Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#80
(Update No. 98)

পনের মিনিট পার হতে না হতেই সীমন্তিনীর গাড়ি বিধুবাবুর বাড়ির সামনে এসে পৌঁছল। সীমন্তিনী এক মূহুর্ত দেরী না করে বাড়ির ভেতর ঢুকে যেতেই একটা ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা কিংশুক তাকে দেখতে পেয়েই চেঁচিয়ে উঠল, “ওই তো দিদিভাই এসে গেছে”।

সাথে সাথে বিধুবাবু আর বিভাদেবী আরেকটা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। বিধুবাবু সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি গো মা? আমার পুলিশ অফিসার মেয়ে কি আমাদের থানার গারদে পুরতে নিয়ে যাবে নাকি”?

বিভাদেবী সীমন্তিনীর কাছে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ইশ দেখেছ! মুখখানা একেবারে শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে গো। হ্যারে মা, কী হয়েছে রে? খোকাকে ফোন করে কী বলেছিস? ও তো ঠিকমত কিছু বলতেই পারছে না। আচ্ছা, তুই আগে বস তো। আমি আগে তোকে কিছু একটা খেতে দিই। দাঁড়া”।
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীর হাত ধরে থামিয়ে বলল, “না মাসি। হাতে সময় নেই। ওসব পরে হবে। তোমরা রেডি হয়েছ তো যাবার জন্য”?
 

কিংশুক একটা জলের বোতল এনে সীমন্তিনীর হাতে দিয়ে বলল, “ও দিদিভাই, তুমি আগে একটু জল খেয়ে নাও তো”।

সীমন্তিনী কিংশুকের গালে হাত বুলিয়ে বলল, “দাও ভাই। সত্যি বড় জল তেষ্টা পেয়েছিল রে”।

ঢকঢক করে অনেকখানি জল খেয়ে পকেটে হাত দিতেই বিভাদেবী এগিয়ে এসে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে সীমন্তিনীর মুখ মুছিয়ে দিতে দিতে বললেন, “ইশ কি হাল করেছিস রে মা নিজের”?

সীমন্তিনী বিভাদেবীর হাত ধরে বলল, “মাসি ও’সব কথা ছাড়ো। শোনো, আমার সাথে তোমাদের এক্ষুনি হাসপাতালে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও। আমার গাড়িতেই নিয়ে যাব তোমাদের”।

বিভাদেবী, বিধুবাবু আর কিংশুক তিনজনেই একসাথে চিৎকার করে উঠল। বিভাদেবী সীমন্তিনীকে আঁকড়ে ধরে বললেন, “কী বলছিস তুই মা? হাসপাতালে যাব কেন? কার কী হয়েছে রে? বল না চুপ করে আছিস কেন? কে কোন বিপদে পড়েছে”?

সীমন্তিনী বিভাদেবীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মাসি, মাসি, তুমি এমন কোরনা গো। তুমি চল। বেশী দেরী করা ঠিক হবে না। আমি যেতে যেতে তোমাদের সব কথা বলছি”।

বিধুবাবু দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “মন্তি মা। আমার যে হাতে পায়ে বল পাচ্ছিনে গো। একটু খুলে বলো না মা”।

সীমন্তিনী কিংশুককে মাকে ধরতে বলে বিধুবাবুর কাছে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মেসো, তোমরা সবাই এমন করলে আমি কী করে সামলাই বল তো? ভগবান সহায় আছেন আমাদের। তাই বড় কোন বিপদ ঘটবার আগেই তাকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পেরেছি। তোমরা এভাবে ভেঙে পড়ো না। আমি তো তোমাদের সাথে আছি। ভয় পাচ্ছ কেন তোমরা” বলতে বলতে বিধুবাবুকে বারান্দার একটা মোড়ার ওপর বসিয়ে দিয়ে ছুটে গিয়ে জলের বোতলটা এনে বিধুবাবুর মুখের সামনে ধরে বলল, “আচ্ছা একটু জল খেয়ে নাও তো। আমি বলছি”।

বিধুবাবু জল খেয়ে করুণ চোখে সীমন্তিনীর দিকে চাইতেই সীমন্তিনী কিংশুকের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাই, মাকে নিয়ে আমার কাছে এস তো”।

কিংশুক আর বিভাদেবী কাছে এলে সীমন্তিনী তিনজনের হাত একসাথে ধরে বলল, “তোমরা ভয় পেও না। বড় বিপদটা কেটে গেছে। ডাক্তার বলেছে, আর কোন বিপদ হবার সম্ভাবনা নেই। তাকে এখন ডাক্তাররাই ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। তবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত তার জ্ঞান ফিরে আসবে। আর ডাক্তার বলছেন, জ্ঞান ফিরে আসবার পর সে চোখ মেলে তোমাদের সবাইকে দেখতে পেলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে”।

বিভাদেবী প্রায় অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “কার বিপদ কেটে গেছে? কে সুস্থ হয়ে উঠবে? কার কথা বলছিস মা তুই? আমার রচু রতু ওরা ঠিক আছে তো”?

সীমন্তিনী বলল, “তোমার রচু রতু ওরা ঠিক আছে মাসি। আর ওরা তো কলকাতায়। ওরা এখানে হাসপাতালে কী করে আসবে”?

বিভাদেবী বললেন, “তাহলে? তাহলে কার কথা বলছিস তুই”?
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীর হাত দু’খানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আস্তে করে বলল, “তোমার বড় মেয়ে গো মাসি। অর্চনাদি। সে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে এখন। চল, তোমাদের দেখতে পেলেই সে সুস্থ হয়ে উঠবে দেখো”।

বিভাদেবী চোখ বিস্ফারিত করে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন, “অর্চু? অর্চুর কথা বলছিস তুই? তুই ওকে কোথায় পেলি? কী হয়েছে ওর”?
 

সীমন্তিনী বিভাদেবীকে জড়িয়ে ধরে বলল, “সব বলব মাসি। যেতে যেতে তোমাদের সব কথা খুলে বলব। অর্চনাদির যে কোন মূহুর্তে জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। আর ডাক্তার বলেছেন তার জ্ঞান ফেরার আগেই তোমাদের তার কাছে নিয়ে যেতে। তাই আর দেরী করা চলবে না। শীগগীর করো। ভাই, তুমি ঘরগুলোতে তালা লাগিয়ে দাও। আর বাইরের গেটেও তালা লাগাবার ব্যবস্থা করো। চলো চলো, আর দেরী করা যাবে না”।
 

গাড়িতে যেতে যেতে সীমন্তিনী সবাইকে সব কথা খুলে বলল। সব শুনে বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত আঁকড়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলেন, “ও মন্তি মা, আমার মেয়েটা বাঁচবে তো রে? আমরা ওকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে আসতে পারব তো রে”?
 

সীমন্তিনী তাকে আশ্বস্ত করে বলল, “অবশ্যই পারবে মাসি। আর আমি তো এসে গেছি। যা করতে হয় আমি তার সবকিছু করব। তবে ডাক্তার যেমন বললেন, তাতে ওকে আরো দু’ তিনটে দিন হাসপাতালে থাকতেই হবে। তারপর তোমরা ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে”।
 

চারটে নাগাদ হাসপাতালে ফিরে এসে সীমন্তিনী আর মিঃ রায়ের সাথে তিনজনে অর্চনার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াল। মিঃ রায় কেবিনের দরজা খুলে ভেতরের নার্সটাকে জিজ্ঞেস করল, “সিস্টার ডক্টর সোম কোথায়? আর পেশেন্টের সেন্স ফিরেছে কি”?
 

নার্সটা জবাব দিল, “ডক্টর এক্ষুনি আসবেন স্যার। আমি খবর পাঠিয়ে দিয়েছি। পেশেন্টের সেন্স ফিরে আসছে মনে হচ্ছে। তবে স্যার, আপনারা ডক্টর না আসা অব্দি বাইরেই অপেক্ষা করুন প্লীজ”।

বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, “ও মা, আমাদের কি ভেতরে ঢুকতে দেবে না”?

সীমন্তিনী বলল, “দেবে মাসি, দেবে। ডাক্তার আসছেন। উনি এসেই তোমাদের ভেতরে নিয়ে যাবেন দেখো”।

এমন সময়েই ডক্টর সোম এসে কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে সীমন্তিনীকে জিজ্ঞেস করল, “ম্যাম, এরাই কি পেশেন্টের মা বাবা”?

সীমন্তিনী সকলের পরিচয় দিয়ে বলল, “হ্যা ডক্টর। ইনি বিধুভূষণ চক্রবর্তী, পেশেন্টের বাবা। ইনি হচ্ছেন পেশেন্টের মা বিভা চিক্রবর্তী। আর এ হচ্ছে কিংশুক, পেশেন্টের ছোট ভাই”।
 

ডক্টর বেশ খুশী হয়ে বলল, “বাহ, ফাইন। আপনারা একটু অপেক্ষা করুন প্লীজ। আমি ভেতরে ঢুকে আগে পেশেন্টের কণ্ডিশানটা দেখি। আমি ডাকলে এদের তিনজনকে নিয়ে ভেতরে আসবেন আপনারা” বলে কেবিনের মধ্যে ঢুকে গেল।
 

সীমন্তিনী দু’হাতে বিধুবাবুর আর বিভাদেবীর এক একটা হাত ধরে ফিসফিস করে বলল, “ভেবো না মেসো। সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তোমরা ভেতরে ঢুকে অর্চনাদির অবস্থা দেখে বেশী কান্নাকাটি কোরনা কিন্তু। দিদি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারে। তোমরা তাকে সামলাতে চেষ্টা কোর”।

খানিকক্ষণ যেতে না যেতেই ভেতর থেকে চিৎকার শোনা গেল, “না না। আমাকে মেরো না। আমাকে মেরো না। আমাকে আমার বাবার কাছে যেতে দাও। আমি আর কখনও তোমাদের কাছে খাবার চাইব না। আমার মায়ের কাছে যেতে দাও আমাকে। আমি তোমাদের পায়ে পড়ি”।

সে চিৎকার শুনেই বিভাদেবী সীমন্তিনীর হাত প্রায় খামচে ধরে বলে উঠলেন, “এ যে অর্চুর গলা! ও মন্তি মা, ও এভাবে কাঁদছে কেন রে ......”।

সীমন্তিনী বিভাদেবীর মুখটাকে নিজের কাঁধে চেপে ধরে বলল, “মাসি, ভেবো না। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি তো তোমাদের সাথে”।

প্রায় সাথে সাথেই নার্সটা দরজা খুলে বলল, “আপনারা ভেতরে আসুন”।

সীমন্তিনী বিভাদেবী আর বিধুবাবুর হাত ধরে কেবিনের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে কিংশুককে বলল, “ভাই এস”।

ডক্টর তখন অর্চনাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে বলছে, “কেউ মারবে না আপনাকে। আপনি খুব ভাল জায়গায় আছেন। এটা তো হাসপাতাল। এখানে কেউ কাউকে মারে না। আর দেখুন। ওদিকে তাকিয়ে দেখুন কে এসেছে। আপনার মা বাবা ভাই এরা সবাই এসেছেন। ওই দেখুন”।

অর্চনার কানে যেন কোন কথাই ঢুকছিল না। সে চোখ বন্ধ করেই হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে একই কথা বলে যাচ্ছিল বারবার। বিভাদেবী মেয়ের অবস্থা দেখে কেঁদে উঠলেন। সীমন্তিনীর হাত ছাড়িয়ে তিনি ছুটে গিয়ে অর্চনাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, “অর্চু, অর্চু মা আমার। এই দেখ আমি এসে গেছি মা। তোর আর কোন ভয় নেই। আর কেউ তোকে মারতে পারবে না। ওই দেখ তোর বাবাও এসেছেন। খোকা এসেছে। দ্যাখ মা। আমার মুখের দিকে তাকা। দ্যাখ আমি তোর মা তো” বলতে বলতে অর্চনার মুখটাকে দু’হাতের অঞ্জলিতে সোজা করে ধরলেন।
 

বিধুবাবুও অর্চনার কাছে গিয়ে বললেন, “হ্যারে মা। এই দেখ আমরা সবাই এসে গেছি। তুই কেন ভয় পাচ্ছিস? কেউ তোকে মারবে না”।
 

কিংশুক সীমন্তিনীর হাতটাকে খামচে ধরে ফিসফিস করে বলল, “ও দিদিভাই, আমি তো বড়দিকে চিনতেই পাচ্ছি না গো। এটা কি সত্যিই আমার বড়দি”?
 

সীমন্তিনী কিংশুকের হাত ধরে বলল, “ভাই, তুমি তো দিদিকে দেখেছ ছ’ সাত বছর আগে। তুমি তো তখন অনেক ছোট ছিলে। আর তাছাড়া দিদি তো এখন অসুস্থ, ওর শরীর স্বাস্থ্য ভেঙে গেছে, মাথায় মুখে ব্যাণ্ডেজ বাঁধা আছে, তাই তোমার চিনতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু দেখছ না বাবা মা তাকে ঠিক চিনতে পেরেছে। তবে এখন আর অন্য কোন কথা বোল না। যাও দিদির কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বলো। তোমার কথা শুনলেই হয়ত দিদি শান্ত হবে। আর শোন ভাই, দিদির সাথে তুমি আগে যেভাবে কথা বলতে, ঠিক সে ভাবেই কিছু বলো গিয়ে। দিদির সাথে আগে যেসব কথা বলতে, সে’সব কথা বলার চেষ্টা কর। যাও ভাই”।

কিংশুক ধীরে ধীরে অর্চনার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। অর্চনা তখনও একই ভাবে চিৎকার করে যাচ্ছে। বিভাদেবী আর বিধুবাবু একনাগাড়ে মেয়েকে ডেকে নানা কথা বলে তাকে শান্ত করবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অর্চনা আগের মতই ছটফট করে যাচ্ছিল। ডক্টর সোম অর্চনার ভাবগতিক লক্ষ্য করতে করতে আর তার পালস পরীক্ষা করতে করতে হাতের ঈশারায় বিভাদেবী আর বিধুবাবুকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে বলছেন। কিংশুক অর্চনার মাথার কাছে এসে বেশ জোরে বলল, “এই না না বড়দি, এটা ঠিক হচ্ছে না। তুই কিন্তু আমার সাথে চিটিং করছিস। আচ্ছা আমি না তোর ছোট ভাই! আমাকে এভাবে ঠকাতে তোর একটুও কষ্ট হচ্ছে না? যা, আমি আর তোর সাথে কথা বলব না। কক্ষনো কথা বলব না আর তোর সাথে”।
 

কেবিনের প্রতিটা লোক অবাক চোখে দেখল কিংশুকের কথার পরেই অর্চনার হাত পা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হয়ে গেল। তার মুখের চিৎকারও থেমে গেল। ডক্টর সোম কিংশুকের দিকে তাকিয়ে ঈশারা করতেই কিংশুক আবার বলতে লাগল, “হ্যা হ্যা, আমি সত্যি বলছি। আমি আর তোর সাথে কক্ষনো কথা বলব না। তুই আমার দিদি নোস। তুই একটা রাক্ষুসী, তুই একটা ডাইনী। নইলে নিজের ছোট ভাইকে তুই এভাবে ঠকাতে পারতিস”?
 

অর্চনা এবার হঠাৎ খুব দুর্বল গলায় বলে উঠল, “না না, আমি ডাইনী নই। আমি রাক্ষুসী নই। আমি তো তোর বড়দিদি। আচ্ছা আচ্ছা, আমার সোনা ভাই, আমি আর কক্ষনো তোকে ঠকাবো না। আমার সাথে তাহলে কথা বলবি তো ভাই? আমার সাথে খেলবি তো? আমার সাথে আর রাগ করে থাকবিনা তো”? বলতে বলতে তার শরীরটা একপাশে ঢলে পড়ল।
 

বিভাদেবী অর্চনার মাথাটাকে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল, “অর্চু, সোনা মা আমার। দ্যাখ মা। আমার দিকে তাকা। এই দেখ আমি তোর মা”।

অর্চনা এবার অনেক কষ্টে নিজের চোখের পাতা দুটো একটু খানি মেলে ধরে অস্ফুট গলায় বলল, “মা, মা, আমাকে নিয়ে চল মা। আমাকে তোমার কাছে নিয়ে চল”। এ’টুকু কথা বলেই সে আবার পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়ল।

ডক্টর সোম উৎসাহিত হয়ে নার্সটাকে বলল, “সিস্টার, ইঞ্জেকশন প্লীজ, তাড়াতাড়ি”।

অর্চনাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ডক্টর সোম সীমন্তিনীর দিকে চেয়ে বলল, “গুড জব ম্যাম। দারুণ টিপস দিয়েছেন ওকে। ইট ওয়ার্কড এক্সেলেন্টলি। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু ডক্টর, পেশেন্ট”?

ডক্টর সোম অর্চনার পালস পরীক্ষা করতে করতে জবাব দিলেন, “ডোন্ট ওরি ম্যাম। শী ইজ পারফেক্টলি অল রাইট নাউ। ট্রমাটা কেটে গেছে, আর ভয়ের কিচ্ছু নেই। ও এখন একটু ঘুমোবে আবার। ঘন্টা দুয়েক বাদে যখন ঘুম ভাঙবে, তখন তাকে স্বাভাবিক দেখতে পারবেন। তাই আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, এখন ওকে ডিসটার্ব না করে ঘুমোতে দিন। আপনারা এখান থেকে বেরিয়ে আমার সাথে আমার চেম্বারে আসুন”।

সীমন্তিনী তিনজনকে সাথে নিয়ে অর্চনার কেবিন থেকে বেরোতেই কিংশুক মেঝেয় বসে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। কেঁদে কেদেই বলতে লাগল, “না না, তুই রাক্ষুসী নোস বড়দি। তুই তো খুব ভাল রে। আমি তো তখন ছোট ছিলাম। তাই তোকে অমন ভাবে বলতাম। কিন্তু এখন আর আমি আগের মত ছোটটি নেই। তুই ভাল হয়ে ওঠ বড়দি। আমরা তোকে বাড়ি নিয়ে যাব। আর কক্ষনও তোর সাথে ঝগড়া করব না আমি”।

সীমন্তিনী কিংশুকের পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, “কেঁদো না ভাই। শুনলে না, ডাক্তার কি বললেন? দিদি এখন ঠিক হয়ে যাবে। ওঠো, লক্ষ্মী ভাই আমার। তুমি কি আর এখন ছোটটি আছ? তুমি তো এখন সব বোঝ। তুমি এভাবে কাঁদলে মা বাবার কষ্ট হবে না? বল”?
 

ডক্টর সোমের চেম্বারে এসে সবাই বসতে ডক্টর বললেন, “ম্যাম, আশা করি আপনারা বুঝতেই পারছেন, মেয়েটার ওপর অনেকদিন ধরে শারীরিক আর মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে। আমার আন্দাজ, মেয়েটা দীর্ঘদিন, হয়তো বছরের পর বছর ধরে এমন সব অত্যাচার সইতে বাধ্য হয়েছে। ওর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এমন কিছু কিছু ক্ষতের চিহ্ন আছে যেগুলো বেশ পুরনো। তাতেই বোঝা যায় যে ওর ওপর নিয়মিতভাবেই শারীরিক অত্যাচার চালানো হয়েছে। আর গতকাল রাতে ট্রেন লাইনের ওপর ওকে ফেলে যাবার আগে ওকে বেশ ভাল রকম মারধোর করা হয়েছে। ওর কাঁধে গলায় আর কানের নিচে বেশ কিছু ফ্রেশ ইঞ্জুরি আছে। যারাই ওর এ অবস্থার জন্যে দায়ী তারা মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত ছিল যে এর আর বেঁচে থাকবার সম্ভাবনা নেই। লাইনের ওপরেই সে শেষ নিঃশ্বাস ফেলবে। আর সেটা না হলেও ট্রেণের তলায় কাটা পড়বে। কারন তার তো তখন আর নড়াচড়া করার ক্ষমতা ছিল না। আর ওনার ডিহাইড্রেশনটা যে পর্যায়ে উঠেছিল তাতে মনে হয় ওকে বোধ হয় গত চার পাঁচ দিনে কিচ্ছু খেতে দেওয়া হয় নি। তবে সঠিক কতটা কি হয়েছিল সেটা তার জ্ঞান ফিরলেই জানা যাবে”।

ডাক্তারের কথা শুনতে শুনতে বিভাদেবী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। সীমন্তিনী সাথে সাথে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মাসি, শান্ত হও। কেঁদো না। ডাক্তার বাবু তো বলছেন দিদি এবার সুস্থ হয়ে উঠবেন”।
 

বিভাদেবী মুখে কিছু না বললেও নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করতে লাগলেন। ডক্টর সোম বললেন, “হ্যা, যেটা বলছিলাম। তার স্টেটমেন্ট আপনারা খুব জরুরী মনে করলে আজ সন্ধ্যে নাগাদ নিতে পারেন। তবে এজ এ ডক্টর আমি সাজেস্ট করব, সেটা আপনারা কাল করুন। আর আজ তো তাকে স্যালাইনের ওপরেই থাকতে হবে। কাল দুপুর থেকে তাকে কিছু স্যুপ জাতীয় খাবার দিতে হবে। কোনরকম তেল মশলা ছাড়া। আমাদের হাসপাতালের খাবারের যা কোয়ালিটি, সেসব তাকে না দেওয়াই ভাল। আপনারা যদি নিজে থেকে কিছু এরেঞ্জ করতে পারেন, তাহলে ভাল হয়”।

সীমন্তিনী বলল, “সেটা আমরা অনায়াসেই করতে পারব ডক্টর। কিন্তু আমাদের মধ্যে কেউ কি রাতে এখানে পেশেন্টের সাথে থাকতে পারব”?
 

ডক্টর সোম বললেন, “একজন অবশ্যই থাকতে পারেন। কিন্তু ম্যাম, এখানে বিছানা পত্রের কিন্তু কোন ব্যবস্থাই করতে পারব না। পেশেন্টের রুমে একটা এক্সট্রা বেডই শুধু দিতে পারব আমি। তাতে যদি আপনাদের অসুবিধে না হয় তাহলে থাকতে পারেন। তবে একজনের বেশী নয়”।

মিঃ রায় তখন বললেন, “কিন্তু ডক্টর, অফিসিয়ালি আমাকে দু’জন কনস্টেবল তো কেবিনের সামনে মোতায়েন করতেই হবে। তাকে তো এমন আনপ্রোটেক্টেড ভাবে রাখা যাবে না। যারা তাকে মেরে ফেলতে চাইছিল, সে বেঁচে আছে জানতে পারলে তো আবার এর ওপর হামলা করতে পারে”।
 

ডক্টর সোম বললেন, “হ্যা, তা আপনারা করতে পারেন। তবে কেবিনের বাইরেই তাদের থাকতে হবে। খুব প্রয়োজন না পড়লে তারা যেন কেবিনের ভেতরে না ঢোকে। আর আমি আরেকটা সাজেশান দিতে চাই। পেশেন্ট যখন তার ভাইয়ের কথাতেই রেসপন্ড করেছে, আমার মনে হয় রাতে উনি পাশের বেডে থাকলেই সবচেয়ে ভাল হবে। অবশ্য আমি জানিনা, আপনাদের অন্য কোনও অসুবিধে হবে কি না”।

কিংশুক সাথে সাথে বলে উঠল, “না না ডক্টর, আমার কোন অসুবিধে হবে না। আমিই থাকব দিদির সাথে”।

সীমন্তিনী কিংশুকের একটা হাত ধরে বলল, “ঠিক আছে ভাই। তুমিই থাকবে” বলে ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল, “আচ্ছা ডক্টর, রাতে আর কোন প্রব্লেম হতে পারে বলে মনে হয় আপনার? মানে আমি জানতে চাইছি তেমন কিছু হলে ভাই আপনাকে কন্টাক্ট করবে কি করে”?

ডক্টর সোম বললেন, “রাতে আর কোন প্রব্লেম হবে বলে মনে হয় না। তবু আমি আমার মোবাইল নাম্বারটা ওনাকে দিয়ে যাব। আমার কোয়ার্টারও এখান থেকে খুবই কাছে। আর ওনার ফোন পেলেই আমি যে কোন সময়ে চলে আসব। তবে ভাই, তুমিও শুনে রাখো। দিদির জ্ঞান ফিরলে তাকে এমন কোন প্রশ্ন কোর না যাতে সে এক্সাইটেড হয়ে পড়ে। কী হয়েছিল, কে মেরেছে, কে তাকে খেতে দেয়নি এসব প্রশ্ন একেবারেই করবে না আজ। মনে রেখো, তোমার দিদি এখনও খুব দুর্বল। তার মনের ওপর কোন চাপ পড়লেই সে আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তুমি দিদির সাথে তোমাদের বাড়ির ব্যাপারে, মা বাবার ব্যাপারে, তোমার পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বলবে। আর তাকে খুশী রাখবার চেষ্টা করবে। বুঝেছ”?
 

কিংশুক মাথা হেলিয়ে বলল, “ঠিক আছে স্যার”।


(To be cont'd .....)
______________________________
[+] 2 users Like riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 04-03-2020, 10:28 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)