Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.21 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
সীমন্তিনী BY SS_SEXY
#65
(Update No. 85)

সীমন্তিনী হেসে বলল, “আচ্ছা আচ্ছা দাদাভাই। আর ঠাট্টা করছি না। কিন্তু রচু এসব শুনে কী বলল বল তো”?

রতীশ জবাব দিল, “রচুকে তো আমি কিছুই বলিনি এখনও। এখন তোকে যা বলছি, ও সেটুকুই শুনছে পাশে বসে। তাই ওর সাথে পরামর্শ করা হয়নি এখনও রে”।
 

সীমন্তিনী একটু অবাক হয়ে বলল, “সেকি রে দাদাভাই? তুই তো বেলা দুটোর একটু আগেই ঘরে ফিরে এসেছিস। এই ঘন্টাচারেকের মধ্যেও ওকে কিছু বলিস নি? তোরা কি বিকেলে বাইরে কোথাও গিয়েছিলিস নাকি”?

রতীশ বলল, “নারে মন্তি। বাইরে কোথাও যাই নি। আসলে এ ক’টা দিন তো মনটা ভাল ছিল না। আজ মহিমা বৌদির ওখান থেকে আসবার পর মনটা খুব ভাল লাগছিল। তাই দুপুরে খাবার পরে বিছানায় শুয়ে গড়াগড়ি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই রচুর সাথে আর এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারিনি। কিন্তু সব শুনে তোর কেমন মনে হচ্ছে বল তো মন্তি? মহিমা বৌদির ওখানে কাজে যোগ দেব”?

সীমন্তিনী বলল, “দাদাভাই, তোর মুখে যতটুকু শুনলুম, তাতে তো মনে হয় তোর মহিমা বৌদি মানুষ হিসেবে মন্দ হবে না। তবু বলছি, উনি যদি তোকে কথা দেয় যে যোগা ট্রেনিং দেওয়া ছাড়া তোকে আর সেখানে অন্য কিছু করতে হবে না, তাহলে তুই কাজটা একসেপ্ট করে নিতে পারিস। কিন্তু চোখ কান খোলা রাখবি। আর তোর মহিমা বৌদিকে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিবি যে তুই কোনরকম মেয়াদী চুক্তি করবি না। আর নিজের ইচ্ছে মত তুই যে কোনদিন যে কোন সময় তার ওখানে কাজ করা ছেড়ে দিতে পারবি। উনি এমনটা বলতে পারেন যে তুই একবছর বা দু’বছরের ভেতর তার কাজ ছাড়তে পারবি না। আর ওই সময়ের মধ্যে কাজ ছেড়ে দিতে চাইলে তোকে কোন রকম ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এমন কোন শর্তে তুই রাজি হবি না কিন্তু। আর আরেকটা কথাও পরিস্কার করে বলে দিবি যে তুই ইনস্টিটিউটের বাইরে গিয়ে কাউকে কখনও যোগা ট্রেণিং দিবি না। এসব শর্ত মেনে নিয়ে ভদ্রমহিলা যদি তোকে কাজে নিতে চান, তাহলে ঢুকে পড় সেখানে। কিন্তু সব সময় এলার্ট থাকবি। তোর যদি কখনও কিছু দেখে বা শুনে মনে কোন সন্দেহ জাগে, তাহলে সেটা নিয়ে রচুর সাথে আলোচনা করবি। আর সাথে সাথে আমাকেও সবটা জানাবি। প্রয়োজন হলে কাজ ছেড়ে দিবি তখনই”।

রতীশ বলল, “ঠিক আছে, তাকে এভাবেই বলে দেব তাহলে”।

সীমন্তিনী বলল, “আচ্ছা দাদাভাই, এবার একটু রচুকে ফোনটা দে তো”।

রচনা মোবাইলের স্পীকার আগে থেকেই অন করে দিয়ে সীমন্তিনীর কথা শুনে যাচ্ছিল। এবার সে মুখটাকে মোবাইলের আরো একটু কাছে নিয়ে গিয়ে বলল, “হ্যা দিদিভাই, বল”।

সীমন্তিনী জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রচু, তোর জামাইবাবুর নামটা কি ছিলরে”?
 

রচনা একটু অবাক হয়ে বলল, “আমার জামাইবাবুর নাম? মানে দিদির বরের নাম জেনে তুমি কী করবে দিদিভাই”?

সীমন্তিনী বলল, “আমি কী করব সেটা তোকে ভাবতে বলেছি আমি? তুই শুধু তার নামটা বল তো”।
 

রচনা বলল, “জামাইবাবুর নাম ছিল বাদল আচার্যি”।

সীমন্তিনী আবার জিজ্ঞেস করল, “তোর মুখে তো শুনেছিলুম যে কালচিনির পাশেই একটা ছোট গ্রামে তোর দিদির শ্বশুর বাড়ি ছিল, তাই না”?
 

রচনা এবারেও কিছু বুঝতে না পেরে বলল, “হ্যা, তাই। কিন্তু তুমি এসব জানতে চাইছ কেন ? ও দিদিভাই আমার দিদির কি কিছু হয়েছে? তোমার এ’সব প্রশ্ন শুনে তো আমার বুক কাঁপছে গো”।
 

সীমন্তিনী বলল, “আরে নারে পাগলী মেয়ে সেসব কিছু নয়। আসলে সেদিন কালচিনি থানার ওসির সাথে আলাপ হল। কথায় কথায় জানতে পারলাম যে তাদের থানা থেকে নাকি অর্চনা আচার্যির একটা পুলিশ ভেরিফিকেশন চেয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা দপ্তর। তোর দিদির নাম যে অর্চনা সেটা তো আমি আগে থেকেই জানতুম। কিন্তু টাইটেলটা নিয়ে নিশ্চিত ছিলুম না। তাই তোকে জিজ্ঞেস করছি”।
 

রচনা এবার আরো ঘাবড়ে গিয়ে বলল, “দিদির নামে পুলিশ ভেরিফিকেশনের দরকার পড়ল কেন ? দিদি কী করেছে? আমার দিদি কখনও খারাপ কোন কাজ করতে পারে না। ও দিদিভাই, বলনা গো কী হয়েছে”?

সীমন্তিনী বলল, “আহ, এ পাগলিটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। আরে বাবা এ তো সামান্য একটা পুলিশ ভেরিফিকেশন হচ্ছে। তোর দিদিকে কেউ থানার লকআপে পুরতে যাচ্ছে না। তোর জামাইবাবু তো কলেজ টিচার ছিল। সরকারি কলেজের টিচার ছিল। তাই তার মৃত্যুর পর প্রভিডেন্ট, পেনশন যা কিছু সরকারের কাছ থেকে পাবার কথা সেসব তো তোর দিদিই পাবে। কিন্তু তোর জামাইবাবু জীবিত থাকতে বোধহয় তোর দিদিকেই নমিনি করে গিয়েছিল। তাই শিক্ষা দপ্তর নিশ্চিত হতে চাইছে যে তোর দিদিই বাদল আচার্যির বৈধ স্ত্রী কি না। তাই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই তারা পুলিশ ভেরিফিকেশন চেয়ে পাঠিয়েছে। এটা এমন কিছু চিন্তার ব্যাপার নয়, বুঝেছিস”?

রচনা অনেকটা শান্ত গলায় বলল, “ও তাই বল। আমি তো ভাবছিলুম কি না কি। তার মানে জামাইবাবুর প্রভিডেন্ট, পেনশনের টাকা পয়সা সব দিদি পেতে চলেছে”?
 

সীমন্তিনী বলল, “হবার কথা তো সেটাই। সরকারি আইন হিসেবে তোর দিদিই সেসব পাবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা হচ্ছে না। কাগজে কলমে সেটাই দেখানো হলেও ওই ওসি সাহেবের মুখে যা শুনলুম, তাতে মনে হচ্ছে তোর দিদি একটা পয়সাও পাবে না। সব কিছুই হাতিয়ে নেবে তার শ্বশুর ত্রিলোচন আচার্যি। আর আমার মনে হয় তোর জামাইবাবু মারা যাবার পর মেসোকে কখনও যে তোর দিদির সাথে দেখা করতে দেওয়া হত না, তার পেছনের একটা বড় কারন এটাই। আমি ওই ওসির কাছে যতটুকু শুনেছি, তাতে মনে হচ্ছে যে তোর দিদির শ্বশুর তোর দিদিকে দিয়ে কোন ধরণের অথোরাইজেশন অথবা পাওয়ার অফ এটর্নী লিখিয়ে নিয়েছে। আর সেটার ভিত্তিতেই ছেলের প্রভিডেন্ট পেনশন সহ আরো যা কিছু প্রাপ্য তা ত্রিলোচন আচার্যিই ক্লেইম করেছে সরকারের কাছে। কিন্তু সবটাই তোর দিদির প্রাপ্য”।

একটু থেমে সীমন্তিনী আবার বলল, “কালচিনি থানার ওসি আমার অনুরোধ মেনে তোর দিদিকে জিজ্ঞেস করেছিল যে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে কোনভাবে কোন কিছুতে জোর করে সাইন করিয়ে নিয়েছিল কিনা। কিন্তু তোর দিদি নাকি বলেছে যে সে অনেক কাগজেই সই করেছে, কিন্তু শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কোন রকম জোরাজুরি করেনি। কিন্তু আমার মত কালচিনি থানার ওসিও বুঝতে পেরেছে যে, তোর দিদি সত্যি কথা বলেনি। সে যদি সত্যি কথাটা পুলিশকে খুলে বলত তাহলে টাকাগুলো সে-ই পেত। কিন্তু সে নিজেই যদি না চায়, তাহলে পুলিশ আর কি করবে বল”?

রচনা ভারী গলায় বলল, “আমরা কেউই তো দিদির কোন খবর পাই না। বাবা কতবার দিদিকে একটুখানি চোখের দেখা দেখতে তার শ্বশুর বাড়ি গিয়েছেন। একবারও তিনি দিদির সাথে দেখা করতে পারেন নি। দিদির শ্বশুর শাশুড়ি প্রত্যেকবার বাবাকে নানা অ-কথা কূ-কথা বলে অপমান করে বাবাকে তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমিও তো কত বছর হয়ে গেছে দিদিকে দেখিনি। ও মরে গেলেও সে খবর বুঝি আমরা কেউ জানতেও পারব না” বলতে বলতে রচনা কেঁদে ফেলল।
 

সীমন্তিনী রচনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “কাঁদিসনে রচু। কেঁদে কি কোন লাভ আছে বল? তোর দিদিকে দেখার সৌভাগ্য তো আমার হয়নি কখনও। কিন্তু তোদের বিয়ের আগেই তো তোদের সকলের মুখে তার কথা শুনেছি। তোদের দু’বোনের একটা ছবিও দেখিয়েছিলিস তুই আমাকে। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, একবার গিয়ে তোর দিদিকে দেখে আসি। আমি যদি কালচিনি থানায় পোস্টিং পেতাম তাহলে যে ভাবেই হোক তোর দিদিকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসতুম। কিন্তু এখন আমি নিজে থেকে কিছু করতে গেলে সেটা কোনদিক থেকেই সমীচীন হবে না। কিন্তু মাঝে মাঝে তোর দিদিকে নিয়ে না ভেবেও পারিনা। তবে তোর দিদির সাথে যদি একটু ফোনেও কথা বলা যেত তাহলেও না হয় কিছু একটা ভেবে দেখতে পারতুম। কিন্তু সেটাও তো সম্ভব হচ্ছে না। তোর দিদির কোনও মোবাইলও নেই। তবু তুই ভাবিস না। আমি যতটুকু সম্ভব খবরাখবর রাখবার চেষ্টা করছি”।

রচনা নিজের চোখের জল মুছে বলল, “অনেক ভাগ্য করে তোমার মত একটা দিদি পেয়েছি। আজ সাত বছর বাদে কারুর মুখে দিদির কথা শুনতে পাচ্ছি। আচ্ছা ও দিদিভাই, ওই কালচিনি থানার ওসি ভদ্রলোক কি দিদির শ্বশুর বাড়ি গিয়েছিলেন? তিনি কি আমার দিদিকে দেখেছেন? আমার দিদি কেমন আছে, এ ব্যাপারে তোমাকে কিছু বলেছেন? বলনা গো দিদিভাই, আমার দিদি কেমন আছে”।
 

সীমন্তিনী জবাব দিল, “রচু রচু, সোনা বোন আমার। উতলা হোস না বোন। কিন্তু কালচিনি থানার ওসিকে আমি এ’সব ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করিনি রে। আসলে আমি তো শিওর ছিলুম না যে অর্চনা আচার্যিই তোর দিদি হবে। তবে আবার ওই ভদ্রলোকের সাথে যোগাযোগ হলে অবশ্যই জানতে চাইব”।
 

রচনা নিজেকে শান্ত করে বলল, “ও বুঝেছি। ইশ আমিও যদি আগে আমার জামাইবাবুর টাইটেলটা তোমাকে জানিয়ে দিতুম তাহলে তুমি অবশ্যই চেষ্টা করতে দিদির ব্যাপারে আরও কিছু খবর নিতে। তুমি আমার ভাই, মা বাবার জন্যে এতকিছু করছ। দিদির খবর নেবার সুযোগ পেলে সে সুযোগ তুমি নষ্ট করবে না জানি”।
 

সীমন্তিনী একটু ধমক দিয়ে বলল, “এই মেয়ে, তোর মা বাবা ভাই কি শুধু তোর একার? তারা আমার কেউ নয়? এমন কথা বললে কিন্তু আমি তোর সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দেব”।

রচনা জবাব দিল, “জানি গো দিদিভাই, জানি। কিন্তু যেটা সত্যি সেটা তো স্বীকার না করে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই”।

সীমন্তিনী বলল, “খুব হয়েছে, আর আদিখ্যেতা করতে হবে না তোকে। রাখছি এখন”।

এ’কথা শুনেই রতীশ প্রায় সাথে সাথে বলে উঠল, “দাঁড়া দাঁড়া মন্তি। আমাকে আরেকটা কথা বল। শোন, বলছিলাম কি, তুই কি মহিমা বৌদির সাথে একটু কথা বলতে চাস? তাহলে আমি তাকে আগে থাকতেই বলে দেব”।

সীমন্তিনী জবাব দিল, “দাদাভাই, তুই তো গিয়ে সব ভালভাবেই দেখে এসেছিস। তাই আমার মনে হয় এখন তার সাথে আমার কথা না বললেও চলবে। তুই শুধু আমার কথাগুলো মনে রাখিস। আর তোর ওই মহিমা বৌদিকে সেভাবেই বলিস। আর শোন দাদাভাই, আমাকে দু’তিন দিনের জন্যে ডেপুটেশনে যেতে হবে। কালই এখান থেকে যেতে হবে। দার্জিলিং জেলার বর্ডারের কাছাকাছি এলাকায়। আর যেখানে আমার থাকবার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানে নাকি মোবাইল সিগন্যাল পাওয়া যায় না। তাই ফোনে হয়ত তোদের সাথে যোগাযোগ করতে পারব না। তোরাও ফোনে লাইন না পেলে ভাবিসনে। আমি এগারো তারিখে ফিরে এসেই তোদের ফোন করব”।

রতীশ সীমন্তিনীর কথার জবাব দেবার আগেই রতীশের মোবাইলটা বেজে উঠল। রতীশ দিদিভাইয়ের সাথে কথা বলছে দেখে রচনা রতীশের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে মহিমা বৌদির ফোন। সে কলটা রিসিভ না করে ফোনটা রতীশের মুখের সামনে ধরতে রতীশ সীমন্তিনীকে বলল, “মন্তি, এখন ছাড়ছি রে। মহিমা বৌদি ফোন করেছেন আমার মোবাইলে। তোর সাথে পরে আবার কথা বলব’খন” বলে ফোন কেটে দিয়ে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে তাড়াতাড়ি বলল, “সরি বৌদি। আমার বোনের সাথে আরেকটা ফোনে কথা বলছিলাম। তাই আপনার কলটা রিসিভ করতে একটু দেরী হল। কিছু মনে করবেন না”।

রচনা রতীশের গলা জড়িয়ে ধরে তার কানে ধরা মোবাইলের কাছে নিজের একটা কান পেতে রাখতেই রতীশ নিজেই ফোনের স্পীকার অন করে দিল। মহিমা তখন জিজ্ঞেস করছে, “তোমার আরো কোন ফোন আছে না কি? সেটার কথা তো বলোনি ভাই”।
 

রতীশ জবাব দিল, “না না বৌদি তা নয়। আমার একটাই ফোন। আমার বোন আমার স্ত্রীর ফোনে কলটা করেছিল। কিন্তু ও তখন ঘরে সন্ধ্যা প্রদীপ দিচ্ছিল বলে কলটা আমাকেই ধরতে হয়েছিল”।

মহিমা জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা রতীশ, আমি এ সময় ফোন করে তোমাকে ডিসটার্ব করছি না তো? তুমি ব্যস্ত থাকলে না হয় একটু পর কথা বলব”।

রতীশ বলল, “না না বৌদি। তেমন কিছু একেবারেই নয়। এখানে আমাদের ডিসটার্ব করবার মত আর কে আছে। তেমন কারুর সাথে তো জানাশোনাই হয়নি আমাদের এখনও। আমার বোন আর বাড়ির অনেকের সাথে ফোনে কথা বলেই সময় কাটাই বলতে গেলে। আপনি যা বলতে চাইছেন বলুন। কোনও অসুবিধে নেই”।
 

মহিমা একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “ভাই, আজই মাত্র কয়েকঘন্টা আগে তোমার সাথে কথা হয়েছে। আর তুমি দুটো দিন ভেবে দেখতে সময় চেয়ে নিয়েছিলে আমার কাছ থেকে। তাই এখনই তোমাকে ফোন করাটা বুঝি একেবারেই উচিৎ হয়নি আমার”।

রতীশ জবাব দিল, “আপনি এমন ভাবে কেন বলছেন বৌদি? যা বলতে চান, বলুন না”।

মহিমা বলল, “ভাই, বলছিলাম কি, তুমি কি রচনার সাথে আলোচনা করেছিলে ব্যাপারটা নিয়ে”?

রতীশ জবাব দিল, “না বৌদি, সেটা এখনও করে উঠতে পারিনি। আসলে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় দুটো বেজে গিয়েছিল। স্নান করে খেয়েদেয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলুম। তাই সেটা করা হয়নি। রাতে আলোচনা করব”।
 

মহিমা উৎসুক ভাবে জিজ্ঞেস করল, “তাহলে কাল সকালেই তোমার মতামতটা জানতে পারব বলছো”?

রতীশ একটু আমতা আমতা করে জবাব দিল, “হ্যা বৌদি, মানে কাল না জানাতে পারলেও পরশু দিনের মধ্যেই আপনাকে জানিয়ে দেব। আসলে আমি তো একটা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে কোলকাতা এসেছিলুম। ভাগ্য সহায় না হওয়াতে সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছি। তাই মা, বাবা আর কাকুদের সাথে কথা বলে তাদের সবটা জানাতে হবে। তাই দুটো দিন সময় তো লাগবেই বৌদি”।
 

মহিমা এবার খানিকটা স্তিমিত স্বরে বলল, “ও আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে নিরাশ করো না ভাই। আমি কিন্তু খুব আশা নিয়ে তোমার মুখ থেকে পজিটিভ রেসপন্স পাবার অপেক্ষা করছি। আমি তো তোমাকে সব রকম ভাবে কনসিডার করব বলে কথা দিয়েছি। তুমি চাইলে, তোমাকে আরও কিছু বেশী সুযোগ দেবার চেষ্টা করব। তুমি শুধু মুখ ফুটে আমাকে বল, তুমি কি চাও”।

রতীশ জবাবে বলল, “বৌদি আপনি আমাকে এভাবে লজ্জা দেবেন না প্লীজ। আপনি তো আগেই আমাকে অন্যান্যদের চাইতে অনেক বেশী সুযোগ সুবিধে দিতে রাজি হয়ে গেছেন। যে না চাইতেই সব কিছু দেবার জন্যে হাত বাড়িয়ে বসে থাকে, তার কাছে মুখ ফুটে আর কিছু কি চাওয়া যায় বৌদি। আপনি ও’সব নিয়ে ভাববেন না। আসলে বৌদি আমি এমন এক পরিবারের ছেলে যে এ পরিবারের পূর্ব পুরুষেরা কেউ তেমন মহাপুরুষ না হলেও, কেউ সমাজের বা দশের কোন ক্ষতি কখনও করেনি। শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে তারা কখনও অন্য পরিবারের বা সমাজের কোন ক্ষতি করেনি। নিজেদের জীবিকার্জন করতে তারা আরও দশটা লোকের উপকারই করে গেছেন চিরকাল। তাই আমি যা কিছুই করি বা করতে চাই না কেন, তাতে আমার মা বাবা ও অন্যান্য গুরুজনদের সায় না থাকলে করা একেবারেই সম্ভব নয়। তাই দুটো দিন সময় চেয়ে নিয়েছি আপনার কাছ থেকে। আমিও নিজে পারতপক্ষে আপনাকে কোন নেতিবাচক উত্তর দিতে চাই না”।

মহিমা রতীশের কথা শুনে বেশ কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, “তোমার কথা শুনে খুব ভাল লাগল ভাই। আজকের যুগেও যে কোন ছেলের মধ্যে এমন চিন্তা ভাবনা থাকতে পারে, সেটা তোমাকে না দেখলে আমি কখনও বিশ্বাসই করতে পারতাম না। ধন্য তোমার পরিবার, আর ধন্য তোমার মা বাবা। যারা তোমাকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন। তবে তোমার কথাটা শুনে আমি মোটামুটিভাবে আন্দাজ করতে পারছি, তোমার মনে কোন একটা সংশয় দানা বেঁধে আছে। আচ্ছা রতীশ, একটা কথা জিজ্ঞেস করব ভাই”?
 

রতীশ বলল, “হ্যা বৌদি বলুন না”।

মহিমা বলল, “আমরা যখন আমার চেম্বারে কথা বলছিলাম, তখন আমার কাছে একটা ফোন কল এসেছিল। মিঃ সরকারকে তখন ফোনে যা কিছু বলেছি, সেসব শুনেই কি তোমার মনে কোন সন্দেহ দানা বেঁধেছে”?

রতীশ একটু চমকে উঠে বলল, “না না বৌদি, তেমন কিছু নয়। আমার সঙ্গে তো আপনার কেবলমাত্র আজই পরিচয় হল। আর প্রত্যেকেরই একটা আলাদা আলাদা জগৎ থেকে থাকে। তাতে জানাশোনা আত্মীয় বন্ধু বান্ধব অনেকেই থেকে থাকে। চেনা পরিচিতরা তো আপনাকে ফোন করতেই পারে। তাছাড়া, ওই মিঃ সরকার কে, বা কী কারনে আপনাকে ফোন করেছিল, সেটা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন উঠবে কেন? না না, বৌদি সেসব কিছু নয়”।

মহিমা বলল, “আমি জানি রতীশ। মিঃ সরকারকে আমি ফোনে যেসব কথা বলেছি তা শুনে তুমি একটু চিন্তায় পড়ে গেছ। কিন্তু রতীশ, ওই মিঃ সরকার কিন্তু আমাদের যোগা ইনস্টিটিউটের ট্রেনী নন। তার সাথে আমার যোগা সেন্টারের কোনরকম যোগাযোগই নেই। সে আজ অব্দি কখনও আমাদের এই মালহোত্রা সেন যোগা ইনস্টিটিউটে আসেনি। আর তোমাকে তো আমি আগেই বলেছি, তুমি শুধু আমার এ ইনস্টিটিউটের কাজই করবে। ইনস্টিটিউটের বাইরে তোমাকে কখনও কোথাও কোন কাজে পাঠাব না আমি। তুমি আমার কাজে জয়েন করলে আমাদের ইনস্টিটিউটের স্ট্যাণ্ডার্ড উঁচু হবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। তাই মিঃ সরকারের সাথে আমার কী আলোচনা হয়েছে, এসব নিয়ে তুমি কিছু চিন্তা কোর না”।
 

রতীশ এবার বলল, “বৌদি ওসব নিয়ে আপনিও ভাববেন না। আমি বাড়ির লোকদের সাথে কথা না বলা পর্যন্ত সিদ্ধান্তটা নিতে পারছিনা বলেই দু’দিন সময় চেয়েছি। আমি আগামী পরশুর ভেতরেই আপনার সাথে যোগাযোগ করছি”।
 

মহিমা বলল, “ঠিক আছে রতীশ। তোমার জবাবটা জানবার জন্যে আমি ব্যগ্র হয়ে থাকব ভাই। ভাল থেকো। রচনাকে আমার ভালবাসা দিও। ছাড়ছি তাহলে”।
 

*************

রতীশ ফোন রেখে দিতে রচনা উঠে কিচেনে চলে গেল। কিছু পড়ে রতীশ কিচেনে উঁকি মেরে দেখল রচনা চা বানাচ্ছে। রতীশ ড্রয়িং রুমের ভেতর দিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল। রচনার সাথে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সুন্দর সময় কাটাতে পেরে তার শরীর মন খুব ভাল লাগছিল। নিজের বিছানায় দিনের বেলায় রচনার মোহনীয় দেহের সূধা পান করে সে আজ খুবই তৃপ্তি পেয়েছে। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেবার পর আবার তার মনে একই ইচ্ছে জেগে উঠছে। কিন্তু কিচেনে স্টোভের সামনে কিছু করাটা রিস্কি। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ পাশের ফ্ল্যাটে টিভির আওয়াজ শুনতে পেল। শুনে ভাবল, একটা টিভি কিনলে ভাল হত। রচনা বেচারি সারাটা দিন একা একা বাড়িতে সময় কাটায়। মহিমা বৌদির ইনস্টিটিউটে কাজে যোগ দিলে ভোর সাড়ে চারটেয় তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। ফিরতে ফিরতে সাড়ে এগারটা বারোটা বেজে যাবে রোজ। ঘরে একটা টিভি থাকলে রচনা সে সময় একটু টিভি দেখে সময় কাটাতে পারবে। আর সন্ধ্যের পর দু’এক ঘন্টা টিভি নিউজ শোনা তার নিজেরও একটা অভ্যাসের মত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কলকাতা আসবার পর আর সেটা হয়ে উঠছে না। কটা দিন তো উৎকণ্ঠায় আর ঝামেলায় কেটে গেল। দুনিয়ার কোথায় কী হচ্ছে সে’সব কথাও তার মাথায় আসেনি। তবে রচনা পাশে থাকলে তার সময় এমনিতেই সুন্দর ভাবে কেটে যায়। কিন্তু রচনা যখন কিচেনে রান্নাবান্নার কাজ করে সে সময়টায় তার সময় যেন কাটতেই চায় না। রচনার ব্যস্ততার মধ্যেও সে মাঝে মাঝে কিচেনে ঢুকে রচনাকে নানাভাবে ডিসটার্ব করে। রচনা অবশ্য কখনোই সে সবের জন্য কিছু বলে নি। তবু ঘরে একটা টিভি থাকলে ওই সময়টুকু নিউজ শুনে রচনার কাজে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে দেশের হালচাল জানতে পারা যেত।

চা জলখাবার বানিয়ে রচনা বসবার ঘরের টেবিলে সব কিছু এনে রতীশকে ডেকে বলল, “সোনা এস, চা জলখাবার এনেছি”।

রতীশ ড্রয়িং রুমে ঢুকে সোফায় বসতে দু’জন মিলে খেতে লাগল। খেতে খেতেই রতীশ বলল, “রচু, ভাবছি কাল একটা টিভি কিনে আনব। তোমার কী মত”?
 

রচনা বলল, “হ্যা, টিভি একটা তো কিনতেই হবে। কিন্তু সোনা এখনই কিনতে চাইছ? কোন একটা কাজ টাজ শুরু করে তার মাসখানেক পর কিনলে ভাল হত না? এখন কিনতে গেলে তো হাতে যেটুকু পয়সা আছে তার থেকেই কিনতে হবে। তাতে চাপ পড়ে যাবে না”?
 

রতীশ বলল, “একেবারে যে পড়বেনা তা নয়। হাতে তো প্রায় দেড় লাখের মতই আছে। টিভি আর ডিশ কিনতে কম করেও হাজার কুড়ি পঁচিশের মত খরচ তো পড়বেই”।

রচনা বলল, “তাহলে এখনই কেনার দরকার নেই সোনা। তবে তুমি যদি তোমার মহিমা বৌদির ওই সেন্টারে এ সপ্তাহেই জয়েন কর, তাহলে এ মাসের শেষে নাহয় টিভি কেনা যাবে। কিন্তু সোনা, দিদিভাই তো তার মত জানিয়েই দিয়েছেন। তা সত্বেও তুমি মহিমা বৌদিকে আরও দু’দিন বাদে মতামত জানাতে চাইছ কেন”?
 

রতীশ বলল, “আসলে রচু, মন্তিকে আমি সব কিছু খুলে বললেও একটা কথা তখন ওকে বলতে ভুলে গিয়েছিলুম। তখন সব কিছু বলতে বলতে এ কথাটা ঠিক মাথাতেই আসেনি। আসলে ওই ব্যাপারটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না বলেই হয়ত সেটা মনে হয়নি আমার। কিন্তু ব্যাপারটা নজরে আসবার পর থেকেই মনের ভেতর খচখচ করছিল। মহিমা বৌদি যখন ফোন করলেন, তখন আবার কথাটা মনে এসেছে”।
 

রচনা জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার, সেটা আমাকে বলবে না”?

______________________________
[+] 1 user Likes riank55's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সীমন্তিনী BY SS_SEXY - by riank55 - 02-03-2020, 09:09 PM



Users browsing this thread: 21 Guest(s)