04-03-2020, 08:06 AM
পর্ব-৮
বাস এসে গেছে, ওপরে উঠে একবার সবাইকে জানিয়ে দিয়ে চলে যায় যে বাস এসে গেছে। ছেলেরা তৈরি, মেয়েদের সাজার এখনো বাকি। বাসে এক এক করে সবাই বসার পরে ও স্যামন্তক বাসে চাপেনা। জেঠু জিজ্ঞেস করলেন “কিরে তুই কিসে যাবি” ও উত্তর দিল “আমি আসছি, বাইকে করে তোমরা যাও, তোমাদের আগেই পৌঁছে যাবো আমি।” স্যামন্তক আড় চোখে একবার বন্দনার দিকে তাকায়, তাহলে ওযে শারীটা পরতে বলেছিল সেটাই পরেছে। বড় বেশি পেঁচিয়ে যাচ্ছে ওর সম্পর্কটা, ওকে যেচে হাল্কা করতে হবে না হলে সবার চোখে পরে যাবে।
বন্দনা বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারে যে ওর ঘরে ঢোকার আগে একবার জানানো উচিৎ ছিল যে ও ঢুকছে। সেটা না করে ও নিজেকে এবং স্যামন্তককে বেশ অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে। এবারে নিজেকে ওর থেকে একটু দুরে রাখাই ভাল, একদিক থেকে ভালই হল যে ও বাসে যাচ্ছে না। বন্দনা নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। বাস ছেড়ে দেবার পরে ও অনেকক্ষণ চোখ বন্দ করে চুপচাপ বসে থাকে।
স্যামন্তক আগেই বেনাচিতি পৌঁছে যায়। দিদি বেশ সুন্দর সেজেছে, একটা নীল রঙের বেনারসি শাড়ীতে ঢেকে বেশ টাবুর টুবুর হয়ে রাজরানির মতন একটা চেয়ারে বসে আছে।
একা ভাই কে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে “কিরে তুই একা বাকিরা কোথায়?”
—“আসছে পেছনে, আমি বাইকে এসেছি।”
—“বাইকে কেনও?”
আব্দারের সুরে বলে দিদিকে “তোকে একটু বেশি করে দেখব বলে”
সিতাভ্র ওকে দেখে জিজ্ঞেস করে “কি রে শালা, বাকি রা কোথায়?”
সিতাভ্র কে মজা করে বলে “বাকিদের দিয়ে কি হবে আজ, রাতটা তো তোমার গুরু।” তারপরে দিদির দিকে চোখ টিপে বলে “তোর খবর তো কাল সকালে নেবো রে। তুই যেমন আমারটা নিয়েছিলি।”
পুবালির মুখটা এমনিতেই সাজানোর ফলে লাল ছিল, টার ওপরে আবার ভাইয়ের মুখে ঐ রকম কথা শুনে একদম রক্ত জবার মতন লাল হয়ে গেলো। একটু বকুনির শুরে বলে “তুই এখান থেকে যা নাহলে মারবো এবারে।”
বাস পৌঁছে যায় কিছুখন পরে। বন্দনাকে নামতে দেখেই মজা করে বলে ওঠে “আজ প্রথম থেকেই বলছি যে দারুন লাগছে।”
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা বন্দনা, ওতো ভেবেছিলো যে … স্যামন্তক বলে ওঠে “কি ভেবেছিলে আমি আর কথাই বলবনা তোমার সাথে, তাই তো।” বন্দনার ছোটো ছোটো চোখ দুটি বিস্ময়ে মাখা, কি বোলবে ভেবে পায়না হাঁ করে চেয়ে থাকে ছেলেটার দিকে, কি অধভুত ছেলে। ঠোঁট দুটি ফাঁকা দেখে নিচু স্বরে বলে স্যামন্তক “হাঁ বন্দ করো নাহলে মাছি ঢুকে যাবে, কিছু ভেবনা, আমি ঠিক আছি, পরে কথা বলবো।”
লজ্জা পেয়ে যায় বন্দনা, লাজুক হেসে নিজের মনের আলোড়নটা মুছে ফেলে বলে “তোমাকে বোঝা বড় শক্ত।”
নাকের ওপরে আলতো করে ডান হাতের তর্জনী ছুঁইয়ে স্যামন্তক বলে “দিদির কাছে যাও, সব ঠিক আছে।”
মাথা নিচু করে হরিণীর মতন পালিয়ে যায় বন্দনা, যেতে যেতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে স্যামন্তকের দিকে, এই ছেলেটা পাগল করে ছাড়বে সত্যি। চেহারাটাই পাল্টে যায় বন্দনার, সারা মুখে এক অদ্ভুত আলোর ছটা লাগে। গালের লালিমা যেন শত গুন বেড়ে যায়, ও যে নাক টা ছুঁয়েছে পরশটা যেন খুব মধুর লাগে।
পুবালিকে দেখেই বলে ওঠে “কি রে দারুন লাগছে তোকে, আর তোর দোসর টা কোথায় একটু দেখি তাকে।”
সিতাভ্র পাশেই ছিল, মজা করে বলে ওঠে “এমন একটা শালি হাত ছাড়া হয়ে যাবে।”
“তুমি তো দেখলেই না আর কি করা যাবে বলও।” বন্দনা ওকে একটু খুঁচিয়ে বলে।
সিতাভ্র বলে—“তোমার মনটা তো কারুর জন্য পরে আছে না হলে সাথে নিয়ে যেতাম মানালি।”
—“আগে দেখি পুবালি কি রেস্পন্স দেয় তারপরে তোমাকে সুযোগ দেওয়া যাবে কিনা ভেবে দেখব।”
—“বাপরে আগে যাচাই করবে তারপরে খেয়ে দেখবে।”
পুবালি ওদের কথা শুনে কি বোলবে ভেবে পায়না।
স্যামন্তকের সবার সাথে কথা বার্তা আলাপ পরিচয় করে, এক সময় মনে হয় যে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এবারে খেয়ে নেওয়া উচিৎ। কন্যে যাত্রীর বাকিদের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে, ওর বাবা একবার জিজ্ঞেস করে গেলো ওকে যে কখন খাবে ও। ও বলল পরে খাবে। বন্দনা ও পুবালির পাশেই বসে ছিল সারাটা সময় ওর ও খাওয়া হয়নি, ওদিকে সুবিমল ও তাকে ছিল যে বন্দনার সাথে খেতে বসবে। ঘুরতে ঘুরতে সুবিমল একবার পুবালির বসার জায়গাই এসে বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে যে ও খাবে কি না। পুবালি ভুরু নাচিয়ে ইশারা করে “যা, কি করছিস।”
অগত্যা যেতে হয়, যেতে যেতে ওর চোখ পরে স্যামন্তকের দিকে, গাড় বাদামি স্যুটে দারুন লাগছে ছেলেটাকে। একে বেশ লম্বা চওড়া, পেটানো শরীর তাতে ও যে ড্রেসই পরে তাতেই মানিয়ে যায়।
ওকে ইশারায় করে জিজ্ঞেস করে “কি গো কখন খাবে?”
স্যামন্তক হাত নাড়িয়ে বলে “চলো”
খাওয়ার সময়ে কথা বার্তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায় দুইজনার মাঝে, কঠিন নীরবতা আর থাকেনা। রাতেও বাড়ি ফিরে যদিও বিশেষ কথা হয়না তবুও আজ আর সেই তিক্ততা ভাবটা নেই।
দুপুরের আগেই বাড়ি খালি হয়ে যায়, যে যার নিজের বাসস্থানে ফিরে যায়। স্যামন্তক থেকে যায়, কেননা পুবালি সিতাভ্রকে নিয়ে অষ্টমঙ্গলার পরের দিন ওকে ফিরতে হবে কলকাতায়। দুপুরের খাওয়ার সময়, বন্দনার মনটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো আবার ফিরে যেতে হবে নিজের ব্যস্ত জীবনে, ফিরে যেতে হবে ডিব্রুগড়ে। এই দুই দিনে অনেক কিছু পেয়েছে ও, অনেক নতুন আলেয়ার হাতছানি মাঝে মাঝে মনের কোন কোণে জেগেও উঠেছিল কিছু প্রশ্ন, সব প্রশ্নকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে।
বন্দনা স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে “আমাকে স্টেশানে ছেড়ে আসবে? ট্রেনের সময় তো হয়ে এলো।”
—“ঠিক আছে”
গাড়িতে যাওয়ার সময়েও বিশেষ কথা হয় না দু জনের মাঝে। কি বলবে কেউ কিছু ভেবে পায়না। দুজনেই আনমনা হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষা করে।
স্যামন্তক একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ছোটো করে দুটি টান দিয়ে ফেলে দেয়, সিগারেটটা ও যেন তেতো লাগছে।
এমন সময় বন্দনা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসে। ঐ হাসি দেখে স্যামন্তকের মনের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে মনে হয় যেন কি হারিয়ে যাচ্ছে ওর সামনে থেকে। নিচু স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করে “ফোন করবে আমাকে?”
ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকে পরে, চারদিকের লোক জনের চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যাই। বন্দনা একটু উঁচু স্বরে জিজ্ঞেস করে “কি বলছও? একটু জোরে বলও আমি শুনতে পাচ্ছিনা।”
কানের কাছে মুখ এনে স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে “আমাকে ফোন করবে?”
বুক কেঁপে ওঠে বন্দনার, চোখে কোণটা একটু ভিজে ওঠে। ঠোঁট দুটি কেঁপে ওঠে। ও বলে “আমাকে ভুলে যেও, আমি চললাম, ভাল থেকো। আর পুবালিকে জানিয়ে দিও যে আমি একদিন নিরুপমকেই বিয়ে করবো।”
পেছন ফিরে আর তাকায় না বন্দনা, সুটকেসটা হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠে পরে। ট্রেন ছেড়ে দেয়, স্যামন্তক দাঁড়িয়ে থাকে নিথর হয়ে, সারা পৃথিবীটা খেলো মনে হয়। সব কিছু যেন ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা।
চলবে.....
বাস এসে গেছে, ওপরে উঠে একবার সবাইকে জানিয়ে দিয়ে চলে যায় যে বাস এসে গেছে। ছেলেরা তৈরি, মেয়েদের সাজার এখনো বাকি। বাসে এক এক করে সবাই বসার পরে ও স্যামন্তক বাসে চাপেনা। জেঠু জিজ্ঞেস করলেন “কিরে তুই কিসে যাবি” ও উত্তর দিল “আমি আসছি, বাইকে করে তোমরা যাও, তোমাদের আগেই পৌঁছে যাবো আমি।” স্যামন্তক আড় চোখে একবার বন্দনার দিকে তাকায়, তাহলে ওযে শারীটা পরতে বলেছিল সেটাই পরেছে। বড় বেশি পেঁচিয়ে যাচ্ছে ওর সম্পর্কটা, ওকে যেচে হাল্কা করতে হবে না হলে সবার চোখে পরে যাবে।
বন্দনা বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারে যে ওর ঘরে ঢোকার আগে একবার জানানো উচিৎ ছিল যে ও ঢুকছে। সেটা না করে ও নিজেকে এবং স্যামন্তককে বেশ অসুবিধায় ফেলে দিয়েছে। এবারে নিজেকে ওর থেকে একটু দুরে রাখাই ভাল, একদিক থেকে ভালই হল যে ও বাসে যাচ্ছে না। বন্দনা নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। বাস ছেড়ে দেবার পরে ও অনেকক্ষণ চোখ বন্দ করে চুপচাপ বসে থাকে।
স্যামন্তক আগেই বেনাচিতি পৌঁছে যায়। দিদি বেশ সুন্দর সেজেছে, একটা নীল রঙের বেনারসি শাড়ীতে ঢেকে বেশ টাবুর টুবুর হয়ে রাজরানির মতন একটা চেয়ারে বসে আছে।
একা ভাই কে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে “কিরে তুই একা বাকিরা কোথায়?”
—“আসছে পেছনে, আমি বাইকে এসেছি।”
—“বাইকে কেনও?”
আব্দারের সুরে বলে দিদিকে “তোকে একটু বেশি করে দেখব বলে”
সিতাভ্র ওকে দেখে জিজ্ঞেস করে “কি রে শালা, বাকি রা কোথায়?”
সিতাভ্র কে মজা করে বলে “বাকিদের দিয়ে কি হবে আজ, রাতটা তো তোমার গুরু।” তারপরে দিদির দিকে চোখ টিপে বলে “তোর খবর তো কাল সকালে নেবো রে। তুই যেমন আমারটা নিয়েছিলি।”
পুবালির মুখটা এমনিতেই সাজানোর ফলে লাল ছিল, টার ওপরে আবার ভাইয়ের মুখে ঐ রকম কথা শুনে একদম রক্ত জবার মতন লাল হয়ে গেলো। একটু বকুনির শুরে বলে “তুই এখান থেকে যা নাহলে মারবো এবারে।”
বাস পৌঁছে যায় কিছুখন পরে। বন্দনাকে নামতে দেখেই মজা করে বলে ওঠে “আজ প্রথম থেকেই বলছি যে দারুন লাগছে।”
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা বন্দনা, ওতো ভেবেছিলো যে … স্যামন্তক বলে ওঠে “কি ভেবেছিলে আমি আর কথাই বলবনা তোমার সাথে, তাই তো।” বন্দনার ছোটো ছোটো চোখ দুটি বিস্ময়ে মাখা, কি বোলবে ভেবে পায়না হাঁ করে চেয়ে থাকে ছেলেটার দিকে, কি অধভুত ছেলে। ঠোঁট দুটি ফাঁকা দেখে নিচু স্বরে বলে স্যামন্তক “হাঁ বন্দ করো নাহলে মাছি ঢুকে যাবে, কিছু ভেবনা, আমি ঠিক আছি, পরে কথা বলবো।”
লজ্জা পেয়ে যায় বন্দনা, লাজুক হেসে নিজের মনের আলোড়নটা মুছে ফেলে বলে “তোমাকে বোঝা বড় শক্ত।”
নাকের ওপরে আলতো করে ডান হাতের তর্জনী ছুঁইয়ে স্যামন্তক বলে “দিদির কাছে যাও, সব ঠিক আছে।”
মাথা নিচু করে হরিণীর মতন পালিয়ে যায় বন্দনা, যেতে যেতে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে স্যামন্তকের দিকে, এই ছেলেটা পাগল করে ছাড়বে সত্যি। চেহারাটাই পাল্টে যায় বন্দনার, সারা মুখে এক অদ্ভুত আলোর ছটা লাগে। গালের লালিমা যেন শত গুন বেড়ে যায়, ও যে নাক টা ছুঁয়েছে পরশটা যেন খুব মধুর লাগে।
পুবালিকে দেখেই বলে ওঠে “কি রে দারুন লাগছে তোকে, আর তোর দোসর টা কোথায় একটু দেখি তাকে।”
সিতাভ্র পাশেই ছিল, মজা করে বলে ওঠে “এমন একটা শালি হাত ছাড়া হয়ে যাবে।”
“তুমি তো দেখলেই না আর কি করা যাবে বলও।” বন্দনা ওকে একটু খুঁচিয়ে বলে।
সিতাভ্র বলে—“তোমার মনটা তো কারুর জন্য পরে আছে না হলে সাথে নিয়ে যেতাম মানালি।”
—“আগে দেখি পুবালি কি রেস্পন্স দেয় তারপরে তোমাকে সুযোগ দেওয়া যাবে কিনা ভেবে দেখব।”
—“বাপরে আগে যাচাই করবে তারপরে খেয়ে দেখবে।”
পুবালি ওদের কথা শুনে কি বোলবে ভেবে পায়না।
স্যামন্তকের সবার সাথে কথা বার্তা আলাপ পরিচয় করে, এক সময় মনে হয় যে দেরি হয়ে যাচ্ছে। এবারে খেয়ে নেওয়া উচিৎ। কন্যে যাত্রীর বাকিদের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে, ওর বাবা একবার জিজ্ঞেস করে গেলো ওকে যে কখন খাবে ও। ও বলল পরে খাবে। বন্দনা ও পুবালির পাশেই বসে ছিল সারাটা সময় ওর ও খাওয়া হয়নি, ওদিকে সুবিমল ও তাকে ছিল যে বন্দনার সাথে খেতে বসবে। ঘুরতে ঘুরতে সুবিমল একবার পুবালির বসার জায়গাই এসে বন্দনাকে জিজ্ঞেস করে যে ও খাবে কি না। পুবালি ভুরু নাচিয়ে ইশারা করে “যা, কি করছিস।”
অগত্যা যেতে হয়, যেতে যেতে ওর চোখ পরে স্যামন্তকের দিকে, গাড় বাদামি স্যুটে দারুন লাগছে ছেলেটাকে। একে বেশ লম্বা চওড়া, পেটানো শরীর তাতে ও যে ড্রেসই পরে তাতেই মানিয়ে যায়।
ওকে ইশারায় করে জিজ্ঞেস করে “কি গো কখন খাবে?”
স্যামন্তক হাত নাড়িয়ে বলে “চলো”
খাওয়ার সময়ে কথা বার্তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায় দুইজনার মাঝে, কঠিন নীরবতা আর থাকেনা। রাতেও বাড়ি ফিরে যদিও বিশেষ কথা হয়না তবুও আজ আর সেই তিক্ততা ভাবটা নেই।
দুপুরের আগেই বাড়ি খালি হয়ে যায়, যে যার নিজের বাসস্থানে ফিরে যায়। স্যামন্তক থেকে যায়, কেননা পুবালি সিতাভ্রকে নিয়ে অষ্টমঙ্গলার পরের দিন ওকে ফিরতে হবে কলকাতায়। দুপুরের খাওয়ার সময়, বন্দনার মনটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো আবার ফিরে যেতে হবে নিজের ব্যস্ত জীবনে, ফিরে যেতে হবে ডিব্রুগড়ে। এই দুই দিনে অনেক কিছু পেয়েছে ও, অনেক নতুন আলেয়ার হাতছানি মাঝে মাঝে মনের কোন কোণে জেগেও উঠেছিল কিছু প্রশ্ন, সব প্রশ্নকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে।
বন্দনা স্যামন্তককে জিজ্ঞেস করে “আমাকে স্টেশানে ছেড়ে আসবে? ট্রেনের সময় তো হয়ে এলো।”
—“ঠিক আছে”
গাড়িতে যাওয়ার সময়েও বিশেষ কথা হয় না দু জনের মাঝে। কি বলবে কেউ কিছু ভেবে পায়না। দুজনেই আনমনা হয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অপেক্ষা করে।
স্যামন্তক একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ছোটো করে দুটি টান দিয়ে ফেলে দেয়, সিগারেটটা ও যেন তেতো লাগছে।
এমন সময় বন্দনা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আলতো করে হাসে। ঐ হাসি দেখে স্যামন্তকের মনের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে মনে হয় যেন কি হারিয়ে যাচ্ছে ওর সামনে থেকে। নিচু স্বরে ওকে জিজ্ঞেস করে “ফোন করবে আমাকে?”
ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকে পরে, চারদিকের লোক জনের চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে যাই। বন্দনা একটু উঁচু স্বরে জিজ্ঞেস করে “কি বলছও? একটু জোরে বলও আমি শুনতে পাচ্ছিনা।”
কানের কাছে মুখ এনে স্যামন্তক জিজ্ঞেস করে “আমাকে ফোন করবে?”
বুক কেঁপে ওঠে বন্দনার, চোখে কোণটা একটু ভিজে ওঠে। ঠোঁট দুটি কেঁপে ওঠে। ও বলে “আমাকে ভুলে যেও, আমি চললাম, ভাল থেকো। আর পুবালিকে জানিয়ে দিও যে আমি একদিন নিরুপমকেই বিয়ে করবো।”
পেছন ফিরে আর তাকায় না বন্দনা, সুটকেসটা হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠে পরে। ট্রেন ছেড়ে দেয়, স্যামন্তক দাঁড়িয়ে থাকে নিথর হয়ে, সারা পৃথিবীটা খেলো মনে হয়। সব কিছু যেন ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেলো মেয়েটা।
চলবে.....