Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#82
(Update No. 100)

মিঃ রায় বললেন, “ম্যাডাম, ত্রিলোচন আচার্য্যি, তার স্ত্রী যমুনা আচার্য্যিকে, আর তাদের এক নাতি প্রণবেশকে ধরে এনে থানার লকআপে পুরেছি। তাদের পনের বছর বয়সী আরেক নাতিকে অবশ্য আনিনি। তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, তাদের পূত্রবধূ অর্চনা তাদের বাড়িতে নেই কেন? কিছু উত্তম মধ্যমও দিয়েছি। কিন্তু বেশ শক্ত মাল। তিনজনে একই কথা বলছে যে তাদের পূত্রবধূ নাকি তাদের কিছু না জানিয়েই দু’দিন আগে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। আমি তাদের কাউকে অর্চনার কথা বলিনি এখনও। কাল তার স্টেটমেন্ট পাবার পর আসল খেলাটা খেলব। তবে বুঝতেই পারছেন, তারা কেউ সত্যি কথা বলছে না। তবে এটা বুঝেছি যে অর্চনা যে বেঁচে আছে, সে’কথা তারা কেউ এখন অব্দি জানে না”।

সীমন্তিনী সব শুনে বলল, “হু, এটা বেশ ভাল খবর। তবে অর্চনাদির ওপর যে শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে তার সার্টিফিকেট তো ডক্টর সোমই দিয়ে দেবেন আমাদের। কিন্তু আপনি একটু ইনভেস্টিগেট করে দেখুন, আচার্য্যি বাড়ি থেকে রেল লাইনের ধারে তাকে নিয়ে যাবার কোন এভিডেন্স কিছু পাওয়া যায় কি না। আই উইটনেস কাউকে পাওয়া গেলে তো আরও ভাল হবে”।

মিঃ রায় জবাব দিলেন, “হ্যা ম্যাডাম, সেদিকেও আমি অলরেডি স্টেপ নিয়েছি। দু’তিনজন ইনফর্মারও লাগিয়েছি। ত্রিলোচন আচার্যির বাড়ি সার্চ করে অর্চনা যে ঘরে থাকত, সে ঘরে রক্তমাখা একটা ওড়না আর একটা লাঠি পাওয়া গেছে। সে লাঠিটাতেও রক্ত লেগে আছে। সে জিনিসদুটো আগামীকাল সকালেই আমি আলিপুরদুয়ার সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেব, পরীক্ষার জন্য। আর কাল যদি অর্চনার স্টেটমেন্টটা নিতে পারি তাহলে ওই আচার্য্যি বুড়োর মুখ থেকেই সব কথা বের করে ছাড়ব আমি”।

সীমন্তিনী বলল, “যা কিছু করবেন, একটু সাবধানে করবেন মিঃ রায়। অমন একটা বয়স্ক লোকের ওপর থার্ড ডিগ্রী এপ্লাই করতে হলে একটু বুঝে সুঝে করবেন। লকআপ থেকে তাকে যদি হসপিটালাইজড করতে হয় তাহলে অন্য ধরণের সমস্যার উৎপন্ন হতে পারে। সেদিকটায় বিশেষ নজর রাখবেন। আর আমিও চাই না আমার অনুরোধ রাখতে গিয়ে আপনি কোনও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ুন। তবে আমি চলে আসবার পর ওদিকে হাসপাতালের খবর কি কিছু নিয়েছেন আর”?

মিঃ রায় বললেন, “হ্যা ম্যাডাম, অর্চনা এখন সজ্ঞানে আছে। তবে ভীষণ দুর্বল। ভাইয়ের সাথে কথা বলছে বটে। কিন্তু থেমে থেমে প্রায় ফিসফিস করে। ডক্টর সোমের সাথেও কথা হয়েছে। তিনিও বললেন চিন্তার আর কিছু নেই। আর আমাকে নিয়ে আপনি অযথা চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। পনের বছরের সার্ভিস হয়ে গেছে আমার। তাই ও’সব ব্যাপার আমি ঠিক মতই সামলে নেব। কিন্তু ম্যাডাম, এ প্রশ্নটা আমি আগেও আপনাকে করেছিলাম। আপনি বলেছিলেন যে প্রয়োজন হলে ঠিক সময় আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। তাই বলছি, আমার তো মনে হয় এবার সে প্রশ্নের জবাবটা আপনি দেবেন”।

সীমন্তিনী একটু হেসে বলল, “জানি মিঃ রায়। সে প্রশ্নটা এবার আপনি আবার জিজ্ঞেস করবেন। তবে এখনই আমি কিছু বলছি না। ভিক্টিমের ছোট বোন ফোন লাইনে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আমি কাল সকালেই তো যাচ্ছি কালচিনি। কাল আপনাকে সবটা খুলে বলব। কেমন”?

মিঃ রায় বললেন, “ওকে, ম্যাডাম। নো প্রব্লেম। তা কাল কটা নাগাদ আসছেন বলুন তো? আমি কি আপনাকে ব্রেকফাস্টের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারি”?
 

সীমন্তিনী বলল, “অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মিঃ রায়। কিন্তু আমাকে একবার আধঘন্টার জন্যে হলেও আমার অফিসে যেতেই হবে। আজ কালচিনি থেকে ফিরে আর অফিসে যাওয়া হয় নি। তাই ব্রেকফাস্টের আমন্ত্রণটা আপাততঃ স্বীকার করতে পারছি না। আমি এগারোটার পরেই এখান থেকে রওনা হব। তবে আগেই আপনার ওখানে যাব না। আগে যাব হসপিটালে। আমি ওখানে পৌছে আপনাকে ডেকে নেব। ডক্টর সোম পারমিট করলে আপনি অর্চনাদির স্টেটমেন্টটা নিয়ে নেবেন তখনই। তারপর আমি আপনার সাথে আলাদা ভাবে বসব। তখন আপনার প্রশ্নের জবাবটাও দেব। ঠিক আছে স্যার”?

মিঃ রায় বললেন, “ওকে ম্যাডাম। দেন সি ইউ টুমরো। গুড নাইট”।
 

মিঃ রায়ের সাথে কথা শেষ করে মুখ ঘোরাতেই দেখে লক্ষ্মী তার পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সীমন্তিনীকে কিছু বলতে দেবার সুযোগ না দিয়েই লক্ষ্মী শ্বাসরূদ্ধ গলায় জিজ্ঞেস করল, “ও দিদিমণি, তোমার এই অর্চনাদি কে গো? আর তার এমন কী হুয়েছে যে থানা হাসপাতালের সাথে জড়িয়ে পড়েছে”?
 

সীমন্তিনী কয়েক মূহুর্ত লক্ষ্মীর মুখের দিকে চেয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল, “তোমাকে তো আমি অনেকদিন বলেছি লক্ষ্মীদি, যে আমি যখন ফোনে কথা বলব, তখন লুকিয়ে চুরিয়ে আমার কথা শুনবে না”।

লক্ষ্মী বলল, “না গো দিদিমণি, আমি তো তোমার কথা শুনতে আসিনি এখানে। আমি তোমায় জিজ্ঞেস করতে এসেছিলুম যে রাতে কী রান্না করব? তোমাকে ফোনে কথা বলতে দেখেও ভেবেছিলাম যে তুমি বোধহয় এখনই কথা শেষ করবে। তাই কথাটা জিজ্ঞেস করব বলেই দাঁড়িয়েছিলাম। এতেই তুমি রাগ করছ”?
 

সীমন্তিনী লক্ষ্মীর কথা শুনে শান্তভাবে জবাব দিল, “দ্যাখো লক্ষ্মীদি, আমি তো পুলিশ। চোর ছ্যাঁচোর গুণ্ডা বদমাশ, উগ্রবাদী, আতঙ্কবাদী এদের হাত থেকে সাধারণ লোকজনদের বাঁচিয়ে রাখাটাই আমাদের কাজ। তাই আমরা যখন একজনের সাথে আরেকজন কথা বলি তখন আমাদের অনেক গোপন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করি। এসব কথা বাইরের লোকেরা জানতে পারলেই আমাদের কাজটা আরো বেশী কঠিণ হয়ে পড়ে। তাই তোমাকে আগে থাকতেই আমি বলে রেখেছি যে আমি যখন কারো সাথে ফোনে কথা বলব তখন তুমি সেসব শুনো না। কিন্তু আজ আবারও বলছি তোমাকে। তুমি সারাক্ষণ আমার সাথে একই বাড়িতে থাক বলে আমি ফোনে কার সাথে কী কথা বলি, তা তুমি শুনে ফেলতে পার। কিন্তু সে’সব কথা তুমি শুধু নিজের ভেতরেই রাখবে। কাউকে কিচ্ছুটি বলবে না। তুমি কাউকে তোমার খুব বিশ্বস্ত লোক ভেবেও সেসব কথা যদি বলে দাও, তাহলে কিন্তু যেকোন সময় আমার বড় বিপদ হতে পারে। তুমি কি সেটাই চাও”?

লক্ষ্মী প্রায় আঁতকে উঠে বলল, “না না দিদিমণি। অমন কথা বোলনা গো। আমি তোমার পা ধরে কথা দিচ্ছি, তোমার ফোনে কথা বলার কোন কথাই আমি অন্য কাউকে বলব না” বলে সীমন্তিনীর পায়ের কাছে উপুড় হয়ে তার পায়ে দিতে গেল।

সীমন্তিনী তার হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বলল, “থাক, আর পায়ে হাত দিতে হবে না। কেবল আমার কথাটা মনে রেখো। আর তুমি যা জিজ্ঞেস করছিলে সে ব্যাপারে বলি, তোমার যা খুশী রান্না কর। রান্না নিয়ে ভাববার সময় নেই আজ আমার হাতে। আমাকে আরও অনেক কিছু ভাবতে হবে আজ। যদি পারো, আমাকে এক কাপ চা করে দিও”।

লক্ষ্মী সীমন্তিনীর সামনে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে দিচ্ছি। কিন্তু অর্চনাদি কে সেটা বলবে না”?

সীমন্তিনী বলল, “সে হচ্ছে আমার বৌদির দিদি। হয়েছে এবার”?

লক্ষ্মী অবাক হয়ে নিজের মনেই বিড়বিড় করে বলতে লাগল, “তোমার বৌদির দিদি! কিন্তু তোমার বৌদি তো একজনই। ওই রচনা বৌদিমণি। তারমানে বৌদিমণির দিদিই কোন বিপদে পড়েছে? সেকি গো দিদিমণি? কী হয়েছে তার”?
 

সীমন্তিনী কিছু একটা বলে লক্ষ্মীকে চুপ করাতেই বলল, “অসুখ হয়েছে। তাই হাসপাতালে আছে। এবার হল”?
 

সীমন্তিনী সত্যি কথা বলছে না বুঝতে পেরে লক্ষ্মী মুখ ভার করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। সীমন্তিনী মিনিট খানেক মনে মনে কিছু ভেবে কিংশুকের মোবাইলে ফোন করল। কিংশুক ও’পাশ থেকে সাথে সাথে সাড়া দিল, “হ্যা দিদিভাই বল”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “ওদিকের খবর কি রে ভাই? দিদি কেমন আছে”?

কিংশুক জবাব দিল, “সাড়ে ছটা নাগাদ বড়দির জ্ঞান ফিরেছে। আমাকে চিনতে পেরেছে। মা বাবা আর ছোড়দির কথা জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু বেশীক্ষণ চোখ মেলে থাকতে পারছিল না। আর মিনিট পাঁচেক কথা বলেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ডাক্তারবাবু আরও দু’বার এসে বড়দিকে দেখে গেছেন। আর উনি আমাকে বলে গেছেন যে চিন্তার কিছু নেই। দিদির জ্ঞান ফিরলেও সে একনাগাড়ে বেশীক্ষণ চোখ মেলে থাকতে পারবে না এখন। দুর্বলতার জন্যেই নাকি সে বারবার ঘুমিয়ে পড়বে। কাল অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠবে বললেন”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “তুমি খেয়েছ”?

কিংশুক বলল, “দিদি এখন ঘুমোচ্ছে, তাই ভাবছিলুম এই ফাঁকেই খেয়ে নেব। দিদি জেগে উঠলেই তো আবার আমার হাত টেনে ধরে রেখে কথা বলতে চাইবে। এখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও আমার হাতটা ধরে আছে। আর দিদির অবস্থা দেখে তো বারবার আমার কান্না পাচ্ছে”।
 

সীমন্তিনী বলল, “ভাই নিজেকে শক্ত রেখো। বিপদের সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। নইলে ঠিক মত বিপদের মোকাবেলা করা যায় না। তুমি বরং এই ফাঁকে খেয়েই নাও। আর দিদি যখন ঘুমোবে তাকে তখন আর কোনভাবে ডিসটার্ব কোর না। আমি কাল দুপুরের আগেই আবার কালচিনি যাচ্ছি। আর রাতে দিদিকে কোনভাবে অস্বাভাবিক মনে হলে আমাকে বা ডক্টর সোমকে ফোন কোর। আচ্ছা ভাই রাতে ডাক্তার নার্স কেউ কি কাছাকাছি কোথাও আছে”?

কিংশুক বলল, “তুমি যে নার্সটাকে দেখে গিয়েছিলে, একটু আগে তার সাথে নতুন একজন নতুন নার্স এসেছিল। বলল যে সে নাকি সারা রাত ডিউটি করবে। আর দিদির কেবিনের পাশেই নার্সদের ডিউটি রুমে থাকবে। প্রয়োজন হলে তাকে ডাকতে বলেছে। তবে ডক্টর সোম রাত আটটা নাগাদ একবার আসবেন বলেছেন। রাতে কোন ডাক্তার হাসপাতালে থাকেন কিনা সেটা জানিনা”।
 

সীমন্তিনী বলল, “ঠিক আছে ভাই। তুমি ভয় পেও না। নার্স তো কেবিনের পাশেই আছে। তেমন প্রয়োজন মনে হলে ডক্টর সোমকে আর আমাকে ফোন কোর। আর তুমি তাহলে এখন খেয়ে নাও। কেমন? ছাড়ছি তাহলে ভাই? গুড নাইট”।

কিংশুকও ‘গুড নাইট দিদিভাই’ বলে ফোন কেটে দিল।

ফোন নামিয়ে রেখে বাথরুমে গিয়ে টয়লেট করে ঘরে ঢুকতেই লক্ষ্মী চায়ের কাপ এনে সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে মুখ ভার করে বলল, “কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে যে দারোগা পুলিশেরা হাসপাতালে ছুটে আসে, এমন কথা তো কখনও শুনিনি। আমিও তো একবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। তখনও তো কোন দারোগা বা পুলিশ আমাকে দেখতে আসেনি। এখন বুঝি সরকার এমন সব নিয়ম করে দিয়েছে”?

লক্ষ্মীর কথা শুনে সীমন্তিনীর গলা ফাটিয়ে হাসতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বিছানায় বসে লক্ষ্মীর একটা হাত ধরে কাছে টেনে বলল, “তুমি সত্যি কথাটা না শুনে থাকতে পারছ না, তাই না। আচ্ছা শোনো, বলছি। অর্চনাদি হচ্ছে আমার রচু সোনার বড়দিদি”।

লক্ষ্মী আগের মতই অভিমানী গলায় বলল, “সে’কথা তো আগেই বলেছ তুমি দিদিমণি। বৌদিমণির দিদি অসুস্থ বলে তুমি তো হাসপাতালে যেতেই পার। কিন্তু অন্য থানার পুলিশরা সেখানে কেন যাবে? বৌদিমণির দিদির এমন কী হয়েছে? সে কি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল রেল লাইনে”?
 

সীমন্তিনী চা খেতে খেতে বলল, “নাগো লক্ষ্মীদি তা নয়। মেয়েটার বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা সাত বছরের মধ্যে একটা দিনও মেয়েটাকে তার বাপের বাড়ি আসতে দেয়নি। ওর বাপের বাড়ি থেকে কেউ তাদের বাড়ি গেলেও তারা মেয়েটার সাথে কাউকে দেখা করতে দিত না। সেই মেয়েটাকে কাল রাতে রেল লাইনের ওপর অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। তখন ওখানকার পুলিশেরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আর আজ দুপুরে আমি ফেরার পথে যখন তোমাকে ফোন করেছিলাম, তার ঠিক পরে পরেই আমি খবরটা পেলাম। তাই এখানে না এসে আমি সোজা কালচিনি চলে গিয়েছিলুম। আর তাই তো আমার ঘরে ফিরতে এত দেরী হল। এবার বুঝেছ”?
 

লক্ষ্মী চোখ বড় বড় করে সীমন্তিনীর কথা শুনে বলল, “ইশ এ কী সর্বনেশে কথা গো দিদিমণি! বৌদিমণির বড়দিদির এমন অবস্থা করেছে ওই পাষণ্ডগুলো? একটাকেও ছেড়ো না। সব’কটাকে ধরে জেলে পুরে দাও”।

সীমন্তিনী একটু মজা করে বলল, “সেটা তো আর আমার এলাকার কেস নয়। ওটা কালচিনি থানার কেস। কে দোষী, কাকে ধরে জেলে পুরবে এসব তাদের ব্যাপার, তারা দেখবে। কিন্তু তুমি তো আমার রচুসোনাকে এত গালমন্দ কর। রচু তোমাকে ধমকায়, রানী সাহিবার মত হুকুম করে আরও কত কি অভিযোগ কর তার নামে। আর তার বড়দিদির এ অবস্থার কথা শুনেই বলছ সব ক’টাকে ধরে জেলে পুরে দাও”!

লক্ষ্মী এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো সুরে বলল, “ও’সব কি আর আমার মনের কথা নাকি? ও’সব তো আমি এমনি এমনি বলি। তোমার মুখে তো শুনেছি বাড়িতে তোমাদের একান্নবর্তী পরিবার। মা, বাবা, জেঠু, জেঠিমা, কাকু কাকিমা, ছ’ছটা ভাই বোন তোমার। এখানে আসবার পর থেকে তো দেখছি ওই বৌদিমণি ছাড়া আর কেউ তোমাকে ফোন করে না, তোমার খোঁজ খবরও নেয় না। মুখ্যু সুখ্যু মানুষ হলেও এটুকু তো বুঝেছি ওই বৌদিমণিই তোমাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। আর তোমাকে যে ভালবাসবে তাকে আমি ভাল না বেসে দুর ছাই করতে পারি? সেই বৌদিমণির দিদির এমন অবস্থার কথা শুনে আমার কষ্ট হবে না”? বলতে বলতে লক্ষ্মীর চোখ দুটো জলে ভরে এল।

সীমন্তিনী লক্ষ্মীর হাত ধরে নরম গলায় বলল, “তুমি ঠিকই বলেছ গো লক্ষ্মীদি। এ পৃথিবীতে রচুই আমাকে বুঝি এখন সবচেয়ে বেশী ভালবাসে। তাই তো আমিও রচুর মা বাবা ভাইকে নিজের মা বাবা ভাই বলে ভাবি। তাই আমিও চাই রচুর দিদির এমন অবস্থা যে বা যারা করেছে তারা যেন এর উপযুক্ত শাস্তি পায়। আর সে জন্যেই কালচিনি থানার ওসির সাথে কথা বলছিলাম। এবার মনটাকে শান্ত কর। আর যাও এবার নিজের কাজ কর। আমাকে আমার কাজ করতে দাও”।

লক্ষ্মী খালি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রান্নাঘরে চলে যাবার পর সীমন্তিনী আবার রতীশ আর রচনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলল। সীমন্তিনী রতীশের মুখে মহিমার ব্যাপারে সব কিছু শুনে তাকে উপদেশ দিল রচনা যেমনটা বলছে তেমনই করতে। তারপর নিজের ব্রীফকেসটা খুলে তার রিপোর্টটা নিয়ে কাজ করতে বসল।
 

***************

সীমন্তিনীর সাথে কথা বলার পর রচনা শাড়ি পাল্টে ঠাকুরঘরে ঢুকে ঠাকুরকে ভক্তি ভরে পুজো করে ঠাকুরঘর বন্ধ করে বেডরুমে এসে শাড়ি পাল্টে একটা নাইটি পড়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত ন’টা বাজতে চলেছে। মনে মনে ভাবতে ভাবতে ড্রইং রুমে বসে থাকা রতীশের কাছে এসে বসে বলল, “সোনা, তুমি বৌদিকে ফোন কর। বল যে তুমি কাল তার ইনস্টিটিউটে জয়েন করবে”।

রতীশ একটা বই পড়ছিল। রচনার কথা শুনে সে একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “এখন এত রাতে ফোন করতে বলছ”?

রচনা বলল, “এমন কিছু রাত তো হয়নি। সবে ন’টা। আজ এমন একটা সুখবর পেলাম। প্রায় সাত বছর বাদে দিদি বাবা মা-র কাছে ফিরে এসেছে। কাল বৃহস্পতি বার। দিনটা ভাল। তুমি কাল কাজে জয়েন করলেই ভাল হবে। পরশু তের তারিখ আর তারপরের দিন শনিবার। সেখানে যখন কাজ করবেই ভাবছ তাহলে আর মিছেমিছি আরো দুটো দিন দেরী করার তো কোন মানে হয় না। তাই বলছি, তুমি এখন বৌদিকে ফোন করে খবরটা জানিয়ে দাও। কাল সকালে গিয়ে কাজে যোগ দিও”।

রতীশ একটু ভেবে বলল, “তা অবশ্য মন্দ বল নি। কাল জয়েন না করলে তো রবিবারে গিয়ে জয়েন করতে হবে। কিন্তু আমি যে আরেকটা কথা ভাবছিলাম সোনা। এ’সময়ে তো একবার কালচিনি যাবার প্রয়োজন আমাদের। তোমার দিদির এমন বিপদের সময় আমরা সেখানে না গেলে কি ভাল দেখায় বল”?

রচনা বলল, “হ্যা গো, কথাটা যে আমিও ভাবিনি তা নয়। যদি আমরা বাড়িতে থাকতুম তাহলে খবরটা পাবার সাথে সাথেই বাড়ির লোকেরাই আমাদের সেখানে যেতে বলতেন। কিন্তু এখানেও আমরা যে পরিস্থিতির মধ্যে আছি, তাতে কি যাওয়া সম্ভব হবে? অতগুলো টাকা হাতছাড়া হয়ে গেল। মহিমা বৌদির ওখানে কাজে যোগ দেবার কথা। কালচিনি যেতে আসতে পয়সার সাথে সাথে তো কম করেও চারটে দিনের প্রয়োজন। মহিমা বৌদির ওখানে জয়েন করেই সাথে সাথে ছুটি চাইলেও তো আর ভাল দেখায় না। আবার দু’মাস বাদেই তো পুজো। তখন তো বাড়ি যেতেই হবে। তখনই না হয় কালচিনি গিয়ে দিদিকে দেখে আসব। দিদি তো এখন থেকে বাড়িতেই থাকবে”।
 

রতীশ বলল, “হ্যা পুজোর সময় বাড়িতে তো যেতেই হবে। মন্তি তো বলল যে দিদির অবস্থা এখন স্থির আছে। ভয়ের আর কিছু নেই। আর মন্তি নিজে যখন সেখানে আছে, তখন সেখানে আর নতুন করে কিছু বিপত্তি হয়ত হবে না। তাই আমাদের সেখানে গিয়ে কিছু করার হয়ত নেই। কিন্তু তবু, আমরা গেলে তারা সবাই একটু খুশী হতেন। তাদের ছোটমেয়ে এমন সময় সেখানে গেলে তারা একটুখানি মরাল সাপোর্ট পেতেন। আবার এদিকে কাজে যোগ না দিয়ে চলে যাওয়াও তো বোধহয় ঠিক হবে না। ঠিক আছে। ও’ঘর থেকে আমার ফোনটা নিয়ে এস তাহলে”।

রচনা সাথে সাথে বেডরুম থেকে রতীশের ফোনটা এনে তার হাতে দিয়ে তার পাশে বসল। রতীশ মহিমার নাম্বারে ফোন করতে প্রায় সাথে সাথেই সাড়া পেল। সে ফোন ধরেই বলল, “রতীশ! আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম বসে বসে। আর অমনি তুমি ফোন করলে। খুব ভাল লাগছে। রচনা কেমন আছে ভাই”? মহিমার গলাটা খুব খুশী খুশী শোনাল।

রতীশ বলল, “হ্যা বৌদি, আমরা দু’জনেই ভাল আছি। কিন্তু আপনাকে এ সময় ফোন করে ডিসটার্ব করছি না তো”?
 

মহিমা বলল, “আরে না না, কিসের ডিসটার্ব? আমি তো বেশ খুশী হয়েছি তুমি ফোন করেছ বলে”।

রতীশ বলল, “বৌদি, আমার বোনের সাথে এই খানিকক্ষণ আগেই কথা হল। তাই আপনাকে এখনই ফোন করে আমার মতামতটা জানাব বলেই ফোনটা করছি”।
 

মহিমা এবার চুপ করে থেকে রতীশের পরবর্তী কথা শোনবার অপেক্ষায় রইল। রতীশ মহিমার সাড়া না পেয়ে বলল, “বৌদি, আমরা ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমাকে যদি আপনার ইনস্টিটিউটের বাইরে গিয়ে কোথাও কোচিং দিতে না হয়, তাহলে কাজে যোগ দিতে পারি। তবে আরেকটা কথা ....”

মহিমা রতীশের কথার মাঝপথেই তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “সত্যি বলছ তুমি ভাই? তুমি সত্যি আমার এখানে কাজে যোগ দেবে”?

রতীশ বলল, “হ্যা বৌদি, সত্যি বলছি। আসলে কথাটা পরশুদিনই আপনাকে বলতে পারতুম। কিন্তু আমার বোনের সাথে কথা বলতে পারছিলাম না বলেই, সেটা বলা সম্ভব হয় নি। আর গতকালও ওর সাথে কথা বলতে পারিনি। আর আজ সকাল থেকে আমার বোনটা এমন একটা জরুরী কাজে আঁটকে গিয়েছিল যে এ’সব ব্যাপার নিয়ে আর কথা ওঠাতেই পারিনি”।

মহিমা রতীশের কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার বোন ভাল আছে তো”?

রতীশ বলল, “হ্যা হ্যা বৌদি। আমার বোন ভাল আছে। আসলে রচনার দিদির ব্যাপারেই এমন একটা ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল”।

মহিমা অবাক হয়ে বলল, “রচনার দিদিকে নিয়ে ঝামেলা? কী হয়েছে রচনার দিদির”?

রচনা রতীশের কানে কানে খুব আস্তে ফিসফিস করে বলল, “সোনা, দিদিভাইয়ের চাকরির ব্যাপারে কিছু বোল না”।

রতীশ মহিমার কথার জবাবে বলল, “খুবই মর্মান্তিক একটা ব্যাপার ঘটে গেছে বৌদি। সবটা বলতে তো বেশ সময়ের প্রয়োজন। আর সংক্ষেপে বললেও আপনি ঠিক মত বুঝতে পারবেন না। তবু সংক্ষেপেই বলছি। তার বিয়ে হয়েছিল তার বাপের বাড়ির কাছেই একটা ছোট জায়গায়। আমাদের বিয়ের কয়েকমাস বাদেই তার স্বামী একটা দুর্ঘটণায় মারা গিয়েছিলেন। শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তার ওপর অকথ্য অত্যাচার করত। কাল রাতে তাকে রেল লাইনের ধারে মৃতপ্রায় অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর আমার বোন তখন কাছাকাছিই ছিল বলে খবরটা পেয়েই সে সেখানে ছুটে গিয়েছিল। তারপর আজ সারাদিন হসপিটাল, থানা, পুলিশের ঝামেলার মোকাবিলা করে আজ সন্ধ্যের সময় তার ঘরে ফিরেছে। খবর পেয়ে রচনাও কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিল। সন্ধ্যের পর আমার বোনের মুখে সমস্ত ঘটণা শুনে এখন খানিকটা সামলে উঠেছে। তাই বোনের সাথে আমার এ ব্যাপারটা নিয়ে সারাদিনেও কথা বলতে পারিনি। বোন রাতে ঘরে ফিরে আসবার পর তার সাথে কথা হল। তাই আপনাকে আমার মতামত জানাতেও দেরী হয়ে গেল”।

মহিমা উৎকণ্ঠিত গলায় জিজ্ঞেস করল, “কী বলছ তুমি রতীশ? রচনার দিদির এমন অবস্থা? রচনা কোথায় এখন? ও ঠিক আছে তো? ও কি এখনও কান্নাকাটি করে যাচ্ছে? আর তুমি ওকে ছেড়ে, আমার কাজে জয়েন করার কথা বলছ”?

______________________________
ss_sexy
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 04-03-2020, 10:30 PM



Users browsing this thread: