02-03-2020, 09:07 PM
(Update No. 81)
রতীশ মনে মনে বেশ অবাক হল। দেরাদুনে থাকতে সে অনেক পাঞ্জাবী মেয়ে মহিলাকে দেখেছে। তাদের চালচলনে কেমন যেন একটা ঔদ্ধত্তের ভাব তার চোখে ধরা পড়ত। আর তাদের কথাবার্তাগুলোও কেমন কর্কশ বলে মনে হত তার। মিষ্টতার চিহ্নমাত্র খুঁজে পেত না সে। কিন্তু এই ভদ্রমহিলার এমন নরম মিষ্টি মোলায়েম স্বর শুনে তার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল যে ইনি একজন পাঞ্জাবী মহিলা।
মহিমা হাত তুলে রতীশকে বাঁধা দিয়ে মিষ্টি হেসেই বলল, “বিমল আমাকে আপনার কথা সব বলেছে মিঃ ভট্টাচারিয়া। তাই আপনাকে আর আলাদা করে পরিচয় দিতে হবে না” বলে তার একটা হাত বাড়িয়ে দিল রতীশের দিকে। রতীশ ডানহাত বাড়িয়ে মহিমার হাত ধরে হ্যাণ্ডশেক করল।
মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনি কি সত্যি আমাদের ইনস্টিটিউটে ট্রেনার হিসেবে যোগ দিতে চাইছেন”?
রতীশ জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম, সে জন্যেই তো এসেছি। বিমলজী তো আমাকে তেমনটাই বলেছিলেন”।
মহিমা আবার সুন্দর হেসে বলল, “হ্যা বিমল আমাকে সে’সব কথাও বলেছে। কিন্তু তবু আপনার মুখ থেকে আপনার উদ্দেশ্যটা জেনে নেওয়া তো দরকার। তা, আপনাকে দেখে তো মনে হয় আপনার বয়স খুব একটা বেশী নয়। বোধহয় ছাব্বিশ সাতাশ হবে তাই না”?
রতীশ বলল, “হ্যা ম্যাডাম কাছাকাছি। আমার এখন আটাশ চলছে”।
মহিমা বলল, “বিমল আমাকে বলেছিল যে আপনি নাকি দেরাদুন আর ঋষিকেশের কয়েকটা ইনস্টিটিউট থেকে যোগা ডিগ্রী নিয়েছেন। কথাটা কি সত্যি? আসলে আপনার মত এত কম বয়সের কাউকে কোন বড় যোগা ডিগ্রী নিতে দেখিনি বলেই কথাটা বলছি”।
রতীশ বলল, “ম্যাডাম আসলে আমি মাধ্যমিক পাশ করবার পরেই দেরাদুন কলেজে গিয়ে ইলেভেনে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে হায়ার সেকেণ্ডারী আর গ্রাজুয়েশান কোর্সের পড়াশোনার পাশাপাশি যোগার কোর্সগুলো করেছিলাম। তাই আলাদা করে আর সময় দিতে হয়নি”।
মহিমা জিজ্ঞেস করল, “তা কি কি কোর্স করেছেন সেখানে”?
রতীশ নিজের হাতের ফাইলটা মহিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ম্যাডাম এ ফাইলে আমার সমস্ত সার্টিফিকেট আছে”।
মহিমা ফাইলটা খুলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভেতরের সার্টিফিকেটগুলো খুব মন দিয়ে দেখতে লাগল। তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে ফাইলের ভেতর এমন কিছু সে দেখছে যা দেখবে বলে তার ধারণাই ছিল না। অনেকক্ষণ পর সে বিস্মিত চোখে রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “আপনি হরিদ্বারের একটা নামকরা ইনস্টিটিউট থেকে যোগাশাস্ত্রী উপাধি পেয়েছেন? দেরাদুন আর ঋষিকেশের যে’সব যোগা সেন্টার থেকে ডিগ্রী নিয়েচ্ছেন সে সব সেন্টারেরও তো খুব নামডাক আছে। আর মাধ্যমিক পাশ করবার আগেও তো দেখছি দুটো জায়গায় যোগা মীটে ফার্স্ট হয়েছিলেন? আনবিলিভেবল! আর সেই সাথে ইকোনমিক্সে গ্রাজুয়েশন”!
রতীশ মহিমার এ’কথা শুনে বলল, “আসলে ম্যাডাম, ছোটবেলা থেকেই যোগার ওপর খুব আকর্ষণ ফীল করতাম আমি। সাধারণ পড়াশোনার চেয়ে যোগা করতেই আমার বেশী ইন্টারেস্ট ছিল। এখনও আছে”।
মহিমা ফাইলটা বন্ধ করতে করতে জিজ্ঞেস করল, “তা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনি তো গ্রাজুয়েশন করেছেন টু থাউজেণ্ড ফাইভে। এতদিন কোন কাজ করেন নি”?
রতীশ জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম, আমি টু থাউজেণ্ড সিক্স থেকেই আমাদের ওখানে হায়ার সেকেণ্ডারি কলেজে স্পোর্টস আর ইকমনিক্সের টিচার হিসেবে কাজ করেছি। গত মাসেই কলেজের চাকরিটা আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের কলেজের প্রিন্সিপ্যালের একটা সার্টিফিকেটও ওই ফাইলে আছে, দেখুন”।
মহিমা বেশ খুশী হয়ে বলল, “ওহ, দ্যাটস ভেরি নাইস টু হিয়ার। তা শুধু স্পোর্টস শেখাতেন? না যোগাও শেখাতেন”?
রতীশ বলল, “হ্যা ম্যাডাম, যোগাও শেখাতাম”।
মহিমা আরও খুশী হয়ে বলল, “তাহলে তো আরও ভাল কথা। যোগা কোচিং দেবার অভিজ্ঞতাও আপনার আছে” বলে কিছু সময় চুপ করে থেকে মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল, “আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনার সব ডিটেইলস জেনে তো আমি খুব খুশী হয়েছি। আপনার মত এমন এক্সপার্ট একজন যোগা টিচার আমি অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম। আপনি যদি আমাদের এখানে কাজ করেন, তাহলে আমার পক্ষে খুবই ভাল হবে। কিন্তু তবু আমি আপনার কিছু যোগা ডেমনস্ট্রেশন দেখতে চাই। আপনার কি তাতে আপত্তি আছে”?
রতীশ জবাব দিল, “না ম্যাডাম, আপত্তি নেই আমার। কিন্তু এমন শার্ট প্যান্ট পড়ে তো সব কিছু দেখান সম্ভব হবে না”।
মহিমা বলল, “সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি আসুন আমার সাথে” বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিমলকে বলল, “বিমল, ডোন্ট মাইন্ড প্লীজ। তোমাকে একটু একা বসতে হবে। এই ধর দশ পনের মিনিট, ওকে”?
বিমল বলল, “ওকে ওকে, নো প্রব্লেম। তুমি ওকে ভাল করে যাচাই করে নাও। পরে কিন্তু আমার কাছে কোন কমপ্লেন করতে পারবে না, সেটা মনে রেখ”।
রতীশ মহিমাকে অনুসরন করল। মহিমা নিজের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে ছোট করিডোরে এসে ডানদিকের একমাত্র দরজাটা চাবি দিয়ে খুলে বলল, “আসুন মিঃ ভট্টাচারিয়া। আমাদের সেন্টারটা একটু দেখে নিন আগে”।
রতীশ মহিমার পেছন পেছন দরজাটা দিয়ে ঢুকে দেখল বিশাল একটা হলঘরকে প্লাইউডের পার্টিশান দিয়ে তিনটে ভাগ করা হয়েছে। আর পেছনের দিকে পরপর তিনখানা টয়লেট। আর উল্টোদিকে আরেকটা ছোট রুম দেখা গেল। সেটাও তালা বন্ধ। মহিমা সে রুমটা দেখিয়ে বলল, “এটা হচ্ছে আমাদের অফিস ঘর। এখানে একজন অফিস অ্যাসিস্টান্ট বসে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা অব্দি। আর এদিকটাই হচ্ছে আমাদের ফ্রন্ট ডোর। ওই যে কলাপসিবল গেটটা দেখতে পাচ্ছেন। এ তিনটে পার্টিশানে তিনজন ট্রেনার সকাল ছ’টা থেকে আটটা অব্দি যোগা কোচিং দিয়ে থাকে। এ সময়টা হচ্ছে আমাদের জেনারেল সেশন। আর উল্টোদিকে ওই দিকটায় দেখুন চারখানা ছোট ছোট কেবিন দেখা যাচ্ছে। এখানে আমরা স্পেশাল ট্রেনীদের কোচিং দিয়ে থাকি। আপনার তেমন কোন অভিজ্ঞতা আছে কি না জানিনা। তবে কিছু কিছু বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা নিজেদের শরীরকে ফিট রাখবার জন্যে কিংবা কোন রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য বিশেষ বিশেষ কিছু যোগা এক্সারসাইজ করতে চায়। যোগা কোচিং নেওয়াটা এদের কাছে মুখ্য নয়। বরং বলা যায়, এদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যোগার মাধ্যমে নিজেদের শরীরকে সুস্থ রাখা বা রোগের হাত থেকে আরোগ্য লাভ করা। তাদেরকে অন্য সব কমবয়সী ট্রেনীদের সাথে একসাথে কোচিং দিতে অসুবিধে হয়। তাই তাদের জন্যে আলাদা করে ওই চারটে কেবিন বানানো হয়েছে। প্রত্যেকটা কেবিনে দু’জন ট্রেনীকেই শুধু একসাথে কোচিং করা সম্ভব। তবে এখন অব্দি দু’জনকে একসাথে কোচিং দেওয়া নিয়মিত ভাবে শুরু হয়নি। তবে প্রভিসনটা রাখা হয়েছে। ক্যান্ডিডেট তো অনেক আছে। ট্রেনারের সংখ্যা কম বলে অনেককেই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই। আর গত দু’মাস যাবৎ আমাদের একজন ফিমেল ট্রেনার লম্বা ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছে। ওর অ্যাডভান্সড স্টেজ চলছে। তাই রুটিন সামলাতে কখনও কখনও দু’জন স্পেশাল ট্রেনীকে একসাথে এক একটা কেবিনে ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য হই আমরা। এদিক দিয়ে আরেকটু এগিয়ে গেলেই টয়লেটগুলো দেখতে পাবেন, যেটা পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকবার সময় ওদিক থেকে দেখতে পেয়েছিলেন। আর আমার চেম্বারের সামনে যে করিডোরটা আছে সেখানে তিনখানা রুম স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করছি আমরা”।
রতীশ সব দেখে বলল, “বাহ, খুব ভাল অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন ম্যাডাম”।
মহিমা একটা কেবিনের বাইরে নিজের জুতো খুলে রেখে রতীশকে নিয়ে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে ঢুকে বলল, “আপনি এখানেই একটু আমাকে ডেমনস্ট্রেশন দেখান”।
রতীশও নিজের জুতো খুলে কেবিনের ভেতর ঢুকে দেখল ছোট কেবিনটার ভেতর হসপিটালের বেডের মত সাইজের দুটো বিছানা। বিছানাগুলোর এক মাথার দিকে ছোট একটা টেবিল আর একটা ছোট ওয়ারড্রোব বসানো আছে। টেবিলের সাথেই একটা কাঠের স্ট্যাণ্ডের ওপর একখানা আয়না লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে টেবিলটাকে টেবিল হিসেবে কাজ করবার সাথে সাথে সেটাকে একটা ড্রেসিং টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। বিছানা দুটোর মাঝে মেঝেতে পাঁচ সাড়ে পাঁচ ফুট চওড়া আর বারো ফুটের মত লম্বা একখানা কার্পেট পাতা। আর সামনের বাঁ কোনায় একটা কাঠের চেয়ার।
রতীশ মনে মনে ব্যবস্থাপনার তারিফ না করে পারল না। কিন্তু আড়াই ফুট চওড়া আর প্রায় সাত বা সাড়ে ছ’ ফুটের মত লম্বা বিছানাদুটো কি জন্যে রাখা হয়েছে সেটা তার বোধগম্য হল না। তাই সে মহিমাকে বলল, “ম্যাডাম সব কিছুই তো বেশ ব্যবস্থা করা আছে দেখছি। কিন্তু এমন সরু সরু দুখানা বিছানা কেন রাখা হয়েছে এখানে”?
মহিমা হেসে বলল, “এখানে তো বয়স্ক আর অসুস্থ ট্রেনীদের কোচিং দেওয়া হয়। তারা বেশীর ভাগই শারীরিক সুস্থ থাকবার জন্য যোগা করতে আসে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে তাদের যোগাচর্চার অভ্যাস না থাকার ফলে মিনিট দশ পনের বাদেই তারা টায়ার্ড হয়ে পড়ে। এ বিছানাগুলোয় তারা শরীরটা টান করে মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নিতে পারে”।
রতীশ সে’কথা শুনে বলল, “হু, বেশ ভালভাবে ভাবনা চিন্তা করেই এ’সবের ব্যবস্থা করেছেন ম্যাডাম”।
মহিমা হেসে বলল, “বাকি কথা পরে জানতে পারবেন মিঃ ভট্টাচারিয়া। বিমল আমার চেম্বারে একা বসে আছে। আপনি এবার কিছু ডেমনস্ট্রেশন করে দেখান আমাকে। আপনার যেখানে করতে ইচ্ছে হয় করুন। তবে বিছানাগুলো তো খুব বেশী চওড়া নয়, তাই আমার মনে হয় আপনি কার্পেটের ওপর করলেই ভাল হবে। ভাববেন না, আপনার পোশাক নোংরা হবে না। সব কিছু আমরা সাফ সুতরো রাখি। আর এ জন্যেই কেবিনে এবং জেনারেল সেকশনেও জুতো পড়ে ঢোকা বারণ। তাছাড়া দু’দিন বাদে বাদে বিছানার সব কিছু বদলে দেওয়া হয়। কার্পেটও পরিস্কার করা হয়”।
রতীশ একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “কিন্তু ম্যাডাম, এমনভাবে শার্ট প্যান্ট পড়া অবস্থায় ....”
মহিমা সিলিং ফ্যানের সুইচটা অন করে কোনার চেয়ারটাতে বসতে বসতে বলল, “আমাদের এখানে জেনারেল সেশনের ট্রেনীদের জন্য কস্টিউম প্রেস্ক্রাইব করা আছে। হাঁটু থেকে কোমর আর পাঁজর থেকে গলা অব্দি তাতে ঢাকা থাকে। আর ট্রেনাররা অনেকটা ট্র্যাক স্যুটের প্যান্টের মত একধরনের একটা প্যান্ট পড়ে স্যাণ্ডো গেঞ্জী পড়েই ট্রেনিং দিয়ে থাকে। কিন্তু অন্য ট্রেনারদের পোশাক আপনাকে পড়তে হবে না। আপনি বরং শুধু শার্টটা খুলে নিন। প্যান্ট আর গেঞ্জী পড়ে যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকুই দেখান”।
রতীশ আর কোন কথা না বলে নিজের শার্টটা খুলে বিছানার ওপর রেখে উপবেশনাসন ভঙ্গীতে কার্পেটের ওপর বসে জিজ্ঞেস করল, “কী দেখাব ম্যাডাম? বিভিন্ন ধরণের যোগা থেরাপি দেখাব, না প্রাণায়াম, না যোগব্যায়াম যোগাসন দেখাব”?
মহিমা রতীশের সুগঠিতে শরীরটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে বলল, “সব কিছু দেখাতে গেলে তো অনেকটা সময় লেগে যাবে। তাছাড়া আমাদের তো আর যোগা কলেজ বা কলেজ নয়। পাঠ্যক্রমের কোর্স তো আর এখানে প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের কাজ তো মেইনলি যোগা এক্সারসাইজ করানো। আপনি এক কাজ করুন মিঃ ভট্টাচারিয়া। দু’তিনটে প্রাণায়াম করে তারপর কয়েকটা যোগাসন দেখিয়ে দিন আমাকে”।
রতীশ চোখ বন্ধ করে প্রায় আধমিনিটের মত সুখাসনে বসে থেকে প্রথমে ভস্ত্রম প্রাণায়াম, কপাল ভারতী প্রাণায়াম, ব্রাহ্য প্রাণায়াম,অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম আর ভ্রামরী প্রাণায়াম করল। তারপর কয়েক সেকেণ্ড বিরতির পর যোগাসন করতে শুরু করল। প্রথম প্রথম সিদ্ধাসন, পদ্মাসন, বালাসন, বজ্রাসন, সিংহআসন, দণ্ডাসন আর তুলাসন করল। এসব করতে শরীরের মাংসপেশী বা হাড়ে খুব একটা চাপ পড়ে না। কিন্তু শরীরটা সব রকম যোগাসন করবার জন্যে তৈরী হয়ে ওঠে। তারপর অর্ধনাবাসন, নাবাসন, পরিপূর্ণ-নাবাসন দিয়ে শুরু করে একে একে ভূজঙ্গাসন, ভেকাসন, উত্তানাসন, গরুড়াসন, গোমুখাসন, জানু-শীর্ষাসন, কর্নপীড়াসন, বকাসন, পদহস্তাসন, মৎস্যাসন, শশকাসন, উর্ধমুখশশকাসন, বিপরীতকরনি, ঊষ্ট্রাসন, কুক্কুটাসন, অধোমুখশ্বানাসন, নটরাজাসন করে কয়েক সেকেণ্ডের জন্যে থেমে মহিমাকে জিজ্ঞেস করল, “আরও কিছু দেখাব ম্যাডাম”?
মহিমা মন্ত্রমুগ্ধের মত রতীশের সুগঠিত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওঠানামা আর নড়াচড়া দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। প্যান্ট আর স্যাণ্ডো গেঞ্জী পড়া রতীশের দেহসৌষ্ঠব দেখে সে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছিল। তার সাতচল্লিশ বছরের জীবনে সে বহু পুরুষের উলঙ্গ দেহ দেখেছে। নিজের দেহে যৌবন আসবার পর থেকেই নিজের মোহনীয় শরীরের মায়ায় প্রচুর পুরুষকে লুব্ধ করে তাদের সাথে প্রচুর পুরুষসঙ্গ করেছে। দেহসুখের আদান প্রদান করে নিজেও যেমন তৃপ্তি পেয়েছে, তেমনই সব পুরুষসঙ্গীকেও সে পুরোপুরি ভাবে তৃপ্ত করেছে। কিন্তু রতীশের মত এমন অপূর্ব দেহসম্পদ সে কোন পুরুষের শরীরে দেখে নি। ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগে পুরুষের নগ্ন সৌন্দর্য দেখে তার শরীর মন যেমন চঞ্চল হয়ে উঠত, এখন আর কোন পুরুষকে দেখে তার দেহমন তেমন চঞ্চল হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই মূহুর্তে রতীশের স্যাণ্ডো গেঞ্জীর ওপর দিয়ে তার ফুলে ওঠা বুক আর নগ্ন বাহুর মাংসপেশী দেখে তার শরীরটা শিরশির করে উঠল। শরীরের ভেতরের এমন চাঞ্চল্য সে বহুদিন অনুভব করেনি। তার মনে হচ্ছিল সে যেন তার ঊণিশ কুড়ি বছর বয়সে ফিরে গেছে। মগ্ন হয়ে রতীশের সুন্দর শরীরটাকে দেখতে দেখতে সে নিজের শরীরের ভেতরকার ভুলে যাওয়া পুরোন চাঞ্চল্যের শিরশিরানিটাকে প্রাণ ভরে উপভোগ করছিল। রতীশের প্রশ্নে তার ঘোর ভাঙল। একটু চমকে উঠলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “হ্যা, আরো একটু কঠিন আসন দেখান দু’ চারটে”।
রতীশ এবার একে একে অধোমুখবৃক্ষাসন, অষ্টবক্রাসন, চতুরঙ্গদন্ডাসন, চক্রাসন, ধনুরাসন, হলাসন, দ্বিপদশীর্ষাসন, দ্বিপদ বিপরীতপদণ্ডাসন, একপাদরাজকপোতাসন, একপাদ কৌণ্ডীন্যাসন, একপাদ শীর্ষাসন, কূর্মাসন, ময়ুরাসন, পদ্মপিন্যময়ুরাসন, কপোতাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, শলভাসন, সর্বাঙ্গাসন, শীর্ষাসন, মুক্তহস্ত শীর্ষাসন, নিরালম্বসর্বাঙ্গাসন করে সবশেষে শবাসন ভঙ্গীতে মিনিট খানেক থেকে উঠে বসে মহিমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হয়েছে ম্যাডাম? না আরও কিছু দেখাব”?
মহিমা ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। এখন তার চোখে মুখে বিস্ময়ের সাথে সাথে খুশীর ঝলকানি একেবারে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। এত রকমের যোগাসন একসাথে সে কোনদিন দেখেনি। সে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় রতীশের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল। রতীশের কথা শুনে সে জিজ্ঞেস করল, “আপনি আরও দেখাতে পারেন”?
রতীশ বলল, “নিশ্চয়ই ম্যাডাম। আমি তো মোটে পঞ্চাশটার মত আসন দেখালাম। খুবই অল্প অল্প সময় ধরে করলেও এতেই দেখুন প্রায় একঘন্টা সময় পার হয়ে গেছে। আরও তো অনেক ধরণের আসন আছে। আপনি চাইলে আমি সেসবও ডেমনস্ট্রেট করে দেখাতে পারি”।
মহিমা বলল, “ইশ আপনাকে আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম মিঃ ভট্টাচারিয়া। কিন্তু আর আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি একেবারে ঘেমে গেছেন। আপনি বরং এবার আমার চেম্বারে গিয়ে বিমলের সাথে একটু কথা বলুন। এখন তো সেন্টারে আর কেউ নেই। আমি এদিকের দরজাগুলো বন্ধ করেই আসছি”।
রতীশ প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের ঘাড় গলা মোটামুটিভাবে মুছে নিয়ে শার্টটা পড়তে পড়তে কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। তারপর পেছন দিকের দরজা দিয়ে আবার মহিমার চেম্বারে এসে ঢুকতেই বিমল জিজ্ঞেস করল, “বেশ লম্বা ইন্টারভিউ দিলেন দেখছি। তা কেমন দিলেন ইন্টারভিউ রতীশবাবু? আপনার ম্যাডামের পছন্দ হয়েছে তো”?
রতীশ বিমলের পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “আমি তো যতটুকু দেখিয়েছি, আশা করি তাতে কোন ভুল হয়নি। তবে ম্যাডামের পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা তিনিই ভাল বলতে পারবেন বিমলজী”।
বিমল বলল, “আমার মিসেসও এখানে সপ্তাহে দু’দিন করে এসে স্পেশাল ক্লাস অ্যাটেণ্ড করে। এখানে তিনজন ট্রেনার আছে। তবে একজন ফিমেল ট্রেনার বোধহয় এখন ছুটিতে আছে। তাই রেগুলার ক্লাস করতে পারছে না অনেকেই। স্পেশাল ট্রেনীদের এরা একা স্পেশাল কেবিনে ট্রিটমেন্ট দেয়। কিন্তু ট্রেনারের অভাবে মাস দুয়েক হল তাকে মাঝে মধ্যেই আরো একজনের সাথে ট্রিটমেন্ট নিতে হয়। তাতে আমার মিসেস ঠিক খুশী হয় না। আপনি এখানে জয়েন করলে সে সমস্যাটা বোধহয় আর থাকবে না”।
রতীশ বলল, “ম্যাডাম পুরো সেন্টারটা আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখালেন। সবকিছু বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো। বেশ ভাল লেগেছে আমার”।
এমন সময় মহিমা চেম্বারে ঢুকে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বিমল। তুমি তো আমার কাছে একখানা হীরে এনে দিয়েছ বন্ধু। তোমার ক্যাণ্ডিডেট তো ফুল মার্ক্স পেয়েছে ইন্টারভিউতে”।
বিমল বলল, “হীরে না পাথর, সে বিচার তো তোমার মত জহুরীই করতে পারে। আমি তো আর এ’সবের কিছু জানিনা বা বুঝিনা। আমার নাম নিয়ে কেউ ওকে ঠকিয়েছে জেনেই আমার খারাপ লাগছিল। আর তোমার এখানেও যে একজন ট্রেনারের প্রয়োজন আছে সেটাও আমার জানা ছিল। আর রতীশবাবু যোগা নিয়ে কিছু একটা করবে বলেই এখানে এসে একটা চোট খেয়েছে। তাই তাকে তোমার কাছে নিয়ে এসেছি। তা তোমাদের সব কথা কি শেষ হয়ে গেছে? না আমাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে আমার কাজের জন্য”?
মহিমা নিজের চেয়ারে বসে চুপ করে বিমলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল, “সরি বিমল, তোমাকে আর একটু অপেক্ষা করতেই হবে। মিঃ ভট্টাচারিয়ার সাথে আমার আরও খানিকক্ষণ কথা বলার আছে। তুমি অবশ্য একটা কাজ করতে পার। তুমি বোর ফিল করলে বরং আমার রেস্ট রুমে গিয়ে একটু অপেক্ষা কর। আমি আধঘন্টা পর তোমার সাথে বসছি, ওকে”?
বিমল বলল, “হ্যা ঠিক আছে। এখানে বসে বসে আমি বোর হব। তোমার রেস্ট রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নেওয়াই ভাল হবে মনে হয়”।
মহিমা মিষ্টি করে হেসে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা চাবি বের করে বিমলের হাতে দিতে দিতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বিমল”।
বিমল চাবিটা হাতে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল, “তাহলে রতীশবাবু, আপনি ম্যাডামের সাথে বাকি কথাটুকু সেরে ফেলুন। কিন্তু আপনাকে ছুটি দেবার পর আপনি কি আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এখানে”?
বিমলের কথার জবাবে রতীশ বলল, “না না বিমলজী। ম্যাডাম আমাকে ছুটি দিলে আমি চলে যাব। আপনি আমার জন্যে অনেক করেছেন। আর বিরক্ত করতে চাই না আপনাকে। আমি এখান থেকে মেট্রো ধরে চলে যাব। আপনি আপনার কাজ শেষ করেই যাবেন বরং”।
বিমল একবার মহিমার দিকে দেখে আবার রতীশকে বলল, “আমার কাজ শেষ হতে তো প্রায় ঘন্টাখানেক লেগে যাবে, তাই না মহিমা? এই একটা ঘন্টা আপনাকে এখানে একা বসিয়ে রাখলেও তো ভাল দেখাবে না”।
______________________________
রতীশ মনে মনে বেশ অবাক হল। দেরাদুনে থাকতে সে অনেক পাঞ্জাবী মেয়ে মহিলাকে দেখেছে। তাদের চালচলনে কেমন যেন একটা ঔদ্ধত্তের ভাব তার চোখে ধরা পড়ত। আর তাদের কথাবার্তাগুলোও কেমন কর্কশ বলে মনে হত তার। মিষ্টতার চিহ্নমাত্র খুঁজে পেত না সে। কিন্তু এই ভদ্রমহিলার এমন নরম মিষ্টি মোলায়েম স্বর শুনে তার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল যে ইনি একজন পাঞ্জাবী মহিলা।
মহিমা হাত তুলে রতীশকে বাঁধা দিয়ে মিষ্টি হেসেই বলল, “বিমল আমাকে আপনার কথা সব বলেছে মিঃ ভট্টাচারিয়া। তাই আপনাকে আর আলাদা করে পরিচয় দিতে হবে না” বলে তার একটা হাত বাড়িয়ে দিল রতীশের দিকে। রতীশ ডানহাত বাড়িয়ে মহিমার হাত ধরে হ্যাণ্ডশেক করল।
মহিমা মিষ্টি করে হেসে বলল, “আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনি কি সত্যি আমাদের ইনস্টিটিউটে ট্রেনার হিসেবে যোগ দিতে চাইছেন”?
রতীশ জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম, সে জন্যেই তো এসেছি। বিমলজী তো আমাকে তেমনটাই বলেছিলেন”।
মহিমা আবার সুন্দর হেসে বলল, “হ্যা বিমল আমাকে সে’সব কথাও বলেছে। কিন্তু তবু আপনার মুখ থেকে আপনার উদ্দেশ্যটা জেনে নেওয়া তো দরকার। তা, আপনাকে দেখে তো মনে হয় আপনার বয়স খুব একটা বেশী নয়। বোধহয় ছাব্বিশ সাতাশ হবে তাই না”?
রতীশ বলল, “হ্যা ম্যাডাম কাছাকাছি। আমার এখন আটাশ চলছে”।
মহিমা বলল, “বিমল আমাকে বলেছিল যে আপনি নাকি দেরাদুন আর ঋষিকেশের কয়েকটা ইনস্টিটিউট থেকে যোগা ডিগ্রী নিয়েছেন। কথাটা কি সত্যি? আসলে আপনার মত এত কম বয়সের কাউকে কোন বড় যোগা ডিগ্রী নিতে দেখিনি বলেই কথাটা বলছি”।
রতীশ বলল, “ম্যাডাম আসলে আমি মাধ্যমিক পাশ করবার পরেই দেরাদুন কলেজে গিয়ে ইলেভেনে ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে হায়ার সেকেণ্ডারী আর গ্রাজুয়েশান কোর্সের পড়াশোনার পাশাপাশি যোগার কোর্সগুলো করেছিলাম। তাই আলাদা করে আর সময় দিতে হয়নি”।
মহিমা জিজ্ঞেস করল, “তা কি কি কোর্স করেছেন সেখানে”?
রতীশ নিজের হাতের ফাইলটা মহিমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “ম্যাডাম এ ফাইলে আমার সমস্ত সার্টিফিকেট আছে”।
মহিমা ফাইলটা খুলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভেতরের সার্টিফিকেটগুলো খুব মন দিয়ে দেখতে লাগল। তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে ফাইলের ভেতর এমন কিছু সে দেখছে যা দেখবে বলে তার ধারণাই ছিল না। অনেকক্ষণ পর সে বিস্মিত চোখে রতীশের দিকে চেয়ে বলল, “আপনি হরিদ্বারের একটা নামকরা ইনস্টিটিউট থেকে যোগাশাস্ত্রী উপাধি পেয়েছেন? দেরাদুন আর ঋষিকেশের যে’সব যোগা সেন্টার থেকে ডিগ্রী নিয়েচ্ছেন সে সব সেন্টারেরও তো খুব নামডাক আছে। আর মাধ্যমিক পাশ করবার আগেও তো দেখছি দুটো জায়গায় যোগা মীটে ফার্স্ট হয়েছিলেন? আনবিলিভেবল! আর সেই সাথে ইকোনমিক্সে গ্রাজুয়েশন”!
রতীশ মহিমার এ’কথা শুনে বলল, “আসলে ম্যাডাম, ছোটবেলা থেকেই যোগার ওপর খুব আকর্ষণ ফীল করতাম আমি। সাধারণ পড়াশোনার চেয়ে যোগা করতেই আমার বেশী ইন্টারেস্ট ছিল। এখনও আছে”।
মহিমা ফাইলটা বন্ধ করতে করতে জিজ্ঞেস করল, “তা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনি তো গ্রাজুয়েশন করেছেন টু থাউজেণ্ড ফাইভে। এতদিন কোন কাজ করেন নি”?
রতীশ জবাব দিল, “হ্যা ম্যাডাম, আমি টু থাউজেণ্ড সিক্স থেকেই আমাদের ওখানে হায়ার সেকেণ্ডারি কলেজে স্পোর্টস আর ইকমনিক্সের টিচার হিসেবে কাজ করেছি। গত মাসেই কলেজের চাকরিটা আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের কলেজের প্রিন্সিপ্যালের একটা সার্টিফিকেটও ওই ফাইলে আছে, দেখুন”।
মহিমা বেশ খুশী হয়ে বলল, “ওহ, দ্যাটস ভেরি নাইস টু হিয়ার। তা শুধু স্পোর্টস শেখাতেন? না যোগাও শেখাতেন”?
রতীশ বলল, “হ্যা ম্যাডাম, যোগাও শেখাতাম”।
মহিমা আরও খুশী হয়ে বলল, “তাহলে তো আরও ভাল কথা। যোগা কোচিং দেবার অভিজ্ঞতাও আপনার আছে” বলে কিছু সময় চুপ করে থেকে মনে মনে কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলল, “আচ্ছা মিঃ ভট্টাচারিয়া, আপনার সব ডিটেইলস জেনে তো আমি খুব খুশী হয়েছি। আপনার মত এমন এক্সপার্ট একজন যোগা টিচার আমি অনেকদিন ধরে খুঁজছিলাম। আপনি যদি আমাদের এখানে কাজ করেন, তাহলে আমার পক্ষে খুবই ভাল হবে। কিন্তু তবু আমি আপনার কিছু যোগা ডেমনস্ট্রেশন দেখতে চাই। আপনার কি তাতে আপত্তি আছে”?
রতীশ জবাব দিল, “না ম্যাডাম, আপত্তি নেই আমার। কিন্তু এমন শার্ট প্যান্ট পড়ে তো সব কিছু দেখান সম্ভব হবে না”।
মহিমা বলল, “সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি আসুন আমার সাথে” বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিমলকে বলল, “বিমল, ডোন্ট মাইন্ড প্লীজ। তোমাকে একটু একা বসতে হবে। এই ধর দশ পনের মিনিট, ওকে”?
বিমল বলল, “ওকে ওকে, নো প্রব্লেম। তুমি ওকে ভাল করে যাচাই করে নাও। পরে কিন্তু আমার কাছে কোন কমপ্লেন করতে পারবে না, সেটা মনে রেখ”।
রতীশ মহিমাকে অনুসরন করল। মহিমা নিজের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে ছোট করিডোরে এসে ডানদিকের একমাত্র দরজাটা চাবি দিয়ে খুলে বলল, “আসুন মিঃ ভট্টাচারিয়া। আমাদের সেন্টারটা একটু দেখে নিন আগে”।
রতীশ মহিমার পেছন পেছন দরজাটা দিয়ে ঢুকে দেখল বিশাল একটা হলঘরকে প্লাইউডের পার্টিশান দিয়ে তিনটে ভাগ করা হয়েছে। আর পেছনের দিকে পরপর তিনখানা টয়লেট। আর উল্টোদিকে আরেকটা ছোট রুম দেখা গেল। সেটাও তালা বন্ধ। মহিমা সে রুমটা দেখিয়ে বলল, “এটা হচ্ছে আমাদের অফিস ঘর। এখানে একজন অফিস অ্যাসিস্টান্ট বসে সকাল সাতটা থেকে সাড়ে দশটা অব্দি। আর এদিকটাই হচ্ছে আমাদের ফ্রন্ট ডোর। ওই যে কলাপসিবল গেটটা দেখতে পাচ্ছেন। এ তিনটে পার্টিশানে তিনজন ট্রেনার সকাল ছ’টা থেকে আটটা অব্দি যোগা কোচিং দিয়ে থাকে। এ সময়টা হচ্ছে আমাদের জেনারেল সেশন। আর উল্টোদিকে ওই দিকটায় দেখুন চারখানা ছোট ছোট কেবিন দেখা যাচ্ছে। এখানে আমরা স্পেশাল ট্রেনীদের কোচিং দিয়ে থাকি। আপনার তেমন কোন অভিজ্ঞতা আছে কি না জানিনা। তবে কিছু কিছু বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা নিজেদের শরীরকে ফিট রাখবার জন্যে কিংবা কোন রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য বিশেষ বিশেষ কিছু যোগা এক্সারসাইজ করতে চায়। যোগা কোচিং নেওয়াটা এদের কাছে মুখ্য নয়। বরং বলা যায়, এদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যোগার মাধ্যমে নিজেদের শরীরকে সুস্থ রাখা বা রোগের হাত থেকে আরোগ্য লাভ করা। তাদেরকে অন্য সব কমবয়সী ট্রেনীদের সাথে একসাথে কোচিং দিতে অসুবিধে হয়। তাই তাদের জন্যে আলাদা করে ওই চারটে কেবিন বানানো হয়েছে। প্রত্যেকটা কেবিনে দু’জন ট্রেনীকেই শুধু একসাথে কোচিং করা সম্ভব। তবে এখন অব্দি দু’জনকে একসাথে কোচিং দেওয়া নিয়মিত ভাবে শুরু হয়নি। তবে প্রভিসনটা রাখা হয়েছে। ক্যান্ডিডেট তো অনেক আছে। ট্রেনারের সংখ্যা কম বলে অনেককেই ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হই। আর গত দু’মাস যাবৎ আমাদের একজন ফিমেল ট্রেনার লম্বা ছুটি নিতে বাধ্য হয়েছে। ওর অ্যাডভান্সড স্টেজ চলছে। তাই রুটিন সামলাতে কখনও কখনও দু’জন স্পেশাল ট্রেনীকে একসাথে এক একটা কেবিনে ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য হই আমরা। এদিক দিয়ে আরেকটু এগিয়ে গেলেই টয়লেটগুলো দেখতে পাবেন, যেটা পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকবার সময় ওদিক থেকে দেখতে পেয়েছিলেন। আর আমার চেম্বারের সামনে যে করিডোরটা আছে সেখানে তিনখানা রুম স্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার করছি আমরা”।
রতীশ সব দেখে বলল, “বাহ, খুব ভাল অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন ম্যাডাম”।
মহিমা একটা কেবিনের বাইরে নিজের জুতো খুলে রেখে রতীশকে নিয়ে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে ঢুকে বলল, “আপনি এখানেই একটু আমাকে ডেমনস্ট্রেশন দেখান”।
রতীশও নিজের জুতো খুলে কেবিনের ভেতর ঢুকে দেখল ছোট কেবিনটার ভেতর হসপিটালের বেডের মত সাইজের দুটো বিছানা। বিছানাগুলোর এক মাথার দিকে ছোট একটা টেবিল আর একটা ছোট ওয়ারড্রোব বসানো আছে। টেবিলের সাথেই একটা কাঠের স্ট্যাণ্ডের ওপর একখানা আয়না লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে টেবিলটাকে টেবিল হিসেবে কাজ করবার সাথে সাথে সেটাকে একটা ড্রেসিং টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। বিছানা দুটোর মাঝে মেঝেতে পাঁচ সাড়ে পাঁচ ফুট চওড়া আর বারো ফুটের মত লম্বা একখানা কার্পেট পাতা। আর সামনের বাঁ কোনায় একটা কাঠের চেয়ার।
রতীশ মনে মনে ব্যবস্থাপনার তারিফ না করে পারল না। কিন্তু আড়াই ফুট চওড়া আর প্রায় সাত বা সাড়ে ছ’ ফুটের মত লম্বা বিছানাদুটো কি জন্যে রাখা হয়েছে সেটা তার বোধগম্য হল না। তাই সে মহিমাকে বলল, “ম্যাডাম সব কিছুই তো বেশ ব্যবস্থা করা আছে দেখছি। কিন্তু এমন সরু সরু দুখানা বিছানা কেন রাখা হয়েছে এখানে”?
মহিমা হেসে বলল, “এখানে তো বয়স্ক আর অসুস্থ ট্রেনীদের কোচিং দেওয়া হয়। তারা বেশীর ভাগই শারীরিক সুস্থ থাকবার জন্য যোগা করতে আসে। কিন্তু ছোটবেলা থেকে তাদের যোগাচর্চার অভ্যাস না থাকার ফলে মিনিট দশ পনের বাদেই তারা টায়ার্ড হয়ে পড়ে। এ বিছানাগুলোয় তারা শরীরটা টান করে মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নিতে পারে”।
রতীশ সে’কথা শুনে বলল, “হু, বেশ ভালভাবে ভাবনা চিন্তা করেই এ’সবের ব্যবস্থা করেছেন ম্যাডাম”।
মহিমা হেসে বলল, “বাকি কথা পরে জানতে পারবেন মিঃ ভট্টাচারিয়া। বিমল আমার চেম্বারে একা বসে আছে। আপনি এবার কিছু ডেমনস্ট্রেশন করে দেখান আমাকে। আপনার যেখানে করতে ইচ্ছে হয় করুন। তবে বিছানাগুলো তো খুব বেশী চওড়া নয়, তাই আমার মনে হয় আপনি কার্পেটের ওপর করলেই ভাল হবে। ভাববেন না, আপনার পোশাক নোংরা হবে না। সব কিছু আমরা সাফ সুতরো রাখি। আর এ জন্যেই কেবিনে এবং জেনারেল সেকশনেও জুতো পড়ে ঢোকা বারণ। তাছাড়া দু’দিন বাদে বাদে বিছানার সব কিছু বদলে দেওয়া হয়। কার্পেটও পরিস্কার করা হয়”।
রতীশ একটু ইতস্ততঃ করে বলল, “কিন্তু ম্যাডাম, এমনভাবে শার্ট প্যান্ট পড়া অবস্থায় ....”
মহিমা সিলিং ফ্যানের সুইচটা অন করে কোনার চেয়ারটাতে বসতে বসতে বলল, “আমাদের এখানে জেনারেল সেশনের ট্রেনীদের জন্য কস্টিউম প্রেস্ক্রাইব করা আছে। হাঁটু থেকে কোমর আর পাঁজর থেকে গলা অব্দি তাতে ঢাকা থাকে। আর ট্রেনাররা অনেকটা ট্র্যাক স্যুটের প্যান্টের মত একধরনের একটা প্যান্ট পড়ে স্যাণ্ডো গেঞ্জী পড়েই ট্রেনিং দিয়ে থাকে। কিন্তু অন্য ট্রেনারদের পোশাক আপনাকে পড়তে হবে না। আপনি বরং শুধু শার্টটা খুলে নিন। প্যান্ট আর গেঞ্জী পড়ে যতটুকু সম্ভব হয় ততটুকুই দেখান”।
রতীশ আর কোন কথা না বলে নিজের শার্টটা খুলে বিছানার ওপর রেখে উপবেশনাসন ভঙ্গীতে কার্পেটের ওপর বসে জিজ্ঞেস করল, “কী দেখাব ম্যাডাম? বিভিন্ন ধরণের যোগা থেরাপি দেখাব, না প্রাণায়াম, না যোগব্যায়াম যোগাসন দেখাব”?
মহিমা রতীশের সুগঠিতে শরীরটার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে বলল, “সব কিছু দেখাতে গেলে তো অনেকটা সময় লেগে যাবে। তাছাড়া আমাদের তো আর যোগা কলেজ বা কলেজ নয়। পাঠ্যক্রমের কোর্স তো আর এখানে প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের কাজ তো মেইনলি যোগা এক্সারসাইজ করানো। আপনি এক কাজ করুন মিঃ ভট্টাচারিয়া। দু’তিনটে প্রাণায়াম করে তারপর কয়েকটা যোগাসন দেখিয়ে দিন আমাকে”।
রতীশ চোখ বন্ধ করে প্রায় আধমিনিটের মত সুখাসনে বসে থেকে প্রথমে ভস্ত্রম প্রাণায়াম, কপাল ভারতী প্রাণায়াম, ব্রাহ্য প্রাণায়াম,অনুলোম বিলোম প্রাণায়াম আর ভ্রামরী প্রাণায়াম করল। তারপর কয়েক সেকেণ্ড বিরতির পর যোগাসন করতে শুরু করল। প্রথম প্রথম সিদ্ধাসন, পদ্মাসন, বালাসন, বজ্রাসন, সিংহআসন, দণ্ডাসন আর তুলাসন করল। এসব করতে শরীরের মাংসপেশী বা হাড়ে খুব একটা চাপ পড়ে না। কিন্তু শরীরটা সব রকম যোগাসন করবার জন্যে তৈরী হয়ে ওঠে। তারপর অর্ধনাবাসন, নাবাসন, পরিপূর্ণ-নাবাসন দিয়ে শুরু করে একে একে ভূজঙ্গাসন, ভেকাসন, উত্তানাসন, গরুড়াসন, গোমুখাসন, জানু-শীর্ষাসন, কর্নপীড়াসন, বকাসন, পদহস্তাসন, মৎস্যাসন, শশকাসন, উর্ধমুখশশকাসন, বিপরীতকরনি, ঊষ্ট্রাসন, কুক্কুটাসন, অধোমুখশ্বানাসন, নটরাজাসন করে কয়েক সেকেণ্ডের জন্যে থেমে মহিমাকে জিজ্ঞেস করল, “আরও কিছু দেখাব ম্যাডাম”?
মহিমা মন্ত্রমুগ্ধের মত রতীশের সুগঠিত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ওঠানামা আর নড়াচড়া দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিল। প্যান্ট আর স্যাণ্ডো গেঞ্জী পড়া রতীশের দেহসৌষ্ঠব দেখে সে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছিল। তার সাতচল্লিশ বছরের জীবনে সে বহু পুরুষের উলঙ্গ দেহ দেখেছে। নিজের দেহে যৌবন আসবার পর থেকেই নিজের মোহনীয় শরীরের মায়ায় প্রচুর পুরুষকে লুব্ধ করে তাদের সাথে প্রচুর পুরুষসঙ্গ করেছে। দেহসুখের আদান প্রদান করে নিজেও যেমন তৃপ্তি পেয়েছে, তেমনই সব পুরুষসঙ্গীকেও সে পুরোপুরি ভাবে তৃপ্ত করেছে। কিন্তু রতীশের মত এমন অপূর্ব দেহসম্পদ সে কোন পুরুষের শরীরে দেখে নি। ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগে পুরুষের নগ্ন সৌন্দর্য দেখে তার শরীর মন যেমন চঞ্চল হয়ে উঠত, এখন আর কোন পুরুষকে দেখে তার দেহমন তেমন চঞ্চল হয়ে ওঠে না। কিন্তু এই মূহুর্তে রতীশের স্যাণ্ডো গেঞ্জীর ওপর দিয়ে তার ফুলে ওঠা বুক আর নগ্ন বাহুর মাংসপেশী দেখে তার শরীরটা শিরশির করে উঠল। শরীরের ভেতরের এমন চাঞ্চল্য সে বহুদিন অনুভব করেনি। তার মনে হচ্ছিল সে যেন তার ঊণিশ কুড়ি বছর বয়সে ফিরে গেছে। মগ্ন হয়ে রতীশের সুন্দর শরীরটাকে দেখতে দেখতে সে নিজের শরীরের ভেতরকার ভুলে যাওয়া পুরোন চাঞ্চল্যের শিরশিরানিটাকে প্রাণ ভরে উপভোগ করছিল। রতীশের প্রশ্নে তার ঘোর ভাঙল। একটু চমকে উঠলেও সে নিজেকে স্বাভাবিক রাখবার চেষ্টা করতে করতে বলল, “হ্যা, আরো একটু কঠিন আসন দেখান দু’ চারটে”।
রতীশ এবার একে একে অধোমুখবৃক্ষাসন, অষ্টবক্রাসন, চতুরঙ্গদন্ডাসন, চক্রাসন, ধনুরাসন, হলাসন, দ্বিপদশীর্ষাসন, দ্বিপদ বিপরীতপদণ্ডাসন, একপাদরাজকপোতাসন, একপাদ কৌণ্ডীন্যাসন, একপাদ শীর্ষাসন, কূর্মাসন, ময়ুরাসন, পদ্মপিন্যময়ুরাসন, কপোতাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, শলভাসন, সর্বাঙ্গাসন, শীর্ষাসন, মুক্তহস্ত শীর্ষাসন, নিরালম্বসর্বাঙ্গাসন করে সবশেষে শবাসন ভঙ্গীতে মিনিট খানেক থেকে উঠে বসে মহিমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “হয়েছে ম্যাডাম? না আরও কিছু দেখাব”?
মহিমা ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। এখন তার চোখে মুখে বিস্ময়ের সাথে সাথে খুশীর ঝলকানি একেবারে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। এত রকমের যোগাসন একসাথে সে কোনদিন দেখেনি। সে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় রতীশের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল। রতীশের কথা শুনে সে জিজ্ঞেস করল, “আপনি আরও দেখাতে পারেন”?
রতীশ বলল, “নিশ্চয়ই ম্যাডাম। আমি তো মোটে পঞ্চাশটার মত আসন দেখালাম। খুবই অল্প অল্প সময় ধরে করলেও এতেই দেখুন প্রায় একঘন্টা সময় পার হয়ে গেছে। আরও তো অনেক ধরণের আসন আছে। আপনি চাইলে আমি সেসবও ডেমনস্ট্রেট করে দেখাতে পারি”।
মহিমা বলল, “ইশ আপনাকে আমি খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম মিঃ ভট্টাচারিয়া। কিন্তু আর আপনাকে কিছু করতে হবে না। আপনি একেবারে ঘেমে গেছেন। আপনি বরং এবার আমার চেম্বারে গিয়ে বিমলের সাথে একটু কথা বলুন। এখন তো সেন্টারে আর কেউ নেই। আমি এদিকের দরজাগুলো বন্ধ করেই আসছি”।
রতীশ প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজের ঘাড় গলা মোটামুটিভাবে মুছে নিয়ে শার্টটা পড়তে পড়তে কেবিন থেকে বেরিয়ে এল। তারপর পেছন দিকের দরজা দিয়ে আবার মহিমার চেম্বারে এসে ঢুকতেই বিমল জিজ্ঞেস করল, “বেশ লম্বা ইন্টারভিউ দিলেন দেখছি। তা কেমন দিলেন ইন্টারভিউ রতীশবাবু? আপনার ম্যাডামের পছন্দ হয়েছে তো”?
রতীশ বিমলের পাশের চেয়ারে বসতে বসতে বলল, “আমি তো যতটুকু দেখিয়েছি, আশা করি তাতে কোন ভুল হয়নি। তবে ম্যাডামের পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা তিনিই ভাল বলতে পারবেন বিমলজী”।
বিমল বলল, “আমার মিসেসও এখানে সপ্তাহে দু’দিন করে এসে স্পেশাল ক্লাস অ্যাটেণ্ড করে। এখানে তিনজন ট্রেনার আছে। তবে একজন ফিমেল ট্রেনার বোধহয় এখন ছুটিতে আছে। তাই রেগুলার ক্লাস করতে পারছে না অনেকেই। স্পেশাল ট্রেনীদের এরা একা স্পেশাল কেবিনে ট্রিটমেন্ট দেয়। কিন্তু ট্রেনারের অভাবে মাস দুয়েক হল তাকে মাঝে মধ্যেই আরো একজনের সাথে ট্রিটমেন্ট নিতে হয়। তাতে আমার মিসেস ঠিক খুশী হয় না। আপনি এখানে জয়েন করলে সে সমস্যাটা বোধহয় আর থাকবে না”।
রতীশ বলল, “ম্যাডাম পুরো সেন্টারটা আমাকে ঘুরে ঘুরে দেখালেন। সবকিছু বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো। বেশ ভাল লেগেছে আমার”।
এমন সময় মহিমা চেম্বারে ঢুকে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বিমল। তুমি তো আমার কাছে একখানা হীরে এনে দিয়েছ বন্ধু। তোমার ক্যাণ্ডিডেট তো ফুল মার্ক্স পেয়েছে ইন্টারভিউতে”।
বিমল বলল, “হীরে না পাথর, সে বিচার তো তোমার মত জহুরীই করতে পারে। আমি তো আর এ’সবের কিছু জানিনা বা বুঝিনা। আমার নাম নিয়ে কেউ ওকে ঠকিয়েছে জেনেই আমার খারাপ লাগছিল। আর তোমার এখানেও যে একজন ট্রেনারের প্রয়োজন আছে সেটাও আমার জানা ছিল। আর রতীশবাবু যোগা নিয়ে কিছু একটা করবে বলেই এখানে এসে একটা চোট খেয়েছে। তাই তাকে তোমার কাছে নিয়ে এসেছি। তা তোমাদের সব কথা কি শেষ হয়ে গেছে? না আমাকে আরও অপেক্ষা করতে হবে আমার কাজের জন্য”?
মহিমা নিজের চেয়ারে বসে চুপ করে বিমলের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলল, “সরি বিমল, তোমাকে আর একটু অপেক্ষা করতেই হবে। মিঃ ভট্টাচারিয়ার সাথে আমার আরও খানিকক্ষণ কথা বলার আছে। তুমি অবশ্য একটা কাজ করতে পার। তুমি বোর ফিল করলে বরং আমার রেস্ট রুমে গিয়ে একটু অপেক্ষা কর। আমি আধঘন্টা পর তোমার সাথে বসছি, ওকে”?
বিমল বলল, “হ্যা ঠিক আছে। এখানে বসে বসে আমি বোর হব। তোমার রেস্ট রুমে গিয়ে একটু রেস্ট নেওয়াই ভাল হবে মনে হয়”।
মহিমা মিষ্টি করে হেসে নিজের ব্যাগের ভেতর থেকে একটা চাবি বের করে বিমলের হাতে দিতে দিতে বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ বিমল”।
বিমল চাবিটা হাতে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল, “তাহলে রতীশবাবু, আপনি ম্যাডামের সাথে বাকি কথাটুকু সেরে ফেলুন। কিন্তু আপনাকে ছুটি দেবার পর আপনি কি আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এখানে”?
বিমলের কথার জবাবে রতীশ বলল, “না না বিমলজী। ম্যাডাম আমাকে ছুটি দিলে আমি চলে যাব। আপনি আমার জন্যে অনেক করেছেন। আর বিরক্ত করতে চাই না আপনাকে। আমি এখান থেকে মেট্রো ধরে চলে যাব। আপনি আপনার কাজ শেষ করেই যাবেন বরং”।
বিমল একবার মহিমার দিকে দেখে আবার রতীশকে বলল, “আমার কাজ শেষ হতে তো প্রায় ঘন্টাখানেক লেগে যাবে, তাই না মহিমা? এই একটা ঘন্টা আপনাকে এখানে একা বসিয়ে রাখলেও তো ভাল দেখাবে না”।
______________________________