Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#86
(Update No. 104)

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “তোমার মোবাইল নাম্বারটা বল”।

নবনীতা চুড়িদার পাজামা পড়তে পড়তে বলল, “ম্যাম, আমার তো মোবাইল নেই”।

মহিমা বলল, “ওহ, তাহলে বীথি। তোমার কাছে যে সেকেণ্ড মোবাইলটা আছে সেটা আপাততঃ ওকে দিয়ে দিও। আগামীকালই আমি ওকে প্রথম কাস্টমার দেব। আর আমি তোমাকে এখন কিছু টাকা দিচ্ছি। তা থেকে আজই ওকে একটা নতুন মোবাইল কিনে দিও। আর সেটা এক্টিভ হয়ে গেলে তোমার মোবাইলটা তুমি আবার ফেরত নিয়ে নিও আর ওর নতুন মবাইল নাম্বারটা আমাকে জানিয়ে দিও। আর আজ এখান থেকে বেরিয়েই ওকে দু’সেট শাড়ি ব্লাউজ আর দুটো চুড়িদার আর শালোয়ার কামিজের সেট কিনে দিও”। বলে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে তিরিশ হাজার টাকা বের করে বীথিকার হাতে দিল।

বীথিকা শালোয়ার কামিজ পড়তে পড়তে বলল, “ঠিক আছে ম্যাম”।
 

মহিমা নবনীতাকে বলল, “কাল থেকেই তাহলে তুমি কাজে নামছ নবনীতা। তুমি বীথির বান্ধবী বলেই তোমাকে আর কোন এগ্রিমেন্টে সাইন করতে হবে না। অন্যান্যদের কাছ থেকে আমি একটা সিকিউরিটি ডিপোজিট নিয়ে থাকি। তোমাকে সেটাও দিতে হবে না। আমি জানি তোমার হাতে এখন সিকিউরিটি দেবার মত কিছুই নেই। কিন্তু মনে রেখো, আমি তোমাকে যা কিছু করতে বলব, তা তোমায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। কোন অ্যাসাইনমেন্ট কনফার্ম হয়ে গেলে কোন পরিস্থিতিতেই কিন্তু আর ‘না’ বলতে পারবে না। তবে কাউকে কখনোই আমি জোর করে কোন কাজে পাঠাঁই না। তাই অ্যাসাইনমেন্ট কনফার্ম করবার আগে আমি সকলের কাছেই তার মতামত নিয়ে থাকি। তাদের সুবিধে অসুবিধের দিকে যথেষ্ট গুরুত্বও দিয়ে থাকি। তোমার কোন অ্যাসাইনমেন্ট নিতে অসুবিধে থাকলে সেটা আগে থেকেই আমাকে জানিয়ে দেবে। কিন্তু তুমি রাজি হবার পর আমি যখন অ্যাসাইনমেন্ট কনফার্ম করে দেব, তারপর আর কোন কথা চলবে না। তোমাকে ঠিক সময় মত সে জায়গায় পৌঁছে যেতে হবে। আর কাস্টমারকে তোমাকে পুরোপুরিভাবে সন্তুষ্ট করতে হবে। মনে রেখো, কোনও কাস্টমার খুশী না হলে সে কিন্তু আর দ্বিতীয়বার তোমাকে নিতে চাইবে না। তাতে তোমার আর আমার দু’জনেরই ক্ষতি হবে। আর টাইমিংটা কিন্তু তোমাকে একেবারে ঘড়ির কাটার মত মেন্টেন করতে হবে”।

এতটুকু বলে সে একটু থেমে আবার বলল, “বীথিকা তোমাকে বাকি সমস্ত ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে দেবে। আমি শুধু তোমাকে আর কয়েকটা কথা বলব। যে কাজ তোমাকে দেওয়া হবে, তাতে কোনরকম গাফিলতি করা কিন্তু চলবে না। কোথাও যেন কোন ঝামেলা না হয়। আর তোমাকে আপাততঃ আমি ঘন্টায় সাত হাজার করে দেব। আর কাস্টমারের ঠিকানায় যাতায়াত খরচ আলাদাভাবে দেব। তবে অনেক কাস্টমার হয়ত তাদের গাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারে তোমাকে পিকআপ করে নেবার জন্য। কিন্তু বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই কাজের শেষে আর গাড়িতে করে পাঠাতে চায় না। তবে সে’সব নিয়েও কাস্টমারের সাথে কোন রকম কথা কাটাকাটি করবে না। আমি তো তোমাকে যাতায়ার খরচ আগেই দিয়ে দেব। তাই তেমন হলে তুমি নিজেই কোন একটা অটো বা ট্যাক্সি ধরে তোমার ঘরে ফিরে আসবে। আর কখনও কখনও কোন কাস্টমার তোমাকে সারা রাতের জন্যেও চাইতে পারে। আর তেমন হলে তোমাকে রাত আটটা বা ন’টা থেকে ভোর পাঁচটা অব্দি ডিউটি করতে হবে। তখন অবশ্য ঘন্টা হিসেবে রেট হবে না। পুরো রাতের জন্য তখন পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার পেতে পার। তবে সেটা সব সময় একরকম না-ও হতে পারে। আর তোমার যদি কখনো মনে হয় যে এ কাজ করতে তোমার আর ইচ্ছে করছে না, তাহলে আমাকে বলে তুমি যে কোন সময় এ কাজ ছেড়ে দিতে পার। আমি তোমাকে কোনভাবেই জোর করব না। কিন্তু আমাদের কাজের ব্যাপারে তুমি কাউকে কিছু বলতে পারবে না। বুঝেছ আমার কথা”?

নবনীতা তখন পোশাক পড়ে বিছানার কোনায় বসে মন দিয়ে মহিমার কথা শুনে যাচ্ছিল। সে মাথা হেলিয়ে বলল, “হ্যা ম্যাম, বুঝেছি”।

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “এখন তো তুমি বীথির ফ্ল্যাটেই আছ। তবে নিজে আলাদাভাবে কোথাও থাকবার বন্দোবস্ত করলে সেটা আমাকে জানিয়ে দিও”।

মহিমার কথা শুনে বীথিকা বলল, “ম্যাম, আমরা ভেবেছি আমার দু’জন একসাথেই থাকব। আপনি তো জানেনই যে আমার ফ্ল্যাটের আট হাজার টাকা মাসিক ভাড়া আমাকে একাই বিয়ার করতে হয়। আর ওকে আলাদা করে কোথাও ঘর ভাড়া নিতে গেলেও তো মাসে মাসে সাত আট হাজার টাকা ভাড়া দিতেই হবে। আমার ফ্ল্যাটে জায়গাও আছে। ফ্ল্যাট ভাড়া আর খাবার খরচ আমরা দু’জনে মিলে শেয়ার করে নেব। আর নীতা নিজেও এতে রাজি আছে”।

মহিমা বীথিকার কথা শুনে বলল, “সেটা তোমাদের দুই বান্ধবীর ব্যাপার। তোমরা যা ভাল বুঝবে কোর। আমার এতে বলার কিছু নেই। তবে আমি বলছিলাম যে, ও যদি অন্য কোথাও গিয়ে থাকতে চায়, তাহলে তার ঠিকানাটা যেন আমাকে জানিয়ে দেয়”।
 

দু’জনেই সায় জানাতে মহিমা বলল, “তাহলে এটাই পাকা কথা হল। বাকি সব কিছু তোমাকে বীথি বুঝিয়ে দেবে। তুমি কি আর কিছু জানতে চাও নবনীতা”?

নবনীতা মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “না ম্যাম, বীথি আমাকে সব কিছু বলেছে। আমিও আপনার সব কথা মেনে চলব”।

মহিমা তখন বলল, “আর একটা কথা বল তো নবনীতা? তোমার কি কোন বাচ্চা কাচ্চা আছে? তোমার তলপেটটা দেখে আমার মনে হল তুমি কখনও বুঝি কনসিভ করেছিলে”।

নবনীতা বলল, “না ম্যাম, আমি কখনো মা হই নি। আর হবার সম্ভাবনাও নেই। তবে একবার কনসিভ করেছিলাম ঠিকই। তখন অপারেশন করে সেটা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম”।

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “সেটা কার ছিল”?

নবনীতা এ প্রশ্নে একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “সেটা তো আমি নিজেও জানিনা ম্যাম। আসলে তার মাস ছয়েক আগে থেকেই রোজ অজানা অচেনা দু’তিনজন পুরুষ আমাকে করত। আর পেট ফুলে উঠলে তার পয়সা রোজগার বন্ধ হয়ে যাবে বলেই তখনই আমার গর্ভ নষ্ট করে অপারেশন করে আমার মা হবার পথ চিরদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল”।
 

মহিমা চেয়ার থেকে উঠে এসে নবনীতার হাত ধরে বলল, “জীবনে তুমি সত্যি অনেক কষ্ট সহ্য করেছ নবনীতা। কচি বয়সের ছোট্ট একটা ভুলে অনেক মেয়ের জীবনেই এমন সর্বনাশ হতে পারে। তবে একটা কথা মাথায় রেখো। মা হবার সম্ভাবনা নেই বলে কাউকে কনডোম ছাড়া কিছু করতে দেবে না কিন্তু। মনে রেখো, কনডোম কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় সুরক্ষার জিনিস। অনেক মেল কাস্টমার অনেক সময়েই কনডোম ছাড়া করতে চাইবে। কিন্তু তাদেরকে মিষ্টি কথায় মিথ্যে কথা বলে কনভিনস করতে হবে”।

মহিমা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বীথিকাকে জিজ্ঞেস করল, “কি বীথি, আমাকে আর কিছু বলতে হবে”?

বীথিকা হেসে বলল, “না ম্যাম, আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না। বাকি কথা আমি ওকে আগেই বলেছি। তবু যখন যেমন প্রয়োজন হবে আমি ওকে সবটা বুঝিয়ে দেব”।

মহিমা বলল, “বেশ, তাহলে আর এখানে বসে থাকবার দরকার নেই। তুমি আলমারির জিনিসগুলো ঠিক মত রেখে দিয়েছ তো”?

বীথিকা বলল, “হ্যা ম্যাম। সব কিছু ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে ঠিক জায়গাতেই রেখে দিয়েছি”।

মহিমা চেয়ার থেকে উঠে নিজের ভারী ব্যাগটা হাতে নিয়ে বলল, “চল তাহলে বেরিয়ে পড়ি। দরজাটা লক করে চলে এসো। আর হ্যাঁ, নবনীতা, খুব সম্ভবতঃ কালই তুমি প্রথম এসাইনমেন্ট পেয়ে যাবে। তাই আজই গুদের বালগুলোর কিছু একটা বন্দোবস্ত করে ফেলো” বলে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেল।
 

**************

নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে ট্রেণ থামতেই রতীশ নিজের মোবাইল থেকে কিংশুককে ফোন করল। আগের দিনই ফোনে ফোনে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা কালচিনি আসছে। কিংশুক ফোন ধরেই বলল, “হ্যা রতুদা বল, কদ্দুর এসে পৌঁছেছ তোমরা”?

রতীশ জবাব দিল, “ভাই আমরা এনজেপি পৌছে গেছি। আর হয়ত ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই আলিপুরদুয়ার পৌঁছে যাব। ওদিকের সব খবরাখবর ভাল আছে তো”?
 

কিংশুক বলল, “হ্যা রতু-দা, এদিকের খবর মোটামুটি ঠিকই আছে। তবে এখন আমি হাসপাতালে একা আছি। বাবা হয়ত আর খানিকক্ষণ বাদেই বড়দির খাবার নিয়ে এখানে চলে আসবেন। আর উনি চলে এলেই আমি তাকে এখানে রেখে তোমাদের রিসিভ করতে আলিপুরদুয়ার যাচ্ছি”।

রতীশ হা হা করে উঠে বলল, “না ভাই, তুমি কেন মিছেমিছি আর কষ্ট করে আসতে যাবে? আমরা তো নিজেরাই চলে যেতে পারব”।
 

কিংশুক বলল, “আমাকে সে’কথা বলে তো লাভ নেই রতুদা। এ যে তোমার আইপিএস বোনের অর্ডার। তিনি যে তোমাদের আলিপুরদুয়ার থেকে কালচিনি নিয়ে আসবার জন্য একখানা গাড়ি ঠিক করে দিয়েছেন গো। আর আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমি যেন সে গাড়ি নিয়ে আলিপুরদুয়ার গিয়ে তোমাদের নিয়ে আসি”।

রতীশ বলল, “ইশ, মন্তিটাও যে মাঝেমাঝে এমন পাগলামি করে না ......”

রতীশকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই রচনা ফোনটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হ্যারে ভাই, দিদিভাই কি তোর কাছে আছেন এখন”?

কিংশুক জবাবে বলল, “নারে ছোড়দি, দিদিভাই তো এখনও এসে পৌঁছোন নি। সে তো রোজই আসছেন। কিন্তু আজ তিনি অফিসে একটু ব্যস্ত আছেন বলে তোদের আনবার জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করে আমাকে বলেছেন যে আমি যেন তোদের আনতে আলিপুরদুয়ার চলে যাই। দিদিভাই নিজে দুপুরের পর আসবেন বলেছেন। আর বাবা এখনই বড়দির খাবার নিয়ে আসবেন। বাবা এলেই আমি এখান থেকে রওনা হয়ে যাব। আমি গাড়িটাকে আসতে বলে দিচ্ছি এখনই”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “হ্যারে ভাই, দিদি আজ কেমন আছে রে? কথাবার্তা বলতে পারছে”?

কিংশুক বলল, “হ্যারে ছোড়দি, বড়দি এখন বেশ কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। আমি সকালের খাবার খাইয়ে দেবার পর আমার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছে। এখন অবশ্য আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। আর দিদিভাইয়ের কথায় ডাক্তার নার্সরাও বড়দির খুব দেখাশোনা করছে। গত দু’দিন তো বড়দি বিছানা থেকে উঠতেই পারেনি। আজ সকালে সে হেঁটেই টয়লেটে যেতে চাইছিল। আমি তাকে ধরে ধরে টয়লেটের দরজা অব্দি পৌঁছে দিয়েছিলুম। তবে এখনও বেশ দুর্বল আছে। বেশীক্ষণ জেগে থাকতে পারছে না। তবে ডাক্তাররা বলছে আর দু’এক দিনের মধ্যেই নাকি বড়দি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে জানিস ছোড়দি, এখন তো আমি পুরো ঘটণাটা জানতে পেরেছি। দিদিভাই না থাকলে বড়দিকে আর বাঁচানো যেত না রে” বলতে বলতে কিংশুক কেঁদে ফেলল।

রচনা ভাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “ভাই, কাঁদিস নে তুই। দিদিভাইয়ের ওপর আমাদের ঋণের বোঝা তো দিনদিন বেড়েই চলেছে রে। তবে দিদির ঘটণাটা আমি প্রথম দিন শুনেই বুঝতে পেরেছিলুম যে দিদিভাই ছিলেন বলেই কালচিনি থানার পুলিশেরা দিদিকে সময়মত হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল। আচ্ছা ভাই, তুই কান্না থামা। আর আমাদের নিতে যখন আসছিসই, তখন সাবধানে আসিস, বুঝলি? এখন রাখছি” বলে ফোন বন্ধ করে মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে শুরু করল।
 

এর ঘন্টা দুই বাদেই রতীশ আর রচনা নিউ আলিপুরদুয়ার ষ্টেশন থেকে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে আসতেই কিংশুক একদিক থেকে ছুটে এসে রচনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলল। রচনা ভাইকে আদর করে বলল, “কাঁদছিস কেন তুই ভাই? আমরা তো এসে গেছি”।

কিংশুক নিজেকে সামলাতে সামলাতে বলল, “জানিনা রে ছোড়দি। তোদের দেখে কেন জানি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলুম না”।

রচনা ভাইকে আদর করতে করতে বলল, “ইশ, কত বড় হয়ে গেছিস রে ভাই! আমাকে তো একেবারে চমকে দিয়েছিলিস তুই? কিন্তু আগে বল তো বাবা মা দিদি সবাই ভাল আছে তো”?

কিংশুক “হ্যারে ছোড়দি, সবাই ভাল আছে” বলতে বলতে রতীশের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যেতেই রতীশ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “থাক থাক ভাই, আগে চল বাড়ি গিয়ে পৌঁছোই। তা গাড়ি নিয়ে এসেছ বলছিলে? সেটা কোথায়”?

কিংশুক একদিকে হাতের ঈশারা করতেই গাড়ির ড্রাইভারটা তাদের লাগেজ গুলো নিয়ে গাড়িতে তুলে দিল। রতীশ রচনা আর কিংশুককে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল।
 

প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর গাড়ি কালচিনিতে ঢুকতেই রচনা রতীশকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যাগো? আমরা কি আগে হাসপাতালে যাব না বাড়ি যাব”?

রতীশ কিছু বলে উঠবার আগেই কিংশুক বলে উঠল, “নারে ছোড়দি। মা তোদের জন্য রান্না করে বাড়িতে অপেক্ষা করছেন। মা সকালে দিদির জলখাবার দিয়েই আমাকে বলে গেছেন যে তোদের নিয়ে আমি যেন সোজা বাড়ি চলে যাই। স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে মা তোদের সাথে নিয়ে হসপিটালে আসবেন বলেছেন। আর তাছাড়া এখন তো ভিজিটরদের ভেতরে ঢুকতেও দেবে না। দিদিভাইয়ের কথায় শুধু আমি বা বাবা যে কোন একজন সব সময় ঢোকবার পারমিশন পেয়েছি। কিন্তু তোকে তো চারটে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। ভিজিটিং আওয়ারেই কেবল তোদের নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে”।

রচনা তবু বলল, “দিদিকে একটু দেখে যেতে খুব ইচ্ছে করছে রে ভাই”।
 

কিংশুক বলল, “ছোড়দি ভিজিটিং আওয়ার শুরু না হলে তো সেটা করতে পারছিস না। আর সুপারের কাছ থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে সেটা করতে গেলেও তো সকলের খেতে খেতে অনেক দেরী হয়ে যাবে রে। তোরা সারাটা রাত জার্নি করে এসেছিস। বাবাকেও না খেয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হবে। তার চেয়ে বাড়ি গিয়ে তোদেরকে রেখে আমি চট করে দুটো খেয়েই হসপিটালে গিয়ে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেব। তোরা স্নান করে খেয়ে একবারে বাবা মা-র সাথে হাসপাতালে চলে আসিস। ততক্ষণে দিদিভাইও বোধহয় চলে আসবেন”।
 

অবশেষ সেটাই করা হল। রচনাকে দেখেই বিভাদেবী মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন। রতীশও শাশুড়িমাকে প্রণাম করতেই কিংশুক বলল, “মা তুমি এসব কান্নাকাটি একটু পরে কোর। আগে আমাকে দুটো খেতে দাও। আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বাবাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিই”।
 

বিভাদেবী মেয়ে আর জামাইকে ঘরে বসিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন, “রচু মা, আর দেরী না করে তোরা দুটিতে স্নান করে নে। খোকা হাসপাতালে গেলেই তোর বাবা চলে আসবেন”।

ঘন্টা খানেক বাদে রান্না ঘরের বারান্দায় আসন পেতে সকলে খেতে বসতেই বাড়ির সামনে একটা গাড়ি থামবার শব্দ পাওয়া গেল। বিধুবাবু, রতীশ আর রচনা সেটা খেয়াল না করলেও বিভাদেবী রান্না ঘরের ভেতর থালায় ভাত বাড়তে বাড়তেই গাড়ির শব্দ শুনে বললেন, “মন্তিটা যে কখন আসবে কে জানে। এ সময় এলে তো সকলের সাথে বসিয়ে দুটো খাওয়াতে পারতুম। মেয়েটা আমাদের জন্যে কী না করছে! কিন্তু ঘরে এসে এক গ্রাস খাবার খাওয়ার মত সময়ও করে উঠতে পারেনি এই দু’দিনে”।
 

তার কথা শেষ হতে না হতেই বাড়ির গেট ঠেলে সীমন্তিনী ভেতরে ঢুকে বলল, “ও মাসি, তুমি তো বড় স্বার্থপর গো! মেয়ে মেয়েজামাইকে পাত পেরে খেতে দিচ্ছ, আর এ অভাগী মেয়েটার কথা তোমার একটুও মনে হল না”।

রচনা ‘দিদিভাই’ বলে চিৎকার করে দৌড়ে উঠোনে নেমেই সীমন্তিনীকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল। রতীশ আর বিধুবাবুও আসন থেকে উঠে পড়ল। বিভাদেবী রান্নাঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে উঠোনের মাঝে দু’মেয়েকে জড়াজড়ি করে কাঁদতে দেখে নিজেও কেঁদে ফেললেন। সীমন্তিনী অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে রচনাকে শান্ত করতে করতে রান্নাঘরের বারান্দায় উঠে বিধুবাবু আর বিভাদেবীকে প্রণাম করে রতীশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল, “দাদাভাই, কেমন আছিস” বলে রতীশকেও প্রণাম করল।
 

বিভাদেবী নিজের চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, “ওরে ও রচু, তোর দিদিভাইয়ের জন্যেও একটা আসন পেতে দে মা। কত ভাগ্য করে এমন একটা দিন এসেছে। আমার তিন মেয়েকে আজ আমি নিজে হাতে খাওয়াতে পারব”।
 

রচনা বিভাদেবীর কথার জবাবে বলল, “মা, একটু দাঁড়াও না গো। দিদিভাইকে পুলিশের পোশাকে একটু মন ভরে দেখে নিই আগে। ইশ, কী সন্দর লাগছে গো” বলে নিজের চোখের কোন থেকে আঙুলের ডগায় একটুখানি কাজল নিয়ে সীমন্তিনীর কানের পাশে লাগিয়ে দিল।
 

সীমন্তিনী রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে স্নেহের চুম্বন খেয়ে বলল, “হয়েছে? পাগলী মেয়ে তুই একটা। চল চল, সময় নষ্ট করে লাভ নেই। ও মাসি, দাও দাও খেতে দাও শীগগির। খুব ক্ষিদে পেয়েছে গো”।

রচনা বারান্দায় আরেকটা আসন পেতে সীমন্তিনীর জায়গা করে বলল, “ও দিদিভাই, তুমি ইউনিফর্ম পড়ে পা ভাঁজ করে বসতে পারবে”?

সীমন্তিনী হেসে বলল, “তুই ভাবিসনে। আমার কোন অসুবিধে হবে না” বলে রচনার পাশে বসতেই বিভাদেবী একে একে ভাতের থালা এনে সকলের সামনে দিলেন।
 

খেতে খেতে সবাই মিলে টুকটাক কথা হল। সীমন্তিনী সবাইকে জানাল যে অর্চনার শ্বশুর শাশুড়ি আর দুই সৎ ছেলেকে পুলিশ এরেস্ট করেছে। আর পুলিশের জেরার মুখে তারা সকলেই তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারাই অর্চনাকে মারধোর করে রেল লাইনের ওপর ফেলে চলে গিয়েছিল। তারা সকলেই জানত যে ওই অবস্থায় অর্চনার আর নড়বার শক্তি ছিল না। তাই তারা নিশ্চিত ছিল যে অর্চনা ট্রেনে কাটা পড়বেই। সকলের বিরূদ্ধেই সঙ্গীন চার্জ লাগান হয়েছে। পরের দিনই তাদের জেলা আদালতে তোলা হবে।
 

নিজেদের খাওয়া শেষ হতে রচনা মাকে ভাত বেড়ে দিল। বিভাদেবীর খাওয়া শেষ হবার পর খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই সীমন্তিনী সবাইকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা হল।

গাড়িতে যেতে যেতে রচনা সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করল, “হ্যাগো দিদিভাই। তোমার সাথে দিদির কথা হয়েছে”?

সীমন্তিনী রচনাকে জড়িয়ে ধরেই বসেছিল গাড়িতে। রচনার প্রশ্ন শুনে সে বলল, “নারে সেটা এখনও হয়নি। কালও আমি যখন এখানে এসেছিলুম অর্চনাদি তখনও ঘুমোচ্ছিল। আর এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন তুই। অর্চনাদি সুস্থ হয়ে উঠুক, এটাই তো আমাদের এখন প্রথম চাওয়া। পরিচয়, কথাবার্তা তো পরেও করা যাবে”।

রচনা একটু অবাক হয়ে বিভাদেবীকে জিজ্ঞেস করল, “ওমা, দিদিভাই দিদিকে দিদি বলছে কেন গো? তোমরা কি দিদিভাইকে জানাওনি যে দিদি তার থেকে কত ছোট? না না দিদিভাই, সেটা চলবে না। তুমি জানো দিদি তোমার চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট। তুমি ওকে নাম ধরে ডাকবে। আর তোমার আরেকটা ছোটবোনের মত ভালবাসবে”।
 

সীমন্তিনী রচনার থুতনী ধরে আদর করে টিপে দিয়ে বলল, “আচ্ছা রে আচ্ছা। একেবারে আমার ঠাকুমা হয়ে উঠেছিস তুই”।

______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 04-03-2020, 10:42 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)