02-03-2020, 09:11 PM
(Upload No. 87)
পরের দিন শঙ্কর বিকেল চারটে নাগাদ আবার সরজুর দোকানে এল। গত দু’দিনে অভি অনুপমার ছ’খানা সেশনের রেকর্ডিং করেছে। এখন অনুপমার ঘর থেকে ক্যামেরাগুলো খুলে আনতে হবে। অভিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেকর্ডেড সেশনগুলো এডিটিং শুরু করতে। প্রত্যেকটা সেশনের আলাদা আলাদা সিডি বানাতে হবে। অভি আজ রাত থেকেই এডিটিং শুরু করবে। কিন্তু একটা বাইরের সেশন রেকর্ড করতেই হবে। এটা প্ল্যানের একটা বিশেষ অঙ্গ। তবে অভির জন্য অনুপমার একটা বুকিং করে দিতে পারলে তাকে আর কিছু করতে হবে না। অভি নিজেই নিজের পছন্দমত হোটেলে একটা উপযুক্ত রুম বুক করে নিজেই সেখানে ক্যামেরাগুলো ইনস্টল করে নিতে পারবে। কিন্তু আগে অনুপমার বুকিংটা করা যায় কি না সেটাই দেখতে হবে।
সরজুর দোকানে দু’জন গ্রাহক ছিল। শঙ্করকে দেখেই সরজু নমস্কার করে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া যে। আসুন আসুন। ও’দিক দিয়ে ভেতরে চলে আসুন”।
শঙ্কর দোকানের পাশের ছোট গলিটা দিয়ে ঢুকে সরজুর দোকানের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছেন সরজু ভাইয়া”?
সরজু একটা চেয়ারের ওপর থেকে কাপড় চোপর সরিয়ে বলল, “আপনাদের কৃপায় ভালই আছি শঙ্কর ভাইয়া। এখানে বসুন। আমি একটু কাস্টমার বিদায় দিয়ে আপনার সাথে কথা বলব। ব্যস, দু’মিনিট”।
দু’তিন মিনিট বাদেই সরজু এসে শঙ্করের পাশে একটা কাঠের টুলে বসে নিজের পকেট থেকে বিড়ির প্যাকেট বের করে শঙ্করকে একটা বিড়ি দিয়ে নিজেও একটা ধরিয়ে নিয়ে একটা টান দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, বলুন। এই বিকেল বেলা হঠাৎ কী মনে করে”?
শঙ্করও বিড়িতে একটা টান দিয়ে মুচকি হেসে জবাব দিল, “আবার একটা টিকিট চাই, অনুপমা হলের”।
সরজু হেসে বলল, “আমি জানতাম শঙ্কর ভাইয়া। আসলে এটাই তো অনুপমা ভাবীর বাহাদুরি। একবার যে ওই হলে সিনেমা দেখেছে, সে বারবার যেতে চায়। আপনারও ভাল লেগেছে তাহলে”?
শঙ্কর বলল, “কী বলছেন সরজু ভাইয়া! পছন্দ হবে না মানে? অনুপমা ভাবী যা জিনিস! বাপরে! আমি তো এমন জবরদস্ত মেয়ে আর দেখিনি। তাই তো আজ আবার টিকিট নিতে এসেছি”।
সরজু হেসে বলল, “আমার কাছে টিকিট নিয়ে সবাই খুব খুশী হয়। আর আপনাকে তো আগের দিনই বলেছি যে আমার কাছে আজেবাজে সিনেমার টিকিট পাবেন না। অনুপমা হল আর বিন্দিয়া হল দুটো দেখেই সব পাবলিক খুশী হয়। একবার বিন্দিয়া হলেও গিয়ে দেখুন না। তবে আমার কথা বিশ্বাস হবে আপনার। বিন্দিয়া হলে আবার কাল থেকে ইস্পেশাল বোনাসও দিচ্ছে”।
শঙ্কর বলল, “সিনেমার সাথে আবার বোনাস! সেটা কী রকম”?
সরজু অনেকটা ঝুঁকে মুখটা শঙ্করের আরো কাছে এনে প্রায় ফিসফিস করে বলল, “বিন্দিয়া ভাবীর একটা মেয়ে আছে। তাকেও লাইনে নামাবার সময় হয়ে আসছে। দু’মাস বাদেই গুড্ডি হলের টিকিটও পাবেন এখানে। একেবারে ফ্রেশ। তাই এ দু’মাস বিন্দিয়া হলের ফিল্ম দেখার সাথে সাথে, গুড্ডির কিছু কিছু ঝলক দেখাতে শুরু করেছে বিন্দিয়া ভাবী। মানে ফিল্মের ট্রেলার আর কি। একবার গিয়ে দেখে আসুন না। এক টিকিটেই বিন্দিয়ার পুরো ফিল্ম দেখতে দেখতে গুড্ডির ঝলকটাও দেখে আসুন। আর গুড্ডি হলের প্রথম সিনেমা দেখার জন্য বোলিও লাগিয়ে আসতে পারবেন”।
শঙ্কর মনে মনে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “সরজু ভাইয়া, আজ তো আমি অনুপমা হলের টিকিটই নেব। কিন্তু বিন্দিয়া হলের বোনাসটা ঠিক কেমন হবে, সেটা কি আপনার জানা আছে”?
সরজু জবাব দিল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, আপনি তো এ লাইনে নতুন নতুন এসেছেন, তাই ব্যাপারটা বুঝতে পাচ্ছেন না। আচ্ছা শুনুন। বিন্দিয়া ভাবী কতটা সেক্সী আর সুন্দরী, তা তো আপনাকে আগেই বলেছি। বিন্দিয়া ভাবীর মেয়ে গুড্ডিও এখন ধান্দা করবার জন্যে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠেছে। এদের নিয়মে কুমারী মেয়েরা যখন প্রথম কাস্টমার নেয় তখন নিলামের মত বোলি হয়ে থাকে। যে সবচেয়ে বেশী বোলি লাগাবে সেই পুরুষটাই সবার আগে ওই কুমারী মেয়েটাকে পাবে। আসলে কথাটা হল এ ব্যবসায় তো মেয়ে মানুষের অভাব নেই। পয়সা দিলেই পাবেন। কিন্তু কুমারী সীলওয়ালী মেয়ে তো আর যখন তখন পাওয়া যায় না। তাই কোন কুমারী মেয়ে লাইনে নামছে শুনলেই কাস্টমারেরা যার যার ক্ষমতা মত বোলি লাগাতে শুরু করে”।
শঙ্কর সরজুর কথা শুনে বলল, “ও, এই ব্যাপার? তাহলে বিন্দিয়া ভাবীও তার মেয়ের বোলি লাগাতে শুরু করেছে। তা, কবে থেকে গুড্ডির জন্য বোলি দেওয়া শুরু হয়েছে? আর কবে শেষ হবে”?
সরজু বলল, “কাল থেকে বোলি শুরু হয়েছে শঙ্কর ভাইয়া। দু’মাস চলতে থাকবে। কাল ষাঠ হজার বোলি উঠেছে। তবে সবে তো শুরু হল। রইস লোকেরা তো তিন চার লাখ পর্যন্ত বোলি দেয়। আর গুড্ডি যত খুবসুরত, ওর জন্যে তো চার লাখ টাকাও বোলি উঠতে পারে”।
শঙ্কর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বলছেন সরজু ভাইয়া? চার লাখ! এক রাতের জন্য এত টাকা দিতে কেউ রাজী হয়”?
সরজু বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, এমনই হয়। তবে সেটাও পুরো রাতের জন্য নয়। মাত্র একঘন্টার জন্যই শুধু। পছন্দসই জিনিস হলে বহুত রইস লোক এর থেকেও বেশী দিয়ে কুমারী মেয়েদের সীল ভাঙতে রাজী হয়”।
শঙ্কর আরো অবাক হয়ে বলল, “সত্যি বলছেন আপনি সরজু ভাইয়া? মাত্র এক ঘন্টার জন্যে এত টাকা খরচ করতে চায় লোকে”?
সরজু হেসে বলল, “এসব যার তার কাম নয় শঙ্কর ভাইয়া। বড় বড় পয়সাওয়ালা পুরুষেরাই এমন দাম দেয়”।
শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তাহলে আমাকে বোলি লাগাতে বলছেন কেন সরজু ভাইয়া? আমার কি আর অত পয়সা আছে নাকি”?
সরজু হেসে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, বোলি যে আপনি লাগাতে পারবেন না, তা তো আমিও জানি। কিন্তু একবার বিন্দিয়া হলে সিনেমা দেখতে গিয়ে গুড্ডির বোনাস ট্রেলারটা তো দেখতে পাবেন। বিন্দিয়া ভাবীর সাথে মস্তি করতে করতে তার মেয়ের নঙ্গা শরীরটা তো দেখতে পাবেন। একটু হাত টাতও লাগাতে পারবেন হয়তো। এতে আলাদা করে পয়সা দিতে হবে না আপনাকে। তাই তো বলছি, বোনাস। আসলে জিনিসটাকে ভাল করে না দেখতে পেলে কেউ কি আর বেশী বোলি লাগাবে নাকি? তাই এখন বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট যারা নেয় তারা সবাই গুড্ডির শরীরের সবকিছু খুব ভাল মত দেখতে পাবে। কারুর ইচ্ছে হলে বোলি লাগাবে। নাহলে লাগাবে না”।
শঙ্কর বলল, “আচ্ছা সরজু ভাইয়া, আপনি আমাকে অনুপমা ভাবীর একটা টিকিটই দিন আজ। কাল বিকেলের। আপনি বুকিংটা করুন। তারপর আপনার সাথে আরো একটা আলাপ আছে” বলে নিজের পকেট থেকে দেড়শ’ টাকা বের করে সরজুর হাতে দিল।
সরজু টাকাটা পকেটে পুরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনি একটু বসুন শঙ্কর ভাইয়া। আমি দু’কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে আসি। তারপর কথা বলব” বলে বাইরে বেরিয়ে গেল।
মিনিট পাঁচেক বাদে নিজেই দু’কাপ চা নিয়ে ফিরে এসে শঙ্করকে এক কাপ দিয়ে বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, বলুন। আর কি কথা আছে”?
শঙ্কর চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “তার আগে আমি আরেকটা কথা জানতে চাই সরজু ভাইয়া আপনি যে গুড্ডির কথা বললেন যে দু’মাস পর সে প্রথম কাস্টমার নেবে। এই দু’মাসে যে সবচেয়ে বেশী বোলি লাগাবে, সে-ই তো গুড্ডিকে প্রথম পাবে, সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু আপনার এখানে এসেও কি লোকেরা বোলি লাগাচ্ছে নাকি”?
সরজু জবাব দিল, “আরে না শঙ্কর ভাইয়া। এই দু’মাসে যারা বিন্দিয়াভাবীর টিকিট নেবে, তারাই কেবল বোলি লাগাতে পারবে। আর জিনিস না দেখে কি কেউ বোলি লাগাবে নাকি? তাই বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট নিলে এখন সবাই গুড্ডিকে দেখতে পারবে। দেখে পছন্দ হলেই তো বোলি লাগাবে। আর সে জন্যেই তো আপনাকে বললাম, বোলি না লাগালেও বোনাসটা তো পাবেন। আর আমার এখানে গুড্ডির টিকিট বিক্রী হবে ওর সীল ভেঙে যাবার পর। ওর সীল ভাঙবার দিন তো সে পাঁচ লাখও পেতে পারে। কিন্তু পরের দিন থেকে তো আর কেউ পাঁচ লাখ দিতে রাজী হবে না। তখন তার রেট ফিক্স করা হবে। আর তারপরেই আমি এখানে গুড্ডির টিকিট বিক্রি করব”।
শঙ্কর আবার কিছু জিজ্ঞেস করতে যেতেই পেছনের দরজার সামনে ভালো পোশাক পড়া একজন বয়স্ক লোক এসে দাঁড়াতেই সরজু তার হাতঘড়ির দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “আরে, হয়ে গেছে আপনাদের? পাঁচ মিনিট আগেই হয়ে গেছে তাহলে”?
বয়স্ক লোকটা একটা চাবি সরজুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাত ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “হাঁ ভইয়া, আজ কে লিয়ে কাম খতম হো গয়া হ্যায়। ইয়ে লো” বলে তিনখানা একশ টাকার নোট সরজুর হাতে দিল। একটা খসখসে আওয়াজ শুনে শঙ্করের মনে হল, বয়স্ক লোকটার সাথে বুঝি আরও কেউ আছে। কিন্তু শঙ্কর তাকে দেখতে পাচ্ছিল না।
সরজু টাকাটা পকেটে পুরে বলল, “ঠিক হ্যায় বাবুজী। আপ সামনে কাউন্টার পর আ যাইয়ে। ম্যায় আপকে কপড়ে দেতা হু” বলে নিজেও কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
বয়স্ক লোকটা পেছনের দরজা থেকে সরে গেল। কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড বাদেই তাকে দোকানের সামনের কাউন্টারের ওদিকে দেখা গেল। তখন তার পাশে শালোয়ার কামিজ পড়া একটা মেয়েকেও সে দেখতে পেল। মেয়েটাকে বয়স্ক লোকটার মেয়ে বলেই মনে হল তার। বয়স খুব বেশী হলে আঠার ঊণিশ হবে হয়ত। সরজু কাউন্টারের ওপর কয়েকটা ইস্ত্রি করা জামা কাপড় রেখে লোকটার কাছ থেকে একটা কাগজ নিয়ে নাম্বার মিলিয়ে দেখে নিয়ে বলল, “দেখ লিজিয়ে বাবুজী। ইয়েহি থা না”?
লোকটা কাপড়গুলো দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বলল, “হাঁ, ইয়েহি হ্যায়। ঠিক হ্যায়। প্যাক কর দো”।
সরজু একটা খবরের কাগজ দিয়ে কাপড়গুলোকে মুড়ে একটা প্যাকেটে ভরে এগিয়ে দিতেই লোকটা তার পকেট থেকে একখানা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে সরজুকে দিয়ে বলল, “হম পরসো ফির আয়েঙ্গে” বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে, তাই তো? পরশুদিন বেলা তিনটের দিকে আসতে পারবি তো ওকে নিয়ে”?
মেয়েটা বলল, “হ্যা হ্যা আসব। ভাববেন না। আর শমিতাও আসবে” বলে শঙ্করের সাথে চোখাচোখি হতেই সে ফিক করে হাসল।
লোকটা “চলতা হু সরজু ভৈয়া” বলে পোশাকের প্যাকেটটা হাতে করে মেয়েটাকে সাথে নিয়ে একদিকে চলে গেল।
সরজু এসে আবার শঙ্করের কাছে বসতে শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “এরা আপনার কোন আত্মীয় বুঝি সরজু ভাইয়া”?
সরজু বিড়ির প্যাকেট পকেট থেকে বের করতে করতে জবাব দিল, “আরে না না শঙ্কর ভাইয়া। এরা আমার আত্মীয় টাত্মীয় কেউ নয়। আমার দোকানের কাস্টমার”।
শঙ্কর একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু ওরা তো মনে হল, পেছনের বাড়িটা থেকেই বেরোল। পেছনের বাড়িটা কার? আপনার নয়”?
সরজু একটু হেসে বলল, “আপনি কিছুই বোঝেন নি? পেছনের বাড়িটা তো আমারই। আর ওরাও আমার বাড়ি থেকেই কাজ শেষ করে বেরিয়ে এল। কিন্তু ওরা কেউই আমার রিস্তেদার নয়”।
শঙ্করের কাছে ব্যাপারটা পরিস্কার হল না। তাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে সরজু দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে দু’জনের বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে বলল, “ওই লোকটা একঘন্টার জন্যে আমার ঘরের একটা রুম ভাড়া নিয়েছিল। মেয়েটাকে নিয়ে মস্তি করল। এখন কাজ শেষ করে চলে গেল”।
শঙ্করের চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল। কোনরকমে ঢোক গিলে সে বলল, “তারমানে, এটাও আপনার আরেকটা ব্যবসা”?
সরজু বলল, “এই করেই তো খাচ্ছি শঙ্কর ভাইয়া। নইলে এ লন্ড্রীর ইনকাম আর কতটুকু? এতে তো জলের বিল আর বিজলীর বিলের পয়সাও মেটাতে পারিনা। সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি আর এমন ঘর ভাড়া দিয়েই তো সংসার চালাবার খরচ জোটাতে পারি আমি”। একটু থেমে আবার বলল, “আর শুধু আমি নই শঙ্কর ভাইয়া, এই এলাকার সবাই এই ধন্দা করে। এই রাস্তার এদিকে ওদিকে দো মাইল পর্যন্ত যত দুকান আছে, সব দুকানের মালিক বলেন কর্মচারী বলেন প্রায় সকলেই এ’রকম ঘর ভাড়া, ছোকড়ি সাপ্লাই দিয়ে থাকে”।
শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তা এরা কারা? এদের চেনেন আপনি”?
সরজু বলল, “নাম ধাম জানিনা। তবে ওই বুড়োটার ওই দিকের মার্কেটে একটা কাপড়ের দোকান আছে। আর মেয়েটার নাম স্মিতা। ও’দিকের একটা বস্তির মেয়ে। একটা কলেজে পড়ে। মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে আলাদা আলাদা কাস্টমার নিয়ে। ওর আরো কয়েকজন বান্ধবীও মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে ওদের কাস্টমার নিয়ে। আমি ঘন্টায় তিনশ টাকা হিসেবে ওদের রুম দিই”।
শঙ্কর বলল, “মেয়েটাকে দেখে তো ভাল ঘরের মেয়ে বলেই মনে হল। এরাও এসব ধান্দা করে”?
সরজু বলল, “শঙ্কর ভাইয়া, আপনি বাইরের চমক দমক দেখে ভুল করবেন না। ওই যে বাংলা ভাষার একটা কথা আছে না? চকচক করলেই সোনা হয় না। এরাও অনেকে প্রায় তেমনই। কাস্টমার ধরবার জন্য এরা ভাল ভাল পোশাক পড়ে, সুন্দর করে মেকআপ করে। কিন্তু এরা সবাই যে ধনী ঘরের বা ভদ্র ঘরের মেয়ে তা কিন্তু সব সময় ঠিক নয়। হাঁ, বড়লোক ঘরের কিছু কিছু মেয়েও শুধু মৌজ মস্তি করবার জন্যেই এসব করে। কেউ কেউ তো নিজেদের গাড়ি হাঁকিয়েও আসে। কিন্তু বেশীর ভাগ মেয়েই খুব গরীব ঘরের মেয়ে। পেটের দায়ে পড়েই এসব কাজ করে। আর আজ একটু আগে যে মেয়েটাকে দেখলেন, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি। ওর সংসারে ওর একটা পঙ্গু ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। ওই দিকে একটা বস্তিতে থাকে। দু’বছর আগে ওর বাবা মা একমাস আগে পরে মারা যায়। তখন মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ত। তারপর থেকে নিজের ভাইটাকে বাঁচিয়ে রাখতে আর নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে এসব কাজ করতে শুরু করেছে। আজ হয়ত দুটো পয়সা কামালো। আর শুনতেই তো পেলেন, ওই বুড়োটা পরসো দিন ওই মেয়েটার সাথে তার আরও এক বান্ধবীকে নিয়ে আসবে। হয়ত আমার এখানেই আসবে। আমার এখানে রুম না পেলে পেলে কোথাও যাবে। এই করেই ওদের জীবন চলে। তবে ওদের কাস্টমার ওরাই খোঁজে। ও’সবের ভেতর আমি থাকি না। আমি শুধু আমার ঘর ভাড়া দিয়েই খালাস। ছোকড়ি সাপ্লাই আমি ছেড়ে দিয়েছি”।
সরজুর কথা শুনতে শুনতে শঙ্করের বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। বেঁচে থাকার লড়াই। একেক জন একেক ভাবে প্রতিনিয়ত সে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শঙ্করকে চুপ করে থাকতে দেখে সরজু বলল, “কি হল শঙ্কর ভাইয়া? খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন নাকি? আরে ছাড়ুন তো ও’সব ভাবনা। আপনি এমন কাউকে চাইলে আমি যোগার করে দিতে পারি। আমার কমিশন লাগবে না। শুধু ওদের পয়সা দিলেই চলবে। আর যদি আমার ঘরেই করতে চান তাহলে এক ঘন্টার জন্য তিনশ’ টাকা দিতে হবে” বলেই নিজের ঘড়ির দিকে দেখে বলল, “আর পন্দ্রহ মিনিট বাদে আরেকজন বেরিয়ে আসবে আমার ঘর থেকে। চাইলে কথা বলে দেখতে পারেন”।
শঙ্কর বলল, “না সরজু ভাইয়া, থাক। তবে আমার আরেকটা কথা বলার ছিল আপনাকে”।
সরজু বলল, “হাঁ হাঁ, আপনি যেন আরও কিছু একটা বলবেন বলছিলেন না? বলুন দেখি কি ব্যাপার”।
শঙ্কর নিজেকে প্রস্তুত করে বলল, “হ্যা সরজু ভাইয়া। বলছিলাম কি, আমার এক বন্ধু আমার মুখে অনুপমা ভাবীর কথা শুনে, তার একটা বুকিং নিতে চায়। পাওয়া যাবে কি”?
সরজু বলল, “বুকিং তো পাওয়া যাবে শঙ্কর ভাইয়া। কিন্তু আপনার বন্ধুর বুকিং তো আপনি করতে পারবেন না। আপনার ওই বন্ধুকেই আসতে হবে আমার কাছে। এটাই আমাদের ধন্দার নিয়ম। আসলে এ’সব ধন্দা তো গৈর কানুনি। তাই কার বুকিং কে করে যাবে। আর কে সিনেমা দেখতে যাবে, এসব তো ভাল করে যাচাই করে নিতে হয়। নাহলে তো থানা পুলিশের ঝামেলা হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়”।
শঙ্কর একটু আমতা আমতা করে বলল, “ও তাই বুঝি? আসলে ও তো আরেক জায়গায় একটা হোটেলে উঠেছে। তাই এদিকে এসে আপনার সাথে দেখা করা ওর সম্ভব নয়। ও আবার বারো তারিখেই চলে যাবে। তাই পরশু দিন দিনের বেলায় অনুপমা ভাবীকে তার হোটেলে নিয়ে যেতে চাইছিল। দুপুর একটার পর থেকে চারটের ভেতর যে কোন এক ঘন্টার জন্য। আর আমাকে বলেছিল আপনার কাছ থেকে পরশুদিন দুপুরের পর যে কোন সময়ের জন্য একটা টিকিট বুক করতে। কিন্ত আপনাদের এ নিয়মটা তো আমার জানা ছিল না। তবে আপনি যখন বলছেন হবে না, তাহলে বরং থাক। আমি ওকে সেভাবেই বলে দেব। ও যদি পারে, তাহলে কাল এসে না হয় আপনার কাছ থেকে টিকিট নিয়ে যাবে। ঠিক আছে, সরজু ভাইয়া। ও কথা তাহলে থাক। আপনি আমার বুকিংটার কথা বলুন। কনফার্মেশনটা কখন পাব আমি”?
সরজু জবাব দিল, “আপনার জন্যে তো ভাবনা নেই। কনফার্মেশন কাল সকালেই পেয়ে যাবেন। তবে আপনি না এলেও চলবে। আমি ফোন করে আপনাকে কনফার্ম করে দেব। আর কোড নাম্বারটাও বলে দেব। সেটা নিয়ে ভাববেন না”।
শঙ্কর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে সরজু ভাইয়া। আজ তাহলে উঠি আমি”।
সরজু তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, যাবেনই তো। তবু একটু বসুন না। আমি আরও এক এক কাপ চা নিয়ে আসছি। চা খেতে খেতে না হয়ে আরেকটু গল্প করে যাবেন। আসলে সকলের সাথে তো আর এভাবে কথা বলিনা আমি। তবে আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগে বলেই বলছি। আপনি এক মিনিট বসুন। আমি এখনই আসছি” বলে আবার বাইরে চলে গেল।
______________________________
পরের দিন শঙ্কর বিকেল চারটে নাগাদ আবার সরজুর দোকানে এল। গত দু’দিনে অভি অনুপমার ছ’খানা সেশনের রেকর্ডিং করেছে। এখন অনুপমার ঘর থেকে ক্যামেরাগুলো খুলে আনতে হবে। অভিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেকর্ডেড সেশনগুলো এডিটিং শুরু করতে। প্রত্যেকটা সেশনের আলাদা আলাদা সিডি বানাতে হবে। অভি আজ রাত থেকেই এডিটিং শুরু করবে। কিন্তু একটা বাইরের সেশন রেকর্ড করতেই হবে। এটা প্ল্যানের একটা বিশেষ অঙ্গ। তবে অভির জন্য অনুপমার একটা বুকিং করে দিতে পারলে তাকে আর কিছু করতে হবে না। অভি নিজেই নিজের পছন্দমত হোটেলে একটা উপযুক্ত রুম বুক করে নিজেই সেখানে ক্যামেরাগুলো ইনস্টল করে নিতে পারবে। কিন্তু আগে অনুপমার বুকিংটা করা যায় কি না সেটাই দেখতে হবে।
সরজুর দোকানে দু’জন গ্রাহক ছিল। শঙ্করকে দেখেই সরজু নমস্কার করে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া যে। আসুন আসুন। ও’দিক দিয়ে ভেতরে চলে আসুন”।
শঙ্কর দোকানের পাশের ছোট গলিটা দিয়ে ঢুকে সরজুর দোকানের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছেন সরজু ভাইয়া”?
সরজু একটা চেয়ারের ওপর থেকে কাপড় চোপর সরিয়ে বলল, “আপনাদের কৃপায় ভালই আছি শঙ্কর ভাইয়া। এখানে বসুন। আমি একটু কাস্টমার বিদায় দিয়ে আপনার সাথে কথা বলব। ব্যস, দু’মিনিট”।
দু’তিন মিনিট বাদেই সরজু এসে শঙ্করের পাশে একটা কাঠের টুলে বসে নিজের পকেট থেকে বিড়ির প্যাকেট বের করে শঙ্করকে একটা বিড়ি দিয়ে নিজেও একটা ধরিয়ে নিয়ে একটা টান দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, বলুন। এই বিকেল বেলা হঠাৎ কী মনে করে”?
শঙ্করও বিড়িতে একটা টান দিয়ে মুচকি হেসে জবাব দিল, “আবার একটা টিকিট চাই, অনুপমা হলের”।
সরজু হেসে বলল, “আমি জানতাম শঙ্কর ভাইয়া। আসলে এটাই তো অনুপমা ভাবীর বাহাদুরি। একবার যে ওই হলে সিনেমা দেখেছে, সে বারবার যেতে চায়। আপনারও ভাল লেগেছে তাহলে”?
শঙ্কর বলল, “কী বলছেন সরজু ভাইয়া! পছন্দ হবে না মানে? অনুপমা ভাবী যা জিনিস! বাপরে! আমি তো এমন জবরদস্ত মেয়ে আর দেখিনি। তাই তো আজ আবার টিকিট নিতে এসেছি”।
সরজু হেসে বলল, “আমার কাছে টিকিট নিয়ে সবাই খুব খুশী হয়। আর আপনাকে তো আগের দিনই বলেছি যে আমার কাছে আজেবাজে সিনেমার টিকিট পাবেন না। অনুপমা হল আর বিন্দিয়া হল দুটো দেখেই সব পাবলিক খুশী হয়। একবার বিন্দিয়া হলেও গিয়ে দেখুন না। তবে আমার কথা বিশ্বাস হবে আপনার। বিন্দিয়া হলে আবার কাল থেকে ইস্পেশাল বোনাসও দিচ্ছে”।
শঙ্কর বলল, “সিনেমার সাথে আবার বোনাস! সেটা কী রকম”?
সরজু অনেকটা ঝুঁকে মুখটা শঙ্করের আরো কাছে এনে প্রায় ফিসফিস করে বলল, “বিন্দিয়া ভাবীর একটা মেয়ে আছে। তাকেও লাইনে নামাবার সময় হয়ে আসছে। দু’মাস বাদেই গুড্ডি হলের টিকিটও পাবেন এখানে। একেবারে ফ্রেশ। তাই এ দু’মাস বিন্দিয়া হলের ফিল্ম দেখার সাথে সাথে, গুড্ডির কিছু কিছু ঝলক দেখাতে শুরু করেছে বিন্দিয়া ভাবী। মানে ফিল্মের ট্রেলার আর কি। একবার গিয়ে দেখে আসুন না। এক টিকিটেই বিন্দিয়ার পুরো ফিল্ম দেখতে দেখতে গুড্ডির ঝলকটাও দেখে আসুন। আর গুড্ডি হলের প্রথম সিনেমা দেখার জন্য বোলিও লাগিয়ে আসতে পারবেন”।
শঙ্কর মনে মনে একটু ভেবে নিয়ে বলল, “সরজু ভাইয়া, আজ তো আমি অনুপমা হলের টিকিটই নেব। কিন্তু বিন্দিয়া হলের বোনাসটা ঠিক কেমন হবে, সেটা কি আপনার জানা আছে”?
সরজু জবাব দিল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, আপনি তো এ লাইনে নতুন নতুন এসেছেন, তাই ব্যাপারটা বুঝতে পাচ্ছেন না। আচ্ছা শুনুন। বিন্দিয়া ভাবী কতটা সেক্সী আর সুন্দরী, তা তো আপনাকে আগেই বলেছি। বিন্দিয়া ভাবীর মেয়ে গুড্ডিও এখন ধান্দা করবার জন্যে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠেছে। এদের নিয়মে কুমারী মেয়েরা যখন প্রথম কাস্টমার নেয় তখন নিলামের মত বোলি হয়ে থাকে। যে সবচেয়ে বেশী বোলি লাগাবে সেই পুরুষটাই সবার আগে ওই কুমারী মেয়েটাকে পাবে। আসলে কথাটা হল এ ব্যবসায় তো মেয়ে মানুষের অভাব নেই। পয়সা দিলেই পাবেন। কিন্তু কুমারী সীলওয়ালী মেয়ে তো আর যখন তখন পাওয়া যায় না। তাই কোন কুমারী মেয়ে লাইনে নামছে শুনলেই কাস্টমারেরা যার যার ক্ষমতা মত বোলি লাগাতে শুরু করে”।
শঙ্কর সরজুর কথা শুনে বলল, “ও, এই ব্যাপার? তাহলে বিন্দিয়া ভাবীও তার মেয়ের বোলি লাগাতে শুরু করেছে। তা, কবে থেকে গুড্ডির জন্য বোলি দেওয়া শুরু হয়েছে? আর কবে শেষ হবে”?
সরজু বলল, “কাল থেকে বোলি শুরু হয়েছে শঙ্কর ভাইয়া। দু’মাস চলতে থাকবে। কাল ষাঠ হজার বোলি উঠেছে। তবে সবে তো শুরু হল। রইস লোকেরা তো তিন চার লাখ পর্যন্ত বোলি দেয়। আর গুড্ডি যত খুবসুরত, ওর জন্যে তো চার লাখ টাকাও বোলি উঠতে পারে”।
শঙ্কর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বলছেন সরজু ভাইয়া? চার লাখ! এক রাতের জন্য এত টাকা দিতে কেউ রাজী হয়”?
সরজু বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, এমনই হয়। তবে সেটাও পুরো রাতের জন্য নয়। মাত্র একঘন্টার জন্যই শুধু। পছন্দসই জিনিস হলে বহুত রইস লোক এর থেকেও বেশী দিয়ে কুমারী মেয়েদের সীল ভাঙতে রাজী হয়”।
শঙ্কর আরো অবাক হয়ে বলল, “সত্যি বলছেন আপনি সরজু ভাইয়া? মাত্র এক ঘন্টার জন্যে এত টাকা খরচ করতে চায় লোকে”?
সরজু হেসে বলল, “এসব যার তার কাম নয় শঙ্কর ভাইয়া। বড় বড় পয়সাওয়ালা পুরুষেরাই এমন দাম দেয়”।
শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তাহলে আমাকে বোলি লাগাতে বলছেন কেন সরজু ভাইয়া? আমার কি আর অত পয়সা আছে নাকি”?
সরজু হেসে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, বোলি যে আপনি লাগাতে পারবেন না, তা তো আমিও জানি। কিন্তু একবার বিন্দিয়া হলে সিনেমা দেখতে গিয়ে গুড্ডির বোনাস ট্রেলারটা তো দেখতে পাবেন। বিন্দিয়া ভাবীর সাথে মস্তি করতে করতে তার মেয়ের নঙ্গা শরীরটা তো দেখতে পাবেন। একটু হাত টাতও লাগাতে পারবেন হয়তো। এতে আলাদা করে পয়সা দিতে হবে না আপনাকে। তাই তো বলছি, বোনাস। আসলে জিনিসটাকে ভাল করে না দেখতে পেলে কেউ কি আর বেশী বোলি লাগাবে নাকি? তাই এখন বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট যারা নেয় তারা সবাই গুড্ডির শরীরের সবকিছু খুব ভাল মত দেখতে পাবে। কারুর ইচ্ছে হলে বোলি লাগাবে। নাহলে লাগাবে না”।
শঙ্কর বলল, “আচ্ছা সরজু ভাইয়া, আপনি আমাকে অনুপমা ভাবীর একটা টিকিটই দিন আজ। কাল বিকেলের। আপনি বুকিংটা করুন। তারপর আপনার সাথে আরো একটা আলাপ আছে” বলে নিজের পকেট থেকে দেড়শ’ টাকা বের করে সরজুর হাতে দিল।
সরজু টাকাটা পকেটে পুরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনি একটু বসুন শঙ্কর ভাইয়া। আমি দু’কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে আসি। তারপর কথা বলব” বলে বাইরে বেরিয়ে গেল।
মিনিট পাঁচেক বাদে নিজেই দু’কাপ চা নিয়ে ফিরে এসে শঙ্করকে এক কাপ দিয়ে বলল, “হাঁ শঙ্কর ভাইয়া, বলুন। আর কি কথা আছে”?
শঙ্কর চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল, “তার আগে আমি আরেকটা কথা জানতে চাই সরজু ভাইয়া আপনি যে গুড্ডির কথা বললেন যে দু’মাস পর সে প্রথম কাস্টমার নেবে। এই দু’মাসে যে সবচেয়ে বেশী বোলি লাগাবে, সে-ই তো গুড্ডিকে প্রথম পাবে, সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু আপনার এখানে এসেও কি লোকেরা বোলি লাগাচ্ছে নাকি”?
সরজু জবাব দিল, “আরে না শঙ্কর ভাইয়া। এই দু’মাসে যারা বিন্দিয়াভাবীর টিকিট নেবে, তারাই কেবল বোলি লাগাতে পারবে। আর জিনিস না দেখে কি কেউ বোলি লাগাবে নাকি? তাই বিন্দিয়া ভাবীর টিকিট নিলে এখন সবাই গুড্ডিকে দেখতে পারবে। দেখে পছন্দ হলেই তো বোলি লাগাবে। আর সে জন্যেই তো আপনাকে বললাম, বোলি না লাগালেও বোনাসটা তো পাবেন। আর আমার এখানে গুড্ডির টিকিট বিক্রী হবে ওর সীল ভেঙে যাবার পর। ওর সীল ভাঙবার দিন তো সে পাঁচ লাখও পেতে পারে। কিন্তু পরের দিন থেকে তো আর কেউ পাঁচ লাখ দিতে রাজী হবে না। তখন তার রেট ফিক্স করা হবে। আর তারপরেই আমি এখানে গুড্ডির টিকিট বিক্রি করব”।
শঙ্কর আবার কিছু জিজ্ঞেস করতে যেতেই পেছনের দরজার সামনে ভালো পোশাক পড়া একজন বয়স্ক লোক এসে দাঁড়াতেই সরজু তার হাতঘড়ির দিকে চেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “আরে, হয়ে গেছে আপনাদের? পাঁচ মিনিট আগেই হয়ে গেছে তাহলে”?
বয়স্ক লোকটা একটা চাবি সরজুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের পকেটে হাত ঢোকাতে ঢোকাতে বলল, “হাঁ ভইয়া, আজ কে লিয়ে কাম খতম হো গয়া হ্যায়। ইয়ে লো” বলে তিনখানা একশ টাকার নোট সরজুর হাতে দিল। একটা খসখসে আওয়াজ শুনে শঙ্করের মনে হল, বয়স্ক লোকটার সাথে বুঝি আরও কেউ আছে। কিন্তু শঙ্কর তাকে দেখতে পাচ্ছিল না।
সরজু টাকাটা পকেটে পুরে বলল, “ঠিক হ্যায় বাবুজী। আপ সামনে কাউন্টার পর আ যাইয়ে। ম্যায় আপকে কপড়ে দেতা হু” বলে নিজেও কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
বয়স্ক লোকটা পেছনের দরজা থেকে সরে গেল। কিন্তু কয়েক সেকেণ্ড বাদেই তাকে দোকানের সামনের কাউন্টারের ওদিকে দেখা গেল। তখন তার পাশে শালোয়ার কামিজ পড়া একটা মেয়েকেও সে দেখতে পেল। মেয়েটাকে বয়স্ক লোকটার মেয়ে বলেই মনে হল তার। বয়স খুব বেশী হলে আঠার ঊণিশ হবে হয়ত। সরজু কাউন্টারের ওপর কয়েকটা ইস্ত্রি করা জামা কাপড় রেখে লোকটার কাছ থেকে একটা কাগজ নিয়ে নাম্বার মিলিয়ে দেখে নিয়ে বলল, “দেখ লিজিয়ে বাবুজী। ইয়েহি থা না”?
লোকটা কাপড়গুলো দেখে সন্তুষ্ট হয়ে বলল, “হাঁ, ইয়েহি হ্যায়। ঠিক হ্যায়। প্যাক কর দো”।
সরজু একটা খবরের কাগজ দিয়ে কাপড়গুলোকে মুড়ে একটা প্যাকেটে ভরে এগিয়ে দিতেই লোকটা তার পকেট থেকে একখানা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে সরজুকে দিয়ে বলল, “হম পরসো ফির আয়েঙ্গে” বলে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে, তাই তো? পরশুদিন বেলা তিনটের দিকে আসতে পারবি তো ওকে নিয়ে”?
মেয়েটা বলল, “হ্যা হ্যা আসব। ভাববেন না। আর শমিতাও আসবে” বলে শঙ্করের সাথে চোখাচোখি হতেই সে ফিক করে হাসল।
লোকটা “চলতা হু সরজু ভৈয়া” বলে পোশাকের প্যাকেটটা হাতে করে মেয়েটাকে সাথে নিয়ে একদিকে চলে গেল।
সরজু এসে আবার শঙ্করের কাছে বসতে শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “এরা আপনার কোন আত্মীয় বুঝি সরজু ভাইয়া”?
সরজু বিড়ির প্যাকেট পকেট থেকে বের করতে করতে জবাব দিল, “আরে না না শঙ্কর ভাইয়া। এরা আমার আত্মীয় টাত্মীয় কেউ নয়। আমার দোকানের কাস্টমার”।
শঙ্কর একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু ওরা তো মনে হল, পেছনের বাড়িটা থেকেই বেরোল। পেছনের বাড়িটা কার? আপনার নয়”?
সরজু একটু হেসে বলল, “আপনি কিছুই বোঝেন নি? পেছনের বাড়িটা তো আমারই। আর ওরাও আমার বাড়ি থেকেই কাজ শেষ করে বেরিয়ে এল। কিন্তু ওরা কেউই আমার রিস্তেদার নয়”।
শঙ্করের কাছে ব্যাপারটা পরিস্কার হল না। তাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে সরজু দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে দু’জনের বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে বলল, “ওই লোকটা একঘন্টার জন্যে আমার ঘরের একটা রুম ভাড়া নিয়েছিল। মেয়েটাকে নিয়ে মস্তি করল। এখন কাজ শেষ করে চলে গেল”।
শঙ্করের চোখ দুটো বিস্ময়ে বড় বড় হয়ে গেল। কোনরকমে ঢোক গিলে সে বলল, “তারমানে, এটাও আপনার আরেকটা ব্যবসা”?
সরজু বলল, “এই করেই তো খাচ্ছি শঙ্কর ভাইয়া। নইলে এ লন্ড্রীর ইনকাম আর কতটুকু? এতে তো জলের বিল আর বিজলীর বিলের পয়সাও মেটাতে পারিনা। সিনেমা হলের টিকিট বিক্রি আর এমন ঘর ভাড়া দিয়েই তো সংসার চালাবার খরচ জোটাতে পারি আমি”। একটু থেমে আবার বলল, “আর শুধু আমি নই শঙ্কর ভাইয়া, এই এলাকার সবাই এই ধন্দা করে। এই রাস্তার এদিকে ওদিকে দো মাইল পর্যন্ত যত দুকান আছে, সব দুকানের মালিক বলেন কর্মচারী বলেন প্রায় সকলেই এ’রকম ঘর ভাড়া, ছোকড়ি সাপ্লাই দিয়ে থাকে”।
শঙ্কর জিজ্ঞেস করল, “তা এরা কারা? এদের চেনেন আপনি”?
সরজু বলল, “নাম ধাম জানিনা। তবে ওই বুড়োটার ওই দিকের মার্কেটে একটা কাপড়ের দোকান আছে। আর মেয়েটার নাম স্মিতা। ও’দিকের একটা বস্তির মেয়ে। একটা কলেজে পড়ে। মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে আলাদা আলাদা কাস্টমার নিয়ে। ওর আরো কয়েকজন বান্ধবীও মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে ওদের কাস্টমার নিয়ে। আমি ঘন্টায় তিনশ টাকা হিসেবে ওদের রুম দিই”।
শঙ্কর বলল, “মেয়েটাকে দেখে তো ভাল ঘরের মেয়ে বলেই মনে হল। এরাও এসব ধান্দা করে”?
সরজু বলল, “শঙ্কর ভাইয়া, আপনি বাইরের চমক দমক দেখে ভুল করবেন না। ওই যে বাংলা ভাষার একটা কথা আছে না? চকচক করলেই সোনা হয় না। এরাও অনেকে প্রায় তেমনই। কাস্টমার ধরবার জন্য এরা ভাল ভাল পোশাক পড়ে, সুন্দর করে মেকআপ করে। কিন্তু এরা সবাই যে ধনী ঘরের বা ভদ্র ঘরের মেয়ে তা কিন্তু সব সময় ঠিক নয়। হাঁ, বড়লোক ঘরের কিছু কিছু মেয়েও শুধু মৌজ মস্তি করবার জন্যেই এসব করে। কেউ কেউ তো নিজেদের গাড়ি হাঁকিয়েও আসে। কিন্তু বেশীর ভাগ মেয়েই খুব গরীব ঘরের মেয়ে। পেটের দায়ে পড়েই এসব কাজ করে। আর আজ একটু আগে যে মেয়েটাকে দেখলেন, ওই মেয়েটাকে আমি চিনি। ওর সংসারে ওর একটা পঙ্গু ভাই ছাড়া আর কেউ নেই। ওই দিকে একটা বস্তিতে থাকে। দু’বছর আগে ওর বাবা মা একমাস আগে পরে মারা যায়। তখন মেয়েটা ক্লাস টেনে পড়ত। তারপর থেকে নিজের ভাইটাকে বাঁচিয়ে রাখতে আর নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে এসব কাজ করতে শুরু করেছে। আজ হয়ত দুটো পয়সা কামালো। আর শুনতেই তো পেলেন, ওই বুড়োটা পরসো দিন ওই মেয়েটার সাথে তার আরও এক বান্ধবীকে নিয়ে আসবে। হয়ত আমার এখানেই আসবে। আমার এখানে রুম না পেলে পেলে কোথাও যাবে। এই করেই ওদের জীবন চলে। তবে ওদের কাস্টমার ওরাই খোঁজে। ও’সবের ভেতর আমি থাকি না। আমি শুধু আমার ঘর ভাড়া দিয়েই খালাস। ছোকড়ি সাপ্লাই আমি ছেড়ে দিয়েছি”।
সরজুর কথা শুনতে শুনতে শঙ্করের বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠল। বেঁচে থাকার লড়াই। একেক জন একেক ভাবে প্রতিনিয়ত সে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শঙ্করকে চুপ করে থাকতে দেখে সরজু বলল, “কি হল শঙ্কর ভাইয়া? খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন নাকি? আরে ছাড়ুন তো ও’সব ভাবনা। আপনি এমন কাউকে চাইলে আমি যোগার করে দিতে পারি। আমার কমিশন লাগবে না। শুধু ওদের পয়সা দিলেই চলবে। আর যদি আমার ঘরেই করতে চান তাহলে এক ঘন্টার জন্য তিনশ’ টাকা দিতে হবে” বলেই নিজের ঘড়ির দিকে দেখে বলল, “আর পন্দ্রহ মিনিট বাদে আরেকজন বেরিয়ে আসবে আমার ঘর থেকে। চাইলে কথা বলে দেখতে পারেন”।
শঙ্কর বলল, “না সরজু ভাইয়া, থাক। তবে আমার আরেকটা কথা বলার ছিল আপনাকে”।
সরজু বলল, “হাঁ হাঁ, আপনি যেন আরও কিছু একটা বলবেন বলছিলেন না? বলুন দেখি কি ব্যাপার”।
শঙ্কর নিজেকে প্রস্তুত করে বলল, “হ্যা সরজু ভাইয়া। বলছিলাম কি, আমার এক বন্ধু আমার মুখে অনুপমা ভাবীর কথা শুনে, তার একটা বুকিং নিতে চায়। পাওয়া যাবে কি”?
সরজু বলল, “বুকিং তো পাওয়া যাবে শঙ্কর ভাইয়া। কিন্তু আপনার বন্ধুর বুকিং তো আপনি করতে পারবেন না। আপনার ওই বন্ধুকেই আসতে হবে আমার কাছে। এটাই আমাদের ধন্দার নিয়ম। আসলে এ’সব ধন্দা তো গৈর কানুনি। তাই কার বুকিং কে করে যাবে। আর কে সিনেমা দেখতে যাবে, এসব তো ভাল করে যাচাই করে নিতে হয়। নাহলে তো থানা পুলিশের ঝামেলা হয়ে যেতে পারে যে কোন সময়”।
শঙ্কর একটু আমতা আমতা করে বলল, “ও তাই বুঝি? আসলে ও তো আরেক জায়গায় একটা হোটেলে উঠেছে। তাই এদিকে এসে আপনার সাথে দেখা করা ওর সম্ভব নয়। ও আবার বারো তারিখেই চলে যাবে। তাই পরশু দিন দিনের বেলায় অনুপমা ভাবীকে তার হোটেলে নিয়ে যেতে চাইছিল। দুপুর একটার পর থেকে চারটের ভেতর যে কোন এক ঘন্টার জন্য। আর আমাকে বলেছিল আপনার কাছ থেকে পরশুদিন দুপুরের পর যে কোন সময়ের জন্য একটা টিকিট বুক করতে। কিন্ত আপনাদের এ নিয়মটা তো আমার জানা ছিল না। তবে আপনি যখন বলছেন হবে না, তাহলে বরং থাক। আমি ওকে সেভাবেই বলে দেব। ও যদি পারে, তাহলে কাল এসে না হয় আপনার কাছ থেকে টিকিট নিয়ে যাবে। ঠিক আছে, সরজু ভাইয়া। ও কথা তাহলে থাক। আপনি আমার বুকিংটার কথা বলুন। কনফার্মেশনটা কখন পাব আমি”?
সরজু জবাব দিল, “আপনার জন্যে তো ভাবনা নেই। কনফার্মেশন কাল সকালেই পেয়ে যাবেন। তবে আপনি না এলেও চলবে। আমি ফোন করে আপনাকে কনফার্ম করে দেব। আর কোড নাম্বারটাও বলে দেব। সেটা নিয়ে ভাববেন না”।
শঙ্কর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “ঠিক আছে সরজু ভাইয়া। আজ তাহলে উঠি আমি”।
সরজু তাকে বাঁধা দিয়ে বলল, “আরে শঙ্কর ভাইয়া, যাবেনই তো। তবু একটু বসুন না। আমি আরও এক এক কাপ চা নিয়ে আসছি। চা খেতে খেতে না হয়ে আরেকটু গল্প করে যাবেন। আসলে সকলের সাথে তো আর এভাবে কথা বলিনা আমি। তবে আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগে বলেই বলছি। আপনি এক মিনিট বসুন। আমি এখনই আসছি” বলে আবার বাইরে চলে গেল।
______________________________