Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#78
(Update No. 96)

মহিমার আচার ব্যবহার কথা বার্তা আন্তরিকতা সবই রচনার খুব ভাল লেগেছে। কিন্তু এতগুলো টাকা শগুণ দেবার পেছনে সত্যিই কি তার কোন অভিসন্ধি ছিল? তিনি কি রতীশকে কাজে নেবার জন্যই শগুণের অজুহাতে রচনাকে ঘুস দিয়ে গেলেন? আর এটা উনি নিশ্চয়ই জানেন যে রচনার হাতে টাকাটা দিলেও সেটা রতীশের হাতেই শেষ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাবে। ছাব্বিশ হাজার টাকা তো কম কথা নয়! তিনি রতীশকে মাসিক বেতন হিসেবে যা দিতে চেয়েছেন, রতীশ কাজে যোগ দেবার আগেই অতগুলো টাকা দিয়ে তিনি কী প্রমাণ করতে চাইছেন? এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে তাদের প্রচুর টাকা পয়সা আছে। কিন্তু তার কথাবার্তা শুনে রচনার একটুও মনে হয়নি যে তার ভেতরে টাকার গরম আছে। বরং তার অমায়িক ব্যবহারে উল্টোটাই মনে হয়েছে। ঠাকুরঘরে প্রণাম করবার সময়, ঠাকুরের প্রসাদ খাবার সময় মহিমার মুখে চোখে যে ভাব ফুটে উঠেছিল, তা কোন দাম্ভিক মহিলার, সে যত বড় অভিনেত্রীই হন না কেন, চোখে এভাবে ফুটে উঠতে পারে না। আর বেরিয়ে যাবার ঠিক আগ মূহুর্তে বিমল আগরওয়ালাকে নিয়ে অমন কথাই বা বললেন কেন? বিমল তো তার বন্ধু। তিনি নিজে মুখেই বললেন, বিমল তার খুব উপকার করেছে কোন এক সময়। তাহলে বিমল সম্পর্কে তিনি অমন কথা বললেন কেন? রবিশঙ্কর যে তাদের দু’লাখ টাকা লুটে নিয়ে গেছে, এর পেছনে যে বিমল আগরওয়ালাও জড়িত আছে, সেটা রচনা আগে থেকেই অনুমান করতে পেরেছে। বিমল কি রতীশকে আরও কোন বিপদে ফেলতে চাইছে? আর যদি সেটাই ঠিক হয়, তাহলে মহিমা রতীশকে সতর্ক করে দিচ্ছেন কেন? কেন তিনি বিমলের সংস্পর্শ থেকে রতীশকে দুরে থাকতে বলছেন? তাহলে তিনি কি বিমলের অভিসন্ধি সম্বন্ধে কিছু জানেন? যদি সেটাই হয়ে থাকে, তাহলে তো মনে হচ্ছে রতীশের কোনও বিপদ হোক, তা তিনি চান না। আর রতীশকে তিনি বাঁচাতেই বা চাইছেন কেন? তিনি কি কোনভাবে রতীশের প্রতি দুর্বল? আর সেটা হলে এ দৌর্বল্য কেন? তিনি কি সত্যি সত্যি রতীশকে ভালবেসেই এমনটা করছেন? আর সেটা কি দেবর বা ভাইয়ের প্রতি নিষ্কাম ভালবাসা? না এ ভালবাসার পেছনেও তার কোনও স্বার্থ, কোনও গোপন কামনা আছে? কিন্তু কই, রচনা তো মহিমার চোখের দৃষ্টি খুব ভাল ভাবেই লক্ষ্য করেছে। রতীশের প্রতি কোনরকম কামভাব থাকলে রচনা সেটা অবশ্যই বুঝতে পারত। নাহ, এটা বোধহয় সে ঠিক ভাবছে না। কিন্তু তাহলে রচনাকে দেখে এতগুলো টাকা শগুণ দেবার মানে কি? রতীশকে তিনি প্রথম দিনই বলেছিলেন যে রতীশকে তার ইনস্টিটিউটের কাজে লাগাতে তিনি রতীশকে আরও বেশী সুযোগ সুবিধে দিতে পারেন। সে প্রলোভনই কি যথেষ্ট ছিল না? এমন লোভনীয় প্রস্তাবে যে কোন বেকার ছেলে রাজি হয়ে যাবে। তাহলে এতগুলো টাকা শগুণ দেবার পেছনে কি কারন থাকতে পারে? রতীশের মুখে বৌদি ডাক শুনে তিনি খুশী হন। রতীশকে কথায় কথায় ভাই ভাই বলে ডাকেন। রতীশকে বিমলের কাছ থেকে দুরে রাখতে চান। এ সবই খুব ভাল কথা। বাড়ি ছেড়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে এমন হিতাকাঙ্ক্ষী পাওয়া সত্যি বড় ভাগ্যের ব্যাপার। এ শগুণের ব্যাপারটা না ঘটলে রচনা তো নিশ্চিন্ত হয়েই রতীশকে বলতে পারত মহিমা বৌদির ইনস্টিটিউটে জয়েন করতে। এতগুলো টাকা শগুণ দেবার ব্যাপারটাই রচনার মাথায় আসছিল না অনেক ভেবেও।

রচনা নিজের ভাবনায় এতটাই মশগুল ছিল যে রতীশের ফিরে আসাটা সে খেয়ালই করেনি। কলিং বেল বেজে উঠতেই সে চমকে উঠল। ব্যালকনি থেকে ড্রইং রুমে ঢুকে দরজায় লাগালো ম্যাজিক আইয়ে চোখ রেখে দেখল রতীশ ফিরে এসেছে। দরজা খুলে দিতেই রতীশ ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “মহিমা বৌদি ফোন করেছিল”?
 

রচনা অবাক হয়ে বলল, “কৈ না তো। ফোন তো আমার হাতেই ছিল। কোন কল আসেনি তো”?

রতীশ ডাইনিং রুমের টেবিলে জিনিসগুলো রেখে বলল, “কিংশুক ফোন করেছিল তোমার ফোনে। বলল বাড়ির সবাই ভাল আছে। ওর পড়াশোনা ঠিক চলছে। আর বাড়ির সামনে নাকি একটা দোকান ঘর বানানো প্রায় কমপ্লিট। সামান্য কিছু কাজই বাকি আছে। মা বাবার সাথেও কথা হল। তারা সবাই ভাল আছেন। তোমাকে কাল হয়ত আবার ফোন করতে পারে। তা তুমি বৌদিকে ফোন করেছিলে”?

রচনা বলল, “না আমিও করিনি। আসলে তুমি বেরিয়ে যাবার পর বৌদির কথা ভাবতে ভাবতেই সময়টা কাটিয়ে দিয়েছি। তোমাকে ফিরে আসতেও দেখিনি আমি”।

রতীশ বলল, “ঠিক আছে। দাও দেখি ফোনটা। আরেকবার করে দেখি”।

রচনা রতীশের ফোন ফিরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বলবে সেটা ঠিক করেছ”?

রতীশ বলল, “না সেটা ভাবিনি। ভাবছি আজ আর ও ব্যাপারে কিছু বলব না। তখন ফোন করে পেলাম না। একটু খবর নিই শুধু। আসলে, বৌদি যখন আমাদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তখন তার মুখ চোখের চেহারাটা আমার ঠিক স্বাভাবিক লাগেনি রচু। কিছু একটা ভেবে যাচ্ছিলেন তিনি। নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে এসেছিলেন। ঠিকমত গিয়ে পৌঁছেছেন কিনা সেটাই ভাবছি”।
 

রচনা বলল, “হ্যা গো, সেটা আমিও খেয়াল করেছি। বৌদি যখন এলেন তখন তার ভেতরে যেমন উচ্ছলতা ছিল, যাবার সময় সেটা ছিল না। কিন্তু আমরা তো তার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করিনি। এক হতে পারে, আমার হাতের রান্না হয়ত তার ভাল লাগেনি। কিন্তু তাই বলে অত মনমরা হয়ে যাবেন? দেখ একবার ফোন করে। লাইন পেলে আমাকেও একটু কথা বলতে দিও” বলে দোকান থেকে আনা জিনিসগুলো নিয়ে কিচেনে ঢুকে গেল।
 

কিছুক্ষণ পর রতীশ কিচেনে এসে বলল, “নাহ, এখনও সুইচড অফ বলছে! কী ব্যাপার বল তো রচু? এখান থেকে ফিরে যাবার সময় কোন আপদ বিপদ হয়নি তো”?
 

রচনাও অবাক হয়ে বলল, “এখনও সুইচড অফ? আমাদের এখান থেকে বৌদি তো সাড়ে চারটে নাগাদ বেরিয়ে গেছেন। এখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা বাজতে চলল। এতক্ষণ ধরে ফোন সুইচড অফ করে রাখবেন? আচ্ছা সোনা। কতক্ষণ লাগতে পারে যেতে সে সম্বন্ধে তোমার কোন ধারণা আছে”?

রতীশ একটু চিন্তান্বিত ভাবে বলল, “তা কী করে জানব বল। এখান থেকে ইনস্টিটিউটে যেতে এক ঘন্টার বেশী সময় লাগবে সেটা বলতে পারি। কিন্তু তার বাড়ি কোন রাস্তায় কোন দিকে তা তো জানা হয়নি আমার”।

রচনা বলল, “ও-ও। আর দেখ দিদিভাই আজও কোন ফোন করলেন না। আমার মনটা সত্যি ভাল লাগছে না গো। ডুয়ার্সের জঙ্গলে কোথায় কিভাবে আছেন দু’দিন ধরে, তার একটা খবরও পাচ্ছি না। আমার ফোনটা দাও তো সোনা। লক্ষ্মীদিকে আরেকটা ফোন করে দেখি”।

রতীশ রচনার ফোন এগিয়ে দিতেই রচনা ফোন হাতে নিয়ে সীমন্তিনীর কোয়ার্টারের ল্যাণ্ডলাইনে ফোন করল। দু’তিনবার রিং হতেই ও’পাশ থেকে লক্ষ্মীর সাড়া পেয়েই রচনা জিজ্ঞেস করল, “দিদিভাইয়ের কোন খবর পেয়েছ লক্ষ্মীদি? আমরা তো কিছুতেই তার লাইন পাচ্ছি না”।

লক্ষ্মী ও’পাশ থেকে জবাব দিল, “না গো বৌদিমণি। দিদিমণি তো আমাকেও কোন ফোন করেন নি গো। তবে আমাদের কোয়ার্টারের সামনে পাহারা দেয় যে গার্ড গুলো আছে, তাদের একজন বলছিল যে জলপাইগুড়ির বড় থানায় দিদিমণি নাকি ফোন করেছিলেন। কাল নাকি ফিরে আসবেন বলেছেন”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “কাল কখন ঘরে আসবেন তা শুনেছ”?

লক্ষ্মী বলল, “না গো বৌদিমণি সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেনি”।

রচনা বলল, “আচ্ছা শোন লক্ষ্মীদি। তুমি কাল সকালেই অল্প করে কিছু খাবার বানিয়ে রেখ। প্রয়োজন পড়লে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রেখে দিও। দিদিভাই এলেই সাথে সাথেই যেন একটু গরম করেই তাকে খেতে দিতে পার। আর দিদিভাই ফেরার সাথে সাথে আমাকে ফোন করতে বলবে। দিদিভাইয়ের গলা না শুনলে আমার চিন্তা কমবে না, বুঝেছ তো? মনে করে কথাটা বলবে কিন্তু” বলতে বলতে রচনার গলা ধরে এল।
 

লক্ষ্মী বলল, “তুমি কেঁদো না বৌদিমণি। দিদি আসবার সাথে সাথেই আমি তাকে বলব তোমাকে ফোন করতে”।

রচনা নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তুমি নিজে খাওয়া দাওয়া করছ তো ঠিকমত? রান্নাবান্না কিছু করেছ? না দিদিভাই নেই বলে তুমিও মুড়ি চিড়ে খেয়ে যাচ্ছ”?

লক্ষ্মী জবাব দিল, “না গো বৌদিমণি। আমি ডাল ভাত আর সব্জী বানিয়েছি আজ। তুমি ভেব না”।
 

রচনা বলল, “ঠিক আছে। ঘরের দরজা জানালা ভালো করে বন্ধ করে ঘরের ভেতরেই থেক। রাতে আর বাইরে টাইরে কোথাও যেও না, বুঝেছ তো”?
 

লক্ষ্মী বলল, “ঠিক আছে বৌদিমণি। তাই করব। তুমি ভেব না”।

রচনা ফোন বন্ধ করে নিজের চোখ মুছল। রতীশ পাশ থেকে রচনাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কেঁদো না সোনা। একটা খবর তো তবু পাওয়া গেছে। মন্তি যে ঠিক আছে সেটা তো জানা গেল অন্ততঃ। কাল নিশ্চয়ই তার সাথে কথা বলতে পারবে দেখো”।

রতীশ রচনাকে বেডরুমে টেনে এনে বিছানার ওপর বসিয়ে দিয়ে বলল, “এখানে বসো একটু। আর নিজেকে সামলাও সোনা। মন খারাপ কোর না .........”

রতীশের ফোনটা বেজে উঠতেই তার কথা থেমে গেল। পকেট থেকে ফোনটা বের করেই বলল, “এই দেখ সোনা, বৌদির ফোন”।
 

রচনা এ কথা শোনার সাথে সাথে রতীশের হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিয়ে কানে লাগিয়ে কান্না ভেজা উদবিঘ্ন গলায় জিজ্ঞেস করল, “বৌদি কোথায় আছ গো তুমি? তুমি ঠিক আছ তো”?

রতীশ হাত বাড়িয়ে ফোনের স্পীকার অন করে দিতেই শুনতে পেল মহিমা বলছে, “আরে! কি হয়েছে তোমার রচনা? আমি তো বাড়িতেই আছি। আর ঠিকই আছি। তুমি কাঁদছ কেন”?

রচনা মহিমার কথা শুনে কিছুটা শান্ত হয়ে বলল, “না বৌদি কিছু না। তুমি যাবার পর থেকে দু’তিনবার তোমায় ফোন করেছি। আর তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েছি। তাই একটু চিন্তা হচ্ছিল”।
 

মহিমা জবাব দিল, “তুমি ফোন করেছিলে? কেন বল তো? আমি কি তোমাদের ওখানে কিছু ফেলে টেলে এসেছি নাকি”?

রচনা বলল, “না বৌদি, তা নয়। আসলে তুমি নিজে গাড়ি ড্রাইভ করছিলে বলেই একটু খবর নিতে চাইছিলাম যে তুমি ঠিকমত গিয়ে পৌঁছেছ কি না। আর তোমার ফোন সুইচড অফ পেয়েই এতক্ষণ ধরে আমরা দু’জনই বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলুম গো”।

মহিমা ও’পাশ থেকে বলল, “সরি রচনা। কথাটা তোমাদের বলা হয়নি। আসলে আমার সব ফোনই সকাল বিকেল দু’বেলা সাড়ে পাঁচটা থেকে সাতটা অব্দি বন্ধ থাকে। কিন্তু এ ফোনটা সাতটার পরেও অন করতে ভুলে গিয়েছিলাম। সরি ভাই। কিন্তু তোমরা যে আমাকে ফোন করবে, সেটা আন্দাজ করতে পারলে আমি তোমাদের কথাটা জানিয়ে দিতাম। কিন্তু এ জন্যে তুমি কাঁদতে শুরু করে দিয়েছ”?

রচনা বলল, “না গো বৌদি, দু’দিন ধরে আমার দিদিভাইয়ের ফোন পাচ্ছি না বলেই মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে”।
 

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “তোমার দিদিভাই মানে কি তোমার দিদি”?

রচনা জবাব দিল, “না বৌদি, আমার নিজের দিদির সাথে তো দশ বছরের ওপর হয়ে গেছে আমার কোন যোগাযোগই নেই। ও শ্বশুর বাড়িতে কেমন আছে, সে খবরটুকুও আমরা জানতে পারিনা। কিন্তু আমার এ দিদিভাই হচ্ছে তোমার দেবরের ছোটবোন। তিনি অফিসের কাজে গত পরশু দিন ডুয়ার্সের কোন একটা জায়গায় গিয়েছেন। তখন থেকেই তার ফোন সব সময় আনরিচেবল পাচ্ছি। একটু আগে তোমার দেবরের সাথে তার ব্যাপার নিয়েই কথা বলতে বলতে আমার কান্না এসে গিয়েছিল”।

এতটুকু বলার পর রচনার হুঁশ হল, সে মহিমাকে ‘তুমি তুমি’ করে বলছে। মহিমা এবার বলল, “রতীশের ছোট বোন? তাকে তুমি দিদিভাই বলে ডাকো বুঝি? সত্যি বাঙালীদের এই মিষ্টি মিষ্টি ডাকগুলো শুনতে সত্যিই খুব মিষ্টি লাগে। রতীশের মুখের বৌদি ডাক শুনেও আমার কী যে ভাল লাগে, সেটা আমিই শুধু জানি। আচ্ছা রচনা শোনো। রতীশের সাথে একটু কথা বলব বলেই ফোন করেছিলাম। কিন্তু তোমাদের মন এখন ভাল নেই বলে, এখন আর কথা বলছি না। তবে ওকে বলে দিও কাল ওর সাথে অবশ্যই কথা বলব”।

রচনা বলল, “সরি বৌদি, মনটা ভাল ছিল না বলেই বুঝি খেয়াল করিনি। আমি আপনাকে ‘তুমি’ বলে ফেলেছি। প্লীজ কিছু মনে করবেন না”।

মহিমা বলল, “মনে করব, যদি আবার ‘আপনি’ করে কথা বল। তোমার মুখে এই ‘তুমি’ সম্মোধনটাই বেশী মিষ্টি লাগছে শুনতে”।

রচনা এবার অনেকটা সহজ হয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে বৌদি। আপনার.. সরি তোমার ভাল লাগলে সেভাবেই বলব। কিন্তু তুমি কিন্তু আজ খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছ বৌদি। শগুণে এত টাকা কেউ দেয়”?

মহিমা বলল, “আচ্ছা পাগলী মেয়ে তো তুমি। শগুণকে কখনও টাকার মাপে মাপতে হয়না। তবু তোমার কথার জবাবে বলছি, একটা সময় এই টাকার জন্যে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ যোগাতে আমাকে হিমশিম খেতে হয়েছে একটা সময়। আজ আর আমার টাকার অভাব নেই। আজ আমার হাতে এত পয়সা আছে যে আমার আশেপাশে যারা থাকে তাদের কোন আর্থিক কষ্টের কথা শুনলেই আমি তাদের সাধ্য মত পয়সার যোগান দিয়ে থাকি। কিন্তু তাই বলে, আমাকে খুব মহৎ বলে ভেবো না। আমি মেয়েটা মোটেও ভাল মেয়ে নই। বড় পাপী আমি”।

রচনা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা বৌদি, তোমার ছেলে মেয়েরা বাইরে পড়ছে বুঝি? তারা কী নিয়ে কোথায় পড়ছে”?

মহিমা জবাব দিল, “আমার এক ছেলে এক মেয়ে। দেড় বছরের ব্যবধানে দু’জন হয়েছিল। মেয়েটাই বড়। এখন তার বয়স পঁচিশ। আর ছেলের বয়স সাড়ে তেইশের মত চলছে। আর বাইরে মানে, বিদেশে কোথাও নয়। মেয়েটা আহমেদাবাদে এমবিএ পড়ছে। আর ছেলেটা ব্যাঙ্গালোরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়ছে। সামনের দশেরায় ওর আসছে। তখন দেখতে পাবে”।

রচনা বলল, “ও বেশ ভাল। তবে তোমাদের দশেরা মানে তো আমাদের দুর্গাপুজো। তখন তো আমরা এখানে থাকব না বৌদি। পুজোতে তো বাড়িতে যেতেই হবে। বাড়ি থেকে ফিরে এসে তোমার ছেলেমেয়েদের দেখতে পাব কিনা, দেখা যাক। আচ্ছা বৌদি, আরেকটা কথা শোনো। তোমার দেবর কাজের ব্যাপারে আজ তোমার সাথে কথা বলতে পারছে না। তুমি কিন্তু খারাপ পেও না। আসলে দিদিভাইয়ের সাথে কথা বলতে না পারলে ও তোমায় কিছু জানাতেও পারছে না। দিদিভাইয়ের সাথে ওর কালই কথা হবে। তবে কাল কখন হবে, সেটা এখনই বলতে পারছিনা। হয়ত কাল রাতের আগে কথা হবে না। তাই বলছি কি, তোমার সাথে ও হয়ত কাল রাতেই কথা বলতে পারবে। তুমি রাগ কোর না প্লীজ”।

মহিমা বলল, “তুমি আমার দেবরটাকে বলে দিও আমি কোন রাগ করব না। আর সাথে সাথে এটাও বলে দিও যে, ও আমার ইনস্টিটিউটে কাজ করলে আমি তো খুশী হবই। আমার মনে হবে যে আমি হাতে চাঁদ পেলাম। কিন্তু ও যদি আমার ইনস্টিটিউটে জয়েন না-ও করে তবুও আমি ওর মুখের বৌদি ডাকটা শুনতে চাইব। আমার মনের এ ইচ্ছেটাকে অন্ততঃ তোমরা রাখতে পারবে না”?

রচনা এবার বেশ অবাক হয়ে কিছু একটা কথা বলতে যেতেই মহিমা আবার বলে উঠল, “আর হ্যা, আরেকটা কথা শোনো রচনা। দেখ, শগুণ বা আশীর্বাদ কাউকে দিলে, সেটা তো আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। আমি বুঝতে পারছি, হয়ত আমি একটু বাড়াবাড়িই করে ফেলেছি। কিন্তু তোমরা ভেবো না যে তোমাকে ওই শগুণ দেবার পেছনে আমার অন্য কোন মতলব আছে। আমি তোমার ঠাকুরের নামে শপথ করে বলছি রচনা। আমি তোমাকে শুধুই আশীর্বাদী দিয়েছি। আর কোন মতলবই আমার ভেতরে ছিল না ভাই। আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না হয়ত। কিন্তু আমার নিজের কোন ভাই বা দাদা ছিল না। আমরা দু’বোন। বিয়ের পরেও স্বামীর ঘরে এসেও কোন ভাশুর বা দেবর কাউকে পাইনি। তোমার দাদারও কোন ভাই বোন নেই। কিন্তু আমার জীবনে আমি অনেক পুরুষের সাথেই মেলামেশা করেছি। সে’সব কথার সব কিছু তোমাকে বলতে চাইছি না। এতদিন মনের ভেতর এমন কোন ইচ্ছে না হলেও রতীশকে দেখার পরেই আমার মনের ভেতরটা কেমন করে উঠেছিল যেন। মনে হয়েছিল যে ওর মত একটা ভাই বা দেবর যদি আমার থাকত! দেবর তো ভাইয়ের সমতূল্য। তাই রতীশকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই আমার ওকে দেবর বলে ভাই বলে ভাবতেই ইচ্ছে করছিল। আর আজ তোমাদের বাড়িতে তোমাকে দেখেও খুব খুশী হয়েছিলাম। তাই ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে যা পেয়েছিলাম, তা-ই তোমাকে শগুণ দিয়েছি। তার পরিমান কত ছিল তা আমি এখনও জানিনা। শগুণ দিয়ে ক্ষমা চাওয়াটাও ভাল দেখায় না। ক্ষমা চাইলে সে শগুণের মাহাত্ম্যটা কমে যায়। তাই তোমার কাছে ক্ষমাও চাইতে পারছি না। তবে তোমরা হয়ত ভেবে থাকতে পার, যে রতীশ যাতে আমার ইনস্টিটিউটে যোগ দিতে অস্বীকার না করতে পারে, সে জন্যেই হয়ত তার মুখ বন্ধ করবার জন্য আমি তোমাকে অমন শগুণ দিয়েছি। কিন্তু তা নয় রচনা। তাই আমি বলছি, রতীশ আমার ওখানে কাজে যোগ দিতে না চাইলে আমি কিচ্ছু মনে করব না। কিন্তু তোমরা আমার দেবর দেবরানি হয়ে আমার সাথে সম্পর্কটা রেখো। প্লীজ ভাই। আমি হাতজোড় করে তোমার কাছে এ মিনতি করছি”।
 

রচনা অবাক হয়ে রতীশের সাথে চোখাচোখি করে বলল, “না না বৌদি। তুমি এমন করে বলছ কেন বল তো? আমরা তো এতকিছু ভাবিনি। শুধু তুমি অতগুলো টাকা শগুণ দিয়েছ বলেই মনে স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। আমরা তোমাকে কোন কষ্ট দিতে চাই না বৌদি। আর তোমার দেবর কাজে যোগ দেবার ব্যাপারে তোমাকে এখনও কোন জবাব দেননি কেন, সেটা তো তোমাকে আগেই বলেছি। দিদিভাইয়ের সাথে কথা না বলে আমরা কোন ব্যাপারেই কোন সিদ্ধান্ত নিই না। দিদিভাই শুধু আমাদের দিদি নয়। সে আমাদের একজন বন্ধু এবং অভিভাবকও। তাই তার সাথে কথা বলেই তোমার দেবর তোমাকে ফোন করবেন। আর শোন বৌদি, তুমি যাকে দেবর বলে ভাবছ সে তোমার দেবর হয়েই থাকবে। আর আমিও তোমার দেবরানী হলাম আজ থেকে। বাড়ি ঘর ছেড়ে এতদুরে চলে এসে তোমার মত একজন বৌদি পেয়ে আমরাও খুব খুশী হয়েছি গো। তুমি আর অন্য কিছু ভেব না”।

রচনার কথা শেষ হয়ে যাবার পরেও মহিমা কিছু বলছে না দেখে রচনা বলল, “হ্যালো হ্যালো, বৌদি। কি ব্যাপার লাইন কেটে গেল নাকি”?

এমন সময় মহিমা খুব শান্ত গলায় জবাব দিল, “তুমি সত্যি বলছ রচনা? তোমরা সত্যি আমাকে তোমাদের বৌদি বলে ভাববে”?

রচনা জবাব দিল, “হ্যা বৌদি, আমি সত্যি বলছি। আর তোমার দেবরও আমার পাশে বসে আমাদের সব কথা শুনছেন। তিনিও তোমার দেবর হয়ে থাকতে রাজি আছে”।

মহিমা খুশী হয়ে বলল, “সত্যি বলছ রচনা? সত্যি বলছ তুমি? তাহলে আমি মাঝে সাঝে তোমাদের ওখানে যেতে পারি? তোমরা তাতে আপত্তি করবে না তো”?

রচনা হেসে বলল, “হ্যা অবশ্যই আসতে পার বৌদি। কিন্তু অমন শগুণ আর দিতে পারবে না”।

মহিমা উচ্ছ্বসিত গলায় বলল, “ধুর পাগলী মেয়ে। শগুণ কি আর যখন তখন দেবার জিনিস নাকি? ঘরে নতুন কেউ এলে আর কোন বিশেষ বিশেষ ঘটণা ছাড়া শগুণ দিতে নেই। হ্যা উপহার অবশ্য যে কোন সময় দেওয়া যায়। তা আমার দেবর তো বিয়ে করেছে তিন বছর হয়ে গেছে। মা হবে কবে তুমি, বল তো”?


______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 04-03-2020, 10:25 PM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)