Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#83
(Update No. 101)

রতীশ জবাবে বলল, “না বৌদি, তা ঠিক নয়। সবকিছু শোনার পর তার দিদি এখন হাসপাতালে মোটামুটি সুস্থ আছে জেনে রচনা নিজেকে সামলে নিয়েছে। আর ও নিজেই আপনাকে ফোন করে আমার কাজে যোগ দেবার কথা বলতে বলল”।

মহিমা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “ওর দিদির এমন খবর শুনেও তোমরা সেখানে যাবে না”?

রতীশ একটু দোনামনা করে জবাব দিল, “যাওয়া তো উচিতই ছিল বৌদি। কিন্তু ওখানে যেতে আসতেই তো দুটো দিন লেগে যাবে। আর দুটো দিন তো অন্ততঃ থাকতে হবে। তাই সব কিছু মিলিয়ে অন্ততঃ চারটে দিনের প্রয়োজন। ওদিকে দু’আড়াই মাস বাদেই আবার দুর্গাপুজো। তখন তো আমাকে কম করেও দশ বারো দিনের ছুটি নিতে হবে বাড়ি যাবার জন্য। এত কম সময়ের ব্যবধানে ঘণঘণ দু’বার ছুটি চাইতেও তো ভাল লাগবে না আমার। তাই রচনা বলছে যে এখন ছুটি না নিয়ে পুজোর সময় দিন পনেরোর ছুটি নিয়ে দু’ জায়গাতেই ঘুরে আসা যাবে। তাই বলছিলাম যে আপনি যদি পুজোর সময় আমাকে দিন পনেরোর ছুটি দিতে রাজি থাকেন, তাহলে আমি আগামীকালই আপনার ইনস্টিটিউটে জয়েন করতে রাজি আছি”।

মহিমা সাথে সাথে রতীশের কথার জবাব না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, “ভাই, তুমি তাহলে কাল সকালে ইনস্টিটিউটে চলে এস। তোমার জয়েনিংটা করিয়ে দেব। তবে তোমাকে কাল কোন কোচিং দিতে হবে না। তাই তোমাকে ছ’টার আগেও আসতে হবে না। তুমি এক কাজ কোর। সকাল দশটা নাগাদ রচনাকে নিয়ে ইনস্টিটিউটে চলে এস। রচনাও আমার ইনস্টিটিউটটা দেখে যাক একবার। আগে থেকে জানা থাকলে আমি তোমাদের জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু সেটা সকালে করা সম্ভব নয়। তাই একটু কষ্ট করে মেট্রোতে চলে এস। তারপর এখানে এলে আমি প্রয়োজনীয় যা যা করবার করে তোমাকে কাজে নিয়ে নেব। কিন্তু ভাই, তুমি আমাকে একটা কথা বল তো। রচনার দিদি এখন আছে কোথায়”?

রতীশ জবাব দিল, “সে এখন ডুয়ার্সের কালচিনি হসপিটালে অ্যাডমিটেড আছে বৌদি। কিন্তু বৌদি আপনি রচনাকেও সাথে নিয়ে আসতে বলছেন”?

মহিমা বলল, “হ্যা, একবার নিয়েই এস না। রোজ রোজ তো আর আসছে না। একবার এসে দেখেই যাক না আমাদের ইনস্টিটিউটটা। তা রচনা কোথায়? ওকে ফোনটা একটু দেবে”?

রতীশ রচনার হাতে ফোন দিতে দিতে বলল, “হ্যা বৌদি, দিচ্ছি। এই নিন”।
 

রচনা ‘হ্যালো বৌদি’ বলতেই মহিমা বলল, “দিদির কথা শুনে খুব কান্নাকাটি করেছ বোধহয় তাই না? তবে তোমার ঠাকুরই বোধহয় তাকে চরম বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। এখন বিপদ কেটে গেছে শুনে বেশ ভাল লাগল। তা, এ কি তোমার নিজের দিদি? মানে এক মায়ের পেটের বোন তোমরা”?

রচনা জবাব দিল, “হ্যা বৌদি। আমরা তিন ভাই বোন। দিদি বড়, আমি মেঝো আর ভাই ছোট”।

মহিমা বলল, “ও আচ্ছা। তা তুমি তোমার দিদিকে শেষ কবে দেখেছিলে”?

রচনা বলল, “সে তো অনেকদিন হয়ে গেল বৌদি। আসলে দিদির বিয়ের পর ওরা যখন দ্বিরাগমনে এসেছিল, তখনই দিদিকে আমি শেষ দেখেছি। ২০০৫ সালে”।

মহিমা অবাক হয়ে বলল, “ওমা সে কি? তোমার দিদির নাকি তোমার বাপের বাড়ির খুব কাছেই বিয়ে হয়েছিল। তবু এ সাত বছরের মধ্যে তুমি তাকে দেখনি”?

রচনা বলল, “আসলে বৌদি, আমার জামাইবাবু এবং তার বাড়ির লোকজনেরা একেবারেই ভাল মানুষ নন। আমার বিয়ের সময়েও দিদিকে আসতে দেয় নি তারা। আর বাপের বাড়ি আসতে দেওয়া তো দুর, আমাদের বাড়ি থেকে কেউ দিদিকে দেখতে গেলেও তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা দিদির সাথে কাউকে দেখা করতে দিত না। গালমন্দ করে অপমান করে কতবার আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই দিদিকে আর দেখতে পাই নি। আমাদের বিয়ের কয়েক মাস পরেই জামাইবাবু মারা গিয়েছিলেন। তখনও বাবা দিদির শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও দিদির সাথে তাকে দেখা করতে দেয় নি। অন্যান্য পাড়া প্রতিবেশীর মুখে শুনেছি দিদিকে তারা প্রচণ্ড মারধোর করত। ঠিকমত খেতে দিত না। এসব শুনে মা বাবাকে শুধু কাঁদতেই দেখেছি আমরা দু’ ভাইবোন” বলতে বলতে রচনার গলা ধরে এল।
 

মহিমা রচনার কথা শুনে বলল, “আচ্ছা সে’ কথা বরং থাক। ও’সব কথা মনে হলেই তোমার মন খারাপ হয়ে যাবে। আচ্ছা রচনা শোন, কাল রতীশের সাথে তুমিও এসে পোরো। একা একা বাড়িতে থেকে তোমার আরও বেশী খারাপ লাগবে। আর তাছাড়া, আমাদের ইনস্টিটিউটটাও দেখে যেও, কেমন? আসবে তো”?

রচনা বলল, “তোমার দেবর নিয়ে গেলে যাব বৌদি”।

মহিমা বলল, “বেশ তাহলে কাল তোমার সাথে দেখা হলে তখন বাকি কথা হবে। এখন রাখছি, কেমন”?

রচনা বলল, “ঠিক আছে বৌদি। ভালো থেকো”।


*****************

পরদিন সকালে মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউটে সকালের জেনারেল কোচিংএর পর মহিমার চেম্বারে ইনস্টিটিউটের লোকেরা সবাই ব্রেকফাস্ট খেতে বসেছে। অফিস এসিস্ট্যান্ট বীথিকা, ট্রেনার বরুন আর সুজয় এবং পিওন অজয়। খেতে খেতে মহিমা সবাইকে বলল, “কেবিন কোচিং শেষ হলে সবাই আমার চেম্বারে এসো। আমাদের এ ইনস্টিটিউটে একজন যোগা এক্সপার্ট জয়েন করছে আজ। এমন এফিসিয়েন্ট ট্রেনার আমরা আগে আর কখনও পাই নি। তোমরা সকলেই তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। সে আজ দশটায় আসবে। আর বীথি, তুমি একটা ফরম্যাল জয়েনিং লেটার বানিয়ে রেখো। এগ্রিমেন্টটা পরে করব। সে আজ শুধু জয়েন করে যাবে। কিন্তু ফ্যামিলির একটু সমস্যা হওয়াতে সে আজ বা কাল থেকেই কোচিং শুরু করবে না। তার বাড়ি নর্থ বেঙ্গলে। সে আজ রাতের ট্রেনেই বাড়ি যাচ্ছে। সেখান থেকে ফিরে এসে সে কাজ শুরু করবে। তোমাদের সাথে আজ তার পরিচয় করিয়ে দেব। বেশী সময় তোমাদের এখানে থাকতে হবে না। তার সাথে পরিচয় পর্বটা সেরেই তোমরা চলে যেতে পারবে। তবে বীথি, তুমি কি একটা ব্যাপারে আলোচনা করবে বলছিলে। সেটা করতে হলে ওরা সবাই চলে যাবার পরই সেটা সম্ভবপর হবে। তোমার পক্ষে সম্ভব হলে অপেক্ষা কোর”।

বীথিকা জবাবে বলল, “হ্যা ম্যাম, ব্যাপারটা জরুরী। আমি নাহয় একটু অপেক্ষাই করব”।

বাকি সবাই মাথা নেড়ে সায় জানাতে মহিমা বলল, “আরেকটা কথা। সবাই খুব মন দিয়ে শোনো। এ ছেলেটা অন্য ধরণের। খুবই সৎ। আর আমার সাথে তার একটা আত্মীয়তার সম্পর্কও আছে। তাই আমাদের এসকর্ট ব্যবসার ব্যাপারে সে যেন কোন কিছু জানতে না পারে। তার উপস্থিতিতে তোমরা কেউ আমাদের ওই ব্যবসা সংক্রান্ত কোন কথা বলাবলি করবে না। তাকে আমি বাইরের ব্যবসার ব্যাপারে কিছু জানতে দিতে চাই না। ও সাড়ে দশটা পর্যন্ত ডিউটি করে চলে যাবার পরই আমরা সে’সব ব্যাপারে কথা বলব। এ কথাটা তোমরা সবাই সব সময় মাথায় রেখো”।
 

রতীশ রচনাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা অটো ধরে মেট্রো ষ্টেশনে এসে সেখান থেকে মেট্রো ধরে বেলা সাড়ে ন’টা নাগাদ গড়িয়া ষ্টেশনে চলে এসেছে। ষ্টেশন চত্বর থেকে বেরিয়ে একটা রানিং অটো ধরে ইনস্টিটিউটের গলির মুখে নামল। তারপর ইনস্টিটিউটের কমপ্লেক্সের পেছন দিকের লিফটে চেপেই ওপরে উঠে এল। মহিমার চেম্বারের দরজায় নক করে বলল, “ভেতরে আসব বৌদি”?

মহিমা জবাব না দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে নিজে হাতে দরজা খুলে দিয়েই রতীশ আর রচনাকে দেখে রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি তাহলে আমার কথাটা রেখেছ। এস রচনা, এস ভাই। বসো” বলে রতীশ আর রচনাকে দুটো চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসেই ইন্টারকমে বীথিকাকে তার চেম্বারে আসবার কথা বলে রতীশ আর রচনার দিকে হাসিমুখে তাকাল। মহিমার চোখে মুখে খুশী উপছে পড়ছে।
 

মহিমা রচনার দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা, রচনা আগে বল, তোমরা নিশ্চয়ই ব্রেকফাস্ট করে বেরোও নি, তাই তো”?

রচনা হেসে বলল, “না না বৌদি। আমরা ব্রেকফাস্ট করেই এসেছি। তুমি ব্যস্ত হয়ো না”।

মহিমাও মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “আচ্ছা বেশ। তবু তুমি আজ প্রথমবার এসেছ আমার এখানে। তোমাকে তো আর খালি মুখে যেতে দেওয়া যায় না” বলেই কলিং বেলে চাপ দিল। তারপর রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “তুমি যে আমাকে নিরাশ করনি, সে জন্যে তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। আর তোমাকে তো আমি আগেই সবকিছু বলে দিয়েছি। তবু আরেকবার বলছি। তোমার সমস্ত সুবিধে অসুবিধে আমি আলাদাভাবে বিচার করব। তোমার এখানে বিন্দুমাত্র অসুবিধেও আমি হতে দেব না। তুমি আমাদের এই ইনস্টিটিউটটাকে একটা সত্যিকারের যোগা ট্রেনিং সেন্টার করে তুলো”।
 

এমন সময়েই দরজার বাইরে থেকে কেউ জিজ্ঞেস করল, “আসব ম্যাম”?

মহিমা গলা তুলে বলল, “হ্যা বীথি, এসো”।
 

অজয় আর বীথিকা একসাথে মহিমার চেম্বারে ঢুকতে মহিমা বীথিকাকে বসতে বলে রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “রতীশ, তোমার সাথে এদের পরিচয় করিয়ে দিই আগে। এ হচ্ছে বীথি, মানে বীথিকা মল্লিক। আমাদের অফিস এসিট্যান্ট। আর ওকে তুমি সেদিনও দেখেছিলে। ও হচ্ছে অজয়। আমাদের এখানে সকলের সব প্রয়োজন মেটায়। আর বীথি, এ হচ্ছে আমার এক দেবর রতীশ ভট্টাচারিয়া। যোগা এক্সপার্ট। আজ আমাদের এখানে জয়েন করছে। আর এ হচ্ছে রচনা, রতীশের স্ত্রী”।

রচনা আর রতীশ হাতজোড় করে দু’জনের সাথে নমস্কার বিনিময় করতেই মহিমা নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে অজয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “অজয়, চট করে সকলের জন্য কিছু মিষ্টি কিনে নিয়ে এসো তো”।

অজয় চলে যেতেই মহিমা বীথিকার দিকে চাইতেই বীথি তার হাতের ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে বলল, “ম্যাম, ওনার নাম ঠিকানাটা শুধু লেখা বাকি আছে”।

মহিমা রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “রতীশ, একটু বলে দাও ভাই। তাহলে তোমার জয়েনিং লেটারটা ও কমপ্লিট করে ফেলতে পারবে”।
 

রতীশ নিজের নাম ঠিকানা বলে দিতেই বাইরে থেকে কেউ একজন বলল, “আসব ম্যাম”?
 

মহিমা তাদের অনুমতি দিতেই দু’জন ছাব্বিশ সাতাশ বছর বয়সী যুবক ভেতরে ঢুকল। মহিমা তাদেরকেও চেয়ারে বসতে বলে বলল, “বরুন, সুজয়। তোমাদের যে বলেছিলাম একজন যোগা এক্সপার্ট আমাদের এখানে জয়েন করছেন, এই সে রতীশ ভট্টাচারিয়া। আর ওর পাশে রচনা, ওর স্ত্রী। এরা কিন্তু আমার দেবর দেবরানী। আর রতীশ এরা হল বরুন আর সুজয়। আমাদের এখানকার ট্রেনার। এদের কথা তোমাকে আগেও বলেছি আমি। তোমাকে এখানে ট্রেনীদের কোচিং দেওয়া ছাড়াও এদের দু’জনকেও নানাভাবে গাইড করতে হবে”।
 

রতীশ আর রচনা সকলের সাথে নমস্কার বিনিময় করতেই বীথিকা কাগজটা কমপ্লিট করে রতীশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “স্যার, এটায় সাইন করে দিন”।
 

রতীশ বীথিকার হাত থেকে কাগজটা নিতে নিতে বলল, “দিন। তবে একটা কথা আগে থেকেই বলে দিচ্ছি। আপনারা আমাকে স্যার না বলে দাদা বললে বেশী খুশী হব”।

রতীশ কাগজের লেখাগুলো পড়ে সাইন করে বলল, “বৌদি এতে তো টার্মস কণ্ডিশনস কিছু লেখা নেই”।

মহিমা হেসে বলল, “এটা তো শুধু তোমার জয়েনিং ফর্মালিটি সারা হল রতীশ। এগ্রিমেন্টটা বানাতে তো একটু সময়ের প্রয়োজন। আর আমি তো সে সময়টুকু পাইনি। তবে ও নিয়ে ভেবো না। সে’সব আমি খুব তাড়াতাড়িই করে ফেলব”।
 

মিষ্টি খাবার পর একে একে সবাই চলে যাবার পর মহিমা তার ব্যাগের ভেতর থেকে একটা খাম বের করে সেটা রতীশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এটা নাও রতীশ”।

রতীশ একটু অবাক হয়ে খামটা নিতে নিতে জিজ্ঞেস করল, “এতে কি আছে বৌদি”?

মহিমা শান্ত স্বরে জবাব দিল, “ওতে তোমাদের দু’জনের কলকাতা থেকে নিউ আলিপুরদুয়ার যাবার এবং চারদিন বাদে ফিরে আসবার ট্রেন টিকিট আছে। আজ রাতের ট্রেনে চেপে কাল সকাল দশটা সাড়ে দশটা নাগাদ নিউ আলিপুরদুয়ার পৌঁছে যাবে। আর সেখান থেকে বাসে আধঘন্টাতেই কালচিনি পৌঁছে যাবে। আর ফেরার টিকিট কাটা আছে ষোল তারিখের। নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে বিকেল তিনটেয় ট্রেন। সতের তারিখ সকালে হাওড়া পৌঁছবে। সেদিনটা ঘরে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন থেকে ফুল ডিউটি শুরু করবে”।
 

রতীশ আর রচনা দু’জনেই সাংঘাতিক অবাক হয়ে কিছু একটা বলতে যেতেই মহিমা হাত তুলে তাদের বাঁধা দিয়ে বলল, “উহু, কোন কথা নয়। আমি বয়সে তোমাদের চেয়ে অনেক বড়। আর আজ থেকে আমি তোমার অফিসের বস। তাই আমার অর্ডার তোমাকে মানতেই হবে ভাই। আর আঠার তারিখে তুমি যখন এখানে কাজে আসবে তখন তোমার এগ্রিমেন্টে সাইন করবে”।
 

রচনা তবু বলল, “কিন্তু বৌদি, আমরা তো আর মাস দুয়েক বাদেই পুজোর ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। তখন তো দিদির সাথেও দেখা করতে পারব”।

মহিমা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে রচনার চেয়ারের পাশে দাঁড়িয়ে রচনার কাঁধে হাত দিয়ে বলল, “পূজোর সময় তো যাবেই। কিন্তু যে দিদিকে তোমাদের বাড়ির কেউ সাত বছর দেখেতে পায়নি, অসুস্থ অবস্থায় তাকে ফিরে পেয়েও তোমাদের বাড়ির সকলেই নিশ্চয় খুব খুশী হয়েছে। তোমার মনটাও যে দিদিকে দেখবার জন্য ছটফট করছে, সেটা আমি খুব ভালভাবেই বুঝতে পারছি। আর প্রিয়জনদের কাছ থেকে দুরে চলে এসে যে যতই ভাল থাকুক না কেন, একান্ত অবসরে তাদের প্রিয়জনের কথা ভেবে তারা চোখের জল ফেলতে বাধ্য হয়। সেটা আমি নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি রে। মা বাবার অমতে একটা বাঙালী ছেলেকে বিয়ে করার অপরাধে ছাব্বিশ বছর ধরে আমি আমার মা বাবা আর বোনকে দেখতে পাইনি। তারা কে কোথায় আছে, ভাল আছে কিনা, এসব আমি কিছুই জানিনা। তাদের কথা ভেবে, ছোটবেলার মূহুর্ত গুলোর কথা ভেবে এখনও মাঝে মাঝেই আমার কান্না পায়। কিন্তু আমার কথা থাক। রতীশ কাজে যোগ দিলে তোমাকে দিনের অনেকটা সময় ফ্ল্যাটে একা একা থাকতে হবে। তখন দিদির কথা ভেবে, মা বাবা ভাইয়ের কথা ভেবে তোমার মন খারাপ হবে। তুমি তো এখন আমার ছোট জা। আর ছোট জা তো ছোট বোনের সমতুল্যই হয়ে থাকে। আমি থাকতে আমার ছোটবোনটা কষ্ট পাবে, এ কি আমি হতে দিতে পারি? দুটো দিনের জন্য হলেও সাত বছর বাদে দিদিকে দেখে তোমার খুব ভাল লাগবে। দিদিকে না দেখতে পাবার দুঃখটা মন থেকে সরে যাবে। তারপর রতীশ কাজে যোগ দেবার পরেও তোমার আর অতটা খারাপ লাগবে না। আর তাছাড়া তোমার দিদি কতবড় একটা বিপদের মুখ থেকে ফিরে এল বল তো? তোমার মনটা যে তোমার দিদিকে দেখবার জন্য কতটা উতলা হয়ে আছে, সে আমি বুঝতে পারছি। তাই তোমার দিদি হিসেবে এটুকু তো আমি করতেই পারি। তাই আর কোন কথা বোলনা। এখন ঘরে গিয়ে চটপট লাগেজ গোছগাছ করে নাও”।

রচনা আর রতীশ দু’জনেই আর কিছু বলার কথা খুঁজে পেল না। একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। মহিমা নিজে রতীশ আর রচনাকে চেয়ার থেকে টেনে তুলে বলল, “এখানে আর কোন কাজ নেই তোমার এখন রতীশ। হাতে সময় খুব বেশী নেই। তার ওপর রচনাকে ঘরে গিয়ে তো রান্নাবান্না করতে হবে। জিনিসপত্র গোছাতে হবে, বাকি তোমার যা কিছু বলার আছে তা, ফিরে এসে বোল আমাকে” বলতে বলতে তাদের দরজার দিকে টেনে নিয়ে গেল। তারপর রতীশ আর রচনা দু’জনেরই কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল, “মাঝে মধ্যে ফোন করে খবর দিও ভাই, কেমন”?

রতীশ আর রচনা মাথা হেলিয়ে সায় দিয়েই লিফটের দিকে এগিয়ে গেল। রাস্তায় এসেও যেন দু’জনের ঘোর কাটছিল না। মেট্রো ষ্টেশনে আসবার পর যেন তারা কিছুটা স্বাভাবিক হল। মেট্রোতে চড়ে রতীশ রচনাকে বলল, “মন্তিকে তো খবরটা জানাতে হবে”।
 

রচনা জবাব দিল, “হ্যা, আর শুধু দিদিভাইই নয়, কিংশুক আর মামনিকেও জানাতে হবে”।

**************
______________________________
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 04-03-2020, 10:32 PM



Users browsing this thread: 17 Guest(s)