কে এলরে বাবা এই ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে।” যাই হোক নিচে তো যেতে হবে, টর্চটা হাতে নিয়ে নিচে গিয়ে দরজা খুলতেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ভিজে চুপসা হয়ে দাঁড়িয়ে একটা সাদা পায়রা থর থর করে কাঁপছে, পায়রাটার নাম বন্দনা।
চলবে....