Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#76
(Update No. 94)

রতীশ মহিমাকে নিয়ে বেডরুমের ভেতর দিয়ে বাথরুমের সামনে নিয়ে গিয়ে বাথরুমের দরজা খুলে দিল। মহিমাও দেরী না করে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।
 

রচনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে চুল আঁচরে নিয়ে কপালে আর সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে ঠাকুর ঘরে গিয়ে পূজোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। প্রায় মিনিট পনের পর পূজো শেষ করে ঠাকুরকে প্রণাম করে উঠে পেছন ফিরতেই দেখে মহিমা ঠাকুর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।

রচনা মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করল, “আপনার স্নান হয়ে গেছে বৌদি”?

মহিমা ঠাকুরের আসনের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে জবাব দিল, “হ্যা, স্নান হয়ে গেছে আমার। আচ্ছা রচনা একটা কথা জিজ্ঞেস করব? কিছু মনে করবে না তো”?

রচনা হেসে বল, “না না বৌদি। মনে করব কেন? বলুন না কি বলবেন”?

মহিমা বলল, “তুমি যে ঠাকুরকে পূজো দিলে তার ছবি তো অনেক জায়গাতেই চোখে পড়ে। কিন্তু আমি কোনদিন সেভাবে জানতে চেষ্টা করিনি ইনি কোন ঠাকুর, এর নাম কি? একটু বলে দেবে আমাকে”?

রচনা ঠাকুরের সামনে আবার হাঁটু গেঁড়ে বসে গলবস্ত্র হয়ে প্রণাম করে বলল, “এই যে, মাঝে যিনি আছেন তিনি হচ্ছেন ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। আর এ’পাশে যিনি আছেন তিনি হলেন জগজ্জননী মা সারদা। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের সহধর্মিণী। আর এ’পাশে যিনি আছেন তিনি ..... “।

মহিমা রচনার কথা মাঝেই বলে উঠল, “হ্যা, একে আমি জানি। ইনি তো স্বামী বিবেকানন্দ, তাই না”?
 

রচনা হেসে বলল, “হ্যা বৌদি, ঠিক বলেছেন। ইনি স্বামী বিবেকানন্দ। আমরা ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণকেই ভগবান বলে মানি আর পুজো করি। আর স্বামী বিবেকানন্দ আমাদের ঠাকুরের সবচেয়ে প্রিয় শিষ্য ছিলেন বলেই ঠাকুরের সাথে সাথে আমরা তাকেও পূজো করি। তা বৌদি আপনি কোন ঠাকুরের পূজো করেন”?

মহিমা চমকে উঠে বলল, “আমি? না মানে, আমি তো পূজো টুজো কিভাবে কি করতে হয় তা ঠিক
 
জানিনা। আসলে কেউ আমাকে শেখায়ও নি। ছোটবেলায় বিয়ের আগে দিল্লীতে থাকতে তো অনেক বাড়িতেই ভগবান শিব, বজরঙ্গবলী, মাতারানীর পূজো করতে দেখেছি। কিন্তু নিজে তো কখনও কোন ঠাকুর বা ভগবানকে পূজো করিনি। আর বিয়ের পর স্বামীর ঘরে এসেও শ্বশুর শাশুড়ি কাউকে পাইনি। শুধু এক অসুস্থ মাসিকেই দেখেছি আমি। সেও বছর দুয়েক বাদেই আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাই এ’সব পূজাপাঠ আমার কোনদিন শেখাই হয়নি গো”।

মহিমার চোখে মুখে লজ্জার ছায়া দেখে রচনা বলল, “এতে মন খারাপ করার কি আছে বৌদি? আপনার যদি কখনও মন চায় সেসব করবেন”।

মহিমা কাতর চোখে রচনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “আমি তোমার ঠাকুরকে একটা প্রণাম করতে পারি রচনা”?

রচনা মিষ্টি করে হেসে বলল, “বারে, ঠাকুরকে প্রণাম করতে আবার কারো অনুমতি নিতে হয় নাকি? করুন না”।

মহিমা তবু খানিকটা ইতস্ততঃ করে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আরেকবার একটু প্রণাম করে দেখিয়ে দেবে প্লীজ”?

রচনা আরেকবার হাঁটু গেঁড়ে বসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে উঠে বলল, “এভাবে করুন”।

মহিমা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে গা ঢেকে নিয়ে হাঁটু গেঁড়ে প্রণাম করে উঠে জিজ্ঞেস করল, “ঠিক হয়েছে রচনা? আমি ঠিক মত প্রণাম করতে পেরেছি তো”?

রচনা মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “হ্যা, খুব ভাল হয়েছে বৌদি” বলে মহিমার পেছনে দাঁড়ানো রতীশকে উদ্দেশ্য করে বলল, “সোনা, তুমি বৌদিকে নিয়ে ও’ঘরে গিয়ে বস। আমি প্রসাদ দিয়েই খাবার ব্যবস্থা করছি”।
 

রতীশ পেছন থেকে ‘আসুন বৌদি’ বলতেই মহিমা রতীশের পেছন পেছন গিয়ে ড্রইং রুমে গিয়ে ঢুকল। খানিকক্ষণ বাদে রচনা প্রসাদের থালা নিয়ে ড্রইং রুমে এসে রতীশ আর মহিমার হাতে প্রসাদ দিয়ে রতীশকে বলল, “প্রসাদ খেয়ে তুমি বৌদিকে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে যেও সোনা। আমি শাড়িটা পাল্টেই আসছি”।
 

মহিমা প্রসাদটা হাতে নিয়ে রচনার ফিরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। রতীশ প্রসাদটা খেতে গিয়েই থেমে গিয়ে বলল, “প্রসাদটুকু মুখে দিন বৌদি”?

মহিমা অবুঝ শিশুর মত জিজ্ঞেস করল, “এমনি এমনি মুখে দেব? না আর কিছু করতে হবে”?
 

রতীশ নিজের হাতের প্রসাদটা মাথায় ঠেকিয়ে বলল, “এভাবে একটু মাথায় ছুঁইয়ে তারপর মুখে দেবেন। তাহলেই হল। আর খাবার পর হাতটা গায়ে বা পোশাকে লাগাবেন না। আগে একটু জলে ধুয়ে নেবেন”।

মহিমা চুপচাপ হাত মাথায় ঠেকিয়ে প্রসাদটা খেয়ে নিতে রতীশ তাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে বেসিনের কাছে নিয়ে গেল। মহিমা হাত ধুয়ে বেসিনের পাশের টাওয়েলে হাত মুছে সরে দাঁড়ালে রতীশও হাত ধুয়ে মহিমাকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসল। মিনিট কয়েক বাদেই রচনা ডাইনিং রুমের ভেতর দিয়ে কিচেনের দিকে যেতে যেতে দেখল মহিমা আর রতীশ দু’জনেই চুপচাপ বসে আছে। রচনা ডাইনিং টেবিলে জলের বোতল, জগ, গ্লাস রাখতে রাখতে বলল, “কি হল বৌদি? এমন চুপচাপ বসে আছেন যে? খুব ক্ষিদে পেয়ে গেছে বুঝি, তাই না”?

মহিমা রচনার কথা শুনে কিছুটা চমকে উঠে বলল, “অ্যা? না না রচনা, তা নয়”।

রচনা আচারের বোতল, নুনের পাত্র টেবিলে সাজাতে সাজাতে জিজ্ঞেস করল, “বৌদি, আপনি যে আজ আমাদের এখানে চলে আসবেন, সেটা যদি আগে থেকে একটু জানিয়ে দিতেন, তাহলে হয়ত একটু ভাল আয়োজন করতে পারতুম। কিন্তু এখন তো খুবই সাধারণ খাবার খেতে হবে। আচ্ছা বৌদি, আপনি কি রুটি খাবেন না ভাত”?

মহিমা শান্ত গলায় বলল, “না না, তুমি ভেবো না রচনা। আমি দুপুরে ভাতই খাই। রাতের বেলায় অবশ্য রুটি খাই”।

রচনা কিচেনে ঢুকে থালা বাটিতে খাবার সাজাতে সাজাতে বলল, “আপনি কি খেতে ভাল বাসেন তা তো জানিনা বৌদি। আর আগে থেকে আমার কিছু জানাও ছিল না। তাই একটু কষ্ট করে খেতে হবে বোধহয় আপনাকে”।
 

একেবারে পুরোপুরি বাঙালী ঘরোয়া রান্না। কুমড়ো ভাজা, চালতা দিয়ে টকডাল, ভাজা মুগডাল আর একটা নিরামিষ তরকারীর পর টোমেটোর চাটনি আর সবশেষে রসগোল্লা দিয়ে সকলে মিলে খাবার খেল। চালতার ডাল মহিমার কাছে একটা নতুন জিনিস ছিল। তাই মহিমার কৌতূহল মেটাতে রচনা আর রতীশ তাকে সব বুঝিয়ে দিল। এর আগে মহিমা এমন জিনিস কখনও খায়নি। রচনার হাতের সুস্বাদু রান্না খেয়ে মহিমা খুবই খুশী হল। দেড়টা নাগাদ খাওয়া শেষ হলেও রচনার অনুরোধ সত্বেও মহিমা রতীশের সাথে ড্রইং রুমে না গিয়ে রচনার পাশে পাশে থেকেই তাকে ডাইনিং রুম আর কিচেনের জিনিসপত্র ধোয়াধুয়ি করতে আর সব কিছু গোছগাছ করতে দেখে গেল। সব কিছু গোছগাছ করে রচনা মহিমার হাত ধরে ড্রইং রুমে এসে বসতেই মহিমা বলল, “এই রতীশ, ভাই আমি কিন্তু আর খুব বেশীক্ষণ বসতে পারব না গো। আমাকে উঠতে হবে এখন” বলে রচনার একটা হাত ধরে বলল, “আর রচনা, তোমাকে কী বলব ভাই, তা আমি বুঝতেই পাচ্ছি না। তুমি দেখতে যেমন মিষ্টি, তোমার ব্যবহারও তেমনই মিষ্টি আর তোমার হাতের রান্নাও খুব মিষ্টি। আমার ঘরের কুকটাও একজন বাঙালী মহিলা। কিন্তু তা সত্বেও এমন সুস্বাদু খাবার, বিশেষ করে ওই চালতার ডাল, আমি কখনও খাওয়া তো দুর, এর কথাও কখনও শুনিনি। আর এর স্বাদ বোধহয় কোনদিন ভুলতে পারব না। তবে ভাই, জানি তুমি আপত্তি করবে। কিন্তু আমাদের পাঞ্জাবী প্রথা মেনেই তোমার হাতের প্রথম রান্না খেয়েও আমাকে একটু শগুন দিতেই হবে” বলে সোফার ওপর রাখা নিজের ভারী ব্যাগটা হাতে নিয়ে তার ভেতর থেকে দুটো একশ’ টাকার প্যাকেট বের করে রচনার মাথার চারপাশে ঘুরিয়ে নিয়ে তার হাতে দিতেই রচনা অবাক হয়ে বলে উঠল, “না না বৌদি, এ আপনি কী করছেন? এতগুলো টাকা দিচ্ছেন কেন আপনি”?

মহিমা শান্ত স্বরে রচনার গালে হাত বুলিয়ে বলল, “না রচনা, অমন বলতে নেই। এটা টাকা নয়, শগুন। মানে বাংলায় একে তোমরা আশীর্বাদী বলতে পার। আর আশীর্বাদ কি কখনও ফিরিয়ে দিতে হয়”?
 

রচনা তবু কিছু একটা বলতে চাইতেই মহিমা তার মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, “চুপ, আর কোন কথা বোল না প্লীজ রচনা। আর শোন না, বলছি কি, যাবার আগে আরেকবার তোমার ঠাকুরকে প্রণাম করতে পারব”?

রচনা মহিমার কথা শুনে বেশ অবাক হল। সে হাতে ধরা টাকার প্যাকেট দুটো রতীশের হাতে দিয়ে মহিমাকে বলল, “বেশ তো যান না। প্রণাম করে আসুন”।

মহিমা রচনার হাত ধরে ভেতরের দিকে যেতে যেতে বলল, “আমি কি তোমার ঠাকুর ঘরের ভেতরে ঢুকে আরো একটু কাছে থেকে তোমার ঠাকুরকে দেখতে পারি”?

রচনা ঠাকুর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, “তাহলে আপনাকে একটা ধোয়া কাপড় পড়ে নিতে হবে বৌদি। আপনি তো সকাল থেকেই এ শাড়িটা পড়ে আছেন। অফিস করে আবার এতটা রাস্তা পেরিয়ে এখানে এসেছেন। এটা পড়ে ঠাকুরঘরে ঢোকাটা ঠিক হবে না”।

মহিমা একটু হতাশ হয়ে বলল, “ও, তাহলে বরং ভেতরে না ঢুকে আগের মত বাইরে থেকেই করি”।

রচনা মহিমার হাত দুটো ধরে বলল, “আপনার যখন অমন ইচ্ছে হচ্ছে, তাহলে একটা কাজ করুন না বৌদি। আমি আপনাকে একটা শাড়ি বের দিচ্ছি। কিন্তু আমার ব্লাউজ তো আপনার গায়ে হবে না। আমি আপনার দেবরকে নিয়ে ড্রইং রুমে বসছি। আর ড্রয়িং রুমের দরজাটাও বন্ধ করে দিচ্ছি। আপনি শাড়িটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে আপনার শরীরের পড়ে থাকা সব কিছু খুলে ফেলে শুধু আমার শাড়িটা পড়ে ঠাকুরঘরে ঢুকে প্রণাম করে নিন। তারপর আবার নিজের শাড়ি ব্লাউজ পড়ে নিয়ে আমাকে ডাকবেন। আমি তখন ড্রইং রুমের দরজা খুলে দেব”।
 

মহিমা খুব আগ্রহের সাথে বলল, “কিন্তু তোমার খারাপ লাগবে না তো? বা রতীশ কিছু মনে করবে না তো”?

রচনা নিজের আলমারি খুলে একটা শাড়ি মহিমার হাতে দিয়ে বলল, “কেউ কিছু ভাবব না আমরা। নিন, এ শাড়িটা পড়ে ঠাকুরঘরে ঢুকবেন। ঠিক আছে”?
 

মহিমা রচনার হাত ধরে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ রচনা”।

রচনা মহিমাকে ছেড়ে বেডরুম পার হয়ে ড্রইং রুমে এসে ড্রয়িং রুমের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে রতীশের পাশে বসতেই রতীশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কি হল? বৌদি কোথায় গেলেন”?
 

রচনা রতীশকে সব কিছু বুঝিয়ে বলল। তারপর আবার বলল, “ইশ দেখেছ সোনা? বৌদি শগুন দেবার নাম করে কতগুলো টাকা আমাকে দিল! এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না”?

রতীশ কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বলল, “হ্যা তা তো ঠিকই। কিন্তু আশীর্বাদীর জিনিস তো ফিরিয়েও দেওয়া যায় না। কিন্তু আমি অন্য কথা ভাবছি সোনা। দেখ আমি তো ভেবেছিলুম বৌদি তার ওখানে আমাকে কাজে যোগ দেবার কথা বলতেই এসেছিলেন। কিন্তু উনি তো এ ব্যাপারে এখনও একটা কথাও বলেন নি! আর আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছ? উনি যখন আমাদের বাড়ি এসেছিলেন তখন তাকে খুব উচ্ছ্বসিত খুব চনমনে দেখাচ্ছিল। কিন্তু খাবার টেবিলে বসবার আগে থেকেই উনি যেন কেমন চুপচাপ হয়ে গেছেন। অনেকক্ষণ তো একেবারে চুপচাপ বসেছিলেন। ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত ঠেকছে আমার কাছে”।
 

রচনা বলল, “হ্যা সেটা আমিও খেয়াল করেছি। কিজানি, আমার রান্না খেয়ে বুঝি ভাল লাগেনি তার। কিন্তু সোনা তুমি আমাকে একটা কথা বল তো? তুমি কি বিমল আগরওয়ালাকে আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা বলেছিলে কখনও”?

রতীশ বলল, “না রচু, আমি তো কক্ষনো বিমলজীকে আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা বলিনি। তবে হ্যা আমরা যে বরানগরে থাকি এটা বলেছি। কিন্তু বরানগরের কোন রোডে কোন লেনে আর কোন বিল্ডিঙে থাকি, এসব তাকে আমি কখনো বলিনি। আর শুধু তার কথাই বা বলছি কেন। আমি কাউকেই সেসব বলিনি। এমনকি সেদিন ইন্টারভিউএ বৌদিকেও সেকথা বলিনি। কিন্তু বৌদি তো বললেন, তিনি বিমলজীর কাছ থেকে আমাদের ফ্ল্যাটের ঠিকানা জেনে নিয়েছেন”!
 

রচনা কিছু না বলে চুপ করে মনে মনে কিছু একটা ভাবতে লাগল। খানিকক্ষণ বাদে ড্রইং রুমের দরজার ও’পাশ থেকে মহিমা রচনার নাম ধরে ডাকতেই রচনা উঠে দরজা খুলে দিল। মহিমা রচনার দুটো হাত ধরে চুমু খেতে খেতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ রচনা। আমার জীবনে এমন একটা দিন আগে আর কখনও আসেনি। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। এ দিনটার কথা আমার সারা জীবন মনে থাকবে”।

রচনা মহিমাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলল, “বসুন এখানে বৌদি। কিন্তু .... “

মহিমা নিজের ভারী ব্যাগটা কাঁধে উঠিয়ে বলল, “আর কোন কিন্তু নয় আজ। আমাকে এখন বেরোতেই হবে ভাই”।
 

রতীশ এবার জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু বৌদি, আপনি কী বলতে এসেছিলেন, সে ব্যাপারে তো কিছু বললেনই না”!

মহিমা মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল, “হ্যা ভাই, কিছু একটা বলব বলেই তো এসেছিলাম। কিন্তু আসবার পর ভাবলাম সে প্রসঙ্গটা না তোলাই ভাল। তুমি দু’ দিন সময়ে চেয়েছ আমার কাছে। এখনও তো দু’দিন পুরো পেরোয় নি। তাই তোমার জবাব পেলেই এ ব্যাপারে পরের কথা বলব আমি। তাই এখন আর কিছু বলছি না। আগের বলা কথা গুলোই রিপিট করে বলে তো আর কোন লাভ নেই ভাই। আশা করি আমার কথাগুলো তুমি ভুলে যাওনি। আর এটাও আশা করছি যে আগামীকাল সন্ধ্যের আগেই তোমার মতামত জানতে পারব আমি। তবে ভাই রচনাকে দেখার পর আমার মনে হচ্ছে একটা কথা তোমাদের দু’জনকে আমার বলা উচিৎ। অবশ্য তোমরা আমার কথাটাকে যদি অন্য ভাবে না নাও”।
 

রতীশ বলল, “হ্যা হ্যা বৌদি বলুন”।

মহিমা একমূহুর্ত চুপ করে থেকে বলল, “দেখ রতীশ। তুমি হয়ত ভেবেছ যে বিমলের সাথে আমার খুব ঘণিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে। কিন্তু সেটা আসলে সত্যি নয়। বিমলের সাথে আমার সত্যি তেমন গভীর আন্তরিকতার কোন সম্পর্ক নেই। তবে একটা সময় বিমল আমার খুব উপকার করেছিল। আর তারই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ওর সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করে থাকি। আর তাছাড়া বিমলের স্ত্রী সবিতাও আমাদের ইনস্টিটিউটের একজন কাস্টমার। সেই সুবাদেও ওর সাথে একটা ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছেই। আর বিমলই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। তোমার মত একজন যোগা এক্সপার্টকে পেলে আমিও উপকৃত হব। আর সেজন্যেও বিমলকে একটা ধন্যবাদ আমাকে দিতেই হবে। কিন্তু তা সত্বেও আমি তোমায় একটা কথা বলতে চাই রতীশ। তুমি আমার ওখানে কাজে যোগ দাও বা না দাও সেটা নিয়ে কিছু বলছি না আমি আর। আমার কথার ওপর তোমার আস্থা জন্মালে তুমি নিজেই সে ডিসিশন নেবে। কিন্তু ভাই, বিমলের সাথে তোমরা কেউ ঘনিষ্ঠতা বাড়িও না। ওর সংস্পর্শ থেকে যতটা দুরে থাকতে পার, সে চেষ্টা কোর তোমরা”।

রচনা আর রতীশ মহিমার কথা শুনে অবাক হল। রতীশ বলল, “কিন্তু বৌদি, এমন একটা কথা আপনি কেন .....”।

মহিমা নিজের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে রতীশের কথায় বাঁধা দিয়ে বলল, “আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস কোর না রতীশ। এ ব্যাপারে আমি আর বেশী কিছু বলব না এখন” বলে রচনার একটা হাত ধরে মুখে একটু হাসি টেনে এনে বলল, “তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ রচনা। আমি ভাবতেও পারিনি তোমাদের বাড়ি এসে যে সময়টুকু কাটাব তা এত সুন্দর হতে পারে। আর তোমার হাতের সাধারণ খাবার আমার মুখে কতটা অসাধারণ বলে মনে হয়েছে, সেটাও তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারব না। কিন্তু তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব”?

রচনাও নিজের মুখে জোর করে খানিকটা হাসি টেনে এনে বলল, “হ্যা বৌদি, বলুন”।

মহিমা খুব শান্ত গলায় বলল, “যদি রতীশ আমার ইনস্টিটিউটে কাজ করতে রাজি না হয়, তবে ওকে আমি বাধ্য করব না সেটা করতে। কিন্তু তারপরেও যদি কখনো আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে, তাহলে আমি কি তোমাদের এখানে আসতে পারি”?
 

রচনা একটু বিব্রত ভাবে জবাব দিল, “ছি ছি বৌদি, এমন করে বলছেন কেন? আপনার ইচ্ছে হলে যে কোন দিন আসতে পারেন। তবে একটা কথা, সেদিন আর এমনভাবে শগুণ দিয়ে আমাকে লজ্জা দেবেন না প্লীজ”।

মহিমা রচনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খেয়ে বলল, “আজ তোমাকে প্রথম দেখেছি, তোমার হাতের রান্না প্রথম খেয়েছি বলেই না শগুণ দিয়েছি। তবে তুমি যখন চাইছ, এর পর আর এভাবে তোমাকে শগুণ দেব না। কিন্তু আমার এই দেবরানীর জন্যে কিছু উপহার তো মাঝে মধ্যে আনতেই পারি। নাকি তাতেও বারণ আছে”?
 

রচনা হেসে বলল, “হালকা হলে আপত্তি নেই। কিন্তু ভারী কোন উপহার কখনো দেবেন না প্লীজ”।
 

মহিমা আরেকবার রচনার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ রচনা। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ। তোমার মত এমন মিষ্টি মেয়ে আমি আর দেখিনি। আচ্ছা ভাই, আমি এখন যাব”।

রতীশ আর রচনা মহিমাকে লিফটের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল। মহিমা লিফটে চড়ে নেমে যেতে রতীশ আর রচনা ঘরে ঢুকতেই রচনা সামনের দরজা বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ একটা সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। রতীশ ভেতরে বাথরুমে ঢুকে গিয়েছিল। বাথরুম থেকে ফিরে এসে রচনাকে গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবতে দেখে রতীশ তার পাশে বসে তার কাঁধে আলতো করে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল, “কী ভাবছ রচু”?


______________________________
 ss_sexy
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 04-03-2020, 10:22 PM



Users browsing this thread: 9 Guest(s)